#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_২৪
#জান্নাত_সুলতানা
[পর্ব টা একটু রোমান্টিক,পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
সময় কখনো কখনো থমকে থাকে যেন। কিছু বিষয় নিয়ে আমরা এতোটাই ঘোরে থাকি যে চারপাশে কি হচ্ছে সেটা খেয়াল থাকে না। কিংবা আমরা সেটা করার প্রয়োজন মনে করি না। ভাবি এখানে সময় স্থির হোক। এভাবে কাটুক অনন্ত কাল। কিন্তু এসবের কিছু ভাবছে না আবরাজ। সে মনপ্রাণে চাইছে এই সময় টা দ্রুত কাটুক। নয়তো কিছু একটা মিরাকল ঘটুক। মেয়ে টার চোখে তারজন্য সে ভালোবাসা দেখে। সে সেই ভালোবাসা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার অধিকার রাখে না। মেয়েটা কে সে কোনো অপরাধ ছাড়াই চার চার টা বছর অবহেলায় অনাদরে রেখেছে। এতে কি শুধু তার দোষ ভাগ্য কি একটু সহায় হলে পারতো না! কেনো যে হলো না কে জানে! ফিজা হাতে কুঁচি তুলছে। আর সেটা করতে করতে আবরাজ কে বললো,
-“অবহেলা করেছেন মেনে নিয়েছি। ঠকালে খুন করে ফেলবো।”
-“ঠকাচ্ছি না। যদি ভালোবাসা বলে কিছু থাকে তাহলে সেটার কসম।”
আবরাজ ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো। ফিজা হাত এতো সময় কাজে চলতি ছিলো। তবে আবরাজ এর কথায় হাত থামে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-“আপনার মা আপনাকে ভালোবাসে। এটা বিশ্বাস করেন?”
-“আমিও তো মাকে ভালোবাসি।”
-“তাহলে ভালোবাসার ওপর সন্দেহ কেনো?”
ফিজা সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো। আবরাজ হঠাৎ তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
-“তৃণা আমাকে ভালোবাসে না। জেদ থেকে তো আমার জন্য কত কিছু করে যাচ্ছে। ওর মন্তব্য তো শতভাগ আমাকে ভালোবাসে এটা প্রমাণ করে। সত্যি তো এটাই ও আমাকে ভালোবাসে না। তাহলে মুখে বলা ভালোবাসি এটা কিভাবে বিশ্বাস করবো আমি।”
-“আপনি যদি কাউকে ভালোবাসবেন সেটা উপলব্ধি করতে পারবেন। আপনার সম্পূর্ণ টা তাকে ঘিরে হবে।”
আবরাজ কিছু বলে না। বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। বউয়ের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যে তাকে চুম্বকের ন্যায় টানছে। কথার প্রসঙ্গ পালটে ও কোনো লাভ হচ্ছে না। ফিজা ততক্ষণে নিজের হাতে ভাঁজ করে নেওয়া সব গুলো কুঁচি এবার কোমড়ে গুঁজে নিলো। আবরাজ এর শরীর অসহ্য শিহরণে শিহরিত হলো। কয়েক সেকেন্ড মাত্র সময় টা। কিন্তু আবরাজ যেন সেখানে আঁটকে রইলো। এমন রূপে একজন মেয়ে কে স্বচক্ষে সামনে বসে দেখা বড্ডো কঠিন। সেখানে যদি হয় মেয়ে টা তার বিয়ে করা স্ত্রী তাহলে কি করে নিজে কে ঠিক রাখবে কোনো পুরুষ? আবরাজ হেরে গেলো কি? ভালোবাসা কি তবে নেই তারমধ্যে কামনা সম্পূর্ণ টা! নিজের কুঁচি ঠিক করে মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে চমকালো ফিজা। বরাবর দাঁড়িয়ে আবরাজ। ফিজার শরীর জুড়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো। উন্মুক্ত কোমড়ে আভাস পেলো শক্ত হাতের। তৎক্ষনাৎ নিজের হাত খানা সেই হাতের ওপর চলে গেলো। নিজে কে কোনো রকম সামলে অস্ফুটে বলে,
-“আবরাজ!”
