#সাহেবা
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
____
২৯.
সারাদিনের ক্লান্তিতে সাহিত্যের জ্বরটা আবার বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কারোরই তেমন খাওয়া হয়নি। তাই সাহিত্য ঔষধও খায়নি। বাড়ির সবার অবস্থা মোটামুটি খারাপ তবুও বাড়ির বউরা মিলে রান্না-বান্না শেষ করে। সাইরাহ্ হাতের কাজ সব শেষ করে এসে দেখে সাহিত্য চোখের ওপর হাত রেখে শুয়ে আছে৷ এমন অসময়ে তাকে শুয়ে থাকতে দেখে সাইরাহ্-র সন্দেহ হয়। কোনো কথা ছাড়া-ই সে এসে সাহিত্যের কপালে হাত রাখে। আকস্মিক হওয়ায় সাহিত্য চমকে চোখের ওপর থেকে হাত সরায়। তবে তাকে কিছু বলতে না দিয়েই সাইরাহ্ ব্যস্ত কণ্ঠে বলে ওঠে,
‘আপনার তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে! আপনি ডাকেননি কেনো আমাকে? সারাটাদিন কিছু খাননি, ঔষধও খাননি নিশ্চয়?’
সাহিত্য সাইরাহ্-র হাত সরিয়ে দেয়। সাইরাহ্-র কপাল আপনাআপনি কুঁচকে যায়। পরমূহুর্তেই মনে পড়ে গতদিনের ঘটনা। বিষয়টার রেশ যে এখনো কাটেনি তা সে বেশ ভালোই বোঝে। তবে এখন সেসব নিয়ে তর্কের সময় নয়। তাই সাহিত্যের সাথে কথা না বাড়িয়ে সে মাথার কাপড় টেনে ছোটে নিচে। রান্নাঘরে যাওয়ার আগে সুফিয়ার কাছে যায়। সে ভাইয়ের মেয়ের শোকে এখনও কাঁদছে। সাইরাহ্ ইতস্তত করলেও নিচু স্বরে বলে,
‘আম্মা, আপনার ছেলের জ্বর খুব। ডাক্তার কাকা..’
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই সুফিয়া ব্যস্ত পায়ে উঠে দাঁড়ায়। পুরো কথা না শুনেই সিড়ির দিকে যেতে যেতে বলে, ‘সাহিত্যের জ্বর আইছে! আর আমারে অহন কইতাছো? কোনো খেয়াল-ই নাই আমার পোলাডার।’
নিজের মতো বকতে বকতে তিনি ছেলের কাছে যায়। সাইরাহ্ অসহায় চোখে সেদিকে তাকিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে তার শ্বশুর দাঁড়িয়ে আছে। সাইরাহ্ মাথা নিচু করে কিছু বলতে গেলে শেখর সাহপব নিজেই বলেন,
‘আমি ডাকছি ডাক্তারকে। কিছু খেয়েছে সাহিত্য?’
সাইরাহ্ দু’দিকে মাথা নাড়ায়। শেখর সাহেব নিজেই বলেন, ‘কিছু খাইয়ে দাও। ততক্ষণে আমি ডাক্তার ডেনে আনছি।’
সাইরাহ্ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। সে এমনিও নিচে এসেছিল খাবার নিতে। শেখর সাহেব বেড়িয়ে গেলে সাইরাহ্ দ্রুত রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে ঘরে ছোটে। লোকটা একটুও নিজের যত্ন নেয় না। সাইরাহ্ ঘরে এসে দেখে সুফিয়া সাহিত্যের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এতোদিন পর মা-ছেলের মান-অভিমান একটু কমেছে তা ভেবেই তার ভালো লাগে। কাছে গিয়ে নিচু স্বরে বলে,
‘আম্মা, আপনিই খাইয়ে দিন উনাকে। আব্বা ডাক্তার ডাকতে গেছে।’
সুফিয়ার ভাবনা চিন্তা এক ফোটাও পাল্টায়নি। সে সাইরাহ্-র হাতের খাবার না নিজে খাবে আর না নিজ হাতে ছেলেকে খাওয়াবে! তাই সে নিল না খাবারগুলো। উল্টো কড়া গলায় বললেন,
‘নিচে যাইয়া বড় বউ বা ছোট বউ রে কও খাওন দিয়া যাইতে।’
তার কথা শুনে সাহিত্য চোখ মেলে তাকায়। সাইরাহ্-র ওপর তার রাগ, অভিমান, অভি যা-ই থাকুক, সে সাইরাহ্-কে একা ছাড়তে পারে না। এ বাড়িতে সে চুপ মানে তার সাহেবাকে এরা কথার আঘাতে মে’রে ফেলবে। সাইরাহ্ তার দিকেই তাকিয়ে আছে, তা দেখে সাহিত্য উঠে বসে। গলা পরিষ্কার করে বলে,
‘ক্ষুধা লাগছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ দেখবি নাকি খেতে দিবি?’
