#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_৩৪(শেষ পর্ব)
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
” বর নেই! তাহলে কি আবারও বর পালিয়েছে.!!.?””
কি আশ্চর্য! এই বংশের ছেলেরা কি পালানোর জন্য আর কোনো সময় পায় না? ঠিক বিয়ের আগমুহূর্তে পালিয়ে যায়.?
প্রথম বেলীর সাথে অভ্রর বিয়ে ঠিক হলো সব ঠিক ছিল বিয়ের আগমুহূর্তে অভ্র পালিয়ে গেলো।
আর এখন নিরুপমার সাথে আসিফের বিয়ে ঠিক হলো। বিয়ের আগমুহূর্তে আসিফ পালায়ে গেলো।
নিরুপমা থমথমে মুখে তাকিয়ে আছে অভ্রর দিকে। অভ্র শেরওয়ানি খুলার জন্য বোতামে হত দিতেই নিরুপমা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আপনি কি করছেন.?’
অভ্র একবার শেরওয়ানির বোতাম ত আরেক বার নিরুপমার হাল্কা রাগী রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস লুকিয়ে বললো,’ চেঞ্জ করছিলাম গরম লাগছে।
‘ তাই বলে আমার সামনে.? একটা মেয়ের সামনে.? ‘
‘ তুমি আর এখন আলাদা কেউ নও। আমার বিয়ে করা স্ত্রী। আমি তোমার সামনে সবকিছু করতে পারি।’
‘ ওওও আচ্ছা! এখন মুখ থেকে ত ভালোই কথা বের হচ্ছে ‘
‘ ভুল কিছু ত বলছি না!’
‘ আমি ত এই বিয়ে মানিনা!’
‘ জানি’
‘ কি জানেন.?’
‘ এই যে বিয়ে মান না’
নিরুপমার ইচ্ছে করলো এক গুলি মেরে অভ্রর ব্রেইন ছাড়া মাথাটা উড়িয়ে দিতে.।
‘ আপনাদের বংশের ছেলেরা কি বিয়ের আগ মুহূর্তেই এভাবে পালিয়ে যায়!.? ‘
নিরুপমার এমন কথাই শান্ত দৃষ্টিতে অভ্র নিরুপমার দিকে তাকায়।
‘ জানা নেই!’
‘ কেন জানা নেই.? আপনিও ত পালিয়ে ছিলেন!’
‘ পালিয়ে ছিলাম বলেই ত আজ তোমার স্বামী হয়েছি’
‘ আমাকে উদ্ধার করেছেন’
অভ্র হাল্কা হেঁসে একটা ব্যাগ বের করে বললো,’ খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে.? ‘
নিরুপমা ভ্রু কুঁচকে ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বললো,’ কিসের জন্য..? ‘
‘ এই যে আমাকে বিয়ে করতে হলো!’
নিরুপমা কথার জবাবে অভ্রর চোখের দিকে তাকালো। কেমন ছলছল নয়ন।
নিরুপমার বুকের ভেতর কেমন আন্দোলন শুরু হলো। অভ্রর চোখে জল কেন.? নিরুপমার খুব করে ইচ্ছে করলো ভালোবেসে অভ্রর গালে হাত রেখে মুচকি হেঁসে বলতে, ‘ একটা বার ভালো করে আমার দিকে তাকাও সকল উত্তর পেয়ে যাবে’
অভ্র নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বললো, ‘ কষ্ট পেও না আমি তোমার কষ্টের কারণ হতে চাইনি। আমি চেয়েছি তুমি ভালো থাকো৷ সবকিছু পেতে কেন হবে.? সে ভালো থাকলেই ত পুরো দুনিয়া পাওয়া হয়ে যায় ‘
নিরুপমার রাগ হচ্ছে, যদি তাকে নাই পাওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে ভালো কেন বাসবো.? ভালো বাসি মানে তাকে পেতেই হবে। এতো দয়ালো আমি হতে পারবো না। সে অন্য কারো কাছে খুশিতে থাকবে আর আমি.? আমি কষ্টের সাগরে হাবুডুবু খাব.? সরি ভাই এতো দয়ালো আমি না। সে সারাজীবন কষ্টে থাকুক তাও সে আমারই থাকুক,আমার পাশে থাকুক, মৃত্যুর যন্ত্রণা ত আমি দিব না একটু না হয় আমার ভালোবাসার যন্ত্রণা সহ্য করুক তাও আমার থাকুক!’
