প্রিয়তমা
(A Third Gender’s story)
পর্ব—-০২
প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
স্লিপিং পিলগুলো নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো সিমরান।তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।কয়েকবার ভাবলো সৌভিককে কল করবে।মনের জমে থাকা কথাগুলো শেষ বারের মতো শেয়ার করবে ওর সাথে।কিন্তু আজ বিকেলে বলা সৌভিকের কথাগুলো মনে পড়তেই নিজেকে গুটিয়ে নিলো সিমরান।সৌভিক যেখানে ওকে ভালোই বাসে না,ও বাঁচলো কি মরলো তাতে নিশ্চয়ই ওর কিছু আসা যাওয়ার কথা নয়।
একটা কাগজের টুকরো হাতে নিলো সিমরান।ড্রয়ার থেকে কলমটা বের করে কাঁপা কাঁপা হাতে তার ওপরে কিছু লিখতে লাগলো।এরপর লেখা শেষ হলে কাগজটা নিজের বালিশের নিচে রেখে দেয়।
স্লিপিং পিলগুলো হাতে নিলো সিমরান।ঠিক তখন ফোনটা বেজে উঠলো।ছুটে গেলো ফোনের দিকে।সিমরান ভাবতেও পারছে না সৌভিক নিজে থেকে ফোনকল করেছে ওকে।চোখের জল মুছে ফোনটা রিসিভ করলো।
—-কোথায় তুমি….??(সৌভিক)
—যেখানে থাকার কথা এখন।আমি আমার বাসায় আছি।
—কি হলো,তুমি কি কান্না করছো নাকি?
—নাহ,আমি একদম ঠিক আছি।
সৌভিক সিমরানের গলার আওয়াজে খানিকটা আন্দাজ করতে পারলো ও হয়তো কান্না করছে।
—-আচ্ছা,শোনো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।কাল একবার দেখা করো।
—কথা….কিসের কথা?তোমার সাথে এখন আর কি কথা থাকতে পারে আমার,
—দেখো অনেক ভেবে সিধান্ত নিয়েছি আমরা দুজন একসাথেই থাকবো।সেই বিষয়েই আলোচনা করতে চাই আমি।
সৌভিকের কথাগুলো শুনে যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সিমরান।এক মুহূর্তে সমস্ত দৃশ্যপট পাল্টে যেতে লাগলো।সিমরানের অশ্রুসিক্ত অবয়বে হাসির ঝলক ফুটে উঠেছে… সত্যি বলতে সিমরান এটাই চেয়েছিলো।সৌভিক ওর নিজের ভুলটা বুঝতে পারুক।তারপর ওকে কাছে টেনে নিক।সৌভিকের ওপরে বিশ্বাস ছিলো সিমরানের।ও ঠিক নিজের মনের মানুষকে বুঝতে পারবে,আর সেটাই হলো।
সিমরান হাত থেকে স্লিপিং পিলগুলো ডাস্টবক্সে ফেলে দিলো।তারপরে সুইসাইড নোটটাও ছিড়ে ফেললো।যাতে লেখা ছিলো :
“আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়,আজকে এই মূহুর্তে নিজের ইচ্ছায় পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমি।ভালো থেকো সবাই।তুমিও ভালো থেকো সৌভিক।”
আরেকটু দেরী হলে আজ কি হতো ভেবেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে সিমরানের।সৌভিক ওকে এতোটা ভালোবাসে কোনোদিন হয়তো জানাই হতো না।এটা ভেবেই নিজের ওপর নিজেরই ভীষণ রাগ হচ্ছে।
যাই হোক,পরেরদিন সে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলো।ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরোনোর প্রস্তুতি নিতে লাগলো।গোলাপি রং সৌভিকের বড্ড পছন্দের।তাই ওরই গিফট করা একটা শাড়ি খুব যত্ন করে পড়ে নিলো।সিমরানের খুব বেশী সাজগোজ করা বরাবরই অপছন্দের।কিন্তু আজ সমস্ত নিয়ম ভেঙে একটু বেশি করেই নিজেকে সাজালো সে।কোনো সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পরে যখন আবারো জোড়া লাগে তখন তার গুরুত্ব আমাদের কাছে বহুগুনে বেড়ে যায়।এটাই ঘোর সত্যি।
রেডি হয়ে নয়টার দিকে বাসা থেকে বের হলো সিমরান।পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরো আধাঘন্টা লেগে গেলো।অবশেষে সৌভিকের সাথে দেখা হলো সিমরানের।দুজন ওদের একটা পরিচিত জায়গায় বসলো।সৌভিককে আজকেও একটু অন্যরকম লাগছে সিমরানের।ও নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে সিমরানের কাছে আবারো ফিরে এসেছে এটা ওর বাহ্যিক আচরণে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।একটা বেশ গম্ভীর ভাব বিরাজ করছে ওর ভেতরে।
—-দেখো সিমরান,কালকের ব্যবহারের জন্য আমি সত্যি দুঃখিত।তোমাকে ঐভাবে বলা একদম ঠিক হয়নি আমার।তুমি মাফ করে দাও আমায়।
—ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত তোমার কাছে, আমি জেনেও সবটা লুকিয়ে রেখেছি তোমার থেকে।তুমি ক্ষমা করো আমায়।
—আমি একটা সিধান্ত নিয়েছি সিমরান।আমি জানি তুমি শুনে খুশিই হবে।
—কিসের সিধান্ত?
