প্রণয়ের বাঁধন পর্ব-১২+১৩

0
1268

#প্রণয়ের_বাঁধন |১২|
#লেখনীতে_মুসতারিন_মুসাররাত

মধ্য দুপুর। তপ্ত রৌদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেও মেজাজ যতটা না উত্তপ্ত ছিলো, তৃষাকে দেখার সাথে দপ করে ইভানের মেজাজ ফুটন্ত পানির ন্যায় টগবগিয়ে ওঠে। ওটা তৃষা মস্তিষ্ক এটা ঠাহর করতেই ইভানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। এতদিনে শুকিয়ে যাওয়া অপমানের ঘা টা দগদগ করে উঠল। এই মেয়ে! এই একটা মেয়ের জন্য! বন্ধুমহলে সে আজ থেকে দেড় বছর আগে চরম অপমানিত হয়। শুধু কী বন্ধু মহলেই? উঁহু! বন্ধুমহলেই নয়, তাদের এলিট সোসাইটিতেও রিতিমত কানাঘুষা চলতো। ভালোবাসা হারিয়ে যতটা না কষ্ট পেয়েছিলো তার থেকে বেশি কষ্ট হয়েছিলো বন্ধুদের তারপর সোসাইটির লোকদের তাকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য, হাসি ঠাট্টা করায়। ক’দিন হৈচৈ পড়ে যায়, বিয়ের দিন কনে পালিয়েছে! তাও আবার হবু বরের ছোট ভাইয়ের সহায়তায়। নিশ্চয় ছোট ভাইয়ের সাথে অ্যাফেয়ার্স আছে। আজ সেই ছলনাময়ী নারীকে দেখে ঘৃ/ণা ছাড়া আর কিছুই আসছে না। পরপর ইভান দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। তাকাতেও আজ রুচিতে বাঁধছে তার। নিজের উপরও তার রাগ হচ্ছে। একসময় এই মেয়েটিকে সে পছন্দ করেছিলো। বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলো। এখন এটা ভেবে ইভানের নিজের উপর নিজেরই আফসোস হচ্ছে। ইভানের হঠাৎ উইলিয়াম শেক্সপিয়রের লেখা একটা লাইন মনে পড়ল,

-” অল দ্যাট গ্লিটারস ইস নট গোল্ড।”

তৃষার সাথে এই বাগধারাটা খাপে খাপ। ইভান দৃষ্টি নামিয়ে চুলের ভাঁজে আঙুল চালনা করে মনে মনে তাচ্ছিল্য হাসে। তন্মধ্যে পরিচিত মেয়েলি গলার মিহি স্বর আসলো,

-” ইভান!”

মুখে প্রশস্ত হাসির রেখা নিয়ে ইভানের দিকে এগোয় তৃষা। ইভান পরপর কপাল কুঁচকে দাঁত কটমট করে চায়। তৃষা নিশ্চিত হয়, দিব্য খুব জেদি তাই ওর সাথে কখনোই হবে না। ছুঁড়ে ফেলা জিনিসে ও ফিরেও তাকায় না। এখন যদি ইভান তারজন্যই এখানে আসে, তাহলে ইভানকে মেনে নেওয়াই বেটার। এটা ছেড়ে ওটা দেখলে নিজেরই লস। যা লস হয়েছে হয়েছে। এখন পুরোনো দিকেই যাওয়া বেটার হবে। মনেমনে এসব ভাবে তৃষা। মুখে কৃত্রিম বেদনার ছাপ টেনে নেয়। আরো বেদনার্ত অসহায় কণ্ঠে বুলি আওড়ায়,

-” ইভান আ’ ম স্যরি। আমি খুব খুব স্যরি। আমি জানি আমার কোন মুখ নেই তোমার সামনে দাঁড়ানোর। আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি। সেদিন ওভাবে পালিয়ে যাওয়া আমার কোনমতেই ঠিক হয়নি। ইভান আমি রিপেন্ট। আমি সত্যিই অনুতপ্ত নিজের করা বো°কা°মির জন্য। ইভান তুমি দ্যাখো দ্যাখো আমি নিজের ভুল শুধরে নিতে আবার ফিরে এসেছি। আমি জানি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো। তোমার ভালোবাসার কাছে আমার শত ভুল এক নিমিষেই মাফ হয়ে যাবে। আর যেটা আমি করেছিলাম, সেটা তো পড়াশোনার জন্যই। তুমিই তো আমাকে ডেনমার্ক যেতে দিতে রাজি হচ্ছিলে না। তাই আমি বাধ্য হয়ে ওরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে মানছি ওভাবে যাওয়া আমার অনুচিত হয়েছে। প্লিজ ইভান প্রাডন মি।”

হঠাৎ রাগের জায়গায় ইভানের হাসি পায়। ইভান দুইহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে সটান দাঁড়িয়ে শব্দ করে গা দুলিয়ে হাসলো। হাসি থামিয়ে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,

-” নাইস অ্যাক্টিং! আর কোনো গুণ না থাকলেও অ্যাক্টিং এর গুণটা ভালোই আয়ত্ত করেছো। অ্যাক্টিং এ তোমার তো অস্কারজয়ী হওয়ার কথা। এই একটা জিনিসই তো খুব ভালো পারো। আর এই গুণ দিয়েই তো দিনের পর দিন ছেলেদেরকে বো°কা বানিয়ে রাখো।”

কথা বলতে বলতে আচমকা খানিকটা দূরত্বে দাঁড়ানো তনুজার দিকে নজর পরে ইভানের। যে কিনা একহাতে কাঁধের ব্যাগের ফিতা চেপে ধরে দৃষ্টি নত করে মূর্তির মতোন দাঁড়িয়ে। বান্ধবীর থেকে বিদায় নিয়ে সে খানিকটা দূরত্বে দাঁড়ায়। এদের দু’জনের গলার মৃদু আওয়াজ তার কানে আসে। তৃষার কথা শোনার সাথে সাথেই তনুজার বুকের ভেতরটায় অস্থির লাগছিল। হঠাৎ কেমন শুণ্যতা অনুভব হচ্ছিল। এই মাইকোলজি নিউ মিস তৃষা চৌধুরীই তাহলে সেই তৃষা। ইভানের এক্স। ইভান কী জবাব দেয় তাই শুনতে তনুজা আগ্রহী ছিলো।

-” ইভান ট্রাস্ট মি। ভালো প্রেমিকা আমি হতে পারিনি। তবে আই প্রমিজ একজন ভালো জীবন সঙ্গী হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেবো। বিলিভ মি। আর তোমার রাগ ক্ষোভ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেই থেকেই এমন বলছো। এইযে তুমি এখানে আসছো, আমি জানি আমাকে তোমার জীবনে ফিরে পেতে চাও। আমি আর কোনো বো°কা°মি করতে চাই না। আই উইল কাম ব্যাক ইনটু ইউর লাইফ, ইফ ইউ ওয়ান্ট,।”

ইভানের খুব বাজেভাবে কিছু বলতে ইচ্ছে করল। তবে কণ্ঠনালী অবধি শব্দগুলো আসলেও মুখ দিয়ে বের করে না সে। কোনো রকম শব্দগুলো গিলে নেয়। পরপর কিছুভেবে মুখে হাসি টেনে নেয়। একটু জোরেশোরে ডাকে,

-” তনুজা!”

তনুজা চকিতে চাইল। ইভান হাত নাড়িয়ে ঠান্ডা গলায় ফের বলে,

-” কী হলো! আসো।”

তনুজা বাধ্য মেয়েটির মতোন আলতো পায়ে এগোয়। তৃষা বিস্ময় নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে চায়। সাদা-আকাশি রঙের মিশ্রণের স্যালোয়ার স্যুট গায়ে। টানাটানা চোখ, গোলগাল মুখ। তনুজার আপাদমস্তক চোখ বুলায় তৃষা। এই সেই তনুজা! তার কাছে সাধারণ একটা ছাপোষা মেয়ে ঠেকছে তনুজাকে। তনুজা এসে ইভানের পাশে দাঁড়ায়। ইভান চোখের পলক তুলে তৃষার দিকে চায়। প্রগাঢ় স্বরে বলে,

-” মিট মাই ওয়াইফ। সী ইজ ফারিশতা নূর তনুজা। মাই মিসেস। মিসেস ইভান।”

তৃষা পরপর তনুজার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ইভানের পানে চায়। ইভানের চোখ দু’টোতে স্পষ্ট রাগ আর ঘৃ/ণা। তৃষা সহসা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। ঐ চোখ দু’টোর দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস তার হলো না। ইভান যে প্রত্যুত্তরটা এভাবে দিবে তা তৃষা স্বপ্নেও ভাবিনি। আজ ইভান এখানে তৃষার জন্য আসেনি, সে এসেছে তনুজার জন্য। তৃষার ভাবনায় বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত পানি ঢেলে দেয় ইভান। অপমানে থমথমে হয়ে যায় তৃষার শুভ্র মুখ। ইভান হাত বাড়িয়ে তনুজার একটা হাত ধরে। তনুজার কোমল আঙুলের ভাঁজে নিজের রুক্ষ-শক্ত লম্বা লম্বা আঙুল গলিয়ে দেয়। ইভানের আকস্মিক ছোঁয়ায় তনুজা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়। সারা শরীরে অদ্ভুত শিহরণ খেলে যায় তনুজার। বুকটা তার অস্বাভাবিক কাঁপছে। ইভান নির্লিপ্ত আছে। তনুজার দিকে তাকিয়ে মোলায়েম স্বরে বলল,

-” লেটস গো।”

তৃষার সাথে কথা বলার ইচ্ছে আর রুচি কোনটাই তার নেই। তনুজার বিস্ময় কা°ট°ছে না। রুমের মধ্যেও যে মানুষটা দুইহাত দূরত্বে থাকে। তার হঠাৎ কী হলো রাস্তায় মানুষের মধ্যে হাত ধরেছে!

