#প্রণয়ের_বাঁধন |৮|
#লেখনীতে_মুসতারিন_মুসাররাত
শহুরে যানজট কোলাহলময় রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করছে ইভান। পাশের সিটে তনুজা বসে। দৃষ্টি তার জানালা দিয়ে বাইরে। দু’জনই বড্ড চুপচাপ আছে, পিনপিনে নীরবতা দু’জনের মধ্যে। ইভানদের বাড়ি কল্যাণপুর। শ্যামলিতে আসতেই ট্রাফিক সিগন্যালে লাল বাতি জ্ব’লে উঠল। দুইহাত স্ট্রেয়ারিংয়ের উপর রেখে আড়চোখে তনুজার দিকে তাকায় ইভান। তনুজা জড়সড় হয়ে বসে। কিছুপল পরেই ইভান দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকায়। সবুজ বাতি জ্বলে উঠতেই গাড়ির হর্ণের শব্দ তীব্র হয়। পিছুনে থাকা সব গাড়ির যেন খুব তাড়া। সামনের গাড়িগুলোও চলতে শুরু করে, ইভান গাড়ি চালু করল।
বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের পার্কিং লনে গাড়ি দাঁড় করায় ইভান। পরপর নিজে নেমে তনুজার পাশের ডোর খুলে দেয়। তনুজা শাড়ির কুঁচিটা একহাতে ধরে আলগোছে নামে। ইভান আগে তনুজা তার পিছু। কয়েকটা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে ভেতরে ঢোকে তারা। এতবড় কমপ্লেক্স, তারপর চতুর্দিকে আভিজাত্যে ভরপুর। এত ভড়ক দেখে তনুজার কেমন অস্বস্তি হতে থাকে। এসবের মাঝে নিজেকে বেমানান লাগছে তার। তনুজা চোখের কালো মণি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারিপাশটা একপল দেখে। ইভান প্যান্টের পকেটে দুইহাত গুঁজে হেঁটে সামনে এগোচ্ছে। তনুজা তার পিছুনে। ইভান এস্কেলেটরের সামনে দাঁড়িয়ে পিছুন ফিরে তাকায়। তনুজা দু’কদম পিছিয়ে ছিলো। পাশাপাশি আসতেই ইভান পা বাড়িয়ে এস্কেলেটরে দাঁড়ায়। তনুজাও ভয়ে ভয়ে পা ফেলল। আগে কখনো এসবে উঠেনি বিধায় তনুজার মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠে। টাল সামলাতে না পেরে আচমকা একহাতে ইভানের বাহু খামচে ধরে। তনুজার পেলব শরীর ভ’য়ে কেঁপে উঠেছিল। ইভানের বাহু ধরে এবার যেন ভরসার একটা খুঁটি পায় সে। ইভানের হাত এখনো পকেটে গুঁজে রাখা। সে সটান দাঁড়িয়ে ছিলো। তনুজা এত জোরে খামচে ধরেছে যে নখ বিঁধে গিয়েছে। ইভান ঘাড়টা ডানদিকে ঘুরিয়ে একবার নিজের হাতের দিকে তাকায়। মেয়েলি নরম-কোমল হাতটা তার শক্ত লোমশ বাহু আঁকড়ে ধরে আছে। পরপর চোখ ঘুরিয়ে কপাল কুঁচকে তনুজার দিকে তাকায় ইভান। তনুজার মুখবিবর ভিতু হয়ে আছে। তনুজা চোখ তুলে তাকাতেই ইভানের শান্ত চাউনিতে তার নজর পরে। দৃষ্টি নামিয়ে ইভানের বাহু ধরে রাখা হাতের দিকে নজর পড়তেই তনুজার চোখ বড়বড় হয়ে যায়। ইভানের হাতে তার নখ বসে গিয়েছে। একফোঁটা লাল তরল দেখতেই অপরাধ বোধে ছেয়ে যায় তনুজার মন। তনুজার ভয় হচ্ছে মানুষটা এবার নিশ্চয় কষিয়ে একটা ধ’ম’ক দিবে। আর নয়তো কড়া করে বলবে। তনুজা শুষ্ক ঢোক গিলে নিয়ে ভীতু স্বরে বলে,
