প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-৪৫+৪৬+৪৭

0
42

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 45
writer : Mohona
(do not copy please)

.

জন ভেতরে ঢুকলো।
নিহাল : কি হলো? এতোরাতে তুমি এখানে কেনো?
মেরিন : প্রমান নিয়ে এসেছে।
নিহাল : প্রমান? কিসের প্রমান?
মেরিন : নীলা খান খুনী নয় সেই প্রমান। যে মানুষটা কোমায় ছিলো সেটা যে প্রনয় চৌধুরী নয় সেই প্রমান। ইনফ্যাক্ট সে যে কোমায় ছিলোনা সেই প্রমান।
নীলিমা : এই মেয়ে একদম বাজে কথা বলবেনা। বুঝেছো? বুঝেছো তুমি?
মেরিন : একদম চিল্লাবেনা। আমি কারো উচু গলা শুনতে অভ্যস্ত নই। আমার সামনে কেউ গলা তুললে সেটা নামিয়ে দেয়া হয়। সো চুপ।
বর্ষা : মেরিন… তুমি আন্টির সাথে এভাবে কথা বলতে পারোনা। আন্টি সম্পর্কে তোমার শ্বাশুরি হন।
মেরিন : সম্পর্কের কথা আমি কোনো বাহিরের মানুষের কাছে শুনবোনা। চুপ করে থাকো। বাবা… আই মিন… মিস্টার নিহাল চৌধুরী… আমি বলতে চা…
নিহাল : তোমার যা বলার আছে বলো। কিন্তু বাবা ডেকে বলতে হবে।
মেরিন : আমার অধিকার নেই।
নিহাল : কে বলেছে নেই?
মেরিন : যাইহোক…. আপুর প্রেগনেন্সির সময় প্রনয় আহমেদ চৌধুরী জরুরী মিটিং এর জন্য কক্সবাজার যায়। কিন্তু যে ফিরে আসে সে হলো তাহমিদ হোসেন। আজমল কিবরিয়ার প্ল্যান এসব।
নীলিমা : তোমার কথা শেষ হওয়ার আগে বলে দিচ্ছি শোনো। যার ঘাড়ে দোষ দিলে সে ৯বছর যাবৎ কোমায় আছে।
মেরিন : তুমি নিজের বিশ্বাসে বাঁচো। কিন্তু আমি বাঁচি প্রমানে। ওখানে অদল বদল হয়। সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে ২টা প্রনয় চৌধুরীকে দেখা যাচ্ছে। হোটেলে প্রবেশ করার সময় যে ঢুকেছিলো তার আঙ্গুলে আংকটির ছাপ দেখা যাচ্ছে। কারন কোনো আঙ্গুলে অনেকদিন ধরে আংকটি পরলে সেটার দাগ পরে যায়। প্রনয় চৌধুরী কক্সবাজার যাওয়ার আগের দিন আংকটিটা ওয়াশ করাতে দেয়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ফুটেজে দেখে যাচ্ছে যে আঙ্গুলে আংকটির ছাপ ছিলো। অর্থাৎ হোটেলে যে চেক ইন করেছিলো সেই প্রনয় চৌধুরী। কিন্তু বের হওয়ার সময় যাকে দেখা যাচ্ছে তার আঙ্গুলে আংকটির ছাপ নেই। যে বাসায় প্রবেশ করেছে তার হাতেও নেই। অর্থাৎ এটা প্রনয় চৌধুরী নয়।আপুর নামে যতো মিথ্যা অ্যালিগেশন লাগানো হয়েছে সব লাগিয়েছে এই ডুপ্লিকেট। ধীরেধীরে আপুর সন্দেহ হয় যে কেনো আপুর সাথে মানুষটা এমন ব্যবহার করছে। এরপর ড্রাগ দিয়ে কোমায় থাকার নাটক করে। এই ড্রাগটার প্রভাবে স্নায়ুকোষ ১২ঘন্টা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। যে লোকটা প্রনয় চৌধুরী সেজে এসেছিলো তার নাম হলো তাহমিদ হোসেন। আপুর সন্দেহ যখন গাঢ় হয় এবং প্রায় বুঝে যায় যে ওটা প্রনয় চৌধুরী নয় তখন মাস্টারমাইন্ড কিবরিয় এমন ঘটনা ঘটিয়ে তাহমিদকে মেরে ফেলে যে মনেহয় আপু ওই তাহমিদকে হত্যা করেছে। যাকে সবাই প্রনয় চৌধুরী মনে করছিলো।
নিহাল : তাহমিদ কে? আর তাহমিদই যে ডুপ্লিকেট ছিলো সেটার প্রমান কি?
মেরিন : কানাডার একটি হসপিটালেই প্লাস্টিক সার্জারি হয়। সেখান থেকে ওই ভয়ংকর ড্রাগটা আনা হয়।
নিহাল : প্রনয় নীলাকে মিথ্যা বলে বিয়ে করেছিলো। ভালোবাসা নয়।
মেরিন : তাদের সম্পর্কের মধ্যকার কথা তারাই বলতে পারবে। আমার আপুতো আর বেঁচে নেই। আর…
বর্ষা আছে বলে মেরিন লিওর কথা আর বলল না।
নীলিমা : তোমার কি মনেহয় তোমার কথা আমরা বিশ্বাস করে নিবো? হামম?
মেরিন : প্রমান ছারা মেরিন কথা বলেনা। জন…
জন সকল প্রমান সবার সামনে তুলে ধরলো। নীলিমা ধপাস করে বসে পরলো। মেরিন নীড়ের দিকে তাকালো।
নীড় : আমি প্রতিটা প্রমান চেক করবো।
মেরিন : শকসে করো। জন সব প্রমান তুলে দাও নীড়ের হাতে।
জন সবটা নীড়ের কাছে দিলো।
মেরিন : সবটার প্রমান সত্যিই নাকি সাজানো সেটার পর কি করবে আশা করি মনে আছে?
নীড় : সেটা অনেক দূরের কথা মেরিন। আগে সত্যি প্রমান তো হোক।
মেরিন : প্রমান হবে। তবে এগুল বিলুপ্ত করার চেষ্টা করোনা। অনেক অনেক কপি করা আছে।
নীড় : যদিই এগুলো মিথ্যা প্রমান হয়?
মেরিন : বেইমানি করোনা।
নীড় : এটা আমার উত্তর হলোনা। যদিই মিথ্যা প্রমান হয়?
মেরিন : হবেনা।
নীড় : যদিই হয়।
মেরিন : মেরিন স্থির হয়ে যাবে।
বলেই মেরিন ঘরে চলে গেলো।
নীড় : এই কথা উপস্থিত কারো থেকে বাহিরে গেলো গলা কাটবো আমি নিজে।
বলেই নীড়ও ঘরে গেলো। ওগুলো যত্ন করে রাখলো।

.

