আমার ললিতা পর্ব-২১+২২+২৩

0
410

#আমার_ললিতা
#পর্ব:২১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“কখনো আকাশের দিকে তাঁকিয়ে সেটির বিশালতা অনুভব করেছেন অনল?দীর্ঘ রাতের সূচনাতে নিকষ কালো অন্ধকারে একনাগাড়ে তাঁকিয়ে দেখবেন।হারিয়ে যাবেন অন্যরকম মায়াতে।”

বেলীর কণ্ঠে এক ধরণের নিরবতা।ক্ষণে ক্ষণে তা শীতল করে তোলে অন্ত:করণ।দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মেয়েটি আকাশ পানে তাঁকিয়ে আছে।অনল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শুধালো,

“আমি যে তোমাকে টেনে নিয়ে এলাম ললিতা।এতে রাগ হয়নি?”

“না।কারণ আপনার আশেপাশে থাকার ফলে অনুভব হচ্ছে কিছু নিয়ে ভীষণ ডিস্টার্ব ফিল করছেন।”

“ওয়াও!অনুমান করার শক্তিটা দারুণ তোমার।”

অনল সামনে রাস্তার দিকে তাঁকালো।এখান থেকে দুই মিনিট হাঁটলে দারুণ একটা চায়ের দোকান আছে।মূলত নানান পদের সঙ্গে সামান্য একটু চা পাতা দিলে সেটিকে চা বলা চলেনা।তবে খেতে সুস্বাদু।অনল বেলীকে বলল,

“চা ডেটে যাবে আমার সঙ্গে?এখন!এই মুহুর্তে?”

“যদি না এডভান্টেজ নেন।তবে যেতে পারি।”

“তুমি তো আমার।সেখানে এডভান্টেজ নেওয়ার কিছু নেই অন্তত।এসো আমার সঙ্গে।”

অনল ও বেলী পাশাপাশি হেঁটে চলেছে।তাদের বেশীরভাগ দেখা হয় রাতে।জিনিসটা একদিক থেকে দেখতে গেলে উপভোগ্য ভীষণ।দোকানের কাছটায় পৌঁছে দুকাপ চা অর্ডার করে দিলো।

“ললিতা বলো তো সাধারণ ভাষা ও কবিতার ভাষার মধ্যে পার্থক্য কী?”

“শব্দের অলংকার কিংবা বিস্তর বর্ণনাতে।যেমন- ইংলিশে আমরা বলি ‘Overthinking’ কিন্তু তা কবিতার ভাষায় হয় ‘the storms in my head ruin the garden that my Soul holds।’একটি সাধারণ শব্দকে এতোটা সমৃদ্ধ করার অর্থই হচ্ছে কবিতা।”

“তাহলে জানো জীবনও কিন্তু কবিতার মতোন।দেখতে অতি সাধারণ একটা বিষয়।একজন মানুষ সারাদিন খাচ্ছে,ঘুরছে,শিক্ষা গ্রহণ করছে সব একদম পার্ফেক্ট।তবুও এখানে একটা কিন্তু থেকে যায়।”

“আপনার মন খারাপের কারণ কী অনল?”

“উহু,এই পৃথিবীতে সেই পুরুষের মতোন বোকা অন্য কেউ নেই যে নিজের মনের কষ্টের কথা প্রিয় নারীকে জানাবে।”

চা তাদের সামনে দিয়ে গেলে সেখানে আস্তে করে চুমুক দিলো বেলী।মাটির কাপে খেতে ভালো লাগছে।হঠাৎ তার একটা বিষয় মনে হলো।আর্তনাদ করে বলে উঠলো,

“আমার কাছে তো টাকা নেই অনল।কী হবে এখন?”

“তোমার এই মাসের স্যালারি থেকে রেখে দিবো।চিন্তা করো না।তুমি যেহেতু কারণ ঋণ রাখো না।”

“জি।একটা বিষয় বলেন আপনি প্রচুর বই পড়েন?সেটা কেন চেহারা তে বোঝা যায়না?”

