#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_২১
সিরাত ডাইনিং টেবিলে এসে বসে সকলের সাথে খাওয়া শুরু করে। রেহানা বেগম,সাইরা,সিরাত, মহিমা তিনজনই খাবার খেতে ব্যস্ত তখনি সিরাত খাবারের মাঝে বলে উঠলো।
কাল আমি কিছু অফিসিয়াল কাজের জন্য সূর্যধারি গ্রামে যাবো।
সিরাতের কথাটি বলার সাথে সাথে সকলের হাত থেমে গেল।সবাই সিরাতের দিকে অবাকতার দৃষ্টিতে তাকায়। রেহানা বেগম স্বাভাবিক ভাবেই বললেন।
কতদিনে জন্য যাবে,আর একা যাবি নাকি সাথে কেউ সাথে যাবে তোর।
রুদ্র যাবে আমার সাথে।দুই তিনদিন সময় লাগবে হয়তো।
সব প্রয়োজনীয় জিনিস গুছানো হয়ে গেছে?
হ্যাঁ,
সিয়ামের কথা শুনে রেহানা বেগম আর কিছু বলে না।উনি আবার নিজের খাবারে মনোযোগ প্রধান করেন।এতক্ষণ মহিমা ও সাইরা রেহানা বেগম ও সিরাতের কথা শুনছিলো। মহিমা মায়ের কথায় অবাক হয়ে বলল।
মা সিরাত একটি ছেলের সাথে একা এতদূরে যাবে। কিন্তু তুমি কিছুই বলছো না।ওর কি একা রুদ্রের সাথে কোথাও যাওয়া ঠিক হবে।
মহিমার কথায় রেহানা বেগম চোখমুখ শক্ত করে মহিমা কে বলল।
তুই কি সিরাতকে বিশ্বাস করিস না?
হ্যাঁ মা আমার সিরারতের উপর পূর্ণ বিশ্বাস আছে। কিন্তু রুদ্র ওকে তো আমরা ঠিক ভাবে চিনিও না। তাহলে কিভাবে তার সাথে আমরা সিরাত কে একা যেতে দিবো।
সিরাত যখন রুদ্রের সাথে যেতে রাজি হয়েছে যখন তখন নিশ্চয়ই ভালোভাবে ভেবে,চিন্তা করে রাজি হয়েছে।আমি ভালোভাবে জানি সিরাত কখনো না ভেবে কেনো সিদ্ধান্ত নেই না।তাই আমাদের ও বেশি কিছু ভাবনার প্রয়োজন নেই।
মায়ের কথায় দমে যায় মহিমা। কিন্তু তবুও তার মনে খচখচ করছে মনে হচ্ছে সিরাতের যাওয়া ঠিক হবে না।কেনো বিপদ ঘটতে পারে তার সাথে।সিরাত হয়তো মহিমার মুখ দেখে তার মনের কথা বুঝতে পারলো।তাই সিরাত সকলকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
আমাদের সাথে নূর ও যাবে।
কথাটি বলেই সিরাত খাবার শেষ করে নিজের রুমে চলে যায়।সিরাতের কথা শুনে মহিমা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
___________________________________
সূর্য অস্তমিত হয়েছে বেশ অনেক সময় আগে। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে এখন ১টা বেজে ৪৫ মিনিট। বাড়িতে সকলে নিজের ঘুমে বিভোর হয়ে আছে । কিন্তু এখনো জেগে আসে সাইরা। রাজের ফোনের অপেক্ষা করছে সে।সাইরার ও এখন ভালোলাগে না যদি রাজ একদিন ও তাকে ফোন না করে। প্রতি মূহুর্ত অস্থিরতায় কাটাতে হয় তাকে। যতই সাইরা চাইছে রাজ থেকে দূরে থাকতে ততোই রাজের সাথে জুড়ে যাচ্ছে সে।সাইরার ভাবনার মাঝেই সাইরার মোবাইলটি সশব্দে বেজে উঠলো।
সাইরা তাড়াতাড়ি করে ফোনটি সাইলেন্ট করে ফেললো। বাড়ির কেউ যদি এত রাতে তার ফোন বাজার শব্দ শুনতে পায় তাহলে নিশ্চয়ই তাকে সন্দেহ করবে।সাইরা তরিগড়ি করে ফোনটি রিসিভ করেই তার কোমল কন্ঠে বলল।
হ্যালো,
সাইরার কোমল কন্ঠ শুনে রাজ নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। রাজের কেনো সারা শব্দ না পেয়ে সাইরা বলল।
আপনি কথা বলছেন না কেনো?
রাজ সাইরার কথার প্রতি উত্তরে মুচকি হেসে বলল।
তোমার কন্ঠ শুনেইতো আমার অবস্থা বেহাল হয়ে গিয়েছে। তোমার কথার জবাব কিভাবে দিবো।
রাজের কথায় সাইরা কিছুটা লজ্জাবোধ করে।রাজ তা বুঝতে পেরে বলল।
লজ্জা পাচ্ছ তোমার লজ্জা মাখা মুখ আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। দেখাবে তোমার লজ্জা মাখা মুখ আমাকে?
