#বড়োজা
#Nadia_Afrin
১২
জা’য়ের মেয়ে আমার ছেলের গায়ে গরম নুডলস ফেলে দিয়েছে।
ছোট বাচ্চার হাতের চামড়া খানিকটা কুচকে গেছে।
হাটুতে ফোসকা পড়ে গেছে রীতিমতো।
ছেলে গগনবিদারী চিৎকার।ওর চিৎকারে আমিও কান্না।কী করব কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।
আমাদের কান্না শুনে বড়োজা সর্বপ্রথম এলো ঘরে।
সে তো ঘরের বাইরেই ছিল।
এসে এমন ভাব ধরে যেন সে কিছুই জানেনা।
আমার ছেলের কাছে এগিয়ে এলে আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠি।মা আমি।সন্তানের ওপর এতো বড়ো অন্যায় মানতে পারিনা।
বড়োজা হতভম্ব।পেছন ঘুরে নিজ মেয়েকে চোখ টিপ দেয় সে।
ওমনি তার মেয়েও কান্না।
শাশুড়ি দেবর ছুটে আসে।
মেয়েটা দৌড়ে গিয়ে দাদি অর্থাৎ আমার শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে বলে,”কাকি আমায় মেরেছে দাদি।
আমি ইচ্ছে করে ভাইয়ের গায়ে নুডলস ফেলিনি।
ওখান দিয়ে যাওয়ার সময় পা ফসকে ভাইয়ের বাটির ওপর পড়ে গেছিলাম।
তাতেই একটু লেগেছে ভাইয়ের।
কাকি আমায় ধমকেছে।মেরেছে।মা কেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।”
এসব বলে মেয়েটা সে’কি কান্না।
আমি রাগান্বিত স্বরে বলি,”মায়ের মতোই মিথ্যে শিখেছ না?
আমি কিছু দেখিনি নাকি!
তুমি ইচ্ছে করে আলিফের গায়ে নুডলস ফেলে দিলে।
সব করেছ মায়ের ইশারায়।
আমি সব দেখেছি।এবার মায়ের মতো গুছিয়ে মিথ্যা বললে।”
মেয়েটা দেখলাম ঘাবড়ে গেল।
পরিস্থিতি সামলাতে বড়োজা এগিয়ে এসে কাঁদো স্বরে বলল,”দেখেছেন মা,আপনার মেজো ছেলের বউ কীভাবে আমাদের ফাঁসাচ্ছে।
আমার মেয়ে মিথ্যে বলবে?
মিথ্যার কিছু বোঝে আমার ছোট মেয়ে?
এই তন্নি শুরু থেকে আমাকে,আমার বাচ্চাদের হিংসা করে।
আমার মেয়ে বাচ্চা নাকি যে ওর ছেলের গায়ে ইচ্ছে করে নুডলস ফেলবে।
ওটা তো ওরও ভাই।
তন্নি আমাদের পছন্দ না করলেও আমি আমার বাচ্চাকে শিখিয়েছি,মা-চাচিদের মাঝে যাই হোক।ভাই-বোনেতে মিল থাকতে হবে।
আমি এসেছি দেখতে,যে বাচ্চাটার কী হলো।
তন্নি রাগ দেখাচ্ছে আমার সঙ্গে।
এ কেমন স্বভাব মা?
এতোদিন একা একা থেকে তন্নির লোভ হয়ে গেছে।এবার যখন আমরা দু-দিন থাকতে এসেছি ও হিংসা শুরু করেছে।
বলি আমরা কী সারাজীবন থাকব নাকি এখানে?
চারদিন বাদেই দেবরের বিয়ে।
বিয়েটা হলেই চলে যাব।
তখন থাকবে ছেলে নিয়ে সংসার জুড়ে।”
দেবর চিৎকার করে বলে,”ওরা ভাই-বোনেতে না হয় একটু দুষ্টুমি করে নুডুলস ফেলে দিয়েছে।তাই বলে মা’য়ের ঝগড়া করা যাবে নাকি!
ছোট-বড়ো মানেনা।বড়োজার গায়ে হাত তোলে।
ফুটফুটে মেয়েটাকে পর্যন্ত রাগে মেরেছে।
এ কেমন অসভ্যতা!”
