যে শ্রাবণে প্রেম আসে পর্ব-০৯

0
185

যে শ্রাবণে প্রেম আসে
তোনিমা খান
||০৯||

[পর্বটা একটু রোমান্টিক। চাইলে স্কিপ করতে পারেন]

মানুষটাকে চোরা চোখে আর এক পলক দেখার সুযোগ হলো না ইরার। তবে রেখে যাওয়া ভালোবাসার সেই তীব্র স্ফুলিঙ্গ যেনো জ্বলজ্বল করছে ইরার চোখমুখে‌। একজন আদর্শবান, দায়িত্বশীল স্বামী নামক বটবৃক্ষ এতোটাই ক্ষমতাবান যে—স্বশরীরে অনুপস্থিত থাকলেও তার সৌন্দর্য জ্বলজ্বল করে তার স্ত্রীর মাঝে। আরশির সামনে দাঁড়ালে বিগ্রহ লেপ্টে যাওয়া সেই লালচে গাল, লাজেভরা চাহনি, মানুষটার ভালোবাসায় সেজে ওঠা ইরা’র মাঝে অন্যরকম এক সৌন্দর্য ভেসে উঠলো। সে কি অদ্ভুত অনুভূতি! পঁচিশটা বছর জীবন আর বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে করতে— যখন সমাজ ও ডিভোর্সি বলে বিতাড়িত করতে চেয়েছিলো, ঠিক তখনি সৃষ্টিকর্তা সেই ডিভোর্সি মেয়েটিকে সবদিক থেকে পূর্ণ মর্যাদা, ভালোবাসা আর দায়িত্ববান স্বামী নামক ঐশ্বরিক ক্ষমতা দিয়ে তাকে ঠিক সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত করে দিলো! বড্ডো অদ্ভুত মনে হলো ইরার কাছে! বোবা, বধির মা মরা, ডিভোর্সি এক বাচ্চা সমেত মেয়েটিও যে প্রেমে পড়তে পারে; এটা তার কল্পনাতীত ছিল। ওগুলো তো কপাল পড়া মেয়েদের জন্য নয়; তবে কেনো তার জীবনে এতো এতো সৌন্দর্য, সুখ আর প্রেম নিয়ে হাজির হলো শ্রেয়ান? ইরা’র যে সহ্য হয় না এতো সুখ! কারো প্রেমে পড়ায় এতো সুখ কেনো? অপেক্ষাতেও রাজ্যের সুখ! ইরার মাঝে ইদানীং হুটহাট সাজগোজের স্পৃহা দেখা যায়, লাজুকতা দেখা যায়, লোকটির দিকে আড়চোখে তাকানো হয়, লুকিয়ে লুকিয়ে অমায়িক লোকটির অপার্থিব সৌন্দর্য চোখ মুদে নেয়া হয়।
সংসার নামক শব্দটি শুনতেই যার মাঝে ঘৃণা অনুভব হতো আজ সেই মেয়েটি কারোর সংসার করার জন্য মুখিয়ে আছে। কে জানতো পুরো জীবন মানুষের মন আর জীবন থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা ভঙ্গুর মেয়েটির জন্য এতো ভালোবাসা অপেক্ষা করছে? পরিণতি যদি এতোটা সুখের হয় তবে দুঃসহ সেই ধৈর্য্য ধরতে কিসের বিবাদ! সৃষ্টিকর্তা আছেন তো!

সেদিনের পর ঠিক দুই দিনের দিন, ইরার অপেক্ষাদের মিষ্টতা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে ফোনের স্ক্রিনে একটা ছোট্ট বার্তা ভেসে উঠলো। ছেলে মেয়ে আর সংসারের মাঝে ব্যস্ত সময় কাটাতে থাকা ইরা ঘরে এসে যথারীতি একবার হলেও ফোনটা চেক করে। কিন্তু প্রতিবার নিরাশা হলেও সেদিন আর নিরাশা হতে হয়নি। কাঙ্খিত মানুষটির থেকে বার্তা এসেছে দেখতেই ইরার দেহের প্রতিটা স্নায়ুতে উল্লাস ছেয়ে গেলো। অনুশোচনা, অনুতপ্ততায় জর্জরিত একটি বার্তা দেখতেই ইরা ফিক করে হেসে উঠলো।

–“আমার করা কাজটা কি অনুচিত ছিল? আমি কি অতিরিক্ত করে ফেলেছি? আপনি নিশ্চয়ই আমায় খারাপ ভাবছেন? আমি আসলে ওভাবে… না মানে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি। বারবার মনে হয়েছিল একটু ছুঁয়ে না দিলে অনর্থ ঘটে যাবে। আমি কাজে মনোযোগী হতে পারবো না। আপনি কি রাগ করেছেন? আমার আরো সময় দেয়া উচিৎ ছিল আপনাকে! আমি দুঃখিত, ইরা!”

