#মনকাননের_সুর – [০২]
লাবিবা ওয়াহিদ
[কপি সম্পূর্ণ নিষেধ]
আজ রামিশার একমাত্র ভাই রাকিবের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। পাত্রের একমাত্র বোন হিসেবে উচিত ছিল সাজ-গোছে নিজেকে রাঙিয়ে রাখা। তবে রামিশার ক্ষেত্রে আজ ভিন্ন চিত্র। সে সাজগোছের সুযোগই পায়নি। হলুদের অনুষ্ঠান ঘরোয়াভাবে বেশ কিছু আত্নীয়-স্বজনকে নিয়েই হচ্ছে।
রামিশা শাদিফদের বাড়ি থেকে ফিরেই দেখল মনিষা সেজে বসে আছে রামিশার অপেক্ষায়। আজ তাদের নাচ আছে। এজন্য ফাইনাল নাচের আগে একটু রিহার্সাল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুজন মিলে। কিন্তু রামিশা ব্যস্ত হয়ে চলে যাওয়ায় মনিষার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তবুও রামিশাকে দেখে একটু আশার আলো পেয়েছিল। এখন রামিশা মনিষাকে দেখে ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
–“নাচব না আমি। একাই রিহার্সাল করে নে।”
মনিষার মুখ থমথমে হয়ে যায়। চট করে উঠে এসে রামিশার পিঠে কিল বসিয়ে বলল,
–“ফালতু কথা একদম বলবি না। তুই আমাকে দুই রাত না ঘুমাতে দিয়ে নাচ প্রেক্টিস করিয়েছিস। হয় আমার দুই রাতের ঘুম ফেরত দে নয়তো এক্ষুণি আসবি আমার সাথে রিহার্সালে। কোনো কথা আমি শুনছি না।”
রামিশার আসলেই ইচ্ছা করছিল না নাচে যোগ দেওয়ার। আচমকা তার মত ঘুরে গেল কেন কে জানে? রামিশার এই একটা বাজে স্বভাব। মাঝেমধ্যেই নিজের সিদ্ধান্তের শেষ মুহূর্তে গিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কিংবা মন ছুটে যায়। এবার মনিষার জবরদস্তিতে না চাইতেও রিহার্সালে যেতে হলো।
যথারীতি হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। উচ্চস্বরে গান-বাজনা হচ্ছে একপাশে, বিয়ে বাড়ির আমেজে সকলের মন ফুরফুরে। শাদিফসহ তার বাবা-মা এলো বেশ কিছুক্ষণ পরেই। রামিশা নিজে তাদের হাসি-মুখে স্বাগতম করলো। শাদিফ এত দূর জার্নি করে আসায় মুখে ক্লান্তির ছাপটা রয়ে গিয়েছে। রামিশা চোখ তুলে দেখে নেয় শাদিফের মলিন মুখটাতে। হলুদ পাঞ্জাবি পরেছে সে। দেখতে দারুণ লাগছে। তবে রামিশা একদমই ছেলেদের হলুদ রঙে দেখতে পারে না। নিজের অপছন্দ সে তখনকার মতো গিলে নিলো।
শাদিফকে শেষবার বছর তিনেক আগে দেখেছিল সে। বহুদিন পর দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ায় রামিশা চাইলেও সেভাবে মিশতে পারছে না। প্রথম প্রথম সবারই জড়তা কাজ করে। রামিশার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু নয়। শাদিফের বাবা-মা তার থেকে আলাদা হয়ে পড়ে মুহূর্তেই। এতে করে রামিশা শাদিফকে একটা জায়গায় চেয়ার টেনে বসতে বলল। শাদিফ সেখানে বসতেই রামিশা মিনমিন করে বলল,
–“গান-বাজনায় কী বেশি খারাপ লাগছে?”
শাদিফ নেতিবাচক মাথা নাড়ায়। চট করে বলল,
–“চা করে আনবি প্লিজ?”
রামিশা হতভম্ভ হয়। এই বিয়ে বাড়িতে কোন পাগলে চা চায় রামিশার বুঝে আসলো না। রামিশা কিছু বলতে নিলে শাদিফ আবার বলল,
–“সরি, চা না। কফি লাগবে। পাব?”
শাদিফ রামিশার নেচার জানে। মুখের ওপর যে “না” ঠেসে দিবে সেটাই শাদিফের ধারণা। উত্তর জানা সত্ত্বেও রামিশার থেকে কফি চাইতে মন্দ লাগছে না। তবে আজ রামিশা যেন তার স্বভাবের উলটো পথে হাঁটছে। রামিশা বলল,
–“এখনই লাগবে?”