“জ্ঞানীর গুণ যদি চেহারা তে বোঝা যেতো।তাহলে চোরের চুরি থাকতো চোখে।”

বেলী উশখুশ করলো হঠাৎ। দুপুরে বলা সাদাবের কথাগুলো কী সে জিজ্ঞেস করবে?পরক্ষণে ভাবলো বলার কোনো মানে নেই।এর থেকে বরং জলদি চা শেষ করা যাক।অনলকে আজ কেমন রহস্যময় লাগছে।ভয় ভয় লাগলো বেলীর।

চায়ের বিল মিটিয়ে দিয়ে বেলী ধন্যবাদ সূচক কণ্ঠে বলল,

“আমার এখন বাসায় ফিরতে হবে।যে বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলাম তা পসিবল না আপনার জন্য।”

“থামো ললিতা।আমি তোমাকে যাওয়ার অনুমতি দেইনি এখনও।”

“এক মিনিট অনল!আমি কেন আপনার অনুমতির অপেক্ষা করবো?এই প্রশ্ন আসা বৃথা।”

বেলী অনলের মুখবিবরের দিকে তাঁকালো।দূর্বেধ্য এক হাসি ফুঁটে উঠেছে।মিষ্টি এক বাতাস এসে পুরুষটির চুলগুলো এলেমেলো করে দিলো।দামী কোলনের সুগন্ধে মেয়েটার মনে বিষন্নতা নামে।ধীরে ধীরে রাত বাড়ছে।চারিধারে মানুষ কমে আসছে।

“আমি আসছি অনল।”

হাতে শক্ত করে টান অনুভব হলো বেলীর।টেনে একদম বুকের সাথে মিশিয়ে দিলো অনল।ফিসফিস করে বলল,

“আমার বায়রনের কবিতা।ঠিক এই মুহুর্ত থেকে তোমাকে নিজের বলে ঘোষণা করলাম আমি।”

“আপনার কথার অর্থ কী অনল?আমি সেগুলো বুঝতে পারছিনা।”

“বুঝতে হবেনা।তুমি শুধু আমার ললিতা।”

অনুভূতির তীব্র ঝাপটা এসে দুজনের শরীর স্পর্শ করে গেলো।বেলী জানেনা অনল হঠাৎ কেন একথা বলল।তবে কিছু গভীরতা যেমন খুঁজে বের করা যায়না।ঠিক এখানেও বোধহয় সেরকম হলো।

(***)

বাড়ী ফিরে বেলী অনেকক্ষণ নিজের রুমে বসে রইলো।অনলের বারংবার অধিকার বোধ দেখানো তার মনে অনেকগুলো প্রশ্ন এনে দিচ্ছে।এক. মানুষটা এতো রহস্যময় কেন? দুই.সাদাবের কথার সত্যতা কতোখানি?আপাতত বেলী এসব একপাশে রেখে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।কিছুক্ষণ প্রেজেন্টেশন রেডি করলো।ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখলো রাত একটা বাজে।আড়মোড়া ভেঙে সে জানালার কাছটায় এসে দাঁড়ালো।রাতের নিরবতা আবার সবকিছুকে মোহাচ্ছন্ন করে তুলেছে।বেলীর শরীর শিউরে উঠলো।হঠাৎ তার ফোনে ম্যাসেজের শব্দ হলো।অচেনা নাম্বার থেকে এসেছে।

“আমার কথা আপনি বিশ্বাস করেননি বেলী।তবে অনলের সঠিক পরিচয় জানতে আপনাদের বাড়ী থেকে কিছু দূরে থাকা বারে চলে আসুন।ভয় নেই।আপনি পুরোদস্তুর পুলিশ প্রটেকশনে থাকবেন(সাদাব)।”

ম্যাসেজটা দেখে রাগ উঠে গেলো বেলীর।কারণ সে কিছুক্ষণ আগেও অনলকে দেখে এসেছে।তাছাড়া অচেনা একটা লোকের কথায় রাত করে বাহিরে যাওয়ার মেয়ে নয় সে।এটা সত্য যে সে ক্যারাটে জানে,নিজের সুরক্ষা করতে পারবে।তবুও এমন বোকামো করবেনা।রুমের লাইট বন্ধ করে একবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো।তবে মনটা মানছেনা।অনলকে নিয়ে সে এতোটা কৌতুহলী কেন?মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে বেলীর।নিজের সাথে অনেকক্ষণ দ্বন্ধ ভুগে অবশেষে বেলী সিদ্ধান্ত নিলো সে যাবে।এর পূর্বে তার কিছু ছেলে ফ্রেন্ডকে ম্যাসেজ করে লোকেশন সহ সব পাঠিয়ে দিলো।কাছেপিঠে তাদের বাড়ী।তাই বারের বাহিরেই থাকবে তারা।এখন প্রথম কাজ হলো সন্তপর্ণে বাড়ী থেকে বের হওয়া।মেয়েটা এমন করার সাহস পাচ্ছে অতীতে এমন বহু কাজ সে করেছে।দ্রুত পোশাক বদলে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বের হয়ে গেলো।

