#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
প্রিয়াদের ফ্লাটে গিয়ে নিঝুম গুমোট হয়ে বসে আছে। রাত বারোটার মতো বাজছে প্রায়৷ আসতে কেন এতো দেরি হলো সেটা নিয়েও প্রিয়া অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করেছে, কিন্তু সে কিছু বলেনি। রাত গভীর হতে গভীরতর হচ্ছে কিন্তু ঘুম নেই নিঝুমের চোখে। অন্ধকার রুমটিতে সে থাই লাগানো বন্ধ জানালার ধারে পর্দা সরিয়ে বসে আছে। আকাশে ফুটফুটে চাঁদ। মনের মাঝে একরাশ অশান্তি নিয়ে বসে আছে। যতোই মনকে বোঝাচ্ছে ওই লোকের কথা চিন্তা করবে না, ততই বেশি করে মনে পড়ছে।
রাত প্রায় ২টার দিকে পাকিস্তানি মেয়েটা নাম রেহাম, ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠে। সে নিঝুমকে জানালার ধারে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকতে দেখে উর্দুতে জিজ্ঞেসা করে,
“তুমি ঘুমাওনি? এখনও জেগে আছো যে।”
নিঝুম হালকা হাসার চেষ্টা করে ভাঙা ভাঙা উর্দু ও হিন্দি মিলিয়ে জবাব দেয়,
“এমনিতেই। ঘুম আসছে না।”
(বাংলাতে লেখা হলো)
নিঝুমের জবাব শুনে রেহাম এসে নিঝুমের সামনে বসে। তারপর ওর হাত ধরে মোলায়েম স্বরে বলে,
“আমি জানি তুমি আলফিকে ভালোবাসো। কিন্তু তুমি তো জানো, এটা ঠিক না। এজন্যই তুমি মনকে শক্ত করে সেখান থেকে চলে এসেছ। মনকে বোঝাতে কষ্ট হলেও কিছু তো করার নেই।”
রেহামের কথা শুনে নিঝুম নিরব হাসে। তারপর বলে,
“যদি কখোনো জানতে পারো, তোমার হাসবেন্ড তোমাকে নিজের সম্পূর্ণ পরিচয় না জানিয়ে বিয়ে করেছে। তাহলে তুমি কী করবে?”
রেহাম চিন্তিত হলো। কিছু একটা চিন্তা করে বলল,
“উম.. আমার কথা বলতে গেলে ডিপেন্ড করে সিচুয়েশনের উপর। আর সে নিজের কোন পরিচয় আড়াল করেছে সেটার উপর। যদি এমন বের হয় যে, সে আমাকে দেখিয়েছে সে খুব ভালো মানুষ, ভালো চরিত্রের মানুষ। কিন্তু বাস্তবে তা না। বিয়ের কিছুদিন পর জানতে পারলাম সে সম্পূর্ণ অপজিট চরিত্রের তাহলে অবশ্যই আমি তার থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবো। খোলা তালাকের নোটিশ পাঠাব। কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে তো এমন না। তুমি তো বিয়ের আগে থেকেই জানো, তোমার হাসবেন্ড মা*ফি-য়া, তারপর বললে তার নামে রে-প এলি-গেশনও আছে। আমি বলব, তোমার উচিত তোমার হাসবেন্ডের সাথে দেখা করা। কথা বলা। তারপর দুজনে মিলে ডিসিশন নাও।”
নিঝুম হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর বলল,
“জানো তার নামের ওই রে-প এ*লিগেশনটা মিথ্যা।”
“রিয়েলি? কীভাবে জানলে?”
“আলফি প্রমাণ দিয়েছে।”
“ওয়াও! আলফি দেখছি তোমাকে তোমার হাসবেন্ডের সাথে মিলাতে খুব আগ্রহী। এমনিতে ছেলেটা খুব ভালো। তোমার যেহেতু পসিবিলিটি নেই, তাহলে আমি ভাবছি আলফিকে জানাব, সে আমারও ক্রা-শ!”
রেহামের শেষের কথা শুনে নিঝুম চমকালো। বলল,
“আলফি তোমার ক্রা-শ?”