সাইরাহ্ ‘এক্ষুণি দিতে বলছি’ বলে উল্টো ফিরে যেতে নেয়। সে ভেবেছিলো সাহিত্য হয়তো সুফিয়ার কথাটাই শুনবে এখন তবে সে ভুলে গেছিলো এটা সাহিত্য। তাকে ধমকে ওঠে জ্বর গলাতেই। সাইরাহ্ চমকে পিছে তাকাতেই সে রাগী গলায় বলে,
‘ওগুলো নিয়ে যেতে বলেছি? এদিকে আন।’
সাইরাহ্ একবার সুফিয়ার দিকে তাকিয়ে আরেকবার সাহিত্যের দিকে তাকায়। সুফিয়া রাগী দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার রাগ বজায় রেখে বেশ কর্কশ গলায় বলে,
‘এহনও তোর ওই মাইয়ার পক্ষ নেওয়া লাগবো? আমি যদি খাওনডা পাল্টায়াই আনি তাতে কি এমন অইবো?’
‘আর এই খাবার খেলেই বা কি এমন হবে, আম্মা?’
সুফিয়া জবাব দেয় না। সাহিত্য নিজ থেকেই বলে, ‘সমস্যা খাবারে না, সমস্যা সাহেবাতে। তাই তো, আম্মা? এখন তো ও বিধবা না তাহলে ওকে এখনো বিধবার নজরে কেন দেখেন? নাকি আমারে মৃ’ত মানেন, আম্মা?’
এমন কথায় সুফিয়া তেঁতে ওঠে। মুখে আঁচল গুজে কাঁদতে কাঁদতে অভিশাপ দেন সাইরাহ্-কে। সাহিত্য ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা এলিয়ে দেয়। মানুষ এতোটাও নি’ষ্ঠুর হয়? আজ তো তার ভাইয়ের মেয়েটা মা’রা গেছে অথচ আজও সাইরাহ্-র সাথে এসব করার কি খুব দরকার? সুফিয়া বেড়িয়ে যান। সাইরাহ্ সাহিত্যের ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘এসব নিয়ে এতো তর্ক করার কি দরকার? এসব এখন সয়ে গেছে। জ্বর শরীরে তর্ক না করলেও তো হতো!’
সাহিত্য কোনো জবাব-ই দেয় না। সাইরাহ্ থালা নিজ হাতে নিয়ে নিজেই এক লোকমা খাবার তুলে ধরে। সাহিত্য তা দেখে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,
‘ক্ষুধা নাই।’
সাইরাহ্ শোনে না। হুট করে মুখ চেপে ধরে জোড় করে খাবার ঢুকিয়ে দেয়। সাহিত্য কিছু বলার আগেই সে শাসনের স্বরে বলে, ‘আপনার ক্ষুধা নেই এটা আমি শুনতে চাচ্ছি না। বউ যখন ভালোবেসে খাওয়াচ্ছে, তখন চুপচাপ খেতে শিখুন। নয়তো আমি ক্ষেপে গেলে একদম ভালো হবে না।’
সাহিত্য না চাইতেও তাচ্ছিল্য করে হেসে ফেলে। নিচু স্বরে বলে, ‘ভালোবেসে? বউ?’
