প্রণয়ের সুর ২ পর্ব-১৯+২০

0
982

#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব১৯
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
নিঝুম রা একে একে গাড়িতে উঠে বসলো,নিঝুম কে স্বাভাবিক দেখে সব ভাই বোনরা মজা নিচ্ছে,সাব্বির তো বলেই বসে–,, ভাই তার মানে তুমিও মনে মনে বিয়ে করতে চাচ্ছিলে বলতে পারছিলো না ছেলেটা আহা, কি লজ্জা কি লজ্জা!

গাড়িতে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠলো সবাই।কিন্তু নিঝুম বেচারা চুপচাপ আছে, তার দাদির বর্ণনা অনুযায়ী মেয়ের ভদ্রতা দেখে না পরে বেহু”শের পরিবর্তে বেহুলা হয়ে যায় কে জানে।
——-
সাহিলদের বাড়িতে বেশ আয়োজন করা হয়েছে,সোহানা রান্না ঘরে গিয়েছিলো তাকে চার চারবার ধম”ক দিয়ে বের করে দিয়েছেন রোজিনা বেগম।পঞ্চম বার না ফেরাতে পেরে কাজে হাত দিতে দিয়েছেন তিনি।রোজিনা বেগম মনে মনে খুশিও হলেন মেয়েটা কাজে বেশ পটু।ছেলের বউ হিসেবে এরকম লক্ষ্মীমন্ত বউ তো তিনি চেয়েছিলেন।তবুও তিনি জে”দ বজায় রাখলেন।

মেহেরিন কে তৈরি করানোর দায়িত্ব টা ও সোহানার কাঁধে দিয়ে দিলেন মেহেরিনের মা। সোহানার ও মেহেরিন কে এ কয়েকদিনে বেশ ভালো লেগেছে।

মেহেরিন কে শাড়ি পড়িয়ে দিলো সোহানা,মিষ্টি কালারের শাড়িতে বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছে মেহেরিন কে,সোহানা তো মজা করে বললো–,,আজ দেখবে তোমার হবু বর তোমাকে দেখে বেহু”শ হয়ে পড়ে যাবে।

মেহেরিনের ঘরে তখন আসলো রৌফ,রৌফ এসে বসলো খাটে পায়ের উপর পা তুলে বললো–,,এমনিতেই পে”ত্নী, তার উপর এরকম করে পে”ত্নী রানী সাজার কি দরকার ছিলো তোমার ছোট বইন?

সোহানা ভুল শুধরানোর মতো করে বললো–,,ভাইয়া ভুল বলছো তুমি,আপুকে অনেক সুন্দর লাগছে আজ।

মেহেরিন বলে উঠলো–,,তুমি ও বেশ মিষ্টি দেখতে আমাদের ভাইয়া দেখে ঠিক থাকতে পারে তো নাকি?ডাক্তার মানুষ কখন হা’র্ট ফেই”ল না করে বসে!

মেহেরিনের কথা শোনা মাত্ররোই দরজার সামনে জোরে জোরে কেশে উঠে সাহিল।সোহানা সাহিল কে দেখে বেশ লজ্জা পায়।এমনিতেই তাদের দুজনের মধ্যে কোনো কিছুই ঠিক হচ্ছে না,দুজন দুজন কে দেখলেই কেমন অস্ব”স্তিতে ডুবে যাচ্ছে।

সোহানা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বললো–,,আমার কিছু কাজ আছে।

সোহানা চলে যেতেই হো হো করে হেসে উঠলো রৌফ আর মেহেরিন।

সাহিল গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,দিন আমারও আসবে বলে দিলাম।আর রৌফ রেডি থাক তোকে চ”ড় মে’রে দেওয়া মহান নারীর আসছে আজকে!