-” স্যরি! আসলে আমি বুঝতে পারিনি।”
ইভান দাঁত দিয়ে নিম্নোষ্ঠ কামড়ে ভ্রু কুঁচকে তনুজার দিকে ঠাঁই তাকিয়ে রয়। ভয়ে রিতিমত তনুজার বুক কাঁপছে। এরমধ্যে ইভান সামনে ইশারা করে অস্ফুটে আওড়ায়,
-” চলো।”
ইভানের শান্ত শীতল স্বর শুনে তনুজা বিস্মিত হয়।এস্কেলেটর থেকে নেমে ইভানের বাহু থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়। সেকেন্ড ফ্লোরে শাড়ির দোকানে ঢুকে। তনুজার অস্বস্তি বুঝতে পেরে ইভান নিজেই বেশ কয়েকটা শাড়ি প্যাক করতে বলে। তারপর কয়েকটা থ্রি-পিসও নেয়। সাথে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা শেষ করে ফিরতে থাকে।
ফার্মগেটে জ্যামে আটকা পরে। এখন সন্ধ্যা রাত।কেনাকাটা করতে গিয়ে ঘুরাঘুরিতে তনুজার গলাটা শুকিয়ে যায়। আবার গরমে জ্যামে পরে পানির তৃষ্ণাটা বেড়ে গেলো। তনুজা বসে শান্তি পাচ্ছে না। তনুজার অস্থিরতা বুঝতে পেরে ইভান শান্ত গলায় শুধোয়,
-” এ্যনি প্রব্লেম? সামথিং হ্যাপেন্ড?”
তনুজা মাথা নাড়িয়ে জড়তা নিয়ে বলে,
-” ন নাহ! ঠিক আছি ।”
ইভান জানালা দিয়ে মাথা বের করে তাকিয়ে জোরেশোরে ডাকে,
-” এই পিচ্চি? এই এই ”
গায়ে ছেঁড়াফাটা গেঞ্জি অল্প বয়সী একটা ছেলে,
-” এই পানি, পানি, পানি লাগবে?”
বলে এ গাড়ি থেকে ও গাড়ির কাছে যাচ্ছিল। ইভানের ডাক শুনে ছেলেটা খুশি হয়ে এগিয়ে আসে। খদ্দের পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছে এমন খুশির আমেজ ছেলেটার ভেতর বইতে থাকে। কাছে আসতেই ইভান বলে,
-” এক বোতল পানি দাও তো।”
ছেলেটা এক লিটারের ফ্রেশ এর মিনারেল ওয়াটার বোতল বাড়িয়ে দেয়। ইভান পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে দুইশো টাকার একটা নোট দেয়। ছেলেটা গাল চুলকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,
-” মামা ভাংতি নাই কা। খুচরা দ্যান।”
ইভান স্মিত হেসে বলে,
-” পুরোটাই রেখে দাও।”
ছেলেটার ম্লান মুখে হাসি ফুটল। এক গাল হেসে টাকাটা হাতে নিয়ে খুশি হয়ে সে আরেক গাড়ির দিকে ছুটল। তনুজা অবাক নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখল। এই মানুষটাকে এই প্রথম একটু হাসতে দেখল। কারো সাথে আন্তরিকতার সাথে কথা বলতে দেখল। যে কীনা বাড়ির লোকদের সাথে প্রয়োজনের কথাও গম্ভীরভাবে বলে। ইভান তনুজার দিকে বোতল বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
-” নাও। তোমার বোধহয় এটা প্রয়োজন।”
তনুজা আরেক দফা চমকাল। লোকটা কীকরে জানলো তার পানি পিপাসা পেয়েছে! তনুজা পিটপিট করে তাকিয়ে ইভানের হাত থেকে বোতল নেয়। বোতলের ক্যাপ খুলে ধীরে ধীরে পানি খায়।