–“হ্যাঁ।”
–“আচ্ছা, আনছি!”
শাদিফ সেই মুহূর্তে অসম্ভব চমকালো। রামিশা যেতে নিলে শাদিফ তাকে থামিয়ে বলল,
–“আরে, আরে। কোথায় যাচ্ছিস? কফি কী তুই বানাবি নাকি?”
রামিশা শাদিফের চশমার ভেতর থাকা চোখ-জোড়ায় একপলক চেয়ে বলল,
–“কেউ নিশ্চয়ই আপনাকে কফি করে দেওয়ার জন্য বসে নেই? আমাকেই করতে হবে, কমনসেন্স।”
রামিশা দাঁড়াল না আর। নির্বাক শাদিফকে বসিয়ে রেখে কফির ব্যবস্থা করতে চলে গেল। শাদিফের ঘোর কাটতে কিছুক্ষণ লাগলো। সে নড়েচড়ে বসে স্টেজে রাকিবের দিকে তাকাল।
রামিশার বাড়িতে কফিখোর তেমন কেউ নেই। তাই বাড়িতে কফি থাকবেও না স্বাভাবিক। ওই মাঝেমধ্যে রামিশার কফির শখ উঠলে খুচরো কফির প্যাকেট কিনে এনে বানিয়ে খায়। তবে শাদিফ আবার কঠিন কফিখোর। সে ব্র্যান্ডেড কফি খায়। এক মুহূর্তের জন্য রামিশা কোমরে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে রইলো। কপালে তার চিন্তার ভাঁজ। এই মুহূর্তে সে ব্র্যান্ডেড কফি কোথায় পাবে?
ভাবনার মধ্যেই তার সামনে দিয়ে পাড়ার ইন্টারে পঁড়ুয়া একটা ছেলে হেঁটে যাচ্ছিল। ছেলেটার নাম রাফসান। রামিশা “রাফসান” বলে ডাক দিতেই রাফসান সোজা তার সামনে এসে দাঁড়ায়। গলা নামিয়ে বলল,
–“জি আপু?”
–“মুদির দোকান থেকে আমাকে কয়েকটা কফির প্যাকেট কিনে এনে দে তো!”
রাফসান থতমত খেল। এই হলুদের অনুষ্ঠানে কফি দিয়ে সে কী করবে? তবে বিস্ময় বেশিক্ষণ টিকেনি তার। রামিশা মানেই যে উদ্ভট কাজ-কারবার সেটা শুধু সে কেন, সবাই জানে। রাফসান হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
–“কয় প্যাকেট।”
–“ত্রিশ টাকার যে কয়টা প্যাকেট আসে আন। দ্রুত ফিরবি, আমার তাড়া আছে।”
রাফসান মাথা নেড়ে তৎক্ষণাৎ চলে গেল।
–“আপনার কফি।”
শাদিফের মুখের সামনে ধোঁয়া ওঠা কফির মগ ধরে দাঁড়িয়ে আছে রামিশা। শাদিফ কফির মগ হাতে নিতেই কফির ঘ্রাণে কেমন মোহিত হয়ে পড়ল। সে মাথা তুলে তাকাল রামিশার দিকে। রামিশার নজর অন্য কোথাও স্থির। শাদিফ তাকে ধন্যবাদ জানানোর আগেই রামিশার ডাক পড়ল। তাই ডাকের সাড়া দিয়ে সেও চলে গেল। শাদিফ ততক্ষণে কফিতে চুমুক দিতে দিতে আশেপাশে নজর বুলালো। কফি মুখে দিতেই শাদিফ আপনমনে বলল,
–“খারাপ না।”
শাদিফের মায়ের নাম শাহিনা আহমেদ। তিনি একজন শিক্ষিত এবং পেশাদার মানুষ। একসময় স্বামী-স্ত্রী একসাথে গবেষণার প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও এখন তিনি অসুস্থতার ভারে গৃহিনী। দেশে এই গবেষক পেশার তেমন মূল্য নেই বললেই চলে। পরিশ্রম অনুযায়ী সুফল পাওয়া যায় না। এজন্য বহুদিন প্রচেষ্টার পর জার্মানির মাধ্যমে তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। সেখানে গিয়ে কয়েক বছর অধ্যবসায়ের পর যখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে, তখনই আচমকা শাহিনা আহমেদের টিউমার ধরা পড়ল। অপারেশন সেখানেই হলো। অপারেশনের পরপর পেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বসেন। জার্মানির বাড়িতে একা থাকতে গিয়ে দেশ, পরিবারের প্রতি খুব টান অনুভব করলেন। এরপর আর কী, স্বামীকে ইমোশনালি ব্লেকমেইল করে দেশে চলে আসলেন। গোল্লায় যাক এসব চাকরি-বাকরি, সবকিছুর আগে নিজের ভালো থাকা জরুরি। এছাড়াও জীবনে যা কামিয়েছেন, তা একমাত্র ছেলের জন্যে যথেষ্ট।