দেখতে সাধারণ একটি বিল্ডিং হলেও ভেতরে নে’শা’র আড্ডা চলছে।গেটের কাছটায় এসে বেলী সাদাবকে দেখতে পেলো।মুখে মাস্ক থাকলেও চোখ দেখে চেনা যাচ্ছে।তাকে ইশারাতে ভেতরে যেতে বলল।বেলী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে যেতে লাগলো।মনের এক পাশ বলছে বন্ধুরা বাহিরে আছে কোনো সমস্যা হবেনা।তবে ভয়ও লাগছে।সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে ভেতরে প্রবেশ করলো বেলী।ভেতরে লাউড মিউজিক চলছে।একপাশে শিসা টানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেদিকে সাদাব ইশারা দিলো।অনল বসে আছে।আশেপাশে কিছু মেয়ে একদম তার গা ঘেঁষে।বেলীর বুকটা ধক করে উঠলো হঠাৎ।একটু আগে এতো সুন্দর করে কথা গুলো বলছিলো যে পুরুষ।গভীর রাতে সে এমন নষ্ট মানব হয়ে উঠলে কেন?অনলকে ভালোভাবে দেখার জন্য আরেকটু কাছে গেলো বেলী।এহেন সময় পুরুষটির দৃষ্টি ঠিক তার উপর এসে থামলো।বেলী নিশ্চিত মুখে মাস্ক ও মাথায় হ্যাট থাকায় অনল তাকে চিনবেনা।এছাড়া সে জিনসের উপর লং টপস পরে এসেছে।যা তার সাধারণ পোশাকের সাথেও যায়না।অথচ সে চোখও সরাচ্ছে না।দীর্ঘ দুই মিনিট তার দিকে তাঁকিয়ে থেকে পাশের মেয়েগুলোকে অনল কিছু বলে উঠে তার দিকে এগিয়ে এলো।নিজেকে যথাসম্ভব সংযত করে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকলো মেয়েটা।সে তো জানতো বারগুলোতে আলো কম হয়।তবে এখানে ভিন্ন কেন?বেশী কিছু ভাবতে পারলো না।অনল পাশে এসে দাঁড়ালো।মেয়েটির মন কাঁপছে।ধীরে সুস্থে সরে যেতে নিবে তখন থামিয়ে দিলো অনল।জোরে একটা চড় বসিয়ে দিলো মেয়েটার গালে।মুখে মাস্ক টেনে খুলে ফেলে দিলো।চোয়াল শক্ত করে ধরে বলল,

“তুমি কা’ফ’নে’র কাপড় জড়িয়ে পড়লেও আমি চিনতে পারবো।এখানে আসার খেসারত দিতে হবে মাই ললিতা।”

চলবে।
#আমার_ললিতা
#পর্ব:২২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“এতোগুলো মেয়ের সঙ্গে রাত একটাতে বারে বসে থাকতে পারেন অথচ আমাকে চড় মা” র”লে”ন কোন সাহসে মি.অনল?আপনার হাতকে আস্ত রাখবো না আজ আমি।”

“ওহ তাই?এসো চড় এখন লেফট গালে এসে পড়েছে।এরপর পড়বে রাইট গালে।সাহস কতো বড় মেয়ে তোমার?”

“আপনার সাহস কতো বড়?”

