মাতাল প্রেমসন্ধি পর্ব-১১

0
101

#মাতাল_প্রেমসন্ধি

পর্ব: ১১

ক্যাম্পাসের বিশাল মাঠের মাঝখানটায় আধশোয়া হয়ে বসে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে উৎস। পাশেই আবির গম্ভীর মুখে বসা। কারণ উৎস কিছুক্ষণ আগেই তাকে বকাঝকা করেছে।

“আবির।”
আবির সাড়া দেয়না উৎসের কথায়। সে ঠিক করেছে আপাতত সে উৎসের সাথে কোনো কথাই বলবে না।
“নিশানের কথা মনে পড়ে তোর?”
আবির ঈষৎ কেঁপে ওঠে। নিশানের কথা ভোলা কি এ জীবনে সম্ভব?
“হঠাৎ ওর কথা জিজ্ঞেস করছিস যে?”
“গতকাল রাতে ওকে স্বপ্নে দেখেছি।”
ছোট্ট করে কথাটা বলেই উৎস চুপ হয়ে যায়। বিরস মুখে সিগারেটটা দূরে ছুড়ে ফেলে। মুখটা কেমন তেতে আছে তার।
আবির উৎসের কাঁধে হাত রেখে বললো,”কি দেখেছিস?”
উৎস দুই হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে থাকে। আবির বুঝতে পারে উৎস এখন তাকে কিছুই বলবে না। ছেলেটা এমনই, হঠাৎ কোনো একটা কথা বলে চুপ হয়ে যাবে। এরপর শত চেষ্টা করেও তার মুখ থেকে একটা কথা বের করা যাবেনা।

সন্ধ্যা মেলাবে কিছু সময়ের মধ্যে। ভার্সিটির সবগুলো আলো একে একে জ্বলে ওঠে। দূর থেকে মাগরিবের আজানের সুর ভেসে আসছে। পাখিগুলো সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে একসাথে বাড়ি ফিরছে। খুব রহস্যময় পরিবেশ। উৎসের শুয়ে পড়তে ইচ্ছা ফাঁকা মাঠে। মাটির সাথে মিশে যাওয়ার অনুভূতি জানার খুব ইচ্ছা তার। মৃত্যুর পর মিশে যেতেই হবে, কিন্তু সেই অনুভূতি কি কাউকে জানানো যাবে? কেমন হবে সেই সময়টা?

বেশ কিছুক্ষণ এভাবে চুপচাপ কাটে তাদের। অনেকগুলো মোটরসাইকেলের হর্ণের আওয়াজ শুনে চোখ তুলে তাকায় উৎস। মোটরসাইকেল গুলো এদিকেই আসছে। উৎসের ঠোঁটের কোণে ছোট্ট একটা হাসি ফুটে ওঠে।

“কাজ হয়েছে?”
ছেলেগুলো উৎসের মুখোমুখি গোল হয়ে বসেছে। সবার মুখের উপর থেকে কালো কাপড় গুলো সরায় আস্তে আস্তে করে।
“হয়েছে ভাই।”
“ফুল নিয়েছে ও?”
“নিতে চাচ্ছিলো না, ভয়েই শেষ। যেনো আমরা ফুল না, গ্রেনেড ছুড়ে দিচ্ছি।”
উৎস হাসে। আবির তাকায় তার দিকে। দিন যাচ্ছে আর ছেলেটার হাসি ডুমুরের ফুলের মতো হয়ে যাচ্ছে। কদাচিত দেখা গেলে মুগ্ধ হতেই হয়।

