শেষ থেকে শুরু পর্ব-১০

0
578

#শেষ_থেকে_শুরু
#পরৃব_১০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

জবা রুমে এসে চিন্তায় পরে গেলো। মোবাইল হাতে নিয়ে আবার রেখে দিল।
শায়েলা সিদ্দিকীর জন্য রুম থেকে বের হতেই লজ্জা লাগে। এই মহিলা এতোদিন বাড়িতে সবার সামনে মাঝে মধ্যে জবাকে নিজের ছেলের বউ বলতো৷ বলা যায় এখনো এই বিষয় কোনো কথা হয়নি অথচ জবা কে আয়ানের বউ ভাবতে শুরু করেছেন। এতোদিন বাড়িতে থাকলেও আজকাল তা বাহিরে ও চলে গেছে। সবজায়গায় জবা কে প্রথম দেখলেই একটা কথা ‘ এটা আয়ানের হবু বউ.?’
জবা অবাক হয়,যেখানে আসিফের কথা বলার প্রয়োজন সেখানে সবাই আয়ানের কথা বলে নিশ্চয়ই এটা শায়েলা সিদ্দিকীর কাজ!
শায়েলা সিদ্দিকী আজকাল জবার যত্নও বাড়িয়ে দিয়েছেন সকালে জোর করে একটা ডিম, দুধ এক গ্লাস সাথে ফলমূল ত আছেই একটু পর পর রুমে এটাসেটা নিয়ে আসেন বাচ্চা ঠিক থাকতে হবে তার জন্য বেশি বেশি খাওয়া প্রয়োজন।

” বাচ্চা! এই বাড়ির বড় সন্তান নিয়ে সবার এত আগ্রহ কেন.? ” জবার চিন্তায় কোনো উত্তর আসে না।

এতোদিন কুলসুম বেগম এইসব গুরুত্ব না দিলেও আজকাল শার্লিন বেগমের কথায় গুরুত্ব দিচ্ছেন। শার্লিন বেগম কখন কোথায় কি হচ্ছে, শায়েলা সিদ্দিকী কি দিচ্ছেন, কি করছেন জবার সাথে সবকিছু শার্লিন বেগম কুলসুম বেগম কে বলে।

কুলসুম বেগম আজ নাস্তার টেবিলে বলে দিয়েছেন উনার ছেলে নেই তাই বলে এই নয় তার বাচ্চা কিংবা বউয়ের দায়িত্ব তার মা নিজে পালন করতে পারবে না। উনার ছেলের বউ বাচ্চার জন্য অন্য কেউ কষ্ট করতে হবে না দরকার হলে উনি একজন মেয়ে আলাদা ভাবে ওর জন্য রাখবেন।

জবা বুঝতে পারছে না আসলে কার মনে কি চলছে! ভালো মানুষির মুখোশের আড়ালে সব সময় খারাপটা লুকিয়ে থাকে। জবা ওর এইসব কিছুর সমাধানের জন্য একজন কে কল দিলো।

ওপাশ থেকে হ্যালো আসতেই জবা বলতে শুরু করলো,’ ভাই ভাই তুমি শুনতে পাচ্ছ!.?’
~ হুম রাণী শুনছি তুই বল।
~ তুমি কি বেশি ব্যাস্ত.?
~ আমার রাণী কল দিলে আমি কি অন্য কিছু তে ব্যাস্ত থাকতে পারি.?
~ হয়েছে হয়েছে আর অভিনয় করতে হবে না শুনো আমি কিছু বলছি তুমি শুনে ভেবে উত্তর দিবে।

জবা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলে অপেক্ষা করতে লাগলো কি উত্তর আসে।

কিছু সময় পর ওপাশ থেকে ওর ভাই বলে উঠলো, ‘ এখন নিশ্চয়ই দুই মহিলার মধ্যে ঝামেলা শুরু হবে তোকে নিয়ে যেটা তুই নিজে চাচ্ছিস! আর এই ঝামেলা থেকেই আসল কাহিনী সবকিছু বের হয়ে আসবে৷ তুই শুধু খেয়াল রাখবি আচরণেই সন্দেহের বিচ সৃষ্টি হয় আর সেখান থেকেই সবকিছু বেড়িয়ে আসে। ভালোর আড়ালে খারাপ, আর খারাপের আড়ালে ভালো। আমরা চোখের সামনে যা দেখি সবকিছু সত্যি নয়!’