এখন আমার মুখ আপনাকে কিভাবে দেখাবো? আপনি তো আমার থেকে অনেক দূরে।
এটা তুমি ঠিক বলেছ, কিন্তু এখন দেখতে না পারলে কি হয়েছে একদিন তোমাকে আমিই লজ্জা দিতে দিতে লাল করে ফেলবো।
সাইরা রাজের কথা শুনে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
কিভাবে,
রাজ সাইরার কথায় মুখ টিপে হেসে বলল।
তা সময় হলেই জানতে পারবে।
এভাবেই চলতে থাকে রাজ ও সাইরার কথা। কতক্ষন এই কথা চলবে তা তারা নিজেও জানে না।
___________________________________
আবার একটি নতুন সকালের দেখা মিলল। নতুন সকাল আমাদের জীবনকে নতুন করে দেখার ও নতুন করে উপলব্ধি করার ও নতুন করে কিছু সুখ দুঃখ নিয়ে আসে। কেউ জীবনের সাথে পরাজিত হয়ে হার মেনে নেয়। আবার কেউ এ নতুন সকালে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। প্রত্যেক জনের কাছে নতুন সকালের অনুমতি আলাদা আলাদা হয় ।কারও কাছে বেঁচে থাকার নতুন উদ্যেগ বা কারও কাছে যন্ত্রণাময় জীবনের দিকে পা বাড়াবার আরেকটি দিন।
রাজিব বসে আছে শামসুজ্জামানের বাড়িতে। সকাল হতেই সে বেড়িয়ে পরেছিল মহিমা নিজের বাড়িতে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বাড়িতে শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী ব্যতীত আর কেউ নেই। রাজিব হাসি মুখে কথা বলছে শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে রাজিব ভেবেছে হয়তো সকলে মিলে কোথাও গিয়েছে। কিন্তু পরের মুহূর্তে চকটু রাগ ও লাগলো। মহিমা এই অবস্থায় কোথায় গিয়েছে তার বাচ্চার যদি।চুল পরিমান ও ক্ষতি হয় তাহলে সে মহিমা কে এমন শিক্ষা দিবে। রাজিব যখনি মহিমার কথা জিজ্ঞেস করবে তখনি বাড়িতে প্রবেশ করলো শামসুজ্জামান।
শামসুজ্জামান কে দেখেই রাজিব হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো।
আসসালামুয়ালাইকুম, আব্বা কেমন আছেন?
রাজিবকে দেখে যেনো শামসুজ্জামানের ভিতরে যেনো ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজিবকে দেখে শামসুজ্জামানের মাথায় আগুন ধরে গেল। কারণ শামসুজ্জামানের মনে হয় রেহানা বেগম তার মেয়েদের নিয়ে বাড়ি ছাড়ার বেশিরভাগ হাতই রাজিবের। রাজিব যদি তার দেখা দেখি দ্বিতীয় বিয়ে না করতো তাহলে হয়তো রেহানা বেগম কিছুতেই তার মেয়েকে রেখে চলে যেতে পারতেন না। মানুষ নিজের দোষ ঢাকতে অন্য জনের উপর দোষ চাপাতে বেশি পছন্দ করে তা এখন শামসুজ্জামানের ভিতর পরিলক্ষিত। শামসুজ্জামান রাগে গজগজ করতে করতে রাজিবের সামনে গিয়ে বলল।
তুই আমার বাড়িতে কি করছিস? কেনো এসেছিস তুই এখানে?
রাজিব শামসুজ্জামানের ব্যবহারে কিছুটা ধাক্কা খায়। কারণ এর আগে রাজিব যখনি এই বাড়িতে এসেছে শামসুজ্জামান তার সাথে বাবা ছাড়া কথা বলে নি।আর জামাই আদরের কথা তো বাদই দিলাম। শামসুজ্জামানের ব্যবহারে রাজিবের ও মনে রাগের সঞ্চার হয়। কিন্তু এখন রাগ দেখালে তো আর হবে না ভুল যখন করেছে তখন এমন একটু আকটু কথা তার শুনা লাগবে।তাই রাজিব শান্ত ভাবেই বলল।
আব্বা আমি মহিমাকে নিতে এসেছি।ওকে একটু ডেকে দিন আমি ওর কাছে মাফ চাইতে চাই।
শামসুজ্জামান রাজিবের উদ্দেশ্যে বলল।
মহিমা আর তোমার সাথে ওই বাড়িতে ফিরে যাবে না কখনো।
আব্বা আপনি এই কথা বলছেন,আপনি তো খুব ভালো ভাবে জানেন পুরুষ মানুষের মন একটু আকটু অন্য নারীর উপর যেতেই পারে। আপনার উচিত ছিল মহিমা কে বুঝিয়ে শুনিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া।
শামসুজ্জামান কে রাজিব কথাটি যে খোঁচা মেরে বলেছে তা শামসুজ্জামান খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছেন। শামসুজ্জামান ও কম যায়না তিনি ও রাজিবের উদ্দেশ্যে বলল।
আমি দ্বিতীয় বিয়ে করে ভালোভাবে বুঝতে পারছি যে কত বড় ভুল করেছি। নিশ্চয়ই তুমিও এটা উপলব্ধি করেই এখানে মহিমা কে নিতে এসেছ। আচ্ছা তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী আবার তোমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়নি তো।তাই এখন মহিমা কে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছো। নাহলে তো এই কদিন মহিমার খোঁজ খবর নেওয়ার ও প্রয়োজন বোধ করোনি।
রাজিব এতক্ষণ নিজেকে সংযত করে রেখেছিল কিন্তু এখন আর কিছুতেই যেনো নিজের মেজাজ ঠিক রাখতে পারলো না।
আপনাকে ভালোই ভালোই জিজ্ঞেস করছি মহিমা কোথায় কিন্তু আপনি কথা পেচাচ্ছেন। আপনাদের উপর দয়া দেখিয়ে আমি মহিমা কে নিয়ে যেতে এসেছে। আপনাদের তো আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কিন্তু আপনি তা না করে আমার অপমান করছেন।আমি যদি মহিমা কে না নিয়ে যায় তাহলে কি সারাজীবন ওকে ও ওর সন্তানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে। সমাজের মানুষ যখন আপনার মেয়ের দিকে আঙ্গুল তুলবে তখন কি করবেন আপনি।
রাজিবের কথায় শামসুজ্জামান হেসে বলল।
সমাজের লোক তো তখন আঙ্গুল তুলবে যখন মহিমা এখানে থাকবে?
