তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাস পর্ব-১০+১১

0
65

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাস
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_১০

আব্রাহামের করা প্রশ্নে সাইরা ও রেহানা বেগমের মুখে অন্ধকার নেমে আসে। কিন্তু সিরাত খুব স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে।
রেহানা বেগম কিছু না বলে সেখান থেকে উঠে চলে যায়। রেহানা বেগম তীব্র অপরাধ বোধে জ্বলছেন যদি তিনি তখন একটু সাহস দেখিয়ে সিরাতের পাশে থাকতে পারতেন তাহলে সিরাতের স্বপ্ন গুলো আর কবর দিতে হতো না।তিনিও কি করত তখন তো তার কাছেও কেনো উপায় ছিল না।

সিরাত স্বাভাবিক ভাবে উত্তরে বলল।

আমি পড়াশোনা করি না।

রাজ কৌতুহল বশত বলল।

কেনো?

নূরের ভিতরেও এই বিষয়ে জানার প্রবল আগ্রহ জাগছে। কেননা সেও সিরাতের পড়াশোনা বন্ধ করার কারন জানে না।

সাইরা মাথা নিচু করে বলল।

বাবা আপুর পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে।

সাইরার কথা শুনে সকলে বেশ অবাক হয়।আর রুদ্র ঠাট্টা করে বলল।

নিশ্চয় এমন কিছু করেছে ও।যেই কারণে ওর বাবা ওর পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে। ওকে দেখলেই তো বোঝা যায় ইউজলেস।

রুদ্রের কথা শুনে সিরাত তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলল।

হ্যা করেছিতো,এই যে কালো হয়ে জন্মেছি।যেই কারনে উনার আমাকে মেয়ে বলে পরিচয় দিতেও কষ্ট হতো। মহিমা ও সাইরার মতো আমাকে কখনো আদর করতো না। পারা প্রতিবেশীর চেয়ে বেশি উনি আমাকে গাঁয়ের রং নিয়ে খোঁটা দিতো। আমার গাঁয়ের রংয়ের জন্য h.s.c
যে A+ পাওয়ার পরেও উনার চোখে আমি পড়া লেখার যোগ্য ছিলাম না। অনার্সে ভর্তি হওয়ার পরেও আমার ফার্স্ট সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেননি এই গায়ের রংয়ের কারণে। কলেজের সকলে নাকি আমাকে দেখলে উনাকে নিয়ে ঠাট্টা করে তাই একবারের জন্য আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে।যদি আমি পড়াশোনা বন্ধ না করতাম তাহলে সাইরা কে উনি পড়াশোনা করতে দিতেন না।তাই তো পড়াশোনাকে একেবারে কবর দিয়ে দিয়েছি।

সিরাতের কথা শুনে সকলে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সকলে ভাবছে মানুষ এত জঘন্য হয় কিভাবে। রুদ্রের কিছুটা অপরাধ বোধ জাগ্রত হয়েছে মনের মাঝে। কিন্তু নিজের ইগোর জন্য কিছু বলল না রুদ্র।

সকলে নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছে। সকলে চলে যেতেই রেহানা বেগম সিরাত কে নিজের রুমে ডাকলেন।

সিরাত রেহানা বেগমের রুমে প্রবেশ করতেই। রেহানা বেগম সিরাত কে নিজের পাশে বসিয়ে তার গালে হাত রাখলেন এবং বললেন।

আমাকে মাফ করে দে মা আমি সেই সময় তোর পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কিছুই করতে পারিনি।তোর এত স্বপ্ন থাকার পরেও আমি একটি ও পূর্ণ করতে পারিনি। আমাকে মাফ করে দে।

রেহানা বেগমের কথা শেষ হতেই সিরাত কিছু বলবে তার আগে সেখানে সাইরা প্রবেশ করে। এবং এসে সোজা সিরাতকে জাপটে ধরে।সাইরা কান্না করতে করতে বলল।