জবার কপালের চিন্তার ভাজ শেষ হয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো।
~ বুঝতে পেরেছি আদি ভাই, এই জন্যই তোমাকে আমার এত্তো ভালো লাগে এক মিনিটে তুমি সমাধান বের করে ফেলো, সবকিছু পানির মতো সোজা লাগছে।

_________

বেলী আজ বায়না ধরে বসে আছে সে মার্কেটে যাবে অভ্র যেনো নিয়ে যায়।

এদিকে মৌরি জ্বালিয়ে মারছে আয়ান কে ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে। আয়ান আজ দুইদিন লুকিয়ে লুকিয়ে থেকেছে মৌরির ঝামেলা থেকে দূরে থাকার জন্য লাস্ট পর্যায়ে সে ধরা খেলো।
মৌরি কে আয়ান বুঝালো ওর অফিসে কাজ আছে সে চাইলেই মৌরি কে নিয়ে বের হতে পারবে না অথচ মৌরি বলে বসলো ” এই ফালতু বোরিং পুলিশের চাকরি ছেড়ে দাও, তোমাদের ত কোম্পানি আছে আঙ্কেলের সাথে জয়েন করো।

আয়ান মৌরির কথা না শোনার মতো নিচে নেমে আসলো।
শায়েলা সিদ্দিকী আয়ানকে দেখে হেঁসে এগিয়ে আসলো।
~ অফিসে যাচ্ছিস বাবা.?
~ হুম আম্মু…
পেছন থেকে গাল ফুলিয়ে মৌরি বলে উঠলো, ‘ খালামুনি তোমার ছেলেকে বলো আমাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসতে বাসায় আর ভালো লাগে না। ‘
শায়েলা সিদ্দিকী বোনের মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ মৌরি তুই বেলীর সাথে ঘুরতে বের হতে পারিস, জানিস ত আয়ান সব সময় খুব ব্যাস্ত থাকে আর আজ ত আয়ান একটু মার্কেটে ও যেতে হবে।

আয়ান প্রশ্ন করার আগেই মৌরি বলে উঠলো, ‘ মার্কেটে কেন খালামুনি.?’
শায়েলা সিদ্দিকী হেঁসে বললেন,’ আমি ভাব ছিলাম জবার জন্য কিছু কিনে আনতে আয়ানের পছন্দে সাথে জবাও যাবে।’

আয়ান যেনো মেঘ না চাইতেই জলের মতো ছিল!
মৌরি ভেতর ভেতর রেগে আগুন হয়ে গেলেও উপরে কঠিন মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

শায়েলা সিদ্দিকী ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো,’ বাবা তোর কি বেশি সমস্যা হয়ে যাবে..?’
আয়ান ভেতরের খুশি লুকিয়ে বললো,’ না আম্মু আজ এমনিতেও অফিস বন্ধ আমি ত একটা প্রয়োজনে যাচ্ছিলাম শুধু মাত্র। ‘

মৌরি হা করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। এতোক্ষণ পিছু পিছু ঘুরলো বললো অফিসে কাজ আছে আর এখন কি বলছে.?

শায়েলা সিদ্দিকী বললেন,’ আচ্ছা তাহলে তুই অপেক্ষা কর আমি জবা কে নিয়ে আসি।’