প্রেমে পড়লে মানুষ অদ্ভুত আচরণ করে? নয়তো দুই বাচ্চার মা এই ইরা নামক মেয়েটি কেনো অদ্ভুত অচরণ করছে? হাত পা কাঁপছে কেনো? বুকটা হাপড়ের মতো লাফাচ্ছে কেনো? কই আগেও তো থেকেছে পুরুষ মানুষের সান্নিধ্যে! একটা দু’টো দিন নয় বরং পুরো চারটা বছর— তবে কেনো এতো নতুনত্ব? হাত দু’টো কাঁপছে অস্বাভাবিক ভাবে। চোখ মুখ গরম হয়ে গিয়েছে ইরার। অনুভূতির সেই তীব্রতা সামাল দিতে দিতেই ইরা অস্বাভাবিক আচরণ করে বসলো। থম মেরে বসা মস্তিষ্ক নিয়ে কম্পিত হাতে লিখে বসলো,
–“আমি আরো আগে আশা করেছিলাম।”

মেসেজটি পাঠিয়ে ইরা নিজের কপাল চাপড়াতে লাগলো। মতিভ্রষ্ট হয়েছে তার নিশ্চিত! সে নির্লজ্জের মতো এটা কিভাবে লিখলো? ইরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলতে লাগলো; কি করবে! কি করবে? বহু চেষ্টা করলো ইরা—কিন্তু মেসেজটি ডিলিট কিভাবে করে সেই উপায় খুঁজে পেলোনা। ততক্ষণে অনর্থ ঘটে যায়। ইরার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো শ্রেয়ানের কল ভেসে উঠতেই। লজ্জায় রাগে ইরা ফোন ছুঁড়ে মেরে এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। অন্যদিকে শ্রেয়ান হতভম্ব হয়ে মেসেজটির দিকে তাকিয়ে আছে। আরো আগে? তারমানে সে লেইট করে ফেলেছে? ইরা আরো আগে আশা করেছিল? কলটি কেউ রিসিভ না করতেই শ্রেয়ান একের পর এক মেসেজ দিতে লাগলো। কিন্তু কোন ফিরতি বার্তা আসলো না। নিরুপায় শ্রেয়ান মায়ের কাছে ফোন দিলো সে জানায় ইরা গোসলে গিয়েছে। রাত হয়ে গেলেও যখন ইরা’র সাথে যোগাযোগ করতে পারলো না শ্রেয়ান তখন সে বুঝে নেয় মেয়েটি মুখ লুকাচ্ছে তার থেকে।

সেই লুকোচুরির স্থায়িত্ব হলো ঠিক বিশদিন। টানা বিশদিন পর শ্রেয়ান তার টাফ শিডিউল সামলে—সেদিন ছোট্ট একটা ন্যাপ পায়। মাত্র দুই দিনের একটা বিরতি! দিনটি ছিল বুধবার। বাবাকে ছাড়া শ্রবণ দিব্বি সুখে দিন কাটালেও ছোট্ট ইরামের মাঝে খানিক পরিবর্তন দেখা যায়। সে যে অবচেতনেও কাউকে খুঁজে বেড়ায়, বায়না ধরে, জেদ ধরে রাগ দেখায়, কান্না করে। ইরা বোঝে মেয়ে শ্রেয়ানকে খুঁজছে।

রাত সাড়ে নয়টা। আজ ঘরময় কেমন আনন্দঘন পরিবেশ। আজ শ্রেয়ান আসবে। ভাইয়ের আগমনে সুস্মিতা বিকালেই এসে পড়ে বাড়িতে। একদিন থাকবে ভাইয়ের সাথে। সুস্মিতা এসেই ইরার সাথে কাজে হাত বাটায়। আজ হরেক রকমের রান্না হয়েছে বাড়িতে। সব শ্রেয়ানের পছন্দের। বিকাল থেকে ইরা এগুলো রান্না করেছে। সুস্মিতা আর সুমনা শ্রবণ আর ইরামকে সুন্দর পোশাক পড়িয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে বসে আছে। অতঃপর কাঙ্খিত সময়টা এসে গেলো। কলিং বেল বাজতেই মিলা ছুটে গিয়ে দরজা খুললো। খুলতেই শাহেদ চৌধুরীর হাস্যোজ্জ্বল মুখটি ভেসে উঠলো হাতে ছেলের ট্রলি। সুমনা আর সুস্মিতা বাচ্চাদের নিয়ে দরজার কাছে এগিয়ে যায়। দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রেয়ান ঠোঁট ছড়িয়ে অলস গতিতে হাসলো দাদুমনির কোলে ছেলেকে লাফাতে দেখে। ছেলের ঝুলন্ত ফোলা ফোলা দুই গাল দেখতেই চোখেমুখে ছেয়ে যায় প্রশান্তি। অবশেষে তারা বাবা ছেলে অভিশপ্ত দুঃসহনীয় সেই দিনগুলো কাটিয়ে আজ সুখী শক্তি সামার্থ্যবান। মায়ের দিকে তাকিয়ে শ্রেয়ান হেসে বলল,
–“আসসালামুয়ালাইকুম মামনি! কেমন আছো?”