-” কী হলো চলো! তুমি কী চাইছো এখন সবার সামনে তোমাকে কোলে চড়িয়ে গাড়িতে বসাতে! দ্যাখো রাস্তায় লোকলজ্জার ব্যাপার-স্যাপার আছে। সো সম্ভব নয়। তাই বলছি রাতে তোমার সব ইচ্ছে একসাথে পূরণ করবো। এখন ফাস্ট চলো।”

তনুজার কান দিয়ে উষ্ণ ধোঁয়া বেরুতে থাকে। তনুজা দফায় দফায় অবাক হচ্ছে। আর লোকটার হঠাৎ কী হলো! ভেবে দিশা পাচ্ছে না তনুজা। ইভানের থেকে এহেন লাগামহীন কথা তনুজা কস্মিনকালেও ভাবেনি। তনুজা অপ্রস্তুত হয়। মুখ দিয়ে রা শব্দটিও বেরোয় না।

ইভান ফিরেও তাকায় না তৃষার দিকে। তনুজার হাত ধরে সে গাড়ির কাছে যায়। ইফতিয়ার ইভান জানিয়ে দিতে চায়, তার জীবনে তৃষা নামক রমণীর কোন অস্তিত্ব নেই। আজ তৃষার মতোন অভিনয় দিয়েই সে তৃষাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। ইভান ড্রাইভ করছে। তনুজা কোণা চোখে চাইছে। তনুজার কিছু প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, তবে সাহসে কুলায় না।

__________

পড়ন্ত বিকেল। জানালা গলিয়ে বিকেলের নরম রোদ এসে নিতির চোখেমুখে পড়ছে। নিতি নরম বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে, হাতে তার গল্পের বই। পা দু’টো জানালার গ্রিলের উপর রাখা। হঠাৎ কিছু মনে হতেই ধপ করে শোয়া থেকে উঠে বসে। পরপর তনুজার রুমের সামনে যায়। দরজাটা ভিড়ানো ছিলো। এই সময় ইভানও তো বাড়িতে থাকে না। তাই নক না করেই রুমে ঢুকে সে। হালকা কেশে ঘরময় নজর বুলায়। ফাঁকা ঘর। সোজা ব্যালকনিতে যায় সে। সেখানে এক রমণী দুইহাত বুকে গুঁজে উদাসীন হয়ে আকাশপানে চেয়ে। নিতি পিছন থেকে তনুজার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে,

-” ভাবিমণি! এখানে এভাবে দাড়িয়ে কী করছো?”

তনুজা উদাসী হয়ে ভাবনায় এতটাই ডুব দিয়েছিলো যে নিতির উপস্থিত টের পায়নি সে। আচমকা নিতির এভাবে ধরায় চমকে উঠে। পরপর নিতির গলা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বলে,

-” ওহ্; তুমি। আমি তো চমকে গিয়েছিলাম।”

-” চমকে গিয়েছিলে, নাকি যাকে ভেবেছিলে তার জায়গায় আমাকে দেখে হতাশ হলে! নিশ্চয় ভাইয়াকে ভেবেছিলে। তোমার সে ভাবনায় সে গুড়ি বালি দিয়ে সেখানে তোমার রায় বাঘিনী ননদিনীকে পেলে। যে কীনা বি’র’ক্ত করতে চলে এলো।”

তনুজা নিতির দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হাসলো। বলল,

-” এই না না মোটেই ওরকম কিছু ভাবিনি আমি। তুমি ভুল বলছো। আর কে বলেছে আমি বিরক্ত হবো। একলা ছিলাম তোমার আসাতে ভীষণ ভালো লাগছে।”

নিতি বিনিময় মিষ্টি হাসে। তনুজা মিষ্টি করে বলে,

-” চলো রুমে বসবে।”

নিতি ব্যালকনিতে থাকা দোলনায় আয়েশ করে বসতে বসতে বলে,

-” উঁহু; রুমে নয়। এখানেই বসি। তুমিও বসো। রুমে একা ভালো লাগছিলো না। তাই ভাবলাম তোমার সাথে গল্প করি গিয়ে। তুমিও বসো।”

-” হুম।”

তনুজা নিতির পাশে বসে। নিতি এটা-ওটা বলছে তনুজা অল্প স্বল্প বলছে। অনেকক্ষণ গল্প করার পর নিতি হঠাৎ শুধোয়,

-” ভাবিমণি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো, প্লিজ বে°য়া°দ°বি নিও না ক্যামন? আগে বলো মাইন্ড করবে না।”

তনুজা আলতো হেসে বলে,

-” আচ্ছা বাবা আচ্ছা। আমি কিচ্ছু মনে করবো না। তুমি নির্দ্বিধায় বলতে পারো।”

-” আমি তো তোমাদের বিয়ের মধ্যে ছিলাম না। নৃত্যর থেকে সবটা শোনা। আচ্ছা তুমি আমায় একটু মনে করো বলো তো সেদিন কী হয়েছিলো?”

তনুজার মুখের হাসি মূহুর্তেই মুখে পুরা হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো নাই হয়ে যায়। মুখটা ম্লান হয়ে আসে। বলে,

-” সে রাতের কথা আমি ঠিক মনে করতে পারি না। আমার পুরো রাতের কথা কিছুই মনে নেই। তবে সবাই যেটা ভাবে সেরকম কিছুই হয়নি এটা আমি শিওর। কারন সেরকম কোন সিমটম দেখা যায়নি।”

নিতি তনুজার কথা সবটা বুঝল।

-” আচ্ছা তোমাকে রাতের কথা বলতে হবে না। আমি যতদূর জানি ভাইয়ারও একই কথা ছিলো। তবে তুমি একটু কষ্ট করে মনে করো। সেদিন তোমার সব মনে থাকা অবস্থায় কী কী ঘটেছিলো? পুরো দিনের কথাই বলো।”

তনুজা মস্তিষ্কে প্রেশার দিয়ে মনে করতে থাকে। আর বলতে থাকে। একপর্যায়ে সে বলে,

-” রোজকার মতো আমি ডিনার সেরে রুমে বসে পড়ছিলাম। এরমধ্যে খালা (বুয়া) দুধ নিয়ে আসে।”

নিতি থামিয়ে দেয়,

-” দুধ নিয়ে আসে মানে? এটা সেদিনই প্রথম নাকি আগেও এনেছে।”

-” সেদিন দিয়ে দুইদিন। আগেরদিনও এনেছিলো। বলেছিলো আন্টি খেতে বলেছে। ইয়ে মানে মামণির কথা বলে।”

-” মামী বলেছে তুমি শিওর ছিলে?”

-” আন স্যরি মামণি তো আমায় খুব আদর করতো। খাওয়ার সময় নিজে তুলে দিতো। তাই এখানে অবিশ্বাস করার কিছু ছিলো না। তারপর মামণি জানতেন আমার প্রেশার লো। দাদি বলেছিলো। তাই থেকে।”

-” আচ্ছা তুমি বলে যাও।”

-” তারপর আমি পড়তে থাকি। আমার হঠাৎ প্রচন্ড ঘুম পায়। আমি চোখ মেলে চাইতে পারছিলাম না। এমনিতেই আমি ছোট থেকেই ঘুমে কাবু। তবে সেদিন একটু বেশিই ঘুম পাচ্ছিলো। তারপর আমার আবছা মনে পরে, আমি বিছানায় যাবো বলে আগে ওয়াশরুমে যাই। তারপর..তারপর।”

-” তারপর কী? তারপর কী ভাবিমণি?”

-” আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। বোধহয় ওয়াশরুম থেকে এসেই শুয়ে পড়ি।”

-” বোধহয়? তুমি শিওর করে বলতে পারছো না, রাইট?”

-” হু। তবে এরকমই হবে।”

-” আচ্ছা তুমি যে রুমটায় থাকতে সেখানে তো অ্যাটাস্ট ওয়াশরুম নেই। উপরের করিডোর পেরিয়ে কমন ওয়াশরুম ইউজ করতে, রাইট?”