আমি কিছু বলতে যাব এমন সময় দেখলাম ছেলে আমার কাঁদতে কাঁদতে নেতিয়ে পড়ছে।
মাথা কাজ করছেনা আমার।
ছেলেকে কোলে নিয়ে বাড়ির বাইরে ছুটলাম।
দেবর,জা,শাশুড়ি তখনো আমায় নিয়ে চর্চা করছে।
আমার দোষ ধরতে ব্যস্ত।
আমি পাশের বাড়ির এক ভাবির সহযোগিতা নিলাম।
শাশুড়িমা পেছন পেছন আসছে আর বলছে,”গেল ওর ভাবি জামাইয়ের কাছে।
ছেলে ব্যাথা পেয়েছে আমরা ডাক্তারের কাছে নিতে পারব না নাকি!
পরকে না জানালে ওর হয় না।”
আমি পাত্তা দেইনা তার কথায়।
এর সঙ্গে জবাব দিলে ঝামেলা সৃষ্টি হবে।এরা যে কতো আমার ছেলেকে দেখবে তা জানি আমি।
ছোট ছেলেটা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আর এরা আমার দোষ ধরতে ব্যস্ত।
আমি মা,আমার মাথা ঠিক নেই এই কঠিন পরিস্থিতিতে।তাই বলে তোরাও থেমে থাকবি?
কেমন পরিবার তোরা?
কেমন চাচা,দাদি!
এক চোখে নুন আর এক চোখে তেল দেখছে।
মেয়েটার কিছু হয়নি তবুও ওরা মেয়েটাকে আর জা’কে নিয়ে মাতামাতি করছে।
এদিকে আমার ছেলে যন্ত্রণায় কাতরায়।
পাশের বাড়ির ভাবি ও তার স্বামী তখন সবে খেতে বসেছে।
আমায় বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে এগিয়ে এলেন তারা।
আমি শুধু বললাম,”ভাই ভাবি আমার ছেলেটাকে বাঁচান।গরম নুডলস পড়ে হাত-পা পুড়ে গেছে ওর।
ওর বাবা বাড়ি নেই।আমায় সাহায্য করুন।”
ভাই ভাবি ততক্ষণাৎ রিক্সা ডাকে।
ছেলে সমেত আমিও রিক্সায় উঠি।ভাই আসে পিছে পিছে।
আমার হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে তখন।
ভাবির ফোন থেকে আকাশকে কল করি।চারবার কল দিয়েও সারা পাইনা।
আকাশের এখন কাজের সময়।
কাজের সূত্রে শহরের বাইরে গেছে তিনদিনের জন্য।বাড়ি ফিরবে আরো দুদিন পর।
ভাবি প্রশ্ন করে,”এমনটা হলো কী করে তন্নি?”
আমি তাকে কাঁদতে কাঁদতে সবটা খুলে বলি।
ততক্ষণে হাসপাতালে পৌঁছে গেছি।
ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম।
ডাক্তার ইনজেকশন সহ আরো কিছু করে।
ছেলেটা আমার কথা বলতে পারছেনা আতঙ্কে।শুধু মা মা করে।
ভাবি আমায় বাইরে নিয়ে যায়।
ছেলের একটু রেস্ট দরকার।
আমি তখনও কাঁদছি।বাইরে দুটো চেয়ারে বসি দুজনা।
ভাই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলছে।
ভাবিকে জড়িয়ে ধরে বলি,”ভাবিগো ঐ ডাইনিটা আমার সাজানো সংসারটা শেষ করে দিয়েছে।
আমার থেকে আমার স্বামীকে পযর্ন্ত কেড়ে নিয়েছে।
এতোদিন আমার সঙ্গে শত্রুতা করেছে।