সুমনা হেসে সালামের উত্তর দেয়। একহাতে ছেলেকে বুকে আগলে নিলো। শ্রেয়ান মায়ের বুকে ঢুকতে ঢুকতে ছেলেকে নিজের কোলে তুলে নিলো। ছেলের ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে বহুদিনের তৃষ্ণার্ত পিতৃত্বকে শান্ত করলো। সুমনা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
–“দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিস কেনো? আগে বস। বাচ্চাদের একটু কোলে নে। একজন তো রীতিমত সবাই আর সাথে আড়ি কেটেছে। তার যে শুধু বাবাকেই চাই।”

শ্রেয়ানের দৃষ্টি চকচক করে উঠলো। উজ্জ্বল দৃষ্টি এদিক ওদিক নিক্ষেপ করতেই মিলার পেছনে বোনের কোলে থাকা গম্ভীর মুখটি দৃষ্টি কাড়লো। দৃষ্টি ম্লান হয় অভিমানী দৃষ্টি দুটি দেখতেই। তার মানে ছোট্ট মেয়েটি তাকে মনে রেখেছে। সে ছেলেকে মায়ের কোলে দিয়ে এগিয়ে যায় মেয়ের কাছে। হাঁটুতে হাত রেখে নুইয়ে যায় গম্ভীর মুখটির দিকে। ভ্রু নাচিয়ে শুধায়,
–“হাই! গম্ভীর বাচ্চা? আপনার কি বিরক্তিকর এই মানুষটাকে মনে আছে?”

ইরামের গম্ভীর মুখটিতে কোনোরূপ ভ্রুক্ষেপ দেখাগেলো না। সে চুপচাপ তাকিয়ে। শ্রেয়ান পুনশ্চঃ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
–“পাপার জান! পাপাকে মনে আছে? এসো পাপার কোলে এসো!”

ইরামের মাঝে তখনো কোন পরিবর্তন দেখাগেলো না। শ্রেয়ান এবার খানিকটা ব্যথিত হলো। তারমানে ইরামের মনে নেই তাকে। সে ব্যথিত কণ্ঠে বলল,
–“ওহ্, আপনার মনে নেই পাপাকে? তবে আমি চলে যাবো? আপনি বিরক্ত হচ্ছেন? ঠিক আছে, আমি চলে যাচ্ছি।”
বলেই শ্রেয়ান মেকি রাগ দেখিয়ে পিছু ঘুরে পা বাড়ায়। ওমনি ছোট্ট একটি থাবা এসে গুটিয়ে রাখা শার্টের আস্তিন আঁকড়ে ধরলো। শ্রেয়ান চমকালো। কপাল কুঁচকে ফিরে তাকালে একটি কড়া দৃষ্টি নজরে আসলো। সেই চিরচেনা কড়া দৃষ্টি দেখতেই শ্রেয়ানের মধ্যে উৎফুল্লতা বাড়তে লাগলো। ছোট্ট থাবাটির দিকে তাকিয়ে মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
–“না আমি আর বিরক্ত করবো না তোমায়। আমি চলে যাচ্ছি। টা টা বাই বাই!”

বলেই শ্রেয়ান শার্টের আস্তিন ছাড়িয়ে পা চালালো। মিনিট এক পার হয়ে গেলেও যখন ছোট্ট মেয়েটির কোন আওয়াজ পেলো না তখন দরজা পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়া শ্রেয়ান পিছু ফিরে তাকায়। ঠিক ছোট্ট মেয়েটির চোখে চোখ রাখলো। সহসা ইরাম ছলছলে নয়নে ঠোট উল্টে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। চোখেমুখের সে বেহাল অবস্থা! শ্রেয়ান উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। ছুটে এসে মেয়েকে এক প্রকার ছিনিয়ে নেয় সুস্মিতার কোল থেকে। বুকে চেপে ধরে হড়বড়িয়ে বলে,
–“পাপা যাচ্ছি না, মা। এইতো পাপা তোমার কাছেই আছি। দেখো পাপা কোথাও যাচ্ছি না। এই মিলা দরজা আটকাও। দেখাও আমার মেয়েকে তার পাপা কোথাও যাচ্ছে না।”

