#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা
১৫
মেদিনীতে আলো ফুটলো সবে৷ পাখিদের গুঞ্জন ও শুরু হলো৷ আদো আলো আদো আঁধারের মিলন মেলা যেন৷ ভোরের এই অদ্ভু সৌন্দর্য যেন মোহিত করতে সক্ষম যে কাউকে৷ কুয়াশার আবরণে ঢেকে আছে অউরো শহর বেশ ঠান্ডাও পরেছে বটে৷কুয়াশার আবরণ কাঁচের জানায় পড়ায় অদ্ভুত সুন্দর লাগছে৷
আলসে এক ভোর যেন৷ তবুও ঘুম ছুটলো মেঘলার৷ পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো অহনা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে৷
কাল সারা রাত কথা বলেছে৷ শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছে৷ মাখে মাখে কিছু ভালোবাসা দেহলে কি যে ভালো লাগে৷
উঠে গুটি গুটি পায়ে রুম ছেড়ে বের হলো৷ নিজের ঘরে এলো৷
রুনঝুন নুপুরের শব্দ তুলে বারান্দার দিকে এগোলো৷ কুয়াশায় অদুরের কিছুই তেমন দৃশ্যমান না৷
বারান্দার গাছ গুলোতে শিশির পরে আছে৷ কি চমৎকার লাগছে৷৷
আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো শিশির কোণা গুলো৷ মেঘলার আলতো আদূরে স্পর্শে যেন গাছ গুলো ও খেই হাড়ালো৷ আদুরে স্পর্শে যেন আরো সতেজ হলো৷
এ প্রেমময়ী স্পর্শে গলবে না কে? ফুরফুরে আজ মন৷ যেন চিন্তাহীন সে৷ দিন দুনিয়ার ক্লেশ বোধহয় বেমালুম ভুললো৷ বেমালুম ভুললো সে যে বিষাদময়ী৷
ফের ঘরে এসে কাঠের চিরোনিখানা নিলো৷ বারান্দায় ফিরে এলো বারান্দায় রাখা নরম গোদি খানায় বসে চিরনি চালালো চুলে৷ কত দিন যত্ন নেওয়া হয় না৷ অযত্নে অবহেলায় তবুও কি সুন্দর আছে চুল গুলো৷
যত্ন করে বেশ কিছু দিন বাদ চুলটা আচরালো ছেড়েই রাখলো৷ সকাল বেলা চুল ছেড়ে রাখলে চুল বাড়ে শুনেছে তার মায়ের থেকে৷ বেশ কিছুক্ষণ কাটলো৷
আবার নুপুরের শব্দ তুলে দাঁড়ালো মেঘলা৷ সাথে সাথেই চোখাচোখি হলো পাশের বিল্ডিং এ থাকা সুঠামক দেহের অধিকারী গম্ভীর পুরুষটির সাথে৷ অগোছালো এলোমেলো আর শান্ত, শীতল দু জোরা চোখের মিলন হল৷ দৃষ্টি যেন আরো শীতল হলো পুরুষটির৷ কিয়ৎক্ষণ কাটলো৷ একজন লজ্জায় চোখ নামালো আরেকজন শীতল চোখে তাকিয়েই রইলো৷ সেই চোখ বড়ই বেহায়া বেপরোয়া৷ এ চোখে তাকানোর সাধ্য কারো নেই৷
মেঘলা দ্বিধায় পরলো ভাবলো যাবে নাকি৷ তবে শরীর যেন বিন্দু মাত্র সায় দিলো না৷ এক পা ও নড়তে পারলো না৷ বের হয়ে যেতে পারলো না৷ তবে দোলনায় বসলো সাথে আড় চোখে দেখলো ও এক জোড়া শীতল চোখ দেখছে তাকে৷
হৃদস্ফন্দন বাড়লো মেঘলার৷ গা হীম ধরলো গলা কাটকাট হয়ে এলো৷ মেঘলা উঠবে ঠিক তখনি শীতল কন্ঠ কর্ণপাত হলো,
“এক পা ও নড়বেন না মেয়ে৷ যেখানে আছেন সেখানেই দাড়িয়ে থাকুন৷ ”
আকস্মিক এমন কথায় ভরকালো মেঘলা৷ বোধগম্য হলো না কিছু৷ প্রশ্নাত্মক হয়ে রইলো৷ লোকটা বলছে কি? যাবে না কেন? সমস্যা কি এই লোকের? হুট হাট কি হয় সে নিজে জানে তো? এ অদ্ভুত লোকের পাল্লায় পরলো যে কি করে৷
ঘণ নেত্রপল্লব ঝাপটালো মেঘলা৷ কাচুমাচু খেয়ে বললো,
“কেন?”