সাইরাহ্ শোনে এবং জবাবও দেয়, ‘জ্বি, বউ এবং ভালোবেসেই খাওয়াচ্ছে।’
সাইরাহ্ জোড় করেই সাহিত্যকে সামান্য খাইয়ে দেয়। জ্বর মুখ হওয়ায় বেশি খেতে পারে না। তার খাওয়া শেষ হওয়ার পর পর-ই ডাক্তার এসে হাজির হয়। সাইরাহ্ এক কোণে দাঁড়ালে ডাক্তার সাহিত্যকে দেখে। ঔষধ দিতে দিতে সাইরাহ্-র দিকে তাকিয়ে বলে,
‘তোমার শরীর ঠিক আছে তো?’
সাইরাহ্ মাথা নাড়ায়। ডাক্তার হেসে উঠতে উঠতে বলে, ‘একসময় ‘ও’ তোমার যত্ন করতো, এখন তুমি করো। ভালো রেখো, বুঝেছো! হারিয়ে গেলে কিন্তু তোমারই কপাল পুড়বে।’
ডাক্তার চলে গেলে সাইরাহ্ সাহিত্যের পাশে বসে। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘তার মানে আব্বা যখন আমাকে মে’রেছিল আর আমি জ্বরে ভুগছিলাম তখন ডাক্তার কাকাকে আপনিই পাঠিয়েছিলেন?’
‘বুঝতে একটু বেশিই সময় লেগে গেলো না?’
এমন সময়ও এমন ত্যাড়া কথা শুনে সাইরাহ্ কপাল কুঁচকায়। তবে মাথা একটু এগিয়ে নিয়ে এসে বলে, ‘বুঝতে দিয়েছেন কখনো?’
সাহিত্য তার চোখে চোখ রেখে শুধায়, ‘বুঝতি?’
সাইরাহ্ নড়ে ওঠে। সে সত্যিই বুঝতো না। সে তখন মজে ছিল সীমান্ততে। সে সীমান্তের ভালোবাসার বাহিরে অন্য কাউকে দেখতে পায়নি। তবে যা অতীত তা কেবলই অতীত। এবার সে বর্তমান নিয়ে ভাববে। যতটা সুখী সাহিত্য তাকে করতে চেয়েছে ততটাই সুখ সে তাকেও ফিরিয়ে দেবে।
_
ছন্দের এমন অবস্থা দেখার পর থেকেই তামজীদের মনে শান্তি নেই। বার বার সে বেলীকে হারানোর ভয় পাচ্ছে। বেলীর বিধ্বস্ত মুখটা তার চোখে ভাসছে। সারাটা রাত সে ছটফট করেছে। ঘুমোয়নি একটুও। সকাল হতেই কোনো রকম আগে প্রধানের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বেলীকে দেখার জন্য সে অস্থির হয়ে পড়ছে। কতক্ষণ শুধু পায়চারি করে পুরো রাস্তায়। বেশ অনেকটা সময় বাদে বেলী এসে তার জানালায় দাঁড়ায়। দুজনই দুজনকে দেখতে পায়। এ সময় তামজীদকে এখানে দেখে বেলী একটু অবাকও হয় তবে তামজীদ মনে শান্তি পায়। সে বুঝে যায় সময় হয়ে গেছে এই মেয়েটাকে আপন করে নেওয়ার। সে জানে অনেক বাঁধা-বিপত্তি আসবে তবে সেও এই মেয়েটাকে না পেয়ে ছাড়বে না। তামজীদকে এতো অস্থির দেখে বেলী নিজেও নেমে আসে। তামজীদ তাকে তার দিকে আসতে দেখে মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। বেলী তার সামনে এসে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই হাত ধরে টেনে সোজা হাঁটতে থাকে। বেলী চমকে প্রশ্ন করে,
‘কি হয়েছে, তামজীদ ভাই? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? তামজীদ ভাই!’
তামজীদ যেনো কিছুই শোনেনি। বাড়ি থেকে খানিকটা দুরে এসে দাঁড়িয়েই সে সরাসরি বলে, ‘আগেও বলেছি আমি জানি কিন্তু আজ আবার বলছি। বেলী, বিয়ে করবে আমাকে?’