-” হু।”

নিতি মনেমনে আওড়ায়, ” এখানেও বুয়া। আচ্ছা বাকিটা দেখা যাক।”

নিতি গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

-” আচ্ছা ভাবিমণি একটা কথা বলতো এই বিয়ে হওয়াতে ভাইয়ার উপর তোমার কী রাগ-ক্ষোভ আছে? তাকে কী তুমি কোনভাবে দায়ী মনে করো? যা বলবে সত্যি বলবে। একদম মন থেকে।”

তনুজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। থেমে থেমে বলে,

-” আসলে প্রথম প্রথম আমার মনে হতো হয়তো উনি দায়ী। তবে একসাথে থাকতে গিয়ে বুঝলাম, না এখানে উনার হয়তো কোনো দোষ নেই। আর আমার সেই মূহূর্তে প্রচন্ড খারাপ লেগেছিলো, আমি নাহয় মেয়ে। আর মেয়ে মানুষ মন থেকে চাইলেও অনেক কিছু সম্ভব হয় না। সবার সামনে জোর গলায় বলা যায় না। তবে উনি ছেলে হয়ে কেনো এই বিয়েতে রাজি হলো। যেখানে সবাই যা ভাবছে তা সম্পূর্ণ ভুল। উনি রাজি না হলেই এই বিয়ে হয় না। তিনটে জী_”

এতটুকু বলেই থেমে যায় তনুজা। অসম্পূর্ণ রাখে কথা। নিতি বুঝে কথাটা। তিনটে জীবন বলতে তনুজা একচুয়েলি কী বলতে চেয়েছিলো। নিতি আলতো হেসে বলে,

-” তোমাকে শুধু একটা কথাই বলতে চাই, মেনে নাও না আমার ভাইয়াকে। এটা আমার থেকে একটা সরল আবদার এর বেশি কিছুই নয়। আর হ্যা আমার ভাইয়াটা কিন্তু মানুষ হিসেবে খারাপ না। ভাইয়ার জীবনের কিছু ট্রাজেডি ভাইয়াকে চেঞ্জ করে দেয়। আমার মনেহয় তুমি চাইলে তাকে আবার আগের মতোন কনভার্ট করতে পারবা। তার দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে নিজের জন্য জায়গা করে নাও তার মনে। আর মানুষের জীবনে কিছু না কিছু অতীত থাকে। তবে সারাজীবন অতীত আঁকড়ে থাকে না অনেকেই। নতুন করে বাঁচতে শেখে।”

তনুজা অবাক হয়। এখানে অতীত বলতে শুধু কী ইভানের কথাই বলেছে? নাকি তার কথাও বলেছে? তবে কী নিতি ওর আর দিব্যর কথা জানে? নিতি সরাসরি বলে তনুজাকে অস্বস্তিতে ফেলতে চায় না। তাই দ্রুত প্রসঙ্গ বদলাতে বলে,

-” এইরে তুমি আমার ভাবি। সম্পর্কে বড়। অথচ আমি নির্বোধের মতোন ছা/গ/লামি করে যাচ্ছি। তোমাকে জ্ঞান দিচ্ছি। স্যরি ভাবিমণি।”

দুইহাত কানে ধরে নাকমুখ কুঁচকে হেসে বলে নিতি। নিতির বাচ্চামো স্বভাব দেখে তনুজা হেসে ফেলে।

_____________

রাত এগারোটা পেরিয়েছে। ইভান রুমে ঢুকে। তনুজাকে বিছানায় না দেখে তার কপালে ভাঁজ পরে। পরপর রুমে ঢুকে হাতের ব্লেজারটা সোফায় রাখে। একসাথে লাগানো বুক সেলফের সাথে সেট করা চেয়ারে নজর যায়। তনুজা চেয়ারে বসে টেবিলের উপর থাকা বইয়ের উপর মাথা দিয়ে হাত দুটো টেবিলের উপর রেখে ঘুমুচ্ছে। এই মেয়ে কী ঘুমকাতুরে রে বাবা! পড়তে বসেও ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ইভান তো জানে না। দিদুন বলেছেন স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে, আগেই না ঘুমিয়ে পড়তে। আজ অপেক্ষা করবে বলে বই নিয়ে ঝিমুচ্ছিলো তনুজা। অবশেষে ঘুমের সাথে যুদ্ধে না পেরে মাথাটা টেবিলে রাখতেই পারি জমায় ঘুমের রাজ্যে।

ইভান ওয়াশ রুমে যায়। পরপর ফ্রেশ হয়ে গ্রিন কালারের টিশার্ট আর এ্যশ কালারের টাউজার গায়ে জড়ায়। তনুজা ওভাবে ঘুমিয়ে আছে বেচারির উপর মায়া হলো। পাশে দাঁড়িয়ে তিনবার করে ডাকার পদক্ষেপ নিয়েও ইভান থেমে যায়। এত সুন্দর ঘুমটা ডেকে ভাঙতে ইচ্ছে করলো না। আচমকা ইভান তনুজাকে কোলে তুলে নেয়। আলগোছে শুয়ে দেয়। তনুজা ঘুমের মধ্যে ঠোঁট নাড়ালো। একদম বাচ্চাদের মতো লাগলো। তনুজাকে শুয়ে দিয়ে সোজা হতে গিয়ে ইভানের টিশার্টে টান পরে। চোখে পরে তনুজার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইনটা তার টিশার্টের বোতামে আটকিয়েছে। ইভান তনুজার দিকে আরেকটু ঝুঁকল হাত দিয়ে বোতাম থেকে চেইনটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে সে। ইভানের গরম নিঃশ্বাস তনুজার গায়ে পরছে। ইভানের হাত দু’টো কাঁপছে। মেয়েলি মিষ্টি গন্ধটা মা°দ°কতার মতো ঠেকছে। ইভান চেইনটা ছাড়ায়। পরপর তনুজার ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখশ্রীতে তাকাল। নিউ ফ্লারিস্ট রোজের মতোন লাগছে মুখটা। পুরো আদুরে, মায়া জড়ানো একটা মুখ। ইভান একহাতে তনুজার মুখের উপর থাকা বেবি হেয়ার সরিয়ে দেয়। তনুজা যেনো চুম্বুকের মতোন টানছে তাকে। আকর্ষণ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ইভান বড়বড় শ্বাস ফেলে শুয়ে পরে। মেয়েটা তাকে খুব বেশিই জ্বালাতন করছে। তাকি সে জানে? উঁহু! সে তো বিভোরে আরামসে ঘুমুচ্ছে। এদিকে আরেকজনের ঘুম হা’রা’ম করে।

#চলবে

#প্রণয়ের_বাঁধন |১৩|
#লেখনীতে_মুসতারিন_মুসাররাত

ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে বিকেল চারটে পঁচিশ বাজে। নিতি পা দু’টো বিছানায় তুলে বাবু মে/রে বসে দাঁত দিয়ে নখ কা’ট’ছে। পাশেই নৃত্য কোলের উপর রাখা কুশনে কনুই ঠেকিয়ে ডান হাতটা তার মাখনের মতোন নরম গালে ঠেস দিয়ে আছে। বিজ্ঞের মতো গোলগোল চোখ করে চেয়ে কিছু ভাবতে ব্যস্ত সে। নৃত্যর ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে নিতি নড়েচড়ে বসে শুধোয়,

-” সব তো শুনলি। ভাবিমণির থেকে যা শুনেছি এ টু জেড তোকে বলা শেষ। এখান থেকে কোনো ক্লু পাওয়া গেলো কী? তোর কী মনে হচ্ছে?”

নৃত্য বিরক্তি মুখবিবর করে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-” আহ্; আপু। একটু ভাবতে তো দিবে। তোমার তো সব কিছুতেই তাড়াহুড়ো। একটুও তর সয় না তোমার। ভালো করে না ভেবে কাকে গিয়ে কী বলে ফেলি! শেষমেষ আসল দোষী বাইরে থাকল। আর নির্দোষ কাউকে সন্দেহের তোপের মুখে ফেলে না দেই।”

বোনের এত বিজ্ঞ ভাবসাব আর কথার ঝাঁঝ দেখে আড়ালে মুখ ভেংচি কা’টে নিতি। বোন এখন আবার কাকে সন্দেহ করে বসল, আল্লাহ মালুম। তবে বোনের সন্দেহ একেবারে নিছক হয় না। এইযে সে দিব্যকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করে না। এটা আর কারো খেয়ালে না আসলেও বোন ঠিক খেয়াল করেছে। এই নিয়ে বোন তো রীতিমত সন্দেহ করে। একদিন তো সোজা প্রশ্ন করে উঠেছিলো,

-” ব্যাপার-স্যাপার কী আপু! তুমি ইভান ভাইয়াকে তো বেশ ভাইয়া বলে ডাকো, তবে দিব্য ভাইয়াকে কেনো ভাইয়া বলো না। কেমন একটা উয্য রাখো। ছোটো মির্জা, জিদি, রাগি মির্জা বলে সম্বোধন করো। বিষয়টা মোটেও স্বাভাবিক নয়।”