শোভন শরীরে থাকা পাতলা ফিনফিনে সাদা বক্সার গেঞ্জিটা খুলে ফেললো৷ শীতেও শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে৷ মাথা নিচু করে ফেললো লজ্জায়৷ লোকটা বাইরে থেকে মর্নিং ওয়াক করে এসেছে বোঝাই যাচ্ছে৷ লোকটা ফর্সা ব্যাপক৷।
মেঘলার প্রশ্ন অপছন্দ হলো শোভনের৷ মেয়েটা সব কিছুতে প্রশ্ন করবেই৷ শোভন বললো,
“বেশি বলেন মেয়ে আপনি! আমি যতক্ষণ এখানে আছি চুপচাপ বসে থাকবেন৷ ”
আরেক দফা অবাক হলো যেন৷ সাজ সকালে এ লোকের সাথে সাক্ষাৎ হলো কেন তার? মেঘলা গেলো না আর ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো৷ কেন দাড়ালো বুঝলো না৷ কেন এ লোকের কথা শুনলো তাও বুঝলো না কেন শুনলো? দাঁড়িয়ে রইলো দৃষ্টি নিচু করে৷
সে কেন বলতে পারলো না আপনার কথায় আমি দাড়াবো কেন? কিন্তু বললো৷ দাঁড়িয়ে রইলো এক কোণে নিরবে৷
মৃদু মন্দ হাওয়া বইছে৷ হাওয়ার তালে চুল গুলো ও বেশ জ্বালাচ্ছে৷ শীতের হাওয়াও এতটা মনরম লাগছে৷
ভার বার সামনে থাকা চুল গুলো মুখে আছড়ে পরছে৷ ছুয়ে দিচ্ছে ললনার ললাট, আদল৷
এতে যেন অতি মাত্রায় বিরক্ত সে৷ বিরক্ত হয়ে চুল সরিয়ে দিচ্ছে তবুও বার বার আসছে সামনে৷ অদুরে বারান্দায় থাকা পুরুষটি এদিক পানে তাকিয়েই পুষ আপ দিচ্ছে আর অপলোকে চেয়ে আছে৷
ইচ্ছে করে যেন মেয়েটাকে বিব্রত করছে বেশি বেশি৷ মনে মনে একটাই বাক্য এলো মেঘলার “অসভ্য পুরুষ, নির্লজ্জ পুরুষ ”
বিরবির করতে দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো শোভন৷ বোকা মেয়ে! মেঘলা এবার অতিমাত্রায় বিরক্ত হয়ে চুল গুলো হাতে প্যাঁচিয়ে হাত খোপা করবে ঠিক তখনি উঠলো শোভন বললো,
“চুল বাঁধবেন না মেয়ে৷ ”
সাথে সাথেই চুল টা ছেড়ে দিলো মেঘলা৷ বোকা বণে গেলো৷ এ লোকের আজ কি হয়েছে? অসুখ করেছে নাকি? আজ এত শীতল আচরণ সুন্দর করে কথা বলছে৷ ব্যাপার কি? সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ অস্বস্তি হচ্ছে বেশ৷ জড়তারা বিনা নিমন্ত্রণ এ জায়গা করে নিচ্ছে৷ লোকটার এমন অস্বাভাবিক আচরণ স্ফ্য হচ্ছে না মেঘলার৷ হজম করতে পারছে না যেন৷ কি আশ্চর্য!
লোকটা পণ করেছে আজ তাকে লজ্জায় মারবে৷ তারপর মৌনতার সাথে সন্ধি আটলো৷ টু শব্দ টুকু করলো না৷ তারপর বেশ সময় পার হলো আজ আর কুয়াশা কাটলো বেলা গড়ালো৷ শোভনের বেয়াম করা শেষ হলো৷ বেশ খানিক্ষন বাদ ডাক পরলো মেঘলার৷ অহনা ডাকছে মেঘলা চিৎকার করে “আসছি” বললো৷
এবার শোভনের পানে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,
“আমি যাই?”
