#মায়াকুমারী ❤️
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(২৫/ক)
___________________
সকাল প্রায় সাড়ে আটটা। নাস্তা করতে বসলো সবাই কিন্তু ধ্রুব নেই! বারবার ডাকলেও খেতে আসেনি। নিশু এখনও ঘুমাচ্ছে তাই কেউ জাগায়নি।
“রিনা ধ্রুবর রুমটা গুছিয়েছিস?”
“না যাইতাছি।”
“তাড়াতাড়ি গুছিয়ে রুম পরিষ্কার করে আয়। তারপর মাছ-মাংস ভিজিয়ে রাখ। আর দেখ ফ্রিজে কী কী সবজি আছে!”
“আইচ্ছা।”
নাস্তা খাওয়ায় মনোযোগ দিলো সবাই। শলার ঝাড়ু নিয়ে ধ্রুবর রুমে ঢুকলেন রিনা খালা। দেখলেন ফুলদানীগুলো সব ভেঙ্গে চৌচির! কাঁচগুলো তুলে ফ্লোর পরিষ্কার করে বিছানা গুছাতে নিতেই আচমকা চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি।
“আল্লাহ গো! ছিঃ! ছিঃ! ইতা কিতা কী হইতাছে বাসার মধ্যে!”
চমকান দিলরুবা খাতুন।
“বউ থাকনের পরেও অন্য ছেমরি লইয়া ফষ্টিনষ্টি! ছিঃ! ছিঃ!”
দ্রুত উপরে উঠে এলেন দিলরুবা খাতুন।
“কী হয়েছে রিনা চেঁচাচ্ছিস কেন?”
“এই দ্যাখেন কী অবস্থা! আপনার পুতে অন্য ছেমরির লগে আকাম-কুকাম করছে!”
কান গরম হয়ে গেল দিলরুবা খাতুনের। ব্লাউজ-পেটিকোট এবং অন্তর্বাস ঝুলিয়ে ধরলেন। ঠিক সেই সময় ব্যালকনি থেকে রুমে ঢুকলো ধ্রুব।
“মাথা খারাপ হয়েছে তোর?”
ভ্রু কুঁচকালেন।
“মুই হাঁচা কথা কইলাম! বউ থাকনের পরেও বড় মামা অন্য ছেমরির লগে আকাম-কুকাম করছে! ছিঃ! ছিঃ! আর হেই ছেমরির ছোড ছোড ডেস রাইখা গেছে নিতে ভুইল্যা গেছে গা!”
চট করে ঘুম ভেঙে গেল নিশুর। তড়াক করে লাফিয়ে উঠে রুম থেকে বেরুতেই দেখলো ব্লাউজ-পেটিকোট সহ অন্তর্বাস ঝুলিয়ে ধরে রেখেছে। মুহূর্তেই ঝাপসা হয়ে গেল চোখজোড়া। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো ধ্রুবর।
“হেইদিন একটা ছেমরি আইছিল এগুলা হের ডেস।”
শ্বাস আঁটকে রইলো নিশু। এত খারাপ ধ্রুব! দ্রুত উঠে এলো দ্যুতি। দাঁতে দাঁত চাপলো। চট করে জিনিসগুলো হাতে নিয়ে গোল বলের করে ফেললো! তার পিছু পিছু এলো ধূসরও।
“তোমার লজ্জা করে না খালা কী শুরু করলে?”
“মুই হাঁচাই তো কইলাম।”
“তোমার মাথা বলেছো!”
“এডি ওই ছেমরির আমি জানি। হেই দিন মামার রুমে ঢুকছিল। ডেসগুলা নিতে ভুইল্যা গেছে গা! হায় আল্লাহ ওই ছেমরি খালি গায়ে বাসায় গেছে কেমনে!”
ধ্রুবর চোখে চোখ পড়তেই ঘৃণিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো নিশু। রুমের ভিতর ঢুকে গেল।
“এইসব কী হচ্ছে দ্যুতি?”