শামসুজ্জামানের কথা শুনে রাজিব ব্লু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।
থাকবে, মহিমা এখানে নেই?
না নেই তোমাদের বাড়ি থেকে ও যেদিন এখানে এসেছে। তার পরের দিনই রেহানা মহিমা,সিরাত,সাইরা কে সাথে নিয়ে চলে গিয়েছে। কোথায় গিয়েছে এটি আমি জানি না।তাই আমাকে আর কেনো প্রশ্ন করে লাভ নেই।
কথাটি বলেই নিজের ঘরে চলে যায় শামসুজ্জামান। রাজিব দাঁড়িয়ে আছে একই স্থানে তার যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। মহিমা এই অবস্থায় অন্য কোথাও চলে গিয়েছে। তবুও রাজিবের ভিতরে কেনো আফসোস দেখা যাচ্ছে না।তার ভিতরের ক্রোধ যেনো আরও বেড়ে গেল।সেও দেখতে চায় মহিমা তার সন্তান কে নিয়ে কতদিন দূরে থাকতে পারে।ওর কাছে যদি ফিরে না আসে তাহলে ওর সন্তান কে কার পরিচয় দিয়ে বড় করবে বাবার পরিচয় ছাড়া কি সন্তান বড় করা সম্ভব। কথাটি ভেবেই রাজিব শয়তানি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। কিন্তু রাজিব যানেনা তার জন্য বাড়িতে কি অপেক্ষা করছে।এখান থেকেই হয়তো শুরু হবে রাজিবের কর্মের শাস্তি।
___________________________________
সিরাত বাড়ির সকলের থেকে বিদায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্রের গাড়ির অপেক্ষায়। রুদ্র ওকে নিতে আসবে কারণ দুজনের তো একই সাথে যেতে হবে। অবশ্য নূর ও থাকবে রুদ্রের সাথে। সত্যি বলতে সিরাতের ও কিছুটা অস্বস্তি অনুভব হচ্ছিলো রুদ্রের সাথে একা যেতে কিন্তু যখনি ও শুনেছে নূর তাদের সাথে যাবে সকল অস্বস্তি দূর হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই রুদ্রের গাড়ি এসে থামে সিরাতের সামনে। রুদ্র ড্রাইভারের সাথে বসে আছে ও নূর বসে আছে ব্যাক সিটে।নূর রুদ্রকে আগেই বলে দিয়েছে সে সিরাতের সাথে বসবে রুদ্র ও নূরের কথা বিনা বাক্যে মেনে নেই।
সিরাত নূরের সাথে কুশল বিনিময় করে নূরের সাথে বসে পড়ে। গাড়ি চলতে থাকে নিজ গন্তব্যে কিন্তু তারা কেউ যানে এই গন্তব্য তাদের জীবনের অনেক কিছুই বদলে দিবে। তাদের তিনজনের জীবনের আসতে চলেছে নতুন এক মোড়।এই মোড়ের কারণে হয়তো তাদের জীবনে বয়ে যাবে নতুন এক ঝড়।
#চলবে..
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_২২
টানা পাঁচ ঘন্টা জার্নি করে গাড়ি এসে থেমেছে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্য সূর্যধারি গ্রামে। অবশ্য গাড়ি রাস্তায় এক দুবার দাঁড়িয়ে ছিল। রুদ্রই দাড় করিয়েছিল হালকা কিছু খাবার খাওয়ার জন্য।সিরাত ও নূরের কাছে আজকের সফরটি মোটামোটি খারাপ যায়নি। কিন্তু সফরটি খারাপ কেটেছে রুদ্রের কাছে তার বিশেষ কারণ হলো সিরাতের খোঁচা মারা কথা গুলো হজম করা যা রুদ্রের সহ্যের বাইরে ছিল তবুও বিষের মতো সেই কথাগুলো কেও হজম করতে হয়েছে রুদ্রের। ভুলটি আসলে রুদ্রের ছিল ।কারণ সেই আগে সিরাতকে জ্বালাতন করার জন্য ও নিজের সময়টি একটি মজাদার কাটানোর জন্য সিরাতকে খোঁচা মারা কথা বলেছে। কিন্তু ও ভুলে গেছে ও কার সাথে টক্কর নিতে চাইছে। সিরাত যে ইটের জবাব পাথরে দিতে পছন্দ করে তা হয়তো রুদ্রের মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।তাই তো সিরাত পুরো রাস্তা রুদ্রের নাজেহাল অবস্থা করে ছেড়েছে সিরাত। রুদ্র সিরাতকে কিছু করতে না পেরে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বসে ছিল। এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে এই সকল কিছুর প্রতিশোধ রুদ্র নিয়েই ছাড়বে সিরাত থেকে।
রুদ্র ও সিরাতের ঝগড়া থেকে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছে নূর। দুজনের ঝগড়া নূর খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। শুধু নূর শুনেনি তার সকল বন্ধুকেও কল করে শুনিয়েছে। কিন্তু তা সিরাত ও রুদ্র কেউ জানে না। নূর শুধু একা মজা কেনো নিবে এই ঝগড়ার তার বন্ধুদের ও তো অধিকার আছে একটু বিনেদন নেওয়ার। এবং তারাও এই সুযোগ হাত ছাড়া করেনি।সকলে ফোনের উপাস থেকে সিরাত ও রুদ্রের ঝগড়া শুনে হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে।তারা সকলে ভালোভাবে এটা বুঝে গেছে রুদ্রকে জব্দ করা শুধু সিরাতের পক্ষে সম্ভব।