এবার আমার ছেলের সঙ্গেও।”
ভাবি বলেন,”তোমার বিষয়ে সবটাই জানি আমি তন্নি।পরের ঘরের বউ আমি,তাই তোমার সংসারে কিছু বলতে পারিনা।
তোমার দেবর-শাশুড়ির জন্য তোমার বাড়ি যাওয়াও বন্ধ করতে হয়েছে।
তারা চায়না তুমি আমার সঙ্গে কথা বলো।
অনেক দিন ধরেই তোমায় কিছু বলতে চাই।সময়,সুযোগের অভাবে বলতে পারছিনা।
তোমার শহর ফেরত বড়োজা মহিলাটা খুব বেশি সুবিধার নয়।
সে তোমায় দিয়েই তোমাকে ধ্বংস করছে কিন্তু তুমি তা বুঝতে পারলে না।
একটা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে খুব সহজে তিত্বীয় ব্যাক্তি ঢুকতে পারেনা।যদি না তোমরা তাকে অনুমতি দাও।
এখানে তোমার জা’কে তোমাদের ভেতর এনেছো তোমরা নিজেরাই।
তোমার জা’য়ের উদ্দেশ্য,তোমায় দিয়েই তোমার সব ছিনিয়ে নেবে।
তুমি বোকা কিচ্ছু বুঝতে পারলেনা।
সর্বপ্রথম সে তোমার শাশুড়িকে হাত করেছে।তোমার শাশুড়ি শুরু থেকেই তোমার প্রতি রাগান্বিত ছিল।সে আরো কান ভাঙিয়ে তার মনটাকে বিষিয়ে তুলেছে।
এটা করেছে তোমার মনে অশান্তি তৈরি করার জন্য।
তুমি যখন ওদের অত্যাচারে বিরক্ত তখন সেই রাগ গিয়ে খাটিয়েছো আকাশ ভাইয়ের ওপর।
এতে করে দুজনের মাঝে ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে।
দূরত্ব বেড়েছে।একটা ফাটল তৈরী হয়েছে।
সেই ফাটলে অবস্থান করেছে তোমার বড়োজা।
দুজনকে মিল না করে,এক না করে দিয়ে আরো উস্কে দিয়েছে।
তোমরাও ওর তালে নেচেই গেছ।
তোমরা স্বামী স্ত্রী যদি ঠিক থাকতে তাহলে এমনটা হতোনা।
তোমার জা চেয়েছে সর্বপ্রথম তোমায় একা করবে,এরপর তোমার থেকে তোমার স্বামীকে কেড়ে নেবে।
সন্তানের দোহাই দিয়ে তুমি ও আকাশ ভাই টিকে
ছিলে।তাই এবার তার তীর তোমার ছেলের ওপর।
এজন্যই বলি বোন,যাই হয়ে যাক নিজের স্বামীকে কখনো হাতছাড়া করোনা।
স্বামী-স্ত্রীর মিল টা ধরে রাখতে হয়।
স্বামী যদি পাশে থাকে মেয়েরা এভারেস্ট ও জয় করতে পারে।”
আমি থম মেরে বসে রইলাম কিছুক্ষণ।
ভাবির প্রতিটি কথাই সত্য।
এই গভীর সত্য আমি উপলব্দি করতে পারিনি এতোদিন।
এদের অন্যায় অত্যাচার আমায় অন্ধ করে দিয়েছিল।
আমায় দিয়েই আমার এতো বড়ো ক্ষতি করেছে বড়োজা।
আমি টেরই পেলাম না।
সত্যি কতো বোকা আমি!
মানুষ কালসাপের চেয়েও ভয়ংকর।কতো সুন্দর একটা সাজানো সংসার,সম্পর্ক সব নষ্ট করে দিয়েছে মহিলাটা।
ভাবির দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলি,”এবার কী করব আমি ভাবি?