অভ্র ব্যাগ হাতে নিয়ে বললো,’ আমি চলে যাচ্ছি! তোমার সুখের কারণ ত হতে পারলাম না, দুঃখের কারণ ও হতে চাই না। ‘
নিরুপমা কাঁপছে! রাগে ওর ঠোঁট, চোখ কাপছে।
‘ কোথায় যাবে.?’
অভ্র ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বললো,’ তোমার বিয়ে দেখার পর দেয় ছাড়ার কথা ছিল অথচ ভাগ্য আমাকেই তোমার সাথে বেঁধে দিল। কিন্তু আমি তোমার ভালো চাই। ‘
নিরুপমা রাগে চিৎকার করে বলে উঠলো , ‘ সব সময় আমার ভালোই চাচ্ছ! অথচ আমি ভালো থাকছি কোথায় সেটা জানলে না.? তুমি আমার ভালো চাইতে গিয়ে আমাকেই কখনো চাইলে না অভ্র!’
নিরুপমা রাগ দেখে অভ্র থমকে গেলো। মেয়েটা কাঁদছে! চোখ অসম্ভব লাল হয়ে গেছে।
নিরুপমা আবার বলে উঠলো, ‘ তুমি আমার ভালো চাইতে গিয়ে একটা বার আমার দিকে তাকিয়ে বুঝলে না আমি কি চাইছি! একটা বার বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করলে না! একটা বার কাউকে বলার প্রয়োজন মনে করলে না অন্তত আমাকে বলতে.. আমি অনেক সুযোগ খোলা রেখে ছিলাম আমাকে বলার জন্য । প্রতি রাতে অপেক্ষা করতাম তুমি আসবে, তুমি কল দিবে, তুমি আমাকে বুঝাতে চাইবে। তুমি বলবে তোমার আমাকে চাই! অথচ রাত শেষে আমি ক্লান্ত হয়েছে আমার অপেক্ষা শেষ হয়নি!’
অভ্র অবাক কন্ঠে বললো,’ আমি দেখেছি তুমি আসিফ ভাইয়ার সাথে অনেক খুশি ছিলে!’
‘ তুমি দেখেছো.?’
রেগে নিরুপমা বালিশ ছুড়ে মারলো অভ্রর দিকে। অভ্র দ্রুত সরে দাঁড়িয়ে বললো,’ তুমি ও ত একবার বলনি! ‘
‘ হ্যা আমি বলিনি তবে তোমার মতো স্বার্থপর হইনি। বিয়ে ভাঙিনি তবে… ‘
অভ্র চোখ ছোট ছোট করে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তবে…?’
নিরুপমা এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,’ কিছু না! ‘
‘ কিছু ত হে আমার দিকে তাকাও!’
নিরুপমা চোখ পাকিয়ে বললো,’ আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না দূরে থাকো একদম দূরে ‘
আঙ্গুল দিয়ে দূরত্ব দেখিয়ে নিরুপমা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে কানের দুল খুলে রেখে বললো,’ দাঁড়িয়ে আছো কেন.? যাও তোমার প্লেন ত উড়াল দিবে।’
অভ্র ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বললো, ‘ হুম যাচ্ছি ত কেউ ত আর আমাকে আটকাবে না!’
নিরুপমা পেছনে ফিরে তাকালো না। এক এক করে গায়ের গহনা গুলো খুলে রাখলো। অভ্র রুম থেকে বের হতেই নিরুপমা একটা নরমাল শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন।
_________
অভ্র সন্দিহান দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুই সব জানতি তাই না.?”
আয়ান হাল্কা হেঁসে দোকানদার কে বললো,’ মামা একটা সিগারেট দাও ত!’
‘ আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি আয়ান.!”
আয়ান অভ্রের কথায় কান না দিয়ে বললো,’ প্রথম পালালি তুই। পালিয়ে আমার ভাগ্য খুলে দিলি দ্বিতীয় পালালো তোর ভাই ভেবে নে তোর ভাগ্যও খুলে গেছে। ‘
অভ্র আয়ানের এমন কথার মানে বুঝতে না পেরে বললো,’ তুই কি নেশা করে আছিস!’
