জুলিয়েট পর্ব-১১

0
413

গল্প #জুলিয়েট
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

১১.

দেয়াল ঘড়ির টিকটিক শব্দ কানে লাগছিলো ভীষণ।শব্দটা কানে লাগার মতো প্রকট না।কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরটা এতোটাই নিরব নিস্তব্ধ ছিলো যে সেই সামান্য শব্দটাও কানে আসছিলো।বলা বাহুল্য,ঘড়ির কাঁটার শব্দ ব্যতীত পুরো ঘরে আর কোনো শব্দ হচ্ছিল না।

শাহাবুদ্দীন আহমেদ তখন তার চেম্বারেই ছিলেন।ঘরের দরজা বন্ধ।এই মুহূর্তে এই ঘরে শুধু দু’জন মানুষ আছে।তিনি আর একটি মেয়ে।

ডেস্কের উপর একপাশে কিছু ফাইলের স্তূপ পড়ে আছে।প্রত্যেক পেশেন্টের জন্য আলাদা আলাদা ফাইল।ফাইলের উপর শাহাবুদ্দীন সাহেবের নাম লিখা আছে।সাইকিয়াট্রিস্ট শাহাবুদ্দীন আহমেদ।বাংলায় যাকে বলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।

শাহাবুদ্দীন সাহেব ছোট করে একটা শ্বাস ছাড়লেন।একটা হাত আলতো করে ডেস্কের উপর রেখে সামনে তাকালেন।তার সামনে একটি মেয়ে বসা।দীর্ঘসময় ধরে সে জড় পদার্থের ন্যায় বসে আছে।বসে থাকলেই কেউ জড় পদার্থ হয়ে যায় না।তাকে জড় পদার্থ বলার সুনির্দিষ্ট কারণ আছে।সে বিগত ত্রিশ মিনিটে একটি বারও নড়েনি।তার চোখের দৃষ্টি স্থির,আসার পর থেকে সে তার কোলের উপর ফেলে রাখা হাত দু’টো দেখছে।শাহাবুদ্দীন এখন পর্যন্ত তার পলক ফেলা দেখেন নি।

মেয়েটির পরনে সাদা রঙের পোশাক।মাথায় চাপানো ওড়নার রং কালো।কালো রংটা খুব সচরাচর কুচকুচে হয় না।কেমন যেন ধুসর কালো হয়ে থাকে।কিন্তু এই মেয়েটির ওড়না পুরোপুরি কালো।যাকে বলে গাঢ় কালো।তার গায়ের রং উজ্জ্বল।তবে চোখের নিচে কালি জমেছে।সেই কালিতে রূপ লাবণ্যে একটু ভাটা পড়েছে।শাহাবুদ্দীন সাহেব ভীষণ মনোযোগ দিয়ে তার গতিবিধি পরোখ করলেন।খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন তার সমস্ত আচরণ।এটা তার পেশাদারিত্বের অন্তর্ভুক্ত।মেয়েটির সাথে কথা বলে তিনি যতোখানি তাকে বুঝবেন,তার চেয়ে বেশি বুঝবেন মেয়েটির আচরণ পর্যবেক্ষণ করে।

একটা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর শাহাবুদ্দীন আহমেদ গলা খাকারি দিলেন।এখন মেয়েটির সাথে কথা বলা যায়।তিনি অবশিষ্ট হাতটা মুঠ করে ডেস্কের উপর রেখে একটুখানি নত হলেন।গম্ভীর স্বরে বললেন,’এক্সকিউজ মি।আপনি কি আমায় শুনতে পাচ্ছেন?’

মেয়েটা নড়ল না একবিন্দু।এমনকি শরীরের কোনো অংশ একটুখানি কাঁপলো পর্যন্ত না।তাকে দেখে মনে হলো শাহাবুদ্দীন সাহেবের ডাক সে শুনতেই পায় নি।সে নির্বিকার।শ্বাস ছাড়ছে,তবে কোনোকিছুতেই আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

শাহাবুদ্দীন আহমেদ হাল ছাড়লেন না।এগারো বছরের অভিজ্ঞতায় এমন শত শত পেশেন্ট ডিল করেছেন তিনি।তিনি পুনরায় নিরেট পুরুষালি কন্ঠে ডাকলেন,’মিস! আপনি শুনছেন?’