আমার জন্য তোর স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে আমাকে মাফ করে দে আপু। আমার জন্য তোকে তোর স্বপ্ন ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু তুই তখন আমাকে কিছু বুঝতেও দিসনি।

সাইরার কথা বলার মাঝে মহিমা ও রুমে প্রবেশ করে বলল।

আমাকে ও মাফ করে দে আমার বোন।আমি তখন ভিশন স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। তখন তোকেই দোষী ভাবতাম তাই তোর কেনো প্রকার উপকার আমি করিনি।তোর সাথে অন্যায় হচ্ছে এটা জানার পরেও কেনো প্রতিবাদ করিনি।

কথাটি বলেই সিরাত কে মহিমা ও জাপটে ধরলো। রেহানা বেগম তার তিন মেয়েকে নিজের বুকের মাঝে টেনে নেয় এবং মন ভরে আদর করতে থাকে।সিরাত , সাইরা ও মহিমা নিজেদের সকল কষ্ট যেনো মুহূর্তের মাঝে ভুলে গেছে মায়ের আদর পেয়ে।
___________________________________
কেটে গেছে তিন তিনটি মাস এই তিন মাসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নূর এখন প্রায় সময় নিলয় কে রেখে যায় সিরাতদের বাড়িতে। রেহানা বেগমের ইচ্ছেতেই নূর নিলয় কে রেখে যায়। নিলয়ের চেহারার দিকে তাকালে রেহানা বেগমের খুব মায়া লাগে। প্রথম দিকে মহিমার নিলয়কে ভয় লাগলেও এখন আর ভয় লাগে না। কিন্তু তাদের মাঝে বিশেষ কোনো সখ্যতা ও গড়ে উঠেনি তাদের মাঝে। মহিমা সবসময় নিলয়ের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে।কিন্তু সাইরার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে নিলয়ের।

এর মধ্যে সিরাতের সাথে রুদ্রের অনেকবার দেখা হলেও কখনো তাদের মধ্যে শান্তি পূর্বক কথা হয়নি সারাক্ষণ শুধু কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। রুদ্রের বন্ধুরা অনেকবার চেষ্টা করেছে তাদের মধ্যে যেনো সকল কিছু ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু তারা হয়তো কসম খেয়েছে এই ইহ জগতে তারা একজন আরেকজনের সাথে ঠিক ভাবে কথা বলবে না।

আজ সকল বন্ধুরা মিলে রাজের বাড়িতে এসেছে।আজ তারা এই বাড়িতেই আড্ডা দিবে। অনেকদিন ধরে রাজের বাড়িতে আড্ডা দেওয়া হয়না।এতে কারও কোনো সমস্যা না থাকলেও আব্রাহামের অনেক সমস্যা আছে।সবাই কে এক প্রকার জোর করে আব্রাহাম রাজের বাড়িতে এসেছে। সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হাসি ঠাট্টা করছে।এর মাঝে নূর রাজকে বললো।

আয়নাকে কোথাও দেখতে পারছি না।আগে তো আমরা আসার সাথে সাথে আমাদের কাছে দৌড়ে চলে আসত। আমাদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য জেদ ধরতো। কিন্তু এখন তো ওকে দেখাও যায় না।

নূরের কথায় রাজ একটি শ্বাস ফেলে বলল।

জানিনা ওর কি হয়েছে আগে তো তোদের কথা শুনলেও ও চলে আসতো। কিন্তু এখন তোদের নাম নিলেও কোথাও যেতে চায় না। এখন ছাদে গিয়ে বসে আছে কতবার বললাম নিচে এসে তোদের সাথে দেখা করতে কিন্তু কিছুতেই আনতে পারলাম না।

কথাটি শুনে আর কেউ কিছু বললো না। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর আব্রাহাম সকলের উদ্দেশ্যে বলল।

আমার একটি জরুরী কল এসেছে তোরা কথা বল আমি কথা বলে আসছি।

আব্রাহামের কথায় সকলে সম্মতি প্রকাশ করল। সকলে কথা বলছে আর আব্রাহাম চলে যায় রুমের বাইরে।

আয়না ছাদের কর্ণারে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে আছে। এখন তাকে দেখে মনে হবে এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়তো তার কাছে আর কিছুই নেই। তখনি পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো।

কেমন আছো আয়না?