মিলা দরজা আটকে দিলো। শ্রেয়ান বদ্ধ দরজা দেখিয়ে কান্নারত ইরামকে বলল,
–“দেখো মা, দরজা বন্ধ করে দিয়েছি। পাপা কোথাও যাচ্ছি না।”
ইরাম সতর্ক দৃষ্টিতে একবার দরজা আরেকবার বাবার মুখটি দেখলো। বাবা চলে যাবে না আশ্বস্ত হতেই সে নিরবে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে রইলো। বসার ঘরের সকলে ম্লান হাসলো বাবা মেয়ের বন্ধন দেখে। বসার ঘরের এক কিনারা থেকে উঁকি দেয়া সুডৌল মুখটিতেও হাসি ফুটে উঠলো।

সুস্মিতা এগিয়ে এসে ভাইয়ের শার্টের আস্তিন চেপে ধরে আহ্লাদি স্বরে বলল,
–“আমার চকলেট এনেছো? বেশিকরে এনেছো তো?”

শ্রেয়ান কিছু বলার আগেই সুমনা তেতে উঠলো,
–“এই শুধু তোর কি! ওখানে আমারো চকলেট রয়েছে।”

–“মামনি বুড়ো মানুষেরা এতো চকলেট খায়?”, সুস্মিতার অসন্তোষ মাখা কণ্ঠ। সুমনা ফের তেতে উঠে বলল,
–“এই সুস্মি! মোটেও আমায় বুড়ি বলবি না। চকলেট খেতে বয়স লাগে?”

একহাতে ছেলে আরেক হাতে মেয়েকে নিয়ে সোফায় বসা শ্রেয়ান হতাশার নিঃশ্বাস ফেললো মা বোনের কলহে। সে বলল,
–“ঐ যে ছোট্ট ট্রলিটাতে সব চকলেট। যতো ইচ্ছে ততো খেও। তবুও ঝগড়া বন্ধ করো।”

বলেই শ্রেয়ান এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। তৃষ্ণার্ত দৃষ্টি একটা চোরকে খুঁজতে ব্যস্ত! নির্দয় নারী যাওয়ার সময় হাসতে হাসতে পিছু ঘুরে আর বাড়ি ফেরার পর লুকিয়ে বসে। আজ বেশ বোঝাপড়া হবে মিচকে চোরের সাথে! অনুভূতি চোর! এলোমেলো দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতেই শ্রেয়ানের ভ্রু কুঁচকে গেলো, বসার ঘরের এক কিনারা থেকে সাদা একটি কাপড় সরব সরে যেতেই। ঠোঁটের কোনা বেঁকে যায় অলস গতিতে। সে ব্যস্ত কণ্ঠে মাকে বলল,
–“মামনি, গায়ে প্রচুর ধুলো-ময়লা তুমি ওদের একটু রাখো। আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি।”

–“হ্যাঁ হ্যাঁ দে। তাড়াতাড়ি যা। তুই এই ময়লা হাতে ওদের ধরেছিস কেনো?”, সুমনা বাচ্চাদের নিয়ে নিতেই শ্রেয়ান কোনরকম লম্বা লম্বা পা ফেলে বসার ঘর পেরুলো। বসার ঘর পেরুতেই সে উঁকি দিয়ে একবার ব্যস্ত মা বোন আর বাবাকে দেখে নেয়। অতঃপর উগ্র হাতে পায়ের জুতো জোড়া খুলে ছুড়ে মারলো। বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে,
–“বিশ দিনের লুকোচুরি খেলা এবার শেষ বিবিজান। আপনার আজ খবর আছে।”