আয়ান গিয়ে সোফায় বসলো। মৌরি শুধু তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। সেই ছোট থেকে মৌরি শুধু একটা ছেলেকেই দেখে এসেছে সেটা হলো আয়ান অথচ মৌরি আয়ানের চোখে অন্য কিছু দেখে। আয়ানের চোখে কেন মৌরি নেই.? মৌরি জবার মতো সুন্দরী নয় বলে.? সৌন্দর্যই কি সবকিছু.? এই যে সৌন্দর্য আজ ভাবি কিংবা অন্যের ছোঁয়া বউ মানছে না! ভাইয়ের সাথে এক বিছানায় ছিল সেটা মানছে না! চোখে শুধু তার সৌন্দর্যই ধরা দিচ্ছে। আয়ানের অবস্থা দেখে হেঁসে উঠলো মৌরি, এই সৌন্দর্যের ভালোবাসা গুলো আসলে কয়দিনের..? যেমন হুট করে হয় তেমন কি হুট করে আবার চলে যায়.? অথচ এই যে ছোট থেকে ভালোবেসে কি পেল মৌরি.? হুট করে এক দিন,একটা মুহূর্তের জন্য ও ত পেল না! তাহলে কি সৌন্দর্য ক্ষনস্থায়ী হলেও এক মুহূর্তের পূর্ণতা এনে দেয়.? মৌরির হিংসে হলো জবার সৌন্দর্যের উপর, সব রাগ গিয়ে পরলো জবার সুন্দর শরীর আর মুখের উপর। সে এই সৌন্দর্য নষ্ট করে দিবে জবার তারপর দেখবে আয়ান ওর দিকে না তাকিয়ে কিভাবে থাকে! দেখবো এই জবাকে বিয়ে করে কিনা!

শয়তানি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে তাকালো সিঁড়ির দিকে।

সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে জবা সাথে শায়েলা সিদ্দিকী ও আসছে।

জবা আজ হাল্কা সবুজের মাঝে হাল্কা রংয়ের একটা শাড়ি পড়েছে। চগল বিনুনি করে এক পাশে রেখেছে হাতে আয়ানের দেওয়া চুড়ি গুলো।

রিনঝিন শব্দে আয়ান তাকালো জবার হাতের দিকে। ফর্সা হাতে নীল চুড়ি গুলো যেনো ফুটে আছে। মনে হচ্ছে এই চুড়ি গুলো যেনো জবার জন্যই বানানো হয়েছে।

জবা আসতেই আয়ান দাঁড়িয়ে পরলো। শায়েলা সিদ্দিকী ইশারায় জবা কে বললো আয়ানের পিছু পিছু যেতে।

আয়ান গাড়িতে অপেক্ষা করছে। জবা গিয়ে বসতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।

গাড়ি কিছুটা দূর যেতেই আয়ান সামনের দিকে তাকিয়েই বললো,’ সিট বেল্ট বেঁধে নাও’
জবা বোকার মতো আয়ানের দিকে তাকালো। সিট বেল্ট হাতে নিয়ে বাঁধার চেষ্টা করলো। আয়ান ভাবলো জবা সিট বেল্ট বাঁধতে পারে না।
আয়ান সাইড করে গাড়ি থামিয়ে জবার দিকে তাকিয়ে জবার হাত থেকে সিট বেল্ট নিয়ে নিজে বেঁধে দিতে এগিয়ে গেলো জবার দিকে।

জবা আয়ানকে নিজের দিকে আসতে দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
আয়ান সিট বেল্ট বেঁধে জবার দিকে তাকাতেই থমকে গেলো।

আয়ান জবার অবস্থা দেখে হেঁসে উঠলো শব্দ করে ।

জবা চোখ খুলে তাকালো আয়ানের দিকে, চোখ ছোট ছোট করে আয়ানের দিকে তাকাতেই আয়ান বলে উঠলো, ‘ চোখে মাঝে মাঝে কাজল দিবেন, দুধ ছাড়া চা আর কাজল ছাড়া নারীকে তুলনা করা হয়! যদিও আপনি কাগজ ছাড়াই অপ্সরী।

জবা জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ দুধ চা এর থেকে যে রং চা সবার প্রিয় বেশি!’

জবার উত্তর শুনে হাসলো আয়ান, কথা কখনো জবার সাথে কেউ পারবে না এটা আয়ান কয়দিনে বুঝে গেছে।

মার্কেটের সামনে আসতেই আয়ান আর জবা অবাক হয়ে সামনে তাকালো। ওদের সামনে বেলী আর অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। বেলী জবা কে দেখে অবাক হলেও অভ্রকে স্বাভাবিক মনে হলো।

শার্লিন বেগম কুলসুম বেগম কে কল দিয়ে আয়ান আর জবার বের হয়ে যাওয়ার কথা সবকিছু জানিয়ে দিল৷

কুলসুম বেগম কল কেটে কিছু একটা ভেবে অফিস থেকে বের হয়ে গেলেন। গাড়িতে বসে বলে উঠলেন,’ আজ এইসব কিছুর একটা সমাধান হবে! ‘

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।