সূর্যধারি গ্রামটি খুবই সুন্দর একটি গ্রাম মন মুগ্ধ করার মতো । তা গ্রামের পরিবেশ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।সিরাত, নূর ও রুদ্র এখন হোটেলের ভিতর প্রবেশ করে দাঁড়িয়ে আছে রিসিভশনে।রিসিভশনিষ্ট কিছুতেই তাদের রুম বুক করতে দিচ্ছে না। এখানে গ্রামের বাইরে থেকে আসা কেনো মানুষকে নাকি রুম দেওয়া হয়না।আর যদি রুম বুক করতে হয় তাহলে নাকি পারমিশন নিয়ে আসতে হবে।রুদ্র আজ পর্যন্ত এমন আজব নিয়ম কেনো হোটেলে দেখেনি।এই নিয়মের জন্য এখন তারা রুম বুক করতে পারছে না। কিন্তু রুদ্রের জানা মতে এই হোটেল ছাড়া এই গ্রামের ভিতরে আর একটিও ভালো হোটেল নেই।তাই রুদ্র এখানে রুম বুক করতে চাইছে। রুদ্রের সাথে এক প্রকার ঝগড়া লেগে গেছে রিসিভশনিস্ট এর সাথে। তবুও কিছুতেই যেনো কাজ হচ্ছে না। রুদ্র এখানে নিজের ক্ষমতার ও ব্যবহার করতে চাইছে না। কারণ তার সাথে সিরাত ও নূর আছে। এখানে বেশি ঝামেলা করলে তার প্রভাব নূর ও সিরাতের উপর ও পড়বে। রুদ্রের ঝগড়ার মাঝে সেখানে উপস্থিত হয় রুদ্রের ক্লাইন্ট মি.আজা।উনি এসই রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
মি. মির্জা প্লিজ আপনি শান্ত হোন আমি কথা বলছি।
মি.আজাদ কে দেখে রুদ্র কিছুটা শান্ত হয়ে দাঁড়ায়।মি.মির্জা ফোন বের করে একজনকে কল করে রিসিভশনিসের কাছে ফোনটি এগিয়ে দেয়। রিসিভশনিস্ট ফোন কানে নিয়ে বলল।
জ্বী ভাই আপনি যা বলবেন তাই হবে।
কথাটি বলেই ফোনটি আবার মি.আজাদের কাছে দিয়ে দিলো।মি.আজাদ ফোনটি কানে ধরে বলল।
জ্বী ভাই, ধন্যবাদ ভাই, জ্বী জ্বী আপনি যেভাবে বলেছেন ঠিক তাই হবে।
কথাটি বলেই ফোনটি কেটে দিলো।সিরাত, নূর, রুদ্র তিনজনই মি.আজাদের দিকে তাকিয়ে ছিল।মি.আজাদ রুদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল।
মি.মির্জা আপনাকে আমি এইজন্যই আমাদের বাড়িতে থাকার কথা বলেছিলাম কিন্তু আপনি আমার কথা শুনেন নি। আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ হোটেলেই বাইরের কাওকে ভাড়া দেওয়া হয়না।আর যেগুলো দেওয়া হয় সেই গুলো অনেক লো কোয়ালিটির হোটেল। কিন্তু এখন কেনো সমস্যা নেই আপনারা এখানে আপনাদের ইচ্ছে অনুযায়ী থাকতে পারবেন।
কথাটি বলেই মি.আজাদ চলে গেলেন।
রুদ্র তাদের জন্য মোট তিনটি রুম বুক করেছে।একটি সিরাতের একটি নূরের আরেকটি তার নিজের জন্য।সকলেই জার্নি করে অনেক বেশি ক্লান্ত তাই রুমে ঠুকেই সর্বপ্রথম তিনজনেই ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
সিরাত ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়ে বিছানায়।কাল রাতে ও ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি নি।ওর উপর কাজের অনেক প্রেসার তার মাঝে নতুন ডিলের জন্য বারতি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।আজ সন্ধ্যার দিক দিয়ে তাদের মিটিং এটেন্ড করতে হব। এখানে আসার পর জার্নি করে সিরাতের শরীর আর চলবে না তা ও খুব ভালোভাবেই জানতো।তাই কাল রাতেই সকল কিছু রেডি করে রেখেছিল সিরাত।সকল কিছু রেডি করতেও প্রায় রাত দুটো বেজে গেছে আবার সকলে তাড়াতাড়ি বের হতে হয়েছে বলে ঘুম ঠিকমতো হয়নি তার। এখন যদি না ঘুমাতে পারে।তাহলে সিরাতের জন্য মিটিং টি এটেন্ড করা কষ্টকর হয়ে পড়বে।তাই ঘুম এখন সিরাতের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।
