পরিণয়ে নোলককন্যা পর্ব-১৩+১৪

0
171

#পরিণয়ে_নোলককন্যা (কপি নিষেধ)

১৩

বিবাহিত জীবনের তিরিশটি বছর কেটে গেছে। আজও স্ত্রী আশেপাশে থাকলে ইবনূল ইবতেহাজের হৃদয় পুলকিত হয়ে উঠে। পাশের চেয়ারে বসে দুপুরের খাবারে সঙ্গ দিচ্ছে যে নারীটি, তার সাথে ইবনূলের বাবা ঠিক তিরিশ বছর আগে ইবনূলের বিয়ে দিয়েছিলেন। খুব ঘটা করে সে বিয়ের আয়োজন হয়নি। ব্যবসার কাজে মেয়ের বাবার বাড়ির দিকে গিয়ে মাঝরাস্তায় স্কুল ফেরত এক কিশোরীকে পছন্দ হয়ে যায় ইবনূলের বাবার। তারপর খোঁজ খবর নিয়ে ঘটক প্রেরণ। শুভ দিন দেখে সস্ত্রীক সেই মেয়েটির বাড়ি গিয়ে বৌ দেখা পর্ব শেষ করার পাশাপাশি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে এলেন। ইবনূল ইবতেহাজ নিজের বৌকে দেখেছিলেন একবারে কবুল বলার পর। পূর্ণিমা রাতের উজ্জ্বল চন্দ্রিমার মতো একটি কিশোরী। লাল টুকটুকে শাড়ি গায়ে জড়িয়ে টুপটাপ চোখের জল ফেলছিল। সেই প্রথম দেখায় ইবনূল ইবতেহাজ প্রেমে পরে গেলেন, তাও আবার নিজের স্ত্রীর। এরপর প্রতিনিয়ত সে প্রেম বেড়ে চলেছে।

খাওয়ার পাশাপাশি ইবনূল ইবতেহাজ বারংবার স্ত্রীর দিকে চোরাচোখে তাকাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে পর্তুলিকা বললেন,

‘কি সমস্যা? কিছু বলবে?’

কাঁধ উঁচু করে নাচিয়ে ইবনূল ইবতেহাজ বললেন,

‘কিছু না।’

‘তাহলে বারবার তাকাচ্ছো কেনো?’

‘এমনিতেই। কেনো? আমি আমার স্ত্রীর দিকে তাকাতে পারি না?’

‘তোমার এসব রোমিওগিরি এবার বন্ধ করো। ঘরে ছেলের বউ এসেছে।’

‘তাতে কি হয়েছে?’

‘ছেলের বিয়ে দিয়েছ। মানে তুমি বুড়ো হয়েছ।’

‘প্রেমিক পুরুষ কখনও বৃদ্ধ হয় না। আমি এখনও তোমাকে প্রথমদিনের মতোই ভালোবাসি, পিউ।’

পর্তুলিকা লজ্জা পেয়ে খাবারে মনোযোগ দিলেন। কোন ক্ষণে বাবা এই লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছেন কে জানে! অদ্ভুত তার আচরণ। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললেন,

‘ছেলেটার জন্য মন কেমন করছে! ভাবছি একবার গিয়ে দেখা করে আসবো।’

ইবনূল ইবতেহাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘যেতে ইচ্ছে করলে যাও।’

‘ও বাসায় আমার যাওয়া পরখ পছন্দ করে না। আগেও কতবার যেতে চেয়েছি। পরখ না করে দিয়েছে।’

‘বলার কি দরকার? ড্রাইভারকে আমি লোকেশন বলে দিচ্ছি। তুমি চলে যাও।’

‘যদি রাগ করে?’

‘মা ভক্ত ছেলে মায়ের উপর রাগ করবে! কী যে বলো! তার সব রাগ বাবার উপর। তোমাকে ও কিছু বলবে না। ওই বাসাটা মানুষ থাকার অনুপযুক্ত বলে তোমাকে নিয়ে যায়নি।’

‘তাহলে যেতে বলছ?’

‘হ্যাঁ যাও। তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।’

পর্তুলিকা খুশি মনে উঠে চলে গেল হাত ধুতে। যা দেখে ইবনূল ইবতেহাজের ভালো মনটা খারাপ হয়ে গেল। যবে থেকে এই ছেলেটার অস্তিত্ব জানতে পেরেছে; পিউ এর সমস্ত মনোযোগ চলে গেছে ওর দিকে। উঠতে, বসতে, চলতে, ফিরতে শুধু পরখ আর পরখ। মাঝেমধ্যে ইবনূল ইবতেহাজের ভীষন রাগ হয়। যদি না পিউ বাচ্চা চাই বলে কান্নাকাটি করত তাহলে সে কখনও বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবত না। বাচ্চা পেলে পিউ এর সমস্ত মনোযোগ এভাবে বাচ্চার দিকে চলে যাবে জানলে ওর কান্নাকাটি সহ্য করে নিত তবুও বাচ্চা নিত না। ভালোবাসা ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করলে পিউ হেসে বলে,

‘লোকে শুনলে তোমাকে পাগল বলবে। নিজের ছেলেকে হিংসে করছ!’

লোকে পাগল বললে বলুক। ইবনূল ইবতেহাজের সেসবে কিছু যায় আসে না। উনার কাছে পিউ এর অগ্রাধিকার বেশি। এই ছেলেটা আসার পর থেকে পিউ এর সাথে উনার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ইবনূলের এখনও মনে আছে, পরখ গর্ভে থাকাকালীন পিউ এর মা এসে নিজের মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন। মেয়ের প্রথম প্রসবকালীন সময় নাকি বাবার বাড়িতে থাকতে হয়। এটাই নিয়ম। এমন অদ্ভুত নিয়মের কথা ইবনূল কস্মিনকালেও শুনেননি। বাড়িতে অনেক ঝামেলা করেও সেবার পিউ এর যাওয়া আটকাতে পারেননি দেখে সেদিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আর কখনও তারা বাচ্চা নিবে না।

পরখ জন্মগ্রহণের এক মাস পর ইবনূল নিজে গিয়ে স্ত্রী সন্তানকে বাড়ি নিয়ে আসেন। কিন্তু এবার আরেক ঝামেলা হল। বাচ্চাসমেত পিউ এর শোয়ার ঘর আলাদা করে দেওয়া হল। ইবনূলের মাথায় হাত। বিরোধিতা করায় পিউ এসে হাত জোর করে বলল,

‘দয়া করে তুমি চুপ করো। সবার সামনে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। এমন বউপাগল জামাই আমার কপালেই কেন জুটল!’

পিউ এর সে আফসোস ইবনূল ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে নিজেও আশ্রয় নিল পিউ এর ঘরে। অফিস থেকে ফিরে নিজের ঘরে ঢুকলেও সবাই ঘুমিয়ে যাওয়া মাত্র পা টিপে টিপে ঠিকই হাজির হত পিউ এর ঘরে। বিছানার এক কোণে গুটিশুটি হয়ে পিউ এর পাশে ঘুমিয়ে পরত।

আহা! সেসব দিন চাইলেও কি ভুলতে পারা যায়! পরখকে দেখলেই সেই দিনগুলো আজও চোখে ভাসে। ছেলেটা তাকে কম হেনস্তা করেনি। এই যে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল, তা নিয়ে পিউ এর সে কী মন খারাপ! যখন সে মন খারাপ পিউ এর মন মস্তিষ্ক ছাপিয়ে যায় তখন দিশেহারা হয়ে উঠে ইবনূল। কত পরিকল্পনা করে ছেলেকে বাধ্য করে বাড়ি ফিরতে; যাতে পিউ এর মুখে হাসি ফুটে।

কলেজ শেষ করে পরখের মুখে বিদেশ যাওয়ার কথা শুনে সেদিন রাত্রে পিউ এর সেকি কান্না! ইবনূলের বুকে মুখ লুকিয়ে বারবার বলেছিল,

‘আমার একটাই ছেলে। ওকে এতদূরে রেখে আমি কীভাবে থাকব!’

স্ত্রীর সম্মুখে ছেলের আবদার ইবনূলের নিকট তুচ্ছ। সে একবাক্যে সে প্রস্তাব নাকচ করে দিল। এই যে এখন পরখ আবার বিদেশ যাওয়ার বায়না ধরেছে, সেটা বানচাল করতে আবারও ইবনূল ইবতেহাজকে কত পরিশ্রম করতে হচ্ছে!

