অতঃপর প্রণয় পর্ব-৮+৯

0
344

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা

আকাশ আজ ও বিষন্ন ভিষণ৷ বিষন্নতা ছেয়ে আছে মেঘলার মনেও৷ জানালার কাছে মুখ ভাড় করে বসে আছে৷ আকাশ এর ও বোধহয় তারই মত মন ক্ষুন্ন৷ তার ও কষ্ট ভিষণ?
অহনা ওকে একটা ফোন দিয়েছিলো৷ কিন্তু ফোন দিয়ে করবে কি সে? তার তো আর মা নেই যে মা কে ফোন করবে৷ তার তো কেউ নেই৷ বেশ ইচ্ছে করলো ছোটো চাচ্চুকে একবার ফোন করার৷
লোকটা নিশ্চয়ই ভিষণ রেগে আছে? আর রাজ? সে কি বাড়ি ফিরেনি? এতদিনে হয়তো তোলপাড় করে দিচ্ছে সব?কিন্তু সে নিরুপায়৷
মেঘলা রাজের জীবনে ফিরতে চায় না৷ লোকটার ভালো থাকা দরকার৷ ওর সাথে সুখ নেই৷

বেশ ভাবলো৷ বাবার কথা মনে পরলো না আজ আর৷ পরবেই বা কে? লোকটা কি করেছে তার জন্য? কিছু করেনি৷ কিছু না৷ আকস্মিক ওই শোভন নামক লোকটির কথা মাথায় আসলো৷ আচ্ছা লোকটা কোথায় থাকে? পরক্ষণেই অবাক হলো৷ সংযত করলো নিজেকে৷ আর বিরম্বনা না করে ফোন বসালো চেনা এক নাম্বারে৷ যে তাকে বুকে আগলে বড় করেছে সব কিছু থেকে বাঁচিয়েছে৷
দু-বার রিং হতেই ওপাশ থেকে ফোন ধরলো কেউ মেঘলা কিছু বলার আগেই গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো,
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম কে?”
ওমনি মেঘলার অপরাধবোধ ঝেকে ধরলো৷ সব ভেঙে ভুঙে যেন কান্নারা ভীর করলো৷ অপরাধী কন্ঠে বললো মিনমিনিয়ে,
“ছোটো চাচ্চু আ আমি মেঘলা৷ ”
তারপর ওপাশে যেন সবটা নিরব শোনা গেলো৷ কোনো টু শব্দ টুকু নেই৷ বেশ কিছুক্ষণ পার হতেই মেঘলা ফের বললো,
“ছোটো চাচ্চু আমি….!!”
“আমি কোনো মেঘলা কে চিনিনা৷ আমায় যে ভরসা করতে পারেনি বিশ্বাস করতে পারেনি তাকে আমি চিনি না৷”
মেঘলা কে মাঝপথে থামিয়েই বললো তার ছোটো চাচ্চু৷ মেঘলা ক্ষীণ ও অবাক হলো না৷ ও জানতো এমনটাই হবে৷ মেঘলা বললো,
“আমার কথা তো শোন? এমন করছিস কেন?”
মেঘলার কথা শেষ হতেই ওপাশ থেকে রাগী স্বরে বললো,
“রাখছি আমি অচেনা মানুষ দের সাথে কথা বলতে পছন্দ করি না৷ ”
এইটুকু বলতেই ফোন কাটতে যাবে ঠিক তখনি ফোন কেড়ে নিলো কেউ৷ উত্তেজিত কন্ঠ ভেসে এলো ওপাশ থেকে,
“মেঘলা? জান তুই কোথায়? কোথায় গিয়েছিস জান? আমায় বল? তোর চিন্তা নেই আমি তোর সাথে থাকব৷ তোকে আমার কাছে রাখবো৷ ”
মেঘলা পরিচিত কন্ঠ পেতেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো৷ ফট করে ফোন টা কেটে দিলো৷ হাটুতে মুখ গুজে রইলো৷

