#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_২৭
সাহানারা মির্জার কথাটি বলার সাথে সাথেই রুদ্র সিরাত কে কুলে তুলে নেয়। এবং বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে । বিনা বাক্যে রুদ্র এভাবে সাহানারা মির্জার কথা মেনে নেওয়ায় সকলে বেশ অবাক হয়।সব চাইতে বেশি অবাক হয় সিরাত । কিন্তু সিরাতের অবাকতার রেশ তখনি কেটে যায় যখন রুদ্র সিরাত কে বলে।
তুমি এটা ভুলেও ভেবো না আমি এই বিয়ে মেনে নেওয়ার কারণে তোমাকে কুলে তুলে নিয়েছে।তোমাকে কুলে তুলে নেওয়ার একটিই কারণ।যত দ্রুত তোমাকে আমি আগলে নিয়েছি তত দ্রুতই তোমাকে নিচে ফেলতে পারি।
কথাটি বলার সাথে সাথেই রুদ্র সিরাত কে হঠাৎ ছেড়ে দেয়।আর সিরাত ধাপ করে পরে সোফার উপরে।এতে সিরাত সামান্য ব্যথা পায়। কিন্তু রুদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
সিরাত কারও সাহায্য ছাড়াই ওঠে বসে এবং সাহানারা মির্জার চিন্তিত মুখ দেখে সিরাত হাসি মুখে বলল।
আপনি চিন্তা করবেন না মা,আমি আপনার ঘাড় ত্যাড়া ছেলেকে সোজা করে ফেলব।
নিজের ছেলের সম্পর্কে এমন বাক্য শুনে যেই কোনো মা রাগে ফেটে পরবে। কিন্তু সাহানারা মির্জা ও রুবেল মির্জা খুব খুশি হয় সিরাতের কথা শুনে। ওনাদের চাওয়া বোধহয় পূর্ণ হয়েছে নিজের ঘাড় ত্যাড়া ছেলের জন্য উপযুক্ত মেয়ে পেয়েছেন।
___________________________________
চোখ বন্ধ করে কেবিনের বেডের উপর চোখ বন্ধ করে আধ শোয়া অবস্থায় বসে আছে আদিত্য। কেবিনের এক সাইডে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আরিফ।আরিফ হলো আদিত্যর দলের লোক শুধু দলের লোক বললে ভুল হবে একদম কাছের লোক আদিত্যের এই আরিফ।আর আদিত্যর পাশে বসে আদিত্যের বাবা আফজাল চৌধুরী আদিত্যকে উদ্দেশ্যে করে বলছে।
তোর উপর যারা হামলা করেছিল, ওদের আমি দেখে নিবো। তুই এই বিষয়ে চিন্তা করিস না। তুই এখন শুধু রেস্ট নে তোর হসপিটালে আরো কিছুদিন থাকতে বলেছে ডাক্তার।
ওদের বাঁচাতে চাইছো আমার হাত থেকে?
আদিত্যর কথায় থতমত খেয়ে যায় আদিত্যের বাবা। আফজাল চৌধুরী খুব ভালোভাবে জানেন আদিত্য যদি একবার ওই লোকগুলোকে হাতে পায় যারা ওর সাথে বেইমানি করে ওকে মারার চেষ্টা করেছে। তাদের কি অবস্থা করতে পারে। আদিত্যর মন পাথরের হলেও আফজাল চৌধুরীর মনে এখনো মায়া দয়া বেঁচে আছে তাই তো উনি চাই তাদের কেনো করুন শাস্তি না হয়। আফজাল চৌধুরীর ভাবনার মাঝেই আদিত্য আবার বলল।
ওই লোকগুলো কে ছিল যারা আমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে?
আমি জানিনা ওরা কে ছিল?আমি হসপিটালে আসতেই ওরা চলে গিয়েছে। কিন্তু তুই জানিস ওরা দুজন মেয়ে ও একজন ছেলে ছিল। ওদের মধ্যে একজন মেয়ের কথায় যে ত্যেজ ছিল।ওর ত্যেজের সামনে আমার ও হার মানতে হয়েছে।
আফজাল চৌধুরীর কথা শেষ হতেই আদিত্য বলল।
ওই দুই মেয়ের মধ্যে একজনের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।
কেবিনের মধ্যে বোধহয় বোমা বিস্ফোরণ হলো।আরিফ ও আফজাল চৌধুরী দুজনে যেনো এক জায়গায় জমে গিয়েছে দুজনের কানে এখনো বাজছে এই মাত্র আদিত্য কি বলেছে।তারা দুজন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে।আফজাল চৌধুরী আদিত্যকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
কি বললি তুই ,
আফজাল চৌধুরীর প্রশ্ন বোধহয় আদিত্যের পছন্দ হলো না। আফজাল চৌধুরী খুব ভালোভাবে জানেন উনার ছেলে এক কথা দুবার বলা পছন্দ করে না।তাই তিনি বললেন ।
কার সাথে বিয়ে হয়েছে তোর, মেয়েটির নাম কি?
