আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি পর্ব-২১

0
539

#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২১
নিঝুমের মুখ থেকে ভালোবাসি শুনে আলফি নে*শা ও ঘুমের ঘোরে মুচকি হাসলো। অতঃপর প্রত্যুত্তরে মৃদু কণ্ঠে ‘আই লাভ ইউ টু, সুইটহার্ট।’ বলে ঘুমিয়ে গেলো। নিঝুম বারকয়েক হ্যালো বলেও সাড়া পেলো না। আলফির নিঃশ্বাসের শব্দ আসছে শুধু। নিঝুম বুঝলো আলফি ঘুমিয়ে গেছে। তাও সে ফোন কানেই বসে রইল। ঘুমন্ত আলফির নিঃশ্বাসের ধ্বনিও তার ভালো লাগছে।

সকালে সময় মতোই আলফির ঘুম ভাঙে। ঘড়িতে সময় দেখে। সকাল সাড়ে আটটা। ফোনটা উঠিয়ে দেখে নিঝুমের সাথে কলে সে। তৎক্ষনাৎ ভ্রুঁ কুঁচকে ফোন কানে নেয়। অপরপাশ থেকে কিছু মেয়েদের আওয়াজ আসছে। একজন তো নিঝুমকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য ডাকছে। আলফি ফোন কানে নিয়ে বসে রইল খানিক। নিঝুমের ঘুম ভেঙেছে। প্রিয়া বলছে,

“ঘুম ভাঙলো তবে। আমরা তো আজকে ঘুরতে যাব বলেছিলাম।”

নিঝুম ঘুম ঘুম চোখে মাথা দুলায়। তারপর রাতের কথা মনে পড়তেই ফোন চেক করে। এখনও আলফির সাথে কলে। আলফি উঠেছে কী না চেক করতে ‘হ্যালো’ বলে। কিন্তু অপরপাশ থেকে সাড়া আসে না। প্রিয়া কপাল কুঁচকে শুধায়,

“মা*থা কি গেছে? কাউকে কল না করেই হ্যালো বলছিস!!

“আলফি কলে আছে।”

“হ্যাঁ? কখন? আমি তো তোর ফোন বাজতে শুনলাম না।”

“কাল খুব রাতে কল করেছিল। ড্রাং*ক ছিল তখন। কথা বলার মাঝেই ঘুমিয়ে গেছে। এখনো হয়তো ঘুম থেকে উঠেনি।”

প্রিয়া দুষ্ট হেসে পাশে বসে বলে,
“বাহ্! গভীর রাতে প্রেমালাপ? তাও এতো সুন্দর ওয়েদারে। বিয়ের পর কাপলরা এই ওয়েদারে রোমান্স করে আর তোরা প্রেমালাপ করছিস। এক ডিগ্রি পিছিয়ে তোরা।”

নিঝুম লজ্জা পেলেও রাগ দেখিয়ে বলল,
“বেশি বকিস না। রেডি হবো আমি।”

তারপর বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে কল কাটে। অপরদিকে আলফি নিরবে সব শুনছিল। মুচকি হাসছিল সাথে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে প্রশ্ন জাগে, কী বলেছে নিঝুমকে? অতঃপর ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে কল রেকর্ড শুনে নিবে।