শোভন শরীর মুছতে মুছতে ভ্রু কুঁচকে তাকালো৷ কি জানি কি ভাবলো৷ দুষ্টু হেসে বললো,
“যাবেন তো আমার থেকে পার্মিশন এর কি আছে? আমি কি আপনাকে থাকতে বলেছি নাকি?”
চোখ বড় বড় করে তাকালো মেঘলা৷ লোকটা কি ধুরন্ধর অস্বস্তিতে ফেললো মেঘলা কে৷ লোকটাই তো বললো৷ লজ্জায় মেঘলা কিছু বলতে পারলো না৷ চোখ মুখে আধার নামলো৷ এ লোকের সামনে আর সে ভুলেও আসবে না৷ আসবে না মানে আসবেই না, লোকটা কি কৌশলে তাকে অপমান করছে৷ লজ্জায় ফেলছে৷
আর দাড়ালো না৷ থমথমে মুখে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো এখান থেকে৷
।।
ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাজ বারবার পাইচারি করছে৷ অগোছালো এলোমেলো অবস্থা দাড়ি গুলো অযপ্তনে বড় হচ্ছে৷ চুল ও বেশ উষ্কখুষ্ক৷ কতদিন যেন নির্ঘুম কাটিয়েছে৷ চেহারায় মলিনতার ছাপ স্পষ্ট৷
দ্বিপ্রহর চলছে৷ শীত অনেকটা আজ৷
বেশ অনেক্ষণ বাদ ক্যাম্পাস থেকে বের হতে দেখা গেলো পরিচিত প্রিয় সেই মুখ৷ ভাগ্যবসত আজ মেয়েটা একা৷ মেঘ না চাইতেই যেন বৃষ্টির দেখা মিললো৷ আসমানের চাঁদ মিললো যেন হাতে৷
মেঘলা এদিকে আসতেই এগিয়ে গেলো সামনে দাঁড়ালো৷ এক সপ্তাহ যাবত অপেক্ষার পর মেয়েটা আজ এলো৷
হুট করেই রাজ কে দেখে চমকালো৷ মুখ খানা দেখে আরো চমকালো৷ এটা সে কোন রাজ কে দেখছে? যে নিজের যত্ন এত নিখুঁত ভাবে করে তার একি অবস্থা৷
মেঘলা দাঁড়ালো কেন যেন৷ নিজেই প্রশ্ন করলো,
“আবার কেন এসেছেন আপনি?”
রাজ মলিন চোখে তাকালো৷ খপ করে হাত টা ধরে ফেললো বললো,
“পাখি প্লিজ সিনক্রিয়েট করিস না৷ তোর সাথে আমার কথা আছে৷ আমার কথাতা রাখ পাখি৷ তুই তো আমার সব কথা শুনিস৷ আমি কথা দিচ্ছি আমার কথা শোনার পর আমাকে একটু সময় দেওয়ার পর তুই যা বলবি তাতেই রাজি হবো৷ তুই একটু সময় দে আমায়৷ আমি একটু মানসিক শান্তি চাইছি তারপর তোর সব কথা মেনে নিবো আমি৷ আমার সাথে একটু চল শুধু৷ ”
রাজের এমন আকুতি মিনতিতে দ্বিধায় পরে গেলো মেঘলা৷ লোকটার সাথে তো তার শত্রুতা নেই৷ লোকটা শুধু তাকে ভালোই বেসেছে৷ তা ছাড়া ওদের কাছে মেঘলা অনেক ঋণি৷
মেঘলা হাত ছাড়িয়ে নিলো৷ মিনমিনিয়ে বললো,
“পাগলামো কেন করছেন? কোথায় নিয়ে যাবেন আমায়?”
রাজ শান্ত হলো বললো,
“আমায় ভরসা করিস তো পাখি? আমি মরে গেলেও যে তোকে কিছু করবো না বিশ্বাস করিস তো?”
