জুলিয়েট পর্ব-০৭

0
628

গল্প #জুলিয়েট
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

৭.

রূপম পেটের উপর হাত চেপে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।হাসতে হাসতে তার সুন্দর মুখটা রক্তিম হয়ে উঠলো।রূপসা চোখ কটমট করে বলল,’ছোট! তুই থামবি?’

রূপম থামলো আরো কিছুক্ষণ পরে।সে আজ বহুদিন পর প্রাণ খুলে হেসেছে।তার হাসির শব্দের সাথে সাথে দিদিয়ার মুখের অবস্থা করুণ থেকে করুণতর হচ্ছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে সে হাত পা ছেড়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিবে।

রাজিব কিছুটা অবাক হয়ে শুধালেন,’তোমরা দুই ভাইবোনের হলো টা কি? তারা যাওয়ার পর থেকে এমন অদ্ভুত আচরণ করছো কেন?’

রূপম দাঁত কেলিয়ে বলল,’হাসছি কারণ ঐ সাইফ একটা খচ্চর।গায়ে যা বন্ধ।ছেহহহ!’

বলা শেষেই সে আবার গা দুলিয়ে হাসে।বাবার সাথে সে যেচে পড়ে কথা বলে খুব কম।তবে যেদিন তার মন ভালো থাকে,সেদিন সে বাবা এবং জেসমিন দু’জনের সাথেই ভালো আচরণ করে।আজ রূপমের মন ভালো।

রাজিব সাহেব চোখ পাকিয়ে বললেন,’এসব কেমন কথা রূপম?একদিন দেখেই তুমি একজন কে নিয়ে এমন মন্তব্য করে দিলে?’

রূপম তার কথা খুব একটা গ্রাহ্য করলো না।সে তার দিকে না ফিরেই মুখ শক্ত করে বলল,’আমি এমনই।ফার্স্ট ইম্প্রেশনেই আমি মানুষ চিনতে পারি।আর আমার মতামত,ঐ লোক একটা খাচ্চর।তুমি ঐ নোংরা লোকের সাথে আমার দিদিয়ার বিয়ে দিচ্ছো কেন?’

রূপসা মাথা তুলে ছোটো-খাটো একটা ধমক দিলো।
‘রূপম! বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু।বাবাকে সব কিছুতে দুষিস কেন?’

রূপম মুখ ভেঙচায়।তারপর হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।সে যতোই ভালো মেজাজে থাকুক না কেন,বাড়ির মানুষ কোনো না কোনো ভাবে তার মেজাজ নষ্ট করবেই।রূপসা পিছু ডাকলো,
‘ছোট! এ্যাই ছোট! দাঁড়া বলছি।’

সে দাঁড়ায় না।হেঁটে যেতে যেতে ছোট করে শুধু বলে,’পারব না।’

রূপসা ছোট করে একটা শ্বাস ছাড়লো।রাজিব সাহেব ছেলের আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন।মাথা নেড়ে শুধু বললেন,’রূপম মানুষ কে সম্মান দিতে জানে না।’

রূপসা আর কথা বাড়ায় না।ওড়না টা মাথার উপর তুলে কোনোরকমে হেঁটে তার ঘরে চলে গেল।তার মন অকারণেই খারাপ হচ্ছে।মন চাইছে বাবা কে গিয়ে বলতে-‘বাবা তুমি বিয়েটা ভেঙে দাও।’
কিন্তু তা আর সম্ভব কোথায়?

সে ঘরে গিয়েই মুখটা গোমড়া করে বসলো।রূপম দরজায় উঁকি দিয়ে বলল,’দিদিয়া! আসবো?’