আর ছেলেও হয়েছে এমন একটা! কেনো যেনো দেশেই থাকতে চায় না।

লেখাপড়ার নামে বিদেশে গিয়ে একেবারে বসত গড়ার মনোবাসনা ইবনূল ইবতেহাজ ঠিকই জানতে পেরেছিলেন। নিষ্ঠুর ছেলে একবারও মায়ের কথা ভাবেনি। তাকে ছেড়ে পিউ এখানে কীভাবে বাকিটা জীবন কেঁদেকেটে কাটাবে সেটা ভাবলে নিশ্চয়ই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারত না। কিন্তু ইবনূল ছেলের মত পিউ এর ব্যাপারে উদাসীন হতে পারেননি। তিনি ছেলেকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য করতে পাসপোর্ট সরিয়ে রেখে দেশে ফিরে বাবার ব্যবসার হাল ধরার প্রতিজ্ঞা করতে বাধ্য করেছেন। ছেলে বাবার ব্যবসার হাল ধরলে পিউ অন্তত খুশি হবে।

ইবনূলের এ সংগ্রামে সৃষ্টিকর্তা উনাকে বেশ সহযোগিতা করেছেন। তা না হলে সেদিন আদ্রিকার বাবা নিজে এসে উনার পারিবারিক আলোচনা এবং মেয়েকে বাধ্য হয়ে ভাইয়ের ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা জানাতেন না। সুযোগটি লুফে নিতে ইবনূল এক মুহূর্ত দেরী করেননি।

এই মুহূর্তে বিয়ে দিলে পরখ আরও কিছুদিন দেশে আটকে যাবে। বউ রেখে বিদেশে পড়তে গেলেও প্রতিটি ছুটিতে অন্তত বউয়ের টানে সে দেশে এসে ঘুরে যাবে। তা না হলে পরখ যেমন উদাসীন ছেলে! দেখা গেলো দুই বছরের কোর্স শেষ করে তবেই দেশে ফিরবে। এতোদিন ছেলের শোকে পিউ এর চোখের নিচে জমে থাকা কালো দাগের দৃশ্য কল্পনা করে ইবনূল এক বাক্যে আদ্রিকার সাথে পরখের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।

ভোরবেলা লোকচক্ষুর আড়ালে বিয়ের কার্যক্রম সেড়ে ফেলার বুদ্ধিটাও তিনিই দিয়েছেন। মসজিদে আলোচনা করা, ভোরবেলা কাজীকে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে সবকিছু ইবনূল ইবতেহাজ নিজেই করেছেন। শুধুমাত্র পরখের একটি পিছুটান তৈরি করার স্বার্থে।

তুই বাপু এখন বিয়ে করেছিস, নিজের বউ নিয়ে ব্যস্ত থাক না। আরেকজনের বউকে এসবের মাঝে টানার কী দরকার! আমাকে আমার বউ নিয়ে একটু সুখে থাকতে দেও।
এত বড় হয়েও ইবনূল ইবতেহাজের ছেলেটা এখনও মায়ের আঁচল ছাড়ল না। বড্ড হতাশ লাগে ইবনূলের।

মাঝেমধ্যে মনে হয় পিউকে নিয়ে কোথাও একটা চলে যায়। ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য পারছে না। ছেলেটা ব্যবসার হাল ধরলে সে নিশ্চয়ই পিউকে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পরবে। এবার আর কোন বাঁধা মানবে না।

_______

গাড়ি থেকে নেমে পর্তুলিকা আবারও ড্রাইভারের দিকে তাকালেন। অবিশ্বাসের সুরে জানতে চাইলেন,

‘তুমি ঠিক জানো তো, পরখ এখানেই থাকে?’

দিবনেশ বেশ বিপাকে পরে গেল। এই নিয়ে তিনবার পর্তুলিকা তাকে একই প্রশ্ন করলেন। সদ্য তিরিশে পা রাখা দিবনেশ মাথার চুলে হাত বুলিয়ে নিয়ে বলল,

‘জ্বি ম্যাডাম। আমি আগেও স্যারের সাথে এখানে আসছিলাম। আপনাকে ঠিক জায়গায় আনছি।‘

মাঝারি আম গাছটার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিয়ে মরিচা ধরা ছোট লোহার গেটটি হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে খুলে ভেতরে পা রেখে পর্তুলিকা বিড়বিড় করে বললেন,

‘পরখ এখানে থাকে! এটা কোনো বাড়ি হল!’

দরজায় কয়েকবার নক করার পর দরজা খুলে দিয়ে পর্তুলিকার সামনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরখ। মা এভাবে হুট করে চলে আসতে পারে সেটা সে দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি৷ পরখের হতবিহ্বলতা দেখেও তা এড়িয়ে গিয়ে পর্তুলিকা মিষ্টি হেসে বলল,

‘কী রে, ভেতরে যেতে দিবি না? এভাবে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?’

পরখ সরে দাঁড়িয়ে বলল,

‘এসো, ভেতরে এসো। এভাবে খবর না দিয়ে চলে এলে! আমাকে ডাকলেই আমি চলে যেতাম।’

ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে পর্তুলিকার মুখের হাসি মুছে গেল। ডাইনিং টেবিলের চেয়ারের উপর বসে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিকা। মুখে সামান্য বিরক্তিবোধ; অতিথির হঠাৎ আগমনে যেন ভীষণ বিরক্ত। তবে চোখের কোল ঘেষে বেয়ে চলা অশ্রুকণা পর্তুলিকার নজর এড়িয়ে গেল না। ডাগর চোখ দুটোতে এখনও উপচে পরছে জলের ধারা।

পর্তুলিকার উপস্থিতি বোধে আসা মাত্র চট করে চোখের জল মুছে আদ্রিকা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ভীত হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে রইল।

পর্তুলিকা বাক্যহারা; ঘুরে তাকালেন পরখের দিকে। পরখ নিজেও খানিকটা হকচকিয়ে গেছে। বলল,

‘সোফায় গিয়ে বসো। যদিও ওতোটা কম্ফোর্টঅ্যাবল না।’

পর্তুলিকা বিনাবাক্যে সোফায় স্থান গ্রহণ করে আদ্রিকার দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসার চেষ্টা করলেন। তখনি উনার নজরে এলো টেবিলের উপরে রাখা খাবারগুলো। তিনি আদ্রিকাকে প্রশ্ন করলেন,

‘তোমরা দুপুরের খাবার এখনও খাওনি?’

আদ্রিকা কিছুক্ষণ পর্তুলিকার দিকে তাকিয়ে থেকে খাবারের প্যাকেটের দিকে তাকাল। তারপর সাহায্যের জন্য তাকাল পরখের দিকে। পরখ কিছু বলছে না। চুপচাপ আদ্রিকার দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে শ্বাশুড়ির প্রশ্নের জবাব দেওয়া জরুরি। তা না হলে বেয়াদবি হয়ে যাবে যে!
আদ্রিকা মাথা নিচু করে দুদিকে মাথা দুলালো।

এবার পর্তুলিকা ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘তুই না আমাকে বললি, খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে৷ তুই খাবার নিয়ে বাড়ি ফিরছিস। তাহলে এখনও তোদের খাওয়াদাওয়া হয়নি কেনো?’

পরখ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়ের দিকে এগিয়ে এসে বলল,

‘খেতেই বসছিলাম। এর মাঝে তুমি চলে এলে।’

‘এতোক্ষণে! তিনটা বাজে পরখ।’

‘ওই একটু দেরী হয়ে গেল।’

‘আর দেরী নয়, তোমরা খেতে বসো।’

‘তুমি খেয়েছ? আমাদের সাথে খাবে চলো। যদিও সস্তা হোটেল থেকে আনা খাবার। খেতে পারবে বলে মনে হয় না।’

পর্তুলিকা ভরপেট খেয়ে এসেছেন। তবুও ছেলের হীনমন্যতাকে ভুল প্রমাণিত করতে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

‘অনেকক্ষণ হলো লাঞ্চ করেছি। তোর এখানে আসতে আসতে হজম হয়ে গেছে। চল, একটু খেয়ে দেখি তোর সস্তা হোটেলের খাবার।’

পরখ মলিন হাসে। সে জানে, তার মায়ের মোটেও ক্ষিধে নেই৷
খাবার টেবিলে দুটো মাত্র চেয়ার। পরখ দ্রুত গিয়ে নিজের পড়ার টেবিলের রকিং চেয়ারটি নিয়ে এসে মাকে সেখানে বসাল।
নিজ হাতে মায়ের প্লেটে সামান্য খাবার তুলে দিয়ে বলল,

‘জোর করে বেশি খেতে হবে না।’

পর্তুলিকা সগৌরবে হেসে ভাতের প্লেট সামনে নেন। পুরোটা সময় ধরে আদ্রিকা চুপচাপ আছে। পর্তুলিকা হাত ধরে ওকে নিজের পাশের চেয়ারে বসিয়েছেন। পরখ ওর প্লেটেও খাবার পরিবেশন করে দিল। যা সামনে নিয়ে ওকে বসে থাকতে দেখে পর্তুলিকা বললেন,

‘তুমি খাচ্ছ না কেনো?’