নূর একেবারে গোসল করে বের হয়েছে ওয়াশ রুম থেকে। কারণ লম্বা জার্নি করার পর যদি নূর গোসল না করতে পারে তাহলে ওর কাছে মনে হয় ওর পুরো শরীরে যন্ত্রণা হচ্ছে।এটি নূরের ছোট বেলা থেকেই অভ্যাস।শত শীতের মাঝেও নূর নিজের অভ্যাসটি পরিবর্তন করতে পারেনি।নূর গোসল করে ভিজা চুলে এসে খোলা বারান্দায় দাঁড়াতেই তার পুরো শরীর জুড়ে একটি ঠান্ডা বাতাস স্পর্শ করে ছুঁয়ে গেল। গ্রামের দূষণ মুক্ত শীতল হওয়ায় শরীরের সাথে সাথে যেনো নূরের মন ও ফ্রেশ হয়ে গেল। নূর চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে চাইছে এই শীতলতা কে।
কিছুক্ষণ এই মন মুগ্ধ পরিবেশ কে অনুভব করে নূর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য রুমের ভিতরে চলে আসে।
এদিকে রুদ্র ফ্রেশ হয়ে এসেই ল্যাপটপ নিয়ে নিজের অসম্পূর্ণ সকল কাজ সম্পূর্ণ করতে থাকে।কাল রাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় থাকার কারণে ও নিজের কাজ পুরো করতে পারনি ।তাই এখন ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও বিশ্রাম নিতে পারছে না। সন্ধ্যা বেলা প্রজেক্ট পুরো তৈরি করে রাখতে হবে।সিরাত নিজের সকল কাজ সম্পূর্ণ করে রেখেছে তা রুদ্র খুব ভালোভাবেই জানে।তাইতো রুদ্র নিজের কাজ যত দ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ করতে চাইছে। নাহলে ক্লাইন্টরা তো বাদের কথা সিরাতি তাকে কথা শুনাতে শুনাতে কান জ্বালা ফালা করে ফেলবে। রুদ্র কিছু সময় চিন্তা করে সিরাত কোন ছেলের বউ হবে সেই বেচারার কপাল কতটাই না খারাপ হবে যে সিরাতের মতো একটি জল্লাদ মেয়েকে বিয়ে করবে।আসলে রুদ্রের তার জন্য প্রচুর আফসোস হয়।যখনি রুদ্র সেই ছেলেটির কথা ভাবে তখনি রুদ্রের ছেলেটির জন্য মন থেকে একটি কথায় বের হয়।
হায় বেচারা,
___________________________________
রাজিব এখন বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়েছে মহিমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে ও আর নিজের বাড়িতে যায়নি।এই কয় ঘন্টা সে বাইরেই ছিল। মূলত তার বাড়ি গিয়ে মা বউয়ের ঝগড়া শুনার কেনো ইচ্ছে নেই। রাজিব যেনো ক্লান্ত তাদের এমন আচরণে। বাড়িতে না ফিরার আরেকটি কারণ হলো মহিমা কে তার বাবার বাড়িতে না পাওয়া। রাজিব ভেবেছিল হয়তো শামসুজ্জামান মিথ্যা কথা বলছেন তিনি জানেন না মহিমা কোথায় তিনিই হয়তো তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য মহিমা কে কোথাও লুকিয়ে রেখেছে।তাই রাজিব মহিমাদের সকল আত্নীয় দের বাড়িতে তার খোঁজ নিয়েছে কিন্তু কোথাও তাকে পায়নি।উল্টো এটি জানতে পেরেছেন শামসুজ্জামান ও নাকি তার স্ত্রী সন্তানদের সন্ধান করে গিয়েছে। তার মানে শামসুজ্জামান ও তাদের খোঁজ চালাচ্ছে।
রাজিব এটি ভেবে পায়না মহিমা যেই সহজ সরল ও বোকা মেয়ে ও কিভাবে রাতারাতি গায়েব হয়ে গেল। মহিমার পেটে তো ওর সন্তান আর রাজিব যতটুকু জানে মহিমা তাকে ভালোবাসে।আর এই ভালোবাসার জন্যই রাজিবের শত ভুল ও মাফ করেছে।তাইতো মহিমার তার প্রতি এই অগাত ভালোবাসা দেখে এই বিরাট কান্ড ঘটিয়েছিল রাজিব।ও মনে করেছিল ও যা কিছু করুক না কেনো মহিমা তাকে নিশ্চিত মাফ করে দিবে নিজের জন্য না হলেও নিজের সন্তানের কথা ভেবে সতীন কেও মেনে নিবে। কিন্তু মহিমা এরকম কিছুই করেনি উল্টো তার সকল ভাবনাকে বুরো আঙ্গুল দেখিয়ে অন্য যায়গায় চলে গেছে নিজের মা বোনের সাথে।
রাজিবের মা একটু আগে ফোন দিয়ে রাজিবকে বাড়িতে ফিরতে বলেছে। রাজিবের মা ফোন করে কান্না ও করছিল কিন্তু এত আর্জেন্ট ডাকার কারণ ও কান্না করার কারণ কিছুই বলেনি তাকে তাই চিন্তিত হয়ে রাজিব বা বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে ফিরেই রাজিব দেখতে পায় বাড়ির ভিতরে মানুষের ভীড়। রাজিব বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পেলো বাড়িতে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। রাজিবের মা আর্তনাদ করতে করতে রাজিবের কাছে এসে বলল।
বাবা দেখ তোর বউ কি করেছে…
#চলবে..