“যতো বড় ততোটা দেখতে গেলে নিজের সাহসের লেভেল হাজার গুণ বাড়াতে হবে।এখানে আসার কারণ বলো। কুইক এখুনি।এই গান বন্ধ করতে বলো তো কেউ।”

অনলের মুখবিবর রক্তিম হয়ে উঠেছে।যেন আগ্নেয়গিরির গলিত প্রস্তরাদি।অথবা নিউক্লিয়ার বিস্ফোরক পদার্থ।যেকোনো সময় চারিধার ধ্বংস করে দিবে।বেলী খেয়াল করলো বারংবার হাত মুঠো করে সংযত করছে।ক্লান্ত সুরে বলল,

“এখানে কোনো ছেলের সাথে এসেছো ললিতা?কে সে?কেন এলে?কারণ বলো আমাকে।”

“বলবো না।একদম বলবো না।”

গানটা এতোক্ষণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।উৎসুক জনতা তাদের দেখছে।অনল পুনরায় শুধালো,

“আমাকে এখানে আসার কারণ বলো।তা নয় আমার থেকে বেশী খারাপ কেউ হবেনা।এটা ভালো জায়গা নয় মেয়েদের জন্য।”

“আপনার জন্য অনেক ভালো জায়গা তাহলে?ছি: চরিত্রহীন।”

বেলীকে চমকে দিয়ে অনল জোরালোভাবে তার চোয়াল চেপে ধরলো।দুজনের নিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটলো।আক্রোশে অনল বলল,

“এই মুখ যখন আমার বিরোধিতা করে তখন একটুও ভালো লাগেনা ললিতা।একটুও না।শুধু জেনে রাখো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বারে আসা ছেলেগুলো শতভাগ চরিত্রহীন হয়না।কিন্তু এখানে আসা মেয়েরা মটেও স্বভাবে ভালো নয়।”

“সত্যি?যা তা বলে আপনার বাজে কথাগুলো সত্য বলে প্রমাণ করতে চাইবেন না।”

“ওয়েল।আমি না হয় খারাপ।কিন্তু তোমার ভাই তো ভালো?তবে দেখো তো সে এখানে কী করছে?”

বেলী হকচকিয়ে উঠলো।ভ্রু কুঁচকে শুধালো,

“আমার ভাই?”

“নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলে বেলী।”

অনল পকেট থেকে ফোনটা বের করলো।কাওকে নিচে আসতে বলে ভাবলেশহীন মেয়েটার দিকে তাঁকিয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর সিয়ামকে নিচে আসতে দেখে বেলী আকাশ থেকে পড়লো যেন।

“বেলী!তুই এখানে কেন?”

“তুমি এখানে কেন ভাইয়া?”

“সেই কৈফিয়ত খুব বেশী জরুরি না।তুই রাতের বেলা এখানে কেন সেই প্রশ্ন বেশী জরুরি।”

“সিয়াম মজার কথা শুনো।সে মুখে মাস্ক,চোখে চশমা ও মাথায় হ্যাট দিয়ে এসেছে।তোমার বোন কী স্পাই?নিশ্চয় খু”” নি ধরতে এসেছে?হেই সকলে স্বাবধান হও।আমাদের মাঝে একজন স্পাই এসেছে।হাতুড়ি ডক্টরের মতোন যাকে হাতুড়ি স্পাই বলে।বেলী দ্য হাতুড়ি স্পাই।”

অনলের তীব্র বিদ্রুপমূলক শব্দে বেলীর মনটা কেমন করে উঠলো।এতো খারাপ কথা কেউ বলে নাকী?সে পুনরায় কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে সিয়াম ধমকে শুধালো,

“এখানে আসার কারণ কী বেলী?জলদি বল।”

“আছে কারণ কিছু।সত্য বলতে ভাইয়া আমি খারাপ উদ্দেশ্য তে আসিনি।”

“বাবা জানলে অনেক খারাপ হবে।বাসায় চল জলদি।”

“তুমি এখানে কী করছিলে?”

সিয়াম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

“স্ট্রেস রিলিজ করার অনেক উপায় আছে।”

অনল মাঝখান থেকে বলল,

“আজকাল স্ট্রেস রিলিজ করতে এসে চরিত্রহীন তকমা পেতে হয়।তোমার বোনকে বলো আমরা একই সাথে এসেছি এখানে।”

সিয়াম মাথা দুলালো।বেলী তবুও ঋণাত্মকবোধক ভঙিতে বলল,

“তোমাদের দুজনের একজনের কথাও আমার বিশ্বাস হলো না।আমি বাসায় যাচ্ছি।”

রেগে বেলী বাড়ীর পথের দিকে হাঁটতে আরম্ভ করলো।পিছন পিছন সিয়াম যেতে নিলে অনল থামিয়ে বলল,

“বাড়ীতে গিয়ে তোমার বোনের গালে বরফ লাগিয়ে দিবে।”

“কেন?”

