অতঃপর প্রণয় পর্ব-২+৩

0
546

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা


গত দু-ঘন্টায় এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করেছে শোভন মাঝে মাঝে নিজের স্বভাবে নিজেই বিস্মিত হয় শোভন৷ কারণ তার পরিবারের সবাই ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ জন৷ তাইতো সাধারণ মানুষ এর এত প্রিয় হয়ে উঠেছে সহজেই৷ কিন্তু সে বেশ রাগী মানুষ এর সামনে অত্যন্ত গুরগোম্ভীর ও বটে৷ তবে সবার সাথে যে রাগ টা আসে এমন মোটেও নয়৷

আশেপাশে তাকাতেই দেখলো ইতমধ্যে জায়গাটা নোংরা করে ফেলেছে৷ সিগারেটের খোশা আসেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ খানিকটা দুরই ডাস্টবিন উঠে ফস করে নিশ্বাস ছাড়লো৷ আপাতত খানিকটা মাথা ঠান্ডা আছে৷ এমন একটা ঘটনা ঘটলো আজ তার সাথে ব্যাপারটা কি লজ্জার নয় কি? রাগ কি সামলে রাখা যায়? ভাবতে ভাবতেই সিগারেটের খোসা গুলো তুললো৷ যখন ফেলতে যাবে হুট করে মাথায় এলো মেয়েটা অনেক্ষণ যাবত গেলো আসার নাম নেই এখনো৷ কি আশ্চর্য! পরক্ষণেই পাত্তা দিলো না তেমন যদিও মেয়েটার জিনিস পত্র এখানেই আছে৷ যাই হোক যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাক তার দেখার বিষয় না৷

সিগারেট গুলো তুলে ডাস্টবিন এ ফেললো৷ হাত টা নোংরা হয়ে গেছে৷ ওয়াশরুম এখান থেকে কিছুটা দূর গিয়ে ভেতরের দিকে৷ সে দিকেই হাটা দিলো৷ কিন্তু কিছু দূর আসতেই চমকালো খানিকটা কিছু লোক একটা মেয়েকে টেনে বাইরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷
মেয়েটা ছোটাছুটি করছে একজন মুখ চেপে নিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু মেয়ে টার সাজপোশাক দেখে চমকে উঠলো৷ আএ এটা তো সেই মেয়েটি৷
শোভন দৌড়ে গেলো৷ একেবারে সামনে এসে দাড়ালো৷ গম্ভীর কন্ঠে চওড়া গলায় বললো,
“তোরা ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?ছাড় ওকে৷ ”
পেছন থেকে একজন বলে উঠলো,
“আরে এই শা*লা আইলো কইথ্যেইকা৷ ”
সাথে সাথে মুখ বরাবর একটা ঘুষি পরলো ঠাস করে৷ লোকটা ছিটকে গিয়ে পরলো দূরে৷ সুঠাম দেহের শোভনের ঘুষিতে অল্পতেই খেই হারালো লোকটা৷ সে লোক টার করুন অবস্থা দেখে মেঘলা কে ধাক্কা দিয়েই একেক জন একেক ভাবে পালালো৷ শোভন ও পেছনে ছুটলো৷ তবে নাগাল পেলো না৷

শোভন কে দেখে প্রাণ ফিরে পেলো যেন মেঘলা৷ অন্ধকারেও আলো দেখতে পেলো নয়তো আজ তো রক্ষে ছিলো না৷ মেয়েদের সব থেকে দামি নিজের সম্মান সে সম্মানে আ’ঘাত লাগলে সে যে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতো৷ তার জীবনটা যে এমনি ছন্ন ছাড়া৷ ক্লেশ তার পিছু ছাড়ে না তার উপর খারাপ কিছু হলে তার যে বাঁচার পথই ছিলো না৷ আর যাই হোক কলঙ্ক নিয়ে বাঁচা যায় না৷
মেঘলা আকস্মিক এক কান্ড করলো দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো শোভন কে৷ ঢুকরে কেঁদে উঠলো৷ সে যেন দুঃখে কষ্টে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য প্রায় তাই কি করছে কিছুই বুঝতে পারছে না৷
কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“আপনি না আসলে ও ওরা আমায়…!!”
বলে ফের ঢুকরে উঠলো৷ শোভন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ অদ্ভুত লাগছে কেমন যেন৷ মেয়েটা কি করলো সে ধ্যান কি আছে৷ হুস ফিরলো শোভনের বুঝলো মেয়েটা বুঝে করেনি৷ তবুওতো এটা করা উচিত ছিলো৷ শোভন বাহু চেপে খানিকটা দূরে সরালো মেঘলা কে৷ মেঘলার পিলে চমকে উঠলো কি করছিলো এটা? থমকালো খানেক৷ লোকটা নিশ্চয়ই খারাপ ভাবছে ওকে?

