আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি পর্ব-১৯

0
603

#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯
নিঝুম ও প্রিয়া আলফির বাড়ির গেইটের কাছে ক্যাব থেকে নেমে দেখে বাড়ির ভেতর আলো জ্বলছে। নিঝুম ভ্রুঁকুটি করে বলল,
“দেখলি, ও বাড়িতেই আছে। ইচ্ছে করেই ইউনিভার্সিটি যায়নি।”

“আচ্ছা বুঝলাম। যাই তো ভেতরে৷ তারপর জিজ্ঞেসা করে নিবি।”

নিঝুম মুখ লটকে বাড়ির দিকে এগোয়। দরজায় নক করার পরও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসছে না। প্রায় দুই মিনিটের বেশি সময় দাঁড়িয়ে ওরা। নিঝুমের চিন্তা হতে লাগলো। অস্থির কণ্ঠে বলছে,
“অসুস্থ নয়তো? হয়তো অসুস্থ বলেই ইউনিভার্সিটি যাচ্ছে না।”

প্রিয়া উত্তরে বলে,
“হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। রিল্যাক্স।”

“এই লোক এতো ঢিট! অসুস্থ হলে আমাকে কল করলে কী সমস্যা?”

চিন্তায় নিঝুম অহেতুক ব*কছে। প্রিয়া হতাশ হয়ে সেসব শুনছে। পাঁচ মিনিট হলো ওরা দাঁড়িয়ে। এবার দরজা খুলল আলফি। ট্রাউজার পরিহিত খালি গায়ে সাদা তোয়ালে গলায় ঝুলানো। তোয়ালের এক কোণা দিয়ে মাথা মুছছে। দরজা খুলে সামনে দাঁড়ানো মেয়ে দুটোকে নিজের দিকে নিষ্পলক চেয়ে থাকতে দেখে দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করলো। তুড়ি বাজিয়ে শুধালো,

“হোয়াট?”

নিঝুম নিজেকে ধাতস্থ করে আলফির বুকে ধা*ক্কা দিয়ে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। পেছন পেছন প্রিয়াও। নিঝুম রেগে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“দরজা খুলতে এতক্ষণ লাগে? কতক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছি আমরা।”

আলফি নিজের ও নিঝুমের মধ্য দূরত্ব কমিয়ে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“আমাকে এই হালে দেখেও কি তোমার মনে হচ্ছে না কেন এতক্ষণ লাগলো?”

কিঞ্চিৎ থতমত খেলো নিঝুম। তাও তেজি কণ্ঠে বলল,
“শাওয়ার নিচ্ছিলে বলে দেরি ও যেহেতু করলেই তাহলে প্রোপার ড্রেসআপ করেই আসতে! এভাবে অর্ধ….”

আলফি আরেকটু এগুল, নিঝুম পেছোতে গিয়ে ফ্লোরের নিচের ধাপে পড়তে নেয়। তৎক্ষনাৎ আলফি ওর কমোড় পেঁচিয়ে ধরে শুধায়,
“অর্ধ কী? সেন্টেন্স ফিনিশ করো।”

নিঝুম নিজেকে আলফির বাহুবন্ধন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“কিছু না।”

আলফিও পাত্তা না দিয়ে পিছিয়ে গিয়ে চুল মুছতে মুছতে ডাইনিং টেবিলের কাছে যায়। তারপর গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে,
“সাডেনলি, ইউ গাইজ হেয়ার… হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

নিঝুমের আগেই প্রিয়া উত্তর দেয়,
“তুমি ইউনিভার্সিটি যাচ্ছো না এজন্য নিঝুম টেনসড হয়ে গেছিল।”

তৎক্ষনাৎ নিঝুম পেছন ঘুরে প্রিয়াকে চোখ রাঙায়। প্রিয়া মুখ চেপে হাসে। আলফিও মুচকি হাসে। নিঝুম সামনে ফিরে চেহারায় শক্ত প্রতিচ্ছবি রেখে বলে,
“তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে।”

পানি খেতে খেতে বলে,
“হু বলো।”

“আই ওয়ান্ট ডিভোর্স!”