মেঘলা মাথা নাড়ালো৷ মানে হ্যাঁ, রাজ গাড়ির দরজা খুলে দিলো৷ গাড়িতে উঠলো মেঘলা৷ ওপাশে ঘুরে রাজ ও উঠলো৷ এক জোড়া চোখ কঠিন চোখে তাকিয়ে দেখলো শুধু৷ সামনে দিয়ে শা করে গাড়িটা বেরিয়ে গেলো৷ হাতে থাকা কাঁচের কাপটা চেঁপে হাতেই ভেঙে ফেললো সুঠাম দেহের অধিকারী শোভন৷
চলবে,
#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা
১৬
“আমায় কেন ভালোবাসলি না তুই? আমায় এন ভরসা করলি না? এই এত বছরেও আমার প্রণয় তোর মন কে কিঞ্চিৎ ও বিগলিত করেনি? তোর অতল স্পর্শ করেনি? আমি কি তাহলে ব্যার্থ এক মানুষ? ”
কর্ণপাত হলো মেঘলার সুঠাম দেহী এক প্রেমিক পুরুষের দূর্বল কন্ঠের কথা৷ বারংবার গলা ভেঙে আসছে লোকটির তবুও কি নিদারুণ চেষ্টা চালাচ্ছে কান্না গুলোকে আটকে রাখার৷ শত হোক পুরুষ মানুষ তো৷ পুরুষ মানুষের কি সময় অসময় চোখের জল ফেলতে হয়?
তারা হবে শক্ত প্রকৃতির না হয় লোকে হাসবে না? মন্দ বলবে না লোকে? তবুও অবাদশ জল কি আর কারণ বারণ মানে? টুপ টুপ করে দু-ফোটা গড়িয়ে পরলো মেঘলার হাতের উপর৷ যে হাত টা শক্ত করে ধরে আছে মেঘলা৷
সাথে সাথেই পুরুষটি সে জল কনা মুছে নিলো৷ হাত আকড়ে ধরে বেশ আশা নিয়ো প্রিয় নারীটির দিকে৷ যদি কিছু বলে৷
কত আশা সে চোখ জুরে কত স্বপ্ন৷ আকাঙ্খা, ভালোবাসা, মায়া৷ এক আকাশ আকাঙ্খা নিয়ে দাঁড়িয়েছে সব ছেড়ে ছুরে প্রিয় মানুষটিকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খা৷ মেয়েটি কি জানে না ছেলে টা যে সে চাইলে সব ছেড়ে দিতে পারবে৷ সব তোলপাড় করে দিতে পারবে৷
মেয়েটা তবুও কেন ভরসা করে না? তবুও কেন বোঝেনা এ অসীম ভালোবাসা৷
কত যত্ন করে আগলে রাখলো৷ যত্ন করে ভালোবাসলো৷ মেয়েটাতো শুধুই তার ভালোবাসা না৷ স্বপ্ন, শখ!
এ পৃথিবী এমন কেন? কেন ভালোবাসা পাওয়া এত কঠিন৷ কেন সব কিছু এই ভালোবাসার বিরুদ্ধেই থাকে? কেন? এতই যখন কারণ বারণ তাহলে কেন মায়া হয়? তাহলে কেন ভালোবাসা হয়? তাহলে কেন অনুভুতিরা পাখা মেলে? এ অসুখ কেন হয়?
এত অসুখেই কেন সুখের সূচনা? এত অসুখেই কেন মানুষ সুখ খোঁজে?
এত অসুখেই মানুষ সুখ হাতড়ে বেরায়৷ তারপর যখন সুখের দেখা মেলে না লাশ হয়ে ঘুরে বেড়ায়৷ মানুষ মূলত লাশ হয়ে বাস করে!
প্রকৃত সুখি মানুষ ক-জন আর? অসুখ যে আমাদের নিত্য বন্ধু৷ সুখ যে দামি বড়ই৷
মেয়েটা এখনো চুপ করে আছে৷ আর এ নিরবতা প্রতি সেকেন্ড রাজের বুকে তীর হয়ে বিঁধছে৷ কেন এ মৌনতা? কেন মেয়েটা বলছে না চিৎকার করে৷
“না রাজ ভাই তুমি ব্যার্থ না৷ আমি তোমায় ভালোবাসি৷ তোমার মতই তোমায় ভালোবাসি৷”
মেয়েটা চুপ থেকে কেন তার ব্যাধি বাড়াচ্ছে? এবার বোধহয় দেহ থেকে প্রাণ খানাই খোয়াবে? রাজ ফের বললো,
“আমায় মেরে ফেলতে চাইছিস? তাহলে শান্তি অয়াবি তুই? তাহলে সরাসরি মেরে ফেল না? কেন এমন যন্ত্রণা দিয়ে ধুকে ধুকে মারছিস?”