আকস্মিক মেঘ গুলো যেন নিমেষে কেটে যেতে লাগলো৷ এ দৃ?যেন অপরুপ সুন্দর৷ বেশ সময় পার হলো৷ ফের ফোনের কর্কশ শব্দে হুস ফিরলো৷ চেনা নাম্বার৷ রাজ ফোন করছে নিশ্চয়ই নাম্বার নিয়েছে ছোটো চাচ্চুর কাছ থেকে৷ লোকটা কখনো বুঝবে না? সে ওকে যতই চাক এটা কখনো সম্ভব না৷ ফোনটা কয়েকবার বাজতেই ফোন অফ করে রাখলো মেঘলা৷ এ ফোন আর খুলবে না৷ অহনা কে বলে দিবে তার চাই না ফোন৷
আড়মোড়া ভেঙে উঠলো মেঘলা আজ ঘুমিয়েছে খুব৷ সকালে খেয়ে ঘুমিয়েছে একটু আগেই উঠলো৷ এখন একটু ফুরফুরে লাগছে৷ এর মাঝেই আকাশ যেন পরিষ্কার হলো৷
অহনা প্রবেশ করলো৷ বললো,
“তাড়াতাড়ি উঠে পর আমরা বের হবো৷ ”

মেঘলা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বললো,
“কোথায় যাবে আপু?”
অহনা চোখ পিটপিট করে তাকালো৷ মেয়েটা বড্ড প্রশ্ন করে৷ মেঘলার সাথে তেমন মেশা না হলেও ফোনে কথা হয়েছে৷ এ নিয়ে তাদের তৃতীয়বার সাক্ষাৎ কিন্তু কথা হয়েছে অসংখ্যবার৷ মেয়েটা সব সময় বেশি প্রশ্ন করে৷ এই মেয়ের উপর যেন রেগে থাকাও দায়৷ অহনা বললো,
“আশ্চর্য! জানিস না কেউ রেগে থাকলে বেশি প্রশ্ন করতে নেই? আমি তোর উপর রেগে আছি৷ কিন্তু তোর মামা বলেছে তোকে নিয়ে বের হতে৷ তোকে কিছু কেনাকাটা করে দিতে৷ তোর সাথে বের হচ্ছি বলে ভাবিস না আমার রাগ ভেঙে গেছে৷ আমার রাগ কমেনি৷ ”
অহনার কথা শেষ হতেই ফিক করে হেসে উঠলো৷ মেঘলার এমন হাসি দেখে ভরকালো অহনা৷ বেজায় রাগ বাড়লো৷ মেয়েটা আচ্ছা দুষ্টু তো৷ কি সাংঘাতিক কারো সিরিয়াস কথার মাঝে হাসে কে? রাগী দৃষ্টিতে তাকালো অহনা মেঘলার পানে৷ মেয়েটা এখনো হাসছে৷ অহনা আরো ফুসে উঠলো বললো,
“কত বড় সাহস৷ আমার কথা শুনে হাসছিস তুই? দাড়া আজ তোর একদিন কি আমার একদিন৷ ”
বলে মেঘলার দিকে তেড়ে গেলো৷ মেঘলা হাসতে হাসতে বিছানা থেকে সরে অন্য দিকে চলে গেলো৷ অহনা এবার বালিশ নিয়ে ছুড়ে মারলো মেঘলার দিকে মেঘলা তা ক্যাচ নিলো৷
অহনা রাগে ফস ফস নিশ্বাস নিচ্ছে মেঘলা বালিশ খানা বিছানায় রেখে এগিয়ে এলো৷ ঝাপটে ধরলো অহনাকে বললো,
“আপু তোমরা কেন অভিমান করে আছো আমার উপর? তোমাদের ছাড়া কে আছে আমার?”
অহনা শুনলো৷ শান্ত স্বরে বললো,
“আমাদের ছাড়া কেউ নেই বলে আমাদের ভরসা করতি না৷ আমার ফুপিমা নেই তো কি হয়েছে? তোরা তো জানতি বাবার কত আদরের ছিলো সে৷ তোকেও তো বাবা কত ভালোবাসে৷ কিন্তু তুই বাবার কথা শুনিসনি৷ তখন আসলে কি আর এত ঝামেলা পোহাতে হত?”
মেঘলা বললো,
“ভুল হয়েছে আপু৷ ক্ষমা করে দাও৷ ”
অহনা হাসলো ক্ষীণ বললো,
“হয়েছে হয়েছে যা এবার তৈরি হয়ে নে৷ ”
মেঘলা ফের হাসলে৷ এ মানুষ গুলো না থাকলে যে তার কি যে হতো৷ ইশ৷ আজ তাহলে হয়তো ঢাকা শহরে রাত কাটাতে হতো? দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেঘলা তৈরি হওয়ার জন্য এগিয়ে গেলো৷

