#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 62(last)
writer : Mohona
(do not copy please)
.
নীলা : প্রনয়…
প্রনয় মাটিতে লুটিয়ে পরলো। সকলে ছুটে এলো।
নীলিমা : প্রনয়…
নীলা ছুটে গেলো প্রনয়ের দিকে।
নীলা : প্রনয়… এই প্রনয়।
প্রনয়ের চোখ নিভুনিভু হয়ে এলো।
নীলিমা : ডক্টরের কাছে নিতে হবে। নীড় তুই এটা কি করলি? নিজের ভাইকে মেরে দিলি?
নীড় : মারিনি। শাস্তি দিয়েছি। যেটা সে ডিজার্ভ করে। সব ধ্বংস করেছে এই মানুষটা। আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। মৃত্যুই তার শাস্তি। সর্বোচ্চ ঘৃণা করি তাকে।
নীলা : লজ্জা করছেনা তোমার নীড়? লজ্জা করছেনা এই কথাগুলো করতে? হামম? আজকে যে তুমি বিলাসবহুল জীবনযাপন করছো সেটা প্রনয়ের জন্য। যেটা তুমি নিজেই বলেছিলে এক সময়।বাবার ছোট্ট একটা ব্যবসা ছিলো , প্রনয় অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। বাবার ব্যবসাকে ওপরে তোলার দায়িত্ব কাধে তুলে নেয়। তোমাকে ইন্ডিয়া পাঠায়। এরপর ওখান থেকে আমেরিকা। তুমি বলছো যে তোমার সেই ভাইয়া তোমার হাতে মৃত্যু পাওয়া ডিজার্ভ করে? তোমার ভাইয়া যা অন্যার করার আমার সাথে করেছে। তোমার সাথে কি করেছে?
নীড় : আমার জীলন বরবাদ করেছে। ওর জন্য মেরিন আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছে। হারিয়ে গিয়েছে আমার মেরিন। এই মানুষটার ওপর বিশ্বাসের কারনে আমি মেরিনকে অবিশ্বাস করেছিলাম। এই লোকটার জন্য প্রতিশোধের আগুন আমার হাত পুরিয়ে দিয়েছে। জীবনটাকে ছারখার করে দিয়েছে।
নীলা : চুপ। একদম চুপ। প্রনয় বলেছিলো কি ওর প্রতিশোধের অংশ হতে? নাকি ও বলেছিলো ওর প্রতিশোধ তোমাকে নিতে? প্রনয় কি বলেছিলো মেরিনকে অবিশ্বাস করতে? কিছুই বলেনি। তুমি মেরিনকে অবিশ্বাস করেছো সেটা তোমার ব্যর্থতা। আরেকটা যেনো কি বললে? হ্যা… প্রনয়ের জন্য তুমি মেরিনকে হারিয়েছো। মেরিন আজকে তোমার স্ত্রী এবং তোমার সন্তানের মা হতে চলেছে সেগুলোর পেছনেও প্রনয়ই আছে। ও আমার অপরাধী ছিলো। আমি সুযোগ দিয়েছি। তাই ও অপরাধ করেছে। আমি বাবার কথা বিশ্বাস করিনি সেটা আমার ব্যর্থতা। কখনো নিজের ভাইয়ার ভুল সংশোধন করার চেষ্টা করোনি বরং ভাইয়ার মৃত্যুর পর সেই পথে হেটেই এখন আবার ভাইয়াকে দোষী করছো। প্রনয়ের মতো প্রত্যেকেই দোষী। প্রনয় দোষী হওয়ার পাশাপাশি ভিক্টিমও। ছোট থেকে সংঘর্ষ করছে। সুখ পায়নি। আজকে বড় হয়ে গিয়েছো। তাই এসব বলছো… ছিঃ…
নীড় : মৃত ব্যাক্তির ওপর ভালোবাসা দেখাচ্ছো?
