#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা
১০
অহনা আর আর রাজ সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে৷ রাজের চোখে মুখে খুশির ঝলক৷ অহনাকে রাজ চিনেছে মেঘলার মাধ্যমেই৷
মেয়েটা তাকে সব কিছু শেয়ার করতো৷ অহনা কে দেখে যেন চাঁদ পেল হাতে চোখ মুখ চকচক করছে ক্লান্তিটা আর নেই৷ কতদিন খুঁজে কিঞ্চিৎ আলোর দেখা মিল৷ এবার নিশ্চয়ই মেঘলা কে ও পাবে? মেয়েটাকে পাক একবার এবার আর ছাড়াছাড়ি নেই৷ প্রয়োজনে বাড়ি ছাড়বে তবুও
ওই মেয়েটাকে ছাড়া যাবেনা৷ আচ্ছা মেঘলা কি ওকে চেনে না?
মেয়েটার উপর তার ভীষণ অভিমান একেবারে টইটুম্বুর! কিন্তু সে অভিমান মেয়েটাকে একান্ত নিজের করে রেখে তারপর দেখাবে৷ তখন বোঝাবে কত ধানে কত চাল৷ মেয়েটা কি ভরসা করতে পারল না একবারও বলতে পারল না?
কিন্তু না বলেনি৷ সে তার বাবা চাচার কথায় মুখ বুঝে সহ্য করে নিল সব৷ ভাগ্যিস মেয়েটার সেদিন সুমতি হয়েছিল৷ পালিয়েছিল নয়তো শেষ রক্ষা? কিন্তু সেদিন যাওয়ার সময় তাকে যদি একবার ফোন করতো তাহলেই হতো৷ সৃষ্টিকর্তা কোথায় সহায় আছে নয়তো সেদিনই তো কেলেঙ্কারি ঘটতো সেসব সহ্য করে নিতে পারবে কিন্তু ওই মেয়েটা কে অন্য কারো হতে সহ্য করতে পারবে না৷
মেঘলা তো তার একান্ত তার৷ মেয়েটা কে তো কত যত্ন করে ভালবেসেছে দোষ কি তার কম আছে? তারও তো কথা ছিল মেয়েটাকে আগলে রাখার? কিন্তু, আগলে রাখল কই রাখতে পারল না তো একটা মেয়েকে রাতবিরাতে বাড়ি ছাড়তে হলো৷
আশ্চর্য! তার পরিবার একটুকি মেয়েটা আসার পর কেউ একবার খোঁজ নেয়নি বরং মেয়েটাকে নিয়ে গাল মন্দ করেছে৷ এখন রাজের নিজের রক্তের উপর নিজের ঘৃণা হয়৷
আচ্ছা যেদিন মেয়েটা একলা বের হল তখন যদি কেউ কিছু হয়ে যেত সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত যদিও সে জানে না মেয়েটা সহি সালামত আছে কিনা৷ মামির কাছে আছে যেহেতু ভালোই আছে তারা সব সময় ওকে এখানে আনতে চেয়েছিল ও জোর করে রেখেছিল তখন যদিও এটা কি এখানে দিয়ে দিত এত কিছু আর ঘটতো না৷
“আশ্চর্য! আপনি পথ আটকে দাঁড়ালেন কেন৷ ”
অহনার কথায় ধ্যান ভাঙলো রাজের হুশ ফিরল৷ এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,
“আপনি কি আমায় চিনেন না আমি মেঘলার বড় চাচার ছেলে রাজ৷ আচ্ছা মেঘলা কোথায় ও আপনার সাথে আছে নিশ্চয়ই? আশেপাশে আছে না? একটু ডাকুন না ওকে আমি নিয়ে যাব কোথায় ও? ”
