ছাদ পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0
385

#অন্তিম_পর্ব
#ছাদ

Feminine Wisdom (কলমে অনিন্দিতা)

” হ্যালো “…… নিলয় ফোনটা ধরতেই খুব মিষ্টি করে বললো জয়া!

” হুম বলো! – আরে কি করছো! ঐদিকে নীল কাপড় নয় গোলাপী! পিঙ্ক! কোন ভাষায় বললে যে তোমরা বুঝবে! বলছি আজকের থিম পিঙ্ক আর ব্ল্যাক!”

জয়া শুনলো ফোন ধরেই নিলয় কারোর সাথে তর্ক করছে! জয়া জানে নিলয় খুব খুঁতখুঁতে! একটা সামান্য শার্ট নিয়ে কম অশান্তি করে ও! মনে আছে বিয়ের পরপর একবার অফিস যাওয়ার সময় একটা সাদা শার্ট খুঁজতে গিয়ে পাঁচটা জামা দেখে তবে একটা পরেছে।
না এসবে কখনো বিরক্ত করেনি জয়াকে। নিলয় খুব স্বাবলম্বী।

” হুম বলুন ম্যাডাম! হঠাৎ আমাকে মনে পড়লো!” – নিলয় আজ প্রচন্ড ভালো মুডে আছে, খুব সাবলীল! তাই হয়তো আজ জয়ার ইচ্ছে হচ্ছে নিলয়ে ভেসে যেতে!

” আজ তোমাকে খুব খুশি লাগছে!” – জয়ার বলা কথাকে মাটিতে পড়তে না দিয়ে বললো ” খুশি তো খুব খুব খুশি!” খুশি কথাটা বলার সময় আরও খুশি লাগছে নিলয়ের গলাটা।

“কি ব্যাপার বলোতো এতো খুশি কেন!” – জয়ার কথায় সন্দেহটুকু স্পষ্ট। নিলয়ও জয়ার সন্দেহটাকে বেশ রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করতে করতে বললো “আমার অনেক দিনের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে!”

“কি স্বপ্ন শুনি! কারোর প্রেমে পড়লে নাকি বলোতো!” – জয়া এবার বেশ বিরক্ত হয়ে ফোনটা রেখে দিতে চাইলো। নিলয় অন্য কারোর প্রেমে ভাবলেই বুক কাঁপে ওর। “থাকো তুমি তোমার স্বপ্ন নিয়ে আমি রাখছি ফোন।” বললো জয়া।

” আরে দাঁড়াও! আমার স্বপ্ন তো তুমি পূরণ করবে! আজ আমার বউ প্রথম আমার অফিসে আসবে! আমার অতিথি! বিশেষ অতিথির লিস্টে তোমার নাম ভাবতে পারছি না আমি ” – নিলয়ের কথাগুলো শুনে আজ ভীষণ ভালো লাগছে। এতদিনে মনে হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা খুব মিষ্টি।

আর এই ভাবনা থেকেই আস্কারার জন্ম। আর সেখান থেকেই আবদার “বলছি আমার একটা উপকার করবে গো?একটা কথা রাখবে!” এই প্রথম এরকম ভাবে আবদার করলো জয়া!

নিলয়ও বোধহয় প্রস্তুত ছিল না এমন অকপট আবদারের। বিয়েটা তো নিলয় করেছে কিছু কাছের মানুষের অনুরোধে! কিন্তু সেটা এমনিই গা ভাসিয়ে দিন কাটানোর জন্য একদমই নয়!

খুব ভেবেচিন্তে পরিকল্পনা করে তবে পা ফেলে নীলাজিৎ সিকদার। আর আবেগ যদি বলো সেটা নিলয়ের কোনো কালেই নেই। থাকলে তো ভেসে যেত! বাবা আর মা দুজনেই আছে ওর কিন্তু আসলে কেউ নেই। দুজনের আলাদা আলাদা দুটো সংসার! সেখানে দুই পক্ষেই একটা করে মেয়ে! ওরা নাকি বোন!