__________
এদিকে কী করবে তাই ভেবে দিশেহারা দিব্য! ঘরময় অস্থিরতায় পায়চারী করছে। রাগ করে রাতে ডিনার করতে নিচে যাইনি সে। মা এসে ডেকে গিয়েছে, “খাবে না, ক্ষুধা নেই” বলেছে। তবে দিব্য জানে মাম্মা ঠিক সব কাজ শেষে খাবার নিয়ে রুমে আসবে। এটাসেটা বলে ইমোশনালি ব্ল্যাক মেইল করে অল্প করে হলেও খাওয়াবে। হাঁটছে আর দুই আঙ্গুল কপালে ঘঁষে বুদ্ধি বের করার চেষ্টা করছে। রুমের দরজা বরাবর এসে দাঁড়াতেই নিতির গলা শুনতে পায়। সিঁড়ি দিয়ে আসছে আর নৃত্যকে জোরেজোরে কিছু বলছে। দিব্য রুমের সামনে দাঁড়ায়। নিতি নৃত্যে দুইবোন ডিনার শেষে করিডোর দিয়ে নিজেদের রুমে যাচ্ছিল। এমন সময়,
-” নিতি? এই নিতি? আমার রুমে একবার আয় তো?”
নিতির চোখ উট পাখির ডিমের আকার হয় যেন। দিব্যর কথাশুনে থ মে/রে দাঁড়িয়ে রয়। দিব্য বি’র’ক্ত হয়ে বলে,
-” কথা আছে তোর সাথে।”
নিতি পাশে থাকা বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” তুই রুমে যা আমি আসছি।”
দিব্য বিছানায় দুই হাত ঠেস দিয়ে পা দু’টো ঝুলিয়ে বসে। নিতি বেশ খানিকটা দূরত্বে বিছানার একপাশে বসে পা দুলাচ্ছে। দিব্য বলে,
-” আমার মনেহয় সেদিনের সত্য ঘটনা সবার জানা উচিত। আসল সত্যিটা বের করতে তনুজার থেকে ডিটেইলস সব শুনতে হবে। সেখান থেকে ক্লু নিয়ে, মূল কালপ্রিটকে বের করতে হবে। সেদিন তনুজা কী করে ইভানের রুমে ছিলো জানতে হবে? একচুয়েলি কী ঘটেছিল জানাটা খুব জরুরী।”
নিতি বড় করে হাই তুলল। তাই দেখে দিব্য দাঁত কিড়মিড় করে। সে খুব সিরিয়াস হয়ে বলছে, আর এটা হাই তুলছে। কষিয়ে একটা ধ’ম’ক দিতে ইচ্ছে হলো। কোনো রকমে রাগটা কন্ট্রোল করে দিব্য। ধ’ম’কের সুরে ফের বলে,
-” আমি কী বললাম শুনেছিস? তনুজাকে_।”
কথার মাঝেই নিতি বলে,
-” আবার তুমি তনুজা বলছো! নানুআপু না তোমাকে ভাবী বলতে বলল। সে না তোমার থেকে সম্পর্কে বড়।”
দিব্য চোয়াল শক্ত করে বলে,
-” নিতি তোর নীতি বাক্য রাখ। আমার কিন্তু মেজাজ খা’রা’প হচ্ছে।”
-” তুমি একটা কথা বলো তো আমায়! বলো তো শুনি? বলো কোন সময় তোমার মেজাজ ভালো থাকে? আমি তো কখনো তোমার ভালো মেজাজ দেখিনি। যখন দেখি তখনই তো রেগে থাকতেই দেখি। মেজাজ তো তোমার সবসময় চারশো চল্লিশ ভোল্টেজের হয়েই থাকে। সেখানে নতুন করে আর কী মেজাজ খারাপ হবে।”
দিব্য ধ’ম’ক দিয়ে বলে,
-” থাম! আর যা বললাম তাই করবি। তুই সবটা শুনে আমাকে জানাবি। ”
নিতি ভাবলেশহীন থাকে। দিব্যর ধ’ম’ক , রাগের তোয়াক্কা করে না সে। গা ছাড়া ভাবে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে,