কোনো কী উপায় নেই?আমার সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য হলেও আমি লড়াই করতে চাই।
আমার সংসারটা টিকিয়ে রাখতে চাই।”
“সবটা এখন হাতের বাইরে চলে গেছে তন্নি।জানিনা কতোটা কী করতে পারবে।
আকাশ ভাই পুরোপুরি বদলে গেছে।
যে যা বলে তাই করছে।
তবে চেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।তুমি আকাশ ভাইয়ের সঙ্গে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে আবার এক হও।
এরপর প্রয়োজনে দুজনে অন্য কোথাও চলে যাও।
এটাই সমাধান,সর্বশেষ সমাধান।”
দীর্ঘশ্বাস নিলাম আমি।
মনস্থির করেছি।
ডাক্তার ডেকে পাঠালেন।
ঔষধ সহ কিছু পরামর্শ দিলেন।ভাই-ভাবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছেলে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
পরিবেশ শান্ত।
জা মনের সুখে গান গাচ্ছে আর কাজ করছে।
গায়ে ওরনা নেই।
পড়েছে একটা পাতলা শাড়ি।পেট-পিঠ সব দেখা যায়।
এসেছে থেকে এমন পোশাক পড়ে এই মহিলা।দেখে আমারই লজ্জা করে।
বিবাহ উপযোগ্য দেবর সামনে বসে ভাত খাচ্ছে এবং আড় চোখে তাকে দেখছে।
মহিলা এতে ইনজয়ই করছে।
ইনিই আবার সারাক্ষণ আমার খুত ধরে বেড়ায়।
অথচ এর নিজেরই চলন খারাপ।
শাশুড়ির সামনেও আজ পযর্ন্ত মাথায় কাপড় ছাড়া গিয়েছি নাকি সন্দেহ।
আমি কিছু না বলে সোজা ঘরে ঢুকলাম।
মা একবার এলো আমার ছেলে দেখতে।জা ও এলো।সঙ্গে তার মেয়ে।
আমি দাড়িয়ে থাকি সেখানেই।
ওরা চলে গেলে দরজা আটকে দেই।ছেলেকে খাইয়ে দেই।
দুদিন পর আকাশের ফেরার দিন।
এ দুদিন আকাশের সঙ্গে আমার একমিনিট ও কথা হয়নি।যতোবার কল দিয়েছি বন্ধ পেয়েছি।
ওর মাকে নাকি বলেছে বাড়ি থেকে কেউ যেন ফোন না দেয়।কাজে ব্যস্ত থাকবে।
ঐ ঘটনার পর ছেলেকে চোখে চোখে রাখি ভীষণ।
আকাশ যেদিন ফিরবে সেদিন সন্ধ্যায় খুব সুন্দর করে সাজুগুজু করি আমি।
প্রেগনেন্সির উচু পেট নিয়েও শাড়ি পড়েছি।
হাত ভর্তি চুড়ি।চুলে খোপা।
এসবই আকাশের জন্য।আমার এমন সাঁজ তার ভীষণই প্রিয়।
আজ সকল মনোমালিন্য দূর করব।স্বামী-স্ত্রী এক হবো আমরা।
ছেলেকে আগেই খাইয়ে ঘুম পাড়িয়েছি।এসময়টা হবে আমাদের একান্তের।
কলিং বেলের শব্দ পেতেই তড়িঘড়ি দরজার কাছে যাই।
দরজা খুলতেই দেখি আকাশ ও রিঙ্কি দাড়িয়ে আছে।দুজনে হেসে কথা বলছে।
মাথায় আমার বাজ পড়ে যেন।
আকাশ আমার দিকে তাকিয়ে বলে,” জোকার সেজে দাড়িয়ে আছো কেন?
ভেতরে আসতে দাও আমাদের।”
অপমানে কষ্টে সেস্থান ত্যাগ করি।ঘরে চলে যাই।যেতে যেতে শুনি রিঙ্কিকে ফেরার পথে রাস্তায় পেয়েছে আকাশ।
আমাদের বাড়িতেই আসছিল তাই নিয়ে এলো।
দুদিন বাদে বিয়েও আছে।
বড়োজা আল্লাদে আটখানা এসব শুনে।
ঘরে গিয়ে সর্বপ্রথম আয়নার সামনে দাড়ালাম।
খুব কী অসুন্দর লাগছে আমায়?
জোকার লাগছে?
স্বামীর মুখ থেকে এতো বড়ো কথা কোনো স্ত্রী মানতে পারে?