“চ” ড় মেরেছি আমি।এখানে দেখে মাথা ঠিক ছিলনা।”

“মানে?আমার বোনের গায়ে হাত তোলার সাহস পাও কীভাবে তুমি?”

“আশ্চর্য!তুমি আর তোমার বোন শুধু সাহসের কথা বলো।একবারও ভাবলে না অধিকার কোথায় পেলাম?অধিকার নিয়ে নিয়েছি।”

শেষের বাক্যগুলো অনেকটা নিচু সুরে বলল অনল।সিয়াম কোনো তর্কে যেতে আগ্রহী হলো না।কারণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে বেলী একা চলে যাবে।সে চলে গেলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো অনল।সে জানে চ”ড়টা দেওয়া উচিত হয়নি।তবে মেয়েটার এখানে আসার কারণ কী ছিল?বিষয়টা ভাবাচ্ছে তাকে।

(***)

“কালকে আমার জন্য আপনার চ”” ড়টা খেতে হয়েছে।ভীষণ স্যরি।আজ বাহিরে দেখা করবেন?বাকী কথা না হয় তখন বলা যাবে।”

সাদাবের ম্যাসেজটা দেখে খুব বিরক্ত হলো বেলী।এই একটা লোকের জন্য কতো গুলো কথা শুনতে হয়েছে সিয়ামের থেকে।এছাড়া সে ভেবে নিয়েছিল পুরোটা বিষয়টা তার বাবার কাছে যাবে।ভাগ্যিস যায়নি।ফোনটা রেখে আইসপ্যাক আবার গালে রাখলো।সে বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না ওটা অনলের হাত ছিল নাকী শক্ত লোহা?মনে হচ্ছে পুরো শক্তি দিয়ে দিয়েছে।

“আসবো বেলী?”

শশী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইলো।বেলী হাত নাড়িয়ে ভেতরে আসতে বলল।

“তুই এভাবে গালে ব্যাথা পেলি কীভাবে বল তো?”

“কোনো দরকার ছিল আপু?”

“হুম।অনল এসেছে।তোর সাথে কী গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”

“ও লোক আমাদের বাসায় কেন এলো?”

“বেলী!ও লোক কী?অনল ভাইয়া বল।”

বেলী বিদ্রুপ হাসলো মনে মনে।অনল যদি তাকে কখনো ভাই ডাকতে শুনে তবে নিশ্চিত ভাবে অজ্ঞান হবে।একটা বিষয় ভেবে শিহরিত হলো যে পুরুষটা তাকে পছন্দ করে?অথবা বেলীর এই শিহরণ কেন জাগলো?তাদের কথার মাঝে উপরে উঠে এলো অনল।খুবই সাধারণ পোশাক পরনে।বেলীর অন্ত:করণে যদিও ভূমিকম্প তৈরী করে দিলো।শশীকে অনল নিচে চলে যেতে বলল।যদিও যেতে চায়নি।পরবর্তীতে কী ভেবে যেন চলে গেলো।

“তুমি বড্ড এলেমেলো বেলী।এভাবে কেউ ঘর গুছিয়ে রাখে?”

“কেন এসেছেন?”

“নিজ ইচ্ছাতে আসিনি।সিয়াম ডেকেছিল।তোমাকে চ”” ড় মারার জবাবদিহি চাইলো।আমিও বললাম এটা উচিত হয়নি।আমার মাফ চাওয়া উচিত।”

উচ্ছাসিত হয়ে বেলী বলল,

“দেখেছেন আমার ভাই ঠিক কতোটা ভালোবাসে আমাকে?স্যরি বলতে এসেছেন তো?যান মাফ করে দিলাম।বেলীর মন অনেক বড় যে।”

অনল বাঁকা হাসলো।ধীরে ধীরে বেলীর একদম কাছে এসে মুখোমুখি হলো।ফিসফিস করে বলল,

“অনল শয়তানের রাজা আমার প্রিয় স্ট্রবেরী।এতো সহজে মাফ চাইবো বুঝলে কীভাবে?বরং তোমাকে এখন আরেকটু জ্বালাবো।অন্য কাওকে ভালোবাসো?কারো কথায় সেখানে গিয়েছিলে?আমি অনেক পজেসিভ ললিতা।”