শ্রেয়ান সতর্ক দৃষ্টি ফেলে এক দৌড় লাগালো।
অনুভূতি চোর ইরা ভয়ার্ত দৃষ্টি ফেলে ছুটছে হাওয়ার বেগে। নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগানোর জন্য পিছু ঘুরতে গেলেই, চোখের পলকে কেউ ছুটে এসে ক্ষিপ্র বেগে তার পেট জড়িয়ে এক পাক ঘুরিয়ে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয়। হঠাৎ আক্রমণে ইরা ভয়ার্ত কণ্ঠে অস্ফুট শব্দ করে উঠলো। পা দিয়ে দরজা আঁটকে শ্রেয়ান এক প্রকার ছুঁড়ে মারলো তাকে বিছানায়। আঙুলের ভাঁজে আঙুল দেবে গেলো। নিজের উপর ভারী এক তনু দেবে যেতেই লাজে জর্জরিত ইরা বদ্ধ নেত্রে সেঁটে গেলো গদিতে। অথচ ঠোঁটের কোনা ঠিকরে বেরিয়ে আসছে চাপা হাসি। আজ লোকটা তাকে ছেড়ে কথা বলবে না সে জানে! ঝড় থামলো ক্ষীণ সময়ের ব্যবধানেই। অবাক হয় ইরা। গলদেশে মুখ গুঁজে থাকা মুখটি সহ দেহ নিশ্চল। ইরা বেশ সময় নিয়ে চোখ খুললো সরব শ্রেয়ান ঘাড় থেকে মুখ তুলে তাকায় মেয়েটির দিকে। চোখে চোখ মিলে যেতেই ইরা হড়বড়িয়ে আবার ঠাঁটিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ঠোঁট ঠোঁট চেপে আটকানো ঠিকরে বের হওয়া লাজমাখা হাসি। শ্রেয়ান মিটিমিটি হেসে দেখে সেই চাপা হাসি রোধ করার প্রয়াস। হাত বাড়িয়ে দু’গাল চেপে নিজের দিকে মুখ ফিরায় সে কিন্তু ইরা জোরপূর্বক আবার ঘাড় কাত করে নেয়। শ্রেয়ান ফের গাল চেপে নিজের দিকে মুখ ফেরায়, মেয়েটি আবারো ঘাড় কাত করে নেয়। শ্রেয়ান আবারো গাল চেপে মুখ ফেরালো কিন্তু এবার আর ঘাড় ঘুরাতে পারলো না ইরা। চাপা হাসিটুকু ক্ষিপ্র বেগে কেড়ে নিলো পুরুষালী ওষ্ঠদ্বয়। দুর্ধর্ষ রাজত্বে বিশদিনের লুকোচুরির শাস্তি দিচ্ছে এক নির্দয় শাসক।
সে কি মিষ্টি শাস্তি! তবে এবারের শাস্তিটা একটু বেশিই মিষ্টি! কেননা অপরাধী যে নত শির শাস্তি গ্রহন করছে বরং শাসককে আরো উদ্বুদ্ধ করছে শাস্তিদানে। দীর্ঘ বোঝাপড়া শেষ হয় ছেলের চিৎকার কর্নকুহরে প্রবেশ করতেই। শ্রেয়ান চকিতে মেয়েটিকে ছেড়ে দেয়‌; ঘাড় কাত নিথর শুয়ে থাকা মেয়েটি ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। ধপ করে ইরার পাশে শুয়ে পড়া শ্রেয়ান ও লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো। হাত বাড়িয়ে মেয়েটির মাথা বুকের উপর উঠিয়ে নেয়। এক হাতে চুলের গোছায় হাত বুলাতে বুলাতে পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু লিখলো। সেটি ইরার মুখের সামনে ধরতেই ইরা আধো আধো নয়ন মেলে দেখলো লেখাটি। সরব উৎকণ্ঠা আঁছড়ে পড়লো তার মাঝে। হুড়মুড়িয়ে ইরা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ছেলের ঘুমের সময় হয়ে গিয়েছে খাওয়াতে হবে। শুয়ে শুয়ে হাসতে থাকা লোকটির দিকে এক পলক তাকিয়ে ইরা ছুটে বের হয় কক্ষ থেকে। শ্রেয়ান হাসলো আবারো মেয়েটিকে পালাতে দেখে।

শ্রেয়ান ফ্রেশ হয়ে কাপড় বদলে বের হতেই দেখলো মায়ের আঁচলের নিচে লুকিয়ে থাকা ছেলে শব্দ করে আহ্ উহ্ শব্দ করে দুধ খাচ্ছে। ইরার থুতনি ঠেকেছে বুকে! সে চুলে হাত গলাতে গলাতে ঘর থেকে বের হয়। মেয়েকে কোলে নিয়ে পরিবারের সাথে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। ইরামের সাড়ে আটমাস বয়স চলছে। এখন একটু আধটু সলিড খাবার তাকে দেয়া হয়। শ্রেয়ান বসতে বসতে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল,
–“মামনি, ইরামের জন্য বেরি জাতীয় অনেক ফল এনেছি। এগুলো এই সপ্তাহের মাঝে খাইয়ে ফেলবে। সে খুব মজা করে খাবে দেখো!”

সুমনা কপাল কুঁচকে বলল,
–“সবজি সিদ্ধ দিচ্ছি এখনি যদি এত মজার মিষ্টি খাবার দেই তবে সে এগুলো আর খেতে চাইবে না।”

–“খাবে মামনি। নিয়ম করে সব উল্টেপাল্টে দিলেই খাবে।”

শ্রেয়ান নিজেই ব্যাগ থেকে ফলগুলো বের করতে লাগলো। বক্সে বক্সে রাস্পবেরি, মালবেরি, ব্লু বেরি, চেরি, কিউই এভোকেডো কতো কি! এগুলো সে বুঝে বুঝে কিনেছে। মেয়ের বাড়ন্ত এই বয়সটাতে এগুলো বড্ডো উপকারে আসবে। সে এভোকেডো কেটে সেটি ম্যাশড করে মেয়েকে নিয়ে সোফায় বসলো। ইরামের মুখের সামনে ধরলে ইরাম চোখ পিটপিট করে তাকালো বাবার দিকে। শ্রেয়ান হেসে বলল,
–“আমার মা খাবে না? পাপা খাইয়ে দিচ্ছি তো!”