মেরিন জানালার সামনে দারিয়ে আকাশ দেখছে। বর্ষা শুরু হতে চলল। আজকের দিনটা ওর জন্য সবচেয়ে আনন্দের হওয়ার কথা ছিলো। নীড় এসে ওকে কোলে তুলে নিলো। আকষ্মিকতায় মেরিন নীড়ের কলার আকড়ে ধরলো।
মেরিন : ততুমি…
নীড় কোনো কথা না বলে মেরিনকে নিজেদের ঘরে নিয়ে এলো।
মেরিন : এখানি নিয়ে এলে কেনো?
নীড় কোনো কথা না বলে তাকিয়ে আছে মেরিনের দিকে।
মেরিন : কথা বলছোনা কেনো?
নীড় এবারও চুপ।
মেরিন : না দিলে উত্তর। পথ ছারো।
নীড় দরজা লাগিয়ে দিলো।
নীড় : আমাকে ঘৃণার কারন নারী পাচার। তাইনা মেরিন?হামম?
মেরিন : নীড়… যেতে দাও আমাকে।
নীড় : আমি যেতে দেই না দেই তুমি চলে তো যাবেই। তবে যাওয়ার আগে আমার সত্যি জানানোর অধিকার আমার আছে। ইন্ডিয়াতে এক ফ্রেন্ডের বড় ভাই একটা প্রাইভেট ডিটেক্টিভ এজেন্সির কর্নধার ছিলো। বিভিন্ন ভার্সিটিতে বিভিন্ন সিক্রেট এজেন্ট প্রস্তুত করতো ওরা। এসব এজেন্টদেরকে বিভিন্ন সিক্রেট মিশনে পাঠানো হতো। দেশে হোক অথবা দেশের বাহিরে হোক। প্রায় রাতের বেলা তারা বিভিন্ন মিশনে যেতো। কখনো কোনো নেতাদের বাসায় গিয়ে গোপন সূত্র নিতে যেতো । না এতে তাদের সম্মাহানী হয়নি। তারা নিজের ইচ্ছায় গিয়েছে। যে কারনে তারা খুব সহজেই তাদেরকে অজ্ঞান করতে পেরেছে। যে কাজে যেতো সেটা সম্পুর্ন করতো। এই পুরো বিষয়টা গোপনীয় ছিলো। যেটা কোনো ক্রমেই সামনে আসতে দেয়া যেতোনা। আড়াল করে রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় ছিলো এটাকে ‘নারী পাচার’ এর তকমা দেয়া। খারাপ কাজের সার্টিফিকেটের জন্য পুলিশ স্টেশনে টাকা দেয়া হতো। ওই এজেন্সির একজন প্রতিনিধি আমিও ছিলাম। স্টাডি কমপ্লিট করে দেশে ফিরে এসে আমি আমাদের দেশেও এমন একটি সংস্থা তৈরি করি। প্রাইভেট এজেন্সি। যেটাতে নারী পাচার নামে এই কাজ হয়।
মেরিন : এসব আমাকে বলার কারন? আমি কোনো কৈফিয়ত চাইনি।
নীড় : জানি তুমি চাওনি। আমার কথা তুমি বিশ্বাসও করোনি। আজকে আমি তোমাকে বিশ্বাস করানোর জন্য কোনো প্রমানও আনিনি। কারন যে দেখতে চায়না তাকে দেখানো যায়না। আর আমি খারাপ , প্রচুর খারাপ। এতে আমার কোনো আফসোস নেই। তোমার বোনের সাথে যা করেছি সেটাতেও আমার কোনো আফসোস নেই। তোমার বোন দিনের পর দিন আমার ভাইয়াকে ঠকিয়েছে। কে জানে কতো জনের সাথে রাত কাটিয়েছে।
মেরিন : নীড়…
মেরিন নীড়কে থাপ্পর মারার জন্য হাত তুলল। নীড় ওর হাতটা ধরে ফেলল। অন্যহাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো।
নীড় : আজকে না। আজকে আমি বলবো। তোমার বোন ভাইয়া কয়েকবার পেয়েছে অন্যান্য পুুরুষদের সাথে। বলবে যে তথাকথিত ডুপ্লিকেট প্রনয় এই অভিযোগ করেছিলো তাহলে আমি বলবো যে ওই ডুপ্লিকেট আসার অনেক আগে থেকেই এসব চলছিলো। ইনফ্যাক্ট প্রান্তিকের আসার খবর পাওয়ার পরেও ডিএনএ টেস্ট করিয়েছিলো ভাইয়া এটা দেখার জন্য যে , যে সন্তান আসছে সে আদৌ তারই সন্তান কিনা। আরো কিছু শুনতে চাও তুমি? হামম? তোমরা আমাদের রক্তকে আমাদের থেকে আড়াল করে রেখেছিলে তিন বছর। সেটাও একটা অন্যায়। আমাদের জানানো হয়েছিলো যে মৃত বাচ্চা হয়েছে। তোমার বোন সবার সামনে মারা যাওয়ার পর তোমার বাবা প্রানকে তোমার কাছে রেখে আসে। তিনবছর পর নিয়ে আসে। জানতে পেরে আমরা কেইস করি। তোমার বাবা গৃহবধূ অত্যাচারের মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলো। অলমোস্ট প্রমান করে দিয়েছিলো। যেদিকে তোমার বোনের এতো দোষ থাকা সত্ত্বেও ভাইয়া ভিন্ন কেউ তাকে একটা কথাও বলিনি। বেঁচে তো আছে তোমার বোন… মানসিক অবস্থা ঠিক হলে জেনে নিও। তোমার চরিত্রহীন বোনের চরিত্রে হাজার দাগ থাকা সত্ত্বেও আমি সেগুলো তুলিনি , সামনে আনিনি , প্রমান করিনি।কিন্তু প্রানকে হাতছারা হতে দিতাম কিভাবে? প্রান আমাদের প্রান। উত্তরাধিকার এই বংশের। আমাদের রক্ত ওর শরীরে। তাই আমি মিথ্যা রিপোর্ট বানিয়ে প্রমান করি যে প্রান আমার এবং নীলা খানের সন্তান। এতে একজন মৃতাকে অপমান করা হয়েছিলো আমি জানি। তবে সেই সাথে আমার ভাইয়ারও অপমান হয়েছিলো। মৃত নীলা খানের সাথে অন্যায় করা নিয়ে আমার নূন্যতম কোনো আফসোস নেই। আর এখন তো সে মৃতও নয়। আমি যেমন মিথ্যা রিপোর্ট বানিয়েছিলাম তেমন তুমিও নকল সব প্রমান এনেছো। উদ্দেশ্যটা কি আমার থেকে মুক্তি পাওয়া নাকি প্রানের কাস্টডি নেয়া। নাকি দুটোই? হামম? মেরিন… আমি আমাদের পারিবারিক শত্রুতার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছি। নিজের ঘৃণার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছি। প্রতিশোধের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছি। তুমি যদি আমার জীবন চাও তবে হাসতে হাসতে তোমার হাতে মরতে পারি। প্রান তোমার কাছে সুরক্ষিত থাকবে বলে আমি মরতেও দুবার ভাববোনা। কিন্তু এভাবে মিথ্যাচার করে অসুস্থ পরিবেশে আমি প্রানকে রাখতে পারবোনা। আমি তোমাকে এবং প্রানকে একসাথে রাখতে চাই। দুজনকে নিয়ে বাঁচতে চাই। প্লিজ এটা ভিন্ন অন্যকিছু করতে বাধ্য করোনা আমাকে। প্লিজ… অনুরোধ করছি আমি। আমার ভালোবাসায় বিশ্বাস করো।
নীড় মেরিনের হাত এবং মুখ ছেরে দিলো।
মেরিন : আমি তোমার মতো নই যে মিথ্যা রিপোর্ট বানাবো প্রানকে নিয়ে।
নীড় : রেইপ নিয়ে বানিয়েছিলে।
মেরিন : হ্যা বানিয়েছিলাম সেটা নিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট। কারন সেটাতে কেবল আমি জরিয়ে ছিলাম। কিন্তু এটা প্রানের ব্যাপার। আমি কোনো মিথ্যা রিপোর্ট বানাইনি। আর কি বললে তুমি? তোমার ভালোবাসায় বিশ্বাস করবো? তুমি আমার সত্যে বিশ্বাস করোনা আর আমি তোমার ভালোবাসায় বিশ্বাস করবো ? না… করিনা তোমার ভালোবাসায় বিশ্বাস। সত্য যাচাই করে মিথ্যা পেলে তখন বলতে এসো যে রিপোর্ট মিথ্যা।
নীড় : তুমি আমাকে ছেরে থাকতে পারবে মেরিন?
মেরিন : শান্তিতে থাকতে পারবো।
নীড় : দ্বিতীয় পুরুষ আসবে কি তোমার জীবনে?
মেরিন : না। আসার হলে প্রথম পুরুষ আসবে।
নীড় : আমি কে তবে?
মেরিন : নাথিং।
নীড় : আমার উচিত হয়নি তোমার থেকে দূরত্ব অবলম্বন করা। উচিত ছিলো প্রানের মতো অন্য একটা ভালোবাসার শেকলের খোঁজ করা। যে তোমাকে আমাকে একসাথে প্রানের সাথে বেধে রাখবে।
মেরিন : তুমি আমি এক বাধনে আবদ্ধ হতে পারিনা। ঘৃণা করি তোমাকে। ঘৃণা করি তোমার উপস্থিতিকে। ঘৃণা করি তোমার প্রতিটি স্পর্শকে।
নীড় : তাহলে আমার স্পর্শের ঘৃণা নিয়েই বাঁচতে হবে তোমাকে। ভেবেছিলাম আর কখনো তোমার ওপর রাগের প্রয়োগ করবোনা। কিন্তু তুমি সেটা হতে দিলেনা। পারলে বাঁচাও নিজেকে আমার প্রতিটি স্পর্শের থেকে।
মেরিনকে কাধে তুলে নিলো।
😒😒😒

.

২দিনপর…
লিও : অসম্ভব… এটা একটা ধোকা।
টাইগার : কিন্তু বস প্রান্তিকের সাথে তো ডিএনএ ম্যাচ করেছে।
লিও : তাতে কি হয়েছে?
টাইগার : এখন কি করনীয় স্যার?
প্যান্থার : বস…
লিও : কি হলো?
প্যান্থার টাইগারের দিকে তাকালো। টাইগার বাহিরে চলে গেলো।
লিও : কি হয়েছে?
প্যান্থার : আরো একটি নীলার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
লিও : কি?
প্যান্থার : ইয়েস বস।
লিও হাহা করে হাসতে লাগলো।
লিও : কোথায় আছে ওই নীলা?
প্যান্থার : এখনো সেটার তথ্য পাইনি স্যার।
লিও : খুজে বের করো। এরপর একসাথে দুই নীলার গলা কাটবো।
প্যান্থার : এরমধ্যে কোনো একজন আসল নীলা হলে?
লিও : হলে হবে।
টাইগার : বস… কিছু বলার ছিলো।
লিও : এসো।
টাইগার ভেতরে ঢুকলো।
টাইগার : ওই নীলা রূপী মেয়েটা বলল যে ওকে নাকি এতোদিন কিবরিয়া বন্দি করে রেখেছিলো।
লিও : কিবরিয়া… নীড়-মেরিনও কিবরিয়ার খোঁজ করছিলো। এখন দুটো বিষয় হতে পারে। হয় এই মেয়েটা নীড় অথবা মেরিনের প্ল্যান। নাহয় কিবরিয়া এই খেলার আরো একটি প্রতিপক্ষ।

.

পিটার : স্যার… জনের আনা প্রতিটি প্রমান সত্য। কোনো মিথ্যা নেই।
নীড় হাতের গ্লাসটা এতো শক্ত করে চেপে ধরলো যে গ্লাসটা ভেঙে গেলো।
পিটার : স্যার…
নীড় : ঠিক আছি আমি।
পিটার : স্যার আপনার হাত থেকে রক্ত ঝরছে তো।
নীড় : ঝরতে দাও।
পিটার : স্যার… আমরা এটাকে মিথ্যা প্রমান করে দিতে পারি।
নীড় : প্রয়োজন নেই। আমিও দেখি মেরিন কি চাইতে পারে আমার থেকে? কতোদূর যেতে পারে আমার থেকে… দেখি ওর ভালোবাসা আদৌ ভালোবাসা কি না…
পিটার : স্যার… আরো একটি মারাত্মক খবর আছে।
নীড় : শুনতে চাইনা।
পিটার : তবুও শুনতে হবে স্যার।
নীড় : পিটার…
পিটার : সরি স্যার।কিন্তু… তবুও আমি বলবো। বর্ষা ম্যামের সাথে আজমল কিবরিয়ার স্ত্রীর ডিএনএ মিলে গিয়েছে। অর্থাৎ… বর্ষা ম্যাম আজমল কিবরিয়ার সন্তান।
নীড় : সত্যি?
পিটার : আমার ওপর যতোটা ভরসা করেন সেই ভরসার ভিত্তিতেই সত্যি।
নীড় : হামম।
নীড় বর্ষাকে কল করলো। ডায়াল করে হাতে ব্যান্ডেজ করতে লাগলো।
বর্ষা : হ্যা বল।
নীড় : অফিসে আসতে পারবি একটু?
বর্ষা : কি হয়েছে?
নীড় : বলনা… আসতে পারবি?
বর্ষা : কোনো সমস্যা?
নীড় : আসতে হবেনা তোকে। রাখছি…
বর্ষা : এই দারা… রাখিস না। একটুতেই রেগে যাস। আসছি।
নীড় রেখে দিলো
পিটার : বন্দি বানিয়ে নিবেন এখনই বর্ষাকে?
নীড় : আমার কাছে একটা কল এসেছিলো একটু আগে। মেরিন প্রানের কাস্টডির পেপার রেডি করেছে।
পিটার : তো বর্ষার সাথে এখন কি করবেন?
নীড় হাসলো।