হুট করে অনল একটা কাজ করে বসলো।বেলীর কপালে দুম করে চুমো খেয়ে বসলো।বেলী কেঁপে উঠলো।ধাক্কা দিয়ে পুরুষটিকে সরিয়ে দিতে চাইলো।হায়!ফুল কী আর ভোমরের শক্তির সঙ্গে পারে।তার হাত শক্ত করে বুকে চেপে ধরলো অনল।

“মাই ললিতা।এখন আবার সাহসের কথা বলো না।কারণ তোমাকে চড় বা চুমো খেতে ব্যড বয়ের কোনো সাহসের প্রয়োজন নেই।”

চলবে।এডিট ছাড়া পর্ব।

#আমার_ললিতা
#পর্ব:২৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

প্রচন্ড আক্রোশে সুপুরুষটির বৃহদায়তন বক্ষে ধাক্কা দিলো বেলী।সরিয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা।এইমাত্র ঘটা অঘটনে সে মস্তিস্কের ভেতর থেকে শূন্যতা অনুভব করে।হাত উঁচু করে সপাটে চ”ড় বসাতে চাইলো অনলের গালে।কিন্তু এর পূর্বে শক্ত করপুটে বাঁধা পড়লো তার হাতটি।

“নো নো ললিতা।যা পারবেনা তা নিয়ে বৃথা চেষ্টা করবেনা।আমাকে চ” ড় দেওয়ার সাধ্য তোমার নেই।”

“আজ সমস্ত লিমিট ক্রস করে বসেছেন আপনি।আমি কে আপনার?প্রেমিকা?বউ?নাকী র’ক্ষি’তা?বলুন কী হই যে অধিকারে আজ আপনি এটা করেছেন?”

“প্রেমিকা,বউ অবধি থেমে থাকো।কারণ তুমি আমার কাছে অনেক সম্মানীয় ললিতা।ভুলভাল তকমাতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেনা।”

“অধিকার ব্যতীত যে মেয়ে চুমোকে সমর্থন করে সে স্লা” ট ব্যতীত কিছু নয়।হাত ছাড়ুন ব্যাথা লাগছে।”

অনল হাত তো ছাড়লো না।উল্টো সেটি বাঁকিয়ে ধরলো।দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ করে শুধালো,

“কেন গিয়েছিলে কাল বারে?কোন ছেলের সাথে? কে যেতে বলেছিল?আমি সত্যি বলছি ললিতা।তোমার জবাব না পাওয়া অবধি ভেতরে শান্তি অনুভব করবো না।”

“না করুন।আমার হাত ছাড়েন।তা নয় চিল্লাবো।”

“ওকে চিল্লাও।”

“আমাকে চিনেন না আপনি অনল।সত্যি চিল্লিয়ে এলাকার মানুষ একসাথে করবো।”

“করো।এরপর তোমার বাবা সম্মানের ভয়ে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবেন।একদম সহজ হিসেব।”

“হাহ!এতো স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।জীবন সিনেমা নয়।উল্টো এটেম্পট টু রে’ই’প কেসে ডায়রেক্ট জেলের কুঠরী তে আপনি।”

অনল হাত ছেড়ে দিলো মেয়েটির।নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে দাঁড়ালো।মেয়েটি যে রেগে গিয়েছে তা স্পষ্টত।

“শুনো আমার ললিতা।তুমি যা বললে তাও সম্ভব নয়।হয়তো মুখের কথাতে পুলিশেরা আমাকে ধরে নিয়ে যাবে ।কিন্তু এরপর যখন কেসের সব প্রসিউডার শুরু করবে।তখন অনায়াসে নির্দোষ সাব্যস্ত হবো আমি।একদিক দিয়ে দেখতে গেলে পরিণতি একই হবে।তখন তোফায়েল আঙকেল তোমাকে সম্মানের জন্য আমার হাতে তুলে দিবে।আমি হয়ে যাবো হিরো।যদিও আমি আগে থেকেই হিরো।”

বিরক্ত হলো বেলী।হাতের বালিশটা ছুঁড়ে বলল,

“আপনার মোটিভ কী বলেন?”