বোনের এই সন্দেহটা মিথ্যেও নয়। যবে থেকে দিব্যর প্রতি তার মনে সুপ্ত অনুভূতি জন্মেছে, তারপর থেকেই ভাইয়া ডাকতে নিতির ইচ্ছে করতো না। কিশোরী বয়স থেকেই দিব্যকে তার ভালো লাগত। অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর একটু একটু করে অনুধাবন করল; শুধু ভালোই লাগে না, বরং সে দিব্যকে ভালোবাসে। কিন্তু মেয়ে বলে লজ্জা আর দ্বিধা কাজ করে। তাই আজও সরাসরি প্রপোজ করা হয়নি। আকার ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও গা/ধাটা বুঝেনি। আর বুঝবে কীকরে সব সময় সে তো হাই মেজাজ নিয়ে চলে। নিতি বোনের করা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সুন্দর করে হেনতেন বলে এড়িয়ে যায়। তবে নিতির অনুভূতির জোয়ারে ভাসা মন বলে, দিব্যর সাথে তার থেকে ভাইয়া ডাকটা যায় না। বড্ড বেমানান। বাজে লাগবে। শেষমেষ এমন অবস্থা হবে রোমান্টিক কোন মূহুর্তে দিব্য জোর করে দু’টো চুমু-টুমু খেতে গেলে, আচমকা বলে উঠতে পারে,

-” ঐ ভাইয়া না প্লিজ।”

ইশশ্! এমন হলে লজ্জায় পড়তে হবে। তাই আগে থেকেই নিতি দিব্যর জন্য তার থেকে ভাইয়া ডাকটা খ°ত°ম করেছে, হু। গোল ফ্রেমের চশমাটা এক আঙুলের সাহায্যে নাকের ডগায় নামিয়ে ফের চোখে এঁটে, গলা খাঁকারি দিয়ে বলে নৃত্য,

-” আমার আগেই কেমন একটা সন্দেহ হতো বুয়াকে নিয়ে। সেদিন সাত সকালে বুয়াই কিন্তু চিল্লিয়ে সবাইকে ডেকে হুলুস্থুল কাণ্ড করেছিলো। আমার এ-ও খটকা লেগেছিলো, সেদিন বুয়া সকাল সকাল ভাইয়ার রুম ঝাড়ু দিতে চলে গেলো। না মানে প্রথমেই ঐ রুম। কথাটা সেদিন সবার সামনে বলতে চেয়েও পারিনি। আমি কিছু বলতে গেলেই তো মাম্মা কষিয়ে ধ’ম’ক দেয়। আর সেদিন নানুআপুর চেঁচামেচির সময় মাম্মা ধ’ম’কিয়ে আমাকে রুমে চলে যেতে বলে। কৌতুহল নিয়ে পরে যা আড়ালে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখেছিলাম এতটুকুই।”

একটু থেমে সিরিয়াস হয়ে ফের বলতে থাকে,

-” ভাবিমণির বয়ান থেকে জানলাম, ভাবিমণিকে সেদিন দুধ দেয় বুয়া। মামীর আদেশে। বিভিন্ন সময় আমরা ক্রাইম নিউজে দেখি এসব কোমল পানীয়ের ভেতরই কিন্তু গন্ডগোল হয়ে থাকে। এখন সন্দেহ দু’টো; এ বাড়িতে বাইরের লোক আসেনি, যা হয়েছে বাড়ির ভেতরের লোকদের দ্বারাই। কথা হলো বুয়া কেনো এরকম করতে যাবে? তার উদ্দেশ্য কী? তার লাভই বা কী? নিশ্চয় লাভ আছে। লাভ ছাড়া আজকাল কেউ সুতোটিও সরাবে না। বুয়াকে দিয়ে কেউ করাতে পারে। সেই আড়ালে থাকা কেউ কে? প্রথম সন্দেহ মামী?”

আহা! বোনের কথার ভাঁজ দেখে মনে হচ্ছে কোন বড় কেইস স্টাডি করছে সে। তবে মামীর নাম শুনতেই নিতির চোখ দু’টো কপালে ওঠে। তেতে গিয়ে হইহই করে বলে ওঠে,

-” ইয়া মাবুদ! মাথা ঠিক আছে তোর? অ্যাই? অ্যাই তুই কী বলতে চাইছিস, হ্যা। মামী! মামী এসব করতে যাবে কেনো? আ’জ’ব!”

নৃত্য নাকের পাটাতন ফুলিয়ে বলে,

-” আরে তুমি না বুঝে হাইপার কেনো হচ্ছো? আমার পুরো কথাটা তো আগে শুনো। তারমধ্যে বাড়িতে দিব্য ভাইয়া ছিলো না। তাই সে আপাতত সন্দেহের লিস্টে থাকছে না। মামাও বাড়িতে ছিলেন না,হু। এখন আমার সন্দেহে প্রথম মামী এন্ড দ্বিতীয় ইভান ভাইয়া। এছাড়া এবাড়িতে আর কেউ সন্দেহের নেই। নানুআপু নিশ্চয় এসবে নেই। আর মাম্মা সেও এসবে থাকবে না, আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারব। এখানে ভিকটিম ভাবিমণি। বাদ বাকি সব গুলোকে তালিকায় এনে অনুসন্ধান চালিয়ে যাই। দেখা যাক শেষমেষ কী হয়!”

-” ওকে ওকে।”

নিতি বিরক্ত হয়ে বলে। নৃত্য ভ্রুকুটি করে মৃদুস্বরে বলে,

-” আজকে আমাদের জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ আছে। মাম্মা দিদুনকে ডক্টরের কাছে চেকাপ করতে নিয়ে গিয়েছে। মামী অফিসে। বাড়িতে বড়রা কেউ নেই। আন্দাজে একটা ঢিল ছুড়ে দেখি। দেখি লাগে কীনা! কাজে আসলে লাভ, না আসলেও লস নেই। আর তোমাকে বললাম না, সেদিন বুয়াকে ফোনে কারো কাছে টাকা চাইতে শুনেছি আমি, বলে দিবো এরকমও বলছিলো। নানুআপু আমাকে বুয়াকে ডাকতে পাঠিয়েছিলো। তার থাকার কক্ষে যেতে গিয়েই আমার কানে আবছা আসে। পায়ের শব্দ শুনে তড়িঘড়ি করে কল কাটে। আর কেমন ঘাবড়ে যায়। চো/র ধরা পরার মতোন মুখ কাচুমাচু করে। চলো মিশনে নামি। বাকিটা দেখ যাক।”

কথাটা শেষ করে নৃত্য নিতির কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে আরো বলে। এমন ভাবে বলছে মনে হচ্ছে দেওয়ালেরও কান আছে বোধহয়। আর তারা শুনে ফেললে বড়সড় সমস্যা হয়ে যাবে।

.

সেদিন সকালে নিতি যখন ক্লোরোফর্ম স্প্রে বোতলটা দেখছিলো। আর পাশে থাকা নৃত্যকেও ডেকে দেখায়। নিতি অতটা না ভাবলেও নৃত্য ভাবে, আর বলে,

-” ক্লোরোফর্ম স্প্রে! এটা দিয়ে তো মানুষকে অচেতন করা হয়। বাড়িতে এটা এলো কী করে! কে কিনবে? কী জন্য!”

সম্প্রতি কয়েকদিন আগের ঘটনা তার মনে নাড়া দেয়। এটা ইভানের বারান্দা বরাবর নিচে পরে আছে। এই নিয়ে সন্দেহটা জোড়ালো হয়। নৃত্য বলে,

-” আচ্ছা কোনো ভাবে এটা সেদিন রাতে ইউস করা হয়নি তো। না মানে ভাবিমণির নাকি সে রাতের কথা কিছুই মনে পড়ে না। আবার ভাইয়াও সেইম বলেছিলো। ভাইয়া নাহয় ড্রিংক করে তার মনে না থাকা অতটা অস্বাভাবিক নয়। তবে ভাবিমণি গোটা রাতের কথাই মনে করতে পারে না। কিছু তো সমস্যা আছে। তাকে মে বি অচেতন করা হয়েছিলো! আমার তো প্রথম থেকেই এরকমটা মনে হয়। আচ্ছা আপু আমি তো ছোটো তাই এই নিয়ে কথা বললে খারাপ দেখাবে। তাই তুমি ভাবিমণির থেকে শুনে নিও, পরে আমাকে বলো। সেখান থেকে কোনো ক্লু পাওয়া যায় কীনা। আর ক্লোরোফর্ম স্প্রে এটা নিশ্চয় কেউ ভালো উদ্দেশ্যে আনেনি। কারো ক্ষ°তি°র জন্যই। এটার সাথে ওটার কোনো সম্পর্ক নেই তো। জানাটা জরুরী।”