কিছুক্ষনের মধ্যেই বর্ষা এলো নীড়ের অফিসে।
বর্ষা : কি হলো? এভাবে আসতে বললি কেনো? তোর হাতে কি হয়েছে? তু…
নীড় এগিয়ে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলো। বর্ষা অবাক।
নীড় : ভালোবেসে একটু আশ্রয় দিবি আমাকে?
বর্ষা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।
নীড় : বলনা… ভালোবেসে একটু আশ্রয় দিবি আমাকে?
বর্ষা : তুই এসব কি বলছিস?
নীড় বর্ষাকে ছেরে দিয়ে সোজা হয়ে দারালো। বর্ষার গালে হাত রাখলো।
নীড় : বউ হবি আমার? ভালোবাসা চাইছি…
বর্ষা : ততুই না মেরিনকে ভালোবাসিস? ও তোর বউ…
নীড় : কিসের ভালোবাসা আর কিসের বউ? আমি একটা মানুষ বর্ষা। আমার ধৈর্য্যের একটা সীমা আছে। তৃষ্ণার্ত পথিক সর্বদা জলাশয়ের দিকেই যায়।মানুষও সেইদিকেই যায় যেদিকে ভালোবাসা পায়। আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস। আমার পরোয় করিস।
বর্ষা : মেরিন কি মেনে নিবে?
নীড় : যে মেয়ে আমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য রোজরোজ নতুন নতুন উপায় খোজে। সেদিন কি সব মিথ্যা এবং বানোয়াট প্রমান নিয়ে এলো। পদে পদে আমার পরিবারকে অপমান করে চলেছে। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি বা বিয়ে করি সেটাতে ওর কিছুই যায় আসেনা।
বর্ষা : এক মিনিট… মেরিন সেদিন যাযা বলেছে সব মিথ্যা?
নীড় : তা নয়তো কি সত্য?
বর্ষা : প্রমানগুলো?
নীড় : অর্ধ সত্য। বাকিটা এআই দিয়ে করা। ভাইয়ার আঙ্গুলে আংকটির ছাপটা এআই দিয়ে করা। তাহমিদ হোসেনের সার্জারির সত্যতা পাইনি কানাডা থেকে। এই নামের কারো সার্জারি কানাডাতে হয়নি। হয়েছিলো অস্ট্রেলিয়াতে।
বর্ষা : অস্ট্রেলিয়াতেও তো প্রনয় ভাইয়ার ডুপ্লিকেট বানাতে পারে।
নীড় : ওহ শাট আপ বর্ষা। এটা আমাদের বাস্তব জীবন। এটা বিশ্বাস করে নিতাম যদি এটাতে কিবরিয়ার হাত থাকতো। যদি এই ঘটনার সাথে যদি কিবরিয়ার নূন্যতম কোনো সম্পর্ক পেতাম তাহলে আমি কোনো প্রমান খুজতাম না। মেরিনকে বিশ্বাস করে নিতাম। কিন্তু কোনো সম্পর্ক নেই কিবরিয়ার।
বর্ষা : কিবরিয়া কে?
নীড় : অনেক লম্বা কাহিনি । আপাতত এটা জেনে রাখ যে আমাদের পরম শত্রু। বল না হবি আমার? একটু ভালােবাসা দিবি আমাকে? হামম…
বর্ষা চুপ করে আছে।
নীড় : কিছু বলছিস না কেনো? না বলার হলে বলে দে। তোর কাছে আমি স্পষ্ট উত্তর আশা করি।
বর্ষা : আমি একটু সময় চাই।
নীড় : কতোদিন?
বর্ষা : কাল সকাল পর্যন্ত।

.

কিবরিয়া : না করে দাও।
বর্ষা : কেনো না করে দিবো? ওকে আমি ভালোবাসি। ওকে পাওয়াই তো আমার উদ্দেশ্য ছিলো।
কিবরিয়া : আমি এসবে ওর ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছি।
বর্ষা : ষড়যন্ত্র! কিসের ষড়যন্ত্র?
কিবরিয়া : ও হয়তো জানতে পেরেছে যে তুমি আমার মেয়ে।
বর্ষা : উফফ বাবা… পুরো দুনিয়া জানে যে ওই আমির তোমার সন্তান। আমার আর ওর কথা তো কেউ জানেই না।
কিবরিয়া : হ্যা সেটাও ঠিক। কিন্তু…
বর্ষা : কোনো কিন্তু নয় বাবা। কোনো কিন্তু নয়। আমি আমার ভালোবাসার পথে আরো কোনো বাধা চাইনা। আমার ভালোবাসা নিজে এসে আমাকে ধরা দিয়েছে। আমি আর ওকে ছারবোনা।
কিবরিয়া : দেখো কি হয়। আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে।
বর্ষা : এই সন্দেহ ভিত্তিহীন বাবা। আর যদি নীড় জেনেও যায় আমার সম্পর্কে তাহলেও আমি তোমার ঠিকানা ওকে বলবোনা। ভালোবাসি ওকে। কিন্তু অন্ধপ্রেমী আমি নই। আসছি। নীড়কে উত্তর জানানোর আগে মেরিনকে অপমান ফিরিয়ে দিতে হবে।

.

মেরিন প্রান্তিকের কাস্টডির কাগজটা বের করলো। দেখছে এটা। তখন ভেতরে কারো ঢোকার শব্দ পেয়ে পেছনে ঘুরলো। দেখে বর্ষা।
মেরিন : এতো ভদ্রতার ভাষন দাও অথচ এটা জানোনা যে কারো ঘরে প্রবেশ করতে হলে নক করতে হয়? হামম?
বর্ষা : জানি জানি। সবটা জানি। অন্যের ঘরে প্রবেশ করতে অনুমতি নিতে হয় নিজের ঘরে নয়।
মেরিন : আমি এই ঘরের কোথাও তোমার নাম দেখতে পাচ্ছিনা। তো এটা তোমার ঘর কিভাবে?
বর্ষা : নাম তো তোমারও নেই এই ঘরে তবুও তো যেভাবে এটা তোমার ঘর সেভাবে আমারও ঘর হবে।
মেরিন : রক্ষিতা আমি নই। আমি বউ। তো তুমি কি রক্ষিতা হতে চলেছো?
বর্ষা : মেরিন…
মেরিন : আওয়াজ নিচে। সমাজে রক্ষিতার কোনো জায়গা নেই সম্মান নেই। পুরুষের বিলাসিতার বস্তু সে। পুরুষ সমান দোষী হলেও লাঞ্ছনা কেবল তাকেই ভোগ করতে হয়। তোমার সাথেও সেটাই হবে।
বর্ষা : বিয়ের জন্য প্রপোজ করেছে আমাকে। ছেরে দিবে আমাকে
মেরিন : কারেকশন প্লিজ। নীড় আমাকে নয় আমি ওকে ছেরে দিবো। সেকেন্ড হ্যান্ড নীড় তোমার। ইনটেক আমার ছিলো।
বর্ষা : যা বলার বলো। আমার কিছুই যায় আসেনা। কারন শেষ পর্যন্ত সেই জয়ী যার কাছে নীড় থাকবে।
মেরিন : যদি আমি চাই তো নীড় আমার কথা ছারা নরবেও না। কিন্তু… নীড় আমার কোনো আগ্রহ নেই। তাই নীড় আল্টিমেটলি তোমার কাছে রইলো নাকি অন্যকারো কাছে সেটাতে আমার কিছুই যায় আসেনা।
বর্ষা : এই কথা তুমি না। তোমার হার বলছে।
মেরিন : হার… কে কখন কিভাবে হেরে যাবে সেটা নিয়তি নির্ধারন করে। যাইহোক , আমার সময় আমি তোমার সাথে নষ্ট করতে চাইনা। আসতে পারো।
বর্ষা : খুব শীঘ্রই ঘরটা আমার হতে চলেছে।
মেরিন : অল দ্যা বেস্ট।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 46
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন : অল দ্যা বেস্ট।
বর্ষা : সবচেয়ে বিষাক্ত সম্পর্ক হতে চলেছে তোমার আমার। তোমার স্বামীর হবু বউ আমি।
মেরিন : নীড়ের ভালোবাসা অনেক বিষাক্ত। আমার আলাদা করে বিষ ঢালার প্রয়োজন নেই।
বর্ষা : ভয় দেখাচ্ছো আমাকে?
মেরিন : সত্যি বলছি।
তখন নীড় এলো।
নীড় : তুই এখানে?
বর্ষা : হামম। তোর অফিসে প্রপোজালের জবাব দেয়ার জন্য সময় চেয়েছিলাম। সেটার উত্তর দিতে এসেছি।
নীড় মেরিনের দিকে তাকালো।
বর্ষা : তুই আমার কাছে ভালোবেসে আশ্রয় চেয়েছিলি। দিবো তোকে ভালোবেসে আশ্রয়। আমি রাজি তোর বউ হতে।
নীড় হাসি দিলো।
নীড় : গুড নাইট ডিয়ার বর্ষা…
বর্ষা : গুড নাইট? আমি তো ভেবেছি আজকে সারারাত গল্প করবো।
নীড় : গল্প অবশ্যই করবো। সময় এলে। অফিসিয়াল ওয়েডেড হ। অনিয়ম আমি করবোনা।
বর্ষা : আবার ভালোবেসে ফেলিসনা যেনো।
নীড় : আমার জানের কসম… দ্বিতীয়বার ভালোবাসা সম্ভব নয়।
বর্ষা : তুইও না… গুড নাইট।
বর্ষা চলে গেলো। নীড় দরজা লাগিয়ে দিলো। মেরিনের দিকে এগিয়ে গেলো।
মেরিন : প্রমানের সত্যতা যাচাই করতে আর কতোদিন লাগবে?
নীড় : প্রানের কাস্টডির পেপার রেডি করিয়েছো। দাও, সিগনেচার করে দেই।
মেরিন : ভিক্ষা আমি নেইনা। বিজয়ে বিশ্বাসী।
নীড় : বেশ॥ ভিক্ষা যদি না চাও তবে আজকে রাতটুকু আমাকে দিবে?
মেরিন : আমার কাছ থেকে রাত চাওয়ার অনুমতি কেনো চাইছো? নিজের শক্তি প্রদর্শন করতেই পারো।
নীড় : সব রাত সমান হয়না জান। সব রাতে সব কথা প্রযোজ্য হয়না।
মেরিন : আমি তোমার কথার মানে বুঝতে পারছিনা ।
নীড় : কিছু সময়ের জন্য আমার সাথে করে প্রতিযোগিতা পাশে রাখো। কথা শোনো।
মেরিন : আমি তোমার কোনো কথা শুনবোনা। অনেক হয়েছে । সিগনেচার করার হলে করো না করার হলে নেই। কথা আর নেই।

.