রৌফ থতমত খেয়ে উঠে বসলো, মেহেরিন বলে উঠলো–,,কি খিচুড়ি পাকিয়েছো বড় ভাই বলে ফেলো।

রৌফ বলে উঠলো –,,এই তোরে না দেখতে আসবে,যা তো সাজায় মন দে।বা”জে কথায় কান দিস না।

সাহিল বলে উঠলো–,,দেখবো তো বা”জে কথা নাকি কাজের কথা,ওই মেয়েকে দেখলেই তো তোর পেন্ট ডি”লে হয়ে যায় বুঝিস না মনে করিস।

রৌফ রেগে বললো–,,দেখো ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু।

তখনই নিচ থেকে মানুষ জনের কথার আওয়াজ ভেসে আসলো। সাহিল বলে উঠলো –,,ওই তো এসে গেছে তোদের দুজন কে বাঁশ দেওয়ার মানুষ।

মেহেরিন বললো–,,একটু দেখে আসি দাঁড়াও।

রৌফ বলে উঠলো–,,মান সম্মান টা খাই’স না বইন,আগের বার তো ওনাদের সামনে তুই এতো ভদ্র সেজেছিস, এবার যদি দেখে এভাবে নাচানাচি করছিস তো আর দেখতে হবে না।

মেহেরিন বসে রইলো চুপচাপ, কোন ভদ্রলোক তাকে দেখতে এসেছে একটু দেখতে হবে না।

নিঝুমের পরিবারের সবাই কে খাতির যত্নে ব্যস্ত হলো সবাই।

সোহানাকে অনেকটা কড়াকড়ি ভাবেই বলেছে রোজিনা বেগম।সবার সামনে যাতে এমন কিছু না করে যাতে তাদের অসম্মানিত হতে হয়।আর সুন্দর করে শাড়ি পড়ে সেজেগুজে যাতে সবার সামনে আসে।

সোহানা গোল্ডেন পাড়ের খয়েরী রঙা একটি শাড়ি পড়েছে সাথে শুধু একটু লিপস্টিক এর থেকে বেশি ওর কাছে বারাবাড়ি যেখানে সাজার কথা মানেই বিলাসিতা মনে হতো এখন কতো কতো জিনিস সে না চাইতেই পাচ্ছে তার পরও এগুলো নিছক অপচয় ছাড়া কিছুই মনে হয় না সোহানার কাছে,তবে যারা সাজতে পছন্দ করে তারা সাজতেই পারে তাতে বিরো’ধিতা করতে যাবে না সোহানা।

সাহিল কথা বলছিলো নিখিলের সাথে,আর বাকিরা তারা তো নামিরা তেই ব্যস্ত, এই বাচ্চা মেয়েটা একাই সবাই কে মাতিয়ে রাখতে পারে, বলা যেতে পারে এই একটা মানুষ পুরো বাড়ির মানুষের প্রাণ।

অন্যদিকে,জেরিন,বৃষ্টি, নেহা,নিশাত গেলো মেহেরিন কে দেখতে,মেহেরিনের সাথে বসে আছে সোহানা।তাদের সবার মধ্যে সহজেই ভাব হয়ে গেলো,মেহেরিন প্রথমে কিছুটা অস্ব’স্তি তে ভুগলো সে সব সময় নিজের পরিবারের মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রেখেছে।তাদের পরিবারে মানুষের সংখ্যাও কম এতো গুলো মানুষ কে এক সাথে দেখে কিছুটা ঘা’বড়ে গেছে,সোহানা সবার সাথেই হেসে হেসে কথা বলছে।কিছুক্ষণ পরই নিচ থেকে ডাক পড়লো মেহেরিন কে নিয়ে যাওয়ার।

সোহানার সাথে মেহেরিন আগে আগে আর পেছন পেছন চৌধুরী পরিবারের মেয়েরা।

সাহিল আচমকাই তাকালো উপরের দিকে তার চোখ আটকে গেলো খয়েরী রঙা মেয়েটার দিকে,উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ে শাড়িটা কি সুন্দর মানিয়েছে,চোখের পলক পড়তে ভুলে গেলো সাহিলের,এর আগেও মেয়েটা কে দেখেছে,কিন্তু এতোটা সুন্দর লাগেনি হয়তো ওরকম ভাবে তাকানোই হয়নি তার।

