#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
ক্যামেলিয়ার মুখ নিঃসৃত প্রতিটি শব্দ ভিডিও সহ রেকর্ড হচ্ছে ক্যামেরায়। নিঝুম অবাক ও হতভম্বের মতো ক্যামেলিয়ার স্বীকারোক্তি শুনছে। ক্যামেলিয়া যে সেদিন জায়ানের ড্রিংকসে কিছু মিশিয়েছিল, তারপর রুমে নিয়ে নিজেই জায়ানের শার্ট খুলে শু*ইয়ে রাখে৷ তারপর সব কিছু এলোমেলো করে নিজেকেও বেড কভারে পেঁচিয়ে পাশে শু*য়ে পড়ে। সব স্বিকার করে ক্যামেলিয়া৷ নিঝুম প্রতিটা সত্য শুনে তা*জ্জবের মতো নে*শায় বুদ হওয়া ক্যামেলিয়াকে দেখছে৷ মেয়েরা চাইলে কাউকে ধ্বং*স করতে সবকিছু করতে পারে, এটা সে শুনেছিল৷ কিন্তু আজ সেটার চাক্ষুষ প্রমাণও পেয়ে গেলো। ক্যামেলিয়া সব বলা শেষে হুট করে আলফির গায়ে হা*মলে পড়ে! বলে,
“প্লিজ জায়ান, লা’ভ মি৷ লিভ হার প্লিজ৷ আই লাভ ইউ, বেব! ইউ ডোন্ট নো হাউ মাচ আই লাভ ইউ। প্লিজ গিভ মি ওয়ান চান্স।”
ক্যামেলিয়া উ*ন্মা*দের মতো করছে। যদিও নে*শাগ্র-স্ত ও উ*ন্মা-দের মধ্যে পার্থক্য নেই! আলফি ও-কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বেশ জোড়েই ধা*ক্কা দেয়। তারপর শা*সিয়ে বলে,
“ডোন্ট মেস উইথ মি এগেইন। আই অ্যাম ওয়ার্নিং ইউ। টুমোরো ইউ উইল ফাইন্ড দ্যা কনসিকুয়েন্সেস…”
বলেই আলফি শাহরিয়ারকে ইশারায় ক্যামেলিয়াকে সামলাতে বলে নিঝুমের হাত ধরে নাইট ক্লাব থেকে বেরিয়ে গেলো। নিঝুম গাড়িতে উঠার আগ পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি। গাড়িতে উঠে আলফি যখন গাড়ি স্টার্ট দিলো তখন নিঝুম তার বান্ধবীর ফ্লাটের ঠিকানা বলল। অবাক হলো আলফি। বলল,
“সিরিয়াসলি! তুমি এখনও তোমার ফ্রেন্ডের ফ্লাটে যেতে চাচ্ছো? বাট হোয়াই? এখন তো সবকিছু তোমার সামনে পরিষ্কার। নাউ ইউ নো, আই অ্যাম ইউর হাসবেন্ড।”
নিঝুম ঘুরে তাকালো আলফির দিকে। শীতল চাহনি তার। অতঃপর বলল,
“তুমি আমাকে বি*ট্রে করেছ, আলফি! উপস সরি! মিস্টার জায়ান আহমেদ। শুরু থেকে সবকিছু আপনি জানতেন। আপনার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে, সেটাও জানতেন। কিন্তু আমাকে বলেননি। না বলে আমাকে ওই সিচুয়েশনে ফেলে দিয়েছিলেন। তারপর আমাকে বিয়ের রাতেই বিয়ে হওয়ার পরও পালিয়ে আসতে সহমত দিয়েছেন।”
আলফি নিঝুমের কথাগুলোর প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না। নিঝুমকে বলার সুযোগ দিলো। নিঝুম আরও বলছে,
“এসব করে কি পেয়েছেন বলতে পারেন? আপনি কি ভেবেছিলেন সত্যটা আমি জানতে পারব না? সারাজীবন আমার থেকে সত্যটা লুকিয়ে যাবেন? কিন্তু মিস্টার জায়ান, সত্যটা সামনে না আসা ছাড়া আর কোন উপায় তো ছিল না। আলফি সেঁজে আমার মন জয় করতে চেয়েছিলেন? আমি যতক্ষণ আপনার স্ত্রী ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি নিজেও আলফি হয়েও আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না। তাহলে কেন? আপনি আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছেন? এই দেড় মাস আমার মনের ওপর দিয়ে কি গিয়েছে আপনি জানেন?”
