তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা পর্ব-১৩+১৪

0
68

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_১৩

হ্যালো,

ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো হৃদিতা।

এখনি নিচে আয়,

আরশাদের কথা শুনে মুহূর্তের মাঝে ঘুম ছুটে গেল হৃদিতার।সে ঝটপট উঠে তৈরি হয়ে তার ব্যালকনি দিয়ে নিচে নেমে গেলো। হৃদিতা তার ব্যালকনি দিয়ে নামতে অভ্যস্ত কারণ প্রায় হৃদিতা এখান দিয়ে নেমে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যায়।তাই হৃদিতা খুব সহজে ব্যালকনি বেয়ে নেমে যায়।

হৃদিতা নিচে নামতেই দেখতে পেলো তার সকল বন্ধুরা তার জন্য বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে।

হৃদিতা সকলের সামনে গিয়ে বলল।

তোদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে করতে আমি ঘুমিয়ে গেছি।

কথাগুলো বলেই হৃদিতা বাইকে আরশাদের পিছনে বসে পড়লো। সকলের বাইক এসে থামলো রাজের বাড়ির সামনে। নূর রাজকে এখানে বাইক থামাতে দেখে প্রশ্ন করলো।

তোর বাড়ির সামনে বাইক থামিয়েছিস কেনো?

আয়না অনেকদিন ধরে বলছিল, ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে কিন্তু আমি সময় পাচ্ছিলাম না তাই ওকে নিয়ে কোথাও নিয়ে যেতেও পারছিলাম না।এই কারণে আমার সাথে অভিমান করে আছে পাগলিটা।তাই আজ ওকে সারপ্রাইজ দিবো। কথাটি বলেই রাজ আয়নার নাম্বারে ফোন করে। এবং ঝটপট তাকে নিচে আসতে বলল।

আয়না চোখ ডলতে ডলতে নিচে নেমে আসলো। এবং বাইরে বেড়িয়ে রাজকে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল।

তুই আমাকে এত রাতে কেনো এখানে আসতে বললি। আয়না এখনো অর্ধেক ঘুমে। আয়নার ঘুমন্ত চেহারা দেখে আব্রাহাম যেনো আবার প্রেমে পড়ে যায় আয়নার।সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে।

রাজ আয়নার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

তুই আগে চোখ মেলে দোখ তারপর কথা বল।

আয়না ভাইয়ের কথা অনুযায়ী পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার ভাইকে ও নূরদের কে দেখে আয়না এক্সাইটেড হয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো।

আই লাভ ইউ ভাইয়া,আই লাভ ইউ তুমি দাঁড়াও আমি এখনি রেডি হয়ে আসছি। কথাটি বলেই আয়না নাচতে নাচতে বাড়ির ভিতর চলে গেল। আয়না কে খুশি হতে দেখে আব্রাহাম মুচকি হাসে। তখনি আব্রাহামের পিছনে বসা নূর আব্রাহাম কে ফিসফিস করে বলল।

এইজন্যই তো বলি,আজ হঠাৎ করে আমাদের আব্রাহামের মাঝ রাতে ঘুরতে মন চাইছে কেনো।

আব্রাহাম নূরের কথার উত্তর না করে শুধু মুচকি হাসে।আয়নার জন্যই তো সে আজ এত ব্যস্ত থাকার পরেও সকলকে নিয়ে বের হয়েছে।কিছুক্ষণের মাঝেই আয়না রেডি হয়ে এসে রাজের পিছনে বসে পরে।

বাইক চলছে অজানা গন্তব্যে, সকলে অনুভব করছে এই সময়টাকে। প্রায় সময় রুদ্র ও তার বন্ধুরা মাঝ রাতে বাইক নিয়ে ঘুরতে বের হয়। তারপর ভোর হওয়া পর্যন্ত চলে তাদের আড্ডা।বাইক এসে একটি রেস্তোরাঁয় সকলে বাইক থেকে নেমে প্রবেশ করে রেস্তোরাঁর ভিতরে।

