অতঃপর প্রণয় পর্ব-১৯+২০

0
166

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা

১৯

“বলো মা কবুল?”
ভার শীর নিয়ে মাথা তুললো মেঘলা৷ মাথার উপর যেন ভাড়ি কিছু রেখে দিয়েছে কেউ এমন লাগছে৷ চোখ পিটপিট করে চাইলো মেঘলা৷ ঠিক তখনি কর্ণপাত হলো ভয়ংকর এই শব্দ খানা৷বুঝতে অসুবিধা হলো শুরুতে৷ আকস্মিক চমকালো৷ চোখ মুখে বিস্ময় ছড়িয়ে পরলো৷ অবাকে চরম শীর্ষে পৌছে গেলো যেন৷

আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো সে সোফায় শুয়ে আছে তার চারোপাশে সবাই৷ তড়িৎগতিতে উঠলো মেঘলা৷ ভুত দেখার মত চমকে উঠলো৷
কি হচ্ছে কি বোধগম্য হলো না৷ তার সামনেই চেয়ার টেনে বসে আছে টুপি পরা একটা লোক৷ তার পাশেই শোভন৷ চোখে মুখে বাঁকা হাসির রেশ৷ অদুরেই মামা মুখ কালো করে বসে আছে৷ ওর মামিও তার পাশেই৷ অহনা সিক্ত চোখ দাঁড়িয়ে আর আহসান সাহেব বাকিরা ও বসে৷ কি হচ্ছে কি সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷

মস্তিষ্ক শূন্য৷ অতঃপর হুট করেই একটু আগের কথা স্মরণে এলো মস্তিষ্কে চাপ দিতেই৷ পরক্ষণেই মনে পরলো
শোভনের বাবা আহসান সাহেব বললেন,
“এত রাতে আসায় সবাই বিব্রত বুঝতে পারছি আমি৷ কিন্তু আমি হেল্পলেস৷ আমি কাল ঠান্ডা মাথায় আসতে চেয়েছি কিন্তু ছেলেটা মানতে নারাজ৷ ওকে তো চেনেনই৷ না অএরে এখনি আসলাম৷ আফতাব সাহেব আমি আপনার ভাগ্নীর হাত চাইছি আমার ছেলের জন্য৷ দয়া করে না করবেন আফতাব সাহেব নয়তো এ ছলে তুলে নিয়ে বিয়ে করবে৷ আমি প্রস্থাব নিয়ে না৷ আমি সোজাসুজি মেয়েটাকে আমার মেয়ে করার জন্য চাইতেই এসেছি৷”

তখনি মেঘলার চোখে আধার নামলো, নিমেষে মস্তিষ্ক শূন্য হলো৷ ভাবতে পারছিলো না যেন কিছু৷ চোখে মুখে আধার নামলো তখনি৷ ভীত হলো৷ ঠিক তখনি জ্ঞান হারালো মেঘলা৷ তারপর কি হয়েছে তা আর মনে নেই মেঘলার৷
ঘুম থেকে উঠেই দেখছে এ অবস্থা বুঝতে কষ্ট হলো না টুপি পরা লোকটা যে কোন কাজই কিন্তু হচ্ছে কি এসব৷ হুট করে এমন বিয়ের তোড়জোর কেন লোকটা কি চাচ্ছে? সে তো মনে করতে লোকটা তাকে পছন্দই করে না তবে কি হলো হুট করে এত রাতে? রাজ এসেছিল তারপর কি হলো সব যেন ঘোলাটে লাগছে আবার৷ রাজের সাথে হুট করেই কি হলো?
এত রাতে বিয়ের কোথায় বা কেন? লোকটা কি পাগল হল? সবকিছু মস্তিষ্কের উপর দিয়ে যাচ্ছে ভাবতে পারছিনা কিছু বুঝতেও পারছে না৷

ভাবনার সুতো কাটলো ফের কাজির কথায়,
“বলো মা কবুল?”