সৃষ্টিকর্তা আমায় ভালো ভাগ্য না দিলেও দিয়েছে সুন্দর চেহারা।ফর্সা গায়ের রঙ আমার।
লম্বা,মাথা ভর্তি চুল,মিডিয়াম স্বাস্থ্য।
মেয়ে পেটে আসার পর চেহারার পরিবর্তন হয়েছে আরো।
গোলগাল হয়েছে মুখখানা।যদিও রুক্ষতা রয়েই গেছে।তবে সাজের আড়ালে ঢাকা পড়েছে তা।
নোনাজল বেয়ে পড়ে চোখ দিয়ে আমার।
রাগে টেনে-হিচড়ে পরণের শাড়ি সহ প্রসাধনী ধুয়ে মুছে সাফ করি।
কার জন্য সাজলাম আমি?
যে ভালো করে তাকালোই না।যার আমার প্রতি কোনো অনুভূতিই নেই।
বিছানায় বসি আমি।
অতীতের কতো স্মৃতি মনে পড়ে।
আমায় এমন সাজে দেখলে আকাশের যেন ঈদ লেগে যেত।
খুশিতে চোখ-মুখ উপচে পড়তো।
আজ কীনা!
আর ভাবতে পারলাম না।
শুয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।মনকে শান্ত করে ভাবলাম,এক বারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হেরে গেলে চলবেনা আমার।
যদি না পারি একবার,চেষ্টা করব হাজার বার।
উঠে দাড়ালাম।
সাধারণ জামা-কাপড় পরেই নিচে এলাম।
আকাশ খাবার টেবিলে।
পাশে বসেছে রিঙ্কি।আমার একটু মন খারাপ হলেও কিছু বলিনা।
সবাইকে খাবার তুলে দিলাম।
আজ আকাশের পছন্দ মতো রান্না করেছি।
আলোচনায় জানতে পারলাম রিঙ্কি বিয়ে শেষ হওয়া অব্দি আমাদের বাড়িতেই থাকবে।
খাবার দিয়ে পাশে দাড়িয়ে আছি।সবাই সহ আকাশ খেয়ে নিল।
আমায় বলল না একবারো।
দাড়িয়ে থাকতে কেমন হ্যাংলা লাগছিল নিজেকে।
ওদের খাওয়া শেষ হতে আমিও খেয়ে নেই।
আকাশ ঘরে যায়।আমাদের ঘরে নয়।অন্য ঘরে।
ওর পিছে পিছে আমিও যাই।
বড়োজা ডেকে বলে,”ওদিকে কোথায় যাও তন্নি?”
আমি বলি,”আমার বরের কাছে।”
বড়োজা মুখটা কুচকে নেয়।এমন কিছু আশা করেনি সে।
ঘরে গিয়ে দেখি আকাশ পোশাক বদলে বিছানায় রেখে সবে বসেছে।
আমি ওর পোষাক গুছিয়ে দেই।ধুয়ে দেওয়ার জন্য বাছাই করি।
আগ বারিয়ে প্রশ্ন করি,”মিটিং কেমন হলো?”
আকাশ জবাব দেয়না।
আবারো প্রশ্ন করি।
এবার সে কিছুটা চেচিয়ে বলে,”এতো প্যাচাল কেন কানের কাছে?
চুপ থাকতে পারোনা?
কাজের খোঁজ রেখে তোমার কী লাভ?
তুমি কী আমার কাজ করে দেবে?
এসেছি থেকে ক্যাচাল লাগিয়ে রেখেছে।”
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
আমি চুপ রইলাম তবুও।এখন কিছু বললে ঝগড়া লেগে যাবে।
যা আমি চাইনা।
একটু পর আবারো আকাশের পাশে দিয়ে বসলাম ঘা ঘেসে।
আমি বসতেই সে সরে গেল।যেন ঘৃণা লাগছে।
বললাম,”চলো আকাশ আজ আমরা আমাদের ঘরে ঘুমাই।
ছেলে ঘুমিয়ে গেছে।ছেলের কথা শুনেছ তো নিশ্চয়।কাল কথা বলবে।
কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে এসেছো,চলো ঘুমিয়ে পড়ি।”
আকাশ তেজ দেখিয়ে বলে,”তোহ যাওনা।
আমি কী তোমার হাত-পা বেধে রেখেছি?