এই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে সকলে প্রথমে চা অর্ডার করে। এখানে ওরা প্রায় সময়ে আসে।এই রেস্তোরাঁর চা তাদের অনেক ভালোলাগে।সকলে বসে আড্ডা দিচ্ছে ও কথা বলছে।আয়না সকলের মাঝ থেকে উঠে এক কর্ণারে গিয়ে দাঁড়ায়। এখানের পরিবেশটি আয়নার খুব ভালোলাগে।এই রেস্তোরাঁর এক সাইডে নদী এখানে দাঁড়াতেই নদীর থেকে আসা ঠান্ডা হাওয়া পুরো শরীর কে শীতল করে দেয়।যা বরাবর আয়নাকে ভিশন মুগ্ধ করে। আয়না চোখ বন্ধ করে তখনি আয়নার মনে এসে হানা দেয় কিছু বোদনা দায়ক স্মৃতি। যেই সকল স্মৃতিকে সে চিরতরে নিজের মন থেকে মুছে ফেলতে চায়। যখন সে আব্রাহাম কে নিজের অনুভূতি সম্পর্কে জানিয়েছিল।

অতীত…

আয়না তুই ঘরে বসে বসে কি করছিস তাড়াতাড়ি আয় আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।

ভাইয়ের কথা শুনে আয়না আরো তাড়াতাড়ি নিজের হাত চালিয়ে তৈরি হয়ে নেই।আজ রাজ ও তার বন্ধুরা আব্রাহামের বাড়িতে আড্ডা দিবে। আব্রাহামের কথা শুনলেই আয়নার নিজেকে পাগল পাগল মনে হয়।যেই পর্যন্ত আব্রাহাম কে না দেখে নেয় সেই পর্যন্ত আর শান্ত ভাবে বসতে পারে না আয়না।আর আজ তো আব্রাহামের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তাহলে এই চান্স কি মিস করা যায়।তাই তো ভাইকে অনেক বলে আয়না তাকে সাথে নেওয়ার জন্য রাজি করিয়েছে।

ভাইয়া আমি এসে গেছি,

আয়নার কথা শুনে রাজ মোবাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আয়নার দিকে তাকায়। এবং ব্লু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।

তুই এত সেজেছিস কেনো, আমরা আব্রাহামের বাড়িতে যাচ্ছি বিয়ে বাড়িতে না।

আমার সাজা নিয়ে তোমার এত সমস্যা কি ?আর এমনিতেও আমি হালকা সেজেছি।আর কথা না বাড়িয়ে এখন চলো আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আয়না ও রাজ বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আব্রাহাম এর বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।

রাজের বাইক এসে থামে একটি আলিশান বাড়ির সামনে।বাড়িটির বাহির দেখলেই বুঝা যায় ভিতরটা কতটা সুন্দর হতে পারে। আয়না আব্রাহামের বাড়িতে আরো অনেকবার এসেছে রাজের সাথে।এই বাড়িতে যতবারই আসে ততবারই আয়না আব্রাহামের সাথে সাথে এই বাড়ির ও এই বাড়ির মানুষের প্রেমে পরে যাই।এই বাড়ির প্রেমে পড়ার কারণ বাড়ির এত গুছালো ও মুগ্ধকর সাজসজ্জা।ও বাড়ির মানুষের প্রেমে পড়ার কারণ তারা এত বিত্তশালী হওয়ার পরেও এত অমায়িক আচরণ।রাজ ও আয়না বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই দেখতে পায় ড্রইংরুমে বসে সকলে আড্ডা দিচ্ছে। আব্রাহাম কে দেখেই আয়নার বুক ধুকধুক করছে। এরমধ্যে কোথা থেকে যেনো আব্রাহামের বড় ভাবি এসে আয়না কে জাপটে ধরলো। এবং বলল।

কেমন আছো বার্বি ডল,

আয়না ও মুচকি হাসি দিয়ে বলল।

ভালো আছি ভাবি আপনি কেমন আছেন,আর আপনার বেবি কেমন আছে?