এর মাঝেই শোভন বিরক্ত নিয়ে বললো,
“আহা কাজি সাহেব দ্রুত বলেছি তাই এত দ্রুত? আমার বউকে একটু শান্ত হলে দিন৷ বেচারী মাত্র চোখ খুললো৷ বউ তুমি আস্তে ধীরে কবুলটা বলে দাও তো৷”

শোভনের এহেন কথায় চমকালো মেঘলা৷ বললো,
“কি বলছেন কি? মাথা খারাপ হয়েছে আপনার? নাকি নিশিতে পেয়েছে৷ মামা ত তুমি কিছু বলছো না কেন?”

এর মাঝেই শোভনের বড় ভাই বিরক্ত নিয়ে বললো,
“ভাই একটু লজ্জা রাখ৷ এক তো এত রাতে এসব কান্ড ঘটালি এখন আবার মেয়ে টা কে চাপ দিচ্ছিস৷ তোর মাথা পুরোই গেছে৷ তোকে আর বোঝানোর মত কিছু নেই৷ মেয়েটা পরিস্থিতি বুঝতে দে একটু৷”

শোভন বললো বিরক্ত হয়ে,
“তোর লজ্জা আছে ভাই আমার নেই৷ ছেলেদের এত লজ্জা কিসের? পরিস্থিতি বুঝবে কেন? কবুল বলতে বলা হয়েছে ছোটো একটা শব্দ ও বলে দিলেই তো শেষ হয়ে যায় সব ঝামেলা৷”

মেঘলার সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে যেন৷ মাথা ভনভন করছে৷ কি থেকে কি হচ্ছে?

ছিটকে সরে গেল মেঘলা কম্পিত কন্ঠে বলল,
“কি হচ্ছে কি এখানে এসব? মামা কি হয়েছে এখানে উনার এখানে কি করছে এখনো কি বলছি এসব৷ আমাকে কিছু বলো প্লিজ৷ আপু তুই অন্তত বল এসব কিন্তু আমার ভালো লাগছে না৷ ফাজলামো হচ্ছে এখানে? ”

অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো অহনা তাই কিছু বলার নেই কি বলবেই বা সে? তার মস্তিষ্ক ও শূন্য৷ সে তার হবু বরের দিকে অভিমানী চোখে তাকালো৷ অহনা চুপ রইলো৷ মেঘলা আবার প্রশ্ন ছুড়লো,
“মামা তুমি বলো? কি বলছে ওরা৷ আর উনি কি করে এখানে? কিসের বিয়ে হচ্ছে কি ভলছে?”

আফতাব সাহেব উঠলেন৷ ভাগ্নীর কাছে এলেন৷ মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“মা আমার একটা কথা রাখবি? প্লিজ! মামার আবদার মনে করতে পারিস৷ আমি তোর কাছে আজ হাত পাততে এসেছি৷”

মেঘলা টইটম্বুর চোখে তাকালো মামার দিকে৷ কম্পিত গলায় বললো,
“ক কি?”

আফতাব সাহেব বললেন,
“বিয়েটা করে নে মা৷ কারণ জিগ্যেস করিস না দয়া করে৷ মামার কথাটা রাখ মা৷”

বিস্মিত হলো মেঘলা৷ চমকালো থমকালো৷ শুকনো ঢোক গিললো কি বলছে কি মামা? হুট করে কি হলো? কিন্তু এভাবে তো সে বিয়ে করতে পারবে না৷ এভাবে বিয়ে হয়?তা ছাড়া ওর পরিচয় জানলে ওরা নিজেরাই ওকে পছন্দ করবে না৷
মেঘলা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
“আমি তোমার কথা রাখবো মামা, তবে আমার কিছু কথা আছে৷ ”

আফতাব সাহেব শোভনের পানে তাকালো৷ শোভন বললো,
“বিয়ে হলে তোমার সব কথা শুনবো৷ বিয়েটা শেষ হোক আগে৷”