“ভনিতা করা আমার মধ্যে নেই।আমার মায়ের একটা কাজের মেয়ে দরকার।”

“তো?অফিসে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন এতে শান্তি নেই?এখন বাড়ীতেও?আর আমাকে দেখে সত্যি কাজের মেয়ে মনে হয়?”

প্রশ্নটির জবাবের পূর্বে বেলী বিছানা থেকে উঠে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো।ঢিলেঢালা প্লাজো ও কামিজ পরিধানে তাকে সত্যি খুব একটা স্বাভাবিক মানুষ বলা যায় না।গালের একপাশে ফুলে থাকা উলু পোঁকার ঢিবির অনুরুপ অংশটিতে আলতো করে হাত বুলালো।অন্তরে জ্বলতে থাকা বহি শিখা পুনরায় প্রজ্জ্বলিত হলো।

“আপনার মতো জঘন্য মানুষ আমি এ দুনিয়াতে দেখিনি অনল।”

“এবং তোমার মতো গর্দভ আমি কোথাও দেখিনি।একটা কথা মনে রাখবে প্রত্যেকটা মেয়ে তার মা ও শ্বাশুড়ী মায়ের কাজের মেয়ে।কেন একথা বললাম।লজ্যিকটা অন্য একদিন শুনাবো।”

“মটেও না।”

“হ্যাঁ।রেবেকে আন্টিকে ডাক দাও।সে তোমাকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দেয় নাকী কাজের মেয়ে হিসেবে।তবে এখানে মেইন পয়েন্ট ধরতে সমস্যা হয়েছে তোমার।যাক সেটা ধরার মতোন বোধ বুদ্ধি নেই।”

অনল এগিয়ে এসে মেয়েটির সামনে দাঁড়ালো।বেলীর মনে একটুও প্রজাপতি উড়ছেনা।শৈল্পিক পুরুষটি ধীর কণ্ঠে ভালোবাসার বুলি আওড়াচ্ছে।

“মাই ললিতা।তুমি যতো বিপদের সম্মুখীনে হওনা কেন।আমি তোমাকে বের করে আনবো।তবে একটা অনুরোধ আমার সীমাবদ্ধতা আছে।কখনো এতোটা চোখের আড়ালে চলে যেওনা যেখানে আমি পৌঁছাতে সক্ষম নই।”

“আমি মনের দিক দূর্বল হতে পারি অনল।তবে আমার জীবনে এতো বেশী সমস্যা তৈরী করার ফল আপনার জন্য সুফল হবেনা।আপনি ঠিক কেমন অনল?এক রহস্যময় প্রহেলিকা।না সমাধান করতে পারছি,না এড়িয়ে যেতে।”

অনল বেলীর সঙ্গে দৃষ্টির মেলবন্ধন করে বলল,

“আমাকে যতো বেশী জানতে চাইবে বেলী ততো তোমার জন্য মঙ্গল।যদি আমাকে জানার চুল পরিমাণ সূত্র পাও তাহলে সেটির গভীর থেকে গভীরে অন্বেষণ করো।”

অকস্মাৎ পুনরায় একদম মেয়েটির সন্নিকটে চলে এলো অনল।ছোট্ট করে মেয়েটির ঠোঁটে ফুঁ দিলো।এবার চমকায়নি বেলী।শক্ত করে দাঁড়িয়ে ছিল।

(***)

তিন বছরের একটি শিশু অবাক হয়ে বৃষ্টি দেখছে।ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে বারান্দার এমাথা থেকে ওমাথা দৌড়ে চলেছে।বৃষ্টি কণা যখন বাতাসে ভর করে তাকে ছু্ঁয়ে যায় ঠিক তখন শিশু মন আনন্দে নেচে উঠে।উল্লাসিত হয়ে মৃদু চিৎকার করে।তার নানা তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলে,

“নানাভাই এদিকে এসো।বৃষ্টি তে ভেজা যাবেনা।”

“না।”

আধো বুলিতে বাচ্চাটা ঋণাত্বকবোধক শব্দ করলো।তবুও চেষ্টা করে ভদ্রলোক।পরে হাল ছেড়ে সামনের বেতের চেয়ারে বসে পড়ে।তটিনী দরজায় দাঁড়িয়ে নানা ও নাতির প্রেমময় সম্পর্ক এতোক্ষণ দেখছিলো।

“রাহাত!চলো আম্মুর সাথে বাহিরে যাবে।”

লতিফ ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েকে শুধায়,

“এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাবে তোমরা?”