আব্রাহামের বড় ভাবি মেহের মুচকি হেসে বলল।

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

ওরা গল্প করুম তুমি আমার সাথে চলো।

কথাটি বলেই আয়না কে সাথে করে নিয়ে গেল মেহেক। ড্রয়িংরুমে থাকা সকলে তা দেখে মুচকি হাসলো।মেহেক আয়নাকে একটু বেশিই আদর করে নিজের ছোট বোনের মতো।তাই আয়না যখনি আসে মেহেক আয়নাকে তার সাথে আয়নাকে রুমে নিয়ে গিয়ে জম্পেশ আড্ডা দেয়।

আয়না মেহেকের পেটের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।

ভাবি বেবির কয় মাস চলছে।

সাত মাস,

বেবি আপনাকে কিক মারে?

হুম অনেক,

এখন কি মারবে কিক,

কেনো তুমি দেখতে চাও,

আয়না মাথা নেড়ে হ্যা সম্মতি দেয়।মেহেক আয়নাকে এভাবে মাথা নাড়তে দেখে হেসে উঠল। আয়নার এক হাত নিজের পেটের সাথে আলতো করে ধরলো। আয়না অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন বেবি কিক মারবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বেবি কিক মারতেই আয়না চেঁচিয়ে উঠলো এবং বলল।

বেবি কিক করেছে,বেবি কিক করেছে।

কে কাকে কিক করেছে?

মেহেক ও আয়না কথাটি শুনে দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পায়। সেখানে আব্রাহামের মা সুফিয়া বেগম দাঁড়িয়ে আছে। সুফিয়া বেগম কে দেখেই আয়না দৌড়ে গিয়ে তাকে জাপটে ধরে। এবং বলল।

কেমন আছো তুমি আন্টি?

ভালো আছি তুই কেমন আছিস?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

এতদিন পর তোর আমাদের কথা মনে পড়লো। তোকে বলেছি মাঝে মাঝেই আমাদের এখান থেকে ঘুরে যেতে কিন্তু তুই তো আসিসই না।

আমার পরীক্ষা ছিল তাই এই কদিন আসতে পারিনি। এখন থেকে আসব।

আচ্ছা তোরা কথা বল আমি তোদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।

বলেই সুফিয়া বেগম চলে গেলেন কিচেনের উদ্দেশ্যে। তখন আয়না মেহেক কে বলল।

অনেকক্ষণ ধরে ঘরে বসে আছি আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। আমার ভালোলাগে না।

আচ্ছা আমিও আসছি,

না না তুমি আরাম করো,আমি যাবো আর আসব।

আয়না রুম থেকে বেড়িয়ে এদিক সেদিক দেখে চুপিচুপি আব্রাহামের রুমে প্রবেশ করল। আব্রাহাম এখন নিচে সকলের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত। আয়না খাটের কাছে এসে ধপাস করে খাটে শুয়ে পরলো। এবং আব্রাহামের একটি ছবি হাতে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো।

তোমাকে এত ভালোবাসার পরেও তুমি কেনো আমার মনের কথা বুঝতে চাও না। তুমি যানো তোমার ভালোবাসা কতটা পুরাই আমাকে। কিন্তু তুমি আমাকে সবসময় অবঙ্গা করো।

কথাগুলো বলে আয়না তার সাথে আনা একটি ছোট চিঠি। আব্রাহামের পড়ার টেবিলের উপর রেখে দেয়। আয়না আব্রাহামের রুম থেকে বের হয়ে অপেক্ষা করছে কখন আব্রাহাম আসবে ও তার দেওয়া চিঠিটা পড়বে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আব্রাহাম আড্ডা থেকে উঠে মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য রুমে প্রবেশ করে। আয়না যেনো এই অপেক্ষায় করছিলো। আব্রাহাম মোবাইল চার্জ দিয়ে বের হওয়ার সময় চিঠিটা সে দেখতে পায়। চিঠিটা খুলতেই আব্রাহাম দেখতে পায় চিঠিতে লিখা আছে।