ভাগ! বাবা মাকেই স্বীকার করেনা নিলয় আর বোন! মোটামুটি ভালো টাকা খোরপোষ নিয়েছে নিলয়! বাবা মা দুজনের থেকেই! বিবাহ বিচ্ছেদের মত জন্ম বিচ্ছেদ করেছে ও! খোরপোষ তো দিতেই হবে!

বিনিময়ে আর ও মুখো হবে না! এই শর্তেই আর বাবা মায়ের দেওয়া খোরপোষ দিয়েই তো আজ নিলয়ের এতো রমরমা! মানে শুরুটা এভাবেই আর সেখান থেকে সিকদার্স এর আজকের এমন ফোলা ফাঁপা অবস্থা।

আরও আরও ছড়িয়ে যাবে সিকদার্স! বাবার দেওয়া মোটা টাকার একটা অংশ সিকদার্স এ আছে তাই তো নামটাকে রেখে দিয়েছে নিলয়। নিলয় বিশ্বাস করে যে প্রত্যেকের দানের একটা অনুদান আছে! কারোর থেকে অকারণে কিছু নেয়না নিলয়! তাই তো আজ সিকদার্স নাহলে তো কত নামই ভেবেছিলো নিলয়!
শুধু বাবার ইনভেস্টমেন্ট আছে তাই নামে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা আর কি!

” এই শুনছো? ” – আবার বললো জয়া। নিলয় হুম বলতেই জয়া বললো ” আমার সাথে একদিন রতনপুর যাবে গো? ওখানকার জমিগুলো নিয়ে এবার ভাবতে হবে! ”
” হঠাৎ!” – জিজ্ঞেস করলো নিলয়। ” বাবা ফোন করে বললো কারা যেন জমি মাপঝোক করতে এসেছে!” – জয়ার গলায় বড্ড চিন্তা বোঝা গেল।

চুপ করে আছে নিলয়! “শুনছো? যাবে তো! তুমি একটু দায়িত্ব নাও না জমিগুলোর!” – জয়ার এমন লোভনীয় প্রস্তাবেও চুপ হয়ে আছে নিলয়।

” যাবে তো? বাবার খুব ইচ্ছে ওখানে নার্সিংহোম আর স্কুল খোলার! তুমি একটু বাবাকে সাহায্য করো না গো!” – বউরা বোধহয় এভাবেই আবদার করে স্বামীর কাছে ।

সে বিষয়ে খুব কিছু জ্ঞান নেই ওঁদের দুজনের কারোরই। তাই হয়তো সেভাবে সাড়া দিতে পারছে না নিলয়। সত্যি কি অনভ্যাসের ফল নাকি অন্য কোনো ব্যাপার!……..

ঘড়িতে তিনটে বাজে প্রায়! একটা ফেসিয়াল আর ব্যাক ম্যাসাজ দিতে দিতেই ঘন্টা তিন কেটে গেল! সকালে খাওয়া বলতে ওটস আর ফ্রুট জুস। মাসির বাড়িতেও সকালে লুচি, পরোটা, চিঁড়ের পোলাও, কতরকম খাওয়া কিন্তু – এই বাড়িতে এসে সবকিছু ভীষণ মাপা মাপা।

জলখাবার মানে ওটস, কর্ন! সাথে শরীর চৰ্চা! মিসেস নীলাজিৎ হবে ফিট এন্ড স্লিম!

দুপুরের রান্নার মেনুও নিলয় ঠিক করে বলে যায়! অবশ্য জিজ্ঞেস করে জয়াকে! অতিথি আপ্যায়নের মত! কিন্তু আজ যেন একটু একটু সাহস পাচ্ছে জয়া কর্তৃত্ব করার ! মনে হচ্ছে এই এতো বড় সংসারটা ধরার সময় এসে গেল! নিলয় এখন অনেকটা স্বাভাবিক! হয় তো ও স্বাভাবিকই ছিল।

আসলে জয়া মিশতে পারেনি! নিজেকে সবসময় একটা মোড়কে আটকে রেখেছে। ও তো পারতো ছাদের বাগানে শখের হলুদ গোলাপ লাগাতে বা সকালে বানাতেই পারতো ময়দার লুচি সাথে সাদা আলুর চচ্চড়ি কিংবা দুপুরে সাদা ভাত আর খাসির মেটে চচ্চড়ি!