___________

বুয়া কিচেনে পাস্তা বানাচ্ছে। ইউটিউব দেখে নৃত্য বলে যাচ্ছে কীভাবে কীভাবে মশলাপাতি কোন সময় দিতে হবে। নৃত্যর নাকি পাস্তা খেতে মন চাইছে। তাও এক্ষুনি। বুয়া ভাত,গোশ,ডাল, হরেক রকমের পিঠা বানাতে পারলেও এসব শহুরি ছেলেমেয়েদের খাবার গুলো তেমন পারে না। নৃত্য পাস্তার কথা বললে, বুয়া ভালো হবে না জানায়। শিরিন সুলতানা, তারপর তনুজাকে এসব বানাতে দেখলেও, এখনো আয়ত্তে আসেনি তার। তাই ঠিকঠাক পারে না জানায়। কিন্তু নৃত্য নাছোড়বান্দার মতোন বলে, সে ইউটিউব থেকে বলে বলে দিবে।

হঠাৎ নৃত্য ইউটিউব থেকে একটা ভিডিও জোরে সাউন্ড দিয়ে টেনে অন করে দেয়,

-” সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে ধরা পড়লেন মূল আসামি। গোপন ক্যামেরায় একএক করে সব তথ্য উন্মোচন হয়।………. বাড়ির গৃহকর্মীর সহযোগিতায় এমন জ’ঘ’ন্য অ’প’রাধ সংঘটিত হয়।…. গৃহকর্মী সহ মূল অপরাধী বর্তমানে জেলহাজতে।”

বুয়া প্যানে খুন্তি দিয়ে নাড়ছিলো আর তার হাত মৃদু কাঁপছিলো। নৃত্য কেবিনেটের উপর বসে চোরা চোখে সবটা অবলোকন করছে। ভিডিও পুশ করে নৃত্য একলাফে নেমে দাঁড়ায়। খুঁজে খুঁজে কিসমিসের কৌটা বের করে। তারথেকে হাতে কয়েকটা কিসমিস নেয়। মুখ পুরে চিবুতে থাকে। কিসমিস খেলে নাকি, বুদ্ধি বাড়ে। এবার বুদ্ধি বাড়িয়ে সে ফিল্ডিংয়ে নামে। গম্ভীর মুখশ্রীতে বুয়ার পানে চায়। কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে ভারিক্কি গলায় বলে,

-” তুমি বোধহয় জানো না। আমাদের বাড়িতেও গোপন ক্যামেরা আছে। যেটা বাড়ির কোণায় কোণায় লুকিয়ে রাখা। আমি আজকে কিছু কারনে পুরোনো ফুটেজ চেক করছিলাম, সেই সময় সেদিন, আই মিন যেদিন তনুজা ভাবী আর ভাইয়া একরুমে ছিলো সেদিনকার পুরো ঘটনা দেখেছি।”

বুয়ার হাত-পায়ের কম্পন ক্রমশ বাড়তে থাকে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। অতটা না জানলেও টিভি-সিনেমা দেখে সে সিসিটিভি ক্যামেরা সম্পর্কে অল্প স্বল্প জানে। এই বাড়িতে শুধু মেইন গেইটের দুইদিকেই তো দু’টো সিসিটিভি ক্যামেরা এযাবৎ কালে দেখে আসছে সে। বাড়ির ভেতরে আছে তা তো অজানা তার। আর বড়লোকদের ব্যাপার-স্যাপার সে জানবে কী করে! তাদের সমন্ধে জানা, বোঝার সাধ্যি তার আছে নাকি! নৃত্যর কথায় বুয়া ভড়কায়, হকচকায়। নৃত্য পুরোদমে সুন্দর করে মিথ্যে বলে কথা বের করতে চায়,

-” ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তুমি তনুজা ভাবিকে।”

এতটুকু বলে থামে নৃত্য। বুয়ার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। খুন্তি দিয়ে নাড়তে গিয়ে হাত থেকে ছিটকে নিচে পরল। মুহুর্তে ঝনঝনিয়ে শব্দ চারিদিকে ছড়ায়। নৃত্য কপালের ভাঁজ গাঢ় করে বলতে থাকে,

-” কেনো করেছো এসব? কে বলেছে তোমায়? বলো আমায়। তাছাড়া বাড়ির সবাইকে কিন্তু ফুটেজগুলো দেখিয়ে দিবো। শেষে জেলের ঘানি টানতে হবে কিন্তু। তাই বলছি সময় থাকতে থাকতে সত্যিটা বলে দাও।”

পাস্তাগুলো প্যানে লেগে ধরেছে। পোড়া পোড়া গন্ধ বেরুচ্ছে। বুয়ার সেদিকে মনোযোগ নেই। সে রীতিমতো কাঁপছে আর ঢোক গিলছে। নৃত্যের সন্দেহ আর টোপটা ঠিক লাগছে। বুয়া নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে। মেকি রাগ দেখিয়ে জোর গলায় বলে,

-” ক-ক- কী কইতাছো তুমি? আমি কী করবো হ্যা! মাথা মুন্ডু ঠিক আছে তোমার! হুদাই কীসব কইতাছো। আর কীসের…”

বুয়া জোর গলায় নিজেকে জাহির করতে চায়। নৃত্য একহাতে চুলাটা অফ করে। তারপর চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। আর বলে,

-” জানি তো এমনি এমনি বলবা না। যাই এক্ষুনি পু/লি/শকে ফোন করে আসতে বলি। আর ফুটেজগুলো একএক করে সবার ফোনে দিয়ে দেই। পু/লি/শের দুচার ঘা পড়লে গড়গড় করে মুখ খুলবে।”

নৃত্য পা বাড়ায়। পু/লিশের নাম শুনে বুয়ার পায়ের তলার মাটি সরে যায়। চোখে অন্ধকার দেখতে থাকে। হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠে বুয়া। নৃত্যর হাত দুইহাতে আঁকড়ে ধরে। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-” আল্লাহর দোহাই লাগে! নৃত্য মা আমার তুমি পু/লিশরে ডাইকো না। বিশ্বাস করো আমার কোনই দো’ষ নাইকো। আমি ইচ্ছা কইরা কিছুই করিনি।”

নৃত্যর মনে খুশির ঝিলিক দেখা যায়। তাদের বাড়ির বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও, ভেতরে নেই। এটা তো একটা আন্দাজে ঢিল ছুড়া ছিলো। তবে কিছু সন্দেহও ছিলো। অল্প স্বল্প মিথ্যে থেকে যদি ভালো কিছু হয়। তাহলে সেটা নিশ্চয় দোষের কিছু নয়। যাজ্ঞে ভালোই হলো। নৃত্য বুয়ার একটা হাত ধরে টানতে টানতে লিভিং রুমে আনে। যেখানে আগে থেকেই নিতি বসে ছিলো। নৃত্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,

-” কে বলেছে? আর কীজন্য এসব করেছো সবটা খুলে বলো।”

ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতে কাঁদতে আওড়ায়,

-” বিশ্বাস করো তোমরা আমি নিজের থাইকা কিছুই করিনি। আমারে কইছিলো তাই।”

নিতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,

-” কে বলেছিলো?”

কান্নার বেগ বাড়িয়ে জবাব দেয়,

-” আমি ছেলেটার নাম জানি না। তয় দেখছি কয়বার।”

দিব্য নিজের রুমে ছিলো। দুপুরে ভাতঘুম দিয়ে এখন ফ্রেশ হয়ে বাইরে যাচ্ছিল। সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতে গিয়ে বুয়াকে কাঁদতে আর তাকে ঘিরে নৃত্য-নিতি দুইবোনকে অ/গ্নিচক্ষু নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখে বার কয়েক পলক ঝাপটায় দিব্য। লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে ধ’ম’ক দিয়ে বলে,

-” কী হচ্ছে কী এখানে? তোরা কী করছিস? আর বুয়ার কী হয়েছে?”

