আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি পর্ব-১৬

0
627

#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
সন্ধ্যায় মিস্টার নয়ন বাড়িতে এসে নির্ঝরকে গলা ছেড়ে ডাকলেন। নির্ঝর সবেই অফিস থেকে ফিরেছে। শার্ট-প্যান্ট বদলে রেস্ট করছিল তখনি বাবার ডাকে নিচে নামে। মিস্টার নয়নের চোখ-মুখে ক্রোধান্বিত ভাব। নির্ঝর ড্রয়িংরুমে গিয়ে দাঁড়ালে মিস্টার নয়ন বলেন,

“তুমি কানাডায় কাকে টাকা পাঠিয়েছ? তাও এতো বড়ো এমাউন্ট! তুমি জানো না, ব্যবসায় এমনিতেই মন্দা অবস্থা।”

নির্ঝর ডোন্ট কেয়ার ভাবে বলল,
“যার টাকা তাকে।”

“কাকে?”

“কেন? তুমি জানো না? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি বুঝে গিয়েছে এতক্ষণে।”

“নিঝুম?”

“হ্যাঁ। আর এই টাকা ওরই তো। চাচ্চুর বান্দরবানের কটেজ ও রিসোর্টের সব টাকা তো তোমার কাছেই আসে। বিশ বছর হলে ওই কটেজ ও রিসোর্টের মালিক নিঝুম হবে। তাহলে ওর টাকা ও নিতে পারবে না?”

“তুমি কিন্তু…”

মিস্টার নয়নকে কথার মাঝে থামিয়ে নির্ঝর আবার বলে,
“প্লিজ বাবা, এসব নিয়ে তর্কে যেও না। সামনের মাসেই নিঝুমের বিশ বছর হবে। তারপর ওর সাথে বুঝে নিও।”

এই বলে নির্ঝর চলে যায়। রয়ে যায় হতভম্ব নয়ন চৌধুরী।

——–
গাড়ি এসে একটা নাইট ক্লাবের সামনে থামলো। নিঝুম গাড়ির জানালা দিয়ে দেখলো জায়গাটা। হঠাৎ আলফি তাকে এখানে কেন এনেছে সেটাই বুঝতে পারছে না। ভীষণ ভয় করছে তার। কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে আনেনি তো? কিন্তু আলফিকে সে একটু হলেও বিশ্বাস করে।
গাড়ি পার্ক করে আলফি গাড়ি থেকে নামলো। তারপর নিঝুমের সাইডের দরজা খুলে নামতে বলল। গাড়ি থেকে নেমে দুজনে নাইট ক্লাবে প্রবেশ করে।
নাইট ক্লাবের ভেতরটা কিছুটা অন্ধকার ও বিভিন্ন রঙের আলো জ্ব*লছে। নিঝুম শক্ত করে আলফির হাত চেপে ধরে বলে,
“তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছ?”

“জানতে পারবে।”

ওরা গিয়ে একটা সোফায় বসলো। তখন শাহরিয়ার সেখানে আসলো৷ বলল,
“স্যার, সব এরেঞ্জমেন্ট ডান।”

“ওকে৷ একটা লেমন সোডা ও একটা রেড ও*য়াই*ন অর্ডার করো।”

তারপর শাহরিয়ার ওয়েটারকে ডেকে অর্ডার দিয়ে পাশের সোফায় বসলো। নিঝুম আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছে। মেয়েদের প্রায় সবার পরনে হাঁটুর উপরে, কাঁধ খোলা ড্রেস। যদিও এটা ওদের সংস্কৃতিতে নরমাল। কিছুক্ষণ পরই লক্ষ করলো একটা রেড ঝিকিমিকি লং কাঁধ খোলা গাউন পরিহিত মেয়ে হাতে শ্যা*ম্পে-নের গ্লাস নিয়ে হাসি মুখে তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আলফি মেয়েটাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়ালে মেয়েটা সেটা আগ্রাহ্য করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইলে আলফি বাঁধা দেয়। বলে,

“সরি ক্যামেলিয়া, আই কান্ট গো উইথ ইউ।”

ক্যামেলিয়া সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়।
“হোয়াই?”

“আই হ্যাভ সামওয়ান উইথ মি।”

বলেই আলফি নিঝুমকে দেখালো৷ সাথে সাথে নিঝুম অপ্রস্তুত হয়ে হাসলো। ক্যামেলিয়া নিঝুমকে পা থেকে মা’থা পর্যন্ত একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে স্ক্যান করে আলফিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“হু ইজ শি?”

আলফি হয়তোবা এই প্রশ্নটারই অপেক্ষায় ছিল। সে তৎক্ষণাৎ নিঝুমের হাত ধরে নিজের কাছে টেনে এনে একাপাশে কাঁধ জড়িয়ে বলে,
“মিট মাই ওয়াইফ নিঝুম!”