পাথর মানবী নড়ে উঠল সহসা।পলক ঝাপটালো পর পর কয়েকবার।শাহাবুদ্দীন লক্ষ্য করলেন তার হঠাৎ পরিবর্তন,আকস্মিক অস্থিরতা।খেয়াল করলেন তার সমস্ত শরীরের ব্যাকুলতা।

মেয়েটা চোখ তুলল।একেবারে ছটফট করতে থাকা অক্ষি যুগল।শাহাবুদ্দীন মন দিয়ে দেখে।চোখের ভাষায় অনেক কিছু মেশানো থাকে।মেয়েটার চোখেও ছিলো।কিছু একটা নিয়ে সে ব্যাথিত ছিলো।সেই ব্যাথার স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটছিলো তার আইরিশ আর কর্ণিয়ার মাঝামাঝি কোথাও।

তার নিচের ঠোঁট টা তির তির করে কাঁপছিলো।কপালে ঘাম এসে জমেছিল।হঠাৎ তার এই পরিবর্তনে শাহাবুদ্দীন নিজেই খানিকটা বিচলিত বোধ করলেন।একটা ডিলেমায় পড়ে গিয়ে তিনি পুনরায় সামনে তাকালেন।এমন তো হওয়ার কথা না।তিনি এখনো ঠিক মতো কথা বলা শুরুই করেননি।

মেয়েটা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বসলো।একটা ঢোক গিলে অপ্রকৃতিস্থের মতো করে বলল,’খবরদার।আপনি আমায় মিস বলবেন না।আমি কোনো মিস নই।’

শাহাবুদ্দীন ভড়কে গেলেন।থতমত খেয়েও কোনোরকম প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বললেন,’সরি?’

মেয়েটা পুনরায় মাথা নামিয়ে নিলো।যন্ত্রের মতো বিড়বিড় করে বলল,’আমি মিস নই।আমি কোনো মিস নই।আমি রূপসা।মিস নই আমি।’

শাহাবুদ্দীন ঠান্ডা স্বরে বললেন,’ঠিক আছে।আমি মেনে নিলাম আপনি মিস নন।আপনাকে তাহলে কি বলবো বলুন?’

মেয়েটা আরো একবার চট করে চোখ তুলল।এবার তার চোখের ভাষা সম্পূর্ণ অন্যরকম।কেমন যেন রাগান্বিত দৃষ্টি।শাহাবুদ্দীন তাকাতেই রেগে মেগে বলল,’আমি কেন মিস হবো না?আমি আমার স্বামীর মিস।আপনার না।সে আমায় এই নামে ডাকে।আপনারা কেউ আমাকে এই নামে ডাকতে পারেন না।’

শাহাবুদ্দীন প্রতিউত্তর না করে তার কথা শুনলেন।ঝাপসা ঝাপসা কিছু বুঝলেন বোধহয়।তবুও নির্বিকার থেকে উত্তর দিলেন,’জ্বী।আর ডাকবো না।’

কিছু সময়ের নিস্তব্ধতা।শাহাবুদ্দীন নিজ থেকেই আবার বললেন,’আপনার হাজবেন্ডের সাথে আপনার বিয়ে কিভাবে হয়েছিল জানতে পারি?’

প্রশ্নটা কানে যেতেই মেয়েটা আরো অস্বস্তিতে পড়লো।শাহাবুদ্দীন তার মুখের হুটহাট পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন।তার চোখ দু’টো যন্ত্রনায় কাতর।শাহাবুদ্দীন মৌন থাকলেন।অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করলেন মেয়েটির মুখ খোলার।তার ধারণা,এবার মেয়েটা কিছু হয়তো বলবে।

ঘরে এয়ার কন্ডিশনার চলছিলো।তা স্বত্তেও মেয়েটা ঘেমে যাচ্ছিল অল্প স্বল্প।সে দ্রুত একহাতে নিজের ঘাম মুছলো।তারপর একেবারে চাপা স্বরে বিড়বিড় করল,’আমি তার ভাইয়ের মেয়েকে টিউশন পড়াতাম।’

‘আচ্ছা।বুঝেছি।’

সে একটু শান্ত হলো।আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হতে হতে বলল,’সে আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো।আমি বিয়ে করিনি।আরেকজন কে বিয়ে করার কথা ছিলো আমার।সেটা টের পেতেই সে আমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে।যেটাকে সোজা করে বললে বলতে হয় জোরপূর্বক বিয়ে।’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দীন আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।একহাত দিয়ে অন্যহাতের পিঠ চেপে ধরে আনত স্বরে বললেন,’সেই বিয়ের পর আপনার পরিবারের ভূমিকা কি ছিলো?তারা কি করলো?’