নীলা : মারা যায়নি আমার প্রনয়। বেঁচে আছে।
নীড় : তোমার এই চোখের পানিও নাটক ভিন্ন কিছু নয় ভাবি।
নীলা : তোমার কাছ থেকে আমি সম্মান আশা করিইনা। যে নিজের এমন ভাইয়ের সাথে এমন করতে পারে সে ভাবিকে আর কি সম্মান করবে? প্রনয়… তোমার কিছু হবেনা প্রনয়। প্যান্থার… প্যান্থার… ডক্টরকে ডাকো। প্রনয়কে সুস্থ করতে হবে।
প্রনয় চোখ বন্ধ করে ফেলল।
নীলা : প্রনয়…📢
নীলিমা : প্রনয়…
কনিকা নীলিমার কাধে হাত রাখলো। নীলিমা কনিকাকে ধরে কান্না করতে লাগলো। নিহালের চোখ থেকে পানি পরছে। নীলা উন্মাদের মতো করছে।
নীলা : প্রনয়… তুমি এমনটা করতে পারোনা। তুমি বলেছিলে যে তুমি আমাকে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দেবে। তুমি আবারো নিজের কথা রাখলেনা। বারবার আমি তোমাক বিশ্বাস করি কিন্তু তুমি বারবার আমার বিশ্বাস ভাঙো। এটা হবেনা। তুমি আমাকে ছেরে যেতে পারোনা। প্রায় ৫টা বছর ধরে তোমার অপেক্ষা করেছি। আমার মন বলছিলো যে তুমি আছো। তুমি যেতে পারোনা প্রনয়… তুমি আমাকে ছের যেতে পারোনা। প্রনয়… চোখ খোলো। চোখ খোলো প্রনয়… চোখ খোলো প্রনয়। চোখ খোলো।
নীলা কান্না করতে লাগলো। শমসের খান নীলার পাশে বসলো।
শমসের : দিদিভাই…
নীলা : সরো … সরো তুমি। সব দোষ তোমার। শুরু থেকেই তোমাদের এই পারিবারিক দ্বন্দের পরিনতি এসব। সব সমস্যার মূলে তুমি। তুমি তুমি তুমি…
নীড় চলে যেতে নিলো।
নীলা : দারাও। কোথায় যাচ্ছো তুমি? খুনী… খুব মেরিন মেরিন করছো। তাইনা? আমি অভিশাপ দিচ্ছি যে তুমি কোনোদিনো মেরিনকে পাব…
প্রনয় : দারাও নীলা…
নীলা থেমে গেলো। ঘুরলো। প্রনয় উঠে বসলো। সকলে অবাক। কি দেখছে এসব? প্রনয় উঠে দারালো।
নীলা : প্রনয়.. তুমি ঠিক আছো? তুমি ঠিক আছো…
নীলা প্রনয়কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো প্রনয় ওকে আগলে নিলো। সকলে বুঝতে পারছেনা কিছুই। নীড়ের দিকে তাকালো। নীড়ের মুখে বাঁকা হাসি।
পিটার : আপনার প্ল্যানিং এসব?
নীড় : আমি কি এমন ড্রামা করতে পারি!
পিটার : স্যার আপনি না সাংঘাতিক।
[
প্রনয় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে সকালে কিবরিয়াকে মেরে নিজেও মরে যাবে। আত্মহত্যা করবে নীলার সামনে। নীড় কল করলো।
প্রনয় : নীড়…
নীড় : কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে যে?
প্রনয় : এএমনি…
নীড় : লিও হয়ে যতো বুদ্ধি দেখানোর দেখিয়েছো। প্রনয় এখন তুমি। আর প্রনয়ের চেয়ে নীড়ের আইকিয়্যু লেভেল অনেক বেশি।
প্রনয় : জানি তো আমি সেটা।
নীড় : কিবরিয়াকে কি মেরে ফেলেছো?
প্রনয় : বর্ষাকে মারার পর তোকে বলেছি। নাবিলকে মারার পরও তোকে বলেছি। কিবরিয়ারটাও প্যান্থার জানাবে।
নীড় : প্যান্থার জানাবে। ভালো। ভাবি কি ক্ষমা করেছে তোমাকে?
প্রনয় বিষাদের হাসি হেসে বলল : এ জীবনে আমার আর ক্ষমা নেই।
নীড় : দুইয়ে দুইয়ে চার করে যেটা বুঝলাম যে তুমি আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছো।
প্রনয় চুপ করে রইলো।
নীড় : ভয় নেই বাধা দিবোনা। তবে আত্মহত্যা করার আগে আমার একটি কাজ করতে হবে। কথা দিচ্ছি নেকু ছোট ভাইদের মতো বাধা দিবোনা। তোমার জন্য আমার মনে কোনো দয়ামায়া অবশিষ্ট নেই।
প্রনয় : ভাই আমার… কি করতে হবে বল। আমি তো তোমার জন্য সব করতে পারি। বল কি করতে হবে আমাকে?
নীড় : নাটক করতে হবে।
প্রনয় : নাটক! কিসের নাটক?
নীড় : আত্মহত্যার এবং মরে যাওয়ার নাটক।
প্রনয় : আমি তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমি তো সুইসাইড করবোই। তাহলে নাটক করবো কিভাবে? আর আত্মহত্যা করলেই তো মরে যাওয়া হয়।
নীড় : রিল্যাক্স রিল্যাক্স। বলছি আমি। ভাবি আমার এখানে বন্দি থাকা অবস্থায় একটি ঔষধও খায়নি। একটি জায়গায় এতোগুলো ঔষধ জমে আছে। এটা দেখে সেখানে যাই যেখানে মামনি তাকে বন্দি করে রেখেছিলো। সেখানেও একটি জায়গায় ঔষধ রাখা। আমি ড্যাম সিওর যে তোমার ওখানেও পাবে। এরমানে হলো এই যে…
প্রনয় : নীলা কখনো মানসিক ভারসাম্য হারায়ইনি।
নীড় : ইয়েস।
প্রনয় : আমি এক্ষনি গিয়ে নীলাকে জিজ্ঞেস করছি।
নীড় : আরে স্টপ। কিচ্ছু জিজ্ঞেস করবেনা।
প্রনয় : আমাকে জিজ্ঞেস করতেই হবে।
নীড় : একেবারে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিবো।
প্রনয় : তুই কোথায় থেকে এলি?
