#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা
১৩
আজ বেশ সময় করে ঘুম ভাঙলো মেঘলার৷ এবং ঘুম ভাঙলো মামার কন্ঠে কারো সাথে চিৎকার করে কথা বলছে যেন৷ তড়িৎগতিতে উঠলো মেঘলা৷ মামা এমন করে কার সাথে চিৎকার করছে?
কাকে যেন চিৎকার করে বলছে,
“এখান থেকে চলে যাও৷ এখানে এসেছো কেন?”
কিন্তু ওর মামাতো খুব সহজে রাগে না৷ কার সাথে এভাবে কথা বলছে?কৌতুহলী হলো মেঘলার অবচেতন মন৷ আড়মোড়া ভেঙে পাশ থেকে উর্নাটা নিয়ে উঠলো, এটা অহনারই রুম৷ উর্না মাথায় জড়িয়ে বিছানা থেকে নামলো৷ বেশি ঘুমের ফলে চোখ খানা ফুলে গেছে৷ ভাবলো বাইরে যাবে কি যাবেনা৷ যদি ওনাদের পারিবারিক কেউ হয়?
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই বারান্দায় এলো৷ প্রথম ভাবলো যাবে না৷ পরক্ষণেই নিচে চেনা একটা গাড়ি দেখতে পেলো আৎকে উঠলো খানিকটা৷ এর মাঝেই মামার কন্ঠ শুনতে পেলো ফের,
“এটা ভদ্রলোকের বাড়ি সকাল সকাল এমন ঝামেলা করলেমানুষ কি বলবে? ভালোয় ভালোয় বলছি এখান থেকে চলে যাও৷ ”
মামা বেশ রেগে গেছে বুঝলো মেঘলা৷ অহনার কাছে শুনেছে৷ সে সহজে রাগে না৷ আর রাগলে নাকি মাথা ঠিক থাকে না৷ তাড়াহুড়ো করে বের হলো মেঘলা৷ আজ কিছু একটা করতে হবে তাকে৷ লোকটাকে বোঝাতে হবে পাগলামি করলে কিছু হয় না৷ ও যা চাইছে তা হওয়ার না কখনোই৷
নিজের ঘর ছেড়ে বের হতেই ড্রইংরুমের দিকে আসতেই দ্বখতে পেলো রাজের মুখশ্রী খানা৷ বিধস্ত অবস্থা চোখ মুখের৷ অদ্ভুত মায়ায় আষ্টেপৃষ্টে ধরলো৷ চোখ ভরে এলো৷ কেমন লাগছে লোকটা কে? ইচ্ছে কুছে ছুটে গিয়ে জিগ্যেস করতে কি হাল করেছেন নিজের৷ কিন্তু না সে যে এটা করতে চায় না৷ বাবা আর বড় চাচির মাথা ছুঁয়ে কথা দিয়েছে সে রাজ কে আর প্রশ্রয় দিবে না৷
তারা ওকে ভালো না বাসুক ও তো বাসে৷ টপ টপ করে গড়িয়ে পরলো কয়েক ফোটা অবাদ্ধ অশ্রু৷ নিজের মন কে ও বোঝে না৷ কখনো সখনো খুব রাগ হয় অভিমান হয় আবার কখনো আকাশ সমান মায়া হয়৷ লোকটা যে তাকে আগলে রেখেছিলো৷
“মেঘ, এইতো আমার মেঘ চল তুই এখনি এখান থেকে তোকে নিয়ে যাবো আমি৷ ”
মলিন কন্ঠ কর্ণপাত হতেই ধ্যান ভাঙলো মেঘলার৷ সামনেই তাকাতেই দেখা মিললো রাজের৷ মলিন চোখে তাকিয়ে আছে৷ হাত চেপে ধরলো বললো,
“তুই এখানে আমি জানতাম৷ তপ্র মামা কে বোঝানা পাখি? বল না তুই আমার সাথে থাকতে চাস? বল না৷ ”
মেঘলা ভারি নেত্রপল্লব ঝাপটে মামার পানে তাকালো৷ ওর মামাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ হয়তো এবারো মতামত বোঝার চেষ্টা করছে?