।।

গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শোভন এক হাতে জলন্ত সিগারেট এর শেষ অংশ আরেক হাতে চা৷ পাশেই চায়ের টং একটা মলের সামনেই গাড়ি পার্ক করা৷ মা আর বোনের জোড়াজুড়িতে আসতে হলো এখানে৷ তবে সে শপিং মলে ঢুকেনি৷ মেয়েদের এই শপিং টপিং করা তার খুব একটা পছন্দ না৷
তার সামনে দিয়ে যেই যাচ্ছে চেনা হলে তাকে সালাম দিয়ে যাচ্ছে৷ রাজনীতিতে এবং ব্যাবসায় তার বাবা, ভাই এবং তার বেশ দাপট৷
“আরে আপনি এখানে?”
আকস্মিক মেয়েলি কন্ঠে সামনে তাকায় শোভন৷ তাকিয়েই দেখে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷

সামনে থাকা মেঘলার চোখমুখে কৌতুহলতা ভরপুর৷ চোখ গুলো চিকচিক করছে৷ সে দিন লোকটা যাওয়ার পর আফসোস হচ্ছিলো৷ একটা ধন্যবাদ অন্তত প্রাপ্য ছিলো কিন্তু সে দেয়নি৷ লোকটা ও তো বেপরোয়া ছিলো৷ লোকটা তার প্রাণ ও বাঁচিয়েছে৷ শোভন কে এখানে দেখে অবাক হলো বেশ৷ এ লোক এখানে কি করছে?
এর মাঝেই পাশ থেকে অহনা বললো,
“আরে তুই শোভন ভাই কে চিনিস কি করে?”
মেঘলা উত্তর না দিয়ে ফের শুধালো,
“আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সে দিন আমায় সাহায্য করার জন্য৷ কিন্তু আপনাকে সে দিন ধন্যবাদ দেওয়াই হয়নি৷ ”
মেঘলার কথায় ভাবান্তর হলো না শোভনের৷ শোভন অহনার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ইনি কে অহনা? ও কি আমায় চেনে?”
শোভনের কথায় অবাক হয় মেঘলা বলে,
“আপনি আমায় চিনতে পাচ্ছেন না? সে দিন রাতে…!!”
মেঘলাকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে শোভন গম্ভীর স্বরে বললো,
“কি বলছেন কি মেয়ে? ছেলে দেখলে গায়ে পরতে ইচ্ছে করে? কথা বলতে ইচ্ছে করে? আমি আপনাকে চিনবো কি করে?”
বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো মেঘলার সামনে থেকে মেঘলা থমকালো অবাক হলো৷ কি বলছে কি লোকটা? ওকে চিনতে পাচ্ছে না? ও তো ভুল হতে পারে না৷ শোভন কে কি করে ভুলতে পারে?

চলবে,

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা

“এই মেয়ে এই, এখানে কি করছো আমার গাড়ির সামনে?”