“ভাই যদি রাগ না করেন একটা কথা বলতাম।”
উৎস উত্তর না দিয়ে আরেকটা সিগারেট ধরায়। নিজেই মাঝে মাঝে বিরক্ত হয় নিজের উপর। চেইন স্মোকার হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।
ছেলেটা আমতা আমতা করে বললো,”ভাই ক্যাম্পাসের এতো মেয়েরা আপনাকে পছন্দ করে। কোনোদিন পাত্তা দেননি তাদের। কম পাগলামি তো করেনা। চিঠি লেখে, উপহার পাঠায়। সব ফেরত দিয়ে দেন। সেই আপনি একটা সাধারণ মেয়ের মধ্যে কি পেলেন?”
উৎস ঘোলাটে চোখে তাকায় ছেলেটা। ভেবাচেকা খেয়ে ছেলেটা মাথা নিচু করে ফেলে। আবার রেগে যাবে না তো?
“ভাই আমাকে ভুল বুঝবেন না। অবাক হয়েছি একটু।”
উৎস ছেলেটার কাঁধে হাত রেখে বললো,”যার কাছে যার স্বস্তি মেলে, তার কাছেই তার ঠাঁই হোক।”
ছেলেটা অবাক হয়ে উৎসের দিকে তাকায়।
“ও সাধারণ নয় আজাদ, ও অসাধারণ। আমার কাছে ও অসাধারণের চেয়েও অসাধারণ। ও আমার হরিণচোখের প্রেয়সী, আমার রাতজাগা মুহুর্তগুলোর একমাত্র ভাবনা। আমার হৃদয়ের একচ্ছত্র আধিপত্য যেমন তার, আমার মনের একমাত্র মালকিনও সে। এক নারীর জন্য ট্রয় নগরী যেমন ধ্বংস হয়েছিলো, তেমনই এক নারীর জন্যই আমি উৎস প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছি। কেউ তার খবর রাখেনা, ছাপা হয়না কোনো খবরের কাগজে। আমার হৃদমহলের রানী, আমার অনুপমা।”
উৎস থামে, সে নিজেও জানেনা এতোক্ষণ কি বলেছে সে। প্রায় পনেরো/ষোলো জোড়া চোখ হতবাক হয়ে উৎসের দিকে তাকিয়ে আছে, উৎস টেরই পায়নি। ওরা হজম করতে পারছে না।

“কি যেনো বললি আজাদ? ক্যাম্পাসের এতো মেয়েদেরকে আমি কেনো পাত্তা দিইনা? যেখানে এতো সুন্দরী, বড়লোকের কন্যারা আমাকে পেতে চায়, আমি কেনো তাদের দিকে না তাকিয়ে একটা সাধারণ মেয়ের রাগ ভাঙানোর জন্য এতো কিছু করছি।”
আজাদ মাথা নিচু করে বললো,”ভাই আমার ভুল হয়েছে, আর কিছু জানতে চাইনা।”
উৎস মুচকি হেসে বললো,”ওরা আমাকে পছন্দ করে আমার ক্ষমতার জন্য। ওরা জানে, উৎস ক্যাম্পাসের ত্রাস। উৎসের সাথে দুই কদম হাঁটলে পরদিন সবাই তাদের সালাম দিবে। আজ যদি আমি রাজনীতি থেকে সরে আসি, সেই প্রথম বর্ষের মতো সাধারণ, চুপচাপ একটা ছেলে হয়ে যাই, সব ক্ষমতা থেকে দূরে সরে আসি তাহলে ওরা ঘুরেও তাকাবে না আমার দিকে। আর যাকে সাধারণ মেয়ে বলছিস, ও আমাকে ভালোবাসে আমার সেই কৈশোর থেকে, যখন থেকে ওর প্রেম অনুভূতি কেবল জাগ্রত হওয়া শুরু হয়েছে তখন থেকেই। আমি যেমন ও আমাকে সেভাবেই গ্রহণ করেছে। সেই আমি শান্ত হই বা বখাটে, ও আমাকে ব্যক্তি উৎস হিসেবেই ভালোবেসেছে। কোনো ক্ষমতাসীন উৎসকে নয়।”
আবির উৎসের হাতের উপর হাত রাখে। আজ উৎসকে খুব অপরিচিত লাগছে। মনে হচ্ছে খুব পেরেশানিতে আছে ও।
“তাহলে ওকে কষ্ট দিস কেনো? বলে দিস না কেনো, তোর দিক থেকেও অনুভূতি সেই একই?”
“আমি মামার কাছে অনেক ঋণী আবির। ব্যর্থতা ভর্তি জীবন নিয়ে তার আদরের মেয়েকে আমি কেড়ে নিতে পারিনা। যদি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি সেদিন দাঁড়াবো তার সামনে। ভিক্ষা চাইবো আমার ভালোবাসাকে। আর যদি তা না হয়…..”
“যদি না হয়?”
উৎস আকাশের দিকে ধোঁয়া ছেড়ে বললো,”তাহলে এভাবে ধোঁয়ার মধ্যে উড়িয়ে দিবো নিজেকে। কেউ খুঁজে পাবে না উৎসকে আর কোনোদিন।”
আবির মুগ্ধ হয়ে উৎসের দিকে তাকায়। গোধূলি লগ্নে কি ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে ছেলেটাকে। কে বলবে এই ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে তার শত্রুরা কথা বলতে পারেনা। ছেলেটার মধ্যে মাঝেমাঝেই সেই কৈশোরের সারল্য ভেসে ওঠে। মেয়েটা বোধহয় এই ভীষণ স্নিগ্ধ ছেলেটার প্রেমেই পড়েছিলো। নি:সন্দেহে মেয়েটা পৃথিবীর সেরা ভাগ্যবতীর একজন। কারণ সে পৃথিবীর একজন শুদ্ধতম পুরুষের প্রেমদৃষ্টিতে পড়েছে।