নীড় : আকাশ থেকে। এই বুদ্ধি নিয়ে কেউ মাফিয়া কিং কিভাবে হতে পারে? একটা সাধারন কথা বোঝোনা। শোনো আমার প্ল্যানিং।
নীড় বলল।
প্রনয় : তোর পরিকল্পনা আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু তুই যেটা চাইছিস সেটা হবেনা। নীলার মনে যে ভালোবাসা ছিলো সেটাকে আমি গলা চেপে হত্যা করেছি। কিছুই হবেনা।
নীড় : নাহলে তুমি সুইসাইড করে নিবে। ট্রাস্ট মি আমি বাধা দিবোনা।
প্রনয় দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো।
নীড় : ভালোবাসাকে হারিয়ে যেতে দেয়া কোনো প্রেমিকের বৈশিষ্ট্য হতে পারেনা। শেষ চেষ্টা তো করো।
]
.
নীলা : তুমি আবার আমাকে ঠকালে!
প্রনয় কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। নীড়ের দিকে তাকালো।
নীড় : তুমি আসলেই মাফিয়া কিং হওয়ার ষোগ্য নও।
প্যান্থার : ওয়াইফের সামনে আছে তো। ওয়াইফের সামনে মাফিয়া কিং হোক অথবা জঙ্গলের কিং হোক ভীতু বিড়ালই হয়ে থাকে।
প্রনয় রেগে প্যান্থারের দিকে তাকালো। প্যান্থার চুপ হয়ে গেলো। তবে মুখ টিপেটিপে হাসছে।
নীলা : সবাই মিলে আমাকে ধোকা দিয়েছো। কাউকে ক্ষমা করবোনা। কাউকে না।
নীড় : এখানে আবার সবাই কোথায় থেকে এলো?
নীলা : তুমি তো কোনো কথাই বলো না।
নীড় : ভাবি… কথা তো আমাকে বলতেই হবে। যে পর্যায়ে আছি সেখানে দারিয়ে তোমাদের কথা আমি ভাবতাম না। আমি কেবল আমার এবং মেরিনের কথা ভাবতাম। কারো জন্য কোনো পরোয়া নেই। পরে মনে হলো মুক্তাগুলো সারিবদ্ধভাবে সুতার মধ্যে গাথা থাকে বলেই তখন সুতার এতো গুরুত্ব থাকে এবং মুক্তাগুলোর মধ্যে সম্পর্ক থাকে। কিন্তু একবার সুতা ছিরে গেলে না থাকে মুক্তদের মধ্যে সম্পর্ক থাকে না সুতার মূল্য থাকে। আমরা সকলে একই সুতায় বাধা। তাই আমাদের মধ্যে সম্পর্ক আছে। সুতার নাম পরিবার। আর আমরা একেকজন হলাম মুক্তা। ভাবি… প্রনয় আহমেদ চৌধুরী ভুল করেছে। নীলিমা চৌধুরীও ভুল করেছে। কিন্তু ট্রাস্ট মি প্রনয় চৌধুরী তুমি ভিন্ন কোনো মেয়েকে ভালোবাসেনি। কারো কাছে যায়নি। বিষয়টা তোমার বোন নিশ্চয়ই বলেছে। তোমাকে কষ্ট দেয়া হয়েছে বলে , আমি তোমার চরিত্রে দাগ লাগিয়েছি বলে দুই পরিবারের জানের দুশমন হয়ে ছিলো। ভুল যেমন করেছে তেমন শাস্তিও পেয়েছে। প্রতিশোধ কেবল ধ্বংস আনে। কিন্তু প্রনয় আনে শান্তি। জানি তোমার সাথে মারাত্মক অন্যায় হয়েছে। শাস্তি দেবার হলে সাথে থেকে দাও। দূরে যেতে দিওনা। তুমি দূরে গেলে ভাইয়াকে হয়তো শাস্তি দিবে কিন্তু নিজে কখনো স্বস্তি পাবেনা। যদি কারো মধ্যে অপরাধবোধ না জাগে তবে তাকে শাস্তি দিলেও লাভ হয়না। কিন্তু যদি কারো মনে অপরাধবোধ জেগে ওঠে তাহলে তাকে শাস্তি দেয়া না দেয়া সমান। তারওপর প্রান আছে। ও ছোট্ট প্রানটা দাবার গুটি হয়েই আছে এতোদিন ধরে। একটি স্বাভাবিক জীবন পাওয়া ওর অধিকার। কেবল তোমার কাছে থাকলে ও সুন্দর জীবন পাবে সেটাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু স্বাভাবিক জীবন পাবেনা। বাকিটা তোমার সিদ্ধান্ত। তোমাদের সিদ্ধান্ত।
কবির : একটা সুযোগ দাও প্রনয়কে।
নীড় : তুমি কেনো বলছো শ্বশুরড্যাড? যার সুযোগের প্রয়োজন তাকেও তো বলতে হবে নাকি? স্ট্যাচ্যুর মতো দারিয়ে আছে। তুমি ক্ষমা তো দূরের কথা সুযোগও ডিজার্ভ করোনা।
প্রনয় এগিয়ে এলো নীলার দিকে।
নীড় : সি… ঠিক বলেছি। তুমি সুযোগ ডিজার্ভ করোনা। বললাম পরে এলে। মানে যে যা বলে সেটাই শুনতে হবে।
প্রনয় : এই তুই চুপ করবি? ক্ষমতা থাকলে তুই নিজের বউকে খুজে বের কর যা।
নীড় : আমার বউ কোথায় সেটা তোমার বউ জানে। তাইতো তোমার হেল্প করলাম। তা না হলে আমার চিন্তা কেবল মেরিন আর প্রানকে নিয়ে।
সকলে হেসে দিলো।
নীড় : আমি হাসির কিছুই বলিনি। মেরিন কোথায়?