আদ্রিকা দ্রুত তরকারি দিয়ে ভাত মাখতে মাখতে বলল,

‘এই তো খাচ্ছি।’

‘ধীরে খাও। কোনো তাড়া নেই।’

পরখের দিকে ভীত দৃষ্টিপাত করে আদ্রিকা নিজের খাওয়ায় মনোনিবেশ করল। খাওয়ার মাঝে হঠাৎ পর্তুলিকা বললেন,

‘তুমি কাঁদছিলে কেনো? পরখ বকেছে?’

এমন প্রশ্নে আদ্রিকার কাশি উঠে গেল। শ্বাস নালিতে খাবার আটকে বিশ্রী এক অবস্থা। পরখ পানি এগিয়ে দিল। পর্তুলিকা পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

‘আহা! আস্তে খাও না৷ এতো তাড়াহুড়ো কীসের! কেউ তোমাকে পিটাচ্ছে না তো।’

পর্তুলিকার কথায় আদ্রিকা নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে নিয়ে বলল,

‘স্যরি। আর হবে না।’

পর্তুলিকা অবাক হয়ে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পরখের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি ছুড়ে দিলেন। বিনিময়ে পরখের কীইবা বলার আছে! সেকি একদিনে বউকে ধমকে, পি/টিয়ে এমন ভীত হরিণী বানিয়েছে নাকি!
পরখ ভারী বিরক্ত হল৷ এই মেয়ে সবার সামনে এমন ন্যাকা সেজে থাকে যেনো ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না। অথচ সে মাছ উল্টেপাল্টে খেয়ে কাঁটাও চিবিয়ে ফেলতে পারে। সে কথা তো মাকে বলা যায় না।
দায়সারা ভাবে পরখ আবারও নিজের খাবারে মনোযোগ দিল।

পর্তুলিকার সন্দেহ ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে৷ অভিমানী ছেলেটা নিজের মন খারাপের দায় অভাগী মেয়েটার উপর দেয়নি তো? তিনি আবারও আদ্রিকাকে প্রশ্ন করলেন,

‘এতো কান্নাকাটি কীসের জন্য?’

আদ্রিকা আমতা আমতা করে কোনোরকমে জবাব দিল,

‘মায়ের সাথে কথা বলছিলাম।’

‘কি কথা হল যে কান্নাকাটি শুরু করে দিলে?’

‘কথা হয়নি ঠিকঠাক। বাড়িতে কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে। আমি কথা বলার মাঝখানে বাবার চিল্লাচিল্লির শব্দ শুনলাম। এরপর মা ফোন কেটে দিল।’

প্রথম দেখাতে মোকাররমকে বেশ সুবিধার মনে হয়নি পর্তুলিকার। কেমন বোকাসোকা কিন্তু জেদি গোছের মানুষ। লোকে বোকা, অশিক্ষিত হলেও তার সাথে চলা যায় কিন্তু সেই সাথে ঘাড় ত্যাড়া, জেদি হলে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলা মুশকিল। পর্তুলিকার কপালে সামান্য ভাজ পরল। তিনি বললেন,

‘কিছুক্ষণ পরে আবার কল করে জেনে নিও।’

‘কিন্তু আমার কাছে ফোন নেই।’

কথার তালে বলে ফেললেও এবার আদ্রিকা নিচের ঠোঁট কামড়ে পরখের দিকে তাকাল। পর্তুলিকা অবশ্য এতো গভীরে গেলেন না৷ আদ্রিকার মাথায় হাত বুলিয়ে সস্নেহে বললেন,

‘পরখের ফোন থেকে কল করে নিবে৷ এতো চিন্তার কি আছে! এখন খেয়ে নেও।’

সামান্য একটু ভাত অনেকটা সময় ধরে খেয়ে উঠলেন পর্তুলিকা। কথায় কথায় আদ্রিকার পরিবার সম্পর্কে কিছু জেনে নিলেন৷ পরিবারের সদস্যের কথা জানানোর সময় আদ্রিকা গড়গড় করে বলে গেল,
‘আমার বড় বোন আদ্রতা; ওর সাথে মাহিন ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করা ছিল একদম ছোটবেলা থেকে। বিয়ের দিন আপু কাউকে না জানিয়ে উধাও হয়ে গেল৷ লোকে বলছে ও নাকি কোন ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। ও পালিয়ে গেল বলে মাহিন ভাইয়ের সাথে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলল। তারপর আবার কী হলো কে জানে! ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে এসে উনার সাথে বিয়ে দিয়ে দিল।’

ওর কথা বলার ধরণ শুনে পর্তুলিকা মিটমিটিয়ে হাসছেন বটে কিন্তু মনের মধ্যে সামান্য ভয় কাজ করছে। পরখ বরাবর অভিমানী, চাপা স্বভাবের। মুখ ফুটে কিছু বলে না। সামনের মানুষটিকে অনেককিছু বুঝে নিতে হয়। আদ্রিকা এমন সহজ সরল হলে পরখকে বুঝবে কি করে! পরখের জীবনসঙ্গীর ভূমিকায় একটি বিচক্ষণ, প্রাপ্তমনস্ক মেয়ের দরকার ছিল। আদ্রিকার সরলতা পরখের গুমড়ে গুমড়ে বেঁচে থাকার কারন না হয়ে দাঁড়ায়।

খাওয়া শেষে এঁটো থালা বাসন গুছিয়ে আদ্রিকা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলে পর্তুলিকাও পিছু পিছু গেলেন৷ রান্নাঘরের ফাঁকা ঝুড়ি দেখে বললেন,

‘বাজার সদাই কিছু করা হয়নি?’

আদ্রিকা বেসিনের পানির কল চালু করে পর্তুলিকার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে বলল,

‘ফ্রিজের মধ্যে একটা পানির বোতল পর্যন্ত নেই। আপনার ছেলেকে দেখলে কেউ বলবে, সে এমন হাওয়া খেয়ে থাকে!’

আদ্রিকার কথা বলার ঢং দেখে পর্তুলিকা নিজেও হেসে ফেললেন। আদ্রিকার ধোয়া প্লেটটি হাতে নিয়ে র‍্যাকে সাজিয়ে রেখে বললেন,

‘ওর এ সপ্তাহে সুইজারল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল৷ এজন্য বাড়ি একদম ফাঁকা। ঘরে বউ আসবে জানলে নিশ্চয়ই বাজার সদাই দিয়ে ভরিয়ে ফেলত। তোমার কি কি লাগবে লিস্ট করে ফেল৷ আজকেই কেনাকাটা করে নিয়ে আসবে।’

আদ্রিকা বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে ঠোঁট উল্টে বলল,

‘কি কি লাগবে আমি যে জানি না। সংসার করতে কি কি লাগে মায়ের থেকে জেনে নিতে হবে। রাতে মাকে কল দিয়ে লিস্ট বানিয়ে নিব।’

‘তুমি কখনও রান্না করোনি?’

‘নাহ।’

‘এখান রান্না করবে কি করে?’

‘নিজে রান্না না করলেও মাকে রান্না করতে দেখেছি। তরকারি নেড়েচেড়ে দিয়েছি, পেয়াজ ভেজে দিয়েছি। রান্না বেশ সহজ কাজ। চেষ্টা করলেই পারব।’

পর্তুলিকা আলতো হাসেন। চারপাশে তাকিয়ে ছোট রান্নাঘরটি ভালোভাবে দেখে নেন। ক্যাবিনেটে কি কি আছে সেগুলা মনে দেখে নিয়ে মনে মনে বাজারের লিস্ট করে ফেলে আদ্রিকাকে বললেন,

‘চট করে রেডি হয়ে নেও। তোমাকে নিয়ে বাজার সদাই করে ফেলি।’

আদ্রিকা ময়ূরের মতো পেখম মেলে ছুটে গেল নিজের কক্ষের দিকে। পর্তুলিকা পিছু নিলেন না৷ চেয়ার উপর আসনরত পরখের পাশে বসে বললেন,

‘মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে?’