ফুলগুলোকে মাঝে রেখে তিন বোন ঘরের দরজা আটকে বসে আছে। ঘর অন্ধকার, টিমটিম করে একটা মোমবাতি জ্বলছে শুধু। এই পরিকল্পনা আভার। তার ধারণা অন্ধকারে, মোম জ্বালিয়ে পরিবেশ রহস্যময়ী করে তুললে রহস্য ভাঙা যায় সহজে।
বহ্নি ফুলগুলোর পাঁপড়ি ছুঁয়ে দেখে আবার। এখনো কেমন সদ্য তুলে আনা ফুলের মতো জ্বলজ্বল করছে।
আভা ভ্রু কুঁচকে শীতলের দিকে তাকিয়ে বললো,”মেজো আপা, এখন আমি তোকে কিছু প্রশ্ন করবো। ঠিকঠাক উত্তর দিবি।”
“আবার কি প্রশ্ন?”
“আরে প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমেই তো বুঝতে পারবো ফুলগুলো তোকে কে পাঠিয়েছে।”
বহ্নি বিরক্ত হয়ে বললো,”পাকামি করিস না তো আভা। আসছে আমার শার্লক হোমস। আমি নিশ্চিত এটা তোর ওই আধপাগল স্যারটাই দিয়েছে। তূর্য না সূর্য!”
শীতল ঠোঁট কামড়ে কিছু চিন্তা করে।
“না রে আপা, উনার মতো একটা উল্লুকের পক্ষে এমন কাজ করা অসম্ভব।”
“যদি তাই হয় এই কাজ করলো কে? কতো জায়গায় রোমিও তৈরি করেছিস তুই?”
“মজা করিস না তো আপা, সবসময় শুধু মজা করা।”

আভা মোমবাতির শিখার দিকে তাকিয়ে আনমনে বললো,”উৎস ভাইয়েরও লাল গোলাপ অনেক পছন্দ। উনি ছাদে কতোগুলো গোলাপের চারা লাগিয়েছে। নিজে ঠিকমতো পানি খায়না, অথচ ফুলগাছে ঠিকই নিয়ম করে পানি দেয়।”
আভার কথা শুনে চমকে ওঠে বহ্নি আর শীতল দুইজনই। শীতলের হৃৎপিণ্ডটা হঠাৎ গতি বাড়িয়ে দেয় ধকধক করার। তার খুব ভাবতে ইচ্ছা করে এই ফুলগুলো উৎস ভাই তার জন্য পাঠিয়েছে।
বহ্নি আচমকাই ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দেয়। তারও মন বলছে এই কাজ উৎসের। সকালের ঘটনায় শীতলের মন খারাপ দেখে তারও যে বিশেষ ভালো লাগেনি তা আর কেউ না বুঝুক বহ্নি ঠিকই বুঝেছে। দুইজনের কাহিনী দেখে অন্ধকারে হাসে বহ্নি। তার হাসিটা কাউকে দেখাতে চায়না তাই মোমবাতি নিভিয়ে দেয়।
শীতল আর আভাও আলোচনা শেষ করে যে যার মতো শুয়ে পড়ে। শীতলের ঘুম আসছে না, কেমন অস্বস্তি লাগছে। সকালের পর থেকে বুকটা ভার হয়ে ছিলো। কিন্তু এখন আভার কথা শোনার পর থেকে অদ্ভুত একটা অনুভূতিতে ছেয়ে যায় তার পুরো শরীর। রাতের পরিবেশটা কেমন রোমাঞ্চকর লাগে।