সে হাসলো আগের মতো করেই।মলিন মুখে কপট হাসি।গা দুলিয়ে বলল,’সে অনেক কাহিনি।আপনি শুনবেন?’

————–

রাজিব সাহেব হতবিহ্বল হয়ে সামনে তাকালেন।ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি রীতিমতো বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন।এতোটাই থমকে গেলেন যে মুখ দিয়ে কোনোরকম শব্দ পর্যন্ত বের হচ্ছিল না।তার শারিরিক অবস্থার কথা সবারই জানা।তিনি দীর্ঘদিন যাবত নানারকম অসুখে ভুগছিলেন।কিছুদিন আগে তার সার্জারি হয়েছে।এরপর থেকেই তিনি অসুস্থতা আর শারীরিক দুর্বলতায় দিন পার করছিলেন।

গতকাল রাত থেকে রূপসার কোনো খোঁজ নেই।রাজিব সাহেব রীতিমতো ছটফট করে যাচ্ছিলেন।প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে।হঠাৎ কোথায় গেল?ফোনটাও তো বন্ধ।রূপম কাল থেকে পাগলের মতো তাকে খুঁজছে।অথচ ফলাফল শূন্য।রাজিব সাহেব ভয়ে,আতঙ্কে কুকড়ে যাচ্ছিলেন বারবার।যতোবারই তিনি ভালো কিছু ভাবতে চেষ্টা করেন,মাথায় শুধু খারাপ চিন্তাই আছে।রূপসাকে তিনি চেনেন।না বলে এমন হুটহাট গায়েব হওয়ার মেয়ে সে না।রাজিবের মন বলে রূপসা ভালো নেই।কাল সারারাত মেয়ের চিন্তায় কাতরানোর পর আজ সকালে এমন এক ঘটনা ঘটলো,যে রাজিব সাহেবের মাথায় আস্ত আকাশ ভেঙে পড়লো।

খুব সকালে তার বাড়িতে সাইফের মা এলেন।তিনি এলেন পুরো এলাকাকে সজাগ করে।এতো সকালে কেউ এতো উঁচু স্বরে কথা বলে?

সাইফের মা রীতিমতো এলাকা গরম করে দিলেন।তার নাম মোমেনা।মোমেনা আক্তার পুরো পাড়ায় রটিয়ে দিলেন যে রাজিব মাস্টারের মেয়ে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছে।মাঝখানটায় তার ছেলে সাইফকে ঐ ছেলের বন্ধুদের হাতে মার খেতে হলো।

রাজিব সাহেবের সাথে তার দেখা হতেই তিনি খেঁকিয়ে উঠলেন,’মেয়ে সামলাতে না পারলে বিয়ে ঠিক করেন কেন?আমার ছেলে কি কোনো ছাপোষা?’

পুরো কথা রাজিবের মাথার উপর দিয়ে গেল।তিনি জবাব দিলেন না।শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলেন মোমেনার দিকে।মোমেনা তার চাহনি কিংবা শারীরিক অবস্থার তোয়াক্কা করলেন না।উল্টো আগের চেয়েও রাগত স্বরে বললেন,’আপনার মেয়ের প্রেম আছে।সেটা আগে জানালেই তো হতো।আমরা জোর করে বিয়ে করাচ্ছিলাম?খামোখা কথা গোপন করলেন কেন?’

রাজিব সাহেব হতভম্ব হয়ে তার কথা শুনলেন।এমন করেই বললেন,’আমার মেয়ের কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না কারো সাথে।আমি বিয়ের আগে তাকে জিজ্ঞেস করেছি।’

‘বাহ! মেয়ে বলল নেই।আর আপনিও বিশ্বাস করে নিলেন।আপনার মেয়ে আপনাকে মিথ্যা বলেছে।তার একটা ছেলের সাথে প্রেম।শুধু প্রেম না,গভীর প্রেম।সেই ছেলে যখন শুনলো,আপনার মেয়ের আরেক জায়গায় বিয়ে হবে তখনই সে আমার সাইফের পেছনে উঠে পড়ে লাগলো।আপনার মেয়ের ঐ বখাটে প্রেমিক আমার সাইফের গায়ে হাত দিয়েছে।আমি কেস করব তার নামে।’