‘ বিয়ে উপলক্ষে একটু!’
অভ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ব্যাগের দিকে তাকালো বেঞ্চের পাশে পরে আছে।
আয়ান ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বললো,’ বিয়ের রাতেই হানিমুনে যাওয়ার প্লেন আগে থেকে করে রেখেছিস নাকি!.?’
‘ আর হানিমুন! আমি ত দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করে ছিলাম ‘
‘ তারপর.? ‘
আয়ান বেশ মজা পাচ্ছে এমন কথায়। ওর ধারণা নিরুপমা আর অভ্র মিলে আগে থেকে প্লান ছিল।
অভ্র আবার বলে উঠলো, ‘ বাসার পরিবেশ এতো শান্ত কেন.? মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি। ‘
আয়ান সিগারেটে টান বসিয়ে বললো,’ কিছু কি হয়েছে.? ‘
অভ্র বিরক্ত হয়ে বললো,’ মাতাল হওয়ার আর সময় পাইলি না! ‘
আয়ান মাতাল নয় শুধু মাত্র অভ্রর কথার উত্তর দিতে চাচ্ছে না।
আয়ান অভ্রর কাঁধে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ঘরে ডাকাত বউ রেখে বাহিরে বেশিক্ষণ থাকলে তোর কপালে কি আছে ভাবতেই হাসি পাচ্ছে। ‘
অভ্র আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোর ঘরেও ত বউ আছে তুই কি করছিস!’
আয়ান হু হু করে হেঁসে বললো,’ আমার ত ডাকাত নয়!’
অভ্র ভ্রু কুঁচকাতেই আয়ান ফিসফিস করে বললো,’ ওই যে দেখ আকাশের চাঁদ আমার বউ হলো আকাশের চাঁদ, তবে এই চাঁদ সবাই কে আলো দেয় না শুধু আমাকে দেয়!’
অভ্র আয়ানের হাতের আঙ্গুলের দিকে তাকালো আকাশের ওই দূরের চাঁদের দিকে।
অভ্রও বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ আমার ডাকাত রাণী চাঁদ নয় সূর্য। যার দিকে তাকালেই চোখ ঝলসে যায়! হাত বাড়ালেই পুড়তে হয় ‘
দুই ভাই বউ নিয়ে বিরবির করে বাড়িতে ফিরে আসলো।
আয়ান সোজা ছাঁদে আসলো। ছাঁদে এসে কিছু সময় থমকে গেলো। পেছনটা দেখেই বুঝতে পারলো এটা নিরুপমা।
আয়ান ধীর পায়ে নিচে নেমে যেতে চাইলে নিরুপমা পেছন থেকে ঢেকে বলে উঠলো, ‘ এদিকে আসেন’
আয়ান ফিরে তাকাতেই নিরুপমা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,’ দেবরের সাথে একটু আড্ডা দেওয়াই যায়। ‘
আয়ান এসে নিরুপমার থেকে বেশ দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো।
নিরবতা ভেঙে নিরুপমা বলে উঠলো, ‘ আপনার আম্মু কেমন আছে.?’
আয়ান নিরুপমার দিকে না তাকিয়ে বললো,’ পাবনা হসপিটালে ভর্তি আছে। বার বার নিজেকে আঘাত করতে যায়। চিৎকার করে নিজেকে খুনি বলে, মাঝ রাতে আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমাকে মুক্তি দাও, আমাকে মেরে ফেলো তোমরা আমি মায়ার কাছে যেতে চাই এমন করে। ‘
নিরুপমা হাল্কা হেঁসে বললো,’ মানুষের সবচেয়ে বড় শাস্তি কোনটা জানেন.? মৃত্যু মানেই মুক্তি যখন সে বেঁচে থাকবে নিজের করা অন্যায়, পাপ, এতো বড় ভুল ভাবতে থাকবে একটা সময় সে নিজেকে শেষ করতে চাইবে কিন্তু পারবে না। আস্তে আস্তে তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিবে। মৃত্যু মানেই মুক্তি তাই আমি আপনার আম্মুকে যন্ত্রণা উপহার দিলাম! ‘
আয়ান ছলছল চোখ লুকিয়ে নিল। আয়ানের চোখে তার মা ছিল পৃথিবী, বাবাকে সে তেমন পছন্দ করতো না। আজ সেই মায়ের এমন রুপ সে ভাবতে পারছে না। ঘৃণা ও ত আসে না আবার ভালোবাসা ও না এটা কেমন অনুভূতি.?