“আচ্ছা উৎস ভাই, প্রেম করেছেন আপনি কখনো?”
মেঝেতে বসে বই পড়ছিলো উৎস। রণের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে।
“প্রেম?”
“হ্যা, করেছেন কখনো?”
“আমার সাথে কে প্রেম করবে ভাই? আমরা শার্টের নিচে রা’মদা নিয়ে চলা মানুষ। প্রেমিকা যখন আহ্লাদে প্রেমিকের শার্ট চেপে ধরে, আমার প্রেমিকা তো হাত দিয়েই ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে। আমার সাথে প্রেম করতে যে ভাই প্রচুর সাহস থাকা লাগবে। এমন সাহসী কাউকে পাইনি, তাই প্রেমটাও হয়নি।”
রণ চোখ বড় বড় করে তাকায়, পরক্ষণেই শব্দ করে হেসে দেয়। উৎস বইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,”হঠাৎ এ কথা? প্রেমে পড়েছেন নাকি?”
রণ একগাল হেসে বললো,”আমারও প্রেম হবে না ভাই। মেয়েরা বেকার প্রেমিক পছন্দ করেনা।”
“কে বলেছে এই কথা? মেয়েরা বরং প্রেমিক হিসেবে বেকার ছেলেকেই চায়। সময় অসময়ে কবিতা লিখে দিতে পারে প্রেমিকাকে।”
রণ চুপ করে যায়, কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারেনা।
“আজ আপনার চাকরির পরীক্ষা ছিলো না? কেমন হলো?”
রণ নিজের বই মুখের উপর রেখে শুয়ে পড়ে। পরীক্ষা তার ভালো হয়নি, এ কথা বলতে ইচ্ছা করছে না এখন।
উৎস উঠে দাঁড়ায়।
“ভাই কোথায় যাচ্ছেন? ছাদে?”
“না উঠোনে যাচ্ছি। ভীষণ গরম লাগছে, হাওয়া খেয়ে আসি।”
নিচে যাওয়ার কথা শুনে রণ লাফ দিয়ে উঠে বসে বললো,”আমিও আসি?”
উৎস বাইরে যেতে যেতে বললো,”না।”
রণ মুখ ভোঁতা করে বসে থাকে।

“কে? কে ওখানে?”
ঘুম না আসায় শীতল উঠোনে হাঁটতে এসেছিলো। ঘরের ভিতর গরমও অসম্ভব। দিনটা কেমন যেনো গেলো তার। একদমই ঘুম আসছে না।
উৎসের গমগমে গলার আওয়াজ শুনে থমকে যায় সে। হতভম্ব হয়ে যায় শীতল। এতোরাতে উৎস এখানে কেনো? সে তো উঠোনে আসেনা সাধারণত।

উৎস অবাক হয়ে শীতলের দিকে তাকিয়ে আছে। দূরের টিমটিমে রাস্তার আলোটা ফাঁকফোকর দিয়ে এসে শীতলের মুখে এসে পড়েছে। অসহ্যরকম মায়াবতী লাগছে তাকে। এমন মায়াবতীর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না। বুকে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। উৎস চোখ নামিয়ে নেয়।
শীতল কোনো কথা না বলে ঘরের দিকে এগোতে গেলে উৎস ডাকে পিছন থেকে।
“শীতল দাঁড়াও।”
শীতল না ঘুরেই দাঁড়িয়ে বললো,”কিছু বলবেন?”
“এতো রাতে এখানে কি করছিলে?”
“আপনি যা করতে এসেছেন।”
উৎস অবাক হয়, প্রকাশ করেনা।
“আমি তো হাঁটতে এসেছিলাম।”
“আমিও।”
“তাহলে চলে যাচ্ছো কেনো?”
শীতল উত্তর দেয়না। সে কীভাবে বোঝাবে তার মধ্যে কি চলছে। নিজের মনের গোপন কুঠুরিতে যত্ন করে রাখা পুরুষকে অন্য নারীর সাথে দেখতে পাওয়া সেই নারীর জন্য কি ভয়ংকর কীভাবে বোঝানো যায়?

“কি হলো? চুপ করে আছো কেনো?”
শীতল আড়চোখে তাকায় উৎসের দিকে। আচ্ছা, সময়ের সাথে পুরুষ মানুষের সৌন্দর্য কি সমানুপাতিক হারে বেড়ে যায়? এই মানুষটাকে আরো সুন্দর লাগছে। কেনো লাগছে? সে কখনো তার হবে না তাই? নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেশি, এজন্যই কি?
উৎস এতো বেশি কথাও বলেনা সচারাচর, তার সাথে তো নয়-ই। আপা বা আভার সাথে তার সহজ সম্পর্ক হলেও, শীতলের বেলায় বরাবরই সে নির্বিকার। যেনো তার বাবার দুইটা মেয়ে, শীতল কিছুই না।

“আমার ঘুম পাচ্ছে তাই চলে যাচ্ছি।”
“তোমার ঘুম পাচ্ছে না শীতল।”
উৎসের কণ্ঠটা কেমন অস্বাভাবিক শোনায়, মাতাল মাতাল লাগে। নেশাক্ত মাদকতার ঠাসা কণ্ঠটা শুনে বুক ঢিপঢিপ করে শীতলের। তার আচরণও অদ্ভুত লাগছে। নেশাটেশা করলো নাকি? যে মানুষ, ওসবও অসম্ভব না।
“আমার ঘুম পাচ্ছে কি পাচ্ছে না আপনি জানেন?”
“যদি বলি জানি?”
“না জানেন না। আমার ব্যাপারে আপনি কিছুই জানেন না।”
উৎস ধীর পায়ে হেঁটে শীতলের অনেকটা কাছে এসে দাঁড়ায়। শীতল নি:শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে থাকে। সে নিশ্চিত এই লোক নিজের মধ্যে নেই। নেশাই করেছে হয়তো।
উৎস শীতলের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,”জানি অনেক কিছুই জানি।”
শীতল উৎসের দিকে তাকানোর সাহস পায়না। ঘরে ছুটে যেতে গেলেই আচমকা পা চেপে বসে পড়ে সে। চিৎকার করতে যেয়েও করতে পারেনা। বাড়ির সবাই ঘুম, এতো রাতে চিৎকার করা যাবে না। মুখ চেপে ধরে আর্তনাদ করে ওঠে শীতল।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় উৎস। কি হলো কিছুই বুঝতে পারেনা সে। তাকাতেই দেখে শীতল পা চেপে ধরে মাটিতেই বসে পড়েছে।