ওহে আমার মনের রাজা, আমি তোমার মনের রানী হতে চাই~

পানির পিপাসা থেকেও আমার মাঝে তোমাকে দেখার পিপাসা প্রবল~

তোমার দহনে আমি যে জ্বলতে জ্বলতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি।ওহে আমার প্রাণ পুরুষ কেনো তুমি তা দেখেও আমাকে বুঝো না~

কেনো তোমার আমার বেলাতেই এত অবঙ্গা। আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না~

আব্রাহাম এইবার ও আয়নার মনের কথা বুঝেও হয়তো বুঝলো না।তাই তো এটি জানা সত্ত্বেও এই চিঠির মালিক কে।আয়নার সকল মনের অনুভূতি দিয়ে লিখা চিঠিটা ছুড়ে ফেলে দিলো ডাস্টবিনে।আয়না হৃদয়টি আরো একবার ভেঙে গেল। আয়নার চোখে অশ্রু ঝলঝল করছে। আব্রাহাম রুম থেকে বের হতেই দেখতে পায় আয়না তার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

আব্রাহাম আয়নাকে দেখেও না দেখার মতো চলে যেতে চাইলো। কিন্তু তার আগেই আয়না বলে উঠলো।

আব্রাহাম ভাই,

আব্রাহাম দাঁড়িয়ে পড়লো তখন আয়না আব্রাহামের কাছে গিয়ে বলল।

তুমি কেনো আমার মনের কথা বুঝো না। তুমি যানো আমার মনের সকল অনুভূতি শুধু তোমার জন্য। তবুও তুমি আমার অনুভুতিকে পাত্তা দেও না কেনো।আমি এমন কি ভুল করেছি যার জন্য তোমার কাছ থেকে এত অবহেলা পেতে হচ্ছে আমাকে।

কারন তুমি আমার বন্ধুর বোন।এটাই তোমার সবচেয়ে বড় ভুল।আর আমি তোমার জন্য এমন কেনো অনুভূতি আমার মনে জাগাতে চাই না।যার জন্য আমার বন্ধু কষ্ট পায়।

কথাটি বলেই চলে যায় আব্রাহাম।আর তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আয়না বলল।

তুমি যতই চেষ্টা করো না কেনো আমি তোমাকে ভালোবাসা থেকে পিছু হাঁটব না।আমি বারবার চেষ্টা করব তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য।

আয়না কাঁধে কেউ হাত রাখতেই সে অতীত থেকে বের হয়ে আসল। আয়না পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো..

#চলবে…

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_১৪

আয়না পিছনে তাকিয়ে দেখে হৃদিতা দাঁড়িয়ে আছে। আয়না মুচকি হাসি দিয়ে বলল।

হৃদিতা আপু তুমি,

হৃদিতা আয়নার উদ্দেশ্যে বলল।

হুম আমি, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই যদি তোমার অনুমতি থাকে তাহলে।

আমাকে কিছু বলতে আবার তোমার অনুমতির প্রয়োজন পড়ে কবে থেকে।যা বলার বলে ফেলো।

হৃদিতা একটি তপ্ত শ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো।

পুরোনো কথা আর কতদিন মনের মাঝে গেঁথে রাখবে।কেনো তুমি একটি ঘটনার কে কেন্দ্র করে আব্রাহাম কে কষ্ট দিচ্ছ ও নিজেও কষ্ট পাচ্ছ।ওই সময় যা ঘটেছে বা আব্রাহাম যাই করেছে শুধু পরিস্থিতির কারণে করেছে।