এর মাঝেই এগিয়ে এলো মেঘলার মামি বললো,
“এই ছেলে এই হাত ছাড়ো ওর৷ ও কোথাও যাবে না৷ ও কি বোঝাবে? ওকে আমরা যেতে দিবোনা ও চাইলেও৷ ”
মেঘলা রাজের দিকে তাকালো৷ করুন চোখে তাকিয়ে আছে৷ চোখ সরিয়ে নিলো মেঘলা৷ এ চোখে তাকিয়ে থাকার সাধ্য নেই ওর৷ শুকনো ঢোক গিললো৷ কি আশ্চর্য গলা শুকিয়ে আসছে কেন এমন? মনে হচ্ছে গলাটা কেউ চেপে ধরেছে৷ সে টু শব্দ করতে পারছে না৷ রাজ ছাড়লো না মেঘলাকে আরো চেপে ধরলো ওর হাত৷ বললো,
“আমি ওকে আজ নিয়ে যাবোই এখান থেকে৷ ”
“আমি কোথাও যাবো না রাজ ভাইয়া৷ ছাড়ুন আমায় লাগছে আমার৷ ”
মন মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে যেন এইটুকু কথা বলতে পারলো মেঘলা৷ গলা দিয়ে যেন কিছু বের হল না৷ মৌনতা যেন বেশ প্রিয় হলো৷ তবে তার এইটুকু কথাই যেন যথেষ্ট ছিলো আফতাব সাহেবের জন্য এগিয়ে এসে ভাগ্নীর হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,
“তুমি এবার না গেলে আমি সত্যি পুলিশ ডাকবো৷ আমার মেয়ে কি বলেছে শুনেছো? যদিও ও যেতে চাইলেও আমি শুনতাম না৷ আমি শুধু ওর মতামত জানতে চেয়েছি৷ ”
রাজের রাগ বাড়লো৷ নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছে না সে৷ সে মানতে পারছে না তার মেঘলা তার সাথে যেতে নারাজ৷ ওর মন মর্জিতে হবে নাকি সব? ভালোবাসে বলে নিজেকে ভুলেনি৷ ও যা চায় নিজের করে৷ রাজ এগিয়ে এসে আবার মেঘলার হাত চেঁপে চিৎকার করে বললো,
“কি ভেবেছিস মামা, ভাগ্নী মিলে যা বলবি তাই শুনবো? আমি আজ তোকে এখান থেলে নিয়ে যাবোই৷ তুই এবাড়ির কেউ না পূর্ণ অধিকার আছে তোকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার৷ চল বলছি নয়তো তুলে নিয়ে যাবো৷ ”
এবার অহনা এগিয়ে এলো৷ জোর করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
“বাবা পুলিশে কল দাও৷ গুন্ডামী বুঝিয়ে দিবো এদের৷”
মেঘলার সহ্য হচ্ছে না এসব৷ ফুপিয়ে উঠলো এবার৷ ভালো লাগছে না আর৷ চিৎকার করে বললো,
“আমি বলেছিনা আপনার সাথে যাবো না? দয়া করে শান্তি দিন আমায় চলে যান এখান থেকে আপনার পরিবার এসবে আমাকেএ কটু কথা শোনাবে আমি আর শুনতে ইচ্ছুক না৷ আমি আপনার সাথে যেতে চাই না৷ আমি সত্যি এবার পুলিশ ডাকবো বলে দিলাম৷ ”
কঠিন চোখে তাকালো রাজ৷ তার বিড়াল তার উপরই চিৎকার করছে?