ওই তো কখনো বলেনি যে ওর কি চাই। যা চাই সেটা না পেলেও অতিরিক্ত অনেক কিছু পেয়েছে যেটা অনেকেই পায়না! কিন্তু এখন বোধহয় সময় হয়েছে অতিথি থেকে বাড়ির কর্ত্রী হওয়ার।

মাসি বলে তো মেয়েদের নজর না থাকলে পরিবার আর পরিবার থাকে না কিন্তু নিলয় বড্ডো গোছানো। আসলে ছোট থেকেই যে একা বড় হয়েছে।

মা বাবা ছাড়া জয়াও বড় হয়েছে কিন্তু মাসি মেসো আগলে রেখেছিলো ওকে। বুঝতে দেয়নি অভাবটা অথচ নিলয়! সারাজীবন কাটিয়ে দিলো হোস্টেলে। মা বাবা থেকেও নেই। ভাবনাটা আসতেই বড্ড কষ্ট হলো জয়ার।

রাজি হয়েছে নিলয় রতনপুর যেতে। বলেছে যাবে! নিজে দাঁড়িয়ে দেখে আসবে। স্কুল নার্সিংহোম যেমন যেমন জয়ার বাবার ইচ্ছে তেমনটাই হবে বলেছে নিলয়। ভীষণ ভালো মানুষ এই নিলয়। বাবার সাথে দারুণ জমবে।

নিয়ে যাবে জয়া নিলয়কে – পারুল পিসিমণির বাড়ি, ওর স্কুল, রহিম চাচার বাগান! গ্রামের ভাবনা ভাবতে বসলে আর কিছু খেয়াল থাকে না যেন জয়ার।

ওদিকে কতক্ষণ ধরে ফোনটা বাজছে। পার্লারের মেয়ে দুটো খেতে গেছে, ফিরে এলে সাজতে বসবে জয়া। তাড়াতাড়ি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ” মাসি ”

এই সময় একবার ফোন করে শুক্লা। শুধু জিজ্ঞেস করে ” খেয়েছিস? কি খেলি? ”
.
” হ্যাঁ মাসীমণি বলো!” – জয়া ফোন ধরতেই চাপা গলায় শুক্লা বললো ” নিলয় কই রে? ” এ আবার কি প্রশ্ন, ও তো অফিসে! এই সময় তো ওখানেই থাকে!”

ফেসিয়ালের পর সোনার দুল দুটো কানে পরতে পরতে বললো জয়া। ” অফিসে! ” খুব চিন্তিত লাগলো গলাটা শুক্লার।

” কিছু হয়েছে মাসীমণি? মেসো ঠিক আছে? ” – মায়ের হঠাৎ জ্বলে যাওয়ার ঘটনার পর জয়ার যেন সবসময় মনে হয় এই বুঝি আবার কিছু হলো! আতঙ্কে থাকে সবসময়।

” না মেসো ঠিক আছে। গ্রাম থেকে তোর পারুল পিসি ফোন করেছিল! বললো নিলয় নাকি আজ লোক পাঠিয়েছে – জমি গুলো মাপঝোক করার জন্য।

“জামাইবাবু খুব চিৎকার করার পর নাকি ওরা বলেছে কলকাতা থেকে এসেছে ওঁর জামাইয়ের লোক! মদ ফ্যাক্টরি হবে ওখানে !”

কি বলছে এসব মাসিমণি। হতেই পারেনা! “কই বাবাতো কিছু বললো না!” – জিজ্ঞেস করলো জয়া। “জামাইবাবু অসুস্থ হয়ে গেছিলো ধরে বাড়ি নিয়ে গেছিলো সব তখন নাকি লোকগুলো বলেছে! বলেছে এটা নাকি অন্যের জমি নয়। ওঁর মেয়ের মত নিয়েই ওরা এসেছে! তাই বলছি তুই কি কিছু জানিস?” –

” আমার মত? ” – বিড়বিড় করলো জয়া। সকালে তো বললো যে ওঁর সাথে যাবে রতনপুরে। বাবার ইচ্ছেই শেষ ইচ্ছে! তাহলে কি এসব!