অহনা ভুরু কুঁচকে তাকালো সে রাজকে চিনেছে কিন্তু বুঝতে দিল না এই ছেলেটা আবার এসেছে কেন এই ছেলেটার জন্যই তার বোনের এ হাল৷ অহনা থমথমে কণ্ঠে বলল,
“দুঃখিত আমি আপনাকে চিনতে পারছি না তাই আমি কিছু বলতেও পারব না৷ ”
অহনার কথায় রাজ আশাহত হল মেয়েটা এখানে আবার শিক্ষা চেঁচামেচি না শুরু করে মেয়েদের এই এক সমস্যা কিন্তু এ মেয়েকে তার কিছু বললে চলবে না অবশ্য না চেনারই কথা৷
রাজ শান্ত কন্ঠে বলল,
“না চেনারি কথা৷ আপনি মেঘলা কে ডেকে দিন ও চেনে আমায়৷ ”
অহনা কাটকাট কন্ঠে বললো,
“আমি কোনো মেঘলা কে চিনি না৷ পথ ছাড়ুন নয়তো মানুষ ডাকবো৷ ”
রাজ কাতর চোখে তাকালো৷ বললো,
“আমি জানি আপনি বলতে চাইছেন না৷ আচ্ছা মেঘলাকে লাগবে না আপবি শুধু আপনার বাবার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিন৷ প্লিজ দয়া করুন৷ ”
অহনার কিঞ্চিৎ ও মায়া হলো না৷ সে কিছুতেই মেঘলাকে এ লোকটার নাগাল পেতে দিবে না৷ মেয়ে টা জীবনে কম কিছু সহ্য করেনি৷ এখন সে আগলে রাখবে৷
অহনা শক্ত চোখে তাকালো রাজের দিকে৷ অতঃপর আশেপাশে তাকালো মেঘলাকে খোঁজার চেষ্টা করলো৷ মেয়েটা কোথায় গেলো? হারিয়ে গেলো না তো৷ যেখানেই থাকুক আপাতত এখানে যেন না আসে৷
আকস্মিক কারো দেখা পেলো অহনা৷ হাসলো খানিকটা অতঃপর বললো,
“শোভন ভাই এখানে আসুন না৷ ”
শোভন কলেজের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো পাশে তার ছেলেপেলে ৷ এ ভার্সিটির গভার্নিংবডিতে আছেন ওর বড় ভাই সেই সুবাধেই এখানে আসা হয়৷
শোভন এগিয়ে এসে বললো,
“কি হয়েছে অহনা? কিছু বলবে?”
অহনা বললো,
“ভাইয়া দেখো না এ লোকটা আমার পথ আটকে দাঁড়িয়েছে৷ ”
রাজ ভ্যাবাচেকা খেলো রাগ হলো৷ মেয়েটার মাথা ঠিক আছে নাকি৷ গম্ভীর স্বরে বললো,
“কি বলছেন কি? আমি আপনার কাছে আপনার বাবার নাম্বার চেয়েছি শুধু৷ ”
রাজ আরো কিছু বলবে তার আগেই শোভন অহনাকে বললো,
“বাড়িতে যাও অহনা আমি দেখছি একে৷ ”
অহনা তাড়াহুড়ো করে অন্য দিকে হাটা ধরলো৷ রিক্সা নিলো তখনি দেখলো মেঘলা এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে বিড়াল ছানার মত৷ নিশ্চয়ই মেয়েটা দেখেছে৷ মেঘলা কে ইশারা দিলো৷
মেঘলা যখন তাড়াহুড়ো করে রিক্সায় উঠবে ঠিক তখনি দেখে ফেললো রাজ৷
তারমানে মেয়েটা এখানেই ছিলো? লুকিয়ে ছিলো ওর কাছ থেকে? ওর মেঘলা ওর থেকে লুকাচ্ছে? ও কি করেছে? ওর দোষটা কি৷
রাজ এখনো সে দিকেই তাকিয়ে আছে শোভন গম্ভীর স্বরে বললো,
“দেখেতো বাউন্ডুলে মনে হচ্ছে না৷ রাস্তাঘাটে মেয়েদের বিরক্ত করছো কেন?”