পরদিন…
মেরিন : গুড মর্নিং দাদুভাই। ভেরি ভেরি গুড মর্নিং…
শমসের : গুড মর্নিং। কন্ঠে আজ প্রসন্নতা । কি ব্যাপার?
মেরিন : স্বাগতমের ব্যবস্থা করো দাদুভাই। প্রানকে নিয়ে আমি ফিরছি।
শমসের : কি?
মেরিন : হ্যা।
শমসের : বেরাতে আসছো?
মেরিন : ওহ দাদুভাই… বেরাতে আসার কথা কি বলেছি? বললাম যে ফিরছি।
শমসের : মানে?
মেরিন : প্রানের কাস্টডি এখন আমার মানে আমাদের।
শমসের : কি বলছো কি?
মেরিন : হ্যা সত্যি বলছি।
শমসের : আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিনা। কিভাবে কি করলে? নীড় রাজি হলো?
মেরিন : পেপারে সিগনেচার নেয়া শেষ আর তুমি বলছো রাজি হওয়ার কথা?
শমসের : উফফ… আমার কি যে আনন্দ হচ্ছে। রাখছি রাখছি। প্রানের পছন্দের খাবার রান্না করতে হবে।
মেরিন : বাই…
মোবাইল রেখে মেরিন প্রান্তিকের ঘরে গেলো।
মেরিন : বাচ্চা…
প্রান্তিক : মামমাম…
মেরিন : স্কুল তো ছুটি ছুটি।
প্রান্তিক : হামম হামম।
মেরিন : চলো আমরা বড়বাবার কাছ থেকে ঘুরে আসি।
প্রান্তিক : বড়বাবার কাছে যাবো?
মেরিন : ইয়েস।
প্রান্তিক : ইয়ে… কি মজা কি মজা।
মেরিন : দ্রুত ব্রাশ করে নাও। গোসল করে নাও। ব্রেকফাস্ট করে আমরা যাবো।
প্রান্তিক : ওকে।
প্রান্তিক ওয়াশরুমে চলে গেলো।

নীলিমা : তুমি এটা করতে পারোনা নীড়। প্রান তোর একার না। প্রান আমাদের সবার।
নীড় : প্রান আমাদের সবার কিন্তু ওর কাস্টডি আমাকে দেয়া হয়েছিলো। আমাকে…
নিহাল : যে প্রানের জন্য এতো যুদ্ধ করলে, নীলার নামে অপবাদ দিলে এখন সেই প্রানকেই মেরিনকে দিয়ে দিবে?
নীলিমা : বউ পাগল হয়ে গিয়েছো তো। বউ যা বলে তাই করে।
নিহাল : মেরিন এবং প্রান দুজনকেই রেখে দাওনা।
নীড় : যে যেতে চায় তাকে রাখা যায়না।
নীলিমা : আমি প্রানকে কোথাও যেতে দিবোনা।
মেরিন : কে আটকাবে আমায় নিয়ে যেতে? তুমি? হামম?
মেরিন এগিয়ে এলো।
মেরিন : প্রানকে আমি আরো আগেই নিতে পারতাম। কিন্তু প্রান একটা অসুস্থ পরিবেশের সম্মুখীন হতো। সেটা ভেবেই আমি কাজটা করিনি । এখন তো লিগ্যালি নিয়ে যাচ্ছি । তোমার ছেলে সিগনেচার করে দিয়েছে। নিয়ে যাবো আমি প্রানকে।
নীলিমা : ছারবোনা আমি তোকে।
নীলিমা মেরিনের গলা চেপে ধরলো।
নীলিমা : মেরেই ফেলবো তোকে।
নিহাল : নীলি… কি করছো কি?
মেরিন কঠোরভাবে নীলিমার হাত সরালো। নীলিমার হাতে ব্যথা পেলো।
মেরিন : আমি নীলা নই। আমি মেরিন। হাত ভেঙে গুরিয়ে দিবো।
মেরিন নিহালের সামনে গিয়ে দারালো।
মেরিন : বাবা… তুমি , তোমরা যখন ইচ্ছা প্রানকে গিয়ে দেখতে পারবে। প্রান এসে মাঝেমধ্যে এখানে থাকবেও। ওর কাছে সবটা স্বাভাবিকই থাকবে।
নিহাল : কেনো যাবে বলো তো? প্রানকে নিয়ে থেকে যাও না মা। তোমার কোনো অসম্মান হবেনা।
মেরিন : একজনের প্রস্থান না হলে অন্যজনের আগমন হবেনা।
নিহাল : মানে?
মেরিন : নীড় বলে দেবে। প্রানকে নিয়ে যাচ্ছি। আমি আবারো বলছি… যখন ইচ্ছা প্রানের সাথে দেখা করতে পারবে।
বর্ষা : খুব শীঘ্রই তোমার কাছ থেকে আবার আমরা আমাদের প্রানকে ছিনিয়ে নিয়ে আসবো।
মেরিন : প্রান কোনো বস্তু নয়। ছিনিয়ে নেয়ার বস্তু হলে আমি মেরিন বন্যা খান আরো আগেই নিয়ে যেতাম। এতো সময় অপেক্ষা করতাম না। ও প্রান বলে প্রানের মতো করেই নিয়ে যাচ্ছি।
বর্ষা : বুঝলাম। কিন্তু আমি নীড়কে ওর প্রান ফিরিয়ে দিবো এটা আমার ওয়াদা ওর কাছে। আর তোমার কাছে চ্যালেঞ্জ।
মেরিন : কার সাথে চ্যালেঞ্জ করছো জানো?
বর্ষা : নিজেকে বাঘিনী ভাবা মেরিন বন্যা খান কে।
মেরিন : ভুল। আমি নিজেকে বাঘিনী ভাবিনা। সিংহী ভাবি। বাঘ এবং সিংহ দুজনের মধ্যেই প্রায় সমান শক্তি থাকে। তবুও সিংহ কেনো বনের রাজা জানো? বাঘ চালাক এবং সিংহ বুদ্ধিমান। সিংহ শিকার করার পর নিজের খাওয়া হলে বাকিদের জন্য কিছু অংশ রেখে দেয়। বাঘ সেটা করেনা। তুমি অবশ্য বাঘ সিংহের খেলা বুঝবেনা। তুমি ধূর্ত শৃগাল। যে নীড় নামক নেকড়েকেই ডিজার্ভ করে।
নীলিমা : আমার ছেলেকে নেকড়ে বললে?
বর্ষা : নীড় কিছু বলবিনা তুই?
নীড় : বলবো। চক্রবর্তি সুদ নাম শুনেছিস বর্ষা? সেটা নিবো। সিংহী একটা কথা মনে রেখো , নেকড়ে কে এবং হায়েনাক সিংহও ভয় পায়।
মেরিন : দেখলেন নীলিমা চৌধুরী আপনার ছেলে মেনে নিলো নিজেকে নেকড়ে। নীড়… বিয়ের আগে ডিভোর্স পেপার পাঠাতে ভুলোনা যেনো।
বলেই মেরিন ওপরে গেলো। প্রান্তিককে নিচে নিয়ে এলো। নীলিমা তো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।
প্রান্তিক : ও দীদু… কাঁদছো কেনো? আমি তো চলেই আসবো।
নীলিমা : আমাদের ভুলে যাবেনা তো দাদুভাই?
প্রান্তিক : ভুলে যাবো কেনো? আমার ব্রেইন অনেক শার্প।
সবাই ওকে অনেক আদর দিয়ে দিলো। চকোলেট দিয়ে দিলো। মেরিন ওকে নিয়ে বের হলো। ওদের গাড়ি অদৃশ্য হতেই নীলিমা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। নীড় ঘরে গিয়ে দরজা লাগালো।

.