মেহেরিন ভাবলো ছেলেটাকে এই ফাঁকে একটু দেখে নেই পরে যদি আর তাকাতে না পারে।

মেহেরিন সবার দিকেই অল্প স্বল্প তাকালো,হঠাৎ করেই চোখ আটকে গেলো চকলেট কালার শার্ট পরিহিত ছেলেটির দিকে,তার কেনো যেনো মনে হলো এটাকে কোথায় যেনো দেখেছে, তার ভাবনার মাঝেই সোফার নিকট চলে আসলো তারা।

সেতারা বেগম এসে মেহেরিন কে ধরে নিজের পাশে বসালো।মেহেরিনের রুপের প্রশংসা করে বললো–,,চাঁদের টুকরা একখান, এই নিঝুম দেখ তো পছন্দ হয়েছে কিনা আমার বোন কে।

নিঝুম এতোক্ষণ ধরে নিচু হয়ে বসে ছিলো,আর ভাবছিলো কোথায় এসে পড়েছি বাবা।এখন আবার তার দাদী টা তার মান সম্মান টা না শেষ করে দেয় সবার সামনে।

নিঝুম তাকাতেই মেহেরিন ও তাকালো দুজনেরই চোখাচোখি হলো,নিঝুম মুচকি হেসে ফেললো।

মেহেরিন ও বুঝলো এই হাসির কারন,তার মানে এই লোক মেহেরিন কে চিনে ফেলেছে,মেহেরিন যেনো বেলুনের মতো চুপসে গেলো,সে সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে ফেললো,শাড়ির দু পাশ চেপে ধরে বসে রইলো শুধু। কি লজ্জা জনক একটা পরিস্থিতি, মেহেরিনের চুপসে যাওয়া দেখে নিঝুমের হাসি পেলো কিন্তু এই মুহুর্তে কিছুতেই হাসা যাবে না তা যে দাদি তুলে দিবে এক আছাড়!

নিঝুম কে মুচকি হাসতে দেখে রৌফ তার কানে কানে বললো–,,ভাইয়া সাবধান আমার ভোলাভালা বইন কিন্তু রেগে গেলে এট”ম বো”মা হয়ে যায়।

নিঝুম কিছু বললো না, এ যে কেমন ধা’মাকা সেদিনই বুঝা হয়ে গেছে তার।

এবার আসলো সেই ভয়ান”ক মুহুর্ত,মেহেরিনের কাছে এটা ভয়া’নকই এই ব্যাটার সাথে এখন কথা বলতে গেলে কি না কি বলবে,অসম্ভব কিছুতেই যেতে পারবে না আবার না করতে ও পারবে না,কি একটা অবস্থা!

হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে মন চাইলো ওর।মেহেরিনের এমন অবস্থা দেখে বেশ মজা নিচ্ছে রৌফ।

মেহেরিন তো সোহানা কে চেপে ধরে বললো–,,ভাবী আমার সাথে চলো প্লিজ, আমার না কেমন কেমন জানি লাগছে।সোহানা পড়লো বিপ”দে তার যে শাশুড়ী এমনিতেই তাকে থ্রে”ট দিয়ে রেখেছে এই মেয়ে একদম বারাবাড়ি করবে না, এখন যদি যায় না জানি কি বলে বসে।

মেহেরিন তো মেহেরিনই সোহানা কে টেনে টুনে সাথে নিয়ে গিয়ে হাজির ছাদে তার পরে আসলো রৌফ নিঝুম কে ভিতরে দিয়ে সে কে’টে পড়লো। সোহানা হাতের নখ কাম”ড়াচ্ছে বার বার।

নিঝুম সোহানা কে দেখে হেসে কুশল বিনিময় করলো।

বাকি ভাই বোন সব এসে হাজির ছাদের সিঁড়িতে কান পেতেছে দরজায়।নিখিল সাহিল কে ধাক্কা মে’রে ভিতরো পাঠিয়ে দিয়ে বললো–,,যা শা’লা নিজের বউ গিয়ে নিয়ে আয়।

সাহিল বোকার মতো বলে উঠলো–, আমাকে এসবে কেনো টানছিস?সোহানা উনি আমার কথায় কেনো আসবেন!