চমকায় আলফি। গ্লাসটা বেশ শব্দ করে টেবিলে নামায় কিন্তু রাখে না। খুব শক্ত করে জোরালো মুষ্টিতে গ্লাসটা ধরে আছে। সেদিকে নজর যেতেই নিঝুম মৃদু ঢোক গিলে। আলফি যে রেগে গেছে সেটা সে বুঝতে পারছে। কিন্তু হঠাৎই আলফি নিঝুমকে অবাক করে দিয়ে চমৎকার হাসি দিয়ে বলে,

“ফাইন! ডিভোর্স পেপার রেডি করো। তারপর নিয়ে এসো সাইন করে দিব।”

কথাটা শুনে নিঝুম হতবাক হয়ে যায়। কিয়ৎক্ষণ চেয়ে থাকে আলফির চোখের দিকে। প্রিয়াও অবাক। সে বুঝতে পারেনি তার বুদ্ধি এতো বাজে ভাবে ফ্লপ খাবে।
আলফি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলে,
“তোমরা কতক্ষণ থাকবে? আই অ্যাম সো টায়ার্ড। ওয়ান্ট টু রেস্ট।”

কথাতে যেন তাচ্ছিল্যতা মেশানো ছিল। নিঝুম রাগে প্রিয়ার হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। আলফি তা দেখে মৃদু হাসলেও পরক্ষণেই চোয়াল শক্ত করে ফেলে। কল লাগায় শাহরিয়ারকে। বলে,

“ইমিডিয়েটলি আমার একজন কন্ট্রাক্ট গা*র্লফ্রেন্ড চাই। যে কী না নিঝুম যেখানে থাকে সেখানেরই একজন। প্রিয়া মেয়েটা বাদে।”

তারপর গটগট করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যায়।

——-
ক্যাবে বসে রাগে ফুঁসছে নিঝুম। প্রিয়া ওর দিকে পানি এগিয়ে দিলে বলে,
“এই লোক না আমাকে বিয়ে করতে, নিজের কাছে রাখতে এতো মিথ্যা বলল। আবার বলল আমাকে নাকি সে কখোনোই ছাড়বে না। তাহলে এখন ডিভোর্সের কথা মেনে নিলো কীভাবে? তুই ওর হাসি দেখেছিস? বত্রিশটা দাঁত বের করে হিহি করে হাসছিল। আমার যে কী করতে মন চাচ্ছে! আবার বলে কী না, ডিভোর্স পেপার রেডি করে এনে দিতাম! সে সাইন করে দিবে! কত্তো বড়ো ফা-জিল এই লোক!”

প্রিয়া দাঁত দিয়ে নখ কা*মড়াতে থেকে বলে,
“আমার প্ল্যান যে এভাবে ফ্লপ হবে তা আমি চিন্তাও করিনি। ওই দাঁত বের করে হাসিটা! যখন গ্লাস জোরে চেপে ধরে রেখেছিল, আমি তো ভেবেছিলাম আজকে তুই শে’ষ! তোকে আজকে জ্যা*ন্ত ওখানেই পুঁ*তে দিবে! কিন্তু ও মা! সেকেন্ডের ভেতর এক্সপ্রেশন চেঞ্জ!”

“ওই তো! নিজের বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসছিল। ইচ্ছে করছিল পু*-তা দিয়ে ভে-ঙে গু-ড়িয়ে দেই একেবারে!”

তারপর নিঝুম পানির বোতল নিয়ে এক শ্বাসে পুরো বোতলের পানি পান করলো। প্রিয়া ভাবুক স্বরে শুধালো,
“তো এখন কী করবি? এই প্ল্যান তো ফ্লপ। ডিভোর্স পেপার রেডি করবি নাকি?”

“মোটেও না। আমি কিছুই করব না। তার ডিভোর্স দেওয়ার শখ হলে নিজে দিক।”

“কিন্তু তুই তো আগে ডিভোর্সের কথা তুললি। তোকে যদি জিজ্ঞাসা করে?”