শমসের খান উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করেছে। ফুলেফুলে ভরিয়ে দিয়েছে সারা বাড়ি।
প্রান্তিক : মামমাম… বাসাটা এতো সাজানো হয়েছে কেনো?
মেরিন : তুমি বেরাতে আসবে বলে বড়বাবা সাজিয়েছে।
প্রান্তিক : ওয়াও… কতো সুন্দর লাগছে।
মেরিন প্ৰান্তিককে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো।
শমসের : বাজাও।
সাথে সাথে বাজনা বাজতে লাগলো। প্রান্তিক তো আনন্দে নাচতে লাগলো।
শমসের : সোনামনি.. তোমার জন্য আরো একটি উপহার আছে।
প্রান্তিক : কি?
শমসের : বাহাদুর…
তখন একটি সাদা ঘোড়া ছুটে এলো।
মেরিন : বাহাদুর! বাহাদূর এখানে?
শমসের : হ্যা।
প্রান্তিক : ওয়াও কি সুন্দর ঘোড়া!
শমসের : এই ঘোড়া তোমার মামমামের বন্ধু ঘোড়া। এই ঘোড়াও ছোট ছিলো আর তোমার মামমামও। তোমার নানাভাই তোমার মামমামকে গিফ্ট করেছিলো। তোমার মামমাম তখন ক্লাস ফাইভে ছিলো।
মেরিন : বাহাদুর ফার্মহাউজে ছিলো। মিস্টার খান কখনো ওকে এই বাসায় অ্যালাউ করেনি।
শমসের : এখন ও অ্যালাউড। জন… বসাও তো প্রানকে।
জন প্রানকে বসালো। মেরিন বাহাদুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
মেরিন : কেমন আছিস বাহাদুর? ভালো… মনে আছে আমাকে? হামম?
বাহাদুর আওয়াজ করলো। ঠিক যেনো উত্তর দিলো।
প্রান্তিক : মামমাম উঠো না। এটাকে তো আমি চালাতে পারিনা। তুমি চালাবে আমি বসে থাকবো তোমার সাথে।
শমসের : ওঠো দিদিভাই…
মেরিন উঠে বসলো। একটা রাউন্ড মেরে ফিরে এলো।
শমসের খান প্রান্তিককে কোলে নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকলো।
জন : ম্যাম আমি আসছি তবে।
মেরিন : নো…
জন : নো?
মেরিন : ইয়েস… নো। ভয়ের গন্ধ পাচ্ছি। কেউ তো ভয় পাচ্ছে। গাট ফিলিং হচ্ছে। টেক ইউর পজিশন এন্ড বি রেডি।
জন : একটা মশাকেও ভেতরে ঢুকতে দিবোনা ম্যাম।
মেরিন : আই ট্রাস্ট ইউ।
মেরিন ভেতরে ঢুকলো। ভেতরেও সাজানো।
প্রান্তিক : থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ বড়বাবা। আমাকে এতো সুন্দর সুন্দর গিফ্ট দেয়ার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
শমসের : তোমাকে ওয়েলকাম আমি কিভাবে দিবো বলো তো? আমি তো এই থ্যাংকস টা নিতে পারবোনা। এগুলো তো আমি করিনি।
প্রান্তিক : তাহলে মামমামের প্ল্যান ছিলো?
শমসের : না না।
প্রান্তিক : তাহলে কার?
শমসের : নানাভাই ও নানুমনির।
মেরিন : দাদুভাই… এটা কি মজা?
শমসের : মজা নয় সত্যি।
প্রান্তিক : নানাভাই আর নানুমনি কি ফিরে এসেছে?

□ : হ্যা নানাভাই…
■ : ঘুরে দেখো।
প্রান্তিক ও মেরিন তাকালো। দেখে কবির-কনিকা দারিয়ে আছে।
প্রান্তিক : নানাভাই… নানুমনি…
প্রান্তিক ছুটে ওদের কাছে গেলো। মেরিনের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।কপালে ভাঁজ পরলো। রেগে শমসের খানের দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে
বলল : এগুলো কি মজা দাদুভাই?
শমসের : কোনো মমজা নয় এটা দিদিভাই। তোমার মাবাবা জীবীত।
মেরিন : বাজে মানুষ এবং বাজে কথা আমি মোটেও পছন্দ করিনা।
শমসের : বাজে কথা নয়। ওরা সত্যিই বেঁচে আছে।
মেরিন : কেউ বোকা বানিয়েছে তোমাকে। সার্জারি করানো হবে অথবা মাস্ক পরে আছে।
শমসের : না দিদিভাই। ওরা মা…
প্রান্তিক : মামমাম…
মেরিন কোনোভাবে রাগটাকে নিয়ন্ত্রন করলো।
মেরিন : হ্যা বাচ্চা…
প্রান্তিক : এসব তোমার সারপ্রাইজ ছিলো। তাইনা?
মেরিন : যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। দারাও… আগে এক গ্লাস লেবুর শরবত খেয়ে নাও।
শমসের : এই নূ…
মেরিন : আমি নিজে বানিয়ে আনবো। দারাও বাচ্চা।
মেরিন শরবত বানিয়ে নিয়ে এলো।
মেরিন : পুরোটা শেষ করবে।
প্রান্তিক : ওকে।
মেরিন শরবতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছে।
মেরিন মনেমনে : সরি বাচ্চা… কিন্তু মনেহচ্ছে পরিস্থিতি অসুস্থ হতে চলেছে। আমি তোমাকে এসবের মুখোমুখি হতে দিতে পারিনা।
প্রান্তিক পুরোটা শেষ করলো।
মেরিন : যাও। হাতমুখ ধুয়ে নিবে। যাও ওপরে যাও।
প্রান্তিক ওপরে চলে গেলো। মেরিন তাকিয়ে দেখলো।
মেরিন : এরা কারা দাদুভাই?
কনিকা এগিয়ে এলো।
কনিকা: মা…
বলেই মেরিনের মাথায় হাত রাখতে নিলো।
মেরিন : ডোন্ট টাচ।
কনিকা : মারে…
কনিকা মেরিনের মাথায় হাত রাখলো। মেরিনের হাতের ঘড়িতে থাকা ছোট্ট ছুরিটা দিয়ে কনিকার হাতে আঘাত করলো। করে আবার ঘড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখলো। কনিকার হাত থেকে রক্ত বের হতে লাগলো।
কনিকা : আহ…
কবির : কনা… দেখি দেখি। তুমি কি কখনো মানুষ হবেনা?
মেরিন : শাট আপ। দাদুভাই… এরা কারা?
শমসের : তোমার মাবাবা।
মেরিন : এরা তোমাকে বোকা বানাচ্ছে দাদুভাই। আম্মু বাবা মারা গিয়েছে।
শমসের : মারা যায়নি ওরা। ওদের মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে যায়।
মেরিন : বেঁচে গিয়ে এতোগুলো মাসপর হুট করে উদয় হলো। বাহ কি দারুন গল্প।
শমসের : ওরা আজকে হুট করে উদয় হয়নি। ওরা আত্মগোপনে ছিলো। আমার সাথে মিলে প্ল্যান করেছিলো। প্রানক নিজেদের কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য।
মেরিন : দাদুভাই… তুমি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। হুট করে দেখে আবেগি হয়ে এদের কথায় নাচছো।
শমসের : হুট করে দেখিনি।
কবির : এক মিনিট বাবা। আমাকে কথা বলতে দাও।
কবির এগিয়ে এলো।
কবির : বিষয়টা প্রানের লড়াই ছিলো। প্রান্তিককে হারিয়ে, নীড়ের সাথে যেতে দেখে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কোর্ট থেকে ফেরার পথে অনুভব করলাম যে গাড়িতে বোমা লাগানো। চলন্ত গাড়ি থেকে কনাকে নিয়ে গাড়ি থেকে ঝাপ দেই। কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়িটা ব্লাস্ট হয়। জানিনা কাজটা কে করিয়েছিলো । যদিও আমার মনেহয় যে কাজটা চৌধুরীদেরও হতে পারে।
মেরিন : গাড়িতে দুটো লাশ ছিলো। সেগুলোর দাফন সম্পন্ন হয়।
কবির : আমি ব্যবস্থা করি দুটো লাশের। পাশেই হসপিটাল ছিলো। তাই সমস্যা হয়নি। আর টাকা হলে বাংলাদেশে সব হয়।
মেরিন : দাদুভাইয়ের বয়স হয়েছে তাই এটা সেটা বলে বোঝাতে পেরেছো। কিন্তু আমাকে কি দাদুভাই পেয়েছো? দাদুভাই তুম…
কবির : আমার কথা শোনো…
মেরিন : আমি দাদুভাইয়ের সাথে কথা বলছি। বিরক্ত করবেন না।
কবির : তুম…
দেয়ালে থাকা ছুরি দিয়ে কবিরের হাতে আঘাত করলো। রক্ত বের হলো।
মেরিন : আমাকে বোকা বানানো অতো সহজ নয়। শেষ করে দিবো। আমাকে ধোকা দেয়া অতো সহজ নয়।
ব্যাগের মধ্যে ছুরিটা রেখে গান বের করলো। শমসের খান ওকে নিজের দিকে ঘুরালো।
শমসের : থামো দিদিভাই। রিল্যাক্স। ওরা সত্যি বলছে। হুট করে উদয় হয়নি। সেই অ্যাক্সিডেন্টের পরেই ও আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমরা তিনজন মিলেই এই প্ল্যান করি। আমাদের তিনজনের মধ্যে কারোই ক্ষমতা ছিলোনা নীড়ের সামনে দারানোর এবং প্রানকে ফিরিয়ে আনার। তাই আমি তোমার কথা বলি। এগুলো শুনে কবির মরে যাওয়ার নাটকের প্ল্যান করে। হুট করে কিছু হয়নি এবং আমাকে কেউ বোকাও বানায়নি। আর ওই যে ল্যাটেক্স মাস্কের ঘটনা সেটাও আমার প্ল্যান ছিলো নীড়কে গুমরাহ করার জন্য। যা হয়েছে পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে। এবং আমরা সফল। প্রানের কাস্টডি আমাদের কাছে চলে এসেছে। প্রান কেবল আর কেবল আমাদের।
মেরিন ধপ করে বসে পরলো।
মেরিন : তোমরা আমাকে ব্যবহার করেছো? হামম?
কবির : এটা ছারা আর কোনো পথ ছিলোনা মা।
মেরিন : আপনি কেনো উত্তর দিচ্ছেন? আপনার কাছে উত্তর চেয়েছি? হামম? আমি কথা বলছি শমসের খানের কাছে।
শমসের : তুমি আমার নাম ধরে ডাকলে দিদিভাই?
মেরিন : একদম আমাকে দিদিভাই বলে ডাকবেনা। নীড়ের সাথে আমি লড়াই করেছি , যা নয় তাইই বলেছি। এই তো কয়েকটা দিন আগেও কি সব বললাম। ও যা বলছিলে সত্যি বলছিলো। অন্যকে খারাপ খারাপ বলছিলাম কিন্তু খারাপ যে আমার ঘরে বাসা বেধেছে সেটা আমি দেখিইনি। অন্যের দোষ ধরছিলাম কিন্তু আমার নিজের এতো দোষ সেটাতো আমি ভাবতেই পারিনি। এটাকেই হয়তো বলে প্রদীপের নিচের অন্ধকার।
শমসের : দিদিভাই বো…
মেরিন : কোনো কথা নয়। আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা। কোনো কথা না।
মেরিন ছুটে ওপরে গেলো।
শমসের : দিদিভাই…
কবির এসে শমসের খানের কাধে হাত রাখলো।
কবির : বাবা… শান্ত হও। তোমার কাছ থেকে ধাক্কাটা মেনে নিতে পারেনি। আর আমার সাথে যতোই দ্বন্দ থাকুকনা কেনো বাবা তো আমি। মায়া তো হবেই। ভালোবাসে যথেষ্ট। তাই অভিমান।
মেরিন ঘরে গিয়ে দেখে যে প্রান্তিক ঘুমিয়ে আছে। ওকে কোলে নিয়ে নিচে এলো।
শমসের : ওকে নিয়ে নিচে এলে কেনো?
মেরিন : এক মিনিটও আমি আর এখানে থাকবোনা।
কনিকা : আমাদের প্রানকে তুমি এভাবে নিয়ে যেতে পারোনা মা।
মেরিন : প্রান কারো না । প্রান কেবল আমার। ওকে আমি নিয়ে যাবো।
কবির : কোথাও নিয়ে যেতে দিবোনা ওকে। সবচেয়ে বড় বাধা হলাম আমি তোমার এই পথ।
মেরিন : বাধাটাকে জাস্ট উপরে ফেলে দিবো। মেরে দিবো। আর মৃত মানুষকে মারলে শাস্তিও হয়না।
শমসের : দিদিভাই… ঠান্ডা মাথায় ভাবো।
মেরিন : কোনো ভাবাভাবি নেই। জন…
জন ছুটে এলো। এসে কবির-কনিকাকে দেখে অবাক।
মেরিন : গাড়ি স্টার্ট দাও।
জন : ইয়েস ম্যাম।
জন বেরিয়ে গেলো। কবির , কনিকা এবং শমসের মেরিনের সামনে দারালো। কবিরের পায়ে গুলি করে মেরিন প্রান্তিককে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। জন ড্রাইভ করছে।
জন : ম্যাম খান বাড়ি থেকে কয়েকটা গাড়ি বের হলো। ফলো করছে আমাদের।
মেরিন : স্পিড বারাও। আড়াল হও।
জন : ইয়েস ম্যাম।

