#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_১৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
আয়ান ভদ্র মহিলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ সত্যি এটা আপনার বাড়ির ঠিকানা..? ”
‘ কি আজব! আপনাকে আমি ভুল ঠিকানা কেন দিব.?’
আয়ানের পাশে দাঁড়ানো বারেক বলে উঠলো, ‘ আন্টি আপনার ছেলে লাস্ট যেই মেয়েটাকে সাথে নিয়ে বের হয়ে ছিল তার কোনো ছবি আছে.?’
ভদ্র মহিলা বেশ রেগে গেলো বারেকের উপর!
‘ আমাকে কোন দিক দিয়ে আন্টি মনে হয়.?’
বারেক ছত্রিশটা দাঁত বের করে হেঁসে বললো,’ সরি দাদি’
মহিলা আরও রেগে গেলো ‘ এই অসভ্য ছেলেকে পুলিশ কে বানিয়েছে.? আমাকে দেখে তোর আন্টি! দাদি মনে হয়!.?’
মহিলার রাগ দেখে বারেক কাদু কাদু মুখে আয়ানের দিকে তাকালো। মহিলার পাশে উনার নাতনি বলে উঠলো, ‘ ভাইয়া কিছু মনে করবেন না দাদিজান একটু এমনি, আপনি একটু ভাইয়াকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, বুঝেন ত একমাত্র ছেলে আম্মুর অবস্থা খারাপ টেনশন করে আজ দুইদিন কোনো খুঁজ খবর নেই!’
আয়ান ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপু আপনার আর কিছু বলার আছে.? আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করবো হিরন কে খুঁজে বের করার’
ভদ্রমহিলা এইবার আর রাগ করলো না, বেশ লাজুক হেঁসে বললো,’ আবার আসবো’
উনার নাতনি কপালে হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ এক ত বাড়ির অবস্থা খারাপ ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না, আর এইদিকে বুড়ির এই বয়সে ভীমরতি হয়েছে! ‘
দাদি নাতনি যেতেই বারেক বলে উঠলো, ‘ স্যার ফাইল রেডি করবো.?’
আয়ান মোবাইল বের করে বললো,’ কোনো প্রয়োজন নেই! ‘
বারেক মাথা হেলিয়ে বললো,’ স্যার দাদির বয়সী মহিলা কে আন্টি বললাম তাও মন বরলো না ডিরেক্ট আপু! দেশ কতো ডিজিটাল হয়ে গেছে স্যার!’
‘ এক রাতে ইতিহাস পাল্টে যায় সেখানে বুড়ির মন আপু টাইপ হতেই পারে বারেক! উনি শরীর দিয়ে বুড়ি হতে পারেন কিন্তু মনের দিন থেকে এখনো ১৬-১৭ বছরের আপু বয়সী!’
বারেক হেবলার মতো তাকিয়ে রইলো আয়ানের দিকে।
‘ এভাবে তাকিয়ে না থেকে কাজে মন দাও বারেক’
‘ স্যার আরেকটা কথা’
‘ হুম জলদি বলে বের হও’
‘ স্যার কি করলে বউ রাগ করবে না.?’
আয়ান মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বারেকের দিকে তাকালো।
‘ বারেক বিয়ে তুমি করেছো তুমি আমার থেকে ভালো জানবে!’