“আম্মু এগুলো নিশুর।”
“নিশুর ব্লাউজ-পেটিকোট ওর রুমে কেন?”
আড়ষ্ট হলো দ্যুতি। তার দিকে তাকিয়ে রইলেন দিলরুবা খাতুন।
“মানে,কাল রাতে ইয়ে আরকি..!”
“ওই রুমে ছিল?”
“হুম।”
ভীষণ খুশি হলেন কিন্তু প্রকাশ করলেন না।
“রিনা তোর কি লজ্জা শরম নেই?”
“মুই কী করলাম?”
“সবখানে তোর ফাইজলামি! বিবাহিত ছেলেমেয়ে ঘরে। স্বামীর ঘরে বউয়ের জিনিস না থাকলে কার জিনিস থাকবে ফাজিল একটা! এটার জন্য আনুষ্ঠানিকতা করে চেঁচানোর কী আছে!”
“মুই জানতাম নাকি!”
“তোর গলা মাইকের মতো কেন?”
“কিতা করলাম?”
“অসভ্য একটা! ঘরের ভিতর তিন-চারজন পুরুষ মানুষ আস্তে কথা বলা যায় না! কী ভাববে ওরা ছিঃ! ছিঃ! এইরকম আজেবাজে কথা ছড়ালে তোকে তো আমার বাসায় এক মিনিটও রাখব না রিনা! আজই তোকে কাজ থেকে গেট আউট করে দিব।”
“ছরি!”
“রাখ তোর সরি।”
রাগে গজগজ করে রুমের দিকে পা বাড়ালেন। রুমে ঢুকলো দ্যুতি। বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে নিশু।
“কীরে কাঁদছিস কেন?”
“তোর ভাই একটা জঘন্য!”
“কী করেছে?”
“কাল রাতে আমার সাথে যা করলো তা বাদ কিন্তু এর আগে সে অন্য মেয়ের সঙ্গে! ছিঃ!”
“তোর গায়ে মনে হয় রিনা খালার বাতাস লেগেছে! দু’জনেই ফাউল! ধর তোর জিনিস!”
ছুঁড়ে ফেললো বিছানার উপর।
“নিজের জিনিস নিজে চিনিস না। এত নাটক যখন করবি তো রেখে এলি কেন রাতে?”
বিরক্ত হলো দ্যুতি। চুপসে গেল নিশু।
“যা নাস্তা করে নে ভার্সিটিতে যাব।”
হাত-পা ছেড়ে শুয়ে রইলো নিশু। ব্যালকনির গাছগুলোয় পানি দিলো দ্যুতি। ভেজা শাড়িগুলোর পানি ঝরতেই টান টান করে মেলে দিলো দড়িতে। রুমে ঢুকতেই দেখলো নিশু কেমন করে শুয়ে আছে। হাত ধরতেই দেখলো ঠাণ্ডা হয়ে আছে।
“নিশু কী হয়েছে?”
“দূর্বল লাগছে!”
“অহেতুক তুই টেনশন করিস। অথচ প্রতিটি ঘটনাগুলো চাইলে তুই নরমালভাবে নিতে পারিস। টেনশন করে,ওভার রিয়েক্ট করে আদোও কোনো লাভ হয় তোর বল! হসপিটালে যাবি?”
নীরব রইলো নিশু।
“হসপিটালে চল। বাথরোব পরে আছিস সেই রাত থেকে।”
রুম থেকে বেরুতেই দেখলো ধূসর নিচে যাচ্ছে।
“ভাইয়া শোনো।”
“কী?”
“ওকে হসপিটালে নিয়ে যাও। অসুস্থ হয়ে পড়েছে।”
“কী হয়েছে আবার?”
“দূর্বল হয়ে পড়েছে!”
রুমে ঢুকলো ধূসর। কপালে হাত রাখতেই নিভু নিভু চোখে তাকালো। শরীরে জ্বর এসেছে।
“খারাপ লাগছে?”
তাকিয়ে রইলো নিশু।
“হসপিটাল যাবি?”