পরখ স্মিত হেসে ভরসা দিয়ে বলে,

‘সব ঠিক আছে।’

‘তোর সমস্যা হলে বল। ওকে দেখে তোর রাগ লাগাটা স্বাভাবিক। আমরা যখন বিরূপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাই তখন নিজের দূর্ভাগ্যের দায় কারো উপর চাপিয়ে দিয়ে হালকা হতে চাই৷ কোনো মানুষের উপর দায় চাপাতে না পারলেও ভাগ্যের উপর, সৃষ্টিকর্তার উপর দায় চাপিয়ে একটুখানি নির্ভার হই৷ তুই হয়তো নিজের ব্যর্থতার দায় ওই মেয়েটার উপর চাপিয়ে দিয়ে নির্ভার হতে চাইছিস৷ তোর যেমন হুট করে বিয়ে হয়েছে তেমনি আদ্রিকারও হুট করে বিয়ে হয়েছে। মেয়েটা কিন্তু প্রাণপণে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ও বোকাসোকা হলেও এতোক্ষণে এটা বুঝে গেছে, এই সংসারে ওকে টিকে থাকতে হবে, টিকিয়ে রাখতে হবে৷ এবং সে এটার চেষ্টায় পুরোপুরিভাবে নিয়োজিত হয়েছে। আমি সেটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু পরখ, তোর মধ্যে শুধুই উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে।’

‘এমন কিছু নয়, মা। আমার এডজাস্ট করতে কিছুটা টাইম দরকার। আমি এতো তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারি না। তুমি সেটা জানো।’

‘অন্য কোনো সমস্যা থাকলে বল। এখন আর মুখে কিছু না বলে চুপ থাকলে চলবে না। তোর সাথে আরেকটা জীবন ওতোপ্রোতভাবে জুড়ে গেছে। তুই নিজেকে কষ্ট দিলে ওই মেয়েটাও তোর কষ্টের ভাগীদার হবে৷ তুই নিজ স্বার্থে মেয়েটাকে কষ্ট দিবি সেটা আমি মানতে পারব না৷ ওকে এখানে রাখতে সমস্যা হলে বল, আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি৷ কিছুদিন আমার সাথে থাকুক৷’

‘তার প্রয়োজন হবে না। বিয়ে করেছে এখন সংসার করুক৷’

আদ্রিকা একটা লাল থ্রিপিস পরে সামনে এসে দাঁড়িয়ে পর্তুলিকে বলল,

‘এটা পরে আমাকে ভালো লাগছে? এভাবে বাজারে যাওয়া যাবে না?’

রেডি হয়ে এসে আদ্রতাকে দেখানো এবং কেমন লাগছে জানতে চাওয়া আদ্রিকার পুরনো অভ্যাস। আজ পর্তুলিকাকে সামনে পেয়ে অভ্যাসমতো প্রশ্ন করে ফেললেও পরখের ভ্রু কুচকানো মুখটি দেখে আদ্রিকার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। থমথমে মুখে পর্তুলিকার দিকে আবার তাকিয়ে নিচু কণ্ঠে প্রশ্ন করল,

‘খারাপ লাগছে? বদলে ফেলব?’

পর্তুলিকা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আদ্রিকার গালে হাত বুলিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন,

‘মাশাআল্লাহ। ভীষণ সুন্দর লাগছে। একদম নতুন বউয়ের মত।’

পরখ উঠে দাড়ালে পর্তুলিকা বললেন,

‘তুই বাড়িতে থাক। রেস্ট নে। আমরা ঘুরে আসি।’

‘একা যাবে?’

‘সাথে ড্রাইভার আছে।’

অগত্যা পরখকে বাড়িতে রয়ে যেতে হল। তবে প্রস্থানের আগে পর্তুলিকার হাতে টাকা ধরিয়ে দিতে সে ভুলে যায়নি। এ নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়াতে কেউ রাজি নয় বলে পর্তুলিকাও চুপচাপ টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেছেন।

দুদিনের রান্নার জন্য যাবতীয় বাজারসদাই করে ফেলেছেন পর্তুলিকা। আদ্রিকা শুধু অবাক হয়ে বাজারের ভীড় দেখছে। এই প্রথম সে কাঁচাবাজারে এসেছে।

শুরুর দিকে কী সুন্দর ভাবে টাটকা সবজি সাজিয়ে রাখা! চারদিকে সবুজ তার মাঝে একটা ঝুড়িতে লাল পাকা টমেটো। তারই পাশে কমলা রঙের গাজর সাজিয়ে রাখা। একপাশে গাঢ় লাল রঙের বিটরুট। পাশেই আরেকটি ঝুড়িতে সবুজ, লাল, হলুদ ক্যাপসিকাম সাজিয়ে রাখা। দেখতে দারুণ আকর্ষণীয় লাগছে। সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে বাজারের ভেতর প্রবেশ করলে তা ধীরে ধীরে কদর্য রূপ ধারণ করেছে।

মাছের বাজারের নোংরা পানি। চারদিকে মাছ লাফাচ্ছে। পায়ের নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে আঁশটে পানির স্রোত। আরেকটু সামনে গিয়েই বাতাসে ভেসে আসল মুরগির পালক। মুরগির কক কক শব্দ; ছু রি ধিপ ধিপ কো/প পরছে অনবরত।

একহাতে ওড়নায় নাক চিপে ধরে অন্য হাতে পর্তুলিকার হাত চিপে আদ্রিকা অপেক্ষায় আছে কখন গোশত কেনা শেষ হবে আর কখন সে উল্টোদিকে দৌড় মারবে৷

বাজার শেষ করে ওরা যখন গাড়িতে বসে বাড়ি ফিরছিল হঠাৎ আদ্রিকা বলল,

‘আপনাকে একটা কথা বলি? আপনি রাগ করবেন না, ঠিক আছে?’

পর্তুলিকা আবারও হেসে লাই দিয়ে বলেন,

‘আচ্ছা, রাগ করবো না।’

আদ্রিকা সলজ্জিত ভঙ্গিমায় মাথা নিচু করে বলে,

‘আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর। আপনি দেখতেও অনেক কিউট। আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।’

পর্তুলিকা অনেকদিন পর এমন প্রশংসা শুনে কিশোরীর মতন খিলখিল করে হেসে উঠলেন। প্রশংসা শুনে খুশি হতে কোনো বয়স লাগে না। একজন কিশোরী নিজ প্রশংসায় যতটা পুলকিত হয়, একজন পৌঢ়াও প্রশংসা শুনে ঠিক ততোটাই পুলকিত হন৷

‘আমার ছেলে কিন্তু আমার চেহারা পেয়েছে। স্বভাবে কার মত হয়েছ ঠিক বলতে পারছি না। তবে ওর বাবার মত স্পষ্টভাষী হয়নি এটা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি।’

সে কথা আদ্রিকা এড়িয়ে গেল। ওই বদলোকটা কার মতো হয়েছে, দেখতে কতোটা সুন্দর তা দিয়ে আদ্রিকার কি কাজ! সে দেখতে পেঁচার মত হলেও আদ্রিকার কিছু যায় আসে না৷ সে পর্তুলিকার গা ঘেষে বসে আবদার করে বলল,

‘আপনি মাঝেমধ্যে আমার সাথে দেখা করতে আসবেন।’

‘আমার ঘর সংসার নেই বুঝি?’

‘তাহলে মাঝেমধ্যে কল দিয়ে আমার সাথে কথা বলবেন।’

তারপর হঠাৎ মনে পরায় মুখ গোমড়া করে বিড়বিড় করে বলল,

‘আমার কাছে তো ফোন নেই৷ উনার কাছে ফোন চাইতে গেলে আবার যদি ধমক দেয়!’

পর্তুলিকা বলল,

‘তোমার নিজস্ব ফোন ছিল না?’

‘উহু। বাড়িতে একটাই ফোন।’

‘আচ্ছা চলো তোমাকে একটা ফোন কিনে দেই।’

‘নাহ, নাহ। ফোনের অনেক দাম। আমার ফোন লাগবে না। উনার ফোন আছেই। সেটা দিয়ে কল দিলেই হবে।’

‘ফোন শুধু কল দেওয়ার জন্যই দরকার হয় নাকি! সারাদিন বাসায় একা কি করবে! ফোনে সময় কাটাবে। ইউটিউবে ভিডিও দেখবে, গান শুনবে। এই যেমন তুমি রান্না পারো না, ইউটিউব থেকে রান্না শিখতে পারবে।’

সুপারমার্কেট থেকে পর্তুলিকা নিজের টাকায় আদ্রিকাকে একটি মোবাইল কিনে দিলেন। নতুন সিম কিনে সেটা সেট করে মোবাইলের যাবতীয় ফাংশন অনেকটা সময় নিয়ে আদ্রিকাকে বুঝিয়ে দিলেন।

‘কোনো তথ্য জানতে হলে গুগলে সার্চ দিবে। এই হচ্ছে ইউটিউব। এটা সার্চবার। এখানে লিখে সার্চ দিলে ভিডিও চলে আসবে। ইউটিউব একটা ভীষণ মজার অ্যাপ। এখানে যাবতীয় বিষয়ের ভিডিও পাওয়া যায়। ধরো তুমি ফোনের কোনো সেটিং খুঁজে পাচ্ছো না, ইউটিউবে সার্চ দিয়ে দেখবে অনেকেই এই সমস্যা নিয়ে ইতোমধ্যে ভিডিও আপলোড দিয়ে দিয়েছে। এখানে ঘর মোছা, ঘর ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে বিল্ডিং তৈরি করা পর্যন্ত সমস্ত ভিডিও পেয়ে যাবে। তুমি রান্না করতে গিয়ে তরকারিতে লবণ বেশি দিয়ে ফেলেছ, এর সমাধানও তুমি এখানে পেয়ে যাবে। মজার ব্যাপার না?’