আয়না হৃদিতার কথায় একটি নিঃশব্দ মলিন হাসি দিয়ে বলল।

পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতিই তো মানুষ কে আপন পরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।এই পরিস্থিতির জন্যই মানুষ তার আপন মানুষদের ভয়ংকর রুপ সম্পর্কে অবহিত হয়। পরিস্থিতির কারণে মানুষ বুঝতে পারে তার প্রিয় মানুষের মনের কোথায় তারা বসবাস করে।এই পরিস্থিতি প্রিয় মানুষদের ভয়াবহ সত্য সামনে তুলে ধরে।এই পরিস্থিতি শব্দটি কতটা জঘন্য তাই না।এই পরিস্থিতির জন্য মানুষের মন ভেঙ্গে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়।

হৃদিতা এতক্ষণ এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিল আয়নার দিকে। হৃদিতা বুঝতে পারছে যাই কিছু ঘটেছে তার প্রভাবে আয়নার মন অনেক খারাপ ভাবে ভেঙ্গেছে। তাকে শক্ত মনের অধিকারী করে দিয়েছে।তা না হলে আগের আয়না তো এত কঠোর কথা কখনো বলতো না।

হৃদিতা আয়নার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেও আয়নাকে বুঝানোর জন্য ।আয়নার উদ্দেশ্যে বলল।

দেখো আয়না তুমি ঠিকই বলেছ, পরিস্থিতি যেমন আমাদের আপন মানুষ চিনতে সাহায্য করে।ঠিক তেমনি পরিস্থিতি আমাদের বদলাতেও সাহায্য করে। আব্রাহাম যা কিছু করেছে তা ভুল করেছে এটি আমি ভালোভাবে জানি। কিন্তু ওর ভুলের জন্য অনেক বেশি কষ্ট পাচ্ছে। তুমি ওর সাথে কথা বলো না। এমনকি ওর দিকে এখন ফিরেও তাকাও না। একবার ওর দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখো ও তোমার জন্য কি থেকে কি হয়ে গেছে। ও আগের থেকে অনেক…

হৃদিতা তার সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই আয়না বলে উঠলো।

আচ্ছা আপু আমার আত্মসম্মানে ওইদিন যেমন আঘাত করা হয়েছিল। সেইভাবে আপনার আত্মসম্মানে যদি আঘাত করা হতো তাহলে কি আপনি ভুলতে পারতেন সেই কথা।বা মাফ করতে পারতেন তাকে।আমি তো ভুলতে পারিনা।আমি এখনো ভুলতে পারিনা কিভাবে আমার কথা না শুনে আমার উপর মিথ্যে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। একবার তো আমার কথা শুনতে পারতো। কিন্তু আমার কথা না শুনে ও আমার মন ও আমাকে এভাবে ভেঙ্গেছে আমি আজও তা ভুলতে পারিনি।

কি ভুলতে পারিস নি তুই?

রাজ ব্লু কুঁচকে তাকিয়ে আছে হৃদিতা ও আয়নার দিকে।রাজ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হৃদিতা হাসি দিয়ে বলল।

তোর জন্য কি আমরা এখন আমাদের পার্সোনাল কথাও বলতে পারবো না।

রাজ হৃদিতার কথা শুনে মাথা চুলকে বলল।

ও পার্সোনাল,

কথাটি বলেই চলে যায় রাজ,রাজ চলে যেতেই হৃদিতা ও আয়নাকে নিয়ে সকলের সাথে বসে।সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে তাদের স্কুল জীবনের কথা বলছে। তারা ছয় বন্ধু ক্লাস ওয়ান থেকেই একসাথে আছে।কত স্মৃতি তাদের একসাথে। আরশাদ সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

তোদের মনে আছে,আমরা সকলে কলেজ শেষ করে একসাথে পড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু হৃদিতার মা বাবা চাইছিল।ও যেনো abroad পাঠাতে।যেনো ও ওইখানে গিয়ে নিজের স্টাডি শেষ করে।তাই পেশারাইজ করছিল তখন ওর উপর।আমরা কত কষ্ট করে রাজি করিয়েছিলাম যাতে ওকে abroad না পাঠাই।