নীলা : আমি জানিনা ভাই।
নীড় : তুমি মেরিনের সাথে কানেক্টেড। যোগাযোগ আছে।
নীলা : হ্যা যোগাযোগ আছে। কিন্তু কোথায় আছে সেটা আমাকে জানায়নি।
নীড় : তুমি কি ভেবেছো আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছি?
নীলা : না করলেও কিছু করার নেই। তবে একটা কথা আমি বলতে পারি।
নীড় : কি কথা?
নীলা : তুমি যদি তৃতীয়বারও মেরিনকে পেয়ে যাও তাহলে হয়তো আর হারাতে হবেনা।
.
মেরিন : ওই কিবরিয়া কি মরেছে? নাকি ওকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে? আপুর ফোনটাও তো বন্ধ । কেউ কি তবে সামনে থেকে সরছেই না? কতোগুলো দিন ধরে প্রানকে দেখিনা । কে জানে কি করছে? ভালোই হয়েছে দূরে থেকে। ও নিজের মাবাবার সাথে মিশে যেতে পারবে। তা না হলে তো ও চাচ্চু আর মামমামের কাছেই ছুটেছুটে আসতো বারেবারে।
মেরিনের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো। নিজের পেটের ওপর হাত রাখলো।
মেরিন : শোনো পুচকু… তুমি আমার দ্বিতীয় বাচ্চা। বুঝেছো? তোমার প্রান ভাইয়া সবসময় আমার প্রথম বাচ্চা হয়েই থাকবে। খবরদার কখনো হিংসা করবেনা ভাইয়াকে। নাহলে খুব বকবো। হুহ…
.
প্রনয় : একটা সুযোগ দেবে আমায়… প্লিজ… আমি তোমাকে আর কখনো কোনো অভিযোগের সুযোগ দিবোনা…
নীলার চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো।
প্রনয় : কান্না করো না প্লিজ। আমাকে সুযোগ না দিলে দিবেনা। কিন্তু কান্না করোনা।
নীলা চুপটি করে বসলো।
নীলা : কেনো এসব হলো আমাদের সাথে প্রনয় ? কেনো হলো? কেনো তুমি বোঝোনি? কেনো আমি বুঝিনি?
প্রনয় : তোমার কোনো দোষ ছিলোনা। সব দোষ আমার।
নীলা : দোষটা হয়তো সময়ের। সময় আমাদেরকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে। একটি বিশাল বিষাদের সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমরা বর্তমানে এসেছি প্রনয়… যথেষ্ট কঠিন সময় দেখেছি… যথেষ্ট কান্না করেছি। আর কান্না করার সক্ষমতা অবশিষ্ট নেই…
প্রনয় নীলাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
প্রনয় : আর আমি তোমায় কাঁদতে দিবোনা নীলা…
প্রনয় নীলাকে বুকে জরিয়ে রেখে কিছুটা সময় অতিবাহিত করলো।
নীলা : প্রনয়…
প্রনয় : হামম!
নীলা : এই অপরাধের জগৎ ত্যাগ করতে পারবে?
প্রনয় : সব ত্যাগ করবো। সবটা… মাফিয়া কিং লিও বিলীন হয়ে যাবে পৃথিবী থেকে।
নীলা : এই অন্ধকার জগৎ ছেরে দিলে সবাই তোমার শত্রু হয়ে যাবেনা?
প্রনয় : প্যান্থার ভিন্ন লিওকে কেউ কখনো দেখেইনি। প্রনয় চৌধুরীর পরিচয় আড়াল করার জন্য আমি সবসময় নিজের চেহারা লুকিয়ে রাখতাম। যেনো ভুলেও কেউ কখনো আমাকে না দেখতে পায়। প্যান্থারকে সব বুঝিয়ে যাবো। প্যান্থারই লিও হয়ে থাকবে সবার কাছে।
নীলা : প্যান্থারের জীবনও তো তবে ঝুকিতে থাকবে।
প্রনয় : ও ছোট থেকেই এখানে আছে। ওর বাবাই আমাকে বাঁচিয়েছিলো। ও এই জগৎ চাইলেও ছারতে পারবেনা।
নীলা : হামম।
প্রনয় : সরি এগেইন… অনেক ভুল হয়ে গিয়েছে।
নীলা : ভুলের শাস্তি পেয়েছো তুমি। তাই সেটা ভেবে আর কষ্ট পেওনা।
প্রনয় নীলার কপালে চুমু দিলো।
.
প্রান্তিক : চাচ্চু তুমি এতোদিন আসোনি কেনো? তুমি নাকি মামমামকে নিয়ে আসতে গিয়েছো? তাহলে মামমামকে না নিয়ে এলে কেনো?