সাব্বির বলে উঠলো–,,ভাইয়া এটা কোনো কথা তুমি কি আন”রোমান্টিক গো বউ কে আপনি আজ্ঞে করছো।আমি তো ভাবলাম তোমার বাস’র টাস’র সব হয়ে গেছে এখন হানিমুনে যাবে।

সাব্বিরের পিঠে একটা মারলো মিহির রেগে বললো–,,তোর কি কোনো দিন লজ্জা বলতে কোনো কিছু ভিতরে ইনস্টল হবে না রে।

সাব্বির গর্বের সাথে বললো –,,না।

সাহিল ভাব সাব নিয়ে বললো–,,এই সোহানা, এ,,,এদিকে আসো!

সোহানা যেনো হাফ ছেড়ে বাচঁলো।সে ও দৌড় মে’রে চলে আসলো। ছাদের অপর পাশে সাহিল সোহানা কে নিয়ে চলে গেলো এ পাশ থেকে ওপাশ দেখার কোনো উপায় নেই।

মেহেরিন এবার নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে করলো।

নিঝুম যেনো এবার সুযোগ পেয়ে বসলো মুচকি হাসিটা এখনো তার মুখে বিদ্যমান সে বললো–,,আপনিই তাহলে দিদুনের শান্ত শিষ্ট ভদ্র মেয়ে!

মেহেরিন কে যেনো রাজ্যের লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো।চোখ তুলেই তাকাতে পারছে না।

নিঝুম আর কথা বাড়ালো না,সে সেখান থেকে চলে আসলো।সব ভাই বোন রা হতাশ হয়ে বললো–,,নিঝুমের মনে হয় মেয়ে পছন্দ হয়নি।

নিঝুম নেমে গেলো সবাই তার দিকে তাকিয়ে ছিলো সিঁড়ি তে।মেহেরিন ও কিছু বললো না, তা যাই হোক এই ছেলের মুখোমুখি আর না হলেই ভালো।আর কতো লজ্জা দিবে কে জানে।
মেহেরিন ও দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

অন্য দিকে কারো কোনো কিছু হোক বা না হোক সাহিল আর সোহানার প্রণয়ের শুরুটা হয়তো এখান থেকেই হয়ে গেলো।
——–
বিয়ের ডেইট ঠিক করা নিয়ে কথা হবে এখন,সেতারা বেগম নিঝুম কে চেপে ধরে বললো–,,কিরে মাইয়া কেমন দেখলি।

নিঝুম বললো–,,ভালো।

সেতারা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললো–,,শুধুই ভালো?পছন্দ হইছে নি।

নিঝুম কিছু বললো না।

সেতারা বেগম বলে উঠলো–,,এই মাইয়া আবার তোরে ফিরাইয়া দেয় নাই তো।আমার মান সম্মান কিছু রাখছি না।

নিঝুম এবার বললো–,,পছন্দ হইছে,একবারে তোমার মতোই মেয়ে।দেখতে সহজসরল কিন্তু কর্মকান্ড ডাকা’ত দের মতো।

সেতারা বেগম হেসে বললো–,,জোরে বল হারাম”জাদা।

নিঝুম বললো–,,পারবো না।

সেতারা বেগম নিঝুমের কান চেপে ধরে বললো–,,জোরে বল পছন্দ হয়েছে।

নিঝুম আর সেতারা বেগমের কাহিনি দেখে সবাই হাসছে।

নিঝুম কান ছাড়াতে ছাড়াতে বললো–,,ছাড়ো দিদুন কান ছিড়ে যাবে আমার।বলছি বলছি পছন্দ হয়েছে মেয়ে!