——

ডোওস লেকে ঘুরতে গিয়েছে প্রিয়া, নিঝুম ও রেহামরা। এটি একটি কৃত্রিম লেক৷ শীতকালে এর পানি জমে বরফে পরিণত হয়। কিন্তু এখনও লেকের পানি পুরোপুরি জমেনি। কিছুদিন পর জমে বরফ হলে এখানে স্কেটিং করে দর্শনার্থীরা। মৃদু রোদ উঠেছে। গাছের ফাঁক দিয়ে রোদেরা লুকোচুরি খেলছে। কিন্তু এই রোদ মাইনাস তাপমাত্রার কনকনে শীতের জন্য পর্যাপ্ত নয়। রেহাম ও প্রিয়ারা একে অপরকে বরফ ছুঁড়ে ছুঁড়ে মজা করছে। নিঝুম হাঁটু গেঁড়ে বসে মোটা গ্লাভস পরা হাতে বরফ দিয়ে কিছু বানানোর চেষ্টায়। ছোটো ছোটো কয়েকটা ইগলো পুতুল বানিয়েছে। সেগুলোতে শুকনো ভাঙা ডাল দিয়ে হাত ও নাক বসিয়ে এখন ফোনে ছবি তুলছে। ছবি তোলার মাঝে এক জোড়া পা ক্যামেরায় ধরা দিলো। নিঝুম এই পায়ের মালিককে দেখতে বসা থেকেই মাথা উঁচু করতেই দেখে আলফি দাঁড়ানো। তৎক্ষনাৎ চমকে উঠে দাঁড়ায় নিঝুম।

“আপনি এখানে?”

“হু। কেন তোমার প্রবলেম হচ্ছে?”

“না। আমার কেন প্রবলেম হবে? আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডকে দেখতে এসেছেন বুঝি?”

আলফি প্রথমে নিঝুমের প্রশ্নের তারতম্য না বুঝে মাথা নাড়ায়। তার কাছে তো গার্লফ্রেন্ড, বউ সবই নিঝুম। পরক্ষণেই সন্দেহ হতেই ভ্রুঁ কুঁচকে শুধায়,
“গার্লফ্রেন্ড?”

“হু। রেহাম।”

“রেহাম আমার গার্লফ্রেন্ড তোমাকে কে বলল?”

“সব বলতে হয় না। আপনি ওর প্রতি ইন্টারেস্টেড বলেই ও-কে জব দিয়েছেন।”

আলফি অবাক হচ্ছে। নিঝুমের মুখ থেকে এসব সে মেনে নিতো যদি কাল রাতের কল রেকর্ড সে না শুনতো। কিন্তু কাল তো নে*শার ঘো-রে সবই সে ক্লিয়ার করে দিয়েছে। আলফির রাগ হচ্ছে। নিঝুমের বাহুতে শক্ত হাতে ধরে নিজের দিকে টেনে এনে বলে,

“ইউ নো হোয়াট? ইউ আর সো কমপ্লিকেটেড। একচুয়েলি গার্লস মাইন্ডস আর ভেরি কমপ্লিকেটেড।”

নিঝুম নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে করতে বলে,
“মোটেও না। আপনি বলুন, আপনি কেন রেহামকে জব অফার করেছেন? ও তো এপ্লাইও করেনি।”

দমে যায় আলফি। নিঝুমের হাত ছেড়ে বলে,
“আমার কাছে মনে হয়েছে সি ইজ কেপেবল। দ্যাটস হোয়াই।”

নিঝুম তাচ্ছিল্য করে বলল,
“ওহ তাই? একজন আপনার অফিসে এপ্লাই করলোই না, ইন্টারভিউ দিলো না। কিন্তু আপনি জেনে গেলেন সে কেপেবল? আপনাকে কি ও স্বপ্নে এসে নিজের কেপেবেলিটি দেখিয়েছিল?”

আলফি খানিক বিরক্তি নিয়ে এগুলো নিঝুমের দিকে। তারপর বলল,
“লিসেন, তোমার যদি মনে হয় যে আমি ওর প্রতি ইন্টারেস্টেড। তাহলে তুমি ভুল। রেহাম এপ্লাই করেছিল। তবে সেটা এখন না। অনেক আগে। তখন আমরা ও-কে রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম।”

নিঝুমের ঝাঁঝালো প্রশ্ন,
“তাহলে এখন কেন জব দিলেন?”