পুরোটা সময় আদ্রিকা আগ্রহভরে নতুন বিষয় শিখল। বিদায় বেলায় আদ্রিকার ভীষণ ইচ্ছে করছে, পর্তুলিকার সাথে চলে যেতে।
লোকে বলে শ্বশুরবাড়ির থেকে স্বামীর বাড়িতে বেশি সুখ। কিন্তু ওর ক্ষেত্রে উল্টো ঘটনা ঘটেছে। স্বামীর বাড়ির থেকেও শ্বশুর বাড়িতে সে বেশি আদর যত্নে থাকে। স্বামীর থেকেও শ্বাশুড়িকে তার বেশি আপন মনে হয়।

চলবে…
#অক্ষরময়ী

#পরিণয়ে_নোলককন্যা (কপি নিষেধ)

১৪

লোহার গেইট পেরিয়ে সামনের দিকে যেতে যেতে নীহারের মনে হচ্ছে সে এক ধূ ধূ তেপান্তরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার একলা, নিঃসঙ্গ জীবনে সাতরঙ্গা আলো ছিল তার দুটো মেয়ে। মোকাররমের উদাসীনতা তাকে কখনও ছুঁতে পারেনি কারন দুটো চঞ্চল প্রজাপতি তার আশেপাশে উড়ে বেড়াত। কিন্তু আজ, এখন থেকে নীহার একাকীত্ব অনুভব করতে পারছে। ওর সাজানো সংসারে এখন আর কেউ মা, মা বলে চিৎকার করে ওকে বিরক্ত করবে না। এখানে এখন বিরাজ করবে শুধুই নীরবতা।

অন্যদিন দরজার তালা খোলার দায়িত্ব নীহারের থাকলেও আজ মোকাররম নিজেই পকেট থেকে চাবি বের করে তালা খুলে দিল। ঘরের ভেতর পা রাখার আগেই পেছন থেকে মোজাম্মেল বলল,

‘এতো সকালে কই থেকে ফেরা হচ্ছে?’

নীহার চমকে পেছনে তাকাল। ওরা কি নজর রাখতে শুরু করেছে? এমন হঠাৎ করে সকালবেলা কোথা থেকে উদয় হলো? উত্তরের অপেক্ষায় মোজাম্মেল নীহারের দিকে তাকালেও উত্তরটি দিল মোকাররম। ক্লান্ত, শুকনো কণ্ঠে বলল,

‘আদ্রিকাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আশেপাশে একটু খুঁজতে বেড়িয়েছিলাম।‘

মোজাম্মেল চক্ষু দুটো গোল গোল করে উত্তেজিত হয়ে শুধাল,

‘পাওয়া যাচ্ছে না মানে? কী বলছ এসব!’

মোকাররম দীর্ঘশ্বাস ফেলে। যেন বিরতিহীন পরিশ্রমে সে ক্লান্ত। আঁধারে ছেয়ে থাকা মুখটিতে আরেকটু আঁধার নামিয়ে বলল,

‘আমার কপালটাই খারাপ ভাইজান। একটা মেয়ে যদি ভালো হইতো। আসলে দোষ মেয়েদের না, দোষ ওর মায়ের। এই মহিলার গর্ভের সমস্যা। অমানুষ পেটে ধরছে। বাবা-মায়ের মানসম্মানের চিন্তা কেউ করল না।’

রাগে, ক্ষোভে কাঁপতে থাকা মোজাম্মেল নীহারের দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলল,

‘মেয়ে বাড়ি থেকে বাইর হয়ে গেল, তুমি কই ছিলা নীহার?’

একেরপর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় বিমূঢ় নীহার ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়ের বিয়ে দিয়ে মোকাররম নিজেই বলছে, মেয়ে পালিয়ে গেছে। কি চলছে এই লোকের মাথায়? এসব যে তার মুখের বুলি নয়, তা নীহার ভালোভাবেই জানে। তার স্বামী নেহাতই সরল, সোজা মানুষ। একটু লোভী কিন্তু মানুষকে ঠকিয়ে আত্মসিদ্ধি লাভের ক্ষমতা তার নেই। নীহার চমকে উঠে হতবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,

‘জি?’

‘কই ছিলা তুমি?’

‘ঘরেই। ঘুমাচ্ছিলাম।’

‘আদ্রিকা গেল কই? কার সাথে গেছে?’

‘আমি কিছু বুঝতে পারতেছি না।’

‘তোমার বড় মেয়ে পালাইল, তুমি কিছু জানো না। ছোট মেয়েও পালাইল, তুমি তাও বলতেছ কিছু জানো না। পাইছো কি তোমরা আমাদের? আজকে মাহিনের সাথে ওর বিয়ের হওয়ার কথা ছিল। একটু নজরে নজরে রাখবা না। এতো হেয়ালি কেন তোমার? আমার তো মনে হচ্ছে, তুমি ইচ্ছা করে মেয়েকে সরায় দিছো? মোকাররম তুমি কিছু জানো?’

মোকাররম চোখ দুটো বাঁকিয়ে নীহারের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘এমন কিছু করলে এই মহিলারে আমি আজকেই বাড়ি থেকে বের করে দিব। আমার মানসম্মান আর কিছু বাকি থাকল না। আমি কষ্ট করে ইনকাম করে আনি আর এরা মা-মেয়ে ঘরে বসে বসে খায়, ফূর্তি করে। আমার কার জন্য কষ্ট করি? এই স্বার্থপরগুলার জন্য? চিন্তায় মাথায় বাঁজ ভেঙে পরতেছে। বাইরে কীভাবে মুখ দেখাব আমি! পথে ঘাটে মানুষ কত কথা শুনাবে! আল্লাহ আমার এ কোন সর্বনাশ করল! এতো কেন পরীক্ষা নিতেছে!’

মোকাররমের আহাজারীর সামনে মোজাম্মেল মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে কোনোরকম সান্ত্বনা দিয়ে বলল,

‘আহা! চিৎকার চেঁচামেচি করে কোনো লাভ হবে না। তুমি শান্ত হয়ে ভাবো। আদ্রিকা কখন বের হয়ে গেছে কিছু জানো? বিয়ে রাতে হওয়ার কথা। হাতে এখনও সময় আছে। একটু খোঁজাখুঁজি করলেই ফিরিয়ে আনা যাবে।’

মোজাম্মেলের প্রস্তাবে মুহূর্তেই ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল মোকাররম। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

‘ওই মেয়ে আমার বাড়িতে পা রাখলে, আমি ওর পা কেটে ফেলব। আমার মানসম্মান নিয়ে খেলা করা! সে যেন আমার বাড়িতে ফিরে আসার কথা আর না ভাবে। আজ থেকে ভাববো আমার কোনো সন্তান নাই।’

নীহারের দিকে তাকিয়ে শাসিয়ে উঠল,

‘দুটার একটার সাথেও যদি তোরে যোগাযোগ করতে দেখছি, প্রথমে তোর ব্যবস্থা করব আমি।’

মোকাররমের বকাবকি ক্রমশ বেড়ে চলছে। মোজাম্মেল আর বেশিক্ষণ দাঁড়ালো না। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে এমন বাজে সংবাদ পেয়ে মেজাজ বিগড়ে গেছে। সংবাদটি দ্রুত বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে।
এদের যা অবস্থা! কখন যেন দুটোতে মারামারি শুরু হয়ে যায়। ভাইটাও হয়েছে বোকা। কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয় সেটা জানে না। হাতে সময় থাকতে আদ্রিকাকে ফিরিয়ে আনলে ভালো হয়। মাহিনকে বলে দ্রুত খবর যোগাড় করতে হবে। পালিয়ে যাবে কোথায়? আশেপাশের কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে থানা পুলিশ করে মোজাম্মেল ঠিক তুলে নিয়ে আসতে পারবে।

মোজাম্মেল মজুমদারের বাড়িতে সকালবেলা আদ্রিকার পালিয়ে যাওয়ার খবরে শোকের ছায়া নেমে এল। চাপের কাপে চুমুক দিয়ে মাহিন বলল,

‘বিয়ে ব্যাপারটা আমার কপালে সয় না কেন, আম্মা? পরপর দু’বার বিয়ে ঠিক হইল, দুইবারই বিয়ের দিন বউ পালিয়ে গেল। এরপর বন্ধুমহলে আমারে নিয়া হাসিহাসি কেন হবে না, তুমিই কও। ধুর শালা! আমি আর বিয়েই করবো না।’