বলতে বলতে খুব কাঁদছে নিঝুম। বারবার চোখ মুছলেও অবাধ্য অশ্রুধারা বইছে তো বইছেই!
“আমি আলফিকে ভালোবাসতাম। ওর সাথে যখন থেকে অনলাইনে পরিচয় বাড়তে লাগলো, তখন থেকে ওর সাথে কথা বলতে আমার ভালো লাগতে শুরু করে। আমি অনুভব করতে থাকলাম, ওই ভিনদেশি মানুষটার মনেও বুঝি আমাকে নিয়ে কিছু আছে। তাই তার কাছে যাওয়ার জন্য আমি নতুন করে স্বপ্ন গোছাতে শুরু করলাম। সেই স্বপ্নকে আপনিই জায়ান রূপে এসে ভাঙলেন। তারপর আলফি রূপে আমাকে সাহস দিলেন। এসব কেন? আপনি তো তখনি আমাকে বলতে পারতেন, জায়ান আহমেদই আলফি। কেন এতোগুলো দিন এতো লুকোচুরি? নিজের পরিচয় লুকানোর কেন এতো প্রচেষ্টা?”
কথাগুলো বলা শেষ করে নিঝুম লম্বা করে শ্বাস নিচ্ছে। কান্নার তোড়ে কথাগুলো বলতে বারবার জড়িয়ে যাচ্ছিল। এখন সে হাঁপাচ্ছে। ওর অবস্থা দেখে আলফি পানির বোতল খুলে এগিয়ে দিলে নিঝুম ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো। আলফি শান্ত ভাবেই বোতলটা উঠালো। গাড়িতেও পানি পড়েছে। তারপর নিঝুমকে জোর করে টেনে এনে মুখের সামনে পানির বোতল সেধে বলল,
“যদি পানি না খাও তাহলে কিন্তু আমি এবার তোমার ঠোঁ*টে কি*স করব!”
ওই অবস্থায়ও হকচকায় নিঝুম। আলফি ওর দিকে মুখ এগুতে নিলে দ্রুত পানির বোতলটা নিয়ে পানি পান করে। তা দেখে বাঁকা হাসে আলফি। নিঝুম বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করছে। আলফি গাড়ি স্টার্ট করে বলল,
“সরি, আমি তোমাকে তোমার ফ্রেন্ডের ফ্লাটে যেতে পারমিশন দিব না।”
নিঝুম ফট করে চোখ খুলে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায়। তারপর তীক্ষ্ণ স্বরে বলে উঠে,
“আমি তোমার পারমিশন চাইনি।”
“চাওনি কিন্তু আমার পারমিশন ছাড়া আমার ওয়াইফ অন্য কারও প্লেসে গিয়ে উঠবে, সেটা আমি মানতে পারব না।”
“আলফি…দেখুন মিস্টার জায়ান, আপনি জোর করে বিয়ে তো করেছেন। কিন্তু জোর করে আমাকে নিজের সাথে রাখতে পারবেন না।”
“জায়ান জোর করলে সবই পারে। জোর করলে এতোদিন তুমি আমার সাথেই আপার ফ্লোরে থাকতে! তাই আমাকে জোর করতে বাধ্য করো না।”
নিঝুম মনে মনে ভীত হলেও প্রকাশ করলো না। সে ওই বাড়িতে যাবে না। ওই বাড়িতে এই লোকের সাথে একা থাকা মানে…. আর ভাবতে চাইলো না। লোকটা তাকে ধোঁ*কা দিয়েছে৷ তার বিশ্বাস ও সরলতার সুযোগ নিয়েছে। এতো সহজ না সব ভুলে যাওয়া। মনের ভেতর বারবার এতোদিন নিজের মনের সাথে করা জোর-যু*দ্ধ গুলো মন পড়ছে৷ সহজ ছিল না নিজেকে বুঝানো।