মোমেনা আক্তার রীতিমতো ফুসছিলেন।রাগে তার শরীর কাঁপছিলো।কোনো কথাই ঠিক মতো বলতে পারছিলেন না।শেষে বড়ো বড়ো শ্বাস টেনে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললেন,’আপনার মেয়ে জেনেবুঝে সব গোপন করেছে।সে আমার সাইফকে ঠকাতে চেয়েছিল।কিন্তু উপরওয়ালা আমার ছেলের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে।বাপরে বাপ! ভেবেছিলাম মাস্টার মানুষ।শিক্ষিত পরিবার।মেয়েও ভদ্র।এমন বাড়িতে কে না ছেলে বিয়ে দিতে চায়।কিন্তু আপনার মেয়ে যে এতো চতুর,সেটা আগে বুঝিনি।’

রাজিব সাহেব ধপ করে সোফায় গিয়ে বসলেন।জেসমিন ছুটে এসে তার পাশে দাঁড়ালো।আলতো একটা হাত তার কাঁধে রেখে বলল,’আপনি ঠিক আছেন?একটু শান্ত থাকুন প্লিজ।এসব করলে আপনি আবার অসুস্থ হবেন।’

রাজিব সেই কথা শুনলেন না।তার হাত তখন সদ্য জ/বা/ই করা মুরগীর মতো কাঁপছিলো।তিনি শ্বাস টানলেন।তবুও অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ হচ্ছিল না।নিঃশ্বাস ভারি হয়ে উঠছিলো ক্রমশ।
রাজিব সাহেব ইনহেলারের খোঁজ করলেন।জেসমিন ব্যাকুল হয়ে বলল,’একটু শান্ত থাকুন।’

মোমেনার তখন র/ক্ত টগবগ করে ফুটছিলো।তার ছেলে তার বড়ো আদরের।কাল ঐ বখাটের দল তার ছেলেকে এমন মারা মেরেছে,যে সাইফকে শেষ পর্যন্ত ক্লিনিকে ভর্তি করাতে হয়েছে।তার ছেলে যদিও তাকে আংশিক সত্য বলেছে।কিন্তু মোমেনা নানা জনের মাধ্যমে আরো অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন।রূপসার সাথে যে ঐ বড়লোকের ছ্যামড়ার ঘষাঘষি,সেটা কে না জানে?

মোমেনা শুধু রূপসাদের বাড়ি যাওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো না।রূপসার বাবাকে হেনস্তা করেও তার মন ভরে নি।তিনি পুরো এলাকায় ছড়িয়ে দিলেন রাজিব মাস্টারের মেয়ে একটা ভ্রষ্টাচারী।সে এক ছেলের হাত ধরে পালিয়েছে।ঐ ছেলে এক বিরাট ব্যবসায়ীর সন্তান।রাজিব মাস্টারের মেয়ে ছাত্রী পড়ানোর নাম করে ঐ ছেলের সাথে ফষ্টিনষ্টি করেছে।

দাবা/নলের আগুনের চেয়েও দ্রুত বেগে রূপসার প্রেমের খবরটি পুরো মহল্লায় ছড়িয়ে গেল।লোকে শুনলো,আর ছি ছি করলো।রাজিব মাস্টারের মেয়ে,যে কি না পুরো এলাকায় তার শিষ্টাচার আর নম্রভদ্র আচরণের জন্য সমাদৃত ছিলো,মুহুর্তের ব্যবধানে তার সমস্ত শরীরে অপবাদের ধাঁরালো সুঁচ এসে সাই সাই করে বিঁধলো।মহল্লার লোকের কাছে সে পরিচিত হলো চতুর,লোভী আর চরিত্রহীনা রূপে।অথচ এলাকাভর্তি লোকের কেউ একজনও জানলো না রূপসা কেমন আছে।কেউ জানলো না রূপসা কতো আগেই নিঃশেষ হয়ে গেছে।
.
.
.
.
মারুফ সাহেব আজ দুই দিন পর বাড়ি ফিরেছেন।গত দুইদিন তিনি কোম্পানির কাজে এতো ব্যস্ত ছিলেন যে সময় করতে পারছিলেন না।

তিনি বাড়ি ফিরেই সবার আগে দেলোয়ারকে দেখলেন।দেলোয়ার তাকে সালাম দিলো।তার মুখে একটা আতঙ্ক ভাব লেপ্টে ছিলো।মারুফ সাহেব কে দেখতেই সে আতঙ্ক প্রকট হলো।সে একটা ঢোক গিলে বলল,’স্যার।আপনাকে চা দিবো?’