-“অভিযোগ তুলো না। তৃণা নিজে কে অল টাইম আমার সামনে আকর্ষণীয় রূপে প্রেজেন্ট করেছে। কখনো আমার ওর ওপর ফিল আসে নি। তোমাকে দেখলে আমি নিজে কে কন্ট্রোল করতে পারি না। খুব খারাপ হতে ইচ্ছে করছে আমার। সরি বাট নট সরি কলিজা।”
মূহুর্তে ফিজা উপলব্ধি করে সে শূন্যে ভাসছে। ফিজা আবরাজ এর গলা জড়িয়ে ধরে। মনে মনে ভিন্ন ছক কষে। আবরাজ ততক্ষণে বউয়ের এলোমেলো অর্ধ পরিহিত শাড়ী সম্পূর্ণ এলোমেলো করে দিয়েছে। বাইরে আজ বাতাস বইছে। ফাগুনের শেষ। রাতে ঠান্ডায় মানুষ কপোকাত। ঝিরঝির হাওয়ায় জানালার পর্দা দোলে। সেই বাতাস সারা কক্ষে শীতল করে। শুধু দু’টো উষ্ণ দেহকে সেই শীতলতা ছুঁতে পারে না। ফিজার চোখের কোঠরি চিকচিক করে। আবরাজ যা দেখে মোলায়েম স্বরে বলে,
-” সরি সুগন্ধি ফুল। তোমাকে কাঁদিয়ে আমার কখনো পোষাবে না। ভালো লাগে তোমায় কাঁদলে, একটু কাঁদো।”
অদ্ভুত মানুষ এই আবরাজ খান। ফিজার মূহুর্তে রাগ ওঠে যায়। ইচ্ছে মতো চুল টেনে ধরে। আবরাজ হেঁসে ফেলে। নিজের কাজে ফিজা লজ্জায় পায়। আলতো হাতে আবরাজ এর ঘাড়ের ওপর চুলের ভাঁজে আঙুল চালিয়ে এবড়োখেবড়ো স্থানের সন্ধান পায়। বুঝে আসে না কিসের ক্ষত হতে পারে। তবে এমন মূহুর্তে এসব ভাবার মতো সময় আবরাজ তাকে দিলো না।
——
-“আপনি সিগারেট খান?”
হঠাৎ মেয়েলি চিকন স্বর কানে আসতেই আব্রাহাম ভ্রু কুঁচকে নেয়। এতো রাতে এই মেয়ে এখানে? আব্রাহাম ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“কৈফিয়ত চাইছো না-কি?”
-“না না তা কেনো হবে! এমনি জিজ্ঞেস করেছি আমি।”
মেহরিন সাথে সাথে ঘাড় নেড়ে বলে। আব্রাহাম হাতের সিগারেট শেষ করে। মেহরিন ওর থেকে অনেক টা দূরে। আকাশ পানে তাকিয়ে আছে। রাত বাজে দু’টো। আব্রাহাম মোবাইলে টাইম দেখে। ফোন পকেটে রাখে। এরপর মেহরিন এর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আগের ন্যায় কণ্ঠে জানতে চাইলো,
-“এতো রাতে এখানে কি করো?”