নীড় : মামমামের ফ্লাইট ক্যানসিল হয়ে গিয়েছে তাই।
প্রনয় : আমরা আর কতোদিন এখানে থাকবো? আমার এখানে আর থাকতে ইচ্ছা করছেনা। আমাদের বাসায় কবে ফিরবো?
নীড় : শীঘ্রই।
প্রান্তিক : আজকে কতোদিন পর তোমার সাথে ঘুমাবো। গল্প বলতে হবে কিন্তু।
নীড় : একটু আদরতো করে নেই আমার বাচ্চাটাকে।
প্রান্তিক : হাহাহা।
নীড় প্রান্তিকের সাথে খেলতে লাগলো।
প্রান্তিক : ভালোই মজা হলো আজকে । তোমার সাথে না ঘুমাতে এলে মজাটা হতোইনা।
নীড় : পাগলা বাচ্চাটা।
নীড় প্রান্তিককে ঘুম পারিয়ে দিলো।
নীড় মনেমনে : প্রান রে প্রান তোমার মাবাবা আজকে রোম্যান্স করবে। আর আমি এখনো মেরিনের খোঁজই পেলাম না। তোর ওই সুন্দরী মামমাম আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। এর প্রতিশোধ তো আমি নিবো। তবে ভালোবেসে। জান তো ও আমার। ও আমার থেকে হারাতে চাইছেনা। তাই এই লুকোচুরি খেলছে। ভালোবাসে তো আমাকে। আমাকে ছেরে থাকবে কিভাবে…
.
২দিনপর…
মেরিন : এবার এই চৌধুরী বাড়ি হয়েছে আমার মনের মতো। একেবারে ক্লাসী। ওই লিওর গুহাবাসী এখানে আর আসবেনা। ওই নীড়তো ভাবতেই পারবেনা যে আমি চৌধুরীদের এই বিশাল ফার্মহাউজে এসে উঠেছি। এটা যদি আহট হতো তাহলে এই কদিনে দুচারটা ভূতের দর্শন তো পেয়েই যেতাম। এতোবড় বাড়ি আর একা একটি মেয়ে। ভূত না এসে পারে! স্টুপিড হরর স্টোরি। এক কাপ কফি করে নেই। না গোসল করে আসি আগে।
মেরিন গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে পা রাখতেই পায়ের নিচে নরম কিছু অনুভব করলো। তাকিয়ে দেখে ফুলের পাপড়ি দিয়ে পথ বানানো। কতোশতো ফুলের তোরা ঘরটাতে।
মেরিন : নীড়… পালাবো! ওই জানালা টপকে পালাতে হবে।
মেরিন জানালা খোলার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু লাভ হলোনা। সবগুলো জানালা খোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু লাভ হলোনা। কিচেন থেকে আওয়াজ আসছে। মেরিন রেগে নিচে গেলো। কিন্তু কিচেনে কাউকে দেখতে পেলোনা। কিন্তু খাবার সাজানো। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। আলো নিভে গেলো।
মেরিন : এগুলো কি হচ্ছে নীড়? এগুলো কেমন মজা?
আবার আলো জ্বলে উঠলো। নীড়ের দর্শন নেই।
মেরিন : এসব ড্রামার মানে কি নীড়?
দেয়ালে টাঙানো নীড়ের ছবিটা গোলগোল ঘুরতে লাগলো। মেরিনের কপালে ভাঁজ পরলো।
মেরিন মনেমনে : এমন ভূতুরে ইফেক্ট! নো নো ভূতুরেনা। সাইন্টিফিক।
মেরিন এগিয়ে গিয়ে ছবিটা ধরলো। নামালো। সেটার পেছনে একটি গ্যাজেট লাগানো।
মেরিন : মেরিন বন্যা খানকে ভয় দেখানো সহজ নয়।
নীড় : ভয় দেখাতে আসিনি।
মেরিন পেছনে ঘুরলো। দেখে নীড় কিচেনে দারিয়ে আছে।
নীড় : একাএকা সংসার করা যায়না। তাই আমিও চলে এলাম।এটা আমাদের দুজনের ছোট্ট সংসার।
মেরিন : নাটক করছিলে কেনো?
নীড় : নাটকের জবাব তো নাটক দিয়েই দিতে হয়।
মেরিন : আমি কি নাটক করেছি?
নীড় : আমি তো তোমার নাম নিলামই না। দেখো তো কাস্টার্ডটা কেমন হয়েছে?
মেরিন : আমি খাবোনা। আমি বের হবো। চলে যাবো।
নীড় : যাও।
মেরিন গিয়ে দরজা খুলতে নিলো। কিন্তু খুলছেনা।
মেরিন : দরজা খুলছেনা কেনো?
নীড় : আমি কে জানি?
নীড় কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো।
মেরিন : দরজা খোলো।
নীড় : আমার হাতজোরা আমার কাছেই আছে দেখো। আমি কিন্তু দরজা ধরে রাখিনি।
মেরিন রেগে নীড়ের কাছে গেলো।।
মেরিন : ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে? তুমি কি মনে করো তুমি একাই চালাক?