আমি জানিনা, এখন আমি সঙ্গানে ছিলাম না। আমার বিয়ে হয়েছে শুধু এতটুকু মনে আছে।এই বিষয়ে তোমার মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।আমি হ্যান্ডেল করে নিবো।
কথাটি বলেই আদিত্য আরিফ কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আরিফ গাড়ি বের কর আমরা এখনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।
জ্বী ভাই,
কথাটি বলেই আরিফ গাড়ি বের করার উদ্দেশ্যে চলে যায়।আর আফজাল চৌধুরী আদিত্য কে আর কিছু বলার আগেই আদিত্য আমজাদ চৌধুরী কে বলল।
আমি আর একটি কথাও শুনতে চাই না।
কথাটি বলেই আদিত্য বেড থেকে উঠে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। আফজাল চৌধুরী চেয়ে চেয়ে শুধু ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। আল্লাহ জানে উনার এই কঠোর প্রাকৃতিক ছেলের সাথে কোন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আফজাল চৌধুরীকে বেশি এই কথা ভাবাচ্ছে আদিত্যের একটি অচেনা মেয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পরেও ও এতটা শান্ত কিভাবে অবশ্যই আদিত্যের মাথায় অন্য কিছু চলছে।বড় কথা হলো যখন বাড়িতে সকলে আদিত্যের বিয়ের কথা জানবে তখন কি হবে কি ঝড় বয়বে বাড়ির ভিতরে।নাহ উনার এইসকল কথা ভেবে লাভ নেই ওনার ছেলে কারো কথা শুনার লোক না।তাই আদিত্য সামনে যা করবে শুধু তা দেখে যেতে হবে।
আদিত্য গাড়ি এসে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করে ঢাকার উদ্দেশ্যে। আরিফ অনেকক্ষণ ধরে আদিত্য কে কিছু বলার জন্য হাঁসফাঁস করছে কিন্তু আদিত্য কে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হচ্ছে না।
কি বলবি বল,
আদিত্যর গম্ভীর গলা শুনে আরিফ শুকনো ঢোক গিলে বলল।
ভাই আমরা চাঁদপুর না গিয়ে এখন ঢাকা কেনো যাচ্ছি। চাঁদপুর গেলেই তো আমরা ও পঞ্চায়েত প্রধান থেকে সকল তথ্য বের করতে পারি উনি কাদের কোথায় সকল কিছু করেছে।
তোর কি মনে হয় এখনো।ওই ডাস্টবিনের কিট তোর জন্য এখনো অপেক্ষা করছে।
আদিত্যর কথায় দমে যায় আরিফ,ওর মন খুব আনচান করছে। আদিত্যর না দেখা স্ত্রী ও নিজের ভাবির সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার। কিন্তু কিছুতেই সাহস পাচ্ছে না আদিত্য কে কিছু জিজ্ঞেস করার। আদিত্যর যায়গায় যদি আরিফ হতো এতক্ষণে হয়তো নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হওয়া স্ত্রীর সম্পর্কে জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকতো।ও পাগল হয়ে যেতে নিজের নব বধূর একবার মুখ দর্শন করার জন্য। কিন্তু আদিত্য ওর ভিতর কেনো ভাবান্তর দেখা যাচ্ছে না।ওর সাথে কাল রাতে যে এত বড় একটি ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে কেনো মাথা ব্যাথা নেই ওর।আরিফের নিজের অচেনা ভাবির জন্য ভিশন কষ্ট হচ্ছে।কার কপাল পুড়েছে এই হৃদয়হীন ব্যাক্তি কে বিয়ে করে আল্লাহ ভালো জানেন। আচ্ছা ভাই কি ওই মেয়েকে মেনে নিবে নাকি ওই মেয়ের জন্য ও কেনো শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছে আদিত্য।