‘ স্যার বিয়ে করেও বুঝতে পারছি না সোজা করলেও দোষ বাঁকা করলেও দোষ, যেই রাস্তায় যাই তাতেই দোষ, কাল রাত ত বউ সারারাত রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে ‘
‘ তুমি নিশ্চয়ই ভুল কিছু করেছো! সারাদিন কাজ করে স্বামী বাড়িতে আসলে বউরা ব্যাস্ত হয়ে পরে স্বামীর কি লাগবে! কি করলে স্বামী খুশি হবে আর তোমাকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে! ‘
‘ স্যার এই গুলো একটা সময় আমিও ভাবতাম কিন্তু বিয়ের পর বুঝা যায় আসল খেল! বউ নয় তখন ( হাত গুলো সাপের মতো করে দেখিয়ে বললো) সাপ হয়ে ধরা দেয়। বউ সেজেগুজে বললো,’ কেমন লাগছে.? আমি বলে ছিলাম লিপস্টিকের কালারটা মানায়নি সাথে মুখের পাউডার বেশি হয়ে গেছে। তাতেই বললো আমি নাকি মেকআপ চিনিনা, আগে মেকআপ কোনটা কিভাবে দিলে কেমন লাগে শিখে তারপর বাড়িতে জায়গা হবে।’
আয়ান খুব মন দিয়ে বারেকের কথা শুনলো। সে মেকআপের বিষয় সতর্ক হয়ে গেলো।
বারেক ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ স্যার কখনো বিয়ে করিয়েন না! বিয়ের পর জীবনটা নিজ হাতে গরম তেলে ছেড়ে দেওয়ার মতো ‘
আয়ান বারেক কে কাজে লাগতে বলে নিরুপমার নাম্বারে কল দিল।
বারেক যেতে যেতে বলে উঠলো, ‘ স্যার আমার কথা আজ গুরুত্ব দিচ্ছেন না! একদিন বুঝতে পারবেন!’
জবা ব্যালকনিতে বসে ছিল তখনি কল আসলো।
‘ হ্যালো’
‘ নিরুপমা আমি পুলিশ অফিসার আয়ান ‘
‘ জ্বি বুঝতে পেরেছি কল কেন দিয়েছেন.?’
‘ একটা জরুরি কথা ছিল’
‘ যাই বলবেন জলদি বলুন’
‘ আপনি কি সব সময় ট্রেনের অপেক্ষায় থাকেন একটু বেশি কথা বললে ট্রেন চলে যাবে’
‘ মানে.?’
‘ সব সময় কল ধরেই বলেন যা বলবেন জলদি বলুন আর কল রাখুন! কেন আপনার কি মনে হয় আমি আমার সময় নষ্ট করে ফালতু কথা বলবো!’
‘ আপনার সময়ের খবর ত জানিনা কিন্তু আমার সময়ের অনেক দাম! ‘
আয়ান লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বললো,’ হিরন নামের কাউকে চিনেন!.?’
নিরুপমার সোজাসাপটা উত্তর ‘ কিসের হিরন.?’
‘ ওই যে আমি বাড়ির ঠিকানা দিয়ে ছিলাম, ঈশা মেয়েটার কেইসের বিষয়! ‘
‘ ওহ্ হুম নাম ত মনে নেই তবে কি হয়েছে.? ‘
‘ ওই বাড়ি থেকে আজ দুইজন এসেছিল তাদের ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না, খুব সুন্দর একটা মেয়ের সাথে বের হয়ে ছিল এই বিষয় কিছু জানেন.?’
‘ কেমন সুন্দর মেয়ে.? আর একটা মেয়ের সাথে বের হয়েছে তাতে কি হয়েছে.? আপনি এইসব ফালতু খবর শুনাতে কল দিয়েছেন.? এটা আপনার বিষয় আমাকে কেন বলছেন.?’
‘ কারণ ওইদিন ওই বাড়িতে আপনার যাওয়ার কথা ছিল যদি দেখে থাকেন কিছু তাই বললাম! আর ওই মেয়ের সাথে বের হওয়ার পর থেকে হিরন কে পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের ভাস্যমতে মেয়েটা অসম্ভব রূপবতী ছিল যাকে বলে চাঁদের পরী’
নিরুপমা বিরক্ত হয়ে বললো,’ আপনি বসে বসে হয় ছেলেটাকে বের করুন না হয় আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখুন চাঁদ উঠেছে কিনা! চাঁদ না উঠলে বুঝবেন চাঁদের পরী এখনো পৃথিবীতে আছে আর চাঁদ উঠলে বুঝবেন চাঁদের পরী নিজের সাথে ওই হিরন নাকি হিরা যাই হোক নিয়ে গেছে! ‘
আয়ান বোকার মতো মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলো। নিরুপমা আয়ান কে কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দিয়েছে।
বুড়ির কথা শুনে ত মনে হচ্ছে না মেয়েটা নিরুপমা! এমন নিম পাতার মুখে এতো মধুর কথা বের হবে না, আর নিরুপমা ত এতো সুন্দরী নয়! কি জানি হতেও পারে আয়ান ত নিরুপমার মুখ এখনো দেখেনি। সুন্দরী মেয়েদের কথাও সুন্দর হয়, ওরা মিষ্টির মতো দেখতে কথা বললে মনে হয় মধু ঝড়ে পরছে আর এটা ত একটা করলা, নিম পাতা না না ওইটা নিরুপমা নয়। তাহলে কার সাথে হিরন বের হয়ে ছিল.??