কর্কশ কন্ঠে বললো,
“আমি যা চাই নিজের করে নেই ভালো করে জানিস৷ তুলে নিয়ে গিয়ে হলেও তোখে আমি বিয়ে করবো বলে দিলাম৷ ”
বলে দাড়ালো না আর৷ হনহন করে বেরিয়ে গেলো৷ মেঘলা দৌড়ে নিজের ঘরের দিকে ছুটে গেলো৷ দরজা বন্ধ করে দিলো৷ অহনা করুন চোখে তাকালো সে দিকে৷ ডাকলো ও পেছন থেকে৷ দিলারা বেগম বললেন,
“থাক ওকে একটু একা থাকতে দে৷ ”
।।
সময় কাটলো আরো দু-দিন৷ দু-দিনই মেঘলা বেশ চুপচাপ ছিলো, এর মাঝেই অহনার বান্ধুবির বিয়েতেও গিয়েছিলো৷ নিজের মন খারাপ কাউজে বুঝতে দেয়নি কিঞ্চিৎ ও৷
হাজারো মন খারাপে আজ এক টুকরো সুখের ছোঁয়া মিললো৷ অহনাকে দেখতে এসেছে৷ মন খারাপ হওয়ার কথা ছিলো অহনার বিয়ে হয়ে যাবে৷ তপবে হলোনা৷ চমৎকার বিষয় হলো অহনার শশুর বাড়ি পাশের বিল্ডিংই৷ শোভনের ছোটো চাচার ছেলের সাথেই বিয়ে৷ ভরা সংসার শোভনদের৷ বাবারা দুই ভাই৷ রিফান শোভন থেকে ছোটো হলেও রিফান দেশের বাইরে চলে যাবে তাই এর আগে কাবীন কিংবা এনগেজমেন্ট টা সেরে রাখতে চাইছে৷ রিফান অহনাকে বেশ পছন্দ করে৷ শোভনের ও কাবীন হওয়ার কথা ছিলো ভেবেছিলো মেয়ে পছন্দ হলে কাবীন করিয়ে আসবে৷ওর বড় ভাই এর রিসিপশন কিছু দিনের মাঝেই৷ শোভনের দাদি অসুস্থ সে জন্য তার কথা ভেবেই এত তাড়াহুড়ো তাদের৷ ভদ্রমহিলা নাতী দের বউ দেখে যেতে চায়৷ কিন্তু সে দিন মেয়েই দেখলো না পালালো মেয়ে৷ রিফান দেশে এলে শোভনের বিয়ের পর অহনা কে নিয়ে যাওয়া হবে৷ তবে আজ এসেছে পাকা কথা বলতে৷
তখন বিভাবসু পশ্চিমে অবস্থান পরছে৷ সন্ধ্যা নামার আগ মুহুর্ত৷ কমলাটে অম্বর ভিষণ শান্ত৷ পাখিরা নীড়ে ফেরার জন্য ব্যাস্ত৷ বড়রা সবাই নিচে কথা বলছে ওরা ছাদে এসেছে৷ শোভন বেশ ব্যাস্ত তাই আসতে পারেনি এখনো৷ আফট্যাব সাহেব বলেছেন রাতে খেয়েই তারপর যাওয়া হবে তাদের৷ শোভনের বাবা বেশ সাধারণ মানুষ দের মতই চলাফেরা করেন৷ মানুষ তাই ভালোবাসেও বেশি৷
বেশ কিছুক্ষণ পর ছাদে প্রবেশ করলো কেউ৷ ঘাড় কাত করে তাকাতেই গম্ভীর মুখশ্রীর দেখা মিললো৷ জীবন বড়ই অদ্ভুত তাই না? মানুষ যেখান থেকে পালিয়ে বেরাতে চায় তাই এসে হাজির হয় সামনে?
তবে মেঘলার জীবনটা একটু বেশি অদ্ভুত৷ সব কিছুতেই কেন এ লোকটার সাথেই দেখা হচ্ছে? অদ্ভুত থেকেও বেশি কিছুনা? সৃষ্টি কর্তার পরিকল্পনা বোঝা বড় দায়৷
এর মাঝেই শোভনের বড় ভাই এর বউ এগিয়ে গিয়ে বললো,
“ভাইয়া আসার সময় হলো তোমার? ”
মেয়েটির বাংলা নিখুঁত নয় ব্রিটিশ টোন আসে একটা৷ তবে চমৎকার শোনায়৷ কথা বললে তাকিয়ে থাকে মেঘলা৷ আজ সে ও এসেছে৷ শোভন পাঞ্জাবির হাতা ঠিক করতে করতে বললো,
“মা জোর করে আনলো৷ নয়তো কাজ পরে গেছিলো৷ ”
বলে এদিক তাকাতেই চোখাচোখি হলো মেঘলার সাথে৷ অদ্ভুত সেই চাওনি৷ চোখ নামিয়ে নিলো মেঘলা লোকটা বোধহয় তাকিয়েই রইলো কিছুক্ষণ৷কি আশ্চর্য সব৷ এ সমীকরণ মিলবে কবে?