ঠিক তখনি মেঘলা দের রিক্সা ছাড়লো৷ রাজ বললো,
“ভাই প্লিজ আপনার সাথে পরে কথা বলছি৷ রাজ সে দিকে দৌড়ে যাবে শোভন এর সাথে থাকা একটা ছেলে ধরে ফেললো৷ থমথমে কন্ঠে বললো,
“ভাইয়ের কথার উত্তর দে আগে৷ ”
শোভন বললো,
“আমার এলাকায় এসে আমার এলাকার বোনদের সাথে এসব করছো? সাহস তো কম না৷ ”
রাজ তড়িৎ গতীতে বললো,
“ভাই ছাড়ুন আমায়৷ ওরা চলে যাচ্ছে ওকে আমার খুব দরকার৷ দয়া করে ছাড়ুন৷ ”
শোভন এর পাশের একটা ছেলে হাত ধরলো৷ ছেলেটা দাতে দাত পিষে বললো,
“সাহস তো তোর কম না এখনো ওইদিকেই তাকিয়ে আছিস৷ভাই কি বলে উত্তর দে৷ ”
রাজ এবার রেগে গেলো৷ রিএক্সাটা বেরিয়ে গেলো৷ হাত
ঝাড়া দিয়ে ফেলে অশ্লীল স্বরে বললো,
“চুপ শা**লা৷ তোদের জন্য চলে গেলো৷ তোদের এলাকার না? ভালো করে মেয়েটার সাথে কথা বলছিলাম৷ আমি শুধু মেঘলার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম ধুরন্ধর মেয়ে দিলো না৷ তোদের সামনে দিয়ে ওরে আমি তুলে নিয়ে আসবো৷ আর ওই অহনা না কি ওই মেয়েরে তো ছাড়বোইনা আমি৷ ভদ্র আছি ভদ্র থাকতে দিলোনা৷ শা*লা মেয়ে জাতীই খারাপ৷ ”
শোভনের পাশের ছেলেএটা তেড়ে আসবে ঠিক তখনি শোভন বললো,
“রাকিব ছাড় ওরে৷ দেখি ও কি করতে পারে৷ ”
।।
চুপ্টি করে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে মেঘলা৷ এই রুমটি এ বাড়িতে তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে৷ যদিও সে এখন অব্দি এ রুমে রাত কাটায় নি৷ সে এতদিন রাতের বেলা অহনার সাথেই ঘুমিয়েছে দিনে যদিও এখানেই কাটে সময়৷ সন্ধ্যার পরে এই ঘরে আর আসে না কিন্তু আজ এসে বসেছে সেই বিকেল থেকে এখন অব্দি এখানেই বসে৷ রাত প্রায় দশটায় কাছাকাছি এর মাঝে অহনা এসে ডেকে গেছে কিন্তু সে সারা দেয়নি৷
ওই লোকটা আবার কেন আসলো ও তো ভুলতেই বসে ছিল৷ তার জন্য না ভালোবাসা তবুও মানুষ কেন তাকে ভালোবাসার লোভ দেখায় ওই লোকটাকে তো পাওয়া অসম্ভব কেউ তাকে মেনে নেবে না তারচেয়ে বরং দূরে থাকাই ভালো৷
অদ্ভুত এই অনুভুতির বেড়াজাল৷ অদ্ভুত এই মায়া মানুষ কে রোগীতে পরিনত করে৷
মামিও ডেকে গেছে৷ মামাও ডেকেছে৷ তাদের বলেছে মাথা ব্যাথা করছে তাই শুয়ে আছে৷ পরে উঠে খেয়ে নিবে৷
ওর জন্য সবাই চিন্তিত৷
লোকটা তার নাগাল না পাক৷ তাহলে পরে হয়তো নিজেকে আর সামলাতে পারপবে না?
সে আর দূর্বল হতে চায় না৷ ওই লুকটা অনেক সুখ ডিজার্ভ করে৷ যা ও দিতে পারবে না৷ ওর সাথে থাকলে মানসিক শান্তি পাবে লোকটা তবে পরিবার হারাবে৷
বেহায়া মন কেন সংযত করা যায় না? মন এত অবাধ্য কেন?
এর মাঝেই বারান্দাটা আলোকিত হলো৷ এতখন তো ঘুরঘুটে অন্ধকার ছিলো আলো আসলো কোথ্যেকে সে তো আলো জালায়নি৷ মাথা উচু করে তাকাতেই পাশের বারান্দায় ঝলমলে আলোর দেখা মিললো৷ ঠিক তখনি চোখাচোখি হলো এক জোফা গম্ভীর চোখের সাথে৷
চোখ বড় বড় করে তাকালো মেঘলা৷ এ লোকটা এখানে কি করে? এ লোকটার সাথেই ওর কেন দেখা হয়? সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো মেঘলা৷
চলবে,