দুইবোন ঘাড় ঘুরিয়ে দিব্যর দিকে একপল চাইল। বুয়া মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। নিতি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

-” কী হয়েছে সেটা বুয়া নিজে বলবে। সেদিন ও ভাবিমণির সাথে কী করেছে সেটা বলবে। কার কথামতো করেছে সেটা বলবে।”

দিব্যর চোখমুখে বিস্ময় প্রকাশ পায়। ও তো এ কদিন ধরে আসল ঘটনা জানার জন্য মরিয়া ছিলো। দিব্য ত্রস্ত পা ফেলে এগোয়। তনুজা রুমে ছিলো। হঠাৎ কারো কান্নার শব্দ ভেসে আসে। উৎস খুঁজতে নিচে আসছিলো। দিব্যর দিকে নজর পড়তেই তার পা দুটো থেমে যায়। একবার রুমে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু পারে না। একজন মানুষ কাঁদছে। তারপর গরীব, অসহায় মানুষের প্রতি তনুজার দরদ, সহানুভূতি একটু বেশিই। নিজেও যে বড্ড অসহায় তাই হয়তো। আর নয়তো তার ভেতর সুন্দর একটা কোমল হৃদয় আছে। অন্যের ব্যাথায় ব্যথিত হওয়া। তাই তনুজা ফিরতে চেয়েও পারল না। এক পা দু পা করে ক্রমশ নিচে নামতে থাকে।

দিব্যর হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। দাঁত কটমট করে বলে,

-” কার কথা মতো? আর কী করেছো বলো? এক সেকেন্ড দেরি হলে খু/ন করে ফেলবো কিন্তু। ফাস্ট এন্ড ট্রুলি সবটা বলো। বলো।”

দিব্যর ধ’ম’ক দেওয়া কথাটা দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। বুয়া কেঁপে উঠলো। জরাজীর্ণ রঙচটা শাড়ির আঁচলটা টেনে মুখে চেপে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। হাউমাউ করে কাঁদছে। তনুজা এগিয়ে আসে। নৃত্য দুই আঙুল কানে গুঁজে বিরক্ত হয়ে বলল,

-” অ্যাই থামবে তুমি। ভ্যা ভ্যাঁ করে পাছে কেঁদো। আগে সবটা বলো।”

নিতি-নৃত্য দুই বোনের এহেন আচরণে তনুজা চরম আশ্চর্যান্বিত হয়ে চেয়ে থাকে। তারা দুইবোন তো যথেষ্ট ভদ্র আর ভালো মনের। তাহলে এখন কীজন্য বুয়ার সাথে রুঢ় আচরণ করছে! দিব্য মানেই একটা জম। যে রাগ বাবা! তার ধ’ম’ক শুনে বুয়ার হৃদপিন্ডটা ছিটকে বেরিয়ে আসার জো হয়েছে। বুয়া দিব্যর পা জড়িয়ে ধরে।

-” আমি কিছু করি নাইকো বাপ। আমার কোনই দোষ নাইকো। বিশ্বাস করো।”

দিব্য দাঁত কটমট করে নিতির পানে চেয়ে এক আঙুল নাড়িয়ে ইশারা করল। নিতি বুয়ার বাহু টেনে ছাড়িয়ে সোজা করে বলল,

-” উফঃ তাড়াতাড়ি বলো। বেশি দেরি করলে কিন্তু ছোট মির্জা ডিরেক্ট অ্যাকশনে চলে যেতে পারে। সব বলো। কে বলেছে আর কীভাবে কী করেছো?”

বুয়া চোখের জল নাকের জল এক করে বলতে থাকে,

-” একটা ছেলে আমারে কয়দিন ধরছিলো। টাকার লোভ দেখাইছিলো। কামডা কইরা দিলে ম‌্যালা টাকা দিবো। গরীব মানুষ বোঝেনই তো। প্রথমে রাজি হইনি কো। পাছে গিয়া লোভে পইরা রাজি হই। আমি ভুল কইরা ফ্যালাইছি দিব্য বাবা। আমারে মাফ কইরা দাও।”

দিব্যর কপালের রগগুলো দপদপ করছে। একহাত কোমড়ে অন্যহাতে কপাল স্লাইড করছে সে। তনুজা ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে দেখছে আর বিস্মিত হচ্ছে। দিব্য কষে আরেকটা ধ’ম’ক দিতেই বুয়া হড়বড় করে বলতে লাগল,

-” তনুজা মা’রে আর ইভান বাবাজিরে একসাথে দেখাইয়া সগলের কাছে খারাপ বানাইতে চাইছিলো। যাতে করি খালাআম্মা তনুজারে এই বাড়িত থাইকা তাড়াই দেয়। এর বেশি কিচ্ছু আমি জানিনি। ঐ পোলা যেভাবে কইছে আমি খালি তাই করছি।”

নিতি দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,

-” এতো দৃশ্যপট বাদ দিয়ে কীভাবে কী করেছিলে সেটা বলো আগে? পরে ঐ ছেলেকে বের করছি।”

দিব্য একটু করে অবাক হচ্ছে, তারমানে অন্যকেউ! এখানে ইভান নয়! বুয়া কেঁদে কুটে বন্যা ভাসিয়ে দিচ্ছে। থেমে থেমে বলে,

-” তনুজার খাবারে ঘুমের ঔষধ দিবার কইছিলো। আমি হেইডা দুধে দিয়েছিলাম। তারপর তনুজা বাথরুম থাইকা ঘুমে নিজের ঘরে যাইবার পারতিছিলো না। মাইয়াডা অ্যামনে ঘুমে কাবু। কয়দিনেই আমি এটা খেয়াল করছিলাম। দুধ দেওয়ার পর থেইকা আমি তক্কে তক্কে ছিলাম। তনুজা ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে নিজ রুমের দিকে যাচ্ছিলো। আমি তখন ওর হাত ধরে বলি, চলো তোমারে রুমে দিয়া আসি। ও ঘুমে চোখ তুইলা তাকাইতে পারছিলো না। ওর মনেকয় এটা মনে ছিলো না। সেইসময় আমি ওরে নিজের রুমে না নিয়া ইভান বাবার রুমে দিয়ে আসি। তারপর ইভান বাবা তো রাত কইরা বাড়িত ফিরে। রুমে ঢোকার আগ দিয়া আমি মেইন সুইচ অফ করে দেই। ইভান বাবা অ্যামনেই মদ খাইয়া আসে। তার তো হুশটুশ কমই থাকে। অন্ধকারে সে অমনি শুয়ে পরে। কিছুক্ষণ পর আমি রুমে গিয়ে ঐ পোলার কথামতো ঘুমানো ইভানের সামনে ঐ বোতল থেইকা একটু সেন্ট গায়ে মাখার মতোন করি।”

নিতি তড়িঘড়ি করে বলল,

-” ক্লোরোফর্ম স্প্রে করো, তাইতো।”

তনুজার হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। তার সাথে কার এতো শত্রুতা, যে সবার সামনে তাকে অ’প’মানিত, লা’ঞ্চিত, অ’পদস্থ করতে চেয়েছিলো। দিব্যর মাথায় দাউদাউ করে আ/গুন জ্বলছে। এটা মহিলা না হয়ে ছেলে মানুষ হলে দিব্য আজ আর বয়স দেখতো না। আচ্ছা মতো রা/গ মিটাতো। তবে বয়স্ক মহিলা দেখে তার ভেতর থাকা শিক্ষা তাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেয় না। দিব্য চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলে। চোখ দু’টো দিয়ে তার আ/গুনের স্ফুলিঙ্গ বেরুচ্ছে যেন। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে কন্ঠে তেজ নিয়ে বলল,

-” তোমার লজ্জা করলো না একবারো , বিবেকে বাঁধল না এসব করতে। নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়ের সাথে। আর ইভান। তুমি জানো ক্লোরোফর্ম সম্পর্কে? একটু মাত্রা এদিক ওদিক হলেই মানুষের প্রাণ চলে যায়। যদি ইভানের কিছু হয়ে যেতো।”

নিতি অবাক চোখে চেয়ে দিব্যর দিকে। যে ভাইয়ের সাথে আজ দেড় বছর কথা বলে না। দেখেও না দেখার মতোন চলে। অথচ ভাইয়ের জন্য আজ এভাবে বলছে। নিতির ভালো লাগল। তনুজার চারিপাশটা কেমন ঘুরছে। অস্থির লাগছে। বুয়া ফুঁপিয়ে বলে,

-” ছেলেটা বারবার কইছিলো সামান্য একটু দিতে। তাইলে পাঁচ থেইকা ছয় ঘন্টার ভিতরেই হুঁশ ফিরবে। কোনো সমস্যা হইবো না।”

নিতি বুয়াকে প্রশ্ন করে,

-” সেই ছেলেটি কে?”

-” দিব্য বাবার বন্ধু। নাম জানি না কো। শুনছিলাম। তয় মনে করবার পারছি না কো। এই বাড়িত দিব্য বাবার লগে কয়বার দেখছিলাম।”

দিব্য ঝটকা খায়। বন্ধু! কে সে? অনেক্ষণ ধরে ছেলেটির বর্ণনা শুনে বুঝতে পারে লিমন। তারপর একদম শিওর হয় বুয়ার ফোন থেকে ছেলেটির নম্বর নিয়ে। দিব্য চোয়াল শক্ত করে অস্ফুটে বলে,

-” ব্লা/ডি বিচ তোকে আমি খু/ন করে ফেলবো?”

দিব্য পরপর লিমনের নম্বরে কল করে। রিসিভ করতেই দিব্য ঠান্ডা গলায় বলল,

-” তুই কোথায়?”

-” কেনো কী হয়েছে?”