চলবে,
#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা
১৪
“ছেলে দেখলেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে মেয়ে? যান নিচে যান!পেত্নীর মত ছাদে কি করছেন?”
আকস্মিক গম্ভীর কন্ঠে ধ্যান ভাঙলো মেঘলার৷ ছাদের এক কোণে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে৷ অবশ্য এতক্ষণ একা ছিলো না রিশাদের সাথে কথা বলছিলো৷ ফোন আসায় মাত্রই অন্য দিকে চলে গেলো রিশাদ৷ আর এর মাঝেই এলো শোভন নামক পুরুষটি৷ এ মানুষ টি এমন কেন? আশ্চর্য ও বটে, তবে সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো ওরা কেউ মেঘলা কে চিনতে পাচ্ছে না৷
হ্যাঁ শোভনই সেই লোক যার সাথে মেঘলার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো৷ এ ব্যাপার টা বেশ অদ্ভুত তবে শুনেছে যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তার খালা আর খালু ছাড়া কেউ দেখেনি৷ খালার কথাতেইসে দিন যাচ্ছিলো৷ কথা ছিলো পছন্দ হলে কাবীন করিয়ে রাখবে৷
এ জুগে এসেও যে এমন হয় কখনো ভাবেনি মেঘলা৷ কিন্তু আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো সে দিন ওর চাচাতো বোন কেন বললো ওর বৃদ্ধর সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে টাকার বিনিময়ে?
ও কেন এমনটা বলতে গেলো? কি মতলব ছিলো ওর? এসব কেমন আজকাল ধাঁ্ধার মত৷
সে দিন খটকা লেগেছিলো এক মুহূর্তে যে ওকে দেখতে অব্দি পারে না সে ওর সাহায্য করছে পালানোর? বিস্ময়কর নয় কি?
তবে আফসোস হয় না৷ সব কিছুর পেছনেই হেতু থাকে৷
“মুখ সামলে কথা বলুন৷ কি বলছেন কি? যা ইচ্ছে তাই বলবেন চুপ থাকবো? তা ছাড়া আমার ইচ্ছে আমি যেখানে সেখানে থাকবো৷ ছেলে দেখি নাকি ছেলেদের কোলে উঠে বসে থাকি তাতে আপনার কি?”
মেঘলার কথায় শোভনের চোখ মুখ শক্ত হলো৷ মেয়েটা ওর সাথে উবু কন্ঠে কথা বলছে৷ সাহস এর তারিফ করতে হয়৷ উমম নট ব্যাড৷ হাসি পেলো শোভনের৷ এইটুকু চুনোপুঁটি ওর উপর মেজাজ দেখাচ্ছে৷ তবে মেয়েটাকে বুঝতে দিলো না৷ মুখশ্রীতে রাগ বজায় রাখলো৷ মেঘলা এখনো শোভনের পানে তাকিয়ে আছে৷ শোভন কঠিন স্বরে বললো,
“আমার সাথে তর্ক করছেন? সাহস দেখে হতবাক৷ ”
ইশ সাহস দেখে হতবাক৷ লোকটা তার সাহস সম্পর্কে কিছু জানেই না লোকটা অসম্ভব রকম বদ৷ একটা মেয়ে কে এমন করে কেউ বলে? ওনার ও তো বোন আছে৷ একটা মেয়ের সাথে কি করে কথা বলতে হয় জানে না? বাড়ির সবাইতো বেশ অমায়িক লোকটা এমন কেন? ভাগ্য ভালো বিয়ে হয়নি৷ এমন লোককে বিয়ে করা থেকে বৃদ্ধ কে বিয়ে করাই ভালো৷ কথায় কথায় হম্বিতম্বি দেখায়৷ কি ভেবেছে ক্ষমতার অপব্যাবহার করবে? হুহ৷ তার সাথে এসব চলবে না৷ সে কাউজে ভয় পায় না৷