-” আচ্ছা এখন পুরানো কাসুন্দি ঘেঁটে আর কী হবে! যদি সেদিন ওদের মধ্যে কিছু হয়েও থাকে, ওরা তো এখন দম্পতি। তাই ব্যাপার না। যা হওয়ার হয়েছে বাদ দাও তো তুমি। তার চেয়ে তুমি যদি বলো, তুমি কাকা হচ্ছো কবে? এই খবর জানতে এক্সাইটেড হলে, এব্যাপারে আমি তোমায় হেল্প করতে পারি। ভাবিমণিকে জিজ্ঞেস করবো, তা আমাদের দিব্য বাবু কাকা হচ্ছে কবে? সে তো কাকা হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। তোমরা ফাস্ট বেবি নাও। আর তাকে কা__”
দিব্য হাত উঁচিয়ে এক আঙুল দরজা বরাবর তাক করে চোয়াল ঝুলিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
-” আউট.. গেট আউট ফর্ম মাই রুম।”
ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে রাগটা কমানোর চেষ্টা করে। থেমে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
-” এক্ষুনি আমার রুম থেকে বেরো। এক সেকেন্ডের মধ্যেই আমার চোখের সামনে থেকে যা। অনেক কষ্টে কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করেছি। তুই আমার ধৈর্য্যর লিমিট ক্রস করে গিয়েছিস।”
নিতি ফট করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এক আঙুল নাকে ঘঁষে বলে,
-” আরে যাচ্ছি, যাচ্ছি। মোটেও তোমার এখানে থাকার ইচ্ছে নেই আমার। এমনিতেই রাত। তারপর বাড়িতে যা শুরু হয়েছে। আমি তো এখনও বেশ ভয়েই আছি। রাতে একলা রুমে তোমার সাথে আছি বলে, নানুআপু না জোর করে ধরে বেঁধে তোমার সাথে জুড়ে দেয়।”
দিব্যর চোখ দু’টো রাগে লাল টকটকে হয়ে আছে । যেন চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে। নিতি তোয়াক্কা করে না এসবের। সে মুখ ভেঙিয়ে বলে,
-” গেলাম! টা টা, বাই বাই।”
নিতি যেতেই শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দেয় দিব্য। নিতি তাকে তনুজার বাচ্চার কাকা বানিয়ে দিলো। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থাকা পারফিউমের ভারী বোতলটা হাতে করে আয়না বরাবর ছুঁড়ে মা/রে। সাথে সাথে কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ ঘরময় ছড়িয়ে পড়ল। পরপর বিছানায় বসে দুইহাতে মুখ চেপে ধরে থ মে’রে থাকে দিব্য।
__________
তখন তনুজাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে ইভান ওর মতো গাড়ি নিয়ে চলে যায়। এখন ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটার ঘরে। ইভান মাত্র বাড়ি ফিরল। রোজকার মতো ম/দপান করে বাড়ি ফিরেছে সে। এটা তার নে/শায় পরিণত হয়েছে। দিদুন কত করে বলে সে ছাড়তে পারে না। ম/দ না খেলে তার চোখে ঘুম আসে না। মানুষ অভ্যাসের দাস। এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। রুমে ঢুকেই ইদানিং প্রথমে নজর যায় বিছানায়। যেখানে গুটিসুটি মে/রে শুয়ে আছে এক রমণী। মেয়েটা খুব ঘুমকাতুরে। ইভান বিছানায় বসে এক পায়ের উপর আরেক পা তুলে কেডস খুলতে