বেলী হতবাক হয়ে যায়। এই সময়টা কি এটা নিয়ে কথা বলার মতো? মাত্রই গতকাল এতো বড় ঘটনা ঘটে গেছে আর আজ তামজীদ এসে তাকে বিয়ের কথা বলছে? বেলীকে চুপ থাকতে দেখে তামজীদ অস্থির হয়ে বলে,
‘তোমার মনে কী চলছে আমি জানি। কিন্তু আমার মনে কী চলছে এটা তুমি জানো না। আমি তোমাকে হারাতে পারবো না, বেলী। ছন্দকে ওভাবে দেখার পর থেকে আমি জানি না আমার কি হয়েছে! আমি কিচ্ছু জানি না। আমার শুধু তোমাকে লাগবে। তুমি না চাইলেও আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো না। তাই তুমি চাইলেও তুমি আমার, না চাইলেও তুমি আমার। ঠিক আছে?’
তামজীদের এতো অস্থিরতা দেখে বেলী কিছু বলতেও ভুলে যায়। বেলী কি বলবে সে নিজেই বুঝে ওঠে না। তামজীদ ফের শুধায়, ‘ঠিক আছে না, বেলী?’
বেলী মাথা নাড়ায়। তামজীদ কিচ্ছু ভাবে না, কাউকে দেখে না শুধু জাপ্টে ধরে বেলীকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বড় বড় শ্বাস নেয়। যেনো তার প্রাণটাই হারিয়ে যাচ্ছিলো সে নতুন করে ফিরে পেলো। বেলী কি প্রতিক্রিয়া করবে সে ভুলে গেছে। হাত তুলে কোনো রকম তামজীদের পিঠে রাখে। তামজীদ বিড়বিড়িয়ে বলে,
‘আমি তোমাকে হারালে বাঁচতে পারবো না, বেলী। বিশ্বাস করো! আমি তোমাকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছি তা আমি নিজেও জানি না। শুধু জানি তোমার মধ্যে আমার প্রাণটা থাকে। তুমি আমার হবে না ভাবলেও দম বন্ধ লাগে।’
বেলী স্পষ্ট সব শোনে। তামজীদের এতো গভীর অনুভূতিতে সে নিজেও অনুভূত হয়। পুরুষরা বুঝি এভাবেও ভালোবাসে? ছন্দটা এভাবে ভালোবাসা পেলে বোধহয় থেকে যেতো। তাই না?
_
সাহিত্যের সামনে তামজীদ বসে আছে। সকাল সকাল তামজীদকে এখানে আশা করেনি সাহিত্য। গুরুত্বপূর্ণ কোনো কথা থাকলে তারা আগেই কথা বলে নেয়। তবে এমন হঠাৎ আসার কারণটা সাহিত্য বুঝলো না। সে তামজীদের দিকে তাকিয়ে শুধায়,
‘চুপচাপ বসেই থাকবি নাকি নিজের মুখটাও খুলবি?’
তামজীদ গলা পরিষ্কার করে ইতস্তত করে বলে, ‘আসলে..জানি না তুই কিভাবে নিবি কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম..’
চুপ করে যায়। সাহিত্য ভ্রু কুঁচকে তামজীদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করে। দৃষ্টি এদিক ওদিক করা দেখেই সে প্রশ্ন করে, ‘বেলীকে নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিস?’
তামজীদ চমকে তাকায়। তার চমকানো দৃষ্টি দেখে সাহিত্য সহজ গলায় বলে, ‘এতো চমকানোর কি আছে? এতো মানুষের মধ্যে তুই যদি বুঝতে পারিস আমি সাহেবাকে পছন্দ করি, তাহলে তুই তো আমারও বন্ধু। তোর মন বোঝা তেমন বড় কথা না। তাছাড়া আমাদের পেশাটাও ভুলিসনি মনে হয়!’
তামজীদ মাথা নত করে নেয়। নিচু স্বরে বলে, ‘আমি জানি না সীমান্ত কথাটা কিভাবে নেবে! তবে আমি বেলীকে বিয়ে করতে চাই। আর.. তা যত দ্রুত সম্ভব!’
‘এতো তাড়া কেনো? বেলী কি অন্য কোথাও পালাচ্ছে নাকি?’
এ কথার কোনো জবাব তামজীদ দেয় না। সাহিত্য বোঝে তামজীদ সিরিয়াস। তাই সেও নড়ে চড়ে বসে। মুখ গম্ভীর করে বলে, ‘মামা সাহেব কিছু করেছে?’