পরে যা হলো বড়দের কথা, এসবে ছোটরা নেই।তবে এটা সবাই জানলো এক সপ্তাহ পর বিয়ে হবে।

মেহেরিনের ঘরে এসে হাজির নামিরা।নামিরা মেহেরিনের গালে চুমু খেয়ে নেহার উদ্দেশ্য বললো–,,মাম্মা নতুন মামনি পছন্দ হয়েছে, মামনি অনেক কিউট!

নেহা নামিরা কে কোলে নিয়ে বললো–,,তাই নাকি।

হামিদা বেগম, সাহারা বেগম, তাহমিদা বেগম এসে বললো–,,আমাদের মুরব্বির ভোট তো পেয়েই গেছি,আর কোনো সন্দেহ নেই মেহেরিনই হবে আমাদের ছেলের বউ!

(রিচেক করা হয়নি ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)
চলবে….

#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব২০
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
হাসিঠাট্টা গল্প আড্ডা শেষে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো।
মেহেরিন বেচারি এখনো লজ্জা পাচ্ছে,কারন একটাই নিঝুম নামক ব্যক্তির সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ, আর এই লোকটা কে যতটা ভদ্র দেখায় সে ততটাও ভদ্র না, কি ভাবে এক কথায় তাকে পঁচা’নি দিয়ে কে’টে পড়লো,আর মেহেরিন কিনা কিছু বলতেও পারলো না।
তার উপর রৌফ সেই কখন থেকে মজা নিচ্ছে তার সাথে।

রাহার একটু ফ্রেশ হতে হবে, নিশাত রোহানের সাথে মজা করতে গিয়ে ওর জামার নিচের অংশে কিছুটা পানি পড়ে গেছে।
নেহা বলেছে উপরে মেহেরিনের ঘরে যাওয়ার জন্য। রাহা মেহেরিনের ঘর খুঁজে যেই না ঢুকতে যাবে তখনই রুম থেকে বের হয় রৌফ।রাহার তো আরো বেশি মে’জাজ খারা”প হয় এমন সময় এখানে রৌফ কে দেখে, যতই হোক লোকটা তার শিক্ষক কিন্তু ততটা সম্মান রাহা তাকে মন থেকে করতে পারছে না।প্রথম দিনই মানুষ টা কেমন ব্যবহার করলো,তার উপরে যতবারই দেখা হয়েছে জ্ঞান দিতে দিতে মাথা খারা’প করে ফেলেছে একদম।কেনো ভাই ক্লাসে জ্ঞান দিয়ে তোমার মন ভরে না যত্তসব!

রাহা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,আপনার কি সমস্যা বলুন তো,আপনার শিক্ষক না হয়ে খা’ম্বা হওয়া উচিত ছিলো যখন দেখি খাম্বা’র মতো সামনে চলে আসেন আর ধাক্কা মারে”ন!

রৌফ ও বিরক্ত হয়ে বললো–,,এই দেখো আমিও ইচ্ছে করে মারি’নি।তুমি কেনো অন্যের রুমে ন’ক না করে ঢুকতে যাও ম্যানা’র্লেস কোথাকার!