মেঘলা চোখ মুখ মুছে কাঁপা কন্ঠে বললো,
“স্য স্যরি আ আমি…!”
অর্ধ কথা হতেই থামিয়ে দিলো শোভন অদ্ভুত জড়তায় আষ্টেপৃষ্টে ধরলো৷ লক্ষ করলো রাগ টা নেই৷ অথচ অন্য সময় হলে ধমকে উঠতো৷ শোভন গম্ভীর স্বরে বললো,
“শান্ত হন৷ এ জন্যই মেয়েদের একা এত রাতে বের হতে হয় না৷ আপনারা মেয়েদের আত্মরক্ষার সাহস না থাকলেও রাতবিরেতে একা বের হওয়ার সাহস ঠিকি আছে৷ আপনার বাবা মায়ের নাম্বার দিন আমি তাদের কল করছি৷ ”

মন খারাপ হলো মেঘলার৷ কান্না যেন আরো ভেঙে আসছে৷ “মা?” মা শব্দটার প্রতিযে তার বেশ অভিমান৷ কেন তার মা তাকে রেখে না ফেরার দেশে গেলো? তাহলেতো তার পৃথিবী টা এমন হতো না৷ তার যে মায়ই নেই৷ আর বাবা? তাচ্ছিল্য হাসলো মেঘলা মিনমিনিয়ে বললো,
“আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি কল করলে কেলেংকারী হবে এখন৷ ”
তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো শোভন৷ মেয়েটা পালিয়ে এসেছে? আশ্চর্য৷ শোভন তাচ্ছিল্য ভঙ্গিতে বললো,
“আজকাল ছেলে মেয়েদের ম্যানার্স নেই কোনো বাবা মা কে মূল্য দিতে জানে না৷ আর ওদের জন্য অন্য একটা ছেলের ও ক্ষতি৷”
শোভন দাতে দাত চেপে বললো৷ মেঘলা নিভু নিভু চোখে তাকালো৷ লোকটা বড় বড় পায়ে বসার জায়গার দিকে চলে গেলো বলেই৷ বুঝলো লোকটা ওকে ভুল বুঝছে৷ মেঘলা এবার দৌড়ে ছুটতে ছুটতে শোভনের পিছু পিছু গেলো৷ বললো,
“আপনি যেমন ভাবছেন ব্যাপারটা তেমন না৷ আমার মা নেই৷ বাবা আর সৎ মা৷ বাবাও আমায় পছন্দ করে না তেমন জোর করে একজন বৃদ্ধ লোকের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো তাইতো পালালাম৷
শোভন শুনলো খানিকটা ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো৷ মেয়েটা মলিন মুখে তাকিয়ে আছে কান্নার ফলে লাল হয়ে গেছে মুখটা৷

মা নেই কথাটাই যেন কানে বাজছে৷শোভন পৃপৃথিবীতে যদি কিছুর প্রতি দূর্বল হয় তবে তা হলো ” মা” তার মা যে তার কত্ত প্রিয়৷ শোভন এবার গিয়ে বেঞ্চিটায় বসলো কাউকে ফোন করলো৷ মেঘলা ভাব ভঙ্গি বুঝলো না৷
লোকটা কেমন অদ্ভুত ধাঁচের৷ দেখেই বোঝা যায় স্বল্প ভাষী এবং বেশ রাগী৷ রাগী মানুষ বড়ই ভয় পায় মেঘলা৷

ছোটো বেলা থেকে সৎমায়ের সাথে কাটালেও তাকে প্রতিবার মা’র থেকে বাঁচিয়েছে তার ছোটো চাচ্চু বয়সের পার্থক্য খুব বেশি না হলেও তাকে মেয়ের মতই আগলে রেখেছে৷ তার ছোটো চাচা তার মাত্র বারো বছরের বড়৷ ছোটো থেকেই ঢাল হয়ে ছিলো মেঘলার পাশে৷ কিন্তু সেই মানুষটাই যে রমন পালটে যাবে ভাবতে পারেনি৷ সে আর ওর বাবা মিলেই বিয়ে টা ঠিক করেছে৷ ভাগ্যিস ওর বড় চাচার মেয়ে ওকে পালাতে সাহায্য করলো৷
ওর জীবনে সব মানুষ গুলো এমন পালটে যায় কেন সে নিজেও বোঝে না৷ ভাগ্যেরুপর তার বেশ রাগ৷