তবে ছেলেকেও তিনি বহুবার নিজেদের সাথে আনতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু স্বামীর মতো করে ছেলেকে ব্লেকমেইল করা সহজ ছিল না। তিনি ছেলের উন্নত ভবিষ্যৎ-ও চাইতেন আবার ছেলেকে ছাড়া থাকতেও চাইতেন না। শাদিফ তাই হাই-স্কুল শেষ করে ছুটিতে মায়ের কাছে আসে। বাবাকে নিজের দলে নিয়ে মাকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে আবারও জার্মানিতে চলে যায়। এখন শাদিফের গ্রাজুয়েশন শেষ। জার্মানিতে সে চাকরিও করত। আচমকা মায়ের কঠিন নির্দেশে সে দেশে আসতে বাধ্য হয়।
শাহিনা এবং রাহেলা একসাথে বসে স্টেজের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। রামিশা এসে শাহিনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আবারও চলে যায়, ভেতরে। একটু পরই মেয়েপক্ষ থেকে লোকজন আসবে রাকিবকে হলুদ ছোঁয়াতে।
রামিশা যেতেই শাহিনা মুচকি হেসে রাহেলাকে বললেন,
–“দেখলেন তো আমার ছেলেকে?”
–“হ্যাঁ, মাশাআল্লাহ। ছোট্ট শাদিফ কত বড়ো হয়ে গিয়েছে।”
শাহিনা মশকরা করে বললেন,
–“বিয়ের উপযুক্ত এখন আমার ছেলে।”
রাহেলা হাসলেন। শাহিনার ইঙ্গিত বুঝতে বেশি বেগ পোহাতে হয়নি তাঁর। শাহিনা আবার বললেন,
–“আপনি ভাইয়ের সাথে কথা বলে দেখেন। আমি রামিশাকে আমার মেয়ে রূপে চাই, আশা রাখছি আপনাদের কোনো আপত্তি নেই।”
হাতে ফুলের ডালা নিয়ে রামিশা পিছে দাঁড়ানো। ভেতরে গিয়ে আবার তখনই ফিরে এসেছে সে। শাহিনার কথা সে স্পষ্টই শুনতে পেল। রামিশা অদূরে বসে থাকা শাদিফের দিকে একপলক তাকালো। শাদিফ এক হাতে কফির মগ নিয়ে আরেক হাতে মোবাইল নিয়ে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে মেয়েপক্ষ থেকে লোকজন আসলো। রাকিবকে তারা হলুদ ছোঁয়ালো। গান হলো, নাচ হলো। রামিশা খুব হাসি-খুশি নাচ দিলো মনিষার সাথে। রামিশা যখন নাচতে ব্যস্ত তখন শাদিফের পেছন থেকে কিছু ছেলে তাকে নিয়েই কথা বলে। যা শাদিফ স্পষ্ট শুনতে পায়।
একজন বলছে,
–“চশমা পরা মেয়েটা কিন্তু সুন্দরী। কে হয় পাত্রের?”
–“পাত্রের বোন ওটা।”
–“সুন্দরী, নাচেও ভালো। এত গুণ!”
তার পাশের ছেলেটা তখন তাচ্ছিল্য করে বলল,
–“এই মেয়েটাকে নিয়ে ভুলেও কিছু ভেবো না। জীবনে শুনেছ মেয়ে মানুষ জিম করে? এই মেয়ে করেছে। লাইন মারতে গিয়ে এই মেয়ের হাতে মার পর্যন্ত খেয়েছি। এটা কিছুতেই মেয়ে হতে পারে না। পৃথিবীর বুকে আস্ত এক জল্লাদ।”
শাদিফ না চাইতেও মুখ চেপে হেসে ফেলল। রামিশা এখনো সেই ধানিলঙ্কাই আছে, একটুও বদলায়নি। শাদিফ আরও রামিশার এমন চুপচাপ ব্যবহারে ভেবেছিল বড়ো হয়ে একটু ম্যাচিওর হয়েছে, স্বভাব বদলিয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সব একই আছে।
রামিশা নাচ শেষ করে হাঁপাতে হাঁপাতে শাদিফের পাশের চেয়ারে বসলো। ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত রামিশার দিকে এক পলক চাইলো সে। শাদিফ মুখে হাত গুজে বলল,
–“তুমি কী জিমে যেতে?”