“শীতল কি হয়েছে?”
শীতল মুখ চেপে ধরেই বললো,”উফফ মরে যাচ্ছি, আমাকে বাঁচান।”
উৎস তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে শীতলের কাছে। পা’টা আস্তে করে নিজের উরুর উপর রাখতেই চমকে ওঠে। ছোট্ট একটা কাঁচের টুকরো বিঁধে আছে পায়ের তলায় শীতলের। চুঁইয়ে চুঁইয়ে র’ক্ত পড়ছে সেখান থেকে।

“কাঁচ এলো কোথা থেকে এখানে?”
উৎসের চিৎকারে গমগম করে ওঠে চারপাশ।
“আস্তে কথা বলুন না, সবাই জেগে যাবে তো।”
উৎস আরো জোরে চিৎকার করে বললো,”জেগে যাক, কে রেখেছে কাঁচের টুকরো এখানে?”
শীতল নিজের যন্ত্রণা ভুলে উৎসের দিকে তাকায়। মনে হচ্ছে যন্ত্রণাটা যেনো উৎস না, সে নিজেই পাচ্ছে।

“দেখেশুনে হাঁটবে না? জুতা পরোনি কেনো? খালি পায়ে কেনো এসেছো?”
“এতো কথা না বলে কাঁচটা বের করুন না।
উৎস খুব সাবধানে কাঁচ বের করতে যায়, পারেনা। আঙ্গুলের চাপ লাগলেই কাঁচটা আরো ভিতরের দিকে বিঁধে যাচ্ছে। সাথে সাথে শীতলও যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠছে।
“শীতল দুই পাশ থেকে টেনে ধরো জায়গাটা। নাহলে তো ওটা আরো ভিতরে চলে যাচ্ছে।”
শীতল কান্নাজড়িত গলায় বললো,”পারবো না আমি পারবো না।”
উৎস দাঁতে দাঁত চেপে বললো,”গাধী একটা।”
“এই আপনি আমাকে গাধী বলবেন না।”
উৎস উত্তর দেয়না শীতলের কথার। এই মুহুর্তে এই মেয়ের সাথে তর্কে যাওয়া বৃথা। ওদিকে র’ক্তও ঝরছে, ফোঁটায় ফোঁটায় কালচে লাল র’ক্ত ভেসে যাচ্ছে উৎসের ট্রাউজারে।

হঠাৎ কি মনে করে উৎস নিজের মুখ নিয়ে এগিয়ে যায় শীতলের পায়ের দিকে।
শীতল ভয়ার্ত গলায় বললো,”কি করছেন?”
উৎস কথা না বলে এগিয়ে যায়। দুই হাতে জায়গাটা প্রসারিত করে মুখ দিয়ে কাঁচটা চেপে ধরে।
শীতল যেনো অবাক হতেও ভুলে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর শিউরে উঠছে সে। পুরো শরীর জুড়ে অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে যায় তার। শ্বাস নিতেও ভুলে যায় যেনো সে। শিরশির করে উঠছে শরীর।

ঘর থেকে তুলা এনে শীতলের পায়ের র’ক্ত মুছিয়ে দিচ্ছে উৎস খুব যত্ন করে। কাঁচ পুরোটা বের করা গেছে। বাইরে থেকে যতোটা ছোট মনে হচ্ছিলো, আসলে তা না। বেশ অনেকটাই ক্ষত হয়ে গেছে। শীতলের মতো ছিঁচকাঁদুনে মেয়ের এতোক্ষণে কেঁদেকেটে বাড়ি মাথায় তোলার কথা। কিন্তু সে তখন থেকে আর একটা কথা বলার অবস্থায় নেই। অদ্ভুত একটা ভালো লাগায় ছেয়ে আছে তার মন, মস্তিষ্ক। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উৎসের দিকে। উৎসের সেদিকে খেয়াল নেই।