ইরাম নিরবে মুখে তুলে নেয়। সুমনা বেশ হতাশ হলো বাচ্চা মেয়েটির মুড দেখে। এতো দিন তারা কতো কি করে একটু খাওয়াতো! অথচ এখন কি ভদ্র বাচ্চার মতো খেয়ে নিচ্ছে। ছেলে ঘুমিয়ে পড়লে ইরা তাকে কোলে নিয়েই বেরিয়ে আসে। সে একা ঘরে কখনো রাখে না বাচ্চাদের! বাবার কাঁধে শুয়ে শুয়ে গুনগুন করতে থাকা ইরামের ও ততক্ষণে আরামের ঘুম নেমে আসলো চোখে। এতো দিন তো এই আদরটুকুর ই অপেক্ষায় ছিল। আজ যখন পেলো সে সর্বশান্ত!

খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই সুমনা ছেলের কাছে গিয়ে বলল,
–“দাদুমনিদের আজ আমার কাছে দে। ওরা তো ঘুমিয়েই পড়েছে সমস্যা হবে না। কতোদিন পর এসেছিস একটু বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পাসনি। আজ ওরা আমার কাছে থাকুক তুই ভালোকরে বিশ্রাম নে। দুইদিনের ন্যাপ—রাত গেলে একদিন শেষ ! দে।”

সুমনা হাত বাড়িয়ে দিলো ছেলের কাছে। শ্রেয়ান নিরবে কোনপ্রকার দ্বিরুক্তি ছাড়া মেয়েকে মায়ের কাছে বাড়িয়ে দিলো। ইরা অবুঝ নয়নে মা ছেলের কাজ দেখছে। সুমনা নাতনিকে কোলে নিয়ে ইরাকে ইশারা করে বলল,
–“ওকে নিয়ে আমার ঘরে এসো।”

ইরা বুঝলো না। সুমনা আবার বলল,
–“আমার সাথে এসো।”

ইরা নিরবে শাশুড়িকে অনুসরণ করলো। সুমনা বিছানার মাঝ বরাবর ভাই বোনকে শুইয়ে দিয়ে ইরাকে পাঠিয়ে দিলো। ইরা অবুঝের ন্যায় ছেলে মেয়েকে রেখে বেরিয়ে আসে। বারবার পিছু ফিরে তাকালো সে। ছেলে মেয়ে তো রাতে একবার হলেও ওঠে। শাশুড়ির মুখের ওপর না ও করতে পারছে না। সে উশখুশ মন নিয়ে চলে এলো!
*****
সাদা জামদানি সাথে হাতে কনে গলায় স্বর্নের কিছু অলংকার। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের বরন যেনো জ্বলজ্বল করছে। ঠোঁট দুটো চেরির ন্যায় রংচঙে হয়ে আছে। এগুলো শাশুড়ির আদেশেই পড়েছে ইরা। নয়তো এমনিতেই লোকটার সামনে যেতে লজ্জা লাগে আবার এমন সাজগোজ! সেই সাজগোজের কারণ যখন হয় খোদ লোকটা নিজেই। খেয়াল করে যখন দেখবে তাকে নিশ্চিত প্রচুর লজ্জা দেবে! তখন ইরা কিভাবে সামলাবে? কোথায় মুখ লুকাবে? বলে দেবে মা তাকে জোর করে এগুলো পড়িয়েছে।

ছিমছাম গড়নের দেহটি দু’টো হাতের মাঝে আবদ্ধ হতেই ইরা হকচকায়। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর আগেই বা কাঁধে একটি দাঁড়িযুক্ত থুতনি ঠেকলো। জড়িয়ে ধরা দুই হাতের আজলায় থাকা ফোনটি একটু উপড়ে তুললো শ্রেয়ান। লিখলো,
–“ইরা, সেজেছেন?”

–“হুঁ।”, ইরা কম্পিত হাত উঠিয়ে শ্রেয়ানের ফোনটিতে ছোট্ট করে লিখলো। শ্রেয়ান অলস হেসে আবার লিখলো,
–“আমার জন্য?”