আয়ান ঠিক করলো সে আজ ঈশার সাথে দেখা করবে তারপর হিরনের বিষয়টা ভেবে দেখবে।
________
জবা কথা শেষ করে সামনের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে দেখলো অভ্র ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
জবা অভ্র কে পাত্তা না দিয়ে চলে আসতে চাইলে অভ্র বলে উঠলো, ‘ কে ছিল.? কার সাথে আমাদের মারার প্লান করছো!.?’
জবা চোখ মুখ খিঁচে পেছন ফিরে ফিক করে হেঁসে বললো,’ মনে করো তোমার ভাইয়ের সাথে! ‘
অভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,’ মানে!.?’
জবা মাথা হেলিয়ে কাঁধ ঝাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ হ্যা তোমার পুলিশ ভাইকে জিজ্ঞেস করছিলাম কিভাবে মারলে নিজেও মজা পাব আর পাপিরাও যন্ত্রণা পাবে!’
অভ্র গম্ভীর মুখে বলে উঠলো, ‘ তুমি এতোক্ষণ আয়ানের সাথে কথা বলেছো!.?’
জবা দুই হাত বুকের উপর রেখে বললো,’ কোনো সন্দেহ আছে.?’
‘ তোমরা মেয়ে জাতিরা এমন কেন.? একজনের মৃত্যু হতে না হতেই আরেক জনের কাঁধে ঝুলে পড়ার কতো আগ্রহ! অন্তত তোমাকে এমন ভাবিনি!’
‘ আমরা ত অনেক কিছুই ভাবিনা তবে হয়ে যায় সেখানে আমিও না হয় অন্য সব নারীদের তালিকায় পরলাম ভিন্নতা মানায় না! আর তোমরা পুরুষদের কে বলে এতো মানবতার ফেরিওয়ালা হতে….? ‘
অভ্র প্রচন্ড রাগে চোখ মুখ লাল করে তাকিয়ে আছে জবার দিকে।
জবা অভ্রের মুখের উপর ঠাসস করে ব্যালকনির দরজা লাগিয়ে দিল।
রাগে অভ্র দেওয়ালে একটা লাঠি মেরে চোখ মুখ বন্ধ করে রাখলো। এই মেয়ে ওকে পাগল বানিয়ে তারপর শান্ত হবে! এক ত বিয়ের নাটক করছে, দ্বিতীয় নিজের সাথে বাড়ির সবগুলোকে আঙ্গুলের ইশারায় নাচাচ্ছে অথচ কেউ বুঝতেই পারছে না! এদিকে আরেক হাবলা একে পুলিশ হতে কে বলেছে.? এ ত মজলু হওয়ার দরকার লাইলীর প্রেমে পুরো দুনিয়া ভুলে বসে আছে চোখের সামনের ছলনা ধরতে পারছে না।
সবাই কে দোষ দিয়ে লাভ কি.? নারীর ছলনা এতোটাই ভয়ংকর যতক্ষণ না সে নিজ থেকে ধরা দেয় তাকে ধরার ক্ষমতা কারো নেই।
জবা বিছানার উপর মোবাইল রেখে ঘুরতেই বেলী এসে জবাকে ঝাপটে ধরে বলে উঠলো, ‘ ভাবিইইই!!’