আচমকা শাদিফের মুখে এহেম প্রশ্ন শুনে রামিশা পাশে তাকালো। শাদিফ তাকে তুমি করে বলছে? শুনতে মন্দ লাগছে না। পরপর জিমের কথাটা মাথায় আসতেই ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
–“হ্যাঁ। লম্বা কাহিনী।”
–“জার্মানিতে এসব কমন বিষয় বুঝলাম। কিন্তু তুমি মেয়ে মানুষ, না মানে..”
রামিশা শাদিফের অস্বস্তি বুঝতে পারলো। তবে সে হেসে বলল,
–“আমার ওজন কমানোই মূল লক্ষ্য ছিল। এজন্য রাকিব ভাইয়ার সাথে মাঝেমধ্যে যেতাম, আর নয়তো বেশিরভাগ সময়ই সকালে উঠে হাঁটতে বের হতাম! আমার আবার মোটা থেকে চিকন হওয়ার শ্রম বহুদিনের।”
দুজনের কথা-বার্তা তখন থামলো। রামিশা কী ভেবে গলা খাদে নামিয়ে বলল,
–“ছেলেদের হলুদ আর লাল রং পরা ঠিক না। আপনিও এভোয়েড করিয়েন।”
শাদিফ বেশ চমকালো রামিশার কথা শুনে। নিজে মুখ খুলে কিছু বলার আগেই রামিশা উঠে তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে কেটে পড়তে নিলেও পারলো না। কোনো একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে চোখ থেকে চশমা খুলে পড়ে গেল। সেই চশমা আরেকজনের পায়ের নিচে পড়ে গেল। মুহূর্তেই নাটকীয় ঘটনা ঘটে গেল। রামিশা অবশ্য চশমার জন্য আর দাঁড়ায়নি। হনহনিয়ে চলে যায়।
হৈ-হুল্লোড়ের মাঝে থেকে এমনিতেও রামিশার মাইগ্রেন উঠেছিল, তার উপর চশমা ভেঙে গেছে। তীব্র মাথা ব্যথায় রামিশার সারা রাত ঠিকমতো ঘুম হয়নি। সকাল সকাল উঠেই দুই কাপ চা খেয়েছে, ওষুধ খেয়েছে। আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে ধীরে ধীরে ঠিক হয়। তবে চশমা তো দরকার। রামিশা মন খারাপ করে বারান্দায় বসে রইলো। সবাই তখন তৈরি হতে ব্যস্ত। সে তার পাশে ফুলের টবগুলোর দিকে তাকালো। সবুজের মাঝে একটা প্রাণহীন গাছের টব। এটা সেই শাদিফের দেওয়া বেলিফুলের। গাছটা মারা গেছে আজ কয়েক বছর। তবুও এই গাছটা অজানা কারণবশত ফেলতে পারেনি।
বরযাত্রী যাওয়ার সময় এসেছে। রামিশা গাড়ির একদম পেছনে গিয়ে বসলো। আজ তার চোখে চশমা নেই, একটু অস্বস্তি লাগলেও সমস্যা হচ্ছে না। রামিশার সাথেই তার আড্ডার সঙ্গীরা। কথা-বার্তার এক পর্যায়ে দেখলো শাদিফও তাদের গাড়িতে উঠে বসছে। শাদিফ পিছে ফিরে রামিশার দিকে একপলক চেয়ে হাতের একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলো। রামিশা সেটা নিয়ে ভেতরে দেখতেই অবাক হলো। এটায় যে একটা চশমা। শাদিফ বলল,
–“রাকিবের থেকে চশমার পাওয়ার জেনে নিয়েছি। আজ শুক্রবার, দোকান-পাট সব বন্ধ। বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে।”
রামিশা শাদিফের থেকে নজর ফিরিয়ে চশমাটায় আঙুল বুলালো। পরপর চোখে সেই চশমা দিয়ে হাসলো। শাদিফকে দেখিয়ে বলল,
–“কেমন লাগছে?”
শাদিফ শুধু হাসলো। উত্তরে কিছুই বলল না।
চলবে~~