আয়না আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারলো তাকে কথাটি কে জিজ্ঞেস করেছে।আয়না ত্যারা ভাবে উত্তরে বলল।

এতক্ষণ অনেক ভালো ছিলাম, কিন্তু তোমার জন্য এখন অনেক খারাপ হয়ে গেছি।

আমি কি এতটা খারাপ?

এবার আয়না আব্রাহাম এর দিকে তাকিয়ে বলল।

এর থেকেও অনেক বেশি খারাপ তুমি।

তুমি কি আমাকে কখনো মাফ করতে পারবে না।আমি মানছি যে আমি ভুল করেছি। তোমার কাছে তার জন্য বারবার ক্ষমাও তো চাইছি।একটি বার আমাকে মাফ করো একটি বার আমাকে সুযোগ দিয়ে দেখো আমি..

আয়না আরহামের কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠলো।

সুযোগ কাকে বলে এটা জানো তুমি, আমিও তো তোমার কাছে একটি সময় সুযোগ চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি কি করেছো আমার সাথে মনে আছে। তুমি আমাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছিলে। কেনো কারন আমি তোমার বন্ধুর বোন ছিলাম। সেই বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে আমাকে তুমি আমার ভালোবাসাকে অস্বীকার করেছিলে। কারন তুমি বন্ধুর বোনকে ভালোবেসে নিজের বন্ধুত্ব কে অসম্মান করতে চাওনি। তাহলে এখন এমন নাটক করছো কেনো। তোমাকে এখন আমার আর সহ্য হয়না দয়া করে এখান থেকে যাও।

আয়নার বলার সাথে সাথে আব্রাহাম ছাদ থেকে নেমে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে কারো কাছে কিছু না বলে।

এদিকে সকলে আব্রাহামের অপেক্ষা করছে।কিন্তু আব্রাহাম আসছে না দেখে রাজ তাদের বাড়ির কাজের লোককে ডাক দিয়ে বলল। আব্রাহাম কে ডেকে দিতে কিন্তু কাজের মেয়েটি জানালো আব্রাহাম চলে গিয়েছে।সকলে বেশ অবাক হয়েছে কথাটি শুনে। হৃদিতা রুদ্র ও আরশাদ কে বলল আব্রাহামের খোঁজ নিতে।তারা দুজন চলে গেল আব্রাহাম কোথায় গিয়েছে খোঁজ লাগাতে। কারণ রাজ ছাড়া সকলেই যানে আব্রাহাম এভাবে চলে কোনো যেতে পারে। এবং এখন আব্রাহামের অবস্থা কি হতে পারে। আব্রাহাম কে এখন সামলানো খুবই প্রয়োজন তাই তারা দুজনে গিয়েছে আব্রাহামের খোঁজ নিতে।

#চলবে…

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_১১

আব্রাহাম তার গাড়ির উপরে শুয়ে আকাশ দেখছে। তাকে দেখে মনে হবে কতদিন ধরে হয়তো আকাশ দেখে না। হয়তো আকাশের দিকে তাকিয়ে কারও নামে অভিযোগ করছে। মুখে কিছু না বললেও মনে অনেক কথা বলছে আব্রাহাম হয়তো। নিজের ভিতরে লুকানো কষ্ট কারও সামনে দেখাতে চায় না।তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করছে। আব্রাহাম যখন আকাশ দেখতে ব্যস্ত তখনি তার দুপাশে উঠে বসে আরশাদ ও রুদ্র।