-“ঘুম আসছে না।”
-“আমাকে দেখো নি এখানে আমি?”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আব্রাহাম বলে উঠলো। মেহরিন নড়েচড়ে দাঁড়ালো। দৃষ্টি এলোমেলো করে। আসলেই তো সে দেখেও কেনো এলো এখানে? আজ ছুটি নিয়েছিল সে অফিস থেকে একবার ও দিনে সাক্ষাৎ হয় নি আব্রাহাম এর সাথে। এতে করে কেমন অস্থির লাগছে। মেহরিন নিজের অধর জোড়া মুখের ভেতর নিয়ে নিলো। এরপর বললো,
-“আমি জানতাম না। খেয়ালও করি নি।”
-“বাড়িতে গার্ড রয়েছে। রাতে এভাবে ছাঁদে আসবে না।”
-“তারা আছে বলেই তো আসি। একা আসতাম না-কি! ভয় পেতাম তখন।”
মেহরিন এর বোকাবোকা কথায় আব্রাহাম এর কপালে বেশ কয়েকটা বিরক্তির ভাঁজ পড়লো। রাগ না-কি বিরক্ত আব্রাহাম বুঝতে পারে না। যত্রতত্র দিলো এক ধমক। মেহরিন চমকে উঠলো। আব্রাহাম কঠিন স্বরে বলে উঠলো,
-“এই মেয়ে কি বলো মাথা ঠিক আছে? থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো বেয়াদব। রুমে যাও।”
মেহরিন এক দন্ড দাঁড়ায় না। চক্ষুদ্বয় জলে টইটম্বুর তখন। দ্রুত পা ফেলে চলে গেলো সিঁড়ি বেয়ে। আব্রাহাম এর হঠাৎ রাগ হচ্ছে। এই যে মেহরিন কাঁদল ধমক খেয়ে। চলে গেলো। তারপরও আব্রাহাম এর কোনো হেলদোল নেই। সে নিজের মতো ফুসফুস করে সিগারেট জ্বালায় দেশলাই দিয়ে। সেটা ঠোঁটের ভাঁজে চেপে ধরে ফুঁকতে লাগলো। মূহুর্তে ধোঁয়ায় অন্ধকার করে নিজের চারপাশ। বিড়বিড় করে আওড়াল,
-“পুরুষ দেখতে আসে রাতবিরেত গাধা কোথাকার।”
—–
আবরাজ বউ কে কোলে তুলে ওয়াশ রুমে নিয়ে এলো। নিচে নামিয়ে নিজে উলটো দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। এক হাত কোমড়ে রেখে আরেক হাত মাথার পেছনে রাখলো। কোমড়ে জড়িয়ে আছে একটা টাওয়াল। সেভাবে থেকে ফিজা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“থাকবো সাথে আমি! তুমি না চাইলে পাশের র,,
-“থাকুন।”
আবরাজ এর কথা সম্পূর্ণ করার আগে ফিজা থামিয়ে বলে। আবরাজ বৃষ্টি না চাইতে যেন জল পেলো। খুশি হলো। এই ঠান্ডার মধ্যে ঝর্ণা ছেড়ে সেটার নিচে দাঁড়ালো। সঙ্গে বউ কে নিলো। ফিজা নিজের সর্বোচ্চ টা দিয়ে চেষ্টা করলো আবরাজ এর তলপেটের পাশের শক্ত ওই যায়গা টা দেখার। তবে সফল হলো না। বিশেষ মূহুর্তে স্থান টা হাতে লাগলে-ও সেটা আবরাজ স্বেচ্ছায় দেখানোর মতো পাত্র নয়। ফিজা নিজের মতো চেষ্টা করেও কোনো লাভ হলো না।
এরমধ্যে আবরাজ সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-“ওখানে কি দেখো? আমাকে দেখো।”
-“দেখছি।”
ফিজা নিজে কে সামলে জবাব দেয়। এভাবে কিছু সময় ভেজার পর আবরাজ বউ কে বাথটবে বসালো। নিজেও ঝুঁকে ফিজার গলায় কালচে হওয়া দাগে আলতো করে ঠোঁট বুলাতে লাগলো। ফিজা চোখ বন্ধ করে বললো,
-“পেইন হচ্ছে। ছাড়ুন।”
-“দেখবে না?”
আবরাজ আচমকাই জানতে চাইলো। ফিজা থমথমে খেলো। তবুও প্রশ্ন করলো,
-“কি?”
-“তুমি যা খুঁজে যাচ্ছো।”
আবরাজ এর কথায় স্পষ্ট সে বুঝে গিয়েছে ফিজা কি খুঁজে এতো সময় তাকে আঁটকে রেখেছে। ফিজাও ভনিতা না করে জিজ্ঞেস করলো,
-“আপনি দেখাবেন?”
আবরাজ ফিজার কপালে চুমু খায়। ফিজা চোখ বন্ধ করে। আবরাজ বউয়ের থুঁতনিতে আঙুল রেখে মুখ টা সামন্য উঁচু করে চোখে চোখ রাখে। ফিজা চোখের পাপড়ি খুলতে দৃষ্টি আবরাজ এর চোখের দিকে স্থির হয়। আবরাজ এর গম্ভীর স্বর ভেসে আসে,
-“বউ তুমি আমার। আজ হাতে লেগেছে কাল চোখে পড়বে। পুরো আমি টাই আমি তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। সেখানে শরীর এর কোনো চিহ্ন কেনো লুকিয়ে রাখবো!”
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
#জান্নাত_সুলতানা