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_২৩
রাজিবের মা রাজিবের কাছে এসে আর্তনাদ করতে করতে বলল।
বাবা দেখ তোর বউ পুলিশ ডেকে নিয়ে এসেছে। তোকে নাকি ও পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিবে।ও আমার একটি কথাও শুনছে না।ও পুলিশ কে বলেছে আমরা নাকি ওকে অত্যাচার করি। এখন তুই বোঝা তোর বউকে এইরকম ছোট খাটো ঝগড়ার জন্য কেউ পুলিশ বাড়িতে ডেকে আনে।
মায়ের কথা শুনে রাজিব কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল রাজিব ও কখনো ভাবেনি ওর দ্বিতীয় স্ত্রী তিতির এমন কিছু করবে।জানলে ওর ব্যবস্থা আগেই করতো কখনো এত উড়তে দিতো না। কথাটি ভাবতেই রাজিবের মাথা গরম হয়ে গেল এটি ভাবতেই তিতিরের এত সাহস কিভাবে হলো এই সকল কিছু করার।ও কি ভেবেছে পুলিশকে ও ডেকে আনবেন পুলিশ ওকে ভয় দেখাবে আর ও ভয় পেয়ে যাবে।এত সহজ ওকে ভয় দেখানো।
কথাটির ভাবতেই রাজিব পুলিশের কাছে এগিয়ে নরম কন্ঠে বলল।
কি হয়েছে স্যার, আপনারা আমার বাড়িতে কেনো এসেছে।
রাজিবের কথার প্রতি উত্তরে ইন্সপেক্টর বলল।
আপনার স্ত্রী অভিযোগ করেছে আপনি উনাকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করেছেন।
পুলিশের কথা শুনে রাজিব কিছুটা অনুনয় স্বরে বলল।
এমন কিছুই না স্যার, আমাদের মাঝে শুধু ছোট একটি ঝগড়া হয়েছে।ও হয়তো সেই জন্য রাগ করে আপনাদের কাছে চলে গিয়েছে এটি আমাদের পারিবারিক ব্যাপার।আমি আমার স্ত্রীকে বুঝিয়ে বলবো দয়া করে আপনারা ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।
রাজিবের কথার প্রতি উত্তরে ইন্সপেক্টর বলল।
আমরা এখানে শুধু শুধু আসিনি, আপনার স্ত্রীর গায়ে থাকা মারের দাগই বলে দিচ্ছে তার উপর করা নির্যাতনের কথা। এছাড়া উনি আমাদের প্রমাণ ও দিয়েছে।
পুলিশের কথায় রাজিব বিস্ময়কর কন্ঠে বলল।
কি প্রমাণ ?
পুলিশ ইন্সপেক্টর ফোনে একটি ভিডিও ফুটেজ চালু করে এগিয়ে দিলো রাজিবের দিকে। রাজিব ফোনটি হাতে নিয়ে ফুটেজ দেখতেই তার হাত কাঁপতে লাগলো। কারণ এই ভিডিওতে কাল রাতে তিতিরের উপর করা অত্যাচারের ফুটেজ। রাজিব বুঝতে পারছে না তিতির কখন এই ভিডিও বানালো। তার মানে তিতির যা করেছে সকল কিছু ইচ্ছে করে করেছে। কিন্তু তিতির এই সকল কিছু কেনো করেছে তিতির কেনো ওকে ফাঁসাতে চাইছে তিতির তো ওকে ভালোবাসে তাহলে কি কারন হতে পারে।
রাজিব তিতিরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। এদিকে তিতির রাজিবের তাকানো দেখে শয়তানি হাসি দেয়। তিতির কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিতিরের অনেক দিনের পরিশ্রম আজ সফল হতে যাচ্ছে। তার মুখে লেপ্টে আছে জয়ের হাসি। তিতির এখন ভিতরে ভিতরে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে কিন্তু এই আনন্দের কারণ কি।এর মধ্যে রাজিবের হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয় পুলিশ ইন্সপেক্টর। রাজিব পুলিশ কে অনুরোধ করতে থাকে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ তার কেনো কথা শুনছে না। তখন রাজিবের মা পুলিশের কাছে এসে বলল।
দোয়া করে আমার ছেলেকে ছেড়ে দিন আমার ছেলে কিছুই করেনি ও নির্দোষ সব এই মেয়ের চাল।
কথাটি বলেই রাজিবের মা তিতিরের কাছে এসে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো।
এই ডাইনি তুই আমার ছেলেকে জেলে পাঠাচ্ছিস কেনো ও তোর স্বামী হয় ভুলে গেছিস। স্ত্রীর উচিত স্বামীর পায়ে ধরে বসে থাকা। আর তুই এতটুকু একটা কথার জন্য আমার ছেলেকে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছিস। আমার ছেলে এই কোন মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে মহিমা কত ভালো ছিল। আর এই মেয়ে আস্ত একটা ডাইনি আমার ঘর আমার জ্বালিয়ে ছাই করে দিচ্ছে।আমি তোকে ছাড়ব না।
কথাটি বলে যেই তিতিরের দিকে হামলা করতে গেল রাজিবের মা।তখনি পুলিশ গম্ভীর মুখে বলল।
আপনি যদি মিসেস তিতির কে কিছু করেন আমরা আপনাকেও গ্রেফতার করতে বাধ্য হব।
কথাটি বলতেই রাজিবের মা চুপছে গেলেন।উনি কিছুতেই জেলে যেতে চাননা তাই আর একটি শব্দ ও উনি করলেন না।
রাজিবকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে তখনি তিতির পুলিশ কে উদ্দেশ্য করে বলল।