আফতাব সাহেবের মস্তিষ্ক শূন্য৷ সে জানে নিসন্দেহে শোভন ভালো ছেলে৷ অত্যন্ত ভালো ছেলে এমন পাত্র কে না চায়? তবে শোভনের এ হুট হাট পরিকল্পনা গুলো ভালো না পছন্দ হচ্ছে না৷ এর কারণ অবশ্য দে এখনো জানেন৷ তবে শোভনের উপর তার রাগ৷ এই পতগটা ভুল মানুষ কে চাইলে এমন করে চায় কেউ? ভাগ্নীর কাছে তার মাথা হেট হয়ে গেছে৷
স্বার্থপর মনে হচ্ছে নিজেকে৷ একটু আগের কথা মনে পরতেই শোভনের প্রতি রাগ হচ্ছে৷ আহসান সাহেব যখন বিয়ের কথা বললো৷ মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পরলো৷ সবাই ধরাধরি করে শোয়ানোর পর আফতাব সাহেব বলেছিলো,
“এত রাতে বিয়ের প্রস্তাব? মেয়েটা সুস্থ হোক৷ হুট করে কিছু হয় না আমি ওর সাথে কথা বলে আপনাকে যানাবো৷”

শোভন তখন বললো,
“ওর মতামতের কি আছে আংকেল৷ আপনি হ্যা বলুন আমি কাজি আনতে পাঠিয়েছি৷ আজই এখনি বিয়ে হবে আমাদের৷”

হুট করে এমন কথায় আফতাব সাহেবের সাথে সবাই চমকেছিলো৷ সবাই বকেছিলো শোভন কে৷ কিন্তু ছেলে নাছোড়বান্দা৷ এক সময় বললো,
“আমি অহনা আর রিফান এর সাথে কথা বলতে চাই৷”
তারপর যখন কথা বলে আসলো আড়ালে৷ শোভন এসে বললো,
“আংকেল আমায় মাফ করবেন, আমার বিয়ে এখন আপনার ভাগ্নীর সাথে না দিলে অহনার আর রায়ানের বিয়েটা হবে না৷ তার সাথে আপনার ভাগ্নীকেও তুলে নিয়ে যাবো তারপরের ঘটনা গুলো সামালা দিতে পারবেন তো?”

শোভনের এ কথায় শোভনের বাবা সজোড়ে চ ড় বসালো ছেলের গালে বললো,
“অহনার বিয়ে আটকানোর তুমি কে? তোমার এ অধ্বপতণ দেখে আমি হতবিহ্বল৷ তুমি আমার অহংকার ছিলে৷ ”

এতেও শোভনের ভাবান্তর হলো না৷ বাঁকা হেসে বললো,
“কিরে রিফান আমি যদি বলি অহনাকে বিয়ে করতে না তাহলে কি আমার বিরুদ্ধে যাবি তুই?”

রিফান বললো,
“তুমি যা বলবে তাই হবে ভাইয়া৷”

অমনি অহনা ভেঙে পরলো কান্না জুড়ে দিলো৷ মেয়ের এই করুণ কান্নায় আফতাব সাহেব রাজি হতে বাধ্য হলো৷ স্বার্থপর হলো৷ এই রাতে শোভন কাজি আনিয়েছে বন্ধুদের দিয়ে৷

“আমার কথাটা শুনুন?”
মেঘলার কথায় ভাবনার সুতো কাটলো আফতাব সাহেবের৷
শোভন হাত ধরলো মেঘলার সোফায় বসিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
“বিয়েটা হোক সব শুনবো৷ কাজি সাহেব শুরু থেকে শুরু করুন৷”
বলে মেঘলার মাথায় ঘুমটা টেনে দিলো শোভন৷ মেঘলা বাকহারা হলো৷ এক রাশ অভিমান নিয়ে কবুল বললো৷ নিজেকে সপে দিলো৷

চলবে,

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা

২০

পরিণয় হলো অদ্ভুত জিনিস৷ “বিয়া” শব্দটা বড্ড ভাড়ি৷ অদ্ভুত ভাবেই দুটি মানুষ কে এক করে৷ সারা জীবনের জন্য আষ্টেপৃষ্টে দেয়৷ আর ভাগ্য আরো অদ্ভুত, কখন কি ঘটে যায় পরিকল্পনার বাইরে সবটা৷
ভাগ্য থেকে পালিয়ে বেরানো যায় আদৌ? যা ঘটার তা ঘটবেই৷ তুমি তার থেকে যতই পিছনে সরে আসো তবুও সে তোমায় তারা করবেই৷
তোমার ভাগ্য তোমার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছে তা ঘটবেই৷ তুমি যেখানে থাকো না কেন৷ তোমার মত অমতের পরোয়া নেই এ ভাগ্যের নিকট৷
এবং সৃষ্টি কর্তার পরিকল্পনা আরো আশ্চর্যজনক! তোমার জন্য কি লিখেছে সে তা তুমি জানতেও পারবে না বুঝতেও পারবে না৷