বেঞ্চিতে বসলো৷ চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পরছে একটু আগের কথা মনে পরতেই৷ লোকটা না থাকলে কি হতো? দীর্ঘদিন ছাড়লো৷ খানিকক্ষণ বাদই জানতে পারলো তুফানের কারণে ট্রেণ আসবে না৷ শোভণকারো সাথে কথা বলছে ফোনে৷
ফোন টা রেখেই খানিকটা এগিয়ে এলো শেরওয়ানির উপরের কূটির মত কোট খুলে রেখেছিলো বেঞ্চিতে ওটা নিতে নিতে ওপাশের মানুষ টি কে বলো,
“ম্যানেজ হয়েছে গাড়ি? গ্রেট! গাড়ির ড্রাইভার কে কিছু দিয়ে বলে দাও কাল আবার তার গাড়ি তার কাছে পৌঁছে যাবে চিন্তার কারণ নেই৷ আমার সাথে তোমার যাওয়ার দরকার নেই৷ তুমি গাড়িটা স্টেশন এর বাইরে পার্ক করো আমি আসছি৷ তুমি ম্যানেজ করে গাড়িটা নিয়ে এসো আমার গাড়ি ঠিক হলে সকালে ওটা নিয়ে তুমি এসো৷

মেঘলা চমকালো৷ লোকটা চলে যাবে? এটা তো হওয়ারি ছিলো৷ মেঘলা এই প্রথম ঢাকা যাবে ব্যাগে হাজার পাঁচেক জমানো টাকা আছে আর আজকে দেওয়া বিয়ের একটা দুল আর চিকন ফিনফিনে চেইন আর চুরি আছে৷ এগুলো ওর মায়ের৷ বিয়েতেতো গা ভর্তি গয়নাই দিয়েছিলো সেই লোক তবে তা খুলে বিছানার উপরই রেখে এসেছে৷ সে চেনেও না ভালো করে কি করবে বুঝতে পারপছে না৷

শোভন হাটা ধরলো৷ শোভন কে যেতে দেখে মেঘলা খানিকটা সাহস নিয়ে জিগ্যেস করে বসলো,
“আপনি কি চলে যাচ্ছেন?”
শোভন থামলো কি যেন ভেবে বাকা হাসলো৷ মাথা ঝুলিয়ে গম্ভীর মুখে বললো,
“হ্যাঁ৷”
কি যেন কি হলো আকস্মিক মেঘলা বলে বসলো,
“আমায় নিয়ে যাবেন? ঢাকায় গিয়ে গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে দিবো আমি৷ ”

চলবে,

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা


শোভন হাটা ধরলো৷ শোভন কে যেতে দেখে মেঘলা খানিকটা সাহস নিয়ে জিগ্যেস করে বসলো,
“আপনি কি চলে যাচ্ছেন?”
শোভন থামলো কি যেন ভেবে বাঁকা হাসলো৷ মাথা ঝুলিয়ে গম্ভীর মুখে বললো,
“হ্যাঁ৷”
কি যেন কি হলো আকস্মিক মেঘলা বলে বসলো,
“আমায় নিয়ে যাবেন? ঢাকায় গিয়ে গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে দিবো আমি৷ ”

শোভন নির্নিমেষে তাকিয়ে রইলো৷একটুও চমকালো না অবাক হলো না৷ সে যেন এ কথারি অপেক্ষায় ছিলো৷ শোভন যেন জানতো মেয়েটা এটাই বলবে৷
তবে ভাড়ার কথা শুনে কঠিন হলো মুখ খানা মেয়েটা বেজায় অসভ্য৷ শোভন কে নির্লিপ্ত দেখে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে মেঘলা উত্তরের আশায়৷ আশ্চর্য লোক টা উত্তর দিচ্ছে না কেন? কিছু না বলেই শোভন হাটা ধরলো৷ নিরাশ হলো আশাহত হলো মেঘলা৷ লোকটা নিয়ে যাবে না তাকে?