নীড় হুট করে মেরিনের ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসলো।
নীড় : কন্টিনিউ…
মেরিন : তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে টাচ করার? তুম…
নীড় আবারো একই কাজ করে বলল কন্টিনিউ।
মেরিন : অসভ্য বর্বর বেয়াদব একটা।
নীড় তৃতীয়বারের মতো একই ঘটনা ঘটালো। মেরিন থাপ্পর দেয়ার জন্য হাত তুলল। নীড় হাতটা ধরে ওকে কাছে টেনে নিয়ে বুকে জরিয়ে ধরলো।
নীড় : আমার জানটা। কতোদিন পর তোমাকে দেখলাম। স্বস্তি পেলাম।
নীড়ের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো। পানির ফোটা মেরিনের পিঠে পরলো। মেরিনও বুঝতে পারলো যে নীড় কাঁদছে।
মেরিন : ছছারো…
নীড় একইভাবে রইলো। চুপটি করে রইলো। নিরবে চোখের পানি ফেলছে। একটি কথাও বলছেনা। অনেকটা সময় নীড় এভাবে কাটালো।
মেরিন : নীড়… ছারো।
নীড় : উহু… এখন আর ছারবোনা। আর ছারবোনা তোমাকে। এভাবেই নিজের সাথে বেধে রাখবো। হাজার বছর তোমাকে নিয়ে বাঁচবো। তুমি আমার প্রথম দেখার সুখ। শতে চেষ্টা করেও যে সুখকে আমি ভুলতে পারিনি তুমি হলে সেই সুখ। যতোবার ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি ততোবার মনে পরেছে। বুঝতেই পারিনি যে বিধাতা আমার প্রথম দোয়াই হয়তো কবুল করেছে। তোমাকে সারাজীবনের জন্য আমার মনে গেঁথে দিয়েছে। শত ঘৃণা , শত প্রতিশোধের পরেও তোমাকে ভালোবাসি মেরিন। তুমি যে আমার কি সেটা বলে বোঝাতে পারবোনা। আমার কাছে কোনো ভাষা নেই। তুমি আমার জান মেরিন… তুমি আমার সব। তুমি মানো না মানো তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। ছেরে যেওনা… আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিবোনা। কোথাওনা… তুমি যেখানে যাবে আমি সেখানে যাবো। তোমার ছায়া হয়ে থাকবো। তোম…
নীড় অনুভব করলো যে ওর বুকের দিকের শার্টের অংশ ভেজাভেজা লাগছে। নিজের চোখের পানি মুছে মেরিনের মাথাটা তুলতে নিলো। কিন্তু মেরিন ওর মাথাটা শক্ত করে রেখেছে। ওর শার্ট খামছে ধরেছে। নীড় আর জোর করলোনা। কিছুটা সময় চুপ করে রইলো।
নীড় : মাথাব্যথা করবে যে এতো কান্না করলে। আর কান্না করতে হবেনা। চাইলে আমাকে কিলঘুষি মারতে পারো। খামছি কামড়ও দিতে পারো।
মেরিন : ইউ আর ভেরি ব্যাড।
নীড় : আই নো দ্যাট।
মেরিন : আই হেইট ইউ।
নীড় : আই নো।
এবার মেরিন জোরে কান্না করে দিলো। নীড় মেরিনের মুখটা দ্রুত তুলল।
নীড় : আরে আরে আরে… সরি সরি। আমি মজা করছিলাম।
মেরিন নীড়ের বুকে কিলঘুষি দিতে লাগলো। নীড় মুচকি হাসলো। মেরিন চুপটি করে বসলো। হিচকি উঠে গিয়েছে। নীড় ওর জন্য জুস নিয়ে ওর পাশেই বসলো। ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
নীড় : জুসটা খেয়ে নাও। এই কটা দিনে কি অবস্থা করেছো নিজের। শুকিয়ে গিয়েছো। জুসটা খেয়ে নাও…
মেরিন চুপ করে আছে। নীড় ওকে জুসটা খাইয়ে দিলো। এরপর ওর গালে চুমু দিলো।
নীড় : আই লাভ ইউ…
মেরিনের চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিলো।
নীড় : চলো তুমি আর আমি দূরে কোথাও চলে যাই। সবার থেকে দূরে। কেউ আমাদের আর খুজে পাবেনা। কেউ বিরক্ত করবেনা। আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হবে। আমাদের বেবিটা হয়ে গেলে তিনজন মিলে সারা পৃথিবী ঘুরবো। কখনো নর্থ পোল কখনো সাউথ পোল। কখনো ইস্টে আবার কখনো ওয়েস্টে। কখনো মরুভূমিতে কখনো বরফে। কখনো সমুদ্রে। কখনো পাহাড়ে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই। সফরসঙ্গী হবে আমার?
মেরিন : প্রানকে ছারা থাকতে পারবোনা।
নীড় : তাহলে প্রানকেও সাথে নিয়ে যাবো।
মেরিন : প্রানকে সাথে নিয়ে গেলে অতীতকে সাথে নিয়ে যাওয়া হবে।
নীড় : তাহলে কি করা যায়!
