তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা পর্ব-০৯

0
57

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৯

রাজ চলে যেতেই নীলিমা বলল।

তুই কি রাজ কে চিনিস।

নীলিমার কথায় সাইরা কিছুটা নড়েচড়ে বসে এবং বলে।

না তোমন ভাবে ভাবে উনার সাথে পরিচয় নেই আমার।

সাইরার কথা শুনে নীলিমা সন্দেহ গলায় বলল।

তাহলে ও কিসের দাওয়াতের কথা বলছিল।

আমার আপুর নূর আপুর সাথে পরিচয় আছে। তাই সকলকে দাওয়াত দিয়েছে।

সাইরা কথাটি বলে নীলিমা কে কিছু না বলতে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়।
___________________________________
আরশাদ বেশ কিছুক্ষণ ধরে হৃদিতার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু ওর আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।তাই সময় কাটানোর জন্য ফোনে গেইম খেলছে।গেইম খেলতে যখন সে ভিশন মগ্ন তখনি তার কানে এসে বাড়ি খায় কারও পায়ের শব্দ। আরশাদ মনোযোগহীন ভাবে সামনে তাকিয়ে আবার মোবাইলের তাকায়। তখনি আরশাদের মনে পড়লো যে সে কি দেখেছে। কথাটি মাথায় আসতেই তড়িৎ গতিতে আবার সামনের দিকে চাইতেই দেখতে পায়। হৃদিতা আসছে সামনে থেকে হৃদিতা কে দেখে আরশাদের মনে হচ্ছে সামনে থেকে মনে হয় কোনো পরি হেঁটে আসছে। আরহাম তাকিয়েই আছে সেই দিকে। হৃদিতা আরশাদের সামনে এসে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল।

এই শয়তান তুই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।

তোকে না বলেছি আমার সামনে এভাবে আসতে না।

আরশাদের কথা শুনে, হৃদিতা প্রশ্ন বোধক কন্ঠে বলল।

কিভাবে এসেছি?

এইযে সেজে এসেছিস।

আমি শুধু কাজল আর লিপস্টিক দিয়েছি তাও হালকা করে। এইটুকুতে সাজা হয়না।
সাজতে আরো অনেক কিছু লাগে।

তা আমি কিছু জানি না, তোকে বলেছি এইসব দিয়ে আমার সামনে আসবি না তো আসবি না।

হৃদিতা আরশাদের কথা শুনে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল।

তাহলে কাকে দেখাবো শিহাব কে?

কথাটি বলার সাথে সাথে আরশাদ হৃদিতার কোমরে হাত দিয়ে তাকে নিজের একবারে কাছে নিয়ে আসে এবং বলল।

আর একবার যদি তুই নিজের মুখ থেকে শিহাবের নাম নিস তাহলে।আমি তোর ওই শিহাব কে মার্ডার করব।

কথাটি বলার সাথে সাথে আরশাদের গালে ঠাঁটিয়ে এক চর মেরে দেয় হৃদিতা। আরশাদ অবাক চোখে তাকায় হৃদিতার দিকে। এদিকে হৃদিতা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল।

আর তুই আর একবার যদি আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে এভাবে টাচ করিস তাহলে আমি তোকে খুন করব।

কথাটি বলেই হৃদিতা সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। এদিকে আরশাদ নিজের মাথার চুল খামচে দাঁড়িয়ে নিজের কাজের জন্য নিজেকে বকছে। আরশাদ ভালোভাবে জানে হৃদিতার শরীরে টাচ করা হৃদিতা পছন্দ করে না। তাছাড়া তারা বন্ধুরাও একজন আরেকজনের সাথে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখে। তারা সর্বদা চেষ্টা করে তাদের জন্য যেনো নূর ও হৃদিতা কেনো প্রকার অস্বস্তি অনুভব না করে। কিন্তু রাগের বশে এই ভুলটি করে ফেলেছে আরশাদ। এখন হৃদিতার রাগ ভাঙাতে খুব কষ্ট করতে হবে তার। কথাগুলো ভেবে আরশাদ হৃদিতার পিছে পিছে হাঁটা শুরু করলো।
___________________________________
সিরাতদের দরজার সামনে এসে কলিং বেল বাজায় রাজ। কলিং বেল বাজানোর সাথে সাথে দরজা খুলে দেয় সাইরা। সাইরা কে দেখে রাজ দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল।