রাহা রেগে বললো–,,আপনার রুমে ঢুকেছি?ঢু’কিনি তো তাহলে বেশি কথা বলবেন না,আপনাকে না আমার দেখলেই বিরক্ত লাগে।বিরক্তিকর মানুষ একটা যখন তখন মানুষের সাথে লাগতে আসে।

সেখানে তখন আসে মিহির, রাহা মিহির কে বলে–,,ভাইয়া তুমি কি আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসবে,এখানে আমার বিরক্ত লাগছে।

মিহির বুঝলো রাহা রৌফ কে দেখেই বেশি বিরক্ত হচ্ছে আবার এখন রেগেও আছে, এখন রাহা যা বলছে তাই করা উচিত।

মেহেরিন ভিতর থেকে ডেকে বললো–,,রাহা,রাগ করো না প্লিজ ভাইয়া একটু এমনই ওর কথায় রেগে চলে গেলে আমি অনেক কষ্ট পাবো প্লিজ সবার সাথে যেও।

মিহির যেনো স্বস্তি পেলো সে রৌফ কে বললো–,,রৌফ তুমি আমার সাথে চলো সাহিল তোমাকে ডাকছিলো।

মেহরিন এসে রাহার হাত টেনে তাকে ভিতরে নিয়ে বসাল।

রাহা মুখ ফুলিয়ে রেখেছে, কেনো যে এর সাথে বার বার দেখা হয়,পারলে তো ভার্সটিতেও যেতো না ও।

মেহেরিনের বুঝতে বাকি রইলো না রাহাই সে মেয়ে যার কথা সাহিল সকালে বলছিলো।এবার রৌফ কে ইচ্ছে মতো পঁচা’নি দেওয়া যাবে।
————-
শিলার সামনে বসে আছে শিলার ভাই সোহেল রানা।
সোহেল তার বোনের দিক রাগী চোখে তাকিয়ে
বললো–,, তোর জন্য কি কি করিনি আমি আর তুই কিনা শেষ মেষ আমার শ’ত্রু কে পছন্দ করেছিস?

শিলা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো–,,ওকে পছন্দ করতাম ভাইয়া যতদিন ওকে পাওয়ার সম্ভবনা ছিলো।কিন্তু এখন তা কিছুতেই সম্ভব না।
আমাদের কাছে আমাদের ব্যবসাই আগে,আমি চাই না ওই এমপি আর পুলিশ অফিসারের জন্য আমরা ফেঁ’সে যাই।
তুমি ওই ডাক্তার টাকে অযথাই সুযোগ দিলে মে’রে ফেললে তো সব ঝা’মেলাই চু’কে যেতো।এখন ওটা ও লাপাত্তা সাথে ওই মেয়েটাও।কোনো ভাবে যদি পুলিশের হাতে পরে তো সব শেষ হয়ে যাবে।

–,,অন্য কিছু ভাব যাতে আমরা ধরা না পড়ি।

–,,নিখিলের একটা মেয়ে আছে,ওটা কে যদি কোনো ভাবে আমাদের কাছে আট’কে রাখতে পারি। ওই মেয়ে এখানে থাকতে থাকতেই দেশ ছেড়ে যাবো আমরা।কিন্তু ভাবি আর তোমার ছেলে?

–,,ওদের কথা পরে ভাববো ওদের কে তো কিছু করবে না, তোর ভাবি তো জানেই না আমরা কি করি।আর ওকে বলবো দেশের বাহিরে কাজের জন্য যাচ্ছি আগেও তো গিয়েছি সন্দেহ করবে না!

দরজা আড়াল থেকে সব কিছু শুনে ফেললো সোহল রানার স্ত্রী মিনা।সে জানে না তার স্বামী কি বিষয়ে কথা বলছে তবে এটা নিশ্চিত কোনো না কোনো খারা”প কাজে জড়িত!ওর ভালোবাসায় কি এমন কমতি ছিলো যার জন্য লোকটা তার সাথে এতো নিখুঁত অভিনয় করলো?এতো গুলো বছর ধোঁ’কায় রেখেছে তাকে!আর তাদের সন্তান তাকে কি জবাব দিবে মিনা,কিছুদিন পর যখন ছেলেটা বড় হবে তখন?তখন তাকে ও তো ভুগতে হবে তার বাবার কর্মফল।কষ্টে বুক ফে’টে কান্না আসলো মিনার,দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে, রুমে গিয়ে নিজের ছয় বছরের ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।