আর এ লোককে কেন ভয় পাবে? লোকোতার বাবা এত বড় মানুষ তবুও কত ঠান্ডা৷ আর লোকটা করলা মুখো৷ কথায় মধু নেই৷ শুধু পারে ধমকাতে৷
“কি মেয়ে কি ভাবছেন? এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন? অদ্ভুত মেয়ে তো৷ ছেলে দেখলে হুস উড়ে যায়? অবশ্য আমি হ্যান্ডসাম হুস উড়ারি কথা৷ ”
আবারো শোভনের কথায় ভাবনার সুতো কাটলো মেঘলার৷ক্ষানিক্ষণ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো অতঃপর কথা গুলো ফের ভাবতেই ফিক করে হেসে উঠলো৷ যেন শোভন কোনো হাসির কথা বলেছে৷
আকস্মিক এমন হাসি দেখে চোখ পিটপিট করে তাকালো মেঘলার পানি৷ মেয়েটা এখনো হাসছে৷ যেন জীবনের প্রথম এমন একটা হাসির কথা শুনেছে যা শুনে হাসি থামছেই না৷
ভ্রু কুঁচকে এলো শোভনের মেয়েটা অনবরত হেসেই যাচ্ছে কঠিন হলো চোখ মুখ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“হাসছেন কেন মেয়ে? আমি কি হাসির কিছু বলেছি?”
শোভনের ধমক শুনে থতমত খেলো মেঘলা৷ চুপসে গেলো৷ লোকটা কথা থেকে বেশি ধমকায়৷ ভাগ্যিস বিয়ে টা হয়নি৷
মেঘলা থমথমে কন্ঠে বললো,
“আমার ইচ্ছে আমি হেসেছি৷ তাতে আপনার কি? আমার যা ইচ্ছে করবো৷ ”
বলে ফস করে নিশ্বাস নিলো৷ শোভন হাতা গুটিয়ে কয়েক কদম কাছে এগিয়ে বললো,
“আমার কি তা দেখাবো?”
মেঘলা পিছিয়ে গেলো কয়েক কদম শুকনো ঢোক গিললো৷ আশ্চর্য লোকটা এমন এগোচ্ছে কেন? ভারি অসভ্য তো৷
মেঘলা বললো,
“আশ্চর্য এগোচ্ছেন কেন?”
শোভন ঠোঁট এলিয়ে বাঁকা হাসলো৷ মেয়েটা বেশ চঞ্চল আর চটপটে৷ এমন মানুষ কে ভয় দেখাতে বেশ লাগে শোভনের৷ শোভন বললো,
“মুখের উপর কথা বলছেন তার উপর সাহস ও দেখাচ্ছেন৷ আমার থেকে কৈফিয়ত চাইছেন তাহলে আপনাকে কি করবো? চুমু খাবো? আসুন তাহলে৷ আই হ্যাভ নো প্রব্লেম! ”
মেঘলা আরেক দফা চমকালো!রাগ হলো৷ দাড়ালো কোমরে হাত দিয়ে বললো,
“নির্লজ্জ লোক কোথাকার৷ আমি ছাদে থাকি না যা ইচ্ছে করি আপনার কি? ঝগড়ুটে লোক৷ ”
শোভন দুষ্টু হেসে বললো,
“নির্লজ্জ তাই না? তাহলে তো নির্লজ্জ হতেই হয়৷ ”
বলে আরেকটু এগোবে মেঘলা গুটিয়ে নেয় নিজেকে ভয় পেয়ে বলে,
“থামুন থামুন দয়া করে থামুন ওদিকে মানুষ আছে এগোবেন না দয়া করে৷ ”
শোভন ফের হাসলো৷ এদিকটায় কেউ নেই কাউকে দেখাও যায় না৷ শোভনের হাসি পেলো তবে বুঝতে দিলো না গম্ভীর স্বরে বললো,