আমার অপেক্ষায় বুঝি করছিলে এতক্ষণ।

রাজের বলা কথা পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা তার বন্ধুদের কানেও যায়। তখন আব্রাহাম রাজ কে গুঁতো দিয়ে বলল।

এইটা ওর বাড়ি ফ্লার্টিং করার জায়গা না।

বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে সকলে শুধু রুদ্র বাদে।রুদ্রের ধ্যান সকল মোবাইলের মধ্যে আবদ্ধ।তাই সকালে ভিতরে প্রবেশ করার পরেও রুদ্র একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

ভিতরে আসবে নাকি দরজা বন্ধ করে দিবো।

কথাটি রুদ্রের কানে আসতেই রুদ্র মাথা উঁচু করে তাকাতেই দেখতে পায় সিরাত দাঁড়িয়ে আছে।সিরাত কে দেখে রুদ্র না দেখার ভান করে চলে গেল। সিরাতের কিছুটা অপমানিত অনুভব হলেও কিছু বললো না।সেও দরজা লাগিয়ে হৃদিতার উদ্দেশ্যে বলল।

নূর কোথায়,

নূর কিছুক্ষণের মাঝেই এসে পড়বে। ভাইয়া কে নিয়ে আসছে তাই একটু লেট হয়ে গেছে। কথাটি শেষ করতেই দরজার কলিং বেল আবার বেজে উঠল।

এবার সিরাত গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই দেখতে পেলো সামনে নূর দাঁড়িয়ে আছে। নূরের সাথে দাঁড়িয়ে আছে তার বড় ভাই নিলয়।

কিরে ওরা এসেছে, কথাটি বলে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলেন রেহানা বেগম। রেহানা বেগম কে দেখে সকলে সালাম দেয় কিন্তু নিলয় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। রেহানা বেগম নিলয়ের সম্পর্কে জানেন তাই তিনি কিছু মনে করলেন না। তিনি সকলকে গিয়ে বসতে বললেন। সকলে সোফায় বসে পড়লো।

সকলে লক্ষ্য করছে আরশাদ হৃদিতার সাথে কথা বলতে চাইছে কিন্তু হৃদিতা তাকে ইগনোর করছে। রুদ্র আরশাদ কে উদ্দেশ্য করে বলল।

কি করেছিস তুই, যে হৃদিতা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।

রুদ্রের কথায় আরশাদ অসহায় মুখ করে তাকায় তার দিকে। আরশাদ কে এভাবে তাকাতে দেখে।সকলে একসাথে হেসে উঠলো।রাজ হাসতে হাসতে বলল।

নিশ্চয়ই বড় কেনো কান্ড ঘটিয়েছে,

তাদের কথার মাঝে সিরাত ও মহিমা এসে বসলো সকলের সামনে। মহিমা কে দেখে নিলয় তাকিয়ে আছে তার দিকে। সিরাত তার বড় বোনের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তখনি হঠাৎ নিলয় হাতে তালি দিয়ে বলতে লাগলো।