‘নাহ।’

রূপম ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি ঝুলিয়ে ভেতরে এলো।এসেই রূপসার পাশাপাশি পা ঝুলিয়ে বসলো।মুখটাকে মিছেমিছি গম্ভীর করে বলল,’দিদিয়া! শোনো।সাইফ কিন্তু মানুষ হিসেবে খুবই চমৎকার।তুমি এমন ভালো লোক কে বর হিসেবে পাচ্ছো,এটা খুবই ভাগ্যের বিষয়।দেখবে সে তোমায় খুব ভালো রাখবে।তার বিনিময়ে তুমি তাকে একটু ধুয়ে মুছে রাখবে আরকি।’

রূপসা অগ্নিচোখে তার দিকে তাকালো।তার চোখ রাঙানিতে রূপম ভয় পেল না।উল্টো আরেক দফা প্রাণ খুলে হাসার সুযোগ পেল।রূপসা তার পিঠে একটা কিল বসিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,’থাপ্পড় খেতে না চাইলে এখান থেকে যা রূপম।’

রূপম তবুও গেল না।উল্টো বোনের কাঁধে মাথা রেখেই আরো কিছুক্ষণ হাসলো।শেষে রূপসার একটা হাত চেপে ধরে খিলখিল করে বলল,’দিদিয়া! এখন থেকে তোমাকে থালায় চানাচুর দিবো।তুমি আঙুল দিয়ে একটা একটা তুলে খাবে।মুরগির মতো করে।আর আমি বসে বসে দেখবো।’
.
.
.
.
ভুয়া ম্যারিজ সার্টিফিকেটে চোখ বুলিয়েই শোহরাব প্রশস্ত হাসলো।কাগজটা তার মন মতো হয়েছে।দেখে বোঝার উপায় নেই,এটা ভুয়া।কেবল রেজিস্ট্রার অফিসে গেলেই ধরা পড়বে।রূপসার সইটাও একদম মন মতো হয়েছে।খাপে খাপ যাকে বলে।এবার শুধু শেষ টোপ টা ফেলতে হবে।তারপরই সবটা তার হাতের মুঠোয় চলে আসবে।

পাভেল বলল,’প্ল্যান খারাপ না।তবে সাংঘাতিক।ধরা পড়লে লাল ঘরের ভাত নিশ্চিত।’

শোহরাব তাকে পিঠ চাপড়ে সাহস দিলো।
‘কিচ্ছু হবে না ভাই।এটা আমি রূপসার ফ্যামিলিকে দেখাবোই না।ধরা খাওয়া তো পরের বিষয়।’

তানভীর ভয়ে ভয়ে বলল,’এবার কি?পরের প্ল্যান কি?এবার কোন ক্রাইম করবি আবার?’

শোহরাব একপেশে হাসলো।পকেটে হাত গুজে নির্বিকার হয়ে বলল,’এবার হবে কিডন্যাপিং।’

নাফিস থম মেরে বসেছিল।শোহরাব কথা শেষ করতেই সে মাথা তুলে নিরাসক্ত কন্ঠে বলল,’তোর সাথে বন্ধুত্ব করাই আমাদের ভুল হয়েছে।এখন এই বন্ধুত্ব রক্ষা করতে গিয়ে যে আরো কতো কি করতে হবে,আল্লাহ মালুম।’

____

রূপসা আধশোয়া হয়ে একটা ম্যাগাজিন পড়ছিলো।অনেকদিন ধরে তার ম্যাগাজিন পড়া হচ্ছে না।আজ একটু সময় পেতেই সে ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে বসলো।

কিছুক্ষণ বাদে তার নম্বরে ফোন এলো।রূপসা খানিকটা বিরক্ত হয়ে মোবাইল স্ক্রিনে তাকায়।মনোযোগ নষ্ট হওয়ায় তার মেজাজ খারাপ হচ্ছে।

আন-নোন নম্বর।রূপসা কল ধরল না।উল্টো ফোনটা কিছুটা দূরে সরিয়ে রাখলো।একটু পর আবারো পিঁক পিকঁ শব্দে সেটা বেজে উঠল।মুখভর্তি বিরক্তি নিয়ে রূপসা সেটা রিসিভ করে।কানের সাথে চেপে ধরেই কিছুটা রুক্ষ স্বরে বলে উঠে,’হ্যালো! কে?’

অন্য পাশ নিরব।খনিক বাদে গুরুগম্ভীর গলায় বলল,’মিস রূপসা! কেমন আছো?’

রূপসা এক লাফে উঠে বসলো।দুই চোখ বড় বড় করে কেবল শুধালো,’আপনি?’

শোহরাব সামান্য হাসলো।হাসির শব্দ অন্য পাশেও কিছুটা পৌঁছুলো।রূপসা মুখ শক্ত করে বলল,’আপনি আমায় ফোন দিবেন না।আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।’

‘ওহহ! রিয়েলি?’