পা দুটো কাঁপছে জয়ার। “মাসীমণি একটু রাখো তো ফোনটা!” বলেই ফোনটা কেটে দিলো জয়া। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ও। ফেসিয়ালের পর খুব চকচক করছে মুখটা জয়ার কিন্তু আয়নার প্রতিবিম্বটা এতো ঝাপসা কেন!
কি সাংঘাতিক বোকা হয়ে গেল ও! এতোটা বিশ্বাসঘাতকতা! এই জন্যই কি সেদিন রাতে জোর করে বললো “তুমি তো আমার লাকি চার্ম!”

রাগে দুঃখে কান্না এসে যাচ্ছে জয়ার। এক্ষুণি একটা ফোন করতে হবে। হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কিন্তু পরে জয়ার বাবার ইচ্ছেটা শুনে সিদ্ধান্ত বদলেছে! জানতে হবে সত্যিটা!

জয়া তাড়াতাড়ি ফোনটা করতেই একবারে ফোন ধরলো নিলয়। “ইয়েস ডার্লিং!”

“তুমি কি লোক পাঠিয়েছিলে রতনপুর গ্রামে?”- জিজ্ঞেস করলো জয়া। আজ আর কোনো ভনিতা নয়! যা হবে সরাসরি। একটু থেমে বললো নিলয় “হুম পাঠালাম তো! একটা সরকারি প্রজেক্ট হবে! জমিটা লাগবে! তুমি তো সরকারি প্রজেক্ট চাইছিলে- স্কুল, নার্সিংহোম! তোমার কথা মতোই তো করছি!”

একটু যেন শান্ত হলো জয়া! তাহলে ওই ভুল! সত্যি তো ওই তো বলেছিলো করতে এসব! “জয়া তুমি শনিবার নয়! কালই চলো আমি যাবো! নিজের চোখে দেখে আসবো সবটা! আজ দিনটা খুব ভালো জানো জয়া! সব সুন্দর হচ্ছে। আমার প্রজেক্টটার জন্য যা যা লাগবে সবটা পেয়ে যাবো রতনপুরের গ্রামে!”

বলেই যাচ্ছে নিলয়! কি সাংঘাতিক আবেগ গলায়! ” থ্যাংক ইউ জয়া! তুমি না থাকলে এটা হতো না! এখন শুধু লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষা!”

” কিসের লাইসেন্স?” – থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো জয়া।” বার একটা বারের জন্য সরকারি অনুমোদন!” বারটা হলে ওই টাকায় দু বছরের মধ্যে স্কুল, নার্সিংহোম সব হবে!

কি সুন্দর স্বপ্ন দেখাচ্ছে নিলয় জয়াকে! আচ্ছা জয়া কি সেই সাড়ে সাত বছরের বাচ্চা! চোখ বন্ধ করলো জয়া! মায়ের আগুনে ঝলসানো চেহারাটা ভেসে উঠলো। ফোনে অনেক কিছু বলছে নিলয়। কেটে দিলো ফোনটা জয়া।চুপ করে আছে জয়া- অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে আছে!

কি করবে ও এখন! চুপ করে যাবে! যা হচ্ছে হতে দেবে এক বছরের এতো সুখ এতো আরাম! কিন্তু বিশ্বাস, ভালোবাসা?

চোখ খুললো জয়া! ছাদের বাগানটা এখান থেকে দেখা যাচ্ছে! এ বাড়ির এটা খুব পছন্দের জায়গা জয়ার ! ওখানে গেলে নিজেকে কেমন কাদম্বরী দেবীর মত লাগে ! মনে হতো এটা ওর নন্দন কানন! কত কথা বলতো ক্যাকটাস গুলোর সাথে।

বড় অদ্ভুত লাগে জয়ার যে এতো বড় বাগান অথচ কোনো ফুল নেই শুধুই কাঁটা! কি করবে ও! আরেকটা কাদম্বরী দেবী হবে? কাদম্বরী দেবীর সুইসাইড নোট!