.

নীড় : দাবা সত্যিসত্যিই অনেক উত্তর দেয়। বর্ষা… প্রান এবং মেরিন এখানে নেই। বর্ষার হাত থেকে সুরক্ষিত। বাকি মামনি এবং বাবা। এই দুজনকেও সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে হবে
বর্ষা : কি রাখতে হবে?

.

চলবে…
#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 47
writer : Mohona
(do not copy please)

.

বর্ষা : কি রাখতে হবে?
নীড় : প্রানকে আমাদের কাছে রাখতে হবে। যেভাবেই হোক ওই অসুস্থ পরিবেশে রাখতে দিবোনা।
বর্ষা : যেতে দিলি কেনো ওকে?
নীড় : তো কি করতাম? মানুষের সামনে ওই মিথ্যা প্রমানগুলো তুলে ধরলে কি হতো ভেবে দেখেছিস?
বর্ষা : তুই কবে থেকে মানুষের পরোয়া করিস?
নীড় : আমি মানুষের পরোয়া করিনা। পরোয়া কেবল প্রানের। এই মিথ্যা কথা সকলের সামনে আসা মানে কোনো না কোনোভাবে প্রান পর্যন্ত চলে আসা। যেটা আমি চাইনা। প্রান এই নোংরা পরিবেশের সত্যতা জানুক এমনটা আমি হতে দিবোনা। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা যে আমি কি করবো। কিভাবে প্রানকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো?
বর্ষা নীড়ের কাধে হাত রাখলো।
বর্ষা : তুই চিন্তা করিসনা নীড়। প্রান তোর হবে। তোর কাছেই আসবে। এটা তোর কাছে আমার ওয়াদা।
নীড় : ওয়াদা বুঝে শুনে করতে হয় বর্ষা। এটা নীড়-মেরিনের লড়াই।
বর্ষা : নীড়… বন্যা বর্ষার অংশ। বর্ষা কালে বন্যা হয়। বর্ষা না এলে বন্যার অস্তিত্ব থাকবেনা।
নীড় : কিন্তু আতঙ্ক বন্যার থাকে বর্ষার নয়।
বর্ষা : তুই কি মেরিনকে বেশি শক্তিশালী বলতে চাইছিস।
নীড় : না। ভয়ংকর বলতে চাইছিস।
বর্ষা : তোর খুশির জন্য আমি ওর থেকেও ভয়ংকর হতে পারি।

.

কবির : কোথায় গেলো মেরিন? উফফ এই মেয়েটা না।
কনিকা : তুমি উত্তেজিত হয়োনা। ডক্টর তোমাকে উত্তেজিত হতে না করেছে।
কবির : কি করবো আমি? মেয়েটা এমন কেনো? এতোগুলো দিন আত্মগোপনে ছিলাম। কতোকিছু করলাম। এতো ঘৃণা ছিলো নীড়ের প্রতি… প্রানের কিডন্যাপিং এর নাটক করে আরো বারালাম ঘৃণা। কতোকিছু ঘটলো। অবশেষে সফল হলাম। প্রানকে পেলাম। আর এখন ও রাগ করে চলে গেলে।
শমসের : কবির ঠান্ড হও। ওর রাগ করা জায়েজ। রাগ বলাটাও ভুল। ও অভিমানে চলে গিয়েছে। তোমাদের সাথে ওর যতো ইস্যুই থাকুকনা কেনো তোমরা ওর মাবাবা। ভালোবাসে তোমাদের। তাই এই ধাক্কাটা নিতে পারেনি। তারওপর আমিও সত্যিটা জানতাম। ওর কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক।
কনিকা : একদম ঠিক বলছে বাবা। ওর অনুভূতি নিয়ে খেলা হয়েছে। ও এমনিতেই নিজের অনুভূতি সবার মতো করে প্রকাশ করতে পারেনা। তারওপর এসব। অভিমান তো হবেই আমাদের ওপর।
শমসের : তোমাদের চেয়ে অভিমান আমার ওপর বেশি। ও আমাকে বিশ্বাস করতো। তোমার কথা শোনা উচিত হয়নি কবির। তোমার কথা শুনে ভুল করেছি। মেরিনকে যদি বলতাম প্রানকে ফিরিয়ে আনার কথা তাহলে ও ঠিক দেশে এসে কিছু করতো। এতো বড় ধোকা দিয়ে ঠিক হয়নি। ঠিক করিনি আমি। তোমার কথা শুনে ভুল করেছি।
কবির : তো কি করতাম আমি? ওটা ছারা কি কোনো উপায় ছিলো? প্রানকে মেরিনের কাছ থেকে জোর করে নিয়ে আসার জন্য অনেক রেগে ছিলো। বললে কখনো ও আসতোনা।
শমসের : ঠিক আসতো। এর পেছনে ২টা কারন ছিলো। এক প্রানের প্রতি ভালোবাসা এবং নীড়ের প্রতি ঘৃণা।
কবির : তখন ওর নীড়ের প্রতি ঘৃণা ছিলোনা বাবা।
শমসের : ছিলো। মারাত্মক ঘৃণা ছিলো।
কবির : কিভাবে হতে পারে ঘৃণা?
শমসের : ইন্ডিয়ায় নীড়কে প্রথমবার দেখে ওর ভালো লাগে। ভালো লাগার চরম পর্যায়ে ও জানতে পারে যে নীড় নারীপাচারের সাথে জরিত। শেষ হয়ে যায় সব ভালোলাগা। ঘৃণার জন্ম হয়। বিষাক্ত ঘৃণা। নীড়ও ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলো। প্রপোজ করে।মেরিন ওকে চরম অপমান করে। দুজনের মধ্যে মারাত্মক ঘৃণার সম্পর্ক তৈরি হয়।
কবির : এগুলো আগে কেনো বলোনি?
শমসের : আমি এই ঘটনা জানতাম। ছেলেটা যে নীড় সেটা জানতাম না। ওদের বিয়ের পর জানতে পারি।
কবির : উফফ। মাথা কাজ করছেনা।
কনিকা : আমার বাচ্চাটা কতো কিছু সহ্য করেছে…
কবির : সবকিছুর ঊর্ধ্বে এখন একটাই প্রশ্ন। মেরিন কোথায়?

.

প্যান্থার : বস…
লিও : পেলে আরো একটি নীলাকে?
প্যান্থার : নাে বস। কিন্তু আরো একটা গরম খবর আছে। একটা বললে ভুল হবে। ২টা খবর আছে।
লিও : কি খবর?
প্যান্থার : কোর্ট থেকে গুপ্তচর জানিয়েছে যে মেরিন প্রান্তিকের কাস্টডি পেপার রেডি করিয়েছে। মেরিন প্রানকে নিয়ে খান বাড়িতে গিয়েছে। এরমানে এটাই যে নীড় পেপার সাইন করে দিয়েছে।
লিও : এই খবরটা আগে বলোনি কেনো আমাকে?
প্যান্থার : বস… আমিই খবরটা মাত্র পেলাম।
লিও : দ্বিতীয় খবর কি?
প্যান্থার : মেরিন প্রানকে নিয়ে খান বাড়িতে গিয়েছে। তবে ২ঘন্টার মধ্যেই আবার বেরিয়ে গিয়েছে। প্রচন্ড বেগে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে। ওর গাড়িকে কয়েকটি গাড়ি ফলো করছিলো। সেগুলোও খান বাড়ি থেকেই বেরিয়েছিলো। এখন মেরিনকে পাওয়া যাচ্ছেনা।
লিও : এমন কি হয়েছে যে মেরিন এভাবে বের হলো? কোথায় আছে মেরিন?

.