“হ্যাঁ৷ আমাদের ইউনিভার্সিটিতে মেয়েদের হার্টথ্রব যা বলে পাঁচ জন আছে। আলফি, অ্যালেক্স, বিবিএ ডিপার্টমেন্টের ৩য় ও ৪র্থ বর্ষের দুজন, আরেকজন ১ম বর্ষ কিন্তু কোন ডিপার্টমেন্ট জানিনা। সে তো আমার জুনিয়র। বিবিএ ডিপার্টমেন্টের ৩য় বর্ষের জন আমার ব্যাচমেট। যে কী না অ্যালেক্সের মতো স্বভাবের। আর ৪র্থ বর্ষের জন তার গার্লফ্রেন্ডের প্রতি খুব লয়াল। আর বাকি রইল আলফি। সে যতোটা রিজিড মেয়েদের প্রতি, আমরা ভাবতাম তারও হয়তো গার্লফ্রেন্ড আছে। অবশ্য ছিলও। তুমি! কিন্তু তোমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তো সে সিঙ্গেল।”
হুট করে নিঝুমের জেলাস ফিল হচ্ছে। রেহাম মেয়েটা অত্যাধিক সুন্দর। নিজেকে রেহামের সাথে তুলনা করলে রেহামকেই সুন্দরী বলা চলে। প্রাকৃতিক ভাবে ব্রাউনিশ সিল্কি চুল, চোখের মনিও ব্রাউন, ফর্সা গড়নের সুন্দর মুখশ্রী মেয়েটির। সেখানে সে রেহামের থেকে এক শেড ডার্ক। আলফি যদি তার আগে রেহামকে দেখতো তাহলে হয়তো রেহামকেই পছন্দ করতো। কিন্তু পরক্ষণেই নিঝুমের মনে হয়, ক্যামেলিয়াও কম সুন্দর না। আলফি যেই পরিবেশে বড়ো হয়েছে তার মধ্যেও আলফি তাকে ভালোবেসেছে। এটা ভাবনায় আসতেই তার মন ভালো হয়ে যায়। মুচকি হাসে সে।
নিঝুমকে মুচকি হাসতে দেখে রেহামও হেসে শুধায়,
“কী হলো? হঠাৎ খুশি খুশি লাগছে।”
“কিছু না। তুমি ঘুমাও। আমারও ঘুম আসছে।”
“আচ্ছা। ঘুমাও তবে।”
তারপর রেহাম ওয়াশরুমে গেলো, নিঝুমও শুয়ে পড়লো।
এদিকে আলফি এই ঠান্ডার মধ্যে ব্যালকনিতে হু*ই*স্কির বোতল নিয়ে বসে আছে। নিঝুম তার কথা না শুনে চলে গেল। এতে যেমন তার রাগ হচ্ছে তেমনি সবকিছু অসহ্য লাগছে। ভেবেছিল, নিজের ব্যাপারে মিথ্যা এলি*গেশনটা প্রুভ করেই সে নিঝুমকে বলবে। বলেছেও। কিন্তু নিঝুম বুঝলো না। হু*ইস্কির বোতলে শেষ চুমুক দিয়ে বোতলটা গার্ডেনে ছুঁড়ে ফেলল।
পরদিন মিডিয়াতে ক্যামেলিয়ার স্বীকারোক্তি ছড়িয়ে পড়ে। জায়ানের সম্পর্কে তিন বছর আগের ক্যামেলিয়ার ওই এ*লিগেশন মিথ্যা প্রমাণ হয়। জায়ান ক্যামেলিয়ার বিরুদ্ধে মা*নহানির মা*মলা করে।
——-
দুইদিন পর। ক্লাস শেষে নিঝুম অপেক্ষা করছে। আজ আলফির ক্লাস আছে। তাই আলফির সাথে কথা বলতেই অপেক্ষা করছে। কিন্তু আলফি আজ ইউনিভার্সিটিতেই আসেনি। এদিকে আলফির ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে। সন্ধ্যা গড়িয়ে এখন রাত। নিঝুম হতাশ হয়ে চলে আসে।
আলফি গতকালকে ওয়াশিংটন এসেছে। এখানে একটা সেমিনার হবে। জায়ানের বদলে মিস্টার জুনায়েদের সেটা এটেন্ড করার কথা থাকলেও জায়ান নিজেই আসে। নিজেকে এখন সে কাজ ও সেমিনার এসবে বিজি রাখতে চাইছে। এই সেমিনার শেষ হলেই নিউইয়র্কে যাবে। সেখানের কাজ করবে। সেখানেও দুই দিন থাকবে।