শীতল কোনোভাবেই মানতে পারেনা এই মানুষটা তার নয়, অন্য কারো। কোনোভাবেই না। পৃথিবীর যে কোনো অমূল্য সম্পদের বিনিময়ে হলেও এই মানুষটাকে তার চাই। না, উৎস আর কারোনা। উৎস শুধু শীতলের। সে মনে মনে ঠিক করে ফেলে, সে উৎসকে কাউকে পেতে দিবে না। এই মানুষটার উপর শুধু তার অধিকার।

ছোট্ট এক টুকরো কাপড় দিয়ে শীতলের পা বেঁধে দেয় উৎস।
“শীতল এখন কেমন লাগছে? ব্যথা আছে?”
শীতল অস্ফুট স্বরে বললো,”না নেই।”
উৎস উঠে দাঁড়ায়, হাত বাড়িয়ে দেয় শীতলের দিকে।
“পারবে উঠতে?”
শীতল গাঢ় গলায় বললো,”পারবো।”
শীতলের মনে হচ্ছে সে কোনো স্বপ্ন দেখছে। তার জীবনে দেখা অদ্ভুত সুন্দর কোনো স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্ন বাস্তবের চেয়েও সুন্দর। এই স্বপ্ন যেনো ভেঙে না যায়। একটা বোবাকান্না গলার কাছে জমাট বেঁধে পড়ে থাকে।
উৎসের হাতে হাত রেখে শীতল উঠে দাঁড়ায়। এতো সুন্দর একটা রাত তার কপালে ছিলো, ভাবতেই নিজের উপর নিজের হিংসা হয় তার। মেয়েরা বোধহয় এমনি, প্রিয় মানুষের পাশে নিজের ছায়াকে ঈর্ষা করতেও তারা ছাড়েনা।

“চলো ঘরে দিয়ে আসি।”
“তার দরকার হবেনা। আপনি আমার জন্য যা করলেন…..”
উৎস অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,”তোমার জন্য আমি কিছুই করিনি। তোমার জায়গায় বহ্নি, আভা বা যে কোনো মেয়ে থাকলে আমি এটাই করতাম।”
শীতল আহত চোখে তাকায় উৎসের দিকে। মুহুর্তেই ভালো হয়ে যাওয়া মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তার।

“ঘরে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
শীতল দাঁড়িয়ে থাকে। লজ্জায়, অপমানে কুঁকড়ে যায় সে নিজের মধ্যে।
“এগিয়ে দিয়ে আসবো?”
শীতল চোখের পানি লুকিয়ে বললো,”প্রয়োজন নেই, আমি চলে যেতে পারবো। অনেক করেছেন আমার জন্য, তার জন্য ধন্যবাদ।”
আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না শীতল। ব্যথা নিয়েই ছুটে চলে যায় সেখান থেকে। যন্ত্রণায় শরীর নুইয়ে আসলেও আর একটুও দাঁড়ানোর ইচ্ছা নেই এখন তার। সে মনে মনে ভাবে, আর কোনোদিন এই মানুষটার সাথে কথা বলবে না সে। আর কোনো অনুভূতি দেখানোর চেষ্টা করবে না। উৎস শুধুমাত্র তার যন্ত্রণার অতীত, আর কিচ্ছু না।

শীতলের যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে উৎস। শীতলে যেতেই সে মাথার চুল চেপে ধরে বসে পড়ে মাটিতে। অসহ্য মাথা যন্ত্রণা হচ্ছে তার।

“শীতল, আমার উত্তপ্ত হৃদয়টা শীতল করে দিয়ে যাও। কেনো বুঝতে পারছো না আমি সহ্য করতে পারছি না। কেনো আমি করছি এগুলো, একটু বোঝার চেষ্টা করো। আমার এই ধ্বংসভরা জীবনে চোরাবালির মতো ডুবে যাচ্ছি আমি একটু একটু করে। আমাকে টেনে তুলো শীতল।”
মাটিতে শুয়ে পড়ে উৎস, যন্ত্রণায় মাথার শিরাগুলো ছিঁড়ে পড়তে চায়।

ছুটির দিনে নওশাদের সকাল শুরু হয় শাহানার হাতের এক কাপ আদা চা খেয়ে। বিয়ের পর এতোগুলো বছর কেটে গেলো, কোনো ছুটির দিনেই হেরফের হয়নি এই নিয়মের। শাহানা অসুস্থ থাকলেও এই কাজটা সে করবেই।