মারুফ সাহেব কিঞ্চিৎ হাসলেন।অফিস ব্যাগটা হাতে নিয়ে ঘরে যেতে যেতে বললেন,’আগে ফ্রেশ হয়ে নেই দেলোয়ার।তারপর দিও।’

দেলোয়ার কোনোরকম পালিয়ে এলো সেখান থেকে।মারুফ সাহেব কয়েক সিঁড়ি ওপরে উঠতেই আরিবার সাথে তার দেখা হলো।নাতনিকে দেখে মারুফ মাহেবের মুখের হাসি চওড়া হলো।তিনি আরো দুই ধাপ উপরে উঠে আরিবাকে কাছে ডাকলেন।আরিবা নাগালে আসতেই এক ছোঁ মেরে তাকে কোলে তুলে নিলেন।তারপর তার গাল দু’টোতে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল,
‘আরু! মাই প্রিন্সেস! কেমন আছো?’

‘ভালো।’

‘দাদুভাই কে মিস করেছো সোনা?’

আরিবা তার গলা জড়িয়ে ধরল।দাদার বুকে মাথা রেখে বাচ্চা বাচ্চা গলায় বলল,’অনেক।তুমি জানো কালকে কি হয়েছে?’

মারুফ সাহেব ডানে বায়ে মাথা নাড়লেন।কৌতূহলী হয়ে বললেন,’না তো।জানি না তো।কি হয়েছে কালকে?’

আরিবা খিলখিল করে হাসলো।খুশি খুশি মুখে বলল,’শোহু কাল মিস কে কোলে করে বাসায় নিয়ে আসছে।মিস তাকে বকুনি দিচ্ছিলো।কিন্তু শোহু তবুও তাকে নামায়নি।’

মারুফ সাহেব কপাল কুঁচকে নিলেন।আশ্চর্য ভঙ্গিতে বললেন,’অদ্ভুত! শোহরাব তোমার মিস কে কোলে নিবে কেন?কিসব উল্টা পাল্টা কথা।’

‘সত্যি দাদাভাই।শোহু মিস কে বে করেছে।’

মুহূর্তেই মারুফ সাহেবের চোখ মুখের রং পাল্টে গেল।তিনি চোখ মুখ শক্ত করে সিঁড়ির মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে থাকলেন।দুই চোখ দপ করে জ্বলে উঠে পর মুহূর্তেই আবার নিভে গেল।

তানিয়া ততক্ষণে সিঁড়ির মাথায় এসে দাঁড়িয়েছে।মারুফ সাহেবকে দেখেই সে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল।উনার তো রাতে আসার কথা।এতো আগে ফিরলেন কিভাবে?এখন বাড়িতে যেই প্রলয় উঠবে,সেই প্রলয় সামাল দিবে কে?

মারুফ সাহেব শীতল গলায় ডাকলেন,’তানিয়া।’

তানিয়ার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো।সে কোনোরকমে বলল,’জ্বী বাবা।’

‘তোমার মেঝো দেবর নাকি বিয়ে করেছে?’

তানিয়া কাঁপা স্বরে বলল,’জ জ্বী বাবা।’

মারুফ সাহেব আস্তে করে আরিবাকে কোল থেকে নামালেন।তানিয়া সিঁড়ির দিকে চেপে গিয়ে দাঁড়ালো।তার নিজেরই বুক দুরু দুরু করছে।এখন কি হবে?আব্বা ক্ষেপেছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

মারুফ সাহেব ধপ ধপ পায়ে শোহরাবের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।তানিয়া ছুটলো তার পিছু পিছু।যেতে যেতে খুব তাড়াহুড়োয় কাউকে ফোন দিলো।

ফোনটা রিসিভ হতেই তানিয়া ব্যাকুল কন্ঠে হড়বড়িয়ে বলল,’আরুর পাপা! আপনি কোথায়?যেখানেই থাকুন না কেন,বাড়ি আসুন।আব্বা বাড়ি এসেছেন।আর আপনার মেয়ে তাকে সব বলে দিয়েছে।দয়া করে তাড়াতাড়ি বাড়ি আসুন।’

চলবে-