তোমার সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমোতে আমার আর রুচি হয়না।”
বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা,ওর কথা শুনে এক মূহুর্ত্তের জন্য আমি যেন হারিয়ে গেলাম।
মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেছে।
কোনো রকম হেঁটে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলাম।
আমার যাওয়া সঙ্গে সঙ্গে আকাশ শব্দ করে দরজা লাগায়।
আমি একজন প্রেগনেন্ট মানুষ।সারারাত ওর দরজার সামনে বসে থেকে কেঁদেছি।
পেটের এক সাইটে শক্ত হয়ে গেছে একদম মেঝেতে বসে থেকে।তবুও ওর মায়া হয়না।দরজা খুলে দেয়না।
মাঝরাতে দরজায় মাথা দিয়েই ঘুম ঘুম ভাব হয়েছে সবে,কারো পায়ের শব্দ পাই।
চোখ খুলে দেখি রিঙ্কি যাচ্ছে চুপিচুপি।
হয়ত আকাশের ঘরের দিকে এসেছিল।আমায় দেখে এবার পালিয়ে যাচ্ছে।
এটা আমার মনের ধারণা।
ধারণা দিয়ে প্রতিবাদ করা যায় না।আমার প্রতিবাদে কেউ সম্মতিও দেবেনা।উল্টে সবাই মিলে ধরবে।আকাশ ও নেই আমার পক্ষে।
এই অবস্থায় এতো মানসিক চাপ আমি নিতে পারব না।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।অন্য কোনো পেজ বা গ্রুপে গল্প পাবেন না আর।তাই বাকিটা পড়তে নাদিয়া আফরিনকে ফলো করুন।
ভোর রাতের দিকে ঘরে আসি।
সারারাত বাইরে থাকায় জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।উঠতে দেরি হচ্ছে।
মা ও দেবর চেচিয়ে বাড়ি মাথায় করে।রান্না কেন হয়নি কখনো।
বড়োজা আসে ঘরে।জোরে জোরে দরজা ধাক্কায়।
যেন অপরাধ করেছি আমি।
খুব কষ্টে উঠে দরজা খুলেছি।
জা প্রচন্ড চড়াও আমার ওপর।
চেচিয়ে বলে,”সকাল সকাল কী নাটক শুরু করলে?
রান্নাবান্না কিছু করবে নাকি!
এতো বেলা অব্দি কেউ ঘুমায়?
গরু নাকি তুমি!
বাড়িতে যে আমার বোন আছে সে খেয়াল আছে?
তাকে খেতে দেব কী?
রান্নাটা কখন করবে শুনি?
বেলা অব্দি ঘুমাও কোন সাহসে।”
যেই মানুষটি আমার সামনে দাড়িয়ে এতোগুলো কথা বলল সে নিজেই ওঠে বেলা এগারোটায়।
আজ কোন ভাগ্যে তাড়াতাড়ি উঠেছে কে জানে!
একটা গ্লাস পর্যন্ত ধোয় না এই মহিলা।
এর সঙ্গে তর্ক করে লাভ নেই।এনার্জিও নেই।ভাবলাম ও বলছে বলুক,প্রথমে একটু ভালো করে বুঝিয়ে দেখি।
বললাম,”আজ আমার শরীরটা ভালো নেই ভাবি।
আজকের রান্নাটা আপনি করে নিন ভাবি।
প্রচুর জ্বর এসেছে।উঠতে পারছিনা।”
সে বলে,”আমি রান্না করতে পারব না।আগুনের তাপে আমার র্যাশ হয়।স্কিনে রেড সার্কেল হয়।”
বুঝলাম না।এতোদিন কী ইনি রাধেনি?
একদিন রান্না করলে এতো কিছু হবে?
আবারো বলি,”তাহলে আপনি এঠো বাসন গুলো ধুয়ে দিন।”
“এঠো বাসন ধুলে আমার এলার্জি হবে হাতে।ভাবলে কী করে আমি সবার এঠো বাসন ধুবো।”
অথচ প্রতিদিনই এমন কাজ আমি করি।
বললাম,”কাল বাদে বাড়িতে বিয়ে।আজ থেকেই ঘরের কাজ করতে হবে।
আপনি তাহলে বাড়িঘর পরিষ্কার করুন।
আমি কষ্ট করে রান্নাবান্না করে নেই।”
“আমায় কী তুমি কাজের মেয়ে ভেবেছো?
