আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি পর্ব-০৩

0
1067

#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩
লাগেজ পেতে নিঝুমের বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। লাগেজ নিয়ে এবার সে কাউকে খুঁজছে। তখন একটা মেয়েকে চোখে পড়লো। মেয়েটির হাতে একটা বোর্ড তাতে লেখা “JHUM” নিঝুমের মনে পড়লো আলফি তাকে ‘ঝুম’ বলে ডাকে। এগিয়ে গেলো মেয়েটির দিকে। গিয়ে জিজ্ঞেসা করলো,
“আর ইউ টিনা?”

“ঝুম? রাইট?”

“ইয়াহ।”

মেয়েটি নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“নাইস টু মিট ইউ, হানি। লেটস গো।”

তারপর মেয়েটির সাথে নিঝুম গাড়িতে উঠে বসে। ভীনদেশে প্রথমদিন তার। কমলা ও হলুদ রঙের পাতার ম্যাপল ট্রি ও অন্যান্য রঙীন পাতার গাছ রাস্তার ধারে সারি সারি দৃশ্যমান। কানাডাকে ম্যাপল পাতার দেশ বলা হয়। পাতার রং কমলা, হলুদ ও লাল বর্ণের হওয়ার কারণ পাতায় ক্লোরফিলের পরিমাণ হ্রাস পায়। নিঝুম গাড়ির কাঁচ নামিয়ে হালকা করে মা*থা বের করে সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো। শীতল বাতাসে বারবার তার গা কাঁটা কাঁটা দিয়ে উঠছে। ততোই সে শাড়ির আঁচল জড়িয়ে নিচ্ছে। সামনে বসা টিনা জানতে চাইল,

“তুমি কী খাবে?”

হঠাৎ বাংলা কথা শুনে নিঝুম চমকে উঠলো। নিঝুম পালটা প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“তুমি বাংলা বলতে পারো?”

“ইয়াহ। আমার মা বাঙালি। আই মিন, মাই মম এন্ড আলফি’স ড্যাড আর সিবিলিংস। মাই গ্রান্ডপ্যারেন্টস আর বাংলাদেশী এন্ড হ্যাভ ইউএস সিটিজেনশীপ। দেন মাই মম এন্ড আঙ্কেল ম্যারেড দেয়ার কানাডিয়ান পার্টনারস।”

নিঝুম অবাক হয়ে শুনলো। সে জানতো না আলফি যাকে ফ্রেন্ড বলেছে সে আসলে আলফির কাজিন। নিঝুম বলল,
“তুমি কখোনো বাংলাদেশে গিয়েছ?”

“নট ইয়েট। বাট আই ওয়ান্ট টু গো দেয়ার।”

নিঝুম আর কিছু বলল না। চুপচাপ জানালা দিয়ে ছুটে চলা পথ দেখছে। কিছুক্ষণ পর ওরা একটা বাড়ির সামনে এসে থামলো। নিঝুম দেখলো বাড়িটা বেশ সুন্দর। দোচালা কাঠের ছাদের বাংলো বাড়ি। সামনে খুব সুন্দর সৌখিন বাগান। টিনা গাড়ি থেকে নেমে নিঝুমকে নামতে বলল। নিঝুম গাড়ি থেকে নামলো। ড্রাইভার নিঝুমের লাগেজটা বের করে দিলো। ওরা বাড়ির গেইট দিয়ে গার্ডেনে প্রবেশ করতেই বাড়ির ভেতর থেকে দুজন পুরুষ-মহিলা বেরিয়ে এলো। টিনা বলল,
“নিঝুম, আমার মম-ড্যাড।”

নিঝুম হালকা হেসে সালাম দিলো। বিনিময়ে উনারাও সালাম দিলো। তারপর মহিলাটি এগিয়ে এসে হাসিমুখে নিঝুমের হাত ধরে বলল,
“মা শা আল্লাহ, তুমি তো দেখতে খুব মিষ্টি।”

নিঝুম লাজুক হাসলো। মহিলাটি ফের বলল,
“আমাদের আলফির পছন্দ সবসময় সুন্দর। যেমনটা তুমি।”

নিঝুম লজ্জায় দৃষ্টি নিচু করতেই নিজের গায়ের পোষাক দেখে মনে পড়লো, উনারা ও-কে এই বেশে দেখেও কিছু মনে করছে না? আলফি কি ওদের বলেনি যে ও বিয়ে করে পালিয়েছে! নিজের মনেই কেমন সে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তখন পুরুষটি মানে টিনার বাবা বললে,
“ইউ মাস্ট বি টায়ার্ড, ডিয়ার। কাম ইনসাইড এন্ড গো ফর এ রেস্ট।”

তারপর ওরা নিঝুমকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। টিনার মা মিসেস মুমতাহিনা একটা রুম খুলে দিলেন। তারপর নিঝুমকে ফ্রেশ হতে বলে চলে গেলেন। নিঝুম রুমটার চারিপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো রুমটা। ছোটো ও রুচিসম্মত ছিমছাম একটা গেস্টরুম। তার পছন্দ হয়েছে খুব। কিন্তু সে তো আগামীকাল সকালেই এখান থেকে চলে যাবে। নিঝুম এরপর তার লাগেজটা খুলল। দীর্ঘক্ষণ বেনারসি পরে থাকাতে তার অস্বস্তিও হচ্ছিল প্রচুর। তাই সময় নিয়ে হট শাওয়ার নিলো। এরইমধ্যে রুমের দরজায় নক সে শুনেছে। হয়তো ব্রেকফাস্টের জন্য ডাকতে এসেছিল। ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো ওরা তিনজন আগে থেকেই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসা। টিনা ও টিনার বাবা অলরেডি নাস্তা শুরুও করে দিয়েছে। তবে টিনার মা অপেক্ষা করছেন। মিসেস মুমতাহিনা নিঝুমকে দেখে হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাদের সাথে এসে বসতে বললেন। তারপর নিঝুমের প্লেটে দুই পিচ এইগ স্যান্ডুইচ ও ফ্রুট তুলে দিলেন। নিঝুমও ধন্যবাদ জানিয়ে খেতে শুরু করে। টিনা বলল,