___________________________________
অনেকটা সময় পেড়িয়ে গিয়েছে।নূররা অনেক সময় ধরে রুদ্রদের বাড়িতে আড্ডা দিচ্ছে। নূরের বিয়ের সম্পর্কে ওর বন্ধুরা ও সিরাত ছাড়া কেউ জানেনা না। ওরা সকলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাওকে জানাবেও না।আগে নূর নিজেকে ভালোভাবে সামলে নিবে তারপর সিদ্ধান্ত হবে কি করা যায়। রুদ্র কে হৃদিতা বলল।
দোস্ত আজকে তোর বাসর রাত।তোর অনুভূতি প্লিজ আমাদের জানা ভবিষ্যতে তো আমাদের ও এমন সময় আসবে তোর অনুভূতি সম্পর্কে জেনে আমরাও কিছুটা অভিজ্ঞতা নিতে চাইছি।
হৃদিতার কথা শুনে রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
অনেকক্ষণ ধরে তোদের ফালতু কথা শুনছি নিজেদের বকবক বন্ধ কর নাহলে মুখে কষটিপ বেঁধে দিবো তোদের।
রুদ্রের কথা শুনে রাজ ঠাট্টার স্বরে বলল।
ও ঠিকই তো বলেছে তোরা ওকে এখনকার অনুভূতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিস কেনো।তোরা ওকে কাল সকালে আজ রাতের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবি।
রাজের কথা শুনে আব্রাহাম বলল।
আজ রাতের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আর কি জিজ্ঞেস করব।আমার তো মনে হয় রুদ্র সিরাতের ভয়ে রুমেই ঢুকবে না।
আব্রাহামের কথা শুনে সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।আর এদিকে রুদ্র রাগে ফুঁসছে ফুঁসছে বলল।
তোদের কি মনে হয় আমি সিরাতকে ভয় পায়।আমি আমার রুমে ঘুমাবো দরকার পড়লে ওকে রুম থেকে বের করে দিবো। কথাটি বলেই রুদ্র নিজের রুমের দিকে চলে যায়। আর এদিকে ওর বন্ধুরা এখনো হসছে রুদ্রের যাওয়ার পানে তাকিয়ে।
রুদ্র রুমে প্রবেশ করে দেখতে পায় সিরাত নিজের জামা কাপড় ওর কাবার্ড এর ভিতরে রাখছে। রুদ্র এটি দেখে সিরাতের সামনে এসে বলল।
তুমি তোমার জামা কাপড় আমার কাবার্ডের ভিতরে রাখছো কেনো।
কারণ আজ থেকে এটি আমার ও কাবার্ড।
না এই কাবার্ড ও এই ঘরের সকল জিনিস শুধু আমার।আর আমি তোমার সাথে কেনো কিছু শেয়ার করব না।
রুদ্রের কথা শুনে সিরাত স্বাভাবিক ভাবেই বলল।
আমার সাথে কিছু শেয়ার না করতে পারলে তুমি এই রুম থেকে বেরিয়ে যেতে পারো। আমার কেনো সমস্যা নেই।
তুমি আমার রুম থেকে আমাকে বের করে দিবে।
আমি তোমাকে কোথাও বের করছি না। তোমার সমস্যা হবে আমার সাথে থাকতে তাই তোমাকে সমাধান বলে দিচ্ছি।
দেখো,
পরের লাইন আর বলতে পারলো না রুদ্র তার আগেই রুদ্রের একদম কাছে চলে আছে এবং রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আজ আমাদের বাসর রাত আজ দেখা দেখি হবে ঠিক আছে।তার মানে কি এই তুমি দরজা বন্ধ না করেই আমাকে দেখাতে চাইছো।এত দুষ্টুমি কিন্তু ঠিক না।আমি আর তুমি তো এখানেই আছি আমি কি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি বলো।তাই দরজাটা আগে বন্ধ করে আসো তারপর তুমি যা দেখাতে চাও দেখাতে পারো।
সিরাতের কথায় রুদ্র কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ওর ভাবনাতেও ছিল না সিরাত তাকে এইরকম কথা বলতে পারে। রুদ্র নিজের অবাকতার রেশ কাটাতে কাটাতে সিরাত নিজের সকল জামাকাপড় কাবার্ডে রেখে দেয়। রুদ্র কিছুক্ষণের মাঝে নিজেকে স্বাভাবিক করতেই সিরাত কে বলে।
কি বলছো তুমি দরজা বন্ধ করে আমি তোমাকে কি দেখাবো ?