-” যে প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দে আগে। তোর সাথে আমার কথা আছে।”

-” আমি আসাদ গেট আছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সন্ধ্যার দিকে আয় আড্ডা দিবো।”

-” তুই আসাদ গেটেই থাক। ওখানেই থাক। আমি এক্ষুনি আসছি।”

দিব্য পা/গলা ষাঁ°ড়ের ন্যায় ছুটে যায়। কীজন্য এসব করেছে? আর এর পরিণাম কতটা ভয়াবহ দিব্য বুঝিয়ে দিবে। দিব্যর এভাবে যাওয়া দেখে নিতি চিন্তায় পরে। তনুজা পাথরের মতোন নিস্পন্দ চোখে চেয়ে দাঁড়িয়ে। নিতি বড়বড় শ্বাস ফেলে বলে,

-” দিব‌্যর এভাবে যেতে দেওয়া ঠিক হলো না। ওর যে রাগ। শেষে না মা/র্ডার টার্ডার করে ফেলে। ওকে আটকানো দরকার। কিন্তু ওতো বেরিয়ে গেলো। এখন কী করি! মামীকে ফোন করবো।”

নিতি ফোন নিয়ে পরপর মামা-মামী, ইভানকে কল করে। রিং হয় কেউ রিসিভ করে না। আজ অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। নিশ্চয় ওরা মিটিংয়ে ব্যস্ত আছে।

-” ওহ্; শিট। কেউ ফোন তুলছে না।”

নিতি অসহায় চোখে চারিদিক চাইলো। তনুজার হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলল,

-” আমি বুঝতে পারছি না এখন কী করবো! এখন কী করলে ভালো হবে? কিছু বলো, প্লিজ। এভাবে চুপ করে থেকো না।”

তনুজা সম্বিৎ ফিরে পায়। ওর টনক নড়ল। পরপর অস্থির হয়ে বলল,

-” দিব্যকে আটকাতে হবে। ও অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। জলদি চলো ওকে আটকাতে হবে। কিন্তু ও কোথায় গিয়েছে? কল দাও ওকে।”

-” তোমার কী মনেহয় ও কল তুলবে! নেভার। অলরেডি আমি দু’দুবার ওকে কল দিয়েছি। প্রথম বার কেটে দিয়েছে। পরের বার রিং হয়ে কে°টে যাচ্ছে।”

নৃত‌্য বলল,

-” এক মিনিট, ভাইয়া কথা বলার সময় আসাদগেট থাক এটা বলেছিলো। তাহলে..”

নিতি আর এক মূহুর্ত দেরি না করে দৌড়ে রুম থেকে ব্যাগটা নিয়ে বেরোয়। তনুজা অস্থির চিত্তে বলল,

-” আমিও যাবো।”

.

বুয়া আঁচল মুখে চেপে ধরে ম/রা কান্না জুড়েছে। নৃত্য কানে তুলো গুঁজে নিয়েছে। সোফায় বসে সে ফোন স্ক্রল করছে। বুয়াকে শাসিয়েছে,

-” সিকিউরিটি গার্ডকে ফোন করে বলে দিয়েছি, তাই পালানোর সুযোগ নেই। বাড়িতে সবাই ফিরুক। তারপর বিচার বসবে, হু।”

___________

আসাদগেট একটা ফার্মেসীর দোকানের সামনে একজন বন্ধুর সাথে ছিলো লিমন। দিব্য ঝড়ের গতিতে বাইক চালিয়ে যায়। মাঝখানে ট্রাফিক সিগন্যালে একবার আটকা পরে। ছোটবড় গাড়িগুলোকে টপকে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ছুটে আসে। বাইকটা দাঁড় করিয়ে নেমে যায়। বন্ধু দু’জন হাস্যজ্জ্বল মুখে এগিয়ে আসে। এদিকে অতর্কিত ভাবেই দিব্য লিমনের শার্টের কলার চেপে ধরে, আরেক হাত দিয়ে নাক বরাবর ঘু’ষি দেয়। মূহুর্তেই ছিটকে র/ক্ত বেরুতে থাকে। পাশে রাফি ছিলো। সে দিব্যকে থামাতে চেষ্টা করে,

-” অ্যাই দিব্য! কী হয়েছে? কী করছিস কী?”

দিব্যর গায়ে যেনো অশরীরী শক্তি ভর করেছে। কিছুতেই তাকে দমানো যাচ্ছে না। দিব্য র/ক্তচক্ষু নিয়ে বিশ্রী গালি দিয়ে বলে,

-” শু… বাচ্চা। তুই কিজন্য এসব করেছিস বল। তনুজার সাথে তোর কীসের শত্রুতা? আর ইভান। ওকে কেনো মাঝখানে টেনে এনে এরকম জঘন্য ঘটনা ঘটালি। বল।”

দিব‌্যর কি°ল ঘু\ষিতে লিমনের দাঁত বোধহয় দু একটা নড়ে গিয়েছে। নাক দিয়ে মুখ দিয়ে সমানে গলগল করে র/ক্ত বেরুচ্ছে। লিমনের কথা বলার শক্তি নেই। তারমানে দিব্য সব জেনে গিয়েছে এতটুকু বুঝতেই লিমনের পিলে আরো চমকে উঠে। আত্মা শুকিয়ে এইটুকুন হয়ে যায়। এই বুঝি প্রাণ পাখিটা ছিটকে বেরিয়ে যাবে। রাগি ক্ষ্যাপাটে দিব্যর থেকে তার নিস্তার নেই আর। আশেপাশে লোক জড় হয়ে যায়। সবাই শুধু দেখছে, কেউ সাহস নিয়ে এগোয় না ঠেকাতে। রাফি একা দীর্ঘদেহী দিব্যর সাথে পেরে উঠছে না। দিব্যকে থামাতে গিয়ে তার নাজেহাল অবস্থা।

সিএনজি করে ওরা মাত্র আসাদগেট আসে। নিতি ড্রাইভারকে আস্তে চালাতে বলে। ঘাড় ঘুরিয়ে নিতি এদিক-ওদিক দেখছিলো। হঠাৎ তনুজা নিতির বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলল,

-” নিতি ওদিকটায় দ্যাখো। দ্যাখো দ্যাখো লোকজন জট পাকিয়ে আছে। ওখানে অতো ভিড় কেনো?”

নিতিও বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে দেখে ড্রাইভারকে থামাতে বলে। ত্রস্ত হাতে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে ভাড়া মিটায়। তারপর দৌড়ে যায়। লোকজনের ভিড় ঠেলে এগোয়। দিব্যকে আটকানো যাচ্ছে না। দিব্যর হাতে র/ক্ত লেগে আছে। সাদা টিশার্টেও র/ক্তের ছিটা লেগে। দিব্যর কপাল বেয়ে দরদরিয়ে ঘাম ছুটছে। তনুজা চেঁচিয়ে বলল,

-” থামো দিব্য থামো।”

নিতি গিয়ে দিব্যর হাত ধরে। তনুজা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,

-” প্লিজ দিব্য রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করো। আর মা/রলে ও ম/রে যাবে। প্লিজ তুমি শান্ত হও। আর ধীর সুস্থে সবটা শোনো।”

দিব্য ঘাড় ঘুরিয়ে তনুজার দিকে চায়। নিতি আর রাফি মিলে লিমনকে ছাড়িয়ে নেয়। দিব্য চেঁচিয়ে বলে,

-” ওকে আমি মে/রেই ফেলবো। ওর সাহস কীকরে হয়, আমার আপনজনদের সাথে এরকম করার।”

এই বলে ফের তেড়ে যেতে নিলে নিতি সামনে দাঁড়ায়। বলে,

-” থামো। আল্লাহর দোহাই লাগে একটু থামো, প্লিজ। এটা রাস্তা। এভাবে মা/রামা/রি করলে পু/লিশ এসে তোমাকেই ধরবে কিন্তু। শেষে আমাদেরই বদনাম হবে। তাই বলছি মাথা ঠান্ডা রাখো।”

রাফির গায়ে শরীরের ভাঁড় ছেড়ে দাঁড়িয়ে লিমন। রাফি দুইহাতে বন্ধুকে আগলে আছে। দিব্য আঙুল উঁচিয়ে ভ্রু নাড়িয়ে বলে,

-” তনুজার সাথে তোর কীসের শত্রুতা? মাঝখানে ইভানকে কেনো ব/লির পাঁ/ঠা বানালি। বুয়াকে টাকা দিয়ে এসব করিয়েছিস! কিন্তু কেনো? আর ক্লোরোফর্মে যদি ইভানের কোনো ক্ষতি হতো তখন। তখন কী হতো? আনসার মি? লিমন আনসার মি”

দিব্য আশপাশ কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে শেষের কথাগুলো বলে। লিমনের চোখ বুঁজে আসতে চাইছে। রক্তে মাখামাখি তার বদনখানি। ওভাবে রাফির গায়ে ভর দিয়েই থেমে থেমে কষ্ট করে বলতে থাকে,

-” তোর ভুল হচ্ছে। আর আমার বাপের অতো টাকা নেই, যে টাকা দিয়ে মানুষ ভাড়া করে এসব করবো। এসব আমি নয় তৃষা করেছে। মাঝখানে আজ আমি ফেসে গেলাম।”

দিব্যর দুই ভ্রু গুটিয়ে আসে। পরপর অবাক হয়ে বলল,

-” হোয়াট? তৃষা? তৃষা করেছে মানে? কিন্তু কেনো?”