“তোমার জন্য! হ্যাপি নাও? তুমি যদি কাল বিকেলে ওভাবে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে না যেতে তবে রেহামকে আমি তোমার সামনে আমার গার্লফ্রেন্ড বানাতাম! তুমি তো আমার থেকে ডিভোর্স চাও, তাহলে তোমার তো কান্নার কোনো রিজনই ছিল না। আমি প্রথম থেকে তোমাকে রাখতে চেয়েছি। তুমি থাকতে চাওনি। ভেবেছিলাম তুমি আমার পরিচয় শুনে খুশি হবে। বাট নো! সরাসরি ডিভোর্স চেয়ে বসলে।”

নিঝুম নত মস্তকে দাঁড়ানো। আলফি আরও বলে,
“আই নো আই ওয়াজ রং। এন্ড আই কনফেস দিস। বাট ইউ শুড লিসেন টু দ্যা রিজন ফার্স্ট।”

নিঝুম ধিমি স্বরে ‘সরি’ বলল। আলফি আরেকটু এগিয়ে ওর দু গালে হাত দিয়ে আগলে নিয়ে বলে,
“ডোন্ট বি সরি। আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে হারাতে চাইনি বলেই সত্য লুকিয়ে গেছি। আই অ্যাম সরি।”

দুজন দুজনের চোখে নির্নিমেষ চেয়ে আছে। অতঃপর একে অপরকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয়। দূর থেকে প্রিয়া, রেহাম, শাহরিয়ার প্রশান্তি চিত্তে তা দেখছে। প্রিয়া বলে,

“যাক, সব মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্লিয়ার হয়ে গেছে। আমি তবে ওই ফ্লাটে না করে দেই।”

শাহরিয়ার কৌতূহল হয়ে শুধায়,
“কোন ফ্লাট?”

“যেখানে কালকে ডিসেম্বরের এক তারিখে নিঝুমের উঠার কথা ছিল। এডভান্স হাফ পেমেন্টও করে দিয়েছে। এখন তো আর নিঝুম সেখানে যাবে না।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ। ম্যাম তো এখন স্যারের বাড়িতেই যাবে।”

রেহাম কিছু একটা ভেবে হেসে শাহরিয়ারকে জিজ্ঞেসা করে,
“বাই দ্যা ওয়ে, আমার জব থাকবে তো? আমাকে হায়ার করার উদ্দেশ্য ছিল নিঝুমকে জেলাস করানো। কিন্তু আমার মন মানেনি।”

“ও জেলাস হয়েছিল। কাঁদছিল খুব। কালকেই চলে যেতে চেয়েছিল।”

প্রিয়ার কথার প্রত্যুত্তরে শাহরিয়ার বলে,
“স্যারও ম্যামকে কাঁদতে দেখে ৩৬০ ডিগ্রি প্ল্যান ঘুরিয়ে ফেলেছে। অবশ্য তার আরও একটা কারণও আছে। অ্যালেক্সের জ্ঞান ফিরেছে। অ্যালেক্সের পেরেন্টস ও-কে সপ্তাহ খানেক আগে অটোয়া থেকে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানেই কালকে ওর জ্ঞান ফিরেছে।”

“অ্যালেক্সকে নিয়ে এতো ভয়ের কিছু নেই। এতো মা*র খাওয়ার পর আবার আসবে না।”

“আসবে। অ্যালেক্স এখন একা না। ক্যামেলিয়াও আছে। অ্যালেক্সের বাবার কম্পানির সাথে ক্যামেলিয়া এক বছর আগে একসাথে কাজ করেছিল। রিসেন্টলি ক্যামেলিয়ার পার্টনার যার সাথে মিলে স্যারের ক্ষতি করতে চেয়েছিল, সে অ্যালেক্সকে হসপিটালে দেখতে গিয়েছে।”

রেহাম মা-থায় হাত দিয়ে বলে,
“এতো কমপ্লিকেশন কেন! একটা না মিটতেই আরেকটা।”

“প্লিজ, এগুলো যেন ম্যাম না জানে।”

“জানবে না।”

প্রিয়া ও রেহাম শাহরিয়ারকে আশ্বস্ত করলো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
গল্পটা শেষ করে দিলে কেমন হয়?
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। রিচেক হয়নি। কপি নিষিদ্ধ।