বর্ষা : আমি কিছু বুঝিনা বাবা। প্রান নীড়ের কাছেই ফিরবে আমি কেবল সেটা বুঝি।
কিবরিয়া : তুমি এতো প্রান প্রান কেনো করছো সেটাই তো বুঝতে পারছিনা। নীড় প্রানকে মারাত্মক ভালোবাসে। তোমাদের বিয়ের পর সন্তান হলে প্রানের জন্য বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে।
বর্ষা : পরেরটা পরে দেখা যাবে। এখন প্রানকে আমার চাই। মেরিনকে হারানোর জন্য। আর যদি দেখি যে আমার সন্তান প্রানের জন্য বঞ্চিত হচ্ছে তাহলে প্রানকে শেষ করে দিবো। তোমারই তো মেয়ে আমি। এখন প্রানকে চাই।
কিবরিয়া : প্রানকে কিভাবে দিবো? মেরিন প্রানকে নিয়ে নিরুদ্দেশ।
বর্ষা : ও তো প্রানকে নিয়ে খান বাড়িতে গিয়েছে।
কিবরিয়া : নেই ওখানে।
বর্ষা : তাহলে কোথায় আছে মেরিন?
কিবরিয়া : জানিনা। নীড় কিছু বলেনি তোমাকে?
বর্ষা : ওর কাছে তো খবরই আসেনি।
কিবরিয়া : এটা কিভাবে হতে পারে? ওর কাছে খবর আসেনি! ও জানে না তো? ওরা মিলিত নয়তো?
বর্ষা : দেখতে হবে বাবা।

.

রাত ১টা…
নীড় বোতলে চুমুক দিলো। বর্ষা এসে ঢুকলো।
বর্ষা : কি করছিস তুই?
নীড় দেখলো বর্ষা মেরিনের শাড়ি পরে এসেছে।
নীড় : ডোন্ট টাচ মি মেরিন…
বর্ষা : আমি মেরিন নই। আমি বর্ষা।
নীড় : বর্ষা… ওহ হ্যা বর্ষা। তুই এতো রাতে? কি পরেছিস এটা?
বর্ষা : শাড়ি পরতে ইচ্ছা করছিলো। আমার কাছে তো নেই। তাই মেরিনের একটা শাড়ি বের করে পরলাম। তোকে দেখাতে এলাম কিন্তু তুই ড্রাঙ্ক। কেমন লাগছে আমায়।
নীড় আচলটা হাতে নিলো।
নীড় : যাকে ঘৃণা করি তার প্রতিটি চিহ্নকেই ঘৃণা করি। পাল্টে আয় এই শাড়ি। না হলে আমি খুলে নিবো।
বর্ষা নীড়ের ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে
বলল : আই থিংক সেকেন্ড অপশন ইজ মাচ বেটার। ইউ শুড…
নীড় বাঁকা হেসে ওর কোমরে হাত রেখে কাছে টেনে নিলো।
নীড় : তুই জানিস যে তুই কি বলছিস?
বর্ষা : জানি… তু…
তখন নিচে ডোরবেল বাজতে লাগলো। কেউ ননস্টপ ডোরবেল বাজাচ্ছে।
বর্ষা : এতো রাতে কে এলো?
নীড় বর্ষাকে ছেরে দিলো।
নীড় : দারা। দেখে আসছি।
বর্ষা : চল আমিও যাই।
ওরা দুজন নিচে গেলো। নীলিমা-নিহালও নেমেছে।
নিহাল : এতো রাতে কে?
নীড় দরজা খুলল। পিটার দারিয়ে আছে। অস্থির হয়ে ভেতরে ঢুকলো।
পিটার : স্যার… কবির ফয়সাল খান এবং কনিকা খান বেঁচে আছে।
নীড় : ইয়েস… আই জাস্ট নিউ ইট।
নিহাল : কি বলছো কি পিটার? এটা কিভাবে হতে পারে? ভুল হচ্ছে কোথাও।
পিটার : ভুল না স্যার। সঠিক তথ্য।
নীলিমা : ছিঃ ছিঃ। মৃত্যু নিয়ে নাটক।
নীড় : তোমার কথায় এটা সাজেনা মামনি। যাইহোক , চলো পিটার… মেরিন বন্যা খানকে রিয়েলিটি চেক দিয়ে আসি। ও কি জানতো নাকি জানতোনা?
পিটার : সম্ভবত জানতেন না। প্রানকে নিয়ে তিনি নিরুদ্দেশ।
নীড় : কি?
পিটার : ইয়েস স্যার।
নীড় হাতের বোতলটা আছার মারলো।
নীড় : ফাইন্ড হার। এয়ারপোর্ট , বাস স্টেশন , রেলওয়ে স্টেশন , সী পোর্ট , হোটেল , রিসোর্ট সব জায়গায় খোঁজ করো। পাতাল থেকে হলেও ওকে বের করো পিটার।

.

সকালে…
প্রান্তিকের ঘুম ভাঙলো।
মেরিন : গুড মর্নিং বাচ্চা।
প্রান্তিক : গুড মর্নিং মামমাম।
মেরিন প্রান্তিকের কপালে চুমু দিলো। প্রান্তিক উঠে বসলো। চারদিক দেখলো।
প্রান্তিক : মামমাম… এটা কোন জায়গা মামমাম?
মেরিন : এটা মিরর ওয়ার্ল্ড।
প্রান্তিক : এটা আবার কি?
মেরিন : এটা একটা নতুন জায়গা।
প্রান্তিক : আমরা এখানে কেনো?
মেরিন : হাইড এন্ড সিক খেলতে।
প্রান্তিক : হাইড এন্ড সিক! কেনো আমরা হাইড এন্ড সিক কেনো খেলবো?
মেরিন : হাইড এন্ড সিক সবচেয়ে মজার খেলা কিনা বলো?
প্রান্তিক : হ্যা হ্যা।
মেরিন : তাই আমরাও খেলবো। এতোদিন নানাভাই ও নানুমনি লুকিয়ে ছিলো সবাই মিলে খুজেছি। এখন আমরা লুকাবো।
প্রান্তিক : আমাদেরকে কে খুজবে?
মেরিন : সবাই।
প্রান্তিক : দারুন মজার তো। আচ্ছা চাচ্চুও কি খুজবে?

.

নীড় রেগে খান বাড়িতে ঢুকলো।
কবির : তুমি এই বাড়িতে? কোন সাহসে এসেছো? কার অনুমতিতে এসেছো?
নীড় : বর্ষন নিজের নিয়মে হয়। কারো অনুমতির অপেক্ষা করেনা । শমসের খান… কি দারুন খেলা খেলেছেন আপনি। চমৎকার।
কবির : আমাদের পারিবারিক ব্যাপার আমরা বুঝে নিবো।
নীড় : সরি টু সে এটা এখন কেবল খান বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ নয়। প্রান জরিয়ে আছে। আর মেরিন আইনত এখনো আমার স্ত্রী। মেরিন এবং প্রান দুজনই নিরুদ্দেশ॥ প্রান কোথায় আছে কোন অবস্থাতে আছে সেটা আমার জানা প্রয়োজন। এমনটা নয়তো ওকে আড়াল করার জন্য সকলে মিলে এই পরিকল্পনা করেছে। এমন ভয়ংকর প্ল্যান মেরিনেরই হতে পারে। মেরিন নোংরা খেলা খেলতে পারে দেখে আমি অবাক।
শমসের : আমার নাতনির নামে কোনো বাজে কথা আমি সহ্য করবোনা।
নীড় : যে নাতনিকে ব্যবহার করেছে তার মুখে এই কথা শোভা পায়না। মেরিন যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাক সেটাতে আমি ভাবতাম না। কিন্তু আমার প্রান জরিয়ে আছে।
কবির : ভালোবাসার সীমা বুঝি এতোটুকুই ছিলো?
নীড় : আমার ভালোবাসার ব্যাখ্যা আমি আস্তিনের সাপকে দেইনা।
কবির : দিতে হবে তোমাকে। তোমার জন্য আমার মেয়ের সকল অনুভূতি মরে গিয়েছে।
নীড় : যে বাবা বরাবর মেয়েকে তিরস্কার করেছে , যে বাবা প্রানকে মেয়ের বুক থেকে কেরে নিয়েছে সে বাবার মুখে এই কথা বলা মানে চোরের মুখে ধর্মের কথা। সাবধানে থাকবেন সকলে। প্রানকে খুজে পাই। এরপর গুনেগুনে মারবো। সবার আগে মরবে তোমাদের তুরুপের তাস মেরিন। খুব দাপট ওকে নিয়ে। তাইনা? ওই আগে মরবে।
বলেই নীড় বেরিয়ে গেলো।
কনিকা : কি বলে গেলো নীড়? ও কি সত্যিসত্যি মেরিনকে মেরে ফেলবে?
শমসের : বউমা… মেরিনের মধ্যে শক্তি এবং সাহস ২টাই আছে নীড়ের মোকাবিলা করার। কিন্তু কথা হলো মেরিন কোথায় গেলো?
কবির : মেরিনকে খুজতেই হবে। আড়ালে থাকা মেরিন আরো বেশি ভয়ংকর যে। সবকিছু বরবাদ করে দিবে।

.

প্যান্থার : আমরা কি মেরিনের খোজ করবো বস?
লিও : না। ওই দ্বিতীয় নীলার খোঁজ করা বেশি জরুরী।
প্যান্থার : কিন্তু বস এখন মেরিনকে খোঁজা বেশি জরুরী। কে জানে লুকিয়ে কি করবে?
লিও : যা করার খান এবং চৌধুরীদের সাথে করবে।
প্যান্থার : খান পরিবারে আছেই এক শমসের খান।
লিও : নো নো নো। কবির ফয়সাল খান এবং কনিকা খানও তো আছে।
প্যান্থার : কি বলছেন কি স্যার? ওরা তো মৃত।
লিও : নো নো নো। বেঁচে আছে ওরা। কিন্তু আড়ালে ছিলো প্রানকে নেয়ার জন্য।
প্যান্থার : কি সাংঘাতিক বস!
লিও : এই খান এবং চৌধুরীরা অনেক ভয়ংকর। এরা সাপের চেয়েও বেশি ভয়ংকর এবং বিষধর।
প্যান্থার : মেরিন তো ধোকা সহ্য করতে পারেনা।
লিও : হ্যা পারেনা। কিন্তু ধোকার খেলা তো নিজেও খেলেছে। নিজের মিথ্যা রেপ কেইসের নাটক সাজিয়েছিলো।
প্যান্থার : কি বলছেন কি বস?
লিও : ইয়েস। এখন মেরিন খান এবং চৌধুরীদের শেষ করবে আর আমি মেরিনকে।
প্যান্থার : পারবে কি?
লিও : না পারলে আমি আছি তো।

.