‘জ্বী।’

‘তো বিয়ের আগে বরের সাথে কথা বলা যায় না নাকি?’

রূপসা ভড়কে গিয়ে বলল,’জ্বী?’

শোহরাব রহস্যের সুর তুলে বলল,’নাহ।কিছু না।’
তারপরই পুরু স্বরে বলল,’আমি খুব শান্তিতে,একেবারে ধীরে সুস্থে বিয়েটা করতে চেয়েছিলাম।আমার কোনো তাড়া ছিলো না।যাক গে,তোমার অনেক তাড়া।তুমি এখনি বিয়ে করবে।তো আমার আর কি করার আছে?তুমিই যখন আমার বাড়ি আসার জন্য এমন মুখিয়ে আছো,অগত্যা আমায় বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হলো।’

রূপসা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,’আপনাকে বিয়ে করছি না আমি।সাইফের সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে।’

‘ছিহহ্! বরের সামনে পরপুরুষের নাম মুখে তুলতে নেই রূপসা।’

রূপসার পুরো শরীর উত্তাপে ছ্যান ছ্যান করে উঠলো।সে কিছুটা চেঁচিয়ে উঠে বলল,’আপনি কি পাগল?সাইকো আপনি?মাথা নষ্ট?আমার বাবা সাইফের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।’

‘তোমার বাবার চয়েজ খারাপ।’

রূপসা ক্লান্ত শ্বাস ছাড়ে।কথা বলার জোর আর অবশিষ্ট নেই।শোহরাব ডাকলো,’মিস রূপসা!’

‘কি?’

‘এমন রেগে রেগে কথা বলছো কেন?’

‘আপনার সাথে কিভাবে কথা বলা উচিত?’

‘বর যেহেতু।তাই সম্মান দেওয়া উচিত।’

রূপসা ফোনটা কেটে দিলো তৎক্ষনাৎ।এই নিয়ে চারবার শোহরাব তাকে ফোন দিয়েছে।প্রতিবারই ভিন্ন নম্বর থেকে।আগের তিনটি নম্বরই রূপসা ব্লক দিয়েছে।আজ এটাও দিবে।

বিকেলের সূর্যটা টা পশ্চিমে হেলে পড়েছে বহু আগে।এখন একেবারে উবে যাওয়ার পথে।রূপসা ম্যাগাজিন ফেলে গা ছেড়ে খাটে গিয়ে শোয়।মাথাটা ঝিম ঝিম করছে।সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে,বিয়ের আগে সে আর বাড়ি থেকে বের হবে না।ঐ আধপাগলের সাক্ষাৎ সে আর পেতে চায় না।

শুয়ে শুয়ে সে একবার আয়নায় নিজেকে দেখে।সে এমন কি সুন্দর তার মাথায় আসে না।এই যে কতো সাধারণ একটা মুখ! শোহরাব তাহলে এমন করে কেন তাকে নিয়ে?
.
.
.
.
সাইফের অফিস শেষ হয় বিকেল সাড়ে চারটায়।অফিসের পর সে ক্যাবে করে বাড়ি ফিরে।তাদের বাড়ির দু’টো গাড়ির মধ্যে একটা গাড়ি তার বাবা ব্যবহার করে।অন্যটা বাড়ির সদস্যদের যাতায়াতের জন্য।তবে সেটা ম্যাকানিকের কাছে দেওয়াতে এক সপ্তাহ যাবত সাইফ ক্যাবেই বাড়ি ফিরছে।

সে অফিস থেকে বেরিয়ে অলস ভঙ্গিতে হাঁটছিলো।সারাদিনের ধকলে তার নিজেরও ক্লান্তি ধরেছে।

হঠাৎ একটি ক্যাব তার সামনে এসে থামলো।সাইফ হকচকিয়ে উঠে দুই পা পিছিয়ে গেল।তারপর একটু স্বাভাবিক হয়ে সামনের দিকে পা চালালো।

অথচ সে কিছুদূর অগ্রসর হতেই গাড়ি থেকে দুই তিনজন যুবক বেরিয়ে এসে তার দুই হাত চেপে ধরল।সাইফ চমকে উঠে তাদের মুখ দেখার চেষ্টা করে।হতবিহ্বল হয়ে বলে,’ত তোমরা কেএ?’