“তোমার চা।”
বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলো নওশাদ। স্ত্রীর ডাকে তাকায় তার দিকে, সুন্দর করে হাসে।
“তোমার চা কোথায়?”
“সবাইকে দিয়ে তারপর আমি খাবো।”
“না আজ তুমি আমার সাথে বসেই খাবে, বসো আমার পাশে।”
নওশাদ চেয়ার এগিয়ে দেয় নিজের পাশে। শাহানা বসে। সে জানে এখন তার স্বামী কি করবে। খুব আগ্রহ নিয়ে নওশাদ কাজটা করে। শাহানারও ভীষণ ভালো লাগে।
কাপ থেকে চা পিরিচে ঢেলে ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে নওশাদ। এরপর এগিয়ে দেয় শাহানার দিকে। শাহানা লাজুক হেসে পিরিচটা হাতে নেয়। এদিকওদিক তাকিয়ে সাবধান হয় মেয়েরা কেউ দেখছে কিনা!

“শাহানা।”
“বলো।”
“আমি যখন থাকবো না তখন তোমার কাছে এই স্মৃতিটা থেকে যাবে। তুমি হয়তো অনেক চা খাবে, তবে তোমার গরীব বরের এই পিরিচে ঢালা চায়ের মতো স্বাদ পাবে না।”
শাহানা ছলছল চোখে নওশাদের দিকে তাকায়। নওশাদ দিব্বি হাসিমুখে চা খেতে থাকে।

“এসব কেনো বলছো?”
“বলছি কারণ আমার সামনে অনেক দায়িত্ব। এসব দায়িত্ব পালন না করে আমি যেতে পারবো না। তোমাকে আমার পাশে দরকার ভীষণভাবে।”
“আমি কি তোমার পাশে নেই?”
“পাশে আছো, তবে আমার আরো শক্তি দরকার। যে শক্তি স্ত্রী ছাড়া আর কারো কাছ থেকে পাওয়া যাবেনা।”
শাহানা স্বামীর হাতের উপর হাত রাখে। নওশাদকে আজ খুব বিচলিত মনে হচ্ছে। সে কি খুব দুশ্চিন্তা করছে কিছু নিয়ে?
“কি হয়েছে তোমার বলো তো? শরীর খারাপ লাগছে?”
“আমার কিছু হয়নি শাহানা, আমি ভালো আছি।”
“তাহলে?”
নওশাদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। হঠাৎ শাহানার দিকে তাকিয়ে বললো,”আমি ঠিক করেছি ব্যাংক থেকে বেশকিছু লোন নিবো।”
শাহানা অবাক হয়ে বললো,”লোন নিবে মানে?”
“আমার তিন মেয়ের বিয়ে দিতে হবে শাহানা। অনেক টাকা লাগবে। অনেকটাই গোছানো আছে তবে গহনা বানাতে হবে, তার জন্য টাকা দরকার। আর একটা স্বপ্ন আছে আমার, তাও পুরণ করতে হবে।”
“তোমার কথা কিছু বুঝতে পারছি না আমি। কি স্বপ্ন আছে তোমার?”
নওশাদ স্ত্রীকে এক হাতে আলতো করে জড়িয়ে ধরে।
“এই বাড়িটা সম্পূর্ণ করবো শাহানা, আমার অনেকদিনের ইচ্ছা। দোতলাটা করে ফেলবো। আমার তিন মেয়ের জন্য তিনটা আলাদা ঘর হবে। তোমার জন্যও ঘর থাকবে আলাদা। তুমি মনের মতো সাজিয়ে রাখবে। আর নিচতলাটা সায়েরার থাকবে, ও সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারেনা তো। ও ওর মতো সাজাবে ঘরগুলো। আমার খুব দেখার ইচ্ছা নতুন ঘর সাজিয়ে কি করো তোমরা।”
শাহানা কঠিন গলায় বললো,”আমরা কি কেউ বলেছি আমাদের নতুন ঘর লাগবে? কি এমন দরকার যে এখন ব্যাংক লোন তোলা লাগবে তোমার? এতোগুলো টাকা….”
“ও নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমার একটা জমিও আছে। যদিও অনেকদিন থেকে ভোগদখল পাইনি, তবুও দলিল তো আমার নামে।”
“দেখো আমি তোমাকে কোনো ঝামেলায় যেতে দিবো না। আমরা যেমন আছি, তেমনই ভালো। গতরাতেই তো টিনের চালার ঘরের কথা বললে, আজ আবার এসব বলছো কেনো?”
নওশাদ শাহানার উৎকণ্ঠিত চেহারার দিকে তাকিয়ে হাসে, কিছু বলেনা। শাহানার মনটা কেমন কু ডাকতে থাকে। তার মনে হচ্ছে বড় কোনো বিপদ আসতে চলেছে।