কিছু বললো না।
“রেডি হয়ে নে তোরা।”
বেরিয়ে গেল ধূসর। নিশুকে রেডি করে দ্যুতি নিজেও রেডি হলো। বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তার ফুপা লাল টুকটুকে রঙের কিনেছে তার পছন্দের। গাড়িতে উঠতে নিতেই আচমকা শুনতে পেলো,”এটা কি আপনার?”
পিছু ফিরে চমকিত নয়নে তাকালো নিশু। তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রয়েছে তাহমিদ। আমতা আমতা করলো নিশু। ঠিক সেদিনের মতো একটি নুপুর ঝুলিয়ে ধরে রেখেছে। আশ্চর্য! তার নুপুর লোকটা কেন বারবার পাচ্ছে?
“জ্বী।”
কম্পিত হাতে নুপুরটি নিলো। তাকে ধরে রেখেছে দ্যুতি।
“আপনি সিক?”
মাথা নাড়ায় নিশু। নিশুর দিকে তাকালো। মিষ্টি রঙের মণিপুরী শাড়ি পরনে। ঠোঁটে হালকা ম্যাচিং করা লিপস্টিক! সাজ নেই বললেই সারে। কিন্তু চোখ সরাতে পারলো না তাহমিদ। ঠিক সন্দেশের মতো লাগছে নিশুকে। তাহমিদের দিকে তাকায় নিশু। স্যুট-প্যান্ট পরনে। দেখতে মারাত্মক লাগছে! নিসন্দেহে তাহমিদ মারাত্মক সুদর্শন! তাহমিদের শরীর থেকে আসা কড়া কোলনের ঘ্রাণে শ্বাস আঁটকে রইলো। মৃদু হাসলো তাহমিদ।
“লেট হয়ে যাচ্ছে আসছি!”
হাতঘড়িতে সময় দেখে কারে উঠে চলে গেল। ভীষণ বিরক্ত হলো ধূসর। এই তাহমিদ কী শুরু করলো! কী পেয়েছে লোকটা?সে একজন পুরুষ,তাহমিদের দৃষ্টি বুঝে! নিশুর প্রতি মারাত্মক আগ্রহ তাহমিদের।
“কীসের নুপুর পরিস তুই বলতো,তোর পা থেকে খুলে যায় আর ওই লোকটা পায়?”
আমতা আমতা করলো নিশু। সেও তো বুঝতে পারছে না কিছু।
“পরতে না পারলে পরার দরকার নেই। আর একবার তাহমিদ যদি তোর নুপুর পায় তোর খবর আছে!”
থমকায় নিশু। সে-তো ইচ্ছে করে হারায় না। গাড়িতে উঠতেই স্টার্ট দিলো ড্রাইভার। রাগে গজগজ করতে লাগলো ধূসর। উপর থেকে এতক্ষণ দৃশ্যটি দেখলো ধ্রুব। দাঁত-মুখ খিঁচালো। পায়ের মধ্যে নুপুর পড়তে নিতেই দেখলো দুটোই আছে। তাহলে এটা কার? ভালো করে দেখলো নিশু। একই রকম ডিজাইন নয় তবে প্রায় কিছুটা কাছাকাছি! কিন্তু ভীষণ সুন্দর! কার নুপুর তাকে দিলো তাহমিদ?দেখতেই বুঝা যাচ্ছে একেবারেই নতুন! আতঙ্কিত হয় নিশু। তাহমিদের মনের ভিতর কী চলছে! ভীতসন্ত্রস্ত হলো নিশু। ধূসরকে বলা যাবে না। বললে তাহমিদের সঙ্গে মারপিট করবে। তারচেয়ে বরং কাকতালীয় ভাবে ছাঁদে দেখা হলে সে দিয়ে দিবে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
_______
চলবে~
ঘুমু ঘুমু চোখে মাথাব্যথা নিয়ে পর্বটা লিখলাম। জানি না কেমন হয়েছে! রেসপন্স করবেন সবাই।