চোখ খানা ফের ভরে উঠলো৷ এখন করবে কি সে? একটু আগে তো লোকটা বাঁচিয়েছে৷ সকাল হওয়ার অনেক দেরি আবার যদি কিছু হয় বাঁচাবে কে? অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো মেঘলার৷
সে যখন বিয়েতে রাজি হচ্ছিলো না৷ তাদের মুখের উপর বলেছিলো “ও একা গিয়ে ঢাকা থাকবে কাজ করে পড়াশোনা করবে তাও বিয়ে করবে না৷ ” তখন এ কথা শুনে ওর বাবা ঠিকই বলেছিলো৷
বাড়িতে বসে বসে বড় কথা অনেক বলা যায় বাড়িতে চার দেওয়ালের ভেতর থেকে বলাই সহজ যে বাইরে গিয়ে কাজ করে একা থাকবে৷ কিন্তু যখন আসে বাস্তবতার বাড়ি থেকে এক কদম পা বাইরে ফেললেই বোঝা যায় আসল বাস্তবতা টা৷ জীবন এত সহজ না৷ র’ক্ত মাং সে গড়া মুখে সব বলা সহজ বাইরে বের হলে বাস্তবতাটা টের পাওয়া যায় টের পাওয়া যায় জীবনের সবচেয়ে কঠিন তম মুহুর্ত কি হতে পারে৷ বোঝা যায় আসলেই সব সহজ না৷ পদে পদে বিপদ এর জ্বাল বিছানো এখানে মানুষ নামক হায়নারা ওত পেতেই থাকে কখন খুবলে খাবে মানুষ হয়ে আরেকটা মানুষ কে৷

“সং সেজে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আমার সাথে যেতে হলে তাড়াতাড়ি ব্যাগ পত্র নিয়ে পা চালান৷ ”
শোভনের কথায় ভাবনাচ্যূত হলো মেঘলার৷ চমকালো৷ তাকিয়ে দেখলো লোকটা অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে৷
লোকটা তাকে নিয়ে যাবে বলছে৷ মূহুর্তেই যেন আঁধারে আশার আলো পেলো মেঘলা৷ তাড়াহুড়ো করে বেঞ্চির কাছে গিয়ে নিজের লাগেজ আর গিটার খানা নিলো দৌড়ে শোভনের পিছু পিছু যাওয়ার চেষ্টা করলো৷ ততক্ষণে শোভন স্টেশনের ভেতর থেকে বেরিয়েছে৷ লম্বা মানুষ বড় বড় পা ফেলে যাওয়ায় পাঁচ ফুটের মেঘলা আর তার সাথে বের হতে পারলো না৷ সে বের হতেই দেখলো স্টেশন থেকে কিছুটা দূর জীপের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শোভন৷ একটা লোকের সাথে কথা বলছে৷

মেঘলা এগিয়ে যেতেই শোভনের ড্রাইভার শোভনের হাতে চাবিটা ধরিয়ে বললো,
“স্যার খুব কষ্টে এ ঝড়বৃষ্টিতে এ গাড়িটাই ম্যানেজ করেছি৷ চেনাজানা হওয়ায় আপনার বাবার নাম শুনেই চাবিটা দিয়ে দিলো৷ এখন তো বৃষ্টি নেই খুব একটা সমস্যা হবে না তবুও আপনার কষ্ট করে যেতে হবে৷সকালে আমাদের গাড়িটা ঠিক হলে গাড়ির মালিক সহ আমি চলে যাবো আপনি এখনি বেরিয়ে পরুন৷ ”