তার কন্ঠে অদ্ভুত রকমের ব্যাকুলতা।বাচ্চারা মায়ের হাত খুঁজে না পেলে যেভাবে ব্যাকুল কয়,অনেকটা ওমন।সাইফ চিৎকার দিলো,’এ্যাই তোমরা কি করবে আমার সাথে?’

সে আর বেশি কিছু বলার সুযোগ পেল না।তার আগেই গাড়ি থেকে একজন যুবক বেরিয়ে এসে তার মুখ বরাবর কিছু একটা স্প্রে করলো।সাইফ ভাষা হারালো।দুই মিনিটের মাথায় অচেতন হয়ে সে ডান দিকে থাকা যুবকের গায়ে হেলে পড়লো।

যুবক ছেলেটা সামান্য মাটির দিকে ঝুঁকে চাপা স্বরে বলল,’তাড়াতাড়ি গাড়িতে তোল।ধরা পড়ে যাবো নয়তো।’

___

ভুসস ভুসস করে নাক ডাকার শব্দ হচ্ছে।ঘুমের তীব্রতায় দুই ঠোঁট সামান্য আলাদা হয়ে আছে।পাঁচ জোড়া চোখ অবাক হয়ে সেই দৃশ্য দেখছে।কানে শুনছে নাক ডাকার সেই কটু শব্দ।

তানভীর হা হয়ে বলল,’একে না আমরা কিডন্যাপ করেছি?এ এমন মরার মতো ঘুমুচ্ছে কেন?’

টুটুল বলল,’তিন ঘন্টা ধরে ডাকছে।এটা কি মানুষ নাকি অন্য কিছু।’

অথচ শোহরাবের বিরক্তি পারদ আকাশ ছুঁলো।তারা এখন টুটুলদের বাড়ির গোডাউনে এসেছে।টুটুলের বাবা ব্যবসা করেন।তাদের মালামাল রাখার কাজে গোডাউন লাগে।আপাতত সাইফকে রাখার জন্য এই জায়গাই উপযুক্ত মনে হয়েছে।

শোহরাব বলল,’এই বলদের ঘুম ভাঙবে কখন?’

নাসিফ হাই তুলল।
‘তুই তো বেকার।সে তো অফিস করে।টায়ার্ড হবে এটাই স্বাভাবিক।’

‘চুপ কর।জ্ঞান ঝাড়িস না।’

শোহরাব ধীর পায়ে হেঁটে তার সামনে গেল।তারপর হাঁটু মুড়ে তার সমানে বসলো।গালে আলতো করে দু’টো থাপ্পড় মেরে ডাকল,’সাইফ! এ্যাই সাইফ।’

সাইফ সামান্য নড়লো।কিন্তু উঠলো না।এবার থাপ্পড়টা একটু জোরে পড়লো।সাইফ ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।চোখ ডলতে ডলতে পিটপিট চোখে চারপাশ দেখলো।

সে কোথায় এসেছে,কিভাবে এসেছে,তার সাথে কি কি হয়েছে,এসব মনে পড়তেই সে আঁতকে উঠল।আতঙ্কিত চোখে সামনে তাকাতেই শোহরাবের সাথে তার চোখাচোখি হলো।

দ্বপ দ্বপ করে জ্বলতে থাকা এক জোড়া চোখ।সাইফ দমে গেল সাথে সাথে।ভীতু চোখে শুধু সামনে তাকালো।শোহরাব একটু ঝুকলো।একহাতে তার কলার টেনে ধরে বলল,’আরেকজনের বউকে বিয়ে করতে তোর লজ্জা লাগে না?’

সাইফ তাজ্জব হয়ে সামনে থাকা ব্যক্তির মুখশ্রী দেখে।চোয়াল শক্ত করে রাখা একটা কাঠিন্য ভরা মুখ।সেই মুখের পরতে পরতে বিরক্তির ছাপ।সাইফ চাপা স্বরে বলল,’কার বউকে বিয়ে করছি আমি?’

শোহরাবের রাগ আরেকটু বাড়লো।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’তুই জানিস না কার বউ?কার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তোর?’