————
বসার ঘরে বসে সবাই শপিং করা নিয়ে আলোচনা করছে, বিয়ের কোন দিন কোন ড্রেস পড়বে এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।সবচেয়ে বেশি আনন্দে আছেন সেতারা বেগম, নাতি যে মেয়ে পছন্দ করেছে এতে যেনো তার খুশি আর ধরছে না।

এক সপ্তাহ পরে বিয়ের তারিখ দিয়েছে,এখন থেকেই আত্নীয়দের দাওয়াত দেওয়া ও বাকি প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বাড়ির বড়রা।

সাব্বিরদের বাড়িতে শিশির মুখ ফুলিয়ে বসে আছে কারন তার আদরের বোন তাদের ছেড়ে দূরে যাবে।

তোহা ও মুখ ফুলিয়ে বসে আছে,সে চায় হোস্টেলে থেকে পড়তে কলেজ বাসা থেকে দূরে আর সে কি একা যাবে নিশাত ও তো যাবে দুজনেরই এক সাথে চান্স হয়েছে।

আরো তো বেশ কিছুদিন আছে এখনই তার ভাই কান্না জুড়ে দিয়েছে।

সাব্বির তো খুশিতে লাফিয়ে বলছে–,,তুই গেলেই আমি বাঁচি আহ্ কি শান্তি শান্তি।

শিশির বরাবরই ইমোশনাল নিজের যখন ব্রেক’আপ হয়েছিলো সবার সামনে বসে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেছিলো তার পর থেকে বান্দা কে দিয়ে আর কোনো মেয়ে ভালো লাগাতে পারেনি সাব্বির আর না তার মায়ের পছন্দের কোনো মেয়ে পছন্দ হয়েছে,বিয়ে তো দূর প্রেম করার নামই নিচ্ছে না বেচারা।

হতাশ পুরাই হতাশ সাব্বির এমন ভাই তার কিভাবে হলো, অন্য দিকে তার বাপ রাজনীতির ভার নিখিলের ওপর ছেড়ে দিয়ে আমের ব্যবসা ধরেছে আর দিন রাত চিল করছে কি জীবন মাই’রি।শুধু সাব্বিরেরই কিছু হচ্ছে না।

তোহা সাব্বিরের সাথে কিছুক্ষণ ঝ’গড়া করে নিশাত দের বাড়িতে গেলো,একটু আড্ডা দিতে হবে ভাই তার করলার মতো মু’ডের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে একেবারে।

তোহা নিশাদের বাসায় এসেছে সবাই ব্যস্ত বিয়ের আলাপ আলোচনায়।
তোহা এই ফাঁকে উঠে গেলো সিঁড়ি বেয়ে,রাস্তায় হামিদা বেগম কে জিজ্ঞেস করলো নিশাত কোথায় সে জানিয়েছে ছাদে হয়তো দেখে আয় গিয়ে তুই।

তোহা তাই করলো, ছাদে উঠে গেলো গুন গুন করতে করতে।তোহা আশেপাশে তাকালো নেই মেয়েটা কি রুমে আছে? তোহা আপন মনে ভেবে যেই না নামতে যাবে হাত ধরে কেউ টান মার’লো, তোহা ভয় পেয়ে গেলো,তার থেকে বেশি অবাক হলো রোহান কে সেখানে দেখে।

তোহা অবাক হয়ে বললো–,,রোহান ভাইয়া তুমি!

রোহান ধম’ক দিয়ে বললো–,,কে তোর ভাই।তোর না দুইটা ভাই আছে আমাকে ভাই কেনো ডাকবি তুই?

তোহা বোকার মতো বললো—,,ভাই না ডাকলে কি ডাকবো?

–,,জামাই ডাকবি!

তোহা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো–,,ছি!ছি! কি আজেবা’জে কথা বলছো তুমি?দেখো আমি কিন্তু আন্টির কাছে বিচার দিবো!