আকস্মিক গম্ভীর কন্ঠে পিলে চমকালো মেঘলার৷ চেনা কন্ঠ অচেনা জায়গায়৷ ভ্রম নাকি সত্যি বুঝলো না৷ তবে তাড়াতাড়ি উঠলো৷ সামনে তাকাতেই থতমত খেল্য৷ অবাক হলো চমকালো৷
এ কি করে হতে পারে? লোকটা এখানেও? কি ঘটছে তার সাথে? যেখানে সেখানে এ লোকের সাথে দেখা হয়ে যাচ্ছে৷
এ কেমন অদ্ভুত ঘটনা?
মেঘলা অবাক চোখে তাকালো৷ নেত্রপল্লব দৃঢ় ভাবে ফেললো৷ গোল চোখে তাকিয়ে অবাক স্বরে বললো,
“আপনি এখানে?”

মেয়েটির প্রশ্ন পছন্দ হলো না শোভনের৷ মেয়েটা বোকা নাকি বোকা সাজার চেষ্টা করে কে জানে? তার বাড়িতে দাঁড়িয়ে তাকে বলে সে কে? বড়ই অদ্ভুত৷ মেয়েটা গোল চোখে তাকিয়ে আছে কৌতুহল নিয়ে৷

শোভন কপাল কুঁচকালো৷ আপাদমস্তক চোখ বুলালো মেঘলার৷ গম্ভীর তার দৃষ্টি অতঃপর বললো,
“আপনি এখানেও? বাই এনি চান্স আমায় ফলো করছেন না তো? আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমায় বলছেন আপনি এখানে? সাহস দেখে অবাক হচ্ছি৷ আপনাকে এখানে ঢুকতে দিলো কে? পার্মিশন ছাড়া তো এ বাড়িতে ঢুকতে পারেনা কেউ৷ ”

মেঘলার আঁখিতে আঁধার নামলো৷ ঘণ অমাবস্যার ছায়া দেখা গেলো৷ এমন করে বলে কেউ? আশ্চর্য লোক৷ সে দিন ও লোকটা তাকে অপমান করেছে আজ ও এমন কিরছে৷ সে জানতো নাকি ঢাকা এলে নিত্য দিন এ লোকের সাথে কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে যাবে?
সৃষ্টি কর্তার পরিকল্পনা বোঝা বড় দায়৷ আর ও যদি জানতো এটা এই লোকের বাড়ি তাহলে ভুলেও সে আসতো না৷
এর মাঝেই মিয়াও করে উঠলো “পিকাচু” গাড়ির নিচ থেকে বেরিয়ে এলো৷ মেঘলা তাড়াতাড়ি গিয়ে কোলে তুলে নিলো মেঘলা৷ পিকাচু হচ্ছে অহনার বিড়ালের বাচ্চা৷ যা ও পালে৷ পার্শিয়ান এ বিড়াল ছানাটি যা আরে আর অত্যন্ত চঞ্চল৷ সে জানতো পার্শিয়ান বিড়াল শান্ত হয়৷ ছোটাছুটি কম করে কিন্তু এ বেশ ধুরন্ধর৷ নিচে বেরিয়েছিলো একটু হাত থেকে ছুটে এখানে চলে এলো এর জন্যই অপমানিত হতে হলো৷

পিকাচু কে তুলে নিয়ে মেঘলা মুখ ফুলিয়ে বললো,
“ও চলে এসেছিলো এখানে তাই ওকে নিতে এসেছি৷ আর আমি আপনাকে ফলো করছিনা পাশেই আমার মামার বাড়ি৷ যদি জানতাম এটা আপনার বাড়ি ভুলেও পা রাখতাম না৷ ”
বলে আর দাঁড়ালো না মেঘলা দৌড়ে বেরিয়ে গেলো৷ শোভন তাকিয়ে রইলো সেই দিকে চুপটি করে৷