৩দিনপর…
নীড় আয়নার মধ্যে ফুলদানী ছুরে মারলো। বর্ষা ছুটে এলো ওর ঘরে।
নীড় : গুনে গুনে ৪দিন হয়ে গেলো অথচ প্রানের সন্ধান পেলাম না।
বর্ষা : শান্ত হ নীড় … শান্ত হয়ে যা।
নীড় : কিভাবে শান্ত হবো আমি? কে জানে কি অবস্থায় আছে আমার প্রান…
নিহাল : মাথা ঠান্ডা করো নীড়। প্রান মেরিনের সাথে আছে। সুরক্ষিত আছে এবং ভালো আছে।
নীলিমা : তুমি ওকে কিভাবে বিশ্বাস করছো? ও কি বিশ্বাসের যোগ্য?
নিহাল : সবাইকে কি নিজের মতো মনে করেছো নীলি?
নীলিমা চুপ হয়ে গেলো। বর্ষার কপালে ভাঁজ পরলো।
বর্ষা : আংকেল তুমি এভাবে কেনো বলছো? আন্টি এমন কি করেছে যে এভাবে কথা বলছো?
নিহাল : এটা আমাদের পারিবারিক বিষয় বর্ষা। তাই তোমার জানার প্রয়োজন নেই।
নীড় : ও আমার হবু স্ত্রী বাবা।
নিহাল : হবু স্ত্রী এবং হয়ে যাওয়া স্ত্রীর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে নীড়। আইনত মেরিন তোমার স্ত্রী। আর এখন তো ও নিরুদ্দেশ বিয়ে কবে হবে সেটারও নিশ্চয়তা নেই।

.

জন : নাবিলকে ছেরে দিবো?
মেরিন : হ্যা ছেরে দিবে।
জন : ও যদি মুখ খুলে দেয়?
মেরিন : চোখ বেধে নিয়ে এসেছিলে তাই চোখ বেধেই মুক্ত করবে।
জন : ওকে ম্যাম। ওর মাধ্যমে কি কিবরিয়া পর্যন্ত পৌছাবো আমরা?
মেরিন হাসলো।
মেরিন : কিবরিয়া পর্যন্ত পৌছানোর প্রয়োজন নেই। নাবিলকে দিয়ে লিও পর্যন্ত পৌছাবো। লিও পাগলের মতো করে নাবিলকে খুজছে।
জন : নাবিল প্রনয় এবং নীলা ম্যামের কমন ফ্রেন্ড ছিলো বলে?
মেরিন : সম্ভবত হ্যা। ও তো মনেহয়না কিবরিয়াকে দুশমন মনে করে যে সে কারনে নাবিলকে খুজবে।
জন : কথাটা বুঝলামনা ম্যাম।
মেরিন : নাবিল ওই কিবরিয়ার ছেলে।
জন : আমির না কিবরিয়ার ছেলে। নাবিল না অন্য কারো ছেলে।
মেরিন : আমির আজমল কিবরিয়ার পালিত ছেলে। ওর জমজ সন্তান হয়েছিলো। একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে। নাবিল কিবরিয়ার ছেলে।
জন : আর মেয়ে?
মেরিন : বর্ষা।
জন : নীড় স্যারের বন্ধু বর্ষা?
মেরিন : ইয়েস।
জন : নাবিলকে কি আজকেই ছারবো?
মেরিন : পরশু ছারবে। চিপ প্রবেশ করাবে নাবিলের শরীরে। যেটা নাবিল জানবেনা।
জন : নাবিল কি নিজের বাবার কাছে যাবেনা?
মেরিন : নো ডিয়ার নো। এরা কচ্ছপের মতো ধীরগতিতে খেলার পাবলিক। ধীরেধীরে নিজের মঞ্জিলের দিকে যাচ্ছে। কোনো পরিস্থিতিতেই ও নিজের বাবার কাছে যাবেনা। আমার কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ও স্বাভাবিকভাবে কয়েকদিন থাকবে। কারন ও মনে করবে আমি ওর দিকে নজর রাখছি। কয়েকদিন ওভাবে থাকার পর ও আত্মগোপনে যাবে। কিন্তু ততোদিনে লিও ওর পর্যন্ত পৌছে যাবে।
জন : যদিই লিও ওকে না তুলে নিতে পারে তাহলে?
মেরিন : আমরা পৌছে যাবো ওর কাছে। চিপটা থাকবেই কেবল ওর লোকেশন ট্রেস করার জন্য।
জন : ওকে ম্যাম।
মেরিন : আলট্রা মডার্ন ডিভাইস ছারা যেনো ট্রেস না করা যায় এমন চিপ নিবে।
জন : ওকে ম্যাম।
মেরিন : খুব বেশি প্রয়োজন ছারা এখানে তুমি আসবেনা।
জন : ওকে ম্যাম।
জন খুব সাবধানে বেরিয়ে গেলো। মেরিন প্রান্তিকের কাছে গেলো। ও খেলছে। সবরকমের খেলনার ব্যবস্থা আছে এখানে।
প্রান্তিক : মামমাম…
মেরিন : হ্যা বাচ্চা?
প্রান্তিক : আমরা কবে ফিরবো?
মেরিন : যেদিন আমাদেরকে সবাই খুজে পাবে।
প্রান্তিক : সবাই এতো বোকা কেনো? আমাদেরকে খুজে পাচ্ছেনা কেনো?
মেরিন : সেটাইতো কথা।
প্রান্তিক : এভাবে বন্দি থাকতে ভালো লাগছেনা।
মেরিন : কালকে রাতে আমরা বের হবো। ঠিক আছে?
প্রান্তিক : সত্যি?
মেরিন : সত্যি।
প্রান্তিক : থ্যাংক ইউ মামমাম। কিন্তু মামমাম… আমাদের কেউ ধরে ফেললে?
মেরিন : সেটাও তো ঠিক। আমার কাছে একটি চমৎকার আইডিয়া আছে। একদম কালারফুল
প্রান্তিক : কি আইডিয়া মামমাম?
মেরিন : ফ্যান্সিড্রেস কমপিটিশনে কি করা হয় বাচ্চা?
প্রান্তিক : বিভিন্ন রকমের সাজ দেয়া হয়।
মেরিন : কালকেও আমরা সেটাই করবো। ফ্যান্সিড্রেস কমপিটিশনের মতো করে আমরা অন্যরকম সাজ দিবো
প্রান্তিক : ওয়াও! আমি কি সাজবো তাহলে?
মেরিন : ছোটবেলার মামমাম।
প্রান্তিক : ওয়াও… মজার তো।
মেরিন : মজার না?
প্রান্তিক : হামম হামম।
মেরিন : তোমার যখন আইডিয়াটা ভালো লেগেছে তখন যতোদিন আমরা হাইড এন্ড সিক খেলবো ততোদিন বের হওয়ার হলে এভাবেই বের হবো। ভালো না আইডিয়াটা?
প্রান্তিক : খুব খুব খুব।

.

৭দিনপর…
বর্ষা : একি নীড়… তোর হাতে কি হয়েছে?
নীড় : ধরে ফেলেছিলাম ওই মেরিনকে। একটুর জন্য। একটুর জন্য আমার হাত থেকে বেরিয়ে গেলো। ড্যাম ইট।
নীলিমা : প্রান ছিলো ওর সাথে?
নীড় : হ্যা।
নিহাল : তোমার হাত কাটলো কিভাবে?
নীড় : মেরিনের গাড়ির পিছু নিয়েছিলাম। প্রায় ধরেই ফেলেছিলাম। বেসামাল হয়ে যাওয়ার কারনে হাতটা কেটে যায়।
বর্ষা : দেখি ব্যান্ডেজ করতে দে।
নীড় : করাবোনা আজকে হাতে ব্যান্ডেজ। এটা আমাকে আমার হার মনে করিয়ে দেবে।
বলেই নীড় রেগে ওপরে চলে গেলো।
বর্ষা মনেমনে : না নীড়কে আর এভাবে দেখা সম্ভব না। কিন্তু বাবা তো কিছু করতেও পারছেনা। ওই মেরিনকে আমি ছারবোনা। একবার হাতের মুঠোই পাই।
বর্ষা ওপরে গেলো।
নীলিমা : কিসের শাস্তি পাচ্ছি আমরা?
নিহাল : অন্যায় করার শাস্তি। এখনো সময় আছে নিজের ভুল মেনে প্রায়শ্চিত্ত করো।
নীলিমা : আমি কোনো ভুল করিনি। আমার প্রনয়ও কোনো ভুল করিনি।

.

পরদিন…
মেরিন : জিনিয়ার প্ল্যানটা ফ্লপ হয়েছে। জিনিয়াকে কিডন্যাপ করে কোনো স্টেপ নেয়নি লিও। নাবিলকে করবে কিনা অথবা করলেও সফল হবো কিনা জানিনা। এক মিনিট… লিও ওই দ্বিতীয় নীলার কথা জানতে পারেনি তো? সেটা জেনেই হয়তো জিনিয়াকে নিয়ে কিছু করছেনা। হয়তো চেষ্টায় আছে এই নীলাকে কিডন্যাপ করার। ওই মেয়েটা কি সত্যিই আমার আপু? মন বলছে যে ওটা আমার আপু। কিন্তু মনের কথা দুই-তিনবার শুনে ঠকেছি। আর ঠকতে চাইনা।এখন সময় এসেছে নীলার ডিএনএ টেস্ট করানোর। প্রানের সাথে ডিএনএ টেস্ট করাবো আর আমার সাথেও। আর কনিকা খানের সাথেও করাবো। এখন অপ্রস্তুত হয়ে আছে অনেকে। ১৫দিনের বেশি হয়ে গিয়েছে। টেস্ট করাতেই হবে। জনকে প্রানের কাছে রেখে যাবো আমি।
কিছুক্ষনের মধ্যেই জন এলো। মেরিন বের হলো নীলার ডিএনএ স্যাম্পল নিয়ে।
মেরিন : কতোক্ষন লাগবে রেজাল্ট আসতে?
ডক্টর : ২৪ঘন্টা।

.

চলবে…