ইরার কান দু’টো অনতিবিলম্বে গরম হয়ে উঠলো। হাত পা কেমন কাঁপছে। তবুও এই বিশদিনের করা দুঃসহ অপেক্ষা তো সে ভোলেনি। নিজের মধ্যে আগত নতুন এই অনুভূতি ইরা সামলে ওঠার প্রয়াস করে। গোটা এক সংসার জীবন পার করে আসলেও প্রেমে তো সে প্রথম পড়লো! তাই হয়তো অনুভূতিরা এতোটা লাগাম ছাড়া! সে কম্পিত হাতটা উঠিয়ে অকল্পনীয় একটি জবাব লিখলো,
–“হুঁ।”

শ্রেয়ান ফের হাসলো। মুখের উপর টুপ টাপ দু ফোঁটা পানি পড়তেই পলক ঝাপটায় সে। মৌসুমের দোরগোড়া থেকে শ্রাবণ পালিয়েছে বহুদিন—তবে এই বৃষ্টি কোত্থেকে আসলো? হুটহাট বারিধারা’র আগমনে ভঙ্গুর দুই যুগলেরা মাঝে কোনরূপ বিরক্তি কিংবা নড়চড় দেখা না গেলেও, তাদের মাঝে থাকা অনুভূতিরা বৃষ্টির ফোঁটা’র গতির ন্যায় নিজেদের তীব্রতা বাড়াতে লাগলো। ফোঁটায় ফোঁটায় ভিজে উঠলো দুটি বদন। একে অপরের উষ্ণ আলিঙ্গনে প্রকৃতির শীতলতা ফিকে পড়লো। শ্রেয়ান বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে লিখলো,
–“আমার জন্য সেজেছেন? তবে তো খুশি হয়ে একটু ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসা যাবে কি?”

ভিজে ওঠা নারী অবয়ব আরেকটু সেঁটে যায় প্রশস্ত বক্ষমাঝে। শহুরে মৃদু কোলাহলে আড়ম্বরপূর্ণ চারিদিক। স্ট্রিট লাইটের আলো স্পষ্ট রাতের কমতে থাকা জনজীবনের ব্যস্ততা। অথচ অনুভূতির টানাপোড়েনে নিশ্চল দুই মানব মানবী ততক্ষণে ধরিত্রীর সাথে বিচ্ছেদ ঘোষণা করতে মরিয়া হয়ে উঠলো। বৃষ্টিভেজা দুটি বদন অনুভূতির জোয়ারে ভাসতে রাজি। শুধু এই জোয়ারে ভাসার শর্ত হচ্ছে এ জীবনে কখনো একে অপরের সঙ্গ ছাড়া যাবে না‌। তাই তো সযত্নে নারী দেহটি বক্ষমাঝে আগলে নিলো সুবিশাল দেহটি। ফোনটি অবহেলায় বেতের সোফায় পড়ে রইলো। বারান্দা পেরিয়ে নিজের আদলের কাছে অতি ক্ষুদ্র দেহটি নিয়ে ঘরে ঢুকলে —ঘরটি তমসায় মিলিয়ে গেলো। অন্ধকার ঘরে সরব জ্বলে ওঠা ওয়ার্ম লাইটের আলোয় তখন স্পষ্ট হয় আরশির সামনে টুলে বসা মানবীর ম্লান , বশীভূত নারী অবয়ব। সম্মোহনী দৃষ্টি নিজের সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে। মনে প্রশ্ন বয়ে চলে~মানুষটার দেয়া অনুভূতি এতো তীব্র কেনো? যার সামান্য চাহনিতে ইরা দৃষ্টি নত করতে বাধ্য হয়! ছুঁয়ে দিলে তো মরণ নিশ্চিত!

ঐ গভীর নিটোল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার শক্তি এখনো অর্জন করেনি ইরা। পৃষ্ঠদেশ বরাবর ব্লাউজের শেষ বোতামটা খুলে যেতেই নত দৃষ্টি , নত শির লেপ্টে গেলো অনমনীয় উদরে। দেহ থেকে ঐ ক্ষুদ্র পোশাকটি সরে গেলেও শাড়ির আঁচলটাকে একটুও নড়বড়ে হতে দেখাগেলো না। মেয়েটির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শ্রেয়ান চোখ রাখে ঠিক আরশি বরাবর। দেবে যাওয়া শিড়ঁদাড়া, ফর্সা উন্মুক্ত পৃষ্ঠদেশ অদ্ভুত ভাবে পুরুষটির মাঝে কোন অনুভূতির জোগান দিতে পারলো না। পারবেই বা কি করে? প্রিয় মানুষটার ব্যথায় যে তার অন্তঃস্থলে ব্যথা অনুভব হয়। লজ্জায় মুখ লুকানো ইরার, ভরসার জায়গাটা তার থেকে সরে যেতেই সে গুটিয়ে গেলো। জড়োসড়ো হয়ে টুলে বসে রইল সে। শ্রেয়ান তার পিছু গিয়ে দাঁড়ায়। হাঁটু গেড়ে বসে। উত্তপ্ত নিঃশ্বাস নগ্ন পৃষ্ঠদেশে আঁছড়ে পড়তেই খলবলিয়ে উঠলো ঝিমিয়ে পড়া মেয়েটি। তবে সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই শ্রেয়ানের। তার অক্ষিপটে ভাসছে ফর্সা পৃষ্ঠদেশে স্পষ্ট ভাবে এঁটে থাকা একাধিক চামড়ার বেল্টের আঘাত। কেমন বিবর্ণ সেই রঙ! দেখলেই বুক খামচে ধরে। খুব ব্যথা পেয়েছিল নিশ্চয়ই? বোবা, বধির মেয়েটা হয়তো চিৎকার করতেও পারেনি। মেয়েটি কখনোই এমন কিছুর হকদার নয় তবে কেনো তার এই ভয়ঙ্কর পরিণতি?