মেঘলা মাথা তুলে তাকালো৷ ফের মাথা নত করলো৷ সে চোখে তাকানোর সাহস নেই তার৷ সে কিছু না করেই কেন যেন অপরাধী হয়ে যায় সবার কাছে৷ তার ও যে আবেগ অনুভূতি আছে মানুষ কেন বোঝে না? শুধু নিজের ব্যাপার নিয়েই টানা হ্যাঁচড়া করে তাকে৷ কেন?
সে ও তো মানুষ৷ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো মেঘলা৷ সে দীর্ঘ শ্বাসে যেন ছিলো হাজার হাজার অভিমান, অভিযোগ এবং লুকানো কথা৷ ক্লেশের কথা৷
মেঘলা এবার বললো,
“আপনি ব্যার্থ নন রাজ ভাই! ব্যার্থ আমি৷
আমি মানুষ হিসেবে ব্যার্থ, আমি নিজের কাছে নিজে ব্যার্থ৷ আমার নিজস্বতা নেই কোনো তাই না? আমি শুধু সবার কথা শুনেই যাবো! সবার কথা পালন করেই যাবো৷ আমারো যে কিছু কথা থাকতে পারে তা তো আপনারা জানবেন না? তা তো ভাববেনই না তাই না?আমি তো মানুষ না পুতুল মাত্র৷
ছোটো বেলা থেকে শুধু আপনাদের কথাই মেনে গেলাম শুনে গেলাম৷ আমার মায়ের শেষ সময়ের স্মৃতি ছিলো ওই বাড়িটা৷ শত কষ্ট, শত অবহেলার পর ও ছাড়িনি কখনো৷ সেখানে আমি আমার জন্মদাতার পালটে যাওয়া দেখেছি৷ সবার আদুরে আমি সবার চোখে কাটা হতে দেখেছি বিরক্ত হতে দেখেছি৷সে বাড়ির মেয়ে থেকে নিজেকে আশ্রিতা হতে দেখেছি৷ তবুও ছাড়িনি সে বাড়ি আমি৷ দাত কামড়ে পরে ছিলাম৷
একটা সময় এসে পড়াশোনাও নিজের খরচেই চালাতে হয়েছে৷ হ্যাঁ আপনি দিতে চাইতেন আমি নিতাম না৷ কেন নিবো? আপনাদের কাছে আমিতো আশ্রিতা! এসব কিছুর পর ও ছিলাম সে বাড়িতে৷
কারণ সে বাড়িতে যে আমার মায়ের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে৷ আমার মায়ের সে নিশ্বাস এখনো আমি অনুভব করি৷ মমতা অনুভব করি৷মায়ের গন্ধ পাই! কিন্তু সে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলো সবাই৷ আমি তো কখনো চাইনি আপনাকে ভালোবাসতে৷
এইযে আপনি আমায় দোষী বানাচ্ছেন আমি বলিও নি আমায় ভালোবাসুন৷ এ ভয়ে দূরে দুরেও থেকেছি আপনার৷ নিজের অনুভূতি কে মাটি চাপা দিয়ে আমি দূরে সরে ছিলাম৷ কিন্তু তবুও আপনি নিজের জেদ বজায় রাখলেন৷
আপনাকে দোষারোপ করছিনা৷ ভালোবাসা দোষের না৷
কিন্তু সব মানুষ ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না৷ আপনি ভুল মানুষ কে বেছে নিয়েছেন ভালোবাসার জন্য৷
আমি যে অপরাধী ভাবি নিজেকে৷ তবুও আমি চেয়েছি আপনার পানে হাত বাড়াতে পরক্ষণেই আমার জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছে সবাই৷
বড় চাচির মাথা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞ করেছি আপনার থেকে দূরে থাকবো৷ সে বিশ্বাস না করে আমার পড়া লেখা বন্ধ করে বিয়ের ব্যাবস্থা করলো তাও দু-দিনের মাঝে৷