বুয়া নাকি আমি যে এসব করব!
এছাড়াও আমার ডাস্টিং এ্যালার্জি আমি।বেশি কাজ করলে আবার মাইগ্রেন ও শুরু হয়।
এতো কথা না বলে রান্নাটা চাপালেই পারো।
আমার বোনটা না খেয়ে থাকবে নাকি তোমার জন্য।সামান্য জ্বরের জন্য এতো অযুহাত কেন তোমার?আমরা কী সন্তান জন্ম দেইনি?”
এবার আর চুপ থাকলাম না আমি।
সোজা বলে দিলাম,”আপনার বোন কী খাবে না খাবে সেটা আপনার ব্যাপার।নিজের বোন,নিজে যত্ন করুন।
আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে কিচ্ছু করতে পারব না।
কাজের লোক আমিও নই।
নিজে রান্না করে খেতে পারলে খান,না পারলে না খেয়ে থাকুন।”
আমার কথায় জা এবার চিৎকার শুরু করে।
আমি সরে গিয়ে বিছানায় বসি।
শাশুড়ি মা,দেবর ও আকাশ দৌড়ে আসে।
জা বলে,”আপনার মেজো বউ আমায় হিংসে করে মা।কদিনের জন্য এসেছি আমি,রান্না করে খেতে বলে।
বাড়ির অথিতিকে না খাইয়ে রাখতে বলে।
জ্বর নাকি এসেছে ওর।
তাই পটের বিবি হয়েছে।”
আকাশ তেড়ে এসে বলে,”করোটা কী তুমি সারাদিন?
রান্নাটা করে দিলে সমস্যা কোথায়?
হাত ক্ষয়ে যাবে?
অথিতির সামনে বাড়ির সম্মান নষ্ট করবে?
ভাবিরা কদিন থেকেই চলে যাবে।
ওদের সঙ্গে কেন ঝগড়া করছো তুমি?
তোমার মন আসলেই কালো।”
তীব্র প্রতিবাদি স্বরে বলি,”ভাবিও এ বাড়ির বউ।
কাজ আমি করলে তার ও করতে হবে।
আমার শরীর খারাপ,আমি কিচ্ছু করতে পারব না।
আমার চিন্তা তোমরা না করলে আমার ঠিকই করতে হবে।”
আকাশ আমায় গালি দেয় প্রচুর।
ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
ওদিন ওরা বাইরে থেকে কিনে এনে খায়।আমাকে বা আমার ছেলেটাকেও দেয়না।
ছেলে ক্ষিদেতে কষ্ট পেলে হালকা কিছু রান্না করে দেই।
ওদিকে রিঙ্কির প্রতি আকাশের দরদ বেড়ে চলে দিনকে দিন।ওকে যেন চোখে হারায়।একসঙ্গে খেতে বসে।রাত ভর গল্প করে।
ওসব সহ্য করতে না পেরে আমি আকাশের সঙ্গে ঝামেলা করি।সাফসাফ জানিয়ে দেই রিঙ্কির সঙ্গে বেশি ঢলাঢলি দেখলে পদক্ষেপ নেব আমি।
এরপর থেকে দেখি ওরা আমায় এড়িয়ে চলে।
বড়োজা বাইরে নিয়ে ওদের দেখা করায়।
আমার ছেলেকেও আর সহ্য করতে পারেনা আকাশ।বাচ্চার গায়ে হাত তোলে।ছেলে ওর সঙ্গে ঘুমোতে চাইলে আকাশ নাড়াজ।
বাচ্চাকে গাল-মন্দ করে।
দেবরের বিয়ের শপিং পর্যন্ত আকাশ,জা আর রিঙ্কি গিয়ে করে।
আমার খোঁজটাও নেয়না ওরা।
(পর্ব বড়ো দিয়েছি।সবাই একটু রেসপন্স করবেন।অতীত শেষ হয়ে প্রতিষ্ঠিত পর্ব শুরু হতে চলেছে।এরপর প্রতিশোধ।)