সকলের মাঝে আব্রাহাম বলল।

হ্যা কিন্তু এটা তোদের মনে আছে।আয়না যখন ইন্টারে কিছুটা খারাপ রেজাল্ট করেছিল।তখন আমরা কত কষ্ট করে ওকে আমাদের কলেজে এডমিশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কারন ও কলেজে থাকা কালীনই আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছিল ও আমার ভার্সিটিতে ভর্তি হবে।নাহলে কোথাও ভর্তি হবে না। কিন্তু সকল ব্যবস্থা করার পর ও আর ওইখানে ভর্তি না হয়ে আবার বাবা মায়ের কাছে জেদ ধরে।ও ওই ভার্সিটি বাঁধে যেকোনো ভার্সিটিতে ভর্তি হতে রাজি।

রাজের কথার সাথে সকলে সম্মতি প্রকাশ করে নূর বলল।

হুম আমাদের অনেক খাটতে হয়েছিল ওর ভর্তির জন্য।

নূরের কথা শেষ হতেই রাজ বলল।

কিন্তু আমি এখানো বুঝতে পারিনি, আয়না হঠাৎ এত খারাপ রেজাল্ট করেছিল কিভাবে।সব সময়ই ও একজন ভালো স্টুডেন্ট ও ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল।সেই নাকি এমন রেজাল্ট করেছিল আমার ওর রেজাল্ট দেখে ওইদিন মাথা ঘুরছিল।ওই সময় ওর কি হয়েছিল আমি আজ ও জানতে পারিনি হঠাৎ করেই অন্য রকম হয়ে গিয়েছিল ও।

রাজ কথাগুলো বলে আয়নার দিকে তাকায় এবং তার মাথায় টোকা দিয়ে বলল।

কিরে ওই সময় তোর কি হয়েছিল?

আয়না ও ঠাট্টার স্বরে বলল।

তখন আমি শুধু ভাবিকে স্বপ্ন দেখতাম।

আয়নার কথা শুনে রাজ আয়নার দিকে ঘুরে বসে বলল।

কি তুই আমার হবু স্ত্রী কে স্বপ্ন দেখেছিলি আর এই কথা তুই আমাকে এখন বলছিস। আচ্ছা এখন বল ও তোকে কি বলেছিলো আমার কথা?

রাজ অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে। তখনি আয়ান রাজের কানের সামনে মুখ বলল।

ভাবি আমাকে বলেছে, তোমার বজ্জাদ ভাইয়াকে আমি বিয়ে করতে চাই নননননা।

আয়না শেষের কথাটি খুব জোরে চিল্লিয়ে বলে একটি দৌড় দেয়।রাজ কথাটি শুনে আয়নার পিছে দৌড় দিতে দিতে বলল।

থাম তুই আজ তোকে আমি দেখাচ্ছি, আমার বউ তোকে কি বলেছে।

ভাই বোনের খুনসুটি সবাই দেখছে আর হাসছে। কিন্তু আব্রাহাম মাথা নিচু করে বসে আছে। আব্রাহামর মনে অপরাধ বোধের আগুন জ্বলছে। কারন আয়নার পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করার কারণ তো ছিল ও নিজে।

আব্রাহাম নিজের অপরাধ বোধের জন্য প্রতিনিয়ত জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। আব্রাহাম এর কথার আঘাত যতটা না আয়না কষ্ট পেয়েছে তার থেকে বেশি কষ্ট এখন আব্রাহাম পাচ্ছে। একদিকে আব্রাহামের মনে অপরাধ বোধ আর অন্য দিকে আয়নার অবহেলা যা এক সময় সেও আয়নাকে করেছে।