‘ আস্তে আস্তে বেলী’
‘ এই নাও মিষ্টি মুখ করো’
‘ কিসের.? ‘
‘ আমার বিয়ের’
বেলী কে লজ্জা পেতে দেখে জবা হেঁসে বললো,’ কি বেপার ননদী লজ্জায় লাল হয়ে গেছো!’
‘ তার কথা ভাবতেই আমার শরীর শিউরে ওঠে লজ্জায় চারপাশ ঘিরে ধরে ‘
‘ কে সে আমার ননদীর রাজ্যের রাজা.?’
‘ তুমি তাকে চিনো’
জবা অবাক হয়ে বললো,’ আমি কিভাবে চিনি.?’
‘ এই বাড়ির কেউ!’
জবা অবাক হয়ে বললো,’ এই বাড়ির.? কে.?’
‘ অভ্র ভাই’
জবার হাত থেকে মিষ্টি পরে যেতে নিল।
‘ কি হয়েছে.? তুমি ঠিক আছো.?’
জবা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,’ আমি ঠিক আছি। শুভকামনা বেলী’
বেলী মুচকি মুচকি হেসে অভ্রের বিষয় বলতে শুরু করলো, বিয়েতে কোন ড্রেস পরবে, কিভাবে নাচবে, কে কে আসবে, কিভাবে আয়োজন করবে সবকিছু জবা কে শোনাচ্ছে। জবা চুপচাপ সবকিছু শোনলো।
বেলী কথা বলতে বলতে ব্যালকনির দরজা খুলে সামনের ব্যালকনিতে কফি হাতে অভ্র কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশারায় জবাকে এখানে আসতে বললো।
জবা বুঝলো না এর আবার কি হলো.?
জবা আসতেই লজ্জায় লাল হওয়া মুখে বেলী বলে উঠলো, ‘ আমার উনি এতো হট কেন ভাবি.? দেখলেই দিলে কুচ কুচ হতা হে! আমার হট চকলেট বয়! শুধুই আমার!..।
জবা ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ হুম শুধুই তোমার! ‘
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_১৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
জঙ্গলের ভেতর একটা লাশ পাওয়া গেছে। কে খু’ন করে জঙ্গলে ফেলে গেলো.?
লাশ দেখে ভয়ে কেউ আগাতে পারছে না। এতো ভয়ংকর ভাবে কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে খু’ন করা সম্ভব নয়!
আয়ান লাশের দিকে তাকিয়ে আছে, লাশের চোখ উল্টে আছে, মাথার চুল পুড়ে আছে সম্ভব ত চুলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ছিল, মুখে ছুরির এতো এতো আঘাত, হাতের পায়ের নখ উল্টে দিয়েছে সবচেয়ে ভয়ংকর যেটা লাশের গোপন অঙ্গ কেটে লাশের পাশে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে।
বারেক ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে এসে বললো,’ স্যার এখানে একটা লাশ না, চারটা লাশ তাও একই রকম মৃত্যু । লাশের পাশে গোপন অঙ্গের সাথে একটা চিরকুট তাতে রক্ত দিয়ে লেখা ” পাপ কখনো গোপন করা যায় না তা জ্বলজ্বল করে আকাশের তাঁরার মতো পাপীর মনে ”
গভীর ভাবনায় ডুবে আছে আয়ান। জঙ্গল থেকে আশার পর থেকে আয়ান এমন গম্ভীর হয়ে বসে আছে।
পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট মিটিং বসেছে আয়ান মাত্র সেখান থেকে আসলো।
এই কেইসের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আয়ান কে।
প্রথম লাশটা যে ছিল তার নাম হিরন। হিরনের পরিবারের কারো অবস্থা ঠিক নেই। একমাত্র ছেলের এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না৷
যতবড় পাওী হোক তাই বলে এতো ভয়ংকর মৃত্যু!!