এখন তুমি কি দেখাতে চাও এটা তো তুমিই ভালো জানো। আচ্ছা আসলেই তুমি আমাকে কি দেখাতে চাইছিলে বলোতো।
সিরাতের কথায় রুদ্র থতমত খেয়ে যায় আসলেই ও কি দেখাতে চাইছিল সিরাতকে। কিছুক্ষণ ভাবনার মাঝেই রুদ্র বুঝতে পারে সিরাত ওকে কথার জালে ফাসাচ্ছে। রুদ্র আর কিছু বলার আগেই দেখতে পেলো সিরাত বিছানায় শুয়ে পড়েছে।
#চলবে….
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_২৮
রুদ্র কিছুক্ষণ পায়চারি করে।সিরাতকে নিজের বিছানায় শুতে দেখে। কিন্তু যখন সিরাত ডাক দেওয়ার পর সিরাত ঘুম থেকে উঠছে না।তখন রুদ্র ভাবতে থাকে।সিরাত কম্বল মুড়ো দিয়ে ঘুমিয়েছে ওর কম্বলটি কি টেনে ওকে ঘুম থেকে উঠাবে। রুদ্র কথাটি ভাবতেই নিজেকে নিজে ধিক্কার জানাই। কেমন না কেমন ভাবে সিরাত ঘুমিয়ে আছে এখন যদি রুদ্র ধরে কম্বল টান দেয়। যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে যায়।সিরাতের অবাঞ্চিত কেনো যায়গায় রুদ্রের চোখ চলে যায়।যদি সিরাত মনে করে ওর চরিত্র খারাপ তাহলে।এই সকল কথা ভাবতেই রুদ্রের মাথায় আরেকটি চিন্তা উদয় হয়।
আচ্ছা সিরাত ওর সম্পর্কে যা মন চায় ভাবুক না কেনো তাতে ওর কি।ও তো সিরাতকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় নি।নাহ ওর কিছু আসে যায় না সিরাত যা মন চায় ভাবুক। কথাগুলো ভাবার পরেও কম্বল টান না দিয়ে রুদ্র একটি বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পরে। সোফায় শুয়েও রুদ্র শান্তি পাচ্ছে না। কেননা রুদ্রের এভাবে ঘুমানোর অভ্যাস নেই। তাই রুদ্রের ঘুম আসছে না।
নতুন এক সকালের সূচনা ঘটলো।এই সকালটি আজ সিরাতের জন্য অন্য সকল সকাল থেকে আলাদা।আর আলাদা হবেই বা না কেনো।আজ তো সিরাত নিজের শ্বশুর বাড়িতে স্বামীর রুমে ঘুমাচ্ছে।হোকনা কেনো সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত।সিরাত আজ ঘুম থেকে উঠে নিজেকে নতুন একটি রুমে আবিষ্কার করে। কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকার পর যখনি সিরাত বিছানা থেকে উঠতে যাবে তখনি সিরাতের পাশে চোখ পড়তে ওর চমকে উঠলো।বেডের অপর পাশে অগোছালো ভাবে ঘুমিয়ে আছে রুদ্র।সিরাত রুদ্র কে দেখে বেশ অবাক হয়। কারণ রুদ্র সোফায় গিয়ে ঘুমানোর পরেই সিরাত ঘুমিয়েছে।তার আগে সিরাত জাগ্রত ছিল শুধু রুদ্র কি করে ও কোথায় ঘুমায় এটা দেখার জন্য ঘুমানোর নাটক করেছে।যদি সিরাত জাগ্রত থাকতেই রুদ্র বেডে ঘুমাতো তাহলে সিরাত সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়তো। কিন্তু এখন রুদ্র আর ও পুরো রাত এক সাথে এক বিছানায় ঘুমিয়েছে কথাটি ভাবতেই কেমন জানি অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে।যেই সিরাত কেনো পুরুষের সাথে বসতেও পছন্দ করে না সে পুরো একটি রাত কাটিয়ে ফেললো এক বিছানায় একজন পুরুষের সাথে। রুদ্র সিরাতের স্বামী হওয়ার সত্তেও কিছুতেই সিরাতের অস্বস্তি কমছে না।
সিরাত কিছুক্ষণ নিজেকে ধাতস্থ করে বিছানা থেকে উঠে পরে।কাবার্ড খুলে নিজের জামাকাপড় বের করে নেয়।আজ সাওয়ার নেওয়া খুবই জরুরি কাল ওর উপর দিয়ে এত ধকল গিয়েছে কাল আর সাওয়ার নেওয়ার সুযোগ হয়নি।তাই সকালে উঠার পরেই শরীরটা ম্যাচ ম্যাচ করছে।
সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে সিরাত।তখনি চোখ মেলে তাকায় রুদ্র। রুদ্র চোখ মেলতেই সিরাত কে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে। যেভাবে শুয়ে ছিল সেভাবেই শুয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।সিরাতের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ হলো। রুদ্র সিরাতকে কখনো হিজাব ছাড়া দেখে নি।সিরাত কখনো হিজাব ছাড়া কোথাও বের হয়না তাই সিরাতের রেশমি লম্বা চুল কোনো ছেলে দেখেছে কিনা তা সন্দেহ।সিরাত কে হিজাব ছাড়া ও এত সুন্দর খোলা চুলে যেনো অসম্ভব সুন্দর লাগছে। রুদ্র বেশ অনেক্ষণ যাবত এভাবে তাকিয়ে আছে কিন্তু সিরাত এতক্ষণ তা খেয়াল না করলেও হঠাৎ সিরাতের চোখ যায় রুদ্রের দিকে। রুদ্র কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিরাত ব্লু কুঁচকে ওকে জিজ্ঞেস করলো।
এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
রুদ্র আনমনেই সিরাতের দিকে তাকিয়ে বলল।
তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
সিরাত রুদ্রের কথা পাত্তা না দিয়ে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।সিরাত এইটা ভালোভাবে জানে রুদ্র এই কথাটি ঘুমের জন্য বলছে।নাহলে সিরাতের গায়ের রংয়ের জন্য সিরাতকে সুন্দর বলা তো দূরের কথা কেউ সিরাতের সাথে সহজে বন্ধুত্ব ও করতো না। রুদ্র যখন বুঝতে পারলো সে কি বলেছে তখন রুদ্র বিছানায় উঠে বসে সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।
আমি তোমাকে সুন্দর বলিনি,আমি তো..
রুদ্র ওর কথা শেষ করার আগেই সিরাত তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল।
আমি ভালোভাবেই জানি তুমি আমাকে বলোনি।
কথাটি বলে নিজের মাথায় হিজাব বেঁধে বাহিরে চলে যায় সিরাত।আর রুদ্র এখনো একই জায়গায় বসে আছে।ওর কেনো জানি সিরাতের তাচ্ছিল্যের স্বরে বলা কথাটি খারাপ লাগলো। রুদ্র এতকিছু না ভেবে সাওয়ার নিতে চলে গেল।
রুদ্র সাওয়ার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে আসে। ডাইনিং টেবিলে রুদ্রের জন্য অপেক্ষা করছে। এখানে রুদ্রের সকল বন্ধুরাও আছে।কাল রাত বেশি হয়ে যাওয়ার কারনে হৃদিতা ছাড়া কেউ আর বাড়ি ফিরে নি। হৃদিতা কে আরশাদ রাতে পৌঁছে দিয়েছিল। সকাল হতেই আবার চলে এসেছে ও সকলের সাথে ব্রেকফাস্ট করতে।
রুবেল মির্জা সিরাতকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
আজ সকল কিছু তোমার পছন্দে রান্না করা হয়েছে। সাহানারা নিজের হাতে সব কিছু তোমার জন্য রান্না করেছে।
সিরাত রুবেল মির্জার কথা শুনে মুচকি হেসে বলল।
ধন্যবাদ মা,আমার জন্য এতকিছু আয়োজন করার জন্য।
রুদ্রের খুব রাগ লাগছে ওর মনে হচ্ছে ওর বাবা মা ওর ভাগের ভালোবাসা সিরাত কে দিয়ে দিচ্ছে।তাই রুদ্র রাগে আরো খাবার খাচ্ছে।তখনি সাহানারা মির্জা বললেন।
সব কিছু আমি রান্না করলেও রুদ্রের বাবার কথায় সকল কিছু করেছি।উনি আমাকে বলেছে আজ যেনো পছন্দের সকল কিছু রান্না করা হয়।
সাহানারা মির্জার কথা শুনে সিরাত মুচকি হেসে রুবেল মির্জাকে বলল।
আপনাকেও ধন্যবাদ আন্কেল।
সিরাতের কথা শুনে রুবেল মির্জা অসন্তোষ হলেন কেননা তিনি সিরাতের মুখে বাবা ডাক শুনতে চান তাই তিনি বললেন।