সেমিনারের মাঝে শাহরিয়ার আলফির কানে কানে বলে,
“স্যার, ম্যাম আপনার জন্য ইউনিভার্সিটিতে আজ অনেকক্ষণ ওয়েট করেছে।”
“করুক। তাকে আমি যেতে বলিনি।”
আলফির কাটকাট উত্তর শুনে শাহরিয়ার মিইয়ে গেল। আলফি তাকে নিঝুমের আপডেট বা খোঁজ রাখতে বলেনি। কিন্তু সে তো আলফিকে চেনে তাই নিজে থেকেই নিঝুমের খোঁজ রাখছে।
আরও তিন দিন পর, আলফির ক্লাস কিন্তু আজও আসেনি৷ নিঝুম এবার খুব চিন্তায় পড়ে যায়। তৎক্ষনাৎ আলফির নাম্বারে কল করে। কিন্তু নাম্বার বন্ধ বলছে। এতে যেন নিঝুমের চিন্তার পারদ তরতর করে বাড়ছে। সেদিন চলে আসার পর থেকে আলফির কোনো খোঁজ নেই। আজ ওর সাথে প্রিয়া আছে। নিঝুম প্রিয়াকে বলে,
“আমার খুব চিন্তা হচ্ছে আলফিকে নিয়ে।”
প্রিয়া সন্দিহান হয়ে শুধায়,
“কেন? ও-কে নিয়ে তোর কেন চিন্তা হবে? সত্যি করে বলতো, সেদিন আলফি ও তোর মধ্যে কি হয়েছিল? তুই তো আলফির থেকে দূরে থাকবি বলেই চলে এসেছিলি তাহলে এখন কেন আলফির জন্য চিন্তা করছিস?”
নিঝুম ইতস্তত করে সব সত্যিটা প্রিয়াকে বলে। সব শুনে প্রিয়া একদম থ! বলে,
“সিরিয়াসলি! এতোকিছু হয়ে গেল আর তুই আমাদেরকে কিছু বলিসনি!”
“আমার মনের অবস্থা তো বোঝ। আমি কতোটা হার্ট হয়েছি। সে আমার স্বামী এটা এখানে আসার পরপরই বলে দিতে পারতো। বা বিয়ের সময়ই বলে দিতে পারতো। কিন্তু না। সব লুকিয়ে গিয়ে আমাকে আমার মনের সাথে কঠিন যু*দ্ধে ঠেলে দিয়েছে। আমি নিজেকে কতো খারাপ মেয়ে, চ*রিত্রহীন মেয়ে ভেবেছি। স্বামী থাকতেও অন্য পুরুষের প্রতি ফিলিংস থাকা আবার সেই পুরুষের বাড়িতেই থাকা। কিন্তু সে তো এসব বুঝবে না। শুরু থেকে সে সবটাই জানতো। তারই তো সাঁজানো। এখন তার উচিত ছিল আমার রাগ ভাঙানো। কিন্তু তা না করে নিজেই লাপাত্তা! হাহ্!”
প্রিয়া নিঝুমকে নিজের সাথে আগলে নিয়ে বলে,
“তুই তো আলফির বাড়ি চিনিস। তাহলে চল সেখানে যাই। আজকে ও-কে ইচ্ছে মতো শা*য়েস্তা করব।”
“না। সে কিছু মনে করলে…”
“করলে করবে৷ করলে বলে দিবি… উম.. হ্যাঁ, ডিভোর্সের সাইন নিতে এসেছিস!”
আঁতকে উঠে নিঝুম।
“ডিভোর্স! নো৷ আমি ডিভোর্স চাই না।”
প্রিয়া ভ্রুঁ নাচিয়ে রম্য স্বরে বলে,
“এখন তো তোমার ভালোবাসার মানুষটাই তোমার প্রাণনাথ! এখন তো তুমি ডিভোর্স চাইবেই না। আমি জানি তো। জাস্ট বাহানা খুঁজলাম এটা।”
নিঝুম লজ্জা পায়। তারপর প্রিয়ার বুদ্ধি মতো আলফির বাড়িতে যায়।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন৷ কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।