আয়ান বাকি তিন জনের পরিবারের লোকদের সাথে কথা বলবে বলে মন স্থির করলো। কোনো শত্রুর খবর পেলে ধরতে সুবিধা হবে। খু’ন গুলো দেখে মনে হচ্ছে খুব মাথা খাঁটিয়ে খুন করা হয়েছে। কোনো প্রমাণ ফেলে যায়নি, এতো নিখুঁত ভাবে করা হয়েছে । একদম সিরিয়াল কিলার মনে হচ্ছে!
আয়ান কি মনে করে নিরুপমার কাছে কল দিল।
ওপাশ থেকে কিছু সময় পর রিসিভ হলো।
আয়ান হিরনের মৃত্যুর খবর নিরুপমার কাছে বললো সাথে ওর তিন বন্ধুও ছিল৷ চার জনের একই অবস্থা করে মৃত্যু দেওয়া হয়েছে।
নিরুপমা বেশ অবাক হয়ে বললো, ‘ কি বলছেন.? কিন্তু কেন.? কে করলো.?’
~ তা ত জানিনা তবে পুরো ডিপার্টমেন্ট মিলে খুব জলদি খুনিকে ধরে ফেলবো তারপর বাকিটা জানা যাবে।
নিরুপমা আজ বেশ শান্ত ভাবে কথা বললো আয়ানের সাথে।
আয়ান নিরুপমার সাথে কথা বলে রেখে নিজের সাথেই বলে উঠলো, ‘ এতো বড় একটা মার্ডার সাথে সব টিভি চেনেলে দেখানো হয়েছে অথচ নিরুপমা নিরু এখনো কিছুই জানে না.? সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরু নাম করা একজন সিআইডি হয়ে এত বড় খবর আমার থেকে শুনলো তাও আঠারো ঘন্টা পর! আয়ানের কিছুটা খটকা লাগলো।
বারেক এসে আয়ানের সামনে একটা ফাইল রেখে বললো, ‘ স্যার ঈশা মেয়েটা নিজের কেইস তুলে নিয়েছে!’
আয়ান আরেক ধফা অবাক হয়ে তাকালো বারেকের দিকে।
যে মেয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিল তাও বলেছে আমার সঠিক বিচার চাই, অপরাধীর ধর্ষকের শাস্তি চাই! দুইদিন আগেও ওর বন্ধুরা এসে পুলিশ কে থ্রেড দিয়ে গেছে সেই মেয়ে আজ কেইস তুলে নিল! তাও আবার হিরনের মৃত্যুর সাথে সাথে! কিছুতা একটা কাহিনী আয়ানের চোখের সামনে ঘুরছে কিন্তু আয়ান সঠিক ধরতে পারছে না। মনে হচ্ছে একটা সুত্র ধরলে বাকি গুলো বেড়িয়ে আসবে।
__________
বাড়িতে চলছে বিয়ের আয়োজন।
আরও তিনদিন পর বিয়ে অথচ আয়োজন শুরু হয়ে গেছে আরও দুইদিন আগে থেকে।
শার্লিন বেগম অনলাইনে অফলাইনে ইচ্ছে মতো কেনাকাটা করছেন কিন্তু তাতেও উনার কেনাকাটা শেষ হচ্ছে না।
নিজের একমাত্র মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে যেমন তেমন আয়োজন করবেন না, বিশাল বড় আয়োজন করবেন তাতে কোনো আপত্তি নেই কুলসুম বেগমের। উনারও ইচ্ছে বড় ছেলের বিয়ে ত আর নিজের মতো করে কিছু করতে পারেননি অভ্রের বিয়েতে করবেন।
আয়ানের অফিসে এমনিতেই এতো ঝামেলা তার উপর বাড়ি থেকে একের পর এক কল যাচ্ছে বিরক্ত হয়ে আয়ান মোবাইল বন্ধ করে রাখলো৷
তাতেও তার শান্তি মিলেনি কিছু সময় যেতেই বেলী আর মৌরি এসে হাজির।
আয়ান রেগে বলে উঠলো, ‘ একটু ত লজ্জা কর বেলী নিজের বিয়ে অথচ নিজেই নেচেনেচে বেড়াচ্ছিস কোথায় ঘরের কোনায় বসে কান্না করবি তা না!