বিয়েতো মেয়েদের করতেই হয় রাজি ও হলাম আমি৷ পরে জানতে পারলাম৷ আমার বাবা আমায় টাকার বিনিময়ে বিয়ে দিচ্ছে৷ আমিতো জিনিস না বলুন? পন্য না৷ কেন আমায় টাকার বিনিময়ে বিয়ে করতে হবে? তাইতো এত স্মৃতি ছেড়ে অবশেষে বাড়ি থেকেই চলে এলাম৷ ভাবলাম আমার মায়ের সব থেকে বড় স্মৃতিই তো আমি৷ তার অস্তিত্ব! এখন আমার উচিত নিজেকে ভালো রাখা৷ আফসোস এটা যদি আগে বুঝতাম৷
এবার আর আমি আপনার হাত ধরে ও বাড়িতে যেতে চাই না৷ তা ছাড়া বড় চাচি কে কথা দিয়েছি আমি৷ সে আমায় ভালো না বাসুক আমিতো বাসি৷ আমি তার কথার খেলাপ করতে পারবো না রাজ ভাই৷ আপনি অনেক ভালো মানুষ আপনি আমায় বিশেষঅনুভব করার জন্য অনেক কিছু করেছেন৷ আপনি ভালো কাউকে ডিজার্ভ করেন”
কথা শেষ করলো মেঘলা৷ নিরবে তাকিয়ে শুনলো শুধু রাজ৷ মেয়েটা কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলাও শিখেছে৷ গুছিয়ে কষ্ট দেওয়াটাও শিখেছে৷ যত যাই বলুক তাকে অন্তত মানাতে পারবে না৷ সে কেন মানবে? ও তো ভালোবাসে এটা হলো সব থেকে বড় কথা৷
রাজ নির্লিপ্ত হয়ে তাকিয়ে রইলো অতঃপর বললো,
“কিন্তু আমি যে তবুও তোকে চাই, তুই তো ও বাড়িতে যেতে চাচ্ছিস না?কথা দিচ্ছি পাখি ওই বাড়িতে আমি তোকে নিয়ে যাবো না৷ আর আমার মা কে কি কথা দিয়েছিস না দিয়েছিস ওসব আমি তো মানবো না৷ কেন মানবো? ওনাকে কেন তুই আমায় ছাড়ার কথা দিবি? আমি দূর্বলতা দেখাচ্ছি তাই ভাবিস না আমি দূর্বল৷ আমি তোকে ভালোবাসি মানে তুই আমার৷ ”
মেঘলার রাগ বাড়লো৷ লোকটা তো বলেছিলো ও বলবে শুনবে৷ শুনছে না কেন? মেঘলা বললো,
“আপনি চাইলেই তো হয়ে যাবে না৷ আমি চাই না আপনাকে৷ আপনি বলেছিলেন আপনার কথা শুনতে আমি শুনেছি এখন আমি যাবো এখান থেকে৷ আমায় যেতে দিন!”
রাজ এর মুষ্টি শক্ত হলো৷ মেয়েটার এত তেজ আসে কোথ্যেকে৷ হুট করেই এসে মেঘলার মুখ চেপে ধরলো৷ বললো,
“সাহস বেড়েছে তাই না? খুব সাহস হয়েছে? আমাকে চাইছিস না? কিন্তু আমি যে তোকে চাই৷ কি ভেবেছিস তুই বলবি আমি শুনবো? তুই বলবি আমি চাইনা আমি শুনে নেব? আমাকে কি বিরহী প্রেমিক মনে হয়? যে তোর কথা শুনে আমি নিরবে সরে যাব? বলবো তোকে আমি দূর থেকেই ভালোবাসবো? তোর জন্য প্রার্থনা করব ভালো থাকিস ? আমি ছাড়া ভালো থাকবি এটাতো আমি চাই না৷ তুই একান্ত আমার৷ তোর আমার সাথেই থাকতে হবে৷ ভোর ভালোটা শুধু আমার সাথে হবে আমি তোকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারবো না তুই তো আমার তুই শুধু আমার কথাটা কান খুলে শুনে মাথায় ঢুকিয়ে রাখ৷আমি তোর কথাও শুনবো না তোর মামার কথা ও শুনবো না আমি তোর কথাও শুনবো না, তোর মামার কথা ও শুনবো না৷ আমি আমার সময় মত তোকে আমার কাছে নিয়ে আসবো নি আজ যেতে দিচ্ছি৷ ”
চলবে