সে বাড়িতে যে বিশাল ভুল বোঝাবুঝি তে পালিয়ে এলো এত দূর৷ যাকে ভিন্ন ভেবে পালালো৷ সেই তার কপালে লেখা ছিলো৷ সৃষ্টি কর্তা কবে কিভাবে কার সাথে দেখা করায়৷ এবং কেন করায় তা মানুষ বোঝে না৷ তবে এর পেছনে বিশাল ব্যাখ্যা থাকে রহস্য থাকে৷ পৃথিবীতে আমরা মূলত যা দেখি তা কি চোখে দেখা অব্দিই সীমাবদ্ধ? এর পেছনেও রহস্য থাকে৷ তবে সে রহস্য আমরা ধরতে পারিনা৷ বুঝতে পারিনা চোখের দেখা সব এত সহজ না৷ সব কিছুর পেছনে বিশাল হেতু থাকে৷
তবুও এটা যেন মানতে পারছে না মেঘলা, আশ্চর্য ঘটনা৷ এ ঘটনা ঘটতে পারে ভাবতেই পারেনি৷ শুরু থেকে ভাবলো৷ সে বাক বিতর্কের পর রাজি হয়ে ছিলো বিয়ে করতে৷ তারপ কি যেন হলো পাত্র পক্ষ আসার পর বড় চাচার মেয়ে এসে বললো,
“তোর বিয়ে বাবা, চাচা রা একটা বৃদ্ধ লোকের সাথে ঠিক করেছে৷ তোকে টাকার বিনিময়ে বতে দেওয়া হচ্ছে এক প্রকার বিক্রি করা হচ্ছে তোকে৷ আমি তোকে পছপ্নদ না করলেও দিন শেষে তুই আমার বোন তাই জানালাম৷ তুই শিগগিরই পালা মেঘলা৷”

মেঘলার মস্তিষ্ক শূন্য হয়, ঘৃণা হয় সবার জন্য৷ বাড়ি থেকে বের হয়ও বোনের সাহায্যে৷ শুরুতে গিয়ে একটা বন্ধুবীর বাড়িতে উঠলেও তার মা ঝামেলা করে তাই বেরিয়ে আসতে হয়৷
তারপর পথে অদ্ভুত ভাবে শোভনের সাথে সাক্ষাৎ হলো৷ তাকে বাঁচালো দ্যুত এর মত৷ অদ্ভুত ভাবে তার সাথেই পুরোটা পথ আসতে হলো৷ তারপর সেই সুন্দর মুহূর্ত গুলো৷ কমলাপুর নামা অব্দি ভাবছিলো আর দেখা না হোক৷ সে চোখে আর চোখ না পরুক৷
সৃষ্টিকর্তার অদ্ভুত লীলা দেখা হলো আসার পরই৷ চোখে চোখ রাখা হল৷ তবে সে চোখে বিরক্ত দেখে চমকাতো৷ আজ হুট করে কি হলো? রাজের সাথে কি কথা হলো? লোকটাতো রাজের সাথে দেখা করেছে নিচে৷ তারপর? তারপর কেন বিয়ের চিন্তা লোকটার মাথায় এলো? বাকরুদ্ধ মেঘলা৷ আশ্চর্য হয়ে আছে এখনো৷ সাথে ভাগ্যের উপর চরম হাসি পাচ্ছে৷