তুমি আমাকে আন্কেল ডাকছো কেনো, সাহানারা কে যেমন মা ডেকেছ আমাকেও বাবা ডাকো।আমি তো এখন থেকে তোমার বাবাই হই।
রুবেল মির্জার কথা শুনে সিরাতের হাসি মাখা মুখটা মুহূর্তের মাঝে রাগান্বিত হয়ে গেল।সিরাত কঠোর কন্ঠে বলল।
না আপনি আমার বাবা না,আমি ওই লোককে ও এই বাবা শব্দ দু’টোকেই ঘৃণা করি।কখনো এই শব্দ বা বাবা নামক লোকটির সাথে আমার কেনো ভালো মুহূর্ত জুড়ে নেই যা আছে তা কেবল তিক্ততা।না ওই লোক আমাকে কখনো নিজের মেয়ে মেনেছে আর না কখনো নিজের বাবা হওয়ার অধিকার পালন করেছে।উনি আমাকে দিয়েছে তো শুধু অবহেলা, সকলের সামনে আমার গায়ের রং নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে। আমাকে মানুষের সামনে অপমান করেছে তা শুধু এই জন্য আমার গায়ের রং কালো।আমি ওই লোক আর এই শব্দটিকে শুধুই ঘৃণা করি।তাই আমি চাইনা আপনাকে এমন কেনো নামে ডাকতে যার সাথে আমার সম্পর্ক শুধু মাত্র ঘৃণার।
সিরাতের শরীর কাঁপছে সকলে তাকিয়ে আছে সিরাতের দিকে।সিরাতের চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে।সিরাত ওর বাবাকে কতটা ঘৃণা করে তা সিরাতের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আর কেউ না বুঝলেও সাহানারা মির্জা পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারছেন সিরাতের এই সকল কথা বলার পিছনে রাগের থেকে কষ্ট বেশি লুকায়িত রয়েছে।তাই তিনি বিলম্ব না করে সিরাতের কাছে গিয়ে সিরাতের মাথা নিজের বুকের সাথে জাপটে ধরে। মমতাময়ী হাত বুলাতে থাকে সিরাতের মাথায়।সিরাত ও কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে থাকে সাহানারা মির্জার করা আদর। রুবেল মির্জা ও বুঝতে পারছেন সিরাতের অতীত হয়তো খুব বেশি ভালো ছিল না। হয়তো মেয়েটার অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তাই তো ওর মধ্যে এতটা কঠোরতা এসে হানা দিয়েছে।কেউ আর একটি কথাও বলে না।সিরাত নিজের মতো করে খাবার খেয়ে উঠে রুমে চলে যায়।সিরাত চলে যেতেই রুবেল মির্জা রুদ্রদের উদ্দেশ্যে করে বলল।
তোরা কি জানিস সিরাত ওর বাবাকে এতটা ঘৃণা করে কেনো?
রুবেল মির্জার কথা শুনে নূর সিরাত সম্পর্কে যা কিছু জানেন তা ওনাদের খুলে বলল। রুবেল মির্জা ও সাহানারা মির্জা কথাগুলো শুনে যেনো উনাদের ও ঘৃণা ধরে গেল শামসুজ্জামানের উপর। সাহানারা মির্জা ক্রোধ নিয়ে বললেন।
মানুষ এত নিচ কিভাবে হতে পারে যে একটি ছেলের জন্য অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। নিজের স্ত্রী সন্তান ছেড়ে এই রকম জঘন্য কাজ করতে কিই একবারও উনার বুক কাঁপেনি।তার থেকে বড় কথা একজন মানুষ নিজের মেয়ের গায়ের রংয়ের জন্য মেয়ের সাথে এমন আচরন কিভাবে করতে পারে। উনার তো উচিত ছিল সিরাতকে এই দুনিয়ায় দূষিত কথা থেকে বাঁচিয়ে রাখার ওকে আগলে রাখার। কিন্তু উনি নিজের বাবা হয়েও মেয়েকে প্রতিনিয়ত অনুভব করিয়েছে ও কালো গায়ের রং নিয়ে জম্ম নিয়ে ভুল করেছে। আচ্ছা গায়ের রংয়ের উপর কি কারও হাত থাকে। আমার ভাবতেও কষ্ট লাগছে মেয়েটার উপর দিয়ে এত বছর কি গেছে।
সাহানারা মির্জার কথা শুনে রুবেল মির্জা বলল।