মেরিন নীড়ের দিকে তাকালো। ওর চোখে চোখ রাখলো।
মেরিন : ছোটথেকেই আমি একা থেকেছি নীড়। দেশে থেকেও একাই ছিলাম প্রায়। আমার বন্ধু ছিলোনা। বাবার সাথে মতের অমিল থাকায় দূরেদূরেই থাকতাম। আপুর সাথেথ ক্লোজ ছিলাম। কিন্তু আপুর অত্যন্ত ভালোগিরি আমার কাটার মতো লাগতো। একজনের ওপর ভরসা করেছিলাম। সেই একজনই ভরসা ভেঙেছে। তাই আর আমি একজনের ওপর ভরসা করে আর বাঁচতে চাইনা। সবার সাথে থাকতে চাই।
নীড় : এখনো সন্দেহ আছে আমার ওপর?
মেরিন : ভাগ্যের ওপর আছে। ভাগ্য এর আগেও একবার তোমাকে দূরে করেছে। তবে মাঝেমধ্যে ট্যুর দিবো । আবার আমার মাথা খারাপ হলে আমি হারিয়েও যেতে পারি।
নীড় মেরিনের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।
নীড় : আমি হারাতে দিবোইনা।
নীড় মেরিনের কপালে চুমু দিলো।
.
সকালে…
নীড় : রেডি হয়ে নিন।
মেরিন : কেনো?
নীড় : যেহেতু আপনি সংসার করতে চান সেহেতু ফিরতে তো হবে চৌধুরী বাড়িতে। আমরা পৌছাতে পৌছাতে ভাইয়া বউ আর ছেলে নিয়ে পৌছাবে। মামনি ওদের তিনজনকে বরন করে নিবে। আমরা পৌছানোক পর মামনি এবং ভাবি আমাদে বরন করে নিবে।
মেরিন : লিও ত্যাগ করলো নিজের সম্রাজ্য।
নীড় : বউ এমন একটি প্রানী যাকে সকল মাখলুকাত ভয় পায়।
মেরিন চোখ ছোটছোট করে ওর দিকে তাকালো।
নীড় : তুমি কতোকিছু , কতো ড্রামা যে মিস করেছো জানোনা। মামনি ভাবির কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ভাবিও আদর্শবাদী সিরিয়ালের বউমাদের ন্যায় আচরণ করেছে। ভাইয়া তোমার মাবাবার কাছেও ক্ষমা চেয়েছে। সেটাতেও মেলোড্রামা। মিস করে ফেললে।
মেরিন : আই হেইট ড্রামা।
নীড় : তোমার ক্ষেত্রেও একটি মেলোড্রামা হতে চলেছে।
মেরিন : আমি শমসের খানকে ক্ষমা করতে পারবোনা।
নীড় : আমি তো তার নিলামই না।
মেরিন : একদম নাটক করবেনা। সে আমার বিশ্বাস ভেঙেছে। ধোকা দিয়েছে।
নীড় : মারাত্মক অন্যায় করেছে। কিন্তু কি জানো… নিয়তি তাকে দিয়ে এই কাজটা করিয়েছে। সে যদি এই কাজটা না করতো কবির ফয়সাল খান কখনো আলোতে আসতোনা। সারাজীবন ওই অন্ধকার জগতে রয়ে যেতো। শ্বশুরড্যাড নিজেরে বাবাকে অনেক কথা শুনিয়েছে।
মেরিন : একদম আমার মাথা গরম করার চেষ্টা করবেনা বলে দিচ্ছিছ।
নীড় : আচ্ছা না করলাম। চলো রেডি হও। এই লালশাড়ি তোমাকে তোমার শ্বাশুরি দিয়েছে। এই রুবির গহনাসেট তোমার ভাসুরের তরফ থেকে। এই নূপুর তোমার শ্বশুরে তরফ থেকে। এই লাল চুড়ি , লাল লিপস্টিক আলতা , জুতু এবং লালটিপ তোমার জা+বোনের তরফ থেকে। তবে নীলিমা চৌধুরীর একটি শর্ত আছে। বাড়িতে প্রবেশ করার সময় তোমার হাতে গান থাকবে। সেদিন নাকি ওই লুকে তোমাকে ব্যাপক লেগেছে। সেটার বর্ণনাই বুড়োবুড়ি করছিলো। তোমার ভাসুর এবং জা বলল তারাও দেখতে চায়। তাই এই আয়োজন।
মেরিন ফিক করে হেসে দিলো।।
নীড় : আমি সত্যি কথাই বলছি।
মেরিন : শ্বশুরবাড়ির সবার তরফ থেকে গিফ্ট আছে। তুমি দিবেনা?