–,,তুই এমন পানসে কেনো রে তোহা?তোর বয়সের মেয়েরা বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চার মা হয়ে যাচ্ছে আর তুই একটু কিছু শুনলেই ছি! ছি! শুরু করিস।

তোহা মিন মিন করে বললো–,,তো কি করবো।আপনি সরুন আমি যাবো।

–,,চুপ!একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে তোকে এখানে এনেছি।

তোহা তাকিয়ে আছে কি বলবে শোনার জন্য।
রোহান তোহার দিকে তাকিয়ে বললো–,,তোকে আমি পছন্দ করি,আমার মনে হয় শুধু পছন্দ না ভালোও বাসি।

তোহার মুখ থেকে আপনাআপনি বের হয়ে আসলো–,,অ্যাহ!

রোহান তোহার মাথায় মে”রে বললো–,,গা’ধী!

তোহা আবার বললো–,,কেমনে সম্ভব!

রোহান বিরক্ত হয়ে বললো–,,এই তোর বুঝা লাগবে না,শুধু এইটুকু মাথায় রাখ কলেজে গিয়ে বেশি লাফাবি না আর কোনো ছেলের সাথে যদি কথাও বলেছিস তোর একদিন কি আমার একদিন।যা এখান থেকে, তোর উপর আমার নজর সব সময় থাকবে মাথায় রাখিস।

তোহা বুঝলো না এই বলছে পছন্দ করি আবার এই এখনই ধম”ক দিচ্ছে অদ্ভুত ছেলে।

———-
দুই দিন পর ইরফান ফোন করেছে নিখিল কে সে এখন পার্টি অফিসে ব্যস্ত।ইরফান ফোন দিয়ে বললো–,,এমপি সাহেব অপরা’ধীর খোঁজ তো পাওয়া গেছে।

নিখিল ও খুশি হলো ইরফানের সাথে কথা বলে সব প্ল্যান করে ফেললো।

ইরফান কথা বলা শেষ করেই রুমে আসলো সেখানে শুয়ে আছে আরুশি মেয়েটা এখনও দুর্বল, ভাগ্য ক্রমে এখনো ইরফান তাকে জানাতে পারেনি তার সাথী মা’রা গেছে, দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো ইরফান।মেয়েটা কে বাসায় রাখছে এটা নিয়েও নানান প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে কি করে সব সামলাবে কে জানে।আগে আসল কাল”পিট টা ধরা পড়ুক পরে এর ব্যবস্থা করা যাবে।

****
নামিরা বাহিরে এসেছে তাহমিদা বেগমের সাথে,দুজন গল্প করতে করতে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে। এমন সময় একটা গাড়ি এসে থামলো দুজন লোক বেরিয়ে এসে তাহমিদা বেগম কে ধাক্কা মে’রে ফেলে দিয়ে নামিরা কে তুলে নিলো।

তাহমিদা বেগম গিয়ে পড়লো রাস্তায় থাকা ইটের উপর মাথায় জোরে আঘা’ত লাগায় সে উঠতে ও পারলো না।
নামিরা জোরে কেঁদে উঠলো, ডাকলো মাম্মা, নানু ভাই আমার খুব ভয় লাগছে।
তাহমিদা বেগম শক্তি করে উঠতে পারলেন না তার মনে হলো তাকে ফোন করতে হবে সবাই কে জানাতে হবে নামিরার কথা তার যা খুশি হোক।
তাহমিদা বেগম ঝাপসা চোখে ফোনের স্ক্রিনে তাকালেন ফোন দিলেন কাকে বুঝতে পারলেন না।

রিসিভ হতেই তিনি শুধু বললেন–,,নামিরা কে ওরা নিয়ে গেলো ওকে কেউ বাঁচা!

জ্ঞান হারালেন তিনি,রাস্তায় মানুষের জটলা বাঁধলো, কোনো একজন পরিচিত হয়তো থামলো তাহমিদা বেগম কে দেখে।
চলবে?