মেঘলা কথা বার্তা শুনে বুঝলো বেশ ভালো ঘরেরই লোকটা৷ অন্য সমিয় হলে ভয় পেতো৷ কিন্তু লোকটাকে যেন ভয় করছে না তার৷ লোকটা তাকে বাঁচালো৷ সৃষ্টি কর্তা তাকে পাঠিয়েছে তাকে বাঁচানোর জন্য৷ লোকটা খারাপ হলে নিশ্চয়ই তখন বাঁচাতো না?
ভরসা করাই যায়৷ সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই এগোলো৷ শোভন তার ড্রাইভার কে বিদায় দিয়ে উঠলো জীপে মেঘলার পানে তাকালো বললো,
“যাওয়ার হলে তাড়াতাড়ি উঠুন আপনার জন্য দেরি হচ্ছে আমার৷ ”
ভ্যাবাচেকা খেলো মেঘলা যাক বাবা ওর জন্য দেরি হলো কই? লোকটা এতক্ষণ কথাই বলছিলো৷ মেঘলা পেছনের দিকে এলো নিজের লাগেজটা ওঠালো৷ সে পেছনের সিটে ওঠার জন্য পা ওঠাবে তা দেখে শোভনের রাগ হলো৷ শোভন দাতেদাত চেঁপে বললো,
“আপনি কি কোনো ভাবে আমায় ড্রাইভার ভাবছেন আমায়? আবরার শোভন আমি আপনার ড্রাইভার নই৷ ”
মেঘলা ভীত হলো৷ যাক বাবা সে তো ইচ্ছে করেই ভয়্র বসলো না সামনে৷ ফস করে নিশ্বাস নিয়ে সামনে বসলো ফ্রন্ট সীটে নিজের গিটার নিয়ে৷
মেঘলা উঠতেই আড়ালে হাসলো কিঞ্চিৎ শোভন মেয়েটা বড্ড বোকা৷ সব কিছুতেই যেন ভয় পায় আবার এত রাতে সাহস করে পালিয়েছে৷

গাড়ি স্টার্ট দিলো শোভন মৃদুমন্দ বাতাস বইছে৷ খানিকটা যেন হালকা লাগছে৷ নিরবতা প্রবহমান আসেপাশে মানুষ এর চিহ্নটুকু নেই৷ এবার গ্রামের ভেতরের পথ দিয়ে এগোচ্ছে গাড়ি৷ দুই পাশে গাছ মাঝে রাস্তা৷ গাড়ির উপরে ছাদ না থাকায় বেশ শীত শীত করছে৷ নিজের শাড়ি খানা প্যাচিয়ে বসলো মেঘলা আশেপাশে অন্ধকার কেমন শুধু গাড়ির লাইটের কারণে খানিকটা আলো আছে৷ শুকনো ঢোক গিললো মেঘলা৷ আকস্মিক ভয় ভয় করছে৷ অথচ সে মোটেও ভীতু ধাঁচের মেয়ে না৷ আজকের ঘটনায় খানিকটা দূর্বল চিত্তের হয়ে পরেছে৷
আড়ষ্ট হয়ে মেঘলার পানে তাকালো শোভন মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে৷ কিন্তু কি যেন বিরবির করছে৷ দোয়াদরুদ পরছে নিশ্চয়ই৷

মেয়ে মানুষ বড়ই বিচিত্র একটা পুরুষের ভয়ে আরেকটা পুরুষকে ভরসা করে অচেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলো কিন্তু ভুতের ভয়ে দোয়াদরুদ পরছে৷ ঠোঁট এলিয়ে হাসলো৷ এর মাঝেই বিদ্যুৎ চমকালো খানেক সেই আলোয় মেয়েটার মুখে পরতেই যেন বক্ষ খাঁনায় অদ্ভুত কাঁপন ধরলো শোভনের৷ এ আলোয় যেন মারাত্মক মায়াবিনী লাগলো মেয়েটাকে৷ নিখুঁত সেই মুখ অভয়ব যেন হৃদপিণ্ডটা হরণ করলো৷ চোখের আকাঙ্খা বাড়লো এবার যেন তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে হলো৷ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো শোভন সামনের দিকে তাকালো৷ তার মা বাদে সব নারীই ছলনাময়ী৷ সে আর ফাসতে চায় না এ নারীদের মায়ায়৷

মেঘলার ভীত চেহারা বেশ মজা পাচ্ছে শোভন৷ মেয়েটার ভয় বাড়িয়ে দিতে শোভন ফিসফিসিয়ে মেঘলার দিকে মুখ করে বললো,
“পুরুষদের থেকে বাঁচতে আরেক পুরুষ এর সাথে বেরিয়ে পরলেন৷ যাকে চেনেন ও এখন যদি আমি তেমন কাজ করি? চারোদিকে কাকপক্ষী ও নেই এখানে আপনাকে কিন্তু ভুলেও কেউ বাঁচাতে পারবে না৷ ”
বলেই হাসলো অদ্ভুত ভাবে৷ মেঘলা দেখলো তা তবে আশ্চর্যের বিষয় একটুও ভয় পেলো না৷ হাসলো যে ও যেন উড়িয়ে দিলো কথাটা৷ শোভন অবাক হলো বেশ৷ মেয়েটা বেশ কিছুক্ষণ পর মিনমিনিয়ে ঘুম কাতর কন্ঠে বললো,
“আপনি শুধু হম্ভিতম্ভিই দেখাতে পারেন৷ কিছু করার হলে তখন আমায় বাঁচাতে ছুটতেন না৷ অদেখা ভাব নিয়ে সেখানেই বসে থাকতেন৷ ”