‘না।’
‘তাহলে? কি হয়েছে? তোকে এমন দেখায় কেন?’
‘জানি না। কাল ছন্দকে ওভাবে দেখার পর থেকে আমি শান্তি পাচ্ছি না। আমার লাগবে ওকে। নয়তো আমিই শ্বাস আটকে ম’রবো।’
তামজীদের অবস্থা দেখে সাহিত্য ঠোঁট কামড়ে হাসে। বন্ধু যে তার গভীর প্রেমে মজেছে তা বুঝতে তার একটুও বাকি নেই। তবে এখন তামজীদের সাথে মজা নেওয়া যাবে না তাই সেও সিরিয়াস ভাবটা ধরে রেখেই বলে,
‘শান্ত হ। গতকাল কেবল ছন্দ মা’রা গেছে এখনই তো বিয়ে সম্ভব না। আর মামা সাহেব কখনোই রাজি হবে না।’
‘তোর মামা সাহেব দুরে গিয়ে ম*রুক। ওই লোকটার জন্য আমি কিন্তু বেলীকে ছাড়বো না। সে ওরা বিয়েতে মত দিক বা না দিক, বিয়ে কিন্তু হবেই।’
সাহিত্য জানে এটা। তামজীদ সম্পর্কে তার ধারণা আছে। দুই বন্ধু একে অন্যকে একটু বেশিই চেনে। প্রধান রাজি না হলেও তামজীদ বেলীকেই বিয়ে করবে। এতে তার যা করার দরকার তা-ই করবে সে। সাহিত্য সামান্য মজা নিয়ে বলে,
‘তা চল, তোর বিয়ের সানাই বাজাই! হাজার হলেও আমার বিয়ে তো তুই-ই করিয়েছিস। একটা দায়িত্ব আছে না!’
তামজীদ পাশ থেকে বালিশ তুলে তার দিকে ছুড়ে মারে। সাহিত্য নিঃশব্দে হাসে৷ দুজনের মাঝে কথায় কথায় সাইরাহ্ আর সীমান্তের কথা ওঠে। সাহিত্য সেদিনের কথাগুলো তামজীদকে বলেনি। বলবেও বা কোন মুখে? তার ঘরের বউ এখনো তার ভাইকে ভালোবাসে? এটা বলবে? বলার মতো কোনো কথা কি এটা? তামজীদ সাহিত্যকে অন্যমনষ্ক দেখে তার বাহুতে হাত রাখে। বোঝানোর মতো করে বলে,
‘অতীতে কি ছিলো তা দুজনেই ভুলে যা। দেখ! কেউ জানুক বা না জানুক আমি জানি, একটা ভুলের দায়ে তুই তিলে তিলে নিজেকে কতটা কষ্ট দিয়েছিস! সাইরাহ্-র জন্য তুই নিজে কতটা কষ্ট পেয়েছিস সবই আমি জানি। সাইরাহ্-রও জানা উচিত তুই তাকে কতটা ভালোবাসিস! কতদিন আর অতীত আঁকড়ে বাঁচবে? এবার তো বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে।’
সাহিত্য ছোট্ট করে ‘হু’ বলে। তামজীদ হতাশ শ্বাস ফেলে বিদায় নিয়ে চলে যায়। সাহিত্য বিছানায় মাথা এলিয়ে দিয়ে ব্যাথা ভরা কণ্ঠে বলে, ‘কিন্তু যে বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে চায় না তাকে কিভাবে বোঝাবো? কিভাবে বোঝাবো কতটুকু ভালোবেসেছি!’
তার জবাব সাইরাহ্ দিয়ে দেয়, ‘বোঝাতে হবে না, বুঝি আমি গোয়েন্দা সাহেব।’
সাহিত্য চট করে চোখ মেলে তাকায়। সাহিত্য দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাহিত্যকে তাকাতে দেখে সে এগিয়ে আসে। সাহিত্যের কাছাকাছি বসে মুখটা এগিয়ে নিয়ে যায়। ফিসফিস করে বলে,
‘আপনার আর আপনাকে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব আমি নিলাম, গোয়েন্দা সাহেব।’
চলবে..