ওই জঘন্য লোক বাবা ডাকার যোগ্য না,সিরাত একদম সঠিক যে ওই যোগ্যতা লোককে ঘৃণা করে।ওই লোকের জন্য ওর বাবা নামক শব্দ থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে। কিন্তু আমি ওকে দেখাবে বাবারা কেমন হয়।আমি ওকে বাবার ভালোবাসা দিবো আর আমার মেয়ের উপরে কেউ চোখ তুলে তাকালে বা ওর গায়ের রং নিয়ে কেনো বাজে কথা বললে আমি তাঁকে উচিত শিক্ষা দিবো…
#চলবে…
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_২৯
কেটে গেছে আরও একটি দিন।কাল রাতে সিরাত সোফায় ঘুমিয়েছে আর রুদ্র বেডে।সিরাতের অনেক অস্বস্তি অনুভব হওয়ার কারণেই ও সোফায় ঘুমিয়েছে। মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন করতে সময় লাগে তোমনি সিরাতের ও একটি সময় লাগবে সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার জন্য।সিরাত রুদ্রের বাড়িতে ওর স্ত্রী রুপে আসলেও এখন ওর পক্ষে ওদের সম্পর্ক আগে বাড়ানো সম্ভব না।তাই সিরাত আগে সকল কিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।সিরাত সকাল সকাল উঠে পড়েছে নামাজ পড়ার জন্য কিন্তু রুদ্র কে হাজার বার ডাকার পরেও ওকে নামাজ পড়তে উঠাতে পারছে না।সিরাত ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে এই রুদ্র কে সোজা করা এতটা সহজ হবে না। কিন্তু সিরাত ও কি কম নাকি সিরাত ও তো নিজের জীবনের কঠিন পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত।।সিরাত রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
তুমি ঘুম থেকে উঠবে নাকি আমি কিছু করবো, তোমাকে উঠানোর জন্য।
রুদ্র ঘুমের মধ্যে বলে উঠলো।
যা মন চায় করো আমি উঠবো না,
তাহলে তুমি উঠে নামাজ পড়বে না,
না পড়বো না,
আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমার যা করার আমি তাই করি।
সিরাত কথাটি বলেই ওয়াসরুম থেকে এক বালতি পানি এনে বিলম্ব না করে রুদ্রের উপর ঢেলে দেয়। রুদ্র ধরফরিয়ে বিছানা থেকে উঠে পরে। রুদ্রের পুরো শরীর ভিজে একাকার হয়ে গেছে। রুদ্র রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল।
তুমি এটা কি করলে,
সিরাত ভাব অলসহীন ভাবে বলে উঠলো।
আবার দেখতে চাও,
তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে এভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়ার।
তুমি ভুল ভাবছো,আমি তোমাকে শুধু ভিজাইনি তোমাকে আমি গোসল করিয়ে দিয়েছি। তোমার আর কষ্ট করে গোসল করতে হবে না।
সিরাতের কথা শুনে রুদ্রের রাগ আরো বেড়ে গিয়েছে। রুদ্র এক লাফে খাট থেকে নেমে সিরাত কে কিছু বলার আগেই সিরাত নামাজে দাঁড়িয়ে যায়।আর রুদ্র বেচারা সিরাতকে নামাজরত অবস্থায় দেখে আর কিছু বলতে পারে না। রুদ্র রাগে ফুসতে ফুঁসতে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
___________________________________
আয়না আজ রাজের ভার্সিটিতে এসেছে উদ্দেশ্যে হলো ভাইয়ার সাথে আজ ঘুড়তে যাবে।রাজ শুধু ওর বন্ধুদের সাথে ঘুড়তে যায়।আয়নাকে সহজে কোথাও নিয়ে যায় না। কারণ ওর মা আয়নাকে কোথায় নিয়ে গেলে অনেক বকা দেয়।উনার মতো মেয়েদের এত বাইরে ঘুরা ঘুরি করা ঠিক না।তাই রাজ যখনি আয়নাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায় ওর মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে নিয়ে যায়।