নীড় : আমি কি শ্বশুরবাড়ির নাকি? আমি তো তোমার।
মেরিন : তুমি আমাকে কিছু গিফ্ট কেনো করবে? তুমি তো বর্ষাকে গিফ্ট দেবে।
নীড় : বর্ষা এখন মরে ভূত।
মেরিন : ভূতকেই বিয়ে করো তুমি।
বলেই মেরিন সব নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। রেডি হয়ে বের হলো। কিন্তু নীড় নেই।
মেরিন : কোথায় গেলো! নী…
ডাক দেয়ার আগেই নীড় উপস্থিত হলো। পাঞ্জাবি পরেছে। খুব সুন্দর পাঞ্জাবিটা। বুকের দিকে ওদের দুজনের নাম খুব অদ্ভুত কিন্তু সুন্দর করে লেখা।
মেরিন : নিজের জন্য নতুন পাঞ্জাবি নিয়েছো। অথচ আমার গিফ্ট নেই।
নীড় মুচকি হেসে ওর মাথায় ঘোমটা দিয়ে দিলো। এরপর বসার ঘরে নিয়ে গেলো। সেখানে কাজী সাহেব বসে আছেন। আকাশ-ইমান আছে। সাথে ওদের দুজনের বউ। উভয় জুটির হাতে একটি করে মালা। লাল গোলাপের মালা। মেরিন নীড়ের দিকে তাকালো।
নীড় : এটাই আমার গিফ্ট।
নীড় মেরিনকে বসালো।
নীড় : যে বিয়ের বন্ধনে আমরা আবদ্ধ সেটা ধোকার বিয়ে ছিলো। আজকে না হয় মন থেকেই করি বিয়ে। কাজী সাহেব বিয়ে পরানোর কাজ শুরু করুন।
কাজী সাহেব নিজের কাজ শুরু করলেন। মেরিনের চোখে পানি ভাসছে। কবুল বলার সময় চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো। বিয়ে সম্পুর্ন হলো। এরপর মালাবদল হলো। নীড় মেরিনের হাতে আংটি পরিয়ে দিলো।
.
নীড় মেরিনকে নিয়ে বাসায় পৌছালো। প্রনয়-নীলা-প্রান্তিক ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। মেরিনকে দেখেই প্রান্তিক মামমাম বলে ছুটে গেলো।
প্রান্তিক : তোমাকে আমি এতোএতো মিস করেছি।
মেরিন : মামমামও। গিফ্ট আছে একটা স্পেশাল। ভেতরে চলো দিবো।
নীলা এসে মেরিনকে জরিয়ে ধরলো।
নীলা : আমার প্রিয় বোনটা।
প্রনয় : মাফিয়া কিং লিও কিনা শেষে শালিকার কাছে মাত খেয়ে গেলো!
নীলা-নীড় হেসে দিলো।
প্রনয় : অবশ্য সুন্দরী শালিকার কাছে হারতে আপত্তি নেই।
প্রান্তিক : মাফিয়া কি? লিও কি? লিও তো মেসিকে বলে।
প্রনয় : ওর কথাই বলছি। চলো এবার ভেতরে যাওয়া যাক।
ওরা ভেতরের দিকে গেলো। নীলিমা প্রনয়-নীলা-প্রান্তিককে বরণ করে নিলো। এরপর পালা নীড়-মেরিনকে বরণ করার।
নীলিমা : আমার শর্তটা…
মেরিন দুই হাতে দুইটা গান নিলো।
মেরিন : হাত দুইটা। তাই এর বেশি নেয়া সম্ভব না।
সবাই হেসে দিলো। নীলিমা-নীলা একেএকে মেরিনকে বরণ করে নিলো। নীড়-মেরিন ভেতরে ঢুকলো। সকলে মেরিনের কাছে এলো। কিন্তু শমসের খান সাহস পেলোনা।
কবির : মামনি…
মেরিন : আমি কেবল শ্বশুরবাবার মামনি।
কবির হেসে দিলো।
কবির : তুমি আসলেই আমার মামনি। আমার মাও এমন রাগী , এমন জেদী ছিলো। আর এমন সু্ন্দরীও।
মেরিন : কি বলতে আসা হয়েছে পুনরায়?
কবির : চালাকও আমার মায়ের মতো। দাদুভাই অত্যন্ত অনুতপ্ত।
মেরিন : হ্যা হ্যা বুঝেছি। যে ভুল করেছে সে তো কিছু বলছেনা।
কবির : বয়স্ক মানুুষ ক্ষমা চাইলে কি তোমার ভালো লাগবে মা?
নীড় : মেরিনকে অমন পরিস্থিতিতে ফেলার প্রয়োজনই নেই।
নীড় শমসের খানকে নিয়ে এসেছে। দাদুনাতির মধ্যকার বরফ গলে গেলো।
.
কয়েকমাস পর…
মেরিনের লিভারপেইন উঠেছে। ওকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মেরিনের যন্ত্রণায় নীড়ের চোখেও পানি চলে এলো। ডেলিভারির সম্পুর্ন সময় নীড় মেরিনের পাশে রইলো। ওর হাত ধরে রাখলো। অবশেষে মেরিন ছেলে হলো। সবার আগে মেরিনের কোলে দিলো। নীড় প্রথমে মেরিনের কপালে চুমু দিলো এরপর ছেলে।
নীড় : আই লাভ ইউ।
মেরিন : আই লাভ ইউ টু…
সবাই : উই অলসো লাভ ইউ… বাবুকে দেখার অধিকার আমাদেরও আছে তো।
এভাবে খান-চৌধুরী , কবির-নিহাল , প্রনয়-নীলা এবং নীড়-মেরিনের প্রতিশোধ সারাজীবনের জন্য প্রনয়ে পরিনত হলো।
.
।।।সমাপ্ত।।।