“একটু কাজ আছে।তাছাড়া গাড়ী আসবে।”

“তোমার নিজের গাড়ীটা নিয়ে যাও।”

“আসলে বাবা অনল স্যার এসেছেন।কিছু দরকার আছে তার সঙ্গে।”

লতিফ নিশ্চুপ হয়ে গেলো।মেয়ের প্রতি সে সর্বদা দূর্বল।এজন্য বছর চারেক আগে যখন বলেছিল রামীম নামক অসুস্থ বন্ধুকে সে যেকোনো মূল্যতে বিয়ে করবে সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।এমনকি পরবর্তী তে বিধবা মেয়ে ও এতিম নাতিকেও সে হৃদয় দিয়ে আগলে রেখেছে।সম্প্রতি অনলের সঙ্গে তটিনীর মেলামেশা কে সে ভীষণ পজেটিভ ভাবে নিয়েছে।যদি তাদের মধ্যে কিছু হয়ে থাকে তাহলে লতিফের মনের ভেতর সর্বদা আ”ঘা”ত করতে থাকা কাঁটাটি উপড়ে ফেলে দেওয়া যাবে।নানাবিধ চিন্তা করতে করতে সে বারান্দা থেকে দেখতে পেলো তটিনী রাহাতকে কোলে নিয়ে গাড়ীতে উঠছে।একটু পর সেটি চলে গেলো।

“দুঃখিত স্যার।আসতে একটু দেরী হলো।”

রাহাতের মাথায় থাকা পানিগুলো মুছতে মুছতে বলল তটিনী।অনল বাচ্চাটির দিকে চকলেট এগিয়ে দিয়ে বলল,

“আপনার বাবা আমাদের বেশ অদ্ভূত চোখে দেখে।কখনো তা খেয়াল করেছেন তটিনী?”

“না তো।তবে ভয় নেই কোনো।”

“সত্যি নেই।যাওয়া যাক?”

তটিনী সম্মতিতে মাথা দুলালে অনল গাড়ী স্টার্ট করলো।বৃষ্টির মধ্যে চালাতে খুব বেশী সমস্যা হচ্ছে না।

“স্যার,বেলীর কী খবর?”

“আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি তটিনী।সেদিন বেলী দেখেছিল আপনাকে মিটিং এর সময়।এরপর থেকে মেইন ব্রাঞ্চে আসার পূর্বে আমাকে একবার কল করবেন।”

“বেলী অফিসে কী করে?”

“আমার এসিসট্যান্ট।”

“সত্যি?তোফায়েল আঙকেল মেনে নিলো কীভাবে?যে কড়া লোক উনি।রামীম বলতো লোকটাকে দেখলে গ্যাংস্টার ফিল আসে।”

“আমি অনল বাঘকেও বশ করতে পারি।এখানে তো সাধারণ এক মানুষ।”

তটিনী হেসে পুনরায় বলল,

“বেলী মানলো কীভাবে?সে নিজেও কম আত্মসম্মানবোধের অধিকারী না।”

“ওটা না হয় সিক্রেট থাকুক।তবে সব সহজ ছিলনা।বেলীর জীবনে ঝড় হয়ে প্রবেশ করেছি আমি।আগে তা থেকে বাঁচুক।”

“আপনি সাধারণ ভাবে ওর জীবনে যেতে পারতেন অনল।”

“আপনার স্বামীর রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে?কখনো নয়।বরং সবকিছু মিটিয়ে অনল নতুন অনুভূতি তৈরী করবে।ঘৃণা হোক ভালোবাসা হোক।ললিতার সবকিছু অনলের জন্য।”

“আপনি ললিতাতে এতো মজে গেলেন কেন?”

অনল হাসে।তার মতোন প্রেমে হেরে যাওয়া মানুষকে এই প্রশ্ন শুধানো নিছক বালকের প্রলাপ।ভাবতে গিয়ে আরো হাসি পায়।

চলবে।

এডিট ছাড়া পর্ব।সকল পাঠক রেসপন্স করবেন।মূল্যবান মন্তব্য কমেন্ট করবেন।