নিঝুম তাচ্ছিল্য করে বলল,
“আপনি আমার মনের অবস্থা বুঝতেই চাইছেন না। আমার মন তো স*স্তা আপনাে কাছে। আমার ফিলিংসের কোনো দাম নেই আপনার কাছে। হাহ্ থাকবে কী করে? আপনার উদ্দেশ্যই ছিল আমার মন নিয়ে খেলা! আমার হয়ে তো কেউ প্রতিবাদ করতে আসবে না। আপনার কাছে তো আমাকে বি*ক্রি করে দিয়েছে। আমি তো এখন আপনার কেনা দা*সী….”
নিঝুম কথাগুলো বলতে বলতেই গাড়ির স্পিড বাড়ালো আলফি। তারপর রাস্তা বদল করে অন্য রাস্তায় গেলো। গাড়ির স্পিডের কারণে নিঝুম খিঁচে বসে আছে। অন্ধকার হওয়ায় ও হাই স্পিড থাকায় বুঝতে পারছে না কোথায় যাচ্ছে। মিনিট দশেক পর নিঝুমের ফ্রেন্ডের ফ্লাটের বিল্ডিংয়ের সামন গাড়ি থামালো আলফি। সম্মুখে নিজের র*ক্তাভ দৃষ্টি ফেলে বলল,
“ভেবেছিলাম বাড়িতে গিয়ে শান্ত ভাবে তোমার সব কোশ্চেনের আনসার দিব। বাট নো! ইউ আর সো ইমপেশেন্ট! দেন গো। ডু হোয়াটেভার ইউ ওয়ান্ট৷ আই ওন্ট স্টপ ইউ।”
নিঝুম কিয়ৎক্ষণ আলফির মুুখের পাশের দিকে চেয়ে থাকলো। তারপর গাড়ি থেকে নামতে দরজা খুলতেই আলফি ওর হাত টেনে ধরলো। অতঃপর বলল,
“আমার ভালোবাসাতে তুমি এক আসক্তি। যার জন্য আমি সবরকমের রিস্ক নিতে রাজি। নিজেকে আড়াল করে হলেও আমি তোমাকেই চাই। তুমি আমার আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি।”
তারপর হাত ছেড়ে দিলো। রূঢ় স্বরে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলল। আঁৎকে উঠে নিঝুমের চোখে ফের অশ্রু কণারা ভীড় জমিয়ে তার কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করলো। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির ডিকি থেকে নিজের লাগেজ নামিয়ে পা বাড়ালো সামনের দিকে। যেতে যেতে একবার পিছু ঘুরে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো আলফির দিকে। আলফির চেহারা ও দৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। পূর্বের ন্যায় রূঢ়তায় ভরপুর। নিঝুম ফের সামনে ফিরলে গাড়ি স্টার্টের শব্দ শুনতে পায়। তৎক্ষনাৎ আবার পেছনে ঘুরলে দেখে আলফি গাড়ি ব্যাকে দিয়ে গাড়ি ঘুরাচ্ছে। গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যাওয়া পর্যন্ত নিঝুম সেদিকেই চেয়ে থাকলো। আলফির গাড়ি তার চোখের দৃষ্টিসীমার আড়াল হতেই চোখ মুছতে মুছতে বিল্ডিংয়ের ভেতরে প্রবেশ করলো।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন৷ কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।