রুদ্র আরশাদের উদ্দেশ্যে বলল।

তুই এখানে বসে আকাশ দেখছিস।আর আমি তো মনে করেছিলাম এতক্ষণে বিরহের গান গাইছিস হয়তো। শুধু শুধু এত কষ্ট করে তোকে খুঁজে বের করেছি।

রুদ্রের কথার প্রতি উত্তরে আরশাদ বলল।

তুই কি ওকে তোর মতো মনে করেছিস।ও হচ্ছে শক্ত মনের মানুষ ভিতর থেকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলেও কাওকে কিছু জানতে ও দিবে না। চেহারায় ভাব ধরে রাখবে যেনো কিছুই হয়নি।

আরশাদের কথার প্রতি উত্তরে আব্রাহাম বলল।

তাহলে তোরা কি চাস তোদের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করি।

না তুই কান্না করবি কেনো তুই বিরহের আগুনে পুড়বি। পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে যাবি তোবুও কাওকে নিজের মনের দুঃখ বলবি না।

আচ্ছা আব্রাহাম তুই তো আয়নার জন্য বিয়ের প্রস্তাব ও নিয়ে যেতে পারিস।

আব্রাহাম হেসে রুদ্রের কথার উত্তরে বলল।

তোর কি মনে হয় রাজ তার বোনের সম্মতি ছাড়া ওকে আমার সাথে বিয়ে দিবে।

তুই একবার চেষ্টা তো করে দেখ এমনও তো হতে পারে।রাজ সকল কথা শুনে সকল সত্য জেনে নিজে আয়নার হাত তোর হাতে দিয়ে দেয়।

আরশাদের কথায় আব্রাহাম মুচকি হেসে বলল।

এমনটা না হয়ে, যদি রাজ সকল কথা জানার পর আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে দেয়।আর কখনো আমাদের উপর বিশ্বাস না করে । তোর মনে আছে একবার ওর চাচাতো ভাইয়ের বন্ধু ওর চাচাতো ভাইয়ের বোনকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল তখন ও তার চাচাতো ভাইয়ের বন্ধুর সাথে তার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিল। আবার ওই ছেলেকে আমরা সবাই মেরে ও এসেছি।রাজ কতটা ঘৃণা করে এই বিষয়টাকে।এখনো সেই ছেলের কথা আমাদের কাছে বলে।

তুই ওই এক কথা নিয়ে কেনো পরে আছিস।ওটা অন্য পরিস্থিতি ছিল আর ওই ছেলে নিজের বন্ধুকে ধোঁকা দিয়ে বন্ধুর বোনকে নিয়ে পালিয়েছিল। কিন্তু তুই তো এমন কিছু করিস নি। উল্টো তুই সকল প্রকার চেষ্টা করেছিস আয়না থেকে নিজেকে দূরে রাখার।আজ এই কারণে আয়না এখন তোর নাম ও শুনতে চায় না। না তুই ভালোবাসার কারণে আয়না থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারছিস।আর না নিজের বন্ধুত্বের কারনে ওকে কাছে নিয়ে আসতে পারছিস।

আরশাদের কথার সাথে সম্মতি প্রকাশ করে রুদ্র বলল।

আরশাদ ঠিক বলেছে। তাছাড়া তুই একবার আয়নার সাথে আমাদের কথা বলতে দে। সকল কিছু ক্লিয়ার করতে দে। তারপর তো এমনো হতে পারে আয়না তোকে আগের মতো ভালোবাসছে।

আব্রাহাম একটি তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল।

তোদের কি মনে হয় আমি আয়না কে আমি কিছু বলিনি। ওকে হাজার বার বলার পরেও ও আমাকে ঘৃণা করে। এখন এই সকল কথা বাদ দে এখন বাড়িতে চল অনেক রাত হয়ে গেছে।

আব্রাহামের কথায় তারা দুজনে সম্মতি প্রকাশ করে। নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।
___________________________________