আরশাদ আব্রাহামের কাঁধে হাত রেখে বলল।

অতীতের কথা ভেবে আর নিজেকে কষ্ট দিস না। বর্তমানের কথা ভাব কিভাবে ওর অভিমান ভাঙ্গানো যায়।
___________________________________
রুদ্র আজ পুরো স্টাইলে অফিসে প্রবেশ করেছে। রুদ্রকে দেখে এখন যে কেউ বলবে সে একজন পূর্ণ বিজনেস ম্যান।রুদ্রের এভাবে পরিপাটি হয়ে অফিসে আসার মূল কারণ হলো সিরাত।সিরাত যেনো আর কেনো ক্রুটি খুঁজে বের করতে না পারে। রুদ্র অফিসে ঢুকতেই সকলে তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে মেয়েরা। রুদ্র সকলের এমন প্রতিক্রিয়া দেখে বাঁকা হাসে আর মনে মনে ভাবে যদি।এই মেয়ে গুলো তাকে দেখে এই অবস্থা হয় তাহলে সিরাতের কি অবস্থা হতে পারে তাকে দেখে।সিরাত তো ওর সাথে চিপকে থাকার চেষ্টা করবে।যা প্রায় সময় মেয়েরা করে থাকে তার সাথে।কত সুন্দরী মেয়েরাও রুদ্রের সান্নিধ্য চায় কিন্তু রুদ্র তাদের কে পাত্তা দেয় না।এত সুন্দরী মেয়েরা যদি তাকে দেখে পাগল হতে পারে। তাহলে এই সিরাত আবার কি জিনিস।এত হ্যান্ডসাম ছেলে সিরাত আগে কখনো দেখেছে। একবার শুধু ওর বুনা জালে পা দিলেই।তারপর রুদ্র দেখাবে সিরাত কে মজা।

রুদ্র এখন তার কেবিনে বসে আছে আর অপেক্ষা করছে সিরাতের আসার।সিরাতকে ডেকে পাঠিয়েছে সে। কিছুক্ষণের মাঝেই সিরাত রুদ্রের কেবিনের দরজা নক করে। রুদ্র কিছুটা ভাব নিয়ে সিরাত কে রুমে আসতে বলল।

সিরাত কেবিনে প্রবেশ করে রুদ্রের দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকায়। রুদ্রের মনে এখন ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে সিরাতের যেই মুখে সে গালি শুনেছিল সেই মুখেই প্রশংসা শুনবে।তাই রুদ্র সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।

আজ আমাকে কেমন লাগছে?

কেমন লাগবে আবার মানুষের বাচ্চার মতোই তো দেখা যাচ্ছে।

রুদ্র সিরাতের কথা শুনে রাগি গলায় বলল।

শুধু মানুষের বাচ্চা,

শুধু মানুষের বাচ্চা নয় তো তাহলে কি তুমি আমার মুখ থেকে নিজেকে গরুর বাচ্চা ও শুনতে চাও।তবে শুনে রাখো আমি তোমাকে গরুর বাচ্চা বলতে পারব না। কারন তুমি যেমনই হও তোমার বাবা একজন ভালো মানুষ।তাই তুমি চাইলে আমি শুধু তোমাকে গরু বলতে পারি।

সেট আপ স্টুপিট, তোমার মাঝে কি মন বলতে কিছু নেই।এত হ্যান্ডসাম একটি ছেলে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আর তুমি কিনা তার প্রশংসা করার বদলে স্টুপিট কথা বলছো।

সিরাত রুদ্রের কথা শুনে ব্লু কুঁচকে বলল।

হ্যান্ডসাম,কে হ্যান্ডসাম আমি তো কেনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখছি না।আমার আশে পাশে।

তুমি কি বলতে চাও আমি হ্যান্ডসাম না।

দিনের বেলা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো ও ভালোভাবে নিজের চেহারা আয়নায় দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করতে এসে।

কথাটি বলেই সিরাত কেবিন থেকে বেড়িয়ে নিজের কাজে চলে যায়।আর এদিকে সত্যি একটি আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে নিজেকেই প্রশ্ন করলো।

আমি কি সত্যি হ্যান্ডসাম না?

#চলবে….