মনে পড়লো জয়ার! তাও তো কাদম্বরী দেবীর দেওর ছিল। বিশ্বকবি তাঁর কলমে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাঁর নতুন বৌঠানকে। কিন্তু জয়া! মায়ের মত, কাদম্বরী দেবীর মত আত্মঘাতী হলে কি হবে! কেউ জানবে না! ভুলে যাবে সব! সবাই ভুলে যাবে। হয়তো মৃত বৌয়ের দুঃখটাই তখন অস্ত্র হবে ধুরন্ধর নিলয়ের।

“ম্যাডাম, আমাদের হয়ে গেছে! আপনি রেডি তো মেকআপের জন্য? ” – মেয়েদুটো দাঁড়িয়ে সামনে। আজ ওমেন্স ডে! আজ দিনটা কিছুতেই এভাবে শেষ করা যাবে না!

“হুম সাজবো!”- বলেই চেয়ারে বসলো! ” আপনি কি কোনো মেকআপ দেখে রেখেছেন? কিরকম সাজবেন? ” – মেয়েটার কথায় একটু ভেবে গুগল সার্চ করে বের করে আনলো লক্ষ্মী বাঈয়ের ছবি। অস্পষ্ট একটা ছবি। দেখিয়ে জয়া বললো ” মেকআপ যাই হোক, চোখ দুটোয় যেন আগুন থাকে!”

মেয়েগুলো চরম অবাক! এ আবার কি! কোথাকার এক ইতিহাসের ছবি! এ ওর মুখের দিকে তাকালো। তুতলে জিজ্ঞেস করলো ” শাড়ির রং? ”

জয়া বললো ” সাদা ” হুম সাদা রংটাই ভালো। কারণ আজকের পর লালের আর চিহ্ন থাকবে না জয়ার জীবনে !উইমেন্স ডে র প্রোগ্রামেই আজ অসুর বধ করবে জয়া! বলবে নিলয়ের আসল চেহারা।

কিন্তু কি হবে! কেউ বিশ্বাস করবে কি! ওই মেয়েগুলোর চোখে তো নিলয় ভগবান ওখানে কেউ বিশ্বাস করবে না যে নিলয় কি! বরং আরও খারাপ হবে। তার থেকে রতনপুর যাবে জয়া! গ্রামের সবাইকে বোঝাতে হবে। জয়া মানে ওই জমির মালকিন প্রাণ থাকতে মদের কারখানা হতে দেবে না এই গ্রামে ! দূষিত হতে দেবে না এই রতনপুরের হাওয়া।

আগে এইটুকু বন্ধ হোক! তারপর বাকি স্বপ্নগুলো হবে! দরকার পড়লে গ্রামের মাথাদের ধরতে হবে, বোঝাতে হবে জয়া ওদের শত্রু নয়। আজই যাবে জয়া এক যোদ্ধার সাজে! বাবার মেয়ের সাজে! গ্রামের লোকজনের শুভাকাঙ্খীর সাজে! আর সবশেষে নিলয়ের শত্রুর সাজে!

“সাজাও সাজাও! তাড়াতাড়ি সাজাও! ভুলে যেও না চোখে যেন আগুন থাকে! যুদ্ধ করার আগুন!” বলেই চোখ দুটো ওপরে করলো জয়া। চোখে আঁকা হবে! কিন্তু নিজের চোখেই দেখতে পারছে জয়া ওপরের ছাদটা থেকে রং গুলো খসে পড়ছে! ফ্যাকাশে হয়ে গেছে! ফাটলও ধরেছে! চোখটা বন্ধ করে নিলো জয়া….
গুনগুন করে ধরলো

“মহারাজ, একি সাজে এলে হৃদয়পুরমাঝে!
চরণতলে কোটি শশী সূর্য মরে লাজে ॥
গর্ব সব টুটিয়া মূর্ছি পড়ে লুটিয়া,
সকল মম দেহ মন বীণাসম বাজে ॥”

আমি কাদম্বরী নই আমি লক্ষ্মী বাঈও নই আমি জয়া! জয় যাঁর লক্ষ্য, প্রাণ থাকতে হার মানে না জয়ারা।
———-== সমাপ্ত ————–