“সরি, একচুয়েলি আমি ও ড্যাড অফিসে যাব। তাই তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলাম না। ডোন্ট মাইন্ড।”

“ইটস ওকে। আমি শাওয়ার নিতে একটু লেট করে ফেলেছি।”

নিঝুম খেতে খেতে খেয়াল করলো৷ টিনা ও মিসেস মুমতাহিনা তার সাথে টুকটাক বাংলা বললেও নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতেই কথা বলছে। এবং খুব দ্রুত। নিঝুম আইএলটিএসে 6.5 পেয়েছে।
নাস্তা শেষ করে টিনা ও তার বাবা বেরিয়ে গেলো। মিসেম মুমতাহিনা বললেন,
“তুমি ব্রেকফাস্ট শেষ করে রেস্ট নাও। আগামীকাল তো তোমাকে আবার অটোয়াতে যেতে হবে।”

নিঝুম হালকা হেসে সায় দিয়ে নাস্তা শেষ করলো।

নিঝুম রুমে এসে ফেসবুকে নির্ঝরকে নক করে তার পৌঁছানোর খবর জানালো। এখনও সে এই দেশের নাম্বার নেয়নি। তারপর নির্ঝরের থেকে জানতে পারলো, জায়ান তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। আর মিস্টার নয়নও তাকে খুঁজছে। নিঝুম হতাশ হলো। তার এখন বিশ্রাম চাই। ফোন চার্জে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
অনেকক্ষণ ঘুমালো সে। ঘুম ভাঙলো দরজায় নকের শব্দে। ঘুমঘুম চোখে এলোমেলো পায়ে দরজা খুলল সে। দরজা খুলতেই মিসেস মুমতাহিনা হাসিমুখে বললেন,

“ফ্রেশ হয়ে এসো, একসাথে লাঞ্চ করব।”

নিঝুম সময় দেখলো। বেশ বেলা হয়ে গেছে। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে গেলো। মিসেস মুমতাহিনা খাবার বাড়তে বাড়তে বললেন,
“আলফি বলেছে তুমি নাকি বিয়ে করে পালিয়ে এসেছ।”

চমকে তাকালো নিঝুম। তাহলে উনারা জানে। নিঝুম ইতস্তত করে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। মিসেস মুমতাহিনা আবার শুধালেন,
“তোমার হাজবেন্ড শুনেছি অনেক ডে*ঞ্জারাস লোক। তোমাকে খুঁজে বের করে ফেলে যদি?”

এবার নিঝুম ভয় পেলো। সত্যি যদি জায়ান তাকে খুঁজে বের করে ফেলে। কিন্তু পরক্ষণেই ডিভোর্স পেপারের কথা মনে পড়তেই বলে,
“আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে এসেছি।”

মিসেস মুমতাহিনা এবার সিরিয়ার নজরে চেয়ে শুধালেন,
“তোমার হাজবেন্ড কি তোমাকে ডিভোর্সের রাইট দিয়েছে?”

নিঝুম সন্দিহান হলো৷ তার বড়ো আম্মু তাকে বলেছে, সে চাইলে স্বেচ্ছায় ডিভোর্স গ্রহণ করতে পারে। তাইতো নির্ঝর ডিভোর্স পেপার তৈরি করে এনে দিলে সে সাইন করে এসেছে।
“ডিভোর্সের রাইট তো সবার থাকে।”

“হাজবেন্ড যদি দেয় তবে থাকে৷ তোমার কাবিননামাতে কি সেটা ছিল? দেখেছ তুমি?”

নিঝুম পলক ঝাপটালো৷ যার মানে সে দেখেনি। মিসেস মুমতাহিনা আবার বললেন,
“যদি না দিয়ে থাকে তবে তুমি স্বেচ্ছায় ডিভোর্স গ্রহণ করতে পারবে না। তোমার হাজবেন্ড তোমাকে যেকোনো সময় খুঁজে পেলে তোমার উপর তার রাইট এপ্লাই করতে পারবে। মানে তোমাকে তার সাথে নিয়ে যেতে পারবে।”

নিঝুমের এবার খুব ভয় করছে। সে দ্রুত খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে রুমে যায়। তারপে মোবাইলটা নিয়ে নির্ঝরকে এই বিষয়ে মেসেজে জানায়। কিন্তু নির্ঝর এখন নেটে নেই। বাংলাদেশে এখন রাত ২টার বেশি বাজে। নেটে না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিঝুম চিন্তায় স্থির থাকতে পারছে না। জায়ানকে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়ে সে খুব ফুরফুরে মেজাজে নতুনভাবে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন তার মনের সেই ফুরফুরে ভাব গায়েব। যদি জায়ান তার খোঁজ জানতে পারে? আজকের দিনটা কোনোমতে কাটিয়ে সে দ্রুত অটোয়াতে যেতে চায়। জায়ানের পৌঁছ থেকে আরও দূরে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,