“তাহলে এখনি এখান থেলে চুপচাপ নেমে যাবেন৷ এত কিসের ঘেষাঘেষি ছেলেদের সাথে? রিশাদ থেকে দূরে থাকবেন৷ যান এখনি নিচে৷ ”
মেঘলা অবাক হলো৷ লোকটা ওই লোক থেকে দূরে থাকতে বলছে কেন? মেঘলা যাবে তার আগেই শোনা গেলো পুরুষালী কন্ঠ,
“কেন ভাইয়া? নিচে যেতে বলছিস কেন? থাক না নিচে গিয়ে কি হবে সেখানে সব বড়রা আছে৷ ”
সামনে তাকিয়েই দেখা গেলো রিশাদ কে৷ মেঘলা কাচুমাচু খেলেও শোভন স্বাভাবিক আছে৷ মনে হচ্ছে সে এখন কিছু বলেইনি৷ মেঘলা কিছু বলবে তখনি শোভনের পানে তাকালো লোকটা রাগী চোখে চেয়ে আছে৷ লোকটার সমস্যা কি কে জানে৷ তা ছাড়া রিশাদের সাথে ও ইচ্ছে করে কথা বলছিলো না৷ লোকটা নিজ থেকেই এসেছিলো ওর সাথে কথা বলতে৷
মেঘলা দাড়ালো না আর৷ এক প্রকার তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো৷ অহনা অনেকবার ডেকেছিলো কিন্তু মেয়েটা সে দিকে হুসই নেই যেন৷
মেঘলার যাওয়ার পানে রিশাদ তাকিয়েই রইলো শোভন তা লক্ষ করলো বেশ৷ মেঘলা যেতেই শোভন বললো,
“মেয়েটা মারাত্মক সুন্দরী!
রিশাদের কথায় মুষ্টি শক্ত হলো শোভনের৷ চোখমুখ আরো বেশি কঠিন হলো যেন৷ রাগ বাড়লো ব্যাপক৷ টইটুম্বুর রাগ সামলে নিলো শোভন৷ রাগ দেখানো বেমানান মেয়েটা তার কিছু হয় না৷ কিচ্ছু না৷ এ মেয়ের জন্য তার রাগ কেন হলো? তবে কারণ তো আছে কিছু৷ কারণহীন হয় কি কিছু? কুছু না হোক তবুও অনেক কিছু এ উত্তর জানে না জানতে চায় না৷ শোভন কঠিন স্বরে বললো,
” ওর থেকে দূরে থাক৷ ”
এইটুকু বলে দাড়ালো না আর প্রস্থান করলো৷ রিশাদ তাকিয়ে রইলো শোভনের পানেও৷ সে যেন জানতো ভাই এ কথা বলবে তবে কিছু ভাবলো৷ দুষ্টু হাসলো৷
।।
ভরপুর আজ অহনাদের বৈঠক খানা৷ যাকে বলে চাঁদের হাট বসেছে৷ মাননীয় কাউন্সিলর তার উপর বড় কুটুম উপস্থিত তার বাড়িতে৷ এমন বাড়িতে মেয়ে বিয়ে দিবে ভাগ্যের বিষয় যেন৷ কত অমায়িক সবাই৷
ছিটেফোঁটা অহংকার নেই৷ মেয়েটা নিয়ে তো চিন্তা কমলো এবার ভাগ্নীকে একটা গতি করে দিতে পারলেই যেন স্বস্তি পাবে৷ নয়তো লোকে বলবে নিজের মেয়েকে ভালো ঘরে দিয়ে ভাগ্নীকে যেনতেন জায়গায় দিয়েছে৷ এ মেয়েটা তার বোনের হলেও মনে হয় নিজেরি৷ মৃমৃত্যুর আগে সে কি মেয়েটার জন্য কিছু করতে পারবে না? এ চিন্তা তাড়া করে বেশ৷ এখন তাই বাঁচতে ইচ্ছা হয়৷
অহনার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে৷ শোভনের বড় ভাই এর রিসিপশনের দিন ওদের কাবীন করানো হবে৷ আপাতত যার যার বাড়িতেই থাকবে৷ ছেলে বাইরে থেকে এলে মেয়েকে গজরে তুলতে চায় সবাই৷
চলবে,