আয়ান আস্তে করে বলে উঠলো, ‘ আগে থেকেই সব জানতে সেই জন্য আমাকে টার্গেট করলে! আচ্ছা এটা বুঝলাম কিন্তু অভ্র, আসিফ কে কেন.?’
নিরুপমা শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ অভ্রর সাথে পরিচয় অনেক পুড়নো আর আসিফের সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না বন্ধু। ‘
আয়ান কথা বাড়ালো না। নিরুপমা ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।
আয়ান পেছনের দিকে না ফিরেই হেঁসে উঠলো। সে পুলিশ সবার মনের খবর ধরতে জানে। কারো মন চুরি হয়ে গেলে সেটা ধরতে জানবে না.? এই ভুল ত আয়ান করেনি। আয়ানও জানে তারা তিন ভাই এই অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটার প্রেমে পড়ে ছিল।
পড়ে ছিল! আর পড়ে আছের মধ্যে পার্থক্য বুঝ.? আয়ান একটা সময় ওর রূপের প্রেমে পড়ে ছিল। তারপর.? সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরুর সাথে প্রথম দেখায় তার ব্যাক্তিতের প্রেমে পড়ে ছিল দুইটা একই মানুষ আয়ান দু’জনের প্রেমে পড়েছে তবে ভালোবাসেনি। ভালোবাসলে এভাবে চোখের সামনে দেখেও ভুলে যেতে পারতো না। সে ভালোবেসেছে তার বউকে যার আশেপাশে কোনো ছেলে দেখলেই মাথায় আগুন ধরে যায়। দেরিতে হলেও সে বুঝেছে সে তার জীবনের ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে।
তবে মানতেই হয় নিরুপমা একটা অসাধারণ চমৎকার মেয়ে। যাকে ভালোবাসতে সবাই জেনো বাধ্য!
কতো সুন্দর করে আগে থেকে আসিফের সাথে সবকিছু প্লান করে রেখে ছিল। আয়ান সবকিছু জানে। যেই রাতে নিরুপমা আর আসিফ ছাঁদে বসে প্লান করে ছিল বিয়ের আগমুহূর্তে পালানোর কথা নিরুপমার মুখে ছিল চমৎকার হাসি আর আসিফের চোখে ছিল স্বপ্ন হারানোর বেদনা।
প্রতিটা গল্পে দুইজন খুশি হয় তৃতীয় জন কষ্ট পেতেই হয়! মেনে নিতে হয় সে অন্য কারো!
_______
নিরুপমা রুমে এসে বিছানায় অভ্রর ব্যাগটা দেখলো।
ধীর পায়ে বারান্দায় আসতেই অভ্রর হাসিহাসি মুখটা দেখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো।
অভ্র নিরুপমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,’ তোমার হাতটা একটু ধরতে দিবে.?’
নিরুপমা অভ্রর হাত না ধরেই বারান্দায় ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ।
‘ হাতটা ধরতে দিলে এমন কি ক্ষতি হয়ে যেত.?’
নিরুপমা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমি বলতে হবে কেন.? তুমি ধরতে জানো না.?’
অভ্র প্রথম বুঝলো না। যখন বুঝলো এক হাতে পেছনের চুল চুলকে বললো,’ আমার লজ্জা লাগে ‘
নিরুপমা অভ্রর মুখের অবস্থা দেখে খিলখিল করে হেঁসে উঠলো।
অভ্র মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললো, ‘ আমার রক্তজবা! শুধুই আমার”
দূরে কোথাও বসে এক পুরুষ কারো ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুমি আমার হৃদয়ে থাকবে আর অন্য কারো ভাগ্যে!’
সমাপ্ত
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।