থামুন,
তিতিরের কথা শুনে রাজিব ও তার মা যেনো আশার আলো দেখতে পেলেন তারা মনে করেছে হয়তো তিতির পুলিশকে আটকাবে রাজিব কে নিয়ে যেতে। কিন্তু রাজিবের সামনে তিতির এসে বলল।
কেমন লাগছে নিজেকে বন্দি অবস্থায় দেখে। একটি সত্য কথা বলি তোমাকে এই অবস্থায় দেখে আমার অনেক ভালো লাগছে। কারণ তোমার এই অবস্থা আমার দির্ঘ দিনের পরিশ্রমের ফল।তোমাকে এই অবস্থায় আমি কি কি করেছি তা তুমি জানো না। কিন্তু আমার প্রতিশোধ এখনো পূর্ণ হয়নি তাই তোমাকে যে আরো কষ্ট পেতে হবে আমার জান। কিন্তু তুমি চিন্তা করো না তোমাকে তুমি যেনো ভালো মতো তোমার জীবনে করা সকল গুনাহের শাস্তি আরামে ভোগ করতে পারো আমি সেই ব্যবস্থায় করে রেখেছি।
রাজিব অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তিতিরের দিকে। রাজিবের সাথে এমন কেনো করছে তা রাজিব জানে। কিন্তু রাজিব এটা ঠিকই বুঝতে পারছে তিতির এতদিন তার সাথে ভালোবাসা নামক প্রতারণা করেছে। কিন্তু কেনো? তিতির সাথে পরকীয়ার আগে তো রাজিবের কেনো পরিচয় ছিল না।তাহলে তিতির কেনো এই সকল কিছু করছে কেনো রাজিবকে শাস্তি দিতে চাইছে। রাজিব তিতির কে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই পুলিশ টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে রাজিবকে। সেদিকে তাকিয়ে প্রসান্তিময় হাসি হাসছে তিতির।
___________________________________
নূর,সিরাত ও রুদ্র বের হয়েছে মি.আজাদ চৌধরীর বাড়ির উদ্দেশ্যে আজ তাদের বিজনেস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবে।মি.আজাদদের বাড়িতে আরো কিছু লোক আসবে যারা সকলে এই প্রজেক্ট এর সাথে সম্পর্কিত।সকলে হোটেল থেকে অনেক তাড়াতাড়ি বের হয়েছে কারণ এক তো তারা রাস্তা ঘাট ভালোভাবে চিনে না আর দ্বিতীয় রাস্তায় যদি কেনো কারনে জ্যামে পড়তে হয়।
সকলে যা ভেবে বের হয়েছিল তাদের সাথে তাই ঘটলো রাস্তায় সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।এই গাড়ির মাঝে আগে বাড়ার শক্তি কেনো গাড়ির নেই। কিন্তু গাড়িগুলো জ্যামে আটকায় নি গাড়ি গুলোকে ট্রাফিক ড্রাইভার আগে বাড়ার অনুমতি দিচ্ছে না। এখান দিয়ে কেনো এক বিশেষ ব্যাক্তি যাবে কেনো বড় রাজনীতিবিদ।তাই সকল গাড়ি থামিয়ে রাখা হয়েছে।
নূরের সবচেয়ে বেশি বিরক্ত লাগে এই রাজনীতিবিদদের কথা শুনলে। তার মতে কেনো রাজনীতিবিদ কখনো ভালো হতে পারে না। কিন্তু তার সাথেই বারবার এই সকল ঘটনা ঘটে। আব্রাহামের বড় ভাই ব্যবসার সাথে সাথে রাজনীতির সাথেও জড়িতে তাই এটি নিয়ে নূর ওকে কম খেপাই নি।ওর এই খেপানোতে বিরক্ত হয়ে আব্রাহাম নূরকে শয়তানির ছলে বলেছে নূরের কপালে রাজনীতিবিদ স্বামী জুটবে এ নিয়েও কম মার খেতে হয়নি আব্রাহাম কে।
নূরের এইরকম জ্যামে বসে থেকে রাগে ফুঁসছে।তা দেখে সিরাত ভিশন অবাক হয় কারণ সিরাত নূরের এরুপ ব্যবহারের কারন বুঝতে পারছে না। কিন্তু রুদ্র ঠিকই বুঝতে পারছে নূরের এরুপ ব্যবহারের কারন তাই রুদ্র নূরকে আরেকটু রাগিয়ে দেওয়ার জন্য বলল।
কিরে নূর তোর জামাই দেখি আসছে,তো তোর কেমন অনুভুতি হচ্ছে।
রুদ্রের কথাটি বলতে দেড়ি নূরের তার হ্যান্ড ব্যাগ দিয়ে রুদ্রকে মারতে দেড়ি হয়নি।
শয়তান ওই রাজনীতিবিদ এর বোনের সাথে তোর বিয়ে দিবো।
কথাটি বলেই আবার মারতে লাগলো রুদ্রকে।আর এদিকে রুদ্র নূরের এরুপ রিয়েকশন দেখে হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তখনি সেই রাস্তায় প্রবেশ করে সাতটি গাড়ি।একটি গাড়ি কালো রংয়ের।সেই কালো রংয়ের গাড়ির সামনে ও পিছনে তিনটি করে সাদা গাড়ি আসছে।গাড়িটি দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই গাড়ি দিয়ে সাধারণ কেনো ব্যাক্তি আসছে না। সকলের উত্তেজনা সেই কালো গাড়িটির দিকে।হয়তো এই গ্রামের সকলেই জানে এই গাড়ির ভিতরে কে আছে তবুও সকলের গাড়ির ভিতরে থাকা ব্যাক্তিটিকে দেখার আগ্রহ অনেক বেশি। কিছু লোকদের মাঝে একজন লোক বলে উঠলো।
আজ অনেকদিন পর ভাই গ্রামে এসেছে,উনার পরিবার গ্রামে থাকলেও উনি রাজনীতিক কাজে ঢাকা থাকতে পছন্দ করেন। কিন্তু আজ হঠাৎ গ্রামে আসার কারণ কি?