তার ভাগ্যে যদি এ লোকটাই লেখা ছিলো তখন সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে হলেও তো পারতো? এখন ওকে জোচ্চর ভাববে না ওর বাড়ির লোক? মেঘলা শুধু আশ্চর্য হয় যার সাথে ছেলের বিয়ে দিতে যাচ্ছিলো তাকে কেউ চেনেনা কি করে? শুনেছে ছেলের খালা দেখেই খুব পছন্দ করেছে৷ তবুও এ জুগে এসে এমন ব্যাপার বড়ই আশ্চর্যজনক৷ তারপর কি হবে তা ভেবে হাসি পাচ্ছে৷ নিশ্চিত এ সম্পর্ক আর কেউ রাখতে চাইবে না৷
তার ভাগ্যে এমন তুচ্ছ তাচ্ছিল্যই বেশি আছে৷ এতে চমকানোর কিছু নেই, কষ্ট পাওয়ার ও কিছু নেই৷ কষ্ট আর হয় না এখন৷ খারাপ কিছু হলে স্বাভাবিকই লাগে বরং ভালো কিছু হলে মনে হয় তার সাথে এত ভালো কি করে হচ্ছে? সে খারাপ সময় পার করতে অভ্যস্ত এখন৷ ভালো সময় স্বপ্ন মনে হয়৷
আসলেই স্বপ্ন হয়৷ আফসোস আর হয় না৷ হবে কেন? কেবল সব খারাপ তো তার জন্যই লেখা৷ ভালো কিছু তার জন্য ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷ ভালো সময় পার করাও বিলাসিতা৷ চালচুলো হীন জীবন খাওয়া, পড়া, ছাদ, আর আদর পাচ্ছে মামা মামির এই বিশাল ব্যাপার৷

“আমি আমার বউ কে নিয়ে যেতে চাই আংকেল৷ আশাকরি দ্বিমত করবেন না?”

শোভনের কথায় তাচ্ছিল্য হাসলো আফতাব সাহেব৷ কঠিন স্বরে বললো,
“আমার মত কোনটায় নিয়েছো ইয়াং ম্যান? ”

শোভন তাকালো আফতাব সাহেবের দিকে৷ সব সময় লোকটা ওকে নিয়ে ভালো ভালো বলতো, প্রশংসা করতো ওর জন্য লোকটার চোখে মায়া ছিলো৷ আজ দেখতে পাচ্ছে না তা৷ শোভন তপ্ত শ্বাস টানলো৷ পাশে গিয়ে বসলো আফতাব সাহেবের৷ হাত খানা ধরলো৷ সবাই তখনো নিরব দর্শক৷ মাথা কাটা যাচ্ছে আহসান সাহেবের সে ও আজ কুলুপ এঁটেছেন৷ তার এ ছেলে যে এমন করবে ভাবেনি৷ এ ছেলেকে নিয়ে অহংকার করতো সবার নিকট৷ ছেলে তার অবাধ্য হয় না৷ কিন্তু আজ যা করলো মাঝ রাত্তির থেকে৷ আশেপাশে তখন আজান পরছে৷
আজানের শব্দে কর্ণপাত হতেই মেঘলা উঠলো শূন্য মস্তিষ্কে এখানে থাকতে তার ভালো লাগছে না৷ দম বন্ধ হয়ে আসছে অদ্ভুত রকম মনে হচ্ছে গলা চেপে ধরে রেখেছে কেউ৷

মামাকে দেখে বুঝলো ছেলেটা ওর মামাকে জোর করেছে৷ অত্যন্ত খারাপ কাজ করেছে৷ মামাকে যদিও মেঘলা ভুল বোঝেনি মামা মুখ দিয়ে কিছু বলেছে মানে মেঘলা ডানে বাপে তাকাবে না৷ লোকটা তার সব এ পরিবার তার সব৷

মেঘলা যেতেই ঘাড় ঘুরে তাকাল শোভন কিছুদুর যেতেই মেঘলার কর্ণপাত হলো শোভনের কথা,
“আমায় মাফ করবেন আংকেল, আমি আপনার ভাগ্নীকে বিয়ে করার জন্য পাগলামি গুলো করেছি৷ আমি যখন অহনা আর আমার ভাই এর সাথে কথা বললাম তখনই ওদের বলেছি আমি ওদের বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুলবো৷ আমি সত্যিই তা করতাম না আমি ওকে পাওয়ার জন্য পাত্র এসব বলেছি৷ আমি মেঘলাকে চাই মামা, আমি নিজের সবটা দিয়ে ওকে আগলে রাখবো কথা দিচ্ছি৷ ”