মহিমা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা কাগজটির উপর। মহিমা যেই কাগজটির দিকে তাকিয়ে আছে সেটি ডিভোর্স পেপার। কিছুক্ষণ আগে মহিমা ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে। ডিভোর্স পেপার রাজিব পাঠিয়েছে এটা জানা সত্ত্বেও এখন তাদের ডিভোর্স হবে না।তাই মহিমা ডিভোর্স পেপারটি সযত্নে রেখে দিল কারণ এখন তাদের ডিভোর্স না হলেও বাচ্চা হওয়ার পর ডিভোর্স হয়ে যাবে। রাজিব মহিমার গ্রামের বাড়িতে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে কারণ কেউ জানেনা রেহানা বেগম তার তিন মেয়েকে নিয়ে কোথায় গিয়েছে। ডিভোর্স পেপার গ্রামের বাড়িতে দিয়ে গেলেও।সিরাত শামসুজ্জামানের টের পাওয়ার আগেই ডিভোর্স পেপার পাশের বাড়ির ভাবিকে দিয়ে সরিয়ে নিয়ে ছিল।ওই ভাবিতো সব খবরা খবর সিরাত কে দেয় যে তাদের বাড়িতে কি চলছে।

মহিমার কেনো দুঃখ নেই রাজিব তাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে। মহিমা আরো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কিছুদিন পরেই রাজিব টের পাবে সে কাকে ছেড়ে কাকে বেছে নিয়েছে। কারন যেই মেয়েরা বিবাহিত পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে তারা আর যাই হোক চরিত্রবান ও বিশ্বাসের যোগ্য হতে পারে না।

মহিমা নিজের পেটের উপর হাত রাখে তার বাবুটা লড়ছে। এখন মহিমার সাড়ে সাত মাস চলছে। চলতে ফিরতে তার কিছুটা সমস্যা হয় এখন। তবুও ভালো লাগে মহিমার। পেটের উপর হাত বুলিয়ে আদর করে সে নিজের বাচ্চাকে।
___________________________________
একটি নতুন সকালের সূচনা ঘটেছে। রুদ্র তার বাবার অফিসে বসে আছে। কত মাস পর রুদ্র অফিসে এসেছে তা সে নিজেও জানে না।আজ এসেছে রুদ্র তার বাবার কাছ থেকে টাকা নিতে। এবং টাকাটা সে নিজের জন্য নিচ্ছে না। টাকা নিতে চাইছে ওই মেয়ের জন্য যেই মেয়ে রুদ্র কে বারবার ফিরিয়ে দেয়। তাকে ইগনোর করে ,সবার সামনে তাকে অপমান করে কিন্তু যখন টাকার প্রয়োজন হয় তখন ফোন দিয়ে শুরু রুদ্র রুদ্র করতে থাকে। রুদ্র ও গলে যায় কিন্তু টাকা দিয়ে দিলে আর রুদ্রের খবর ও নেই না।

রুদ্র তার বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

বাবা তুমি টাকাটা দিচ্ছ না কেনো?

কারন তুমি নিজের জন্য টাকা না নিয়ে ওই মেয়ের জন্য নিতে চাইছো।ওই মেয়েকে আমি আমার এক টাকাও দিবো না।

বাবা ওই মেয়ে তোমার হবু পুত্র বধূ।

কখনো না, ওই মেয়ের সাথে আমি তোমার বিয়ে হতে দিবো না।ওই মেয়ে তোমার যোগ্য না।

রুদ্র কথাটি শুনে তার হাতের কাছে থাকা সব কিছু ফেলে দিলো। রুবেল মির্জা খুব ভালো ভাবে জানে রুদ্র এখন এমন কিছুই করবে। এবং তাকে থামাতে যাওয়া ও বিথা কারণ রুদ্র এখন কারো কথা শুনবে না। রুদ্র রুবেল মির্জার কেবিনে ভাংচুর করছে সকলে বাইরে থেকে আওয়াজ শুনলেও কারো ভিতরে এসে দেখার সাহস নেই।