বেলী আজ কিছুতেই রাগবে না। চুলগুলো পেছনে দিয়ে বললো,’ শোন আয়ান তুই হয়তো বাংলা সিনেমা ইদানীং বেশি দেখছিস! এইসব সিনেমায় চলে বাস্তবে না। আর আমাকে কোনো জোর করে বিয়েও দেওয়া হচ্ছে না। চুপচাপ আমাদের সাথে চল।
‘ আমি কোথাও যাচ্ছি না’
বেলী খুব ভালো করেই জানে আয়ান কি বললে যাবে।
‘ দেখ আয়ান জবা অপেক্ষা করছে ‘
জবার কথা শুনতেই আয়ানের সুর নিচে নেমে আসলো। আস্তে করে বললো, ‘ জবা যাবে.?’
মৌরি কিছু বলতে চাইলে ইশারায় বেলী চুপ করিয়ে দিল।
রাগে কটমট করে তাকিয়ে রযেছে মৌরি আয়ানের দিকে।
শার্লিন বেগম সেজেগুজে নিচে নেমে আসলো।
বেলী বিরক্ত হয়ে বললো, ‘ তুমি কোথায় যাচ্ছ.?’
‘ আমি তোদের সাথে যাব আমারও কিছু কেনাকাটা বাকি আছে!’
‘ প্লিজ আম্মু আব্বুকে সাথে নিয়ে কিনে নিও আজ আমি আয়ান, মৌরি, জবা, অভ্র যাব!’
‘ জবা কেন যাবে.? ‘
‘ আম্মু তিন দিন ধরে কিনছো তাতেও শেষ হচ্ছে না এখন জিজ্ঞেস করছো জবা কেন যাবে.? তুমি চাও তোমার মেয়ের বিয়েতে সে পুরনো কাপড় পরুক.?
‘ এটা কখন বললাম.? তবে সাবধানে বেলী জবা কিন্তু প্রেগন্যান্ট কিছু হয়ে গেলে বড় ভাবি কাউকে ছাড়বে না।’
‘ ঠিক আছে ‘
জবা ওদের সাথে যেতে চায়নি শায়েলা সিদ্দিকী বুঝিয়ে বললেন। বেলী না হয় কষ্ট পাবে, আয়ান কে বললেন বিশেষ খেয়াল রাখতে।
মৌরি শুধু দর্শক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে রাগে দুঃখে শুধু বলে আমারও সময় আসবে সহ্য করে নেই এখন।
আয়ান ড্রাইভিং সিটে বসতেই পাশের সিটে মৌরি বসে গেল। আয়ান একবার জবার দিকে তাকালো। ইচ্ছে ছিল জবা পাশে বসবে অথচ এই হাফম্যান্টেল ওদের মাঝে হাড্ডি হতে চলে এসেছে!
হসপিটালের সামনে আসতেই অভ্র ওদের সাথে যোগ দিল। সমস্যা হলো মৌরি কিছুতেই পেছনে বসবে না ওর নাকি মাথা ঘুরায়।
অভ্র বললো রিক্সা করে চলে যাবে ও আয়ান বললো, ‘ আরে ভাই লজ্জা পাওয়ার কি আছে হবু বউ আর বিয়ে করা বউ একই জিনিস ওর পাশে বস । ‘
অভ্র গম্ভীর মুখে বলে উঠলো, ‘ ও আমার বোন আর বোনের পাশে বসতেই পারি’
রাগে পিত্তি জ্বলে উঠলো বেলীর। আজ বাদে কাল বিয়ে এখনো নাকি বোন!.?
বেলী সরে গেলো জবার অন্য সাইডে জবা কিছু বলার সুযোগ ও পেল না অভ্র ওর পাশে বসে গেল। বেচারি এখন দুইজনের মাঝে।
অভ্র মুচকি হেঁসে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ বলা ত যায় না জায়গা এভাবে বদলেও যেতে পারে! ‘
ফিসফিস করে বলার কারণে জবা বাদে কেউ শুনলো না। জবা হেঁসে বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ জায়গা বদলানো যায় বেলী ভাগ্য নয়!’