‘তুই কেন নিজের কপালের দোষ দিতেছিস? নীহারের মেয়ে দুটারই চরিত্র ভালো না। ছাড় দিয়ে দিয়ে নীহার ওগুলারে মাথায় উঠাইছে। এখন সেই মেয়েরাই নীহারের মাথায় ঘোল ঢেলে ভাগছে। ঠিকমত বাচ্চা মানুষ করতে না পারলে এমনি হয়। এতোকিছুর পর নীহারকে আমি ছেড়ে কথা বলব না। দুটো কথা অবশ্যই শুনাবো।‘

মনোয়ারার কথায় মোজাম্মেল বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘ওই বাড়ির অবস্থা এখন ভালো না। মোকাররম বকাবাদ্য করতেছে। ঐখানে এখন যাইয়ো না। পরিস্থিতি ঠান্ডা হোক।‘

‘আজকে না হোক, কালকে আমি অবশ্যই বলব। নীহারের বড্ড অহংকার ছিল মেয়ে দুইটারে নিয়া। পড়াশোনা করাবে, চাকরি করাবে। এখন করাক চাকরি। দিছে না মানসম্মান ডুবায়। এজন্য বেশী বাড় বাড়তে নাই। মুখ থুবড়ে পরতে হয়।’

‘রাখো তোমার এতো কথা। মাহিন তুই খোঁজ খবর নে। আদ্রিকা এখন কই আছে খোঁজ লাগা।’

‘ওই মেয়ের খোঁজ দিয়া তুমি কি করবা? এমন দুশ্চরিত্রা মেয়ের সাথে আমি কিছুতেই আমার ছেলের বিয়ে দিব না।’

‘বেশি বুঝিও না বোকা মহিলা। ওমন দু চারটা প্রেম আজকাল সবাই করে। এসব কোনো ব্যাপার না। বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের দরকার আদ্রিকার নামের সম্পত্তি।’

‘তাই বলে এমন মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিবা!’

‘হ্যাঁ দিব। আদ্রিকা এ বাড়ির বউ হয়ে আসলে তোমারও লাভ। ওর ঘাড় চিপে ধরার একটা কারন তোমার হাতে পেয়ে গেলা। এই ঘটনার পর ওই মেয়ে আর কখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াইতে পারবে না। তোমার সামনে দুটো বড় কথা কইতে পারবে না। তোমার যেমন মন তেমনভাবে বউ শাসন করতে পারবা। মোকাররম-নীহারও মেয়ের সাপোর্টে কিছু বলতে পারবে না। আত্মীয়ের মধ্যে আত্মীয়তা করার এটাই সুবিধা। আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে ঝামেলা করতে আসতে পারে না।‘

মাহিনের মনে একটা জেদ চেপে গেল। এভাবে বারবার তার বউ পালিয়ে যেতে পারে না। এবার সে ভাগ্যের চাকা ঘুরাবে। আদ্রিকাকে জোর করে তুলে নিয়ে আসতে হলে সে তাই করবে। তবুও বিয়েটা সে আদ্রিকাকেই করবে।

চারদিকে লোকজন লাগিয়েও তেমন কোনো খোঁজ খবর পাওয়া গেল না। মোজাম্মেল নিজেও থানার ওসির সাথে কথা বলেছে। পুলিশ গোপনে খোঁজ চালাচ্ছে। রাতটি বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে কেটে গেল।
পরেরদিন বিকালে মাহিনের বন্ধু ফোন দিয়ে জানাল, আদ্রিকাকে মার্কেটে একজন মহিলার সাথে দেখা গিয়েছে। খবর শোনা মাত্র মাহিন বাইক নিয়ে ছুটে গেল।

বাইরের বারান্দায় চেয়ারে বসে আছে মোজাম্মেল। মুখভর্তি পানের পিক ফেলে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘খবর ঠিক তো?’

মুখখানা কুঁচকে মাহিন বলল,

‘নিজে খবর নিছি। কালকে ভোরে মসজিদে বিয়ে করছে দুজনে।’

‘ছেলের কোথাকার?’

‘ভার্সিটির। ওইখানে পরিচয় মনে হয়। তারপর প্রেম করে ভেগে গেল।’

‘নীহারের নাকের ডগায় বসে মেয়ে প্রেম করে গেছে, সে টের পায়নি। ব্যাপারটা সন্দেহজনক।’

মোজাম্মেলের স্ত্রী মনোয়ারা বলল,

‘আমি তোমারে আগেই বলছি, নীহার সব জানে। সে নিজেই মেয়েকে পার করায় দিছে।’

‘আহ! তুমি চুপ করো। নীহারের ওতো সাহস নাই।’

‘এখন কি করবেন?’

‘যেমনটা ভাবছিলাম, সেটা আর সম্ভব না। ছেলের বাবার অনেক নামডাক আছে। পর্তুলিকা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিকের ছেলের সাথে আদ্রিকার বিয়ে হইছে। ওদের সাথে ঝামেলায় জড়াইলে আমাদের লস। মোকাররমের ছোট মেয়েটারে দেখলে বোকা মনে হয়। কিন্তু ভালোই বড়লোকের ছেলে পটাইছে। মেয়ে চালাক আছে।’

‘বোকা হওয়ার ভান ধরে থাকে। একদম মায়ের মত। নীহার কি কম চালাক নাকি! এমন ভ্যাবলার মত তাকায় থাকে যেন কিছুই বুঝে না।’

সারাদিন মোকাররমের সাথে নীহারের তেমন কথা হয়নি। সকালবেলা নাস্তা খেয়ে হেলেদুলে মোকাররম আড়তে চলে গেছে। রাতে ফিরে এসে খেতে বসে নীহার বলল,

‘এসব কি হইতেছে আমাকে একটু বলবা?’

‘এতোকিছু জেনে তোমার কাজ নাই। মেয়ের বিয়ে হইছে, এখন নিজের সংসারে মনোযোগ দেও।’

‘নিজেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে এখন বলতেছো পালিয়ে গেছে?’

‘আরেক জায়গায় মেয়ের বিয়ে দিছি শুনলে ভাইজান ক্ষেপতো না? তখন তুমি সামলাইতা?’

‘মাহিনকে বাদ দিয়ে পরখের সাথে বিয়ে দিলা কেন?’

‘মাহিনের নামে রিপোর্ট পাইছি। চরিত্র ভালো না। ওর সাথে মেয়ে সুখে থাকতে পারত না।’

‘যার সাথে বিয়ে দিছ, সে খুব ভালো ছেলে?’

‘হাজার গুনে ভালো। ওরা নিজেই আসছিল প্রস্তাব নিয়া। খোঁজ খবর নিয়া দেখছি। ছেলে ভালো আছে। আমাদের থেকে ওদের অবস্থা বেশ ভালো। ওত বড় বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও এই মুহূর্তে আর কোনো উপায় ছিল না। শুনো নীহার, ওরা উঁচু শ্রেণীর মানুষ, ওদের সাথে যোগাযোগ কম করবা। বড়লোক জামাইয়ের থেকে সুবিধা নিচ্ছি, এমনটা ভাবার সুযোগ দেওয়া যাবে না।’

‘আপনার ভাইয়ের ব্যাপারটা? উনারা চুপ থাকবে?’

‘যেমন চলতেছে চলতে দেও। ওদের পাত্তা দিও না। কিছু বলতে আসলে চুপচাপ শুনে যাবা।’

নার্সারির কাজ শেষ করে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছে মোকাররম। সেই সুযোগে মোবাইল হাতে নিল নীহার। রওশন আলীকে কল দিয়ে পরখের বাবার ফোন নাম্বার নিয়েছে। কুশলাদি বিনিময় করে আদ্রিকার কথা জানতে চাইলে তিনি জানালেন, পরখ পড়াশোনার সুবিধার জন্য আলাদা থাকে। আদ্রিকাকেও তার সাথে নিয়ে গেছে। উনি নিজে থেকে পরখের ফোন নাম্বার দিলেন।

পরখকে কল দিয়ে মেয়ের সাথে কথা বলছিলেন নীহার। মেয়ের কান্না শুনে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। ওর ছোট মেয়েটা কখনও একা কোথায় গিয়ে এক রাত কাটায়নি। সবসময় আদ্রতা না হয়, নীহার ওর সাথে ছিল। শ্বশুরবাড়ি গিয়ে এভাবে কান্নাকাটি করবে সেটা নীহার আগে থেকেই জানত। কিন্তু বিয়েটা এমনভাবে দিতে হল যে নীহার চাইলেও মেয়েকে সাহায্য করতে পারছে না। কাছে গিয়ে একটু বুঝিয়ে আসবেন তাও সম্ভব না।
মেয়ে কিছু বলে সান্ত্বনা দিতে যাবেন, তখনি বাইরে থেকে মোকাররমের কথা ভেসে এল।

‘এই মহিলার সাথে সংসার করে একটা দিনও আমি শান্তি পাই নাই ভাবি। আমার মেয়েগুলার মাথাটা ওর মা খারাপ করে ফেলছে।’

দ্রুত ফোন কেটে দিয়ে নীহার দৌড়ে বাইরে এসে দেখল মোজাম্মেল এর স্ত্রী মনোয়ারা এসেছেন। মোকাররম কখন ঘুম থেকে উঠে বাইরে এসেছে নীহার খেয়াল করেনি। মোকাররমের কথার বিপরীতে তিনি বললেন,

‘ঘরে বসে মেয়েরা প্রেম করছে অথচ মা হয়ে নীহার কিছু জানি না, এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলিও না মোকাররম। তোমার বউ সব জানে। অথচ সে বসে বসে তামাশা দেখছে। ঠিক বিয়ের দিন মেয়ে কীভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়? অবশ্যই কেউ সাহায্য করছে। সেটা তোমার বউ ছাড়া আর কে হবে?’