হকচকিয়ে আলফির দিকে তাকালো নিঝুম। আলফিও ওর দিকে চেয়ে মুচকি হেসে ফের ক্যামিলিয়া হতবাক হওয়া মুখের দিকে ফিরে বলে,
“উপস! সরি! শি ইজ মিসেস জায়ান আহমেদ।”

‘মিসেস জায়ান আহমেদ’ সম্বোধন শুনে নিঝুমের হতচকিত মুখশ্রীতে সন্দেহের আভাস ফুটে উঠলো। সে কিছু বলবে তার আগেই ক্যামেলিয়া অবিশ্বাসের সুরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“শি ইজ ইউর ওয়াইফ, জায়ান? বাট হাউ কুড দ্যাট বি পসিবল? আই নেভার হেয়ার্ড এনি নিউজ এবাউট ইউর ম্যারেজ।”

“বিকজ মাই ফেস ইজ স্টিল সিক্রেট টু এভরিওয়ান। এন্ড আই অ্যাম নট অ্যা মিডিয়া পার্সন।”

আলফির জবাব শুনে ক্যামেলিয়া কৃত্রিম হেসে নিঝুম ও আলফিকে শুভ কামনা জানালো। এদিকে নিঝুম সব শুনে ওর মনে হতে থাকে, আলফি ও-কে ধোঁকা দিয়েছে। নিজের পরিচয় লুকিয়ে এতোদিন এসব করছে। চোখের কোণে অশ্রুরা ভীড় জমিয়েছে খনিকেই। টুপ করে অবাধ্য অশ্রুধারা তার গালে গড়িয়ে পড়লো। সে দ্রুত তা আড়াল করতে আলফির হাত নিজের কাঁধ থেকে ছাড়িয়ে ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে ক্লাব থেকে। আলফি তা দেখে মুচকি হেসে ক্যামেলিয়াকে বলে,

“একচুয়েলি শি ইজ নট ইউসড টু দিস টাইপ অফ এনভায়রনমেন্ট।”

তারপর নিজেও নিঝুমের পিছু যায়। ক্যামেলিয়া ধপ করে সোফায় বসে পড়ে হাতের শ্যা-ম্পে*নের গ্লাসটা এক নিঃশ্বাসে শেষ করে। তারপর একটা ওয়েটারকে ট্রে ভর্তি করে ড্রিং*কস নিয়ে যেতে দেখে থামায়। তারপর তাকে সবগুলো ড্রিং*কসের গ্লাস রাখতে বলে। ওয়েটার রাখতেই ক্যামেলিয়া এক নিঃশ্বাসে সবগুলো সাবাড় করতে থাকে। পাশের সোফায় বসে শাহরিয়ার মুচকি হাসছে। ওয়েটারকে ইশারায় চলে যেতে বলে।

নাইট ক্লাবের বাহিরে এসে নিঝুম বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রুর দরিয়া বইছে। মনের ভেতর অন্যরকম যন্ত্রণা হচ্ছে তার। নিজেকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বোকা মনে হচ্ছে। একটা মানুষের সাথে এতোদিনের পরিচয়, এক বাড়িতে দেড় মাস ধরে থাকলো, মানুষটা তাকে অবলিলায় নিজের বাবা-মায়ের সাথে পরিচয় করালো। তারপরও সে বুঝতে পারলো না? নিজের এই বোকামির জন্য নিজর দুই গা*লে নিজেরই চ-*ড় মা/র*তে ইচ্ছে করছে। অতঃপর বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে চোখ মুছে। ঘোলা দৃষ্টিতে একদিকে যেতে চাইলে হাতে টান অনুভব করে। তৎক্ষনাৎ রাগের পারদ আকাশ ছুঁয়। ঘুরে সাথে সাথে হাত ধরা ব্যাক্তিটিকে থা*প্প-র মা-র’তে চালে ব্যাক্তিটি হাত ধরে ফেলে। উলটো টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে কপাল থেকে গাল বেয়ে থুতনিতে আঙুল ঠেকিয়ে বলে,

“এতো রাগ? রাগলে তোমাকে চেরি টমেটোর মতো লাগে, ঝুম সুইটহার্ট!”

নিঝুম নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। লোকটার এই কথাতে তার রাগ আরও বেড়ে যাচ্ছে। অন্য সময় হলে হয়তো সে লজ্জা পেতো, কিন্তু নিজের সাথে হওয়া ধোঁ*কার জন্য রাগ হচ্ছে। আলফি চট করে নিঝুমের বাম গা*লে গভীর ভাবে ঠোঁ*ট ছুঁইয়ে দেয়। পাবলিক প্লেসে আকস্মিক কান্ডে নিঝুম হতবুদ্ধির মতো মূর্তিমন্ত হয়ে যায়। আলফি হালকা হেসে বলে,

“সেদিন তোমার ডান গা*লে চু*মু দিয়েছিলাম, আজ বাম গা*লে। দুই গা*লেই ইকুয়েল ইকুয়েল।”

তারপর নিঝুমের হাত টেনে আবার নাইট ক্লাবের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। নিঝুম যেতে চাইছে না বলে বাঁধা দিচ্ছে কিন্তু আলফি সেসবের তোয়াক্কাও করছে না।

ক্যামেলিয়া এখন আর নিজের হুঁশে নেই। মা*তাল অবস্থায় বিড়বিড় করছে৷ তারপর আলফি ও নিঝুমকে আসতে দেখে উঠে ছুটে যায় সেখানে। আলফির বুকে আ*ছড়ে পড়তে চাইলে শাহরিয়ার ধরে ফেলে। ক্যামেলিয়া কাঁদছে খুব। কাঁদতে কাঁদতে বলছে,

“ইউ কান্ট ডু দিস টু মি, জায়ান। আই লাভ ইউ। ইউ নো, আই লাভ ইউ সো মাচ। এন্ড এন্ড…”

বলতে বলতে হাঁপাচ্ছে ক্যামেলিয়া। আলফি শাহরিয়ারকে ইশারা করলে শাহরিয়ার ও-কে ধরে বসায়। তারপর ক্যামেলিয়া বলতে থাকে…..

চলবে ইন শা আল্লাহ,

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন৷ কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।