আফতাব সাহেব তাকালেন মেয়ের দিকে৷ মানে মেয়েও জানতো৷ দীর্ঘ শ্বাস টানলো সে৷ বললো,
“তোমাদের এসব উচিত হয়নি৷ আর এ মাঝ রাত্তিরে বিয়ের করে কে এভাবে? বিয়েতে মত অমতের ব্যাপার আছে তো একটা৷ আমার এ মেয়েটা অভাগী ওর মতামতের প্রয়োজন ছিলো৷ এটা ঠিক হয়নি৷”

শোভন আস্বস্ত করে বললো আফতাব সাহেব কে,
“আংকেল আমার উপর ভরসা রাখুন আপনি খারাপ ছেলের হাতে তুলে দেননি আপনার মেয়েকে৷ শুধু একটু সময়ের প্রয়োজন মেঘলাও ঠিক হয়ে যাবে৷ আমি এখন ওকে নিয়ে যেতে চাই আংকেল দয়া করে না করবেন না৷”

অতঃপর বেশ ভাবনা চিন্তার পর রাজি হলো আফতাব সাহেব৷ তবে তার স্ত্রী অসন্তুষ্ট, ওনার পেটের মেয়ে না হোক মেয়ে তো৷ উনি চেয়েছে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে মেয়েটা যাক৷ খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করতে চেয়েছে৷ তবে শোভনের বাবা বলেছে সে শুধু মেয়েকেই নিতে চায় যা হবে তার বাড়িতে হবে৷ তার ছেলের এহেন ব্যাবহারে সে বেশ লজ্জিত সবার কাছে ক্ষমা চাইলেন৷

এবার এলো মেঘলাকে ডাকার সময়৷ অহনার মা বললো,
“অহনা মেয়েটা কে ডেকে আন৷ মেয়টা আমার বটই অভিমানী৷”
চোখ ভরে এলো তার৷ অহনা মেঘলাকে ডাকার জন্য পা বাড়াবে ঠিক তখনি শোভন বললো,
“অহনা? আমি যাই?”

অহনা সম্মতি জানালো৷ শোভন পা বাড়ালো মেঘলার রুমের দিকে৷


মেদিনীতে আলো ফুটছে তখন৷ কুয়াশাচ্ছন্ন সব৷ আজান শেষ হলো একটু আগে মাত্র৷ এক রাতে কি থেকে কি হলো যেন৷ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘলা৷ রুম বারান্দা দুটোই অন্ধকার৷ আবছা আলো শুধু বারান্দা খানা কিয়ৎ আলোকিত করেছে৷ আকস্মিক কারো অবয়ব পরপ্লো বারান্দায় মেঘলা বুঝলো না৷ তারপরই চেনা সুভাষ নসারন্ধ্রে পৌঁলো এক হাতে কেউ আগলে নিলো পেছন থেকে৷ বুক ধুকপুক বাড়লো৷ হৃদস্পন্দন তীব্র গতীতে ছুটছে৷ শ্বাস প্রশ্বাস ভারী হলো নেঘলার৷ ছাড়া পাওয়ার জন্য তোরজোর শুরু হলো ওমনি কর্ণপাত হলো শোভনের কন্ঠ,
“”তোমার তো ছেলে দেখার খুব সখ মেয়ে, আসন্য নির্বাচনের জণ নেতা আমি৷ আমার কাজ তো মানুষ এর সাহায্য করা৷ সে কথা ভেবে নিজেকে তোমার নামে লিখে দিলাম৷ সারাজীবন তোমাকে ছেলে দেখার সুযোগ করে দিলাম৷ এখন এ চোখ শুধু আমাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে৷ আমার এ বিশাল ত্যাগ এবং মানবিক কাজের জন্য প্রথম দিন প্রথম চুমুতো ট্রফি হিসেবে দিতেই পারো৷”

চলবে,