বেলী গাল ফুলিয়ে গাড়ির বাহিরে তাকিয়ে থাকলো।
সারারাস্তা মৌরি বকবক করেছে আয়ান চুপচাপ শুনেছে কোনো উত্তর দেয়নি। পেছনের সবাই বেশ বিরক্ত মৌরির বকবকের উপর ।
আয়ান শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ মৌরি এইবার ত একটু চুপ কর! মাথা ধরে আছে।’
মৌরি বেলীর দিকে তাকালো।
বেলী অভ্রের কথা শুনে গাল ফুলিয়ে বসে আছে এদিকে মৌরি ও গাল ফুলিয়ে বসে রইলো আয়ানের উপর।
জবা গাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় শাড়ির সাথে পা আঁটকে পরে যেতে নেয় খুব সাবধানে অভ্র সামলে নেয় জবা কে।
আয়ান ব্যাস্ত হয়ে বলে উঠলো, ‘ তুমি ঠিক আছো.?’
জবা মাথা নেড়ে বুঝালো সে ঠিক আছে।
অভ্র বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ এই এক মেয়ে যার আশেপাশে সবাই প্রকাশে হোক আর গোপনে মরে যাক তাতে ওর কিছুই যায় আসে না। অথচ ও একটু চুট পেলেই হাজার মানুষ হাজির। ‘
অভ্র কে দেখে মনে হলো সে এই বিয়েতে বেশ খুশি। নিজে পছন্দ করে নিজের জন্য কিনলো। মাঝে মাঝে এটাসেটা আয়ান কেও পছন্দ করে দিল।
জবা শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। ওর এইসব একদম ভালো লাগে না। কাজিন কারো বিয়েতে ত জবা ভুলেও যেতে চাইতো না শুধু বিয়ের দিন একটু হাজিরা দিয়ে আসতো৷ ওর ড্রেসআপ দেখলে হতাশ হয়ে তাকাতো কাজিনরা। যেখানে সবাই কি পরবে বিয়েতে এক সপ্তাহ আগে থেকে উত্তেজনা সেখানে জবা একটা লেডিস্ প্যান্ট শার্ট পরে হাজির।
জবার জন্য বেলী পছন্দ করে কিনলো।
অভ্র জবার দিকে তাকিয়ে আয়ানকে বললো,’ তোর না হওয়া হবু বউ আর বর্তমানে ভাবিকে এইটা দিতে পারিস ভালো লাগতে পারে।
আয়ান অনেকক্ষণ ধরে খুঁজছিল জবাকে কি দেওয়া যায়! শাড়িটা আয়ানেরও পছন্দ হয়ে যায় তাই নিয়ে নিল। বাড়িতে গিয়ে জবাকে দিবে গোপনে।
বাড়িতে আসতে আসতে রাত হলো। মার্কেট করে ওরা আবার গিয়ে ছিল সিনেমা হলে সেখান থেকে ফিরতে রাত হয়ে গেছে।
কুলসুম বেগম কাউকে কিছু বললেন না। বাড়ির সবাই যেনো ভেবে নিয়েছে বিয়ের আগে কেউ কাউকে কিছু বলবে না কোনো ঝামেলা করবে না।
সবাই নিজেদের রুমে চলে গেলো।
জবা নিজের রুমে যাবে তখনি পেছন থেকে অভ্র বলে উঠলো, ‘ পাপ কখনো গোপন করা যায় না তা জ্বলজ্বল করে আকাশের তাঁরার মতো পাপীর মনে’
জবা ভয়ে ভয়ে পেছন ফিরতেই দেখলো অভ্র মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছে।
জবা হাফ ছেড়ে বাচলো পা বাড়ালো রুমের দিকে তখনি আবার শুনতে পেলো,’ এই কথাটা আমি আগেও কোথাও শুনেছি!’
পা থমকে যায় জবার, জবা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে অভ্র ইচ্ছে করে ওকে শোনাচ্ছে! অভ্র কি ওকে সন্দেহ করছে.???
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।