রুদ্র তার হাতে একটি ল্যাপটপ তুলে নেয়। ল্যাপটপটি যেই না ধরে আছাড় মারবে তখনি পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো।

এই খবরদার ওটা ভাংগবে না ওটাতে আমার কষ্ট করে তৈরিকৃত ডিজাইন আছে।

রুদ্র পরিচিত কন্ঠ শুনে পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো সিরাত দাঁড়িয়ে আছে।সিরাত কে দেখে রুদ্র অবাক হয়ে বলল।

তুমি আমাদের অফিসে কি করছো?

সিরাত খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল।

আমি এই অফিসে কাজ করি।

কি তুমি আমাদের অফিসে কাজ করো।আর আমাদের অফিসের একটি সামান্য কর্মচারী হয়ে আমাকে বলছো আমাদের জিনিস ভাংগতে না।

হ্যা বলছি কারন ল্যাপটপটি আমাকে দেওয়া হয়েছে অফিস থেকে।আর এতে আমার অনেক কষ্টে তৈরি করা ডিজাইন আছে।তাই তুমি এটা ভাংগতে পারবে না।

ও এই কথা তাহলে তো আমার এই ল্যাপটপ সবার আগে ভাংগা উচিত ছিল।

কথাটি বলে রুদ্র ল্যাপটপটি আছাড় মারবে তার আগেই সিরাত বলে উঠলো।

যদি তুমি এই ল্যাপটপ মাটিতে আছাড় মারবে তো।

সিরাতের কথার সাথে সাথে রুদ্র বলল।

তো,

তো, সেদিন তোমার গাড়ির যেই অবস্থা করেছিলাম না। আমার ল্যাপটপ ভাংগলে তোমার ও ঠিক একই অবস্থা হবে বুঝেছ।

উফ আমি অনেক ভয় পেয়েছি, সত্যি ভয় পেয়েছে।এই যে আমি ল্যাপটপ রেখে দিলাম তোমার কথা মতো। কিন্তু আজ থেকে তোমাকে জ্বালানোর পূর্ণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলাম বুঝেছ।

কথাটি বলেই রুদ্র নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে আবার বলল।

বাবা কাল থেকে আমিও অফিসে জয়েন করব।

কথাটি বলেই রুদ্র ফুল মুডে অফিস থেকে বের হয়ে যায়। এতক্ষণ রুবেল মির্জা সিরাত ও রুদ্র কে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি ভাবতেও পারেননি তার ছেলে এত তাড়াতাড়ি শান্ত হয়ে যাবেন।তার থেকেও বড় কথা রুদ্র অফিসে আসবে বলে জানিয়েছে। স্বপ্নের মতো লাগছে। তখনি সিরাত বলল।

ও আপনার ছেলে,

রুবেল মির্জা মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালেন।

আদর দিতে দিতে মাথায় উঠিয়ে ফেলেছেন।তাই এখন আপনার কথাও শুনে না।এখনো সময় আছে মাথার থেকে নামিয়ে ওকে মাটিতে আনুন।

রুবেল মির্জা সিরাতের কথা শুনে আবার মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালেন।সিরাত বের হয়ে গেল কেবিন থেকে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে।সিরাত বের হতেই রুবেল মির্জা তার স্ত্রী কে ফোন দিয়ে খুশির সংবাদটি জানিয়ে দিলেন।যে রুদ্র কাল থেকে অফিসে আসবে।
___________________________________
আজ শামসুজ্জামানের বাড়িতে এক প্রকার তান্ডব চলেছে। শামসুজ্জামান এখন বাড়িতে নেই বাইরে গিয়েছে।শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী বসে বসে কান্না করছেন কারণ …

#চলবে…