নীহার দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোকাররমের আরও কিছু বকা শোনার প্রস্তুতি নিল। এরা কবে থামবে কে জানে!

________

ছেলে মানুষ এমন ঘরকুনো স্বভাবের হয়, তা আদ্রিকার জানা ছিল না। পরখকে না দেখলে সে হয়ত বিশ্বাসও করত না। বাজারসদাই করে পর্তুলিকা সব গুছিয়ে দিয়ে গেছে। মা চলে যাওয়ার পর পরখ সেই যে নিজ কক্ষে প্রবেশ করেছে, আর বের হয়নি।

আদ্রিকা নিজের কক্ষে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে নতুন ফোন দেখল। তারপর বিরক্ত হয়ে ছাদে হাঁটাহাঁটি করে মাগরিবের আজানের শব্দে ভেতরে চলে গেল।

রাতের খাবারের আয়োজনের চিন্তায় আদ্রিকার মাথা ঘুরছে ভনভন। পর্তুলিকা সব গুছিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রাতে কি রান্না করতে হবে সেটা বলে গেলে ভালো হত।
তবুও আদ্রিকা হতাশ হলো না। প্রথমবার রান্না করতে যাচ্ছে ভেবেই ভেতরে ভেতরে একটা উত্তেজনা কাজ করছে। ওড়না কাঁধের একপাশ করে কোমরে বেঁধে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। পট থেকে চাল বের করতে গিয়ে মনে হল, দুজনের জন্য কতোটা চাল রান্না করতে হয় সেটা সে জানে না।
একবার ভাবল পর্তুলিকাকে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করবে। কিন্তু এই সামান্য ব্যাপারে প্রশ্ন করলে উনি হয়তো ওকে নিয়ে হাসবে। চোখের সামনে থাকলে চট করে জিজ্ঞাসা করে যায়। কিন্তু ফোনে কথা বলতে ভীষণ অস্বস্তি হয়।

চালের পট নিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ধীর পায়ে চলে গেল পরখের কক্ষের সামনে। পড়ার টেবিলে ওকে কিছু কাগজ পত্র ঘাটতে দেখে আদ্রিকা আরেকবার ভেবে নিল। নাহ, দরকারটা যেহেতু তার; তাকেই একটু বেহায়া হতে হবে।

সে হালকা একটু কেশে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলে পরখ ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়। হাতের আঙ্গুল কচলে আদ্রিকা বলল,

‘ভাত রান্না করব। কতোটুকু চাল দিতে হবে?’

পরখ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে গিয়ে এক পট চাল বের করে চুলার পাশে রেখে আবার নিজের কক্ষে ফিরে গেল।

একটি রাইসকুকার রাখা আছে। সেটাতে কীভাবে ভাত রাঁধতে হয় তা ইউটিউবে অনুসন্ধান করে সহজেই পেয়ে গেল।
এই প্রথম নিজের রান্না করা ভাত দেখে আদ্রিকার খুশির সীমানা রইল না। সাদা ঝরঝরে ভাতগুলো একটি বাটিতে ঢেলে এপাশ ওপাশ সাজিয়ে গুছিয়ে দুটো ছবি তুলল।

আদ্রিকা ভেবেছে, আজকে যেহেতু প্রথম রান্না তাই সহজ কিছু রাঁধবে। ডিম ভাজি, মসুর ডাল।
পেঁয়াজ, মরিচ কেটে হলুদ, লবণ দিয়ে মেখে দুটো ডিম ভেঙে সেগুলো মিশিয়ে নিল। চুলা জ্বালাতে গিয়ে খেয়াল হল সে চুলা জ্বালাতে জানে না। আবারও ইউটিউবের দ্বারস্থ হতে হল। একজন ভদ্র মহিলা চুলার কালো চাবিটা ঘুরাতেই চুলা জ্বলে উঠল। কিন্তু আদ্রিকা চাবি ঘুরাতে গেলে চুলা জ্বলছে না। আচ্ছা মুশকিলে পরা গেল তো। বার কয়েক চেষ্টা করেও সফল না হওয়ায় আদ্রিকার শেষ সম্বল পরখের নিকট আবারও যেতে হল। এবার পরখ না তাকিয়ে জানতে চাইল,

‘আবার কি?’

‘চুলা কীভাবে অন করে?’

পরখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে আদ্রিকার সামনে এসে বলল,

‘কীভাবে খেতে হয় সেটা জানো নিশ্চয়ই?’

আদ্রিকার কোনো উত্তর না দিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল। চুলাটাও এমন ধুরন্ধর! পরখ হাত দিয়ে চাবি ঘুরানো মাত্র ধক করে জ্বলে উঠল। হঠাৎ জ্বলন্ত শিখার দিকে তাকিয়ে আদ্রিকা ভয়ে দু পা পিছিয়ে গেল। যা দেখে পরখ তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,

‘এভাবে করবে রান্না!’

সে গটগট নিজের কক্ষে চলে যাওয়ার পর আদ্রিকা চুলায় কড়াই বসাল। কড়াইয়ে তেল ঢেলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ডিমের মিশ্রণ ঢেলে দেওয়ার পর বুঝা গেল, তেল যথেষ্ট গরম হয়নি। বাধ্য হয়ে আদ্রিকাকে চুলার আঁচ বাড়াতে হল। মুশকিল হল ডিম উল্টাতে গিয়ে। মা যেমন করে খুন্তি দিয়ে একঝটকায় ডিম উল্টে দিত, আদ্রিকা সেরকম পারছে না। অনেক চেষ্টা করেও লাভ হলো না। উল্টো ডিম ভেঙে বিশ্রী কান্ড ঘটে গেল। ওদিকে নিচের অংশ পুড়েও যাচ্ছে। রাগ করে খুন্তি দিয়ে পুরো ডিম আদ্রিকা নিজেই এলোমেলো করে ঝুরি ঝুরি করে ফেলল।
কিন্তু পুরোপুরি ভাজার পর জিনিসটি খেতে মন্দ লাগল না। নতুন জিনিস আবিষ্কার করে ফেলায় আদ্রিকা খুবই খুশি।

এবার সে ডাল ধুয়ে দুজনের জন্য পরিমিত পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিল। একটুখানি লবণ, হলুদ, তেল দিল যাতে বেশি না হয়ে যায়। একটা পেঁয়াজ, দুটো কাঁচা মরিচও কেটে দিয়েছে। কিছুক্ষণ বাদে পানিতে উতাল এলো, ধীরে ধীরে পানি শুকিয়েও গেল কিন্তু ডাল আর সেদ্ধ হয় না।

এদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আদ্রিকা পায়ে ব্যথা ধরে গেছে। নীহারের রান্নায় কখনও এতো সময় লাগেনি। আদ্রিকা চিন্তায় পরে গেল। এবার কি করা যায়! পরখের কাছে সাহায্য চাইতে গেলে সে ওকে কাঁচায় কচ কচ করে চিবিয়ে ফেলবে। পর্তুলিকাকে কল দেওয়া যায় কিন্তু অস্বস্তি হচ্ছে। হাজার হোক তিনি শাশুড়ি। আদ্রিকার ভয় হওয়াটা অহেতুক নয়।
অনেক ভেবে চিনতে সে নীহারকে কল দিল। কল কেটে যাওয়ার আগমুহূর্ত কলটি রিসিভ হলো। প্রথমে নীহারই প্রশ্ন করল,

‘কে বলছেন?’

‘মা আমি।’

‘এটা কার নাম্বার?’

‘আমার। শাশুড়িমা নতুন ফোন কিনে দিয়েছেন। এই নাম্বারটা সেভ করে রাখিও।’

‘যাক ভালোই হয়েছে৷ বারবার জামাইকে কল দিয়ে বিরক্ত করতে ভালো লাগত না। হ্যাঁ রে, তখন তোর কি হয়েছিল? ওমন কাঁদছিলি কেনো?’

‘কখন?’

‘দুপুরে কল দিলি তখন?’