—আমরা বিয়ে করতে চাই।এবং সেটা যতদ্রুত সম্ভব।
সৌভিকের মুখে বিয়ের কথা শুনে সিমরান আরো বেশী অবাক হলো।যে মানুষটা গতকাল এতো ঘৃনা অপমান করলো ওকে,একদিনের ভেতরে কি এমন ঘটলো সোজা বিয়ের মতো সিধান্ত নিয়ে নিলো সৌভিক।
—তুমি কি আমার সাথে প্রাঙ্ক করছো সৌভিক,দেখো আমি কিন্তু এখন কোনো মজা হজম করার পরিস্থিতিতে নেই।
সৌভিক এগিয়ে এসে সিমরানের হাতজোড়া ধরলো।
—না,সত্যি বলছি আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।আমি কেন মজা করবো তোমার সাথে?
—দেগো সৌভিক আমরা কিন্তু শুধু টাইম পাস করার জন্য রিলেশনটা করেনি,তুমি আমার থেকেও ভালো জানো সেটা।আমিও মনে প্রাণে চাই আমাদের সম্পর্ক একটা পরিণতি পাক।
—হ্যাঁ,আমিও চাই সেটা।কিন্তু আমার কিন্তু একটা শর্ত আছে।
—শর্ত,এর ভেতরে আবার শর্ত আসলো কোথা থেকে।আচ্ছা বলো?
—আগে কথা দাও,আমি যা বলবো তাই করবে তুমি.,আমার কথার অন্যথা হবে না।
—আরে বাবা কি কথা?আর তোমার কোন কথা আমি কবে রাখিনি।বলোতো।(ঈষৎ হেসে)
—আমরা খুব শীঘ্রই বিয়েটা করতে চাই।এবং সেটা দুই এক দিনের মধ্যেই।
—তার মানে এই তোমার শর্ত,
—হ্যাঁ।
—কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে কেন….?আমরা তো আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে পারি।
—না,আমি অপেক্ষা করতে পারবো না।আমি চাই না তোমার আর আমার ভেতরে আর কোনো বাঁধা আসুক।
—তুমি ঠিক থাকলে আমাদের ভেতরে আর কোনো বাঁধাই আসবে না।
—তার মানে তুমি আমার শর্ত মানবে না!
—আমি কি সেটা একবারো বলেছি।
—তো,
—আচ্ছা ঠিক আছে।তোমার যা খুশি করো।আমি আর কি বলবো।
বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় সৌভিক বেশ খুশি হলো।
—আমি জানতাম তুমি আমাকে না করতে পারবে না।জানতাম আমি।
আবেগ সামলাতে না পেরে সিমরানকে জড়িয়ে ধরলো সে।ঠিক সেই মুহূর্তে তার মুখে ফুটে উঠলো এক পৈচাশিক হাসি।
—-বিয়ে…..??তোর বিয়ের সাধ চিরতরে মিটিয়ে দিচ্ছি আমি।আমার সাথে প্রতারণা করার শাস্তি এবার দেখ কিভাবে জীবন দিয়ে শোধ করতে হয়।আরো দেখ কি কি করি আমি তোর সাথে। (মনে মনে বলে উঠলো সৌভিক)
দূর্ভাগ্যবশত ওর সেই হাসি আর মনের কথা পৌঁছালো না সিমরানের কাছে।সে পরম নিশ্চিন্তে তার ভালোবাসার বুকে মাথা এগিয়ে দিলো….
To be continue…….