“মেয়েটি কে ভাইয়া? ইশ কি তেজ তোমার মুখের উপর কথা বলে গেলো৷ নট ব্যাড আই লাইক ইট৷ ”
রিশাদের কথায় ধ্যান ভাঙলো শোভনের৷ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“তোর তো সব মেয়েই ভালো লাগে৷ এ আর নতুন কি?”
রিশাদ মুচকি হাসলো৷ মাথা চুলকালো বুকে হাত দিয়ে বললো,
“কিন্তু এ মেয়েটি একদম ভিন্ন দেখলেই যেন বুকে জ্বলন ধরে৷ কাল অহনাদের বাড়ির ছাদে দেখেছিলাম৷ ”
শোভন থমথমে হয়ে তাকালো অতঃপর কঠিন মুখে গাড়িতে উঠে গেলো৷ শো করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো এখান থেকে৷
।।

সময় অদ্ভুত এক জিনিস৷ সে কারো পরোয়া করে না৷ কারো ধারধারে না৷ আপন গতিতে বেপরোয়া হয়ে চলে সে৷ তার এত ভাবনা কই?
সময় পেরিয়েছে প্রায় দু-সপ্তাহ৷ এ দু-সপ্তাহ কেটেছে মামা মামির রাগ ভাঙতে ভাঙতেই৷
ফোনটা বন্ধ করেই রাখা৷ সে পুরোনো দিন গুলোতে আর ফিরতে চায় না৷ এর মাঝেই এডমিশন এর জন্য মামা জোর করছে৷ ভেবেছিলো ভর্তি হবে না কিন্তু মামার জোরাজুরিতে রাজি হতে হলো৷
আজ রেডি হচ্ছে ভার্সিটিতে ভর্তি হতে যাওয়ার জন্যই৷ অহনার ভার্সিটিতেই ভর্তি করা হবে তাকে৷

প্রাইভেটে পড়ার বিশাল খরচ৷ তার উপর ভালো ভার্সিটি সে চায়নি এত খরচ করুক তার পেছনে তখনি তার মামি বললো,
“তোর মায়ের ভাগের জমিতে তোর মামা কারখানা ভাড়া দিয়েছে৷ সেই টাকাতো তুইই পাবি, ওটা দিয়েই পড় আমাদের টা দিয়ে যখন পড়তে পারবি না৷ আমরাতো তোর আর রক্ত না৷ তাই তোর প্রতি আমাদের অধিকার নেই৷ ”

মামির এরুপ কথায় রাজি হয়ে যায় মেঘলা৷ সে জানায় ওকে তারা যেভাবে রাখবে সেভাবেই থাকবে৷
উচ্চ মাধ্যমিক এর পর যখন এক বছর কাটলো তখন ধরেই নিয়েছিলো আর বোধহয় পড়তে পারবে না৷ কিন্তু আল্লাহ সত্যি মহান৷

“কিরে তোর হলো?”
অহনার কন্ঠে ধ্যান ভাঙলো মেঘলার৷ আয়না থেকে সরে গিয়ে ব্যাগ নিতে নিতে বললো,
“আসছি আপু৷ ”

বলে তাড়াহুড়ো করে বের হলো৷ আজ কি যে শান্তি লাগছে তার৷

ভর্তির কার্যক্রম শেষ করে বের হলো মেঘলা আর তার মামা৷ অহনা বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো৷ মেঘলার চোখ মুখে যেন হাসি লেপ্টে আছে৷
মেয়েটা খুব কম হাসে খেয়াল করেছে অহনা৷ তবে আজ যেন হাসি সরছেইনা মুখ থেকে৷ মেয়েটার জীবনে কত না পাওয়া আছে৷ অথচ মেয়েটা অনেক কিছু ডিজার্ভ করে
মেঘলার মামা আফতাব সাহেব মেঘলা আর অহনা কে রেখে অফিসের দিকে গেলো৷ অহনা বললো সে মেঘলা কে ঘুরিয়ে দেখাতে চায় ক্যাম্পাসটা তাই রেখে গেলো৷

এডমিশন এর কাজ শেষ হতেই নিচে এলো৷ অহনা তার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো মেঘলা কে৷ বেশ খানিক্ষন ভার্সিটিতেই কাটালো দু-জন৷ এর মাঝে ম্বঘলার পুরো ক্যাম্পাস চেনা শেষ আর সবাই বেশ মিশুক৷