তাই আয়না নিজের কলেজ না গিয়ে সোজা ভাইয়ের ভার্সিটিতে এসেছে। ভার্সিটির ভিতরে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর আয়না দেখে ওর ভাই আব্রাহাম ও আরশাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। নূর ও হৃদিতা এখনো কলেজে আসেনি আর রুদ্র ও সিরাত সকাল সকাল অফিসে চলে গিয়েছে।
আয়না আব্রাহমকে দেখে ওইখানেই থেকে যায়। আয়না আব্রাহাম কে যখনি দেখে তখনি ওর যেনো পুরোনো আবেগ আবার মাথা চারা দিয়ে উঠে। কিন্তু আয়না কিছুতেই নিজের আবেগকে প্রশ্রয় দেয় না আর না ও কখনো দিতে চায়। কারণ আবেগের সাথে সাথে ওর ওই সকল কথাও মনে পরে যায় যেই সকল কিছু ওকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে ছিল। আয়না নিজেকে ধাতস্থ করে রাজের পিছন দিক দিয়ে এসে এসে এদিক ওদিক না তাকিয়ে ঝুঁলে পরে ভাইয়ের কাঁধে। আয়না এত বড় হওয়ার পরেও এই একটি অভ্যাস যা এখনো ও ছাড়তে পারেনি। যখনি আয়না ভাইয়ের কাছে থাকে তখনি খুব আদুরে হয়ে যায়। ভাইয়ের সামনে নিজেকে বাচ্চা বাচ্চা মনে হয় আয়নার তাই তো বাচ্চাদের মতো আচরণ করে।রাজ ও কি আয়নাকে কম আদর করে রাজ পারলে নিজের জীবন দিয়েও আয়নার সকল আবদার পূরণ করার চেষ্টা করে।
আয়নার এভাবে হঠাৎ রাজের পিঠে ঝুলে পড়ায় প্রথমে রাজ হকচকিয়ে গেলেও যখন বুঝতে পারে তার পিঠে ঝুলে থাকা মানুষটি আয়না। তখন রাজের ঠোঁটে স্মিত হাসি দেখা যায়।আয়না কাঁধ থেকে নামতেই রাজ ব্লু কুঁচকে আয়নাকে জিজ্ঞেস করালো।
তুই কলেজে না যেয়ে এখানে কি করছিস।
আয়না রাজের এক হাত জাপটে ধরে বলল।
আজ কলেজে ক্লাস হবে না,তাই আমি ভাবছি,
কি ভাবছিস,
রাজের কথায় আয়না নিজের বত্রিশটি দাঁত বের করে একটি হাসি দেয়। আয়নার হাসি দেখেই রাজ বুঝে যায় ওর বোনের কি চাই।তাই রাজ চোখ ছোট করে বলল।
ঘুরতে যাবি,
আয়না মাথা নেড়ে হ্যা বলে।
আচ্ছা আমি ওদের কেও আসতে বলছি।
আয়না ভালো ভাবে জানে রাজ ওর বাকি বন্ধুদের কথা বলছে তাই কিছু বললো না। শুরু মাত্র আয়না আরশাদের সাথে কথা বলছে আয়না এমন ভাবে আরশাদের সাথে কথা বলছে যেনো এখানে আরশাদ ছাড়া আর কেউ নেই।রাজ চলে গেল সাইডে ফোন করার জন্য। আব্রাহাম তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে। আব্রাহামের বুকের ভিতরে যেনো আগুন জ্বলছে কেননা আয়না একবারও আব্রাহামের দিকে ফিরেও তাকায় নি। আয়নার এই অবজ্ঞা যেনো ভিতর থেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে আব্রাহাম কে।
___________________________________
চেয়ারের রক্তাক্ত অবস্থায় বাধা রয়েছে প্রায় চার পাঁচ জন ছেলে।আধমরা অবস্থায় চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে তাদের।একটু পর পর ব্যাথায় কাতরাচ্ছে ছেলেগুলো। কিন্তু ওদের দেখে বোধহয় একটুও মায়া হচ্ছে না সামনে পায়ের উপর পা দিয়ে বসা থাকা আদিত্যের।ওকে দেখে মনে হচ্ছে। ছেলেগুলোর আর্তনাদ গুলো উপভোগ করছে আদিত্য। আদিত্যর পাশেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আরিফ। শুধু আরিফ না এখানে উপস্থিত সকল গার্ড ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্যের সামনে। আদিত্যকে নিজেদের ব্যর্থতার কথা কিভাবে বলবে তাই ওরা বুঝতে পারছে না।আরিফ আদিত্যের কাছে এসে মাথা নিচু করে বলল।