অনুভূতিতে কাবু মেয়েটি হকচকালো নগ্ন পৃষ্ঠদেশে দাঁড়ি যুক্ত মুখটির স্পর্শ পেতেই। কিন্তু তার অনুভূতিরা মুখ থুবড়ে পড়লো পৃষ্ঠদেশে গরম জলের আভাস পেতেই। ইরা সচকিত হয়। মানুষটা কি কাঁদছে? কিন্তু কেনো? সে অনুভূতি ব্যক্ত করার সুযোগ পেলো না তার আগেই অজশ্র নরম স্পর্শ ছুঁয়ে যেতে লাগলো ইরার আঘাতপ্রাপ্ত বিবর্ণ সেই চর্ম। ইরার দেহাবয়ব ম্লান হয়ে আসলো। তবে কি আজো মানুষটার ব্যক্তিত্ব পুরুষালী চাহিদার কাছে জিতে গিয়েছে? নয়তো নগ্ন দেহের ঘ্রাণ ছেঁড়ে কোন পুরুষ স্ত্রীর প্রাক্তনের দেয়া আঘাতে মলম লাগায়? একের পর এক অজশ্র চুম্বন প্রয়াসরত ইরার আঘাত গুলো মুছে ফেলতে। কিন্তু তা কি আদৌও সম্ভব? মানুষটার ব্যর্থ প্রচেষ্টা নাকি সফল? ইরা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় অশ্রুসিক্ত পুরুষালী আঁখি দ্বয়ের দিকে। বিলম্বহীন জীবনের সব ক্লেশ আঘাতকে পিছু ফেলে সবেগে ঝাঁপিয়ে পড়লো মানুষটার বুকে। ঝাঁপিয়ে পড়া দেহটিকে শ্রেয়ান সযত্নে আগলে নেয়। কান্নারত মুখটিতে চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে তুললো। ফিসফিসিয়ে বলল,
–“আর কখনো আমার ইরার দেহ কেনো তার অন্তরালে লুকিয়ে থাকা মনটিকেও কোন দুঃখ, আঘাত ছুঁতে পারবে না।”

শুনলো না ইরা সেই মোহনীয় দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। সে তো মগ্ন সঠিক মানুষটার ভালোবাসায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে। আর কোন বিলম্ব নয়। এবার একটু সুখ চায় ইরা। অর্ধনগ্ন পৃষ্ঠদেশ বিছানায় ঠেকলো। মুখের সামনে ভেসে উঠলো সুদর্শন সেই প্রিয় মুখটি। প্রথমবারের মতো ইরা স্ব উদ্যোগে ছুঁয়ে দিলো পুরুষালী ওষ্ঠদ্বয়। ক্ষীণ সেই স্পর্শে শ্রেয়ান বিমুগ্ধ। পরমুহূর্তগুলো যেনো সুখ, ভালোলাগা, ভালোবাসার সমারোহে এক সম্মোহিত মুহুর্ত। কেউ কোন কমতি রাখলো না একে অপরের বিগত জীবনের ক্লেশ শুষে নিতে। সময়গুলো বহমান। রাতের কয়েক প্রহর কেটে গেলো একে অপরের ক্লেশ গুলোর সাথে বোঝাপড়া করতে করতেই। ভোররাতে এক নতুন প্রারাম্ভে অর্ধ সিক্ত দুই মানব মানবীর মাঝে শোভা পায় দুটি নিষ্পাপ প্রাণ। যাদের এক কথায় ইরা আর শ্রেয়ানের প্রাণ ভোমরা বললে খুব একটা ভুল হবে না! ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ইরা স্মিত হেসে তাকায় আধো আলোয় স্পষ্ট পুরুষালী মুখটির দিকে। বুকে গাল দাবিয়ে শুয়ে থাকা মেয়ের চুলে হাত বুলাতে থাকা মানুষটার স্থির দৃষ্টি তো কখন থেকে নিবদ্ধ অপার্থিব সৌন্দর্যের অধিকারী তার স্ত্রীর মুখপানে। সুখ বলতে এর থেকে অধিক কিছুই শ্রেয়ান বোঝে না! এর থেকে অধিক সুখের আর কি আছে এই ধরনীতে?

চলবে…