থাকে। তনুজার দিকে হঠাৎ নজর পড়তেই ইভান ঢোক গিলে। ইভানের নিঃশ্বাস ভারিক্কি হয়ে আসে। সবকিছুতে গোছালো হলেও ঘুমিয়ে পড়লে মেয়েটা এলোমেলো হয়ে যায়। এইযে মসৃণ পেট দেখা যাচ্ছে, ব্লাউজের গলা বড় তারপর আঁচলটা এলোমেলো হয়ে একপাশে অবহেলায় পরে হয়ে আছে। এই দৃশ্য যেকোন পুরুষকেই আর্কষিত করতে যথেষ্ট। ইভানের পুরুষালি নজর আজ যেন বেহায়া হতে চাইছে। না চাইতেও ঘুমন্ত রমণীর আপাদমস্তক নজর বুলায় সে। কেমন একটা অদ্ভুত শিহরণে শিহরিত হয় ইভানের তনুমন। তারপর নে/শা অবস্থায় থাকায় কেমন চম্বুকের ন্যায় টানছে। ইভান লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে উঠে লাইট বন্ধ করে দেয়। আজ আর ডিম লাইটও জ্বালায় না। রুমটা অন্ধকার করে দিয়ে সে শুয়ে পরে। ইভানের ভেতর অস্থিরতা কাজ করছে। ঘুম আসছে না। শুয়ে নড়াচড়া করতে থাকে সে। কোলবালিশের ওপাশে আরামসে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে তনুজা। দু’জনের মাঝে থাকে ইয়া বড় একটা কোলবালিশ। যেন ভারত পাকিস্তানের বর্ডার।
পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম হালকা হয় তনুজার। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে তনুজা। এমন সময় গম্ভীর গলার আওয়াজ আসে,
-” এরপর থেকে শাড়ি পড়বে না, তুমি। থ্রি পিস পড়বা।”
জানালার পর্দা গলিয়ে সকালের এক ফালি নরম রোদ রুমময় ছড়িয়ে পড়েছে। যার দরুণ রুমটা মৃদু আলোকিত। তনুজা পিটপিট চোখে ইভানের দিকে তাকায়। ইভান দুইহাতে বালিশ জড়িয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। তনুজা তাজ্জব বনে যায়। অবাকের সুরে সে প্রশ্ন করে উঠে,
-” মানে? কিন্তু কেনো? আপনার দিদুনই তো শাড়ি পড়তে বলে। থ্রি পিস পড়লে বকাঝকা করে। তাই তো।”
ইভান চোখ দু’টো বুঁজে রেখেই জবাবে বলে,
-” সারাদিন শাড়ি পড়ে থাকলেও রাতে থ্রি পিস পড়বা। যদিও ড্রিংক অবস্থায় থাকলেও আমার নে/শা ধরে না। কিন্তু রোজরোজ যদি কেউ সিডিউস করতে এলোমেলো হয়ে থাকে, তাহলে তো সমস্যা। কোনদিন অঘটন ঘটে যায়।”
পরপর মস্তিষ্ক সজাগ হতেই তনুজার অস্বস্তি হয়। বিষয়টা টের পেতেই ভীষণ লজ্জিত হয় সে। ইশশ্! আগে থেকেই তার শোয়া ভালো নয়। দাদি এই নিয়ে মজা করে অনেক কথাই বলতো। তাই ইভানের কথা পুরোপুরি বিশ্বাস হয়। লজ্জায় তনুজার মাটি খুঁড়ে লুকাতে ইচ্ছে করছে।
___________
তিন চারদিন পর…
পড়ন্ত বিকেল। কফি শপের নিরিবিলি পরিবেশের কর্ণারের টেবিলে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বসে। মেয়েটার গায়ে ওয়েস্টার্ন পোশাক। ব্রাউন কালার করা চুলগুলো কাঁধের একটু নিচে। রোদ চশমাটা মাথার উপর তোলা। সামনের চেয়ারে বসা ছেলেটার মুখ গম্ভীর হয়ে আছে।
#চলবে