লোকটির কথা শুনে তাদের মধ্যে থাকা আরেকজন বলল।
হয়তো জরুরি কেনো কাজ হবে উনার,
লোকগুলোর কথার মাঝেই গাড়িটি অদৃশ্য হয়ে গেল। গাড়িটি কিন্তু গাড়ির ভিতরে কে আসে দেখতে কেমন কিছুই বুঝা যায়নি।সিরাত এতক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল গাড়িটির দিকে।আর নূর মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। সকলের গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
___________________________________
আজ দু’টো দিন কেটে গিয়েছে রুদ্রের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে।এই দুদিন কাজের চাপে কোথাও বের ও হওয়া হয়নি।তাই রাত এগারোটা বাজার পরেও তিনজন একসাথে হাঁটতে বের হয়েছে অবশ্য তারা বেশিভাগ পথ গাড়ি দিয়ে এসেছে। তারপর যখন এই শান্ত ও মনোরম পরিবেশ দেখেছে তখনি ড্রাইভার কে পাঠিয়ে দিয়ে হাঁটা শুরু করেছে।তারা ইতিমধ্যে সূর্যধারী গ্রাম থেকে অন্য একটি গ্রামে প্রবেশ করেছে। কিন্তু তারা তিনজনই হয়তো ভুলে গিয়েছে এটা গ্রাম শহর না। অবশ্য সিরাত নূর ও রুদ্র কে বারবার মানা করেছে। কিন্তু রুদ্র ও নূর সিরাতের কোনো কথা শুনেনি উল্টো নূর সিরাতকে টেনে ওদের সাথে নিয়ে এসেছে।
তিনজন একসাথে শুনশান একটি পথ ধরে হেঁটে চলেছে।এই মুহূর্তে বোধহয় রাস্তায় একটি কাক-পক্ষিও দেখা যাচ্ছে না।এটিই স্বাভাবিক গ্রামের মানুষ অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে। তিনজনের চলার পথেই নূর বলে উঠলো।
আমি হৃদয়, আরশাদ , আব্রাহাম ও রাজকে অনেক মিশ করছি। ওরা আমাদের সাথে থাকলে এখন কতই না মজা হতো।এই গ্রামের পরিবেশ অনেক বেশি সুন্দর।
নূরের কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলল।
হুঁম ঠিক বলেছিস,এক কাজ করি, কাল ওদের সকলকে আসতে বলি সবাই মিলে একসাথে গ্রাম ঘুরে তবে যাবো।
রুদ্রের কথার সাথে সম্মতি প্রকাশ করে নূর। তিনজন আবার নিরবতার সাথে হাঁটতে শুরু করে। কিছুদূর যেতেই নূর রাস্তায় একজন লোককে পরে থাকতে দেখে রুদ্র কে বলল।
দেখ ওইখানে কে জানি পরে আছে,
নূরের কথা শুনে সিরাত ও নূর ও সেইদিকে তাকিয়ে দেখে একজন যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।সময় ব্যয় না করে নূর,সিরাত ও রুদ্র সেই ছেলেটির দিকে এগিয়ে যায়। রুদ্র ভালোভাবে ছেলেটিকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারে ছেলেটিকে হয়তো কেনো মাদক দ্রব্য দেওয়া হয়েছে। ছেলেটির শরীরের আঘাতের চিহ্ন বেশি না হলেও আঘাত গুলো খুব গভীর যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে ভর্তি করতে হবে তাকে। কিন্তু রুদ্র একটি বিষয় ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে এই ছেলেটির শরীরের রক্ত অধিকাংশ এই ছেলের না অন্যকারও।হয়তো যারা এই ছেলেটিকে মারার চেষ্টা করেছে তাদের আহত করে সেখান থেকে পালিয়েছে এই ছেলে।
ছেলেটির বেশভুষায় বলে দিচ্ছে এই ছেলেটি কেনো সাধারণ পরিবারের না কেনো বড় ঘরের হবে হয়তো। রুদ্রের কেনো যেনো ছেলেটিকে কিছুটা চিনা চিনা রাগছে শুধু মনে করতে পারছে না তাকে কোথায় দেখেছে।
রুদ্র সিরাত ও নূর কে উদ্দেশ্য করে বলল।
কি করব?
নূর বিনা দ্বিধায় বলল।
চল হসপিটালে নিয়ে যায়।সামনে আলো জ্বলছে দেখে মনে হচ্ছে বাজার হবে হয়তো। উনাদের থেকে সাহায্য নিতে পারি আমরা।এমনো হতে পারে উনারা এই লোকটিকে চিনে।
নূরের কথা শুনে রুদ্র সেই যুবকটিকে একপাশ দিয়ে ধরে আগে বাড়তে থাকে। কিন্তু রুদ্রের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে যুবকটিকে সামলাতে তাই আরেকপাশ থেকে নূর সেই যুবককে ধরে। হাঁটতে হাঁটতে তারা বাজারের কিছুটা কাছে চলে আসে তখনি হঠাৎ রুদ্রের ফোনটি বেজে উঠল। রুদ্র অসাবধানতা বশত ফোনটি পকেট থেকে বের করতে নিয়ে যুবকটিকে ছেড়ে দিল যুবকটি পড়লো নূরের উপরে।
কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই গ্রামের একজন বুড়ো তাদের দেখে বলতে লাগলো আয় হায় আমাদের গ্রামে এই সব কি চলছে।কি নষ্টা*মি করছে এরা আমাদের গ্রামে কে কোথায় আছো তাড়াতাড়ি এসো…
#চলবে…