দেখ নূর ওর বাবু হবে,কি মজা ওর বাবু হবে। কথাটি বলতে বলতে এক অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে বসলো নিলয়। সোজা গিয়ে মহিমার ফুলা পেটে হাত দিয়ে কান পেতে বাচ্চাটির সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে নিলয়। নিলয়ের এই কান্ডে মহিমা হচকচিয়ে গেল। নূর গিয়ে নিলয়কে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু নিলয় কিছুতেই ছাড়বে না মহিমাকে সে বাবুর সাথে কথা বলবে। সকলের বুঝাবার পরেও কিছুতেই নিলয়কে ছাড়ানো যাচ্ছে না। তখনি রেহানা বেগম এসে নিলয়ের মাথায় হাত রেখে।তার মমতাময়ী হাত দিয়ে নিলয়কে আদর করতে লাগলো। এতদিন বছর পর নিলয় মায়ের মতো কারো স্নেহ পেয়ে রেহানা বেগমের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকায়। তখন রেহানা বেগম শান্ত কন্ঠে নিলয়ের উদ্দেশ্যে বলল।

তুমি বাবুকে আদর করতে চাও।

নিলয় মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালো।

তাহলে আমার কথা শুনতে হবে যদি বাবুকে আদর করতে চাও তো। এখন ওকে ছাড়ো আমার কাছে এসে।

রেহানা বেগমের কথা শুনে মুহূর্তের মাঝে মহিমা কে ছেড়ে দিয়ে রেহানা বেগমের কাছে এসে বসলো।

মহিমার শ্বাস যেনো এতক্ষণ আটকে ছিল। এখন প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছে।

রেহানা বেগম নিলয়ের গালে হাত দিয়ে বলল।

বাবু এখনো অনেক ছোট এখন যদি তুমি বাবুর সাথে এভাবে কথা বলতে চাও। তাহলে বাবু আর তোমার সাথে কথা বলবে না। বাবু আরেকটু বড়ো হয়ে যখন পেট থেকে বেরিয়ে আসবে তখন তুমি তাকে কুলে নিয়ে। তোমার ইচ্ছে মতো তার সাথে কথা বলো।

নিলয় রেহানা বেগমের কথা শুনে অবুঝ গলায় বলল।

তুমি ওকে আমার কুলে দিবে।

হ্যা অবশ্যই দিবো, তুমি যদি ভদ্র হয়ে থাকো তখন বাবু দুনিয়াতে আসবে যখন বাবুকে প্রথম কুলে তুমি নিবে।

রেহানা বেগমের কথায় নিলয় অনেক খুশি হয়। বাবুকে প্রথম ও কুলে নিতে পারবে ভাবতেই ওর অনেক আনন্দ লাগছে।

নূর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিলয় ও রেহানা বেগমের দিকে।তার ভাই কারো কথা শুনে না আর আজ কতটা সহজে রেহানা বেগমের কথা শুনে ফেলেছে।অবাক হওয়ারই বিষয়।

সকলে মিলে খেতে বসেছে। রেহানা বেগম সবার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করেছেন। খাবার মুখে দিতেই সকলের খাবার প্রচুর পছন্দ হয়েছে। রেহানা বেগম হাসি মুখে সকলের খাবার দেখছেন। নিলয় ও খুব তৃপ্তি করে খাচ্ছে এত বছর পর ভাইকে এভাবে তৃপ্তি সহকারে খেতে দেখে অনেক ভালো লাগছে নূরের।

সকলে খাবার শেষ করে সোফায় বসে আছে।এত পরিমাণে তারা খাবার খেয়েছে যে নাড়তে ও পারছে না। নিলয় ঘুরছে রেহানা বেগমের পিছে রেহানা বেগমের বিরক্ত হাওয়ার কথা থাকলেও তিনি বিরক্ত না হয়ে। নিলয়ের উপরে নিজের স্নেহের হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নূরের অনেক ভালো লাগছে নিলয়কে এতদিন পর কারো ভালোবাসা পেতে দেখে। সকলের সাথে সিরাত ও সাইরা এসে বললো।সিরারকে দেখে আব্রাহাম জিজ্ঞেস করলো।

আচ্ছা তুমি কি এখন পড়াশোনা করো না।

আব্রাহাম কথাটি বলতেই সাইরা ও রেহানা বেগমের মুখ অন্ধকার হয়ে গেল কারণ..

#চলবে….
রিচেক করা হয়নি ভুল হলে ক্ষমা করবেন।