আদ্রিকার মাথায় ডালের চিন্তা৷ এতোক্ষণ জ্বাল দেওয়ার পরেও সেদ্ধ হচ্ছে না কেন? কি এমন ভুল করল সে? আপাতত অন্য কিছু তার মাথায় আসছে না। মায়ের অযাচিত কথায় সে ভারি বিরক্ত হল। কখন, কোনবেলায় কেঁদেছিল সেসব এখন মনে আছে নাকি! রান্নার চিন্তায় আরেকবেলা কাঁদার যোগাড়। উনি আছেন তখন নিয়ে! সে বিরক্ত হয়ে বলল,

‘তখন কেনো কেঁদেছি এখন মনে নেই। তুমি এখন কেনো কল দিয়েছি সে কথা শুনো।‘

‘কি হয়েছে?’

‘ডাল সেদ্ধ দিয়েছি প্রায় আধা ঘন্টা হয়েছে। সেদ্ধ হচ্ছে না কেনো?’

‘ডালে সমস্যা আছে মনে হয়। না হলে সেদ্ধ হবে না কেনো?’

‘উহু। ভালো ডাল। আমার শাশুড়ি নিজে কিনে দিয়েছে।‘

‘ডালে কি কি দিছিস?’

‘যা যা লাগে সব দিছি। লবণ, মরিচ, তেল সব।‘

‘গাধা মেয়ে। ডালে আগেই হলুদ, লবণ দিলে সেদ্ধ হতে সময় লাগে।‘

‘এখন কি করব? ডাল নামিয়ে ধুয়ে আবার বসিয়ে দেই?’

‘তোর মাথায় কি পুরো গোবর ভরা? যেমন আছে তেমনি থাক। আরও পানি দিয়ে জ্বাল করতে থাক। সময় বেশী লাগবে কিন্তু সেদ্ধ হবে।‘

‘তাই বলে এতো সময় লাগবে! এগুলো নাকি সহজ রান্না!’

‘সেদ্ধ হওয়ার পর ঘুঁটনি দিয়ে নেড়ে দিস। তারপর পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ডালে বাগার দিস।‘

‘আবার বাগার কেন? সব দিছি এখানে?’

‘বাগার দিলে ঘ্রাণ আসবে।‘

রান্না শেশ করতে করতে আদ্রিকার সব উত্তেজনা চুলার আগুনের পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ডাল,ভাত , ডিম ভাজি টেবিলে নিয়ে এসে বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে সামান্য পানি দিয়ে নিল। পরখকে খেতে ডাকতে গেলে ওর গোমড়া, ক্লান্ত মুখ দেখে পরখ বিনাবাক্যে খাবার টেবিলে এসে হাজির হল।
হাত ধুতে গিয়ে দেখা গেল জগে পানি নেই। খালি জগ হাতে নিয়ে হতাশ পরখ তাকাল আদ্রিকার দিকে। টেবিলে পাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁট কামড়েছিল সে। পরখকে জগ নিয়ে উঠতে দেখে দ্রুত সেটি হাতে নিয়ে বলল,

‘উঠতে হবে না। আমি এনে দিচ্ছি।‘

পানি নিয়ে এসে টেবিলে রাখতে গিয়ে টেবিলের কোনার সাথে ধাক্কা খেয়ে অর্ধেক পানি মেঝেতে ফেলল, অর্ধেক টেবিলে। পরখকে বাঁকা চোখে মেঝের দিকে তাকাতে দেখে হড়বড়িয়ে বলল,

‘আমি এখনি মুছে দিচ্ছি।‘

জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে পরখ তার শান্ত কণ্ঠে বলল,

‘এখনি প্রয়োজন নেই। পরেও করা যাবে।‘

মাথা দুলিয়ে সায় জানিয়ে আদ্রিকা কাঁপা কাঁপা হাতে প্লেটে ভাত তুলতে গিয়ে অর্ধেক ভাত টেবিলে ফেলল। দু চামচ ভাত পাঁচবারে পরখের প্লেটে তুলে দিল। পরখ কিছু না বলে ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করছে।
ডিমের ঝুরি তুলে প্লেটে দিতে দেখে পরখ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল,

‘এটা কি?’

‘ডিম ভাজি।‘

‘এটা ডিম ভাজি?’

‘উল্টাতে গিয়ে ভেঙে গেছে।‘

পাশে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে জবাব দিল আদ্রিকা। ডাল তুলতে গিয়ে আবার না গায়ে ফেলে দেয় সেই ভয়ে পরখ নিজেই ডালের চামচ আদ্রিকার হাত থেকে নিয়ে বলল,

‘আমি নিজেই তুলে নিচ্ছি।‘

ডাল দিয়ে ভাত মেখে মুখে তুলছে পরখ কিন্তু আগ্রহ ভরে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আদ্রিকা। মুখের খাবার সামান্য চিবিয়ে তা গলাধঃকরণ করে পরখের মুখ বিকৃত হয়ে গেল। ভীত আদ্রিকা বলল,

‘কি হয়েছে?’

‘ডালে লবণ দেওনি?’

‘দিয়েছি। কম হয়েছে?’

পরখ কিছু না বলে শান্ত চোখে ওর দিকে তাকালে আদ্রিকা এক চামচ ডাল তুলে মুখে দিল। লবণ সামান্য হয়েছে বুঝতে পেরে বলল,

‘লবণ এনে দিচ্ছি। ভাতের সাথে মেখে খেয়ে নিন।‘

একছুটে লবণের বাটি নিয়ে ফিরে এসে টেবিলে রাখতে গিয়ে টেবিলের পায়ে ধাক্কা লেগে ওর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের নখে ব্যথা পেল। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠার সময়ও পেল না ঠিকঠাক। বাটির লবণ টেবিলে ছড়িয়ে পরতে দেখে ভীত দৃষ্টি মেলে তাকাল পরখের দিকে। সে কপালে হাত রেখে ছড়িয়ে থাকা লবণের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিকা ধীরে সুস্থে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মিনমিনিয়ে বলল,

‘স্যরি।‘

পরখ দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাত তুলে কিছু বলার আগে আদ্রিকা সামান্য পেছনে ঝুঁকে চোখ বন্ধ করে মিনতি করে বলল,

‘মারবেন না প্লিজ। হাত ফসকে পরে গেছে।‘

ওর এমন প্রতিক্রিয়ায় পরখ সরু চোখে তাকাল। সে কেন ওকে মারতে যাবে? কোনো আঘাত না পেয়ে আদ্রিকা ধীরে ধীরে চোখ খুলে পরখকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পায়ের রক্তার্ত নখের দিকে তাকিয়ে কান্না আটকে ঠোঁট উল্টে সে বলল,

‘রান্নায় ভুল হলে বাবা মাকে অনেক মারত।‘

বাটি থেকে লবণ তুলে নিয়ে ভাত মেখে পরখ বলল,

‘দয়া করে আর কিছু না করে চেয়ারে বসে খাবার খাও। আজকের জন্য করেছ। ক্লামসি কোথাকার!’

চেয়ারে বসে প্লেটে খাবার তুলতে নিয়ে খেতে গিয়ে আদ্রিকা খেয়াল করল, ভাত, ডিম ভাজি সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। ভাতের ছবি তুলতে গিয়ে সেই যে বাটিতে তুলেছিল তাতেই ভাতের অবস্থা খারাপ। সে ঠিক করল, এভাবে আর ছবি তুলবে না। ডিম ভাজিটা সবার শেষে করা উচিত ছিল তাহলে ঠান্ডা হয়ে ডিমের গন্ধটা নাকে লাগত না। ডালে যে লবণ দিয়েছিল সেটা একটুও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পানির থেকেও বিচ্ছি স্বাদ হয়েছে। ভাতের সাথে লবণ মেখেও যার স্বাদ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। পরখ কীভাবে খাচ্ছে কে জানে? ওর বাবাকে এই খাবার দেওয়া হলে এতোক্ষণে প্লেট ছুঁড়ে মারত মেঝেতে। তারপর বাড়িতে কিছুক্ষণ তান্ডব চলত।

খাওয়া শেষে নিজের অকাজের নমুনা পরিষ্কার করার পর আদ্রিকার শরীর আর চলছে না। সে কোনোরকম ক্লান্ত দেহটা টেনে কক্ষে নিয়ে গেল। তখনি নজরে এলো আদ্রিকার কক্ষের মেঝের ঠিক মাঝখানে রাখা একটি তোষক, বালিশ এবং বিছানার চাদর। নিশ্চয়ই পরখ দিয়ে গেছে। আদ্রিকা ভেবেছিল আজকে রাতে ওকে মনে হয় মেঝেতে ঘুমাতে হবে। পরখের সামান্য যত্ন ওর সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দিল। ঝটপট মেঝেতে বিছানা পেতে গা এলিয়ে দিতেই দু চোখে নেমে এলো প্রশান্তির ঘুম৷

চলবে…
#অক্ষরময়ী