লিমন ব্যাথায় গুঙাতে গুঙাতেই বলে,

-” তুই তনুজাকে নিয়ে খুব গর্ব করতিস। তনুজার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলি। তারপর তৃষাকে ফোনে বিশ্রীভাবে গা/লি দিয়েছিলি। তৃষা সেই রাগ ক্ষোভ থেকেই তোর সামনে প্রমাণ করতে চায় তনুজা ভালো মেয়ে নয়। অনেকদিন ধরে তৃষা আমার কাছে ফোনে হেল্প চাইছিলো। তারপর তনুজা তোদের বাড়িতে যাওয়ার পর তৃষার রাগ বেড়ে যায়। ও ভাবে তুই তনুজাকে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিস। কিন্তু তুই তো জানতিসই না, আন্টি তনুজাকে এনেছিলো। ও বাড়িতে তনুজা থাকলে তোদের দু’জনের সম্পর্ক আরো গাঢ় হবে। এইভেবে তৃষা এমন ছক কষে। এক তনুজাকে ও বাড়ি ছাড়া করা। দুই তুই নিজে যেনো তনুজাকে বাজে মেয়ে ভাবিস। তৃষার বিশ্বাস ছিলো তৃষাকে যে গালি গুলো দিয়েছিস, স্বয়ং তুই নিজে সেগুলো তনুজাকে দিবি। কিন্তু সব উল্টো হয়। তনুজা ও বাড়ির বউ হয়ে গেলো। আর তনুজার প্রতি তোর অন্ধ বিশ্বাস রয়েই গেলো।”

দিব্য দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,

-” তোর লজ্জা করলো না। তৃষার কথামতো এরকম করতে। একটা মেয়েকে সবার সামনে খারাপ প্রমাণ করতে। কতটা নিচ তোর মন মানসিকতা। ছিঃ আমার ঘেন্না হচ্ছে। এরা একেকটা আমার বন্ধু ছিলো।”

একটু থেমে। তনুজার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে দিব্য,

-” তনুজা এবার তোমার পালা। পায়ের থেকে জুতা খুলে ওকে পিটাও। এটা তোমার দিক হতে শাস্তি। তারপর তো ওকে আমি পু/লিশে দিবো।”

তনুজা নিষ্প্রভ চোখে চেয়ে। দিব্য ফের বলল,

-” কী হলো! যা বলছি তাই করো।”

দিব্যর ধ’ম’কানিতে মৃদু কেঁপে ওঠে তনুজা। তনুজা মিহি স্বরে বলে,

-” থাক না দিব্য। থাক। এমনিতেই অনেক মে/রেছো।”

দিব্য আর বাক্য খরচ না করে হঠাৎ সরাসরি তনুজার হাত ধরে টেনে লিমনের সামনে দাঁড় করায়। এভাবে আচমকা হাত ধরায় তনুজা বিব্রতবোধ করে। তনুজা কিছু বলবে তার আগেই বড়বড় শ্বাস ফেলে রাগি স্বরে বলে দিব্য,

-” যা বলছি তাই করো। জুতো খুলে ওকে পি/টাও। ও এর থেকেও খারাপ কিছু ডিজার্ভ করে। নাও শুরু করো।”

তনুজার অস্বস্তি হচ্ছিল। সে দিব্যর ধরে রাখা হাতের দিকে একপল তাকায় তো ফের দিব্যর রাগে লাল হয়ে থাকা মুখাবয়বের দিকে চেয়ে বলে ওঠে,

-” দিব্য হাতটা ছাড়ো। ছাড়ো ।”

দিব্য রাগে ফুঁসছে। কোনো কথাই যেনো তার কানে ঢুকছে না। সে যেন নিজের মধ্যে নেই। লিমন আর তৃষাকে কে/টে টুকরো টুকরো করে ফেললেও তার রাগ মিটবে না। এতটুকু শান্তি হবে না। সে স্বস্তি পাবে না। এতটা রাগ-ক্ষোভ দিব্যর হচ্ছে। দিব্য রাগে কাঁপছে। গলার স্বর চড়িয়ে দিব্য ফের বলল,

-” যা বলছি তাই করো।”

তনুজা বড় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ল। তন্মধ্যে লিমন কথা বলে ওঠে। মুখ খুলতে গিয়ে ব্যাথায় মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠে তার। তবুও রাগ-ক্ষোভ নিয়ে আওড়ায়,

-” দিব্য আজ আমায় খারাপ বলছিস, তুই নিজে কী! তুই বোধহয় ধোঁয়া তুলসি পাতা। তনুজাকে নিয়ে তোর এত বাড়াবাড়ি। হ্যা আমি তৃষার কথায় সব করেছি। এর পিছনে তনুজার উপর আমার রাগ ছিলো। সেদিন ডিয়ার কমপ্লিট করতে ওকে প্রোপোজ করায় কত কড়া কথা বলে অপমান করলো আমায়। কিন্তু ঠিকই তো ক’দিন পর তোর প্রেমে পরল। সেই রাগ থেকেই আমি তৃষাকে হেল্প করি। আর আজ তুই বড়বড় করে বলছিস, আরে আমাদের সাথে বাজি ধরে তো তনুজাকে প্রেমে ফেলতে গিয়েছিলি তুই। দারুণ অভিনয় করলি মাইরি। অভিনয়ে মাত করলি। তনুজা তোর প্রেমে পড়ল। ওদিকে তুইও। কিন্তু ওটা তো বাজি ধরাই ছিলো। আর তুই আমাকে বলছিস, নিজের দিকে তাকা; হাহ। বড় ভাইয়ের হবু বউ। যদিও তৃষা বন্ধু ছিলো। তারপরও তো সেইসময় তৃষার পরিচয় ছিলো তোর ভাইয়ের হবু বউ। তাকে নিজে পালাতে হেল্প করলি। ইভেন একসময়ে ফোনে দু’জনে রিলেশনে গেলি; হ্যাহ।”

তনুজার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল। তনুজা হতবাক, বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। স্তব্ধ বিমূঢ় হয়ে মূর্তির ন্যায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়। দিব্য সম্পর্কে এমন কিছু শুনতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি সে। দিব্যর উঁচু মাথাটা মূহুর্তেই নুইয়ে আসে। কোথাও একটা অপরাধবোধে ভুগছে সে। আজ নিজের কাছেও সে স্বচ্ছ নয়। কথাগুলো তো মিথ্যা নয়। তনুজার দিব্যর প্রতি ঘেন্না হচ্ছে। সে বাজি ধরা প্রেম ছিলো। পুরোটাই অভিনয় ছিলো। আর সত্যিই তার তৃষার সাথেও! এসব শুনে দিব্যর প্রতি ঘৃ/ণার মাত্রা বাড়তে থাকে। তনুজা সম্বিৎ ফিরে পেতেই পরপর একহাত দিয়ে দিব্যর ধরে রাখা হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে। আর কন্ঠে তেজ ঢেলে বলে উঠল,

-” হাতটা ছাড়ো। আমার হাতটা ছাড়ো দিব্য। তোমার কোন রাইট নেই এভাবে যখন-তখন আমাকে ছোঁয়ার। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, নেক্সট আমার সাথে কথা বলতে হলেও দুইবার ভেবে কথা বলবে। আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড নই। মনে রাখবা আমি তোমার বড় ভাইয়ের বিয়ে করা বউ। হবু বউও নই। ”

তনুজার ধরে রাখা হাতটা মূহুর্তেই ছেড়ে দেয় দিব্য। মাথাটা তার নুইয়ে যায়। ” মনে রাখবা আমি তোমার বড় ভাইয়ের বিয়ে করা বউ।” দিব‌্যর কানে বারকয়েক কথাটা ঝনঝনিয়ে বাজতে থাকে। কিছুপল সময় নিয়ে দিব্যর মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরোয়,

-” স্যরি।”

ওদিকে রাফি লিমনকে নিয়ে কেটে পরে। সিএনজি ডেকে ওঠে বসে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। নিতি শান্ত গলায় বলল,

-” বাড়ি চলো। আর আমার মনেহয়। আপাতত তৃষার ব্যাপারটা হাইডে রাখাই বেটার হবে। কারন তৃষা এসব করেছে সেসব তুলে ধরতে গেলে তোমাদের দুজনের বিষয়টা সবার সামনে আসবে। জানি না ভাইয়া কীভাবে নিবে! কিন্তু নানুআপু ঠিকভাবে নিবে না। তাই বলছি এখন এসবের পিছনে বুয়া আর লিমন ছিলো এতটুকুই সবাইকে জানানো ভালো হবে। পরে কোন উপযুক্ত সময়ে ধীরস্থিরভাবে তৃষার কথাটা ভাইয়াকে জানানো যাবে।”

#চলবে