সাইফ বেড়াল ছানার মতো মিন মিন করে বলল,’রূপসা।’

শোহরাব নিশ্চুপ হয়ে কিছুক্ষণ তাকে দেখে।তারপর ভাবগাম্ভীর্যের বজায় রেখে খুবই শীতল কন্ঠে বলে,’রূপসা আমার ওয়াইফ।আমাদের বিয়ে হয়েছে কিছুদিন আগে।’

বিস্ময়ে সাইফের চোয়াল ঝুলে গেল।কোনো উত্তর না দিয়ে সে ফ্যালফ্যাল করে শোহরাবের দিকে চেয়ে রইল।ব্যাপারটা তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

শোহরাব আগের মতো করেই বলল,’তোর প্রমাণ লাগবে তাই না?’

সাইফ দুই দিকে মাথা নাড়লো।তাড়াহুড়ো করে বলল,’না ভাই।প্রমাণ লাগবে না।আমি বিশ্বাস করেছি।’

শোহরাব খেঁকিয়ে উঠে,’প্রমাণ লাগবে না মানে কি?এতো কষ্ট করে প্রমাণ জোগাড় করেছি।বল যে প্রমাণ লাগবে।’

সাইফ আহাম্মকের মতো তার কথা শুনে।জোর করে প্রমাণ দেখানোর বিষয়টা কেমন অদ্ভুত না?সে আর আগ বাড়িয়ে কিছু বলল না।শোহরাব নিজেই তাকে ম্যারেজ সার্টিফিকেট টা দেখালো।সাইফ দেখলো।তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

শোহরাব কাট কাট গলায় বলল,’তুই দু একদিনের ভেতরই বিয়েটা ভাঙবি।কথা ক্লিয়ার?’

সাইফ পলক ঝাপটায়।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জবাব দেয়,’জ্বী।’

শোহরাব তার গালে পর পর দু’টো আলতো চড় মেরে বলল,’যা।এবার সুবোধ বালকের মতো গিয়ে বিয়েটা ভেঙে দে।’

সাইফ আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো।একটু সামনে যেতেই শোহরাব জলদগম্ভীর স্বরে তাকে পিছু ডাকলো,’এ্যাই শোন।’

সাইফ থামে।এলোমেলো চোখে পেছন ফিরে শুধায়,’জ্বী?’

শোহরাব চোয়াল শক্ত করে বলল,’খবরদার! রূপসার নামে কোনো উল্টা পাল্টা কথা ছড়াবি না।যদি আমার কানে এমন কিছু আসে,তাহলে ঠ্যাং দু’টো ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো।’

সাইফ তপ্তশ্বাস ছাড়ে।সামনে হেঁটে যেতে যেতে একেবারে ক্ষীণ স্বরে জবাব দেয়,’জ্বী।মাথায় রাখলাম।’

সে চলে যেতেই নাফিস মুখ বাঁকা করে বলল,’এ তো পুরাই টিউব লাইট।আতেল নাম্বার ওয়ান।’

টুটুল সাথে গলা মেলায়,’এর চেয়ে তো আমাদের শোহরাব ঢের গুণ ভালো।’

তানভীর ভীষণ রকম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলল,’ধ্যাত।কোথায় শোহরাব! আর কোথায় এই সাইফ।দু’জন তো এক সাথে বারিও খাবে না।আমার বন্ধু সেরা।’

পাভেল একবার কেশে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।মুখটাকে ভীষণ গম্ভীর করে বলল,’সাইফের ঝামেলা তো মিটলো।কিন্তু রূপসা?তার কি হবে?সে তো এতো সহজে মানবে বলে মনে হচ্ছে না।’

চার জোড়া চোখ ঘাড় বাঁকিয়ে শোহরাবকে দেখে।তার মুখোভঙ্গি নির্বিকার।সবাই তার দিকে তাকাতেই সে দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসলো।মাথাটা হেলান দিলো দেয়ালের সাথে।তারপর চোখ বুজে বরফঠান্ডা কন্ঠে বিড়বিড় করলো,’রূপসা মানবে।মা কে দিয়ে মানাবো।’

‘শালা তোর মা যে মানবে তার কি গ্যারান্টি?’

শোহরাব একপেশে হাসলো।চোখ না খুলেই বলল,’মা আমার কোনো কথা ফেলে দেয় না।আমি এই ব্যাপারে কনফিডেন্ট।না না,ওভার কনফিডেন্ট।’

চলবে-