শ্বেতশুভ্র পাঞ্জাবি পরে, চোখে কালো সানগ্লাস পরে সেজেগুজে আবির যাচ্ছে উৎসের বাড়ি। সবাইকে বলবে উৎসের সাথে আড্ডা দিতে এসেছে, তবে উদ্দেশ্য ভিন্ন। উৎস রাগ করবে, করলে করুক। সে নিজে কি ডুবে ডুবে কম জল খাচ্ছে?
পথের মধ্যে কি মনে করে এক কেজি মিষ্টিও কিনে নিলো। বেশ একটা জামাই জামাই ভাব আসছে। পকেট থেকে ছোট আয়নাটা বের করে মুখটা দেখে নেয় একবার। নাহ, পাক্কা নায়ক লাগছে। আজ প্রেমে পড়বেই মেয়েটা, পড়তে বাধ্য।

‘খাঁ’ বাড়ির সামনে রাস্তার কাজ চলায় বেশ অনেকটাই কাদা জমেছে। আবির অনেক সাবধানতার সাথে এঁকেবেঁকে পার হচ্ছে। একদিকে তো সাদা পাঞ্জাবি, পায়জামা। অন্যদিকে হাতে মিষ্টির প্যাকেট। কাদার মধ্যে আবার পড়ে না যায়, সেই চিন্তায় ঘাম বেরিয়ে যায় তার। অসহায় মুখে এদিক ওদিক তাকায়। ভীষণ পিচ্ছিল হয়ে আছে জায়গাটা। আতঙ্কিত হয়ে সামনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করতে থাকে আবির।

বাড়ির গেটে আভা দাঁড়িয়ে ছিলো, তার বান্ধবীদের আজ বেড়াতে আসার কথা তার বাড়িতে। তাদের জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলো সে। দূর থেকে শুভ্র পাঞ্জাবিতে আবিরকে দেখে চমকে যায় সে। সাদা পাঞ্জাবিতে শুধু উৎস ভাইকেই সুন্দর লাগে এমনই ধারণা ছিলো তার। অন্য কাউকেও যে এতো সুন্দর লাগতে পারে তার মাথাতেই আসেনি। কিন্তু তার সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলতে দেখে ভীষণ হাসি পায় আভার। সে ঠিক করে সে এগিয়ে আনবে বেচারাকে।

“আবির ভাই, ওখানেই দাঁড়ান। আমি এগিয়ে আনছি আপনাকে।”
মুহুর্তেই আবিরের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে যায়। মেয়েটা আজ শাড়ি পরেছে? সে কি জানতো আজ আবির আসবে? তার জন্যই কি সে শাড়ি পরেছে? স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আবির। মূলত আভা শাড়ি পরেছে আজ তার বান্ধবীরা সবাই শাড়ি পরবে, একসাথে মজা করবে তাই।

আভাকে এগিয়ে আসতে দেখে আবির চিৎকার করে বললো,”আমি পারবো আভা, তুমি এসো না।”
আভার মনে হলো কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
“আরে কি করছেন? আস্তে হাঁটুন, পড়ে যাবেন তো।”
আবির যেনো রকেটের বেগে ছুটতে থাকে। তাকে নিজেকে কিশোরী রূপবতীর কাছে বীরপুরুষ প্রমাণ করতেই হবে।

হঠাৎ এক টুকরো ইট পড়ে আবিরের পায়ের নিচে। মুহুর্তের মধ্যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবির মিষ্টির প্যাকেট সমেত সোজা পড়ে কাদার মধ্যে। প্যাকেট খুলে মিষ্টি দুইটা পড়ে তার চুলের উপর, মিষ্টির রস গড়িয়ে পড়তে থাকে মুখজুড়ে।

আভা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার ধাতস্থ হতে সময় লাগছে, এটা কি হয়ে গেলো? ধাতস্থ হতেই শাড়ির কুঁচি উঁচু করে সে ছুটতে থাকে সেদিকে।
লজ্জায় আবিরের মনে হচ্ছে মাটি ফাঁকা হয়ে যাক, সে ঢুকে যাক ভিতরে। এরচেয়ে লজ্জার এই জীবনে আর কি হয়?

“আমার কিচ্ছু হয়নি আভা, আই অ্যাম ফাইন।”
আভা অবাক হয়ে যায়। লোকটা কি পাগল? সাদা পাঞ্জাবি কাদায় মেখে কালো রঙ ধারণ করেছে, যেভাবে পড়েছে ব্যথাও তো কম পাওয়ার কথা না। এরমধ্যে হাসছে আর বলছে ‘আই অ্যাম ফাইন?’

হঠাৎই ছেলেটার জন্য আভা মনের মধ্যে কোথায় যেনো একরাশ মায়া অনুভব করে।

(চলবে…….)