“জিজ্ঞাসা করলে…”
কিছু ভাবলো নিঝুম। তারপর বলল,
“আমি তো এখানে আসার আগেই ডিভোর্স পেপারে সাইন করে এসেছি। সেটা নিশ্চয়ই তার কাছে আছে। না থাকলে না থাক। আমি তো আমার কাজ কবেই শেষ করে এসেছি। জিজ্ঞাসা করলে বলব, আমি অনেক আগেই আপনাকে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে পাঠিয়ে দিয়েছি।”

“তাও ঠিক। তুই তোর দিক থেকে ক্লিয়ার। কিন্তু আমি না কোনোভাবেই আলফির এই হঠাৎ পরিবর্তন হ*জম করতে পারছি না। মানে তোর কথা শুনে মনে হয়েছিল, হি ইজ ডেম পজেসিভ এবাউট ইউ। তারপর অ্যালেক্সের কী অবস্থাই না করেছিল! হ*জম হচ্ছে না রে।”

প্রিয়ার কথা গুলোও নিঝুমের ভালো লাগছে না। হুট করে মাথাও ধরছে। সে বিরক্তি নিয়ে বলে,
“হ-জম না হলে হ*জমের মেডিসিন খা। তাও আমার মা*থা খা*স না!”

তারপর চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিলো। প্রিয়া ঠোঁ’ট উলটে চেয়ে রইল ওর দিকে।

——

তিন দিন পর বিকেলে ক্লাস শেষে নিঝুম নিজের রাগের সাথে যু*দ্ধ করে আলফিকে এক পলক দেখতে অপেক্ষা করতে সিদ্ধান্ত নিলো। হঠাৎ দেখলো আলফি গাছের কাছে দাঁড়িয়ে। এতো জলদি আলফিকে ক্যাম্পাসে দেখে নিঝুম সন্দিহান হলো৷ একটু এগিয়ে দেখলো আলফির সামনে একটা মেয়ে। একটা মেয়ের সাথে আলফি কথা বলছে। অবাক হয় নিঝুম। এমনিতে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখলে এতোটাও অবাক হতো না, যতোটা রেহামের সাথে কথা বলতে দেখে অবাক হয়েছে। দুজনের কথা বলার ভাবসাবে মনে হচ্ছে দুজনের মধ্যে খুব ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক। অথচ আলফির সাথে ক্যাম্পাসের এখনকার কোনো মেয়ের সাথেই ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক নেই। পাঁচ বছর আগে যখন গ্রাজুয়েশন করেছিল, তারপর এখন মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার পর তো অফিস, ও সপ্তাহে দুইদিন ক্লাসের জন্য ক্লাস টাইমেই আসা। মেয়েদের তেমন পাত্তাও দেয় না। তাহলে রেহামের সাথে বন্ধুত্ব কবে হলো? এটাই খুব ভাবাচ্ছে নিঝুমকে। তখন নিঝুমের পাশে প্রিয়া এসে দাঁড়ালো। প্রিয়া এখনও আলফিকে দেখেনি।

“কী রে? এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কী দেখছিস?”

নিঝুম ইশারায় আলফি ও রেহামকে দেখায়। প্রিয়া তা দেখে সন্দিহান হয়ে বলে,
“রেহাম আলফির সাথে কী করছে?”

“দেখছিস না, কথা বলছে!”

নিঝুমের এখন রাগ লাগছে আলফির উপর। প্রিয়া কিছু একটা চিন্তা করে বলে,
“গতকাল রেহাম আমাকে তোদের সাথে ঘুমাতে বলে ও আমার রুমে চলে গিয়েছিল। ওর নাকি ওর নিউ বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলার আছে।”

প্রিয়া কথাটা তেমন অর্থ না বুঝিয়ে বললেও নিঝুম হকচকিয়ে উঠে। রেহামের বয়ফ্রেন্ড! রেহাম তাকে বলেছিল, আলফিকে তার ভালো লাগে। আলফিকে নিজের মনের কথা বলবে। তাহলে কী আলফি ও রেহাম? বুক ধরফড় করছে নিঝুমের। হুট করে মনে হচ্ছে এই শীতল আবহাওয়াতেও তার গরম লাগছে। চোখের দৃষ্টিও ক্রমাগত ঝাপসা হচ্ছে। অশ্রুরা খনিকেই ভীড় জমিয়েছে নেত্র কোনে। জমে উঠা অশ্রুরা গড়িয়ে পড়ার আগেই নিঝুম ছুট লাগালো ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যেতে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন৷ কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।