।।

রাজ ঢাকা এসেছে তিন দিন হলো৷ কোথায় কোথায় খোঁজেনি এখন অব্দি? কিন্তু পেলো না৷ ওর ছোটো কাকার কাছ থেকে ওর মামার বাড়ির ঠিকানাও খুঁজলো কিন্তু দিলোই না৷
আজ হুট করেই একটা কথা মনে পরলো ওর একটা মামাতো বোন আছে যার ভার্সিটির নাম বলেছিলো মেঘলা৷ সে উদ্দেশ্যেই বের হলো রাজ৷

ওর শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও ওই মেয়েকে খুঁজে বের করবে৷ ভার্সিটতে ঢুকে এখানে চেনাজানা একটা বন্ধু আছে তাকে দিয়েই অহনার খোঁজ নিলো৷ খোঁজ নেওয়ার জন্য অফিস রুমের দিকে এগোবে ঠিক তখনি বিপরীত দিকের শিড়িতে চেনা মুখের দেখা পেলো৷ চমকালো শোভন৷ তাড়াহুড়ো করে উলটো পায়ে শিড়ি থেকে নামলো৷ এত স্টুডেন্ট এর আনাগোনা নামতে গিয়ে বেগ পেতে হলো৷ ওইদিকে গিয়ে কাল বিলম্বনা না করে হাত চেপে ধরলো৷ বললো,
“মেঘলা কোথায় ছিলি তুই?”
কিন্তু অদ্ভুত এক কান্ড ঘটলো মেয়েটা এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিলো৷ রাজ তাকিয়ে দেখলো এটা অন্য মেয়ে৷ মেয়েটি কিছু বলবে সাথে সাথেই বললো,
“স্যরি স্যরি আমি আমার ফিয়ন্সিকে ভেবেছিলাম৷ ”
মেয়েটা রেগে কয়েকটা কথা শুনিয়ে চলে গেলো৷ রাজ ফস করে নিশ্বাস টানলো৷ মেয়েটা তাকে পাগল করে দিচ্ছে তাইতো আজকাল উল্টাপাল্টা কাজ করছে৷

রাজ অফিস-রুমের ফিকে গেলো৷ সিকিউরিটির জন্য কেউ ঠিকানাটা দিলো না৷ আশাহত হলো রাজ৷ শেষ ভরসা ছিলো এটা৷
ঠিক তখনি একজন স্টাফ বললো,
“আপনি যার খোঁজ নিতে এসেছেন সে মাত্রই বের হলো৷ ওর বোন কে এডমিশন করাতে এসেছিলো ওর বাবার সাথে৷”
চমকালো রাজ৷ উৎকন্ঠা হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
“যে সাথে এসেছে ওর নাম কি মেঘলা?”

স্টাফ টি বললো,
“নাম তো জানিনা৷ অহনা আপাকে চিনি৷ ”
রাজ এবার তাড়াহুড়ো করে ফোন থেকে একটা ছবি বের করে বলল,
“দেখুনতো এই মেয়েটা নাকি?”

স্টাফ টি বললো,
“হ্যাঁ ইনিই সাথে ছিলেন মাত্রই বের হলেন৷ মনে হয় নিচেই আছেন৷ ”
রাজ আর দাড়ালেন না তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো৷ তার মানে ও ভুল দেখেনি? মেঘলাকে দেখেছি কিন্তু ভুল মানুষ কে ধরেছে৷ এখান থেকে নিচে গিয়ে খুঁজলো সব৷ তবে পেলো না৷ ফের আশাহত হলো৷
ক্লান্ত হয়ে গাড়ির দিকে হাটা ধরলো৷ ঠিক তখনি ফের চমকালো৷ এবার আর একই ভুল করলো না ভালো করে দেখে নিলো৷ দৌড়ে গেলো সে দিকে৷

চলবে,