আরেক ধাপ অবাক হলো শোভন৷ মেয়েটা জানে মেয়েটা কি বলছে? কত বড় মাপের একটা কথা বললো বুঝতে পারছে মেয়েটা? অস্পষ্ট ভাবে তাকে কত বড় করলো বুঝতে পারছে মেয়েটা? মানুষ আজকাল মানুষ কে বিশ্বাসই করতে পারে না৷ এক সাথে থেকে চলাফেরা করেও মানুষ মানুষের আসল রুপ চিনতে পারেনা৷ কিন্তু মেয়েটা ওইটুকু সময়ে তাকে কত বড় ভরসার জায়গাটা দিয়ে দিয়েছে৷ এবার আর কথা বাড়ালো না শোভন৷

গাড়ি আপন গতীতে চলছে৷ এখনো ঢাকা পৌঁছাতে ঘন্টা তিন-এক লাগবে৷ তবে এক কান্ড ঘটলো তীব্র বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো৷ আকাশ গর্জন শুরু করেছে৷ যে কোনো সময় আবার বৃবৃষ্টি শুরু হবে দুজনেই পরলো বিপাকে৷ সামনেই একটা বন্ধ টং দেখা যাচ্ছে দোকানের ছাওনিটায় থামবে ঠিক করলো৷ তবে গাড়ি সে দিকে যাওয়ার আগেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু গলো তার সাথে বাতাসের তীব্র বেগ৷ মেঘলা তাড়াহুড়ো করে নিজের গিটারটা শাড়ির নিচে আনলো৷ যদিও গিটারের ব্যাগটা ওয়াটার প্রুফ কিছুই হবে না৷ তবুও শখের জিনিস তো ভয় করে৷

গাড়ি সে দোকানটির সামনে থামলো শোভন তাড়াতাড়ি নামতে নামতে বললো,
“তাড়াতাড়ি নামুন মেয়ে ভিজে যাচ্ছেন৷ ”
বৃষ্টি দেখে মন ছলাৎ ছলাৎ করে উঠলো৷ মধ্য রাতে বৃষ্টিতে ভেজার তীব্র বাসনা তার৷ তবুও তাড়াতাড়ি নেমে সে ছাওনিতে গেলো তবে দুজনেই ভিজে চুপচুপে অবস্থা৷সেখানে কাঠের বেঞ্চির উপর গিটার টা রাখলো৷ খোপাটা আলগা হলো খোপার চোখের পলকেই খোপাটা খুলে কোমর ছাড়ানো চুল বাতাসের সাথে ধুলতে শুরু করলো৷

নিমেষে মন ভালো হয়ে গেলো ভেতরে থেকেই বৃষ্টি ছুঁয়ে দিলো হাত বাড়িয়ে৷ না আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা৷ জনশূন্য মাঝ রাস্তায় বৃষ্টিতে বেরিয়ে পরলো৷ মেয়েটা যেন নিমেষে বাচ্চা হয়ে গেলো দেখে মনে হচ্ছে তবুও শোভন বললো কেন যেন,
“আরে মেয়ে কি করছেন কি?”
মেঘলা মিষ্টি করে খিলখিলিয়ে হেসে ঘুরতে ঘুরতে বললো,
“আমার নাম মেয়ে না৷ মেঘলা৷ আর কি করছি দেখছেন না?আপনিও আসুন৷ ”
চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো শোভন৷ এক ধ্যানে তাকিয়ে মেয়েটার দৌড় ঝাপ দেখলো৷ মেয়েটা কি জানে কি করছে মেয়েটা?
চোখ সরালো শোভন চুল এলোমেলো করলো নিজের মাথা চেঁপে ধরলো মিনমিনিয়ে বললো,
“মেঘলা না ভয়ংকরী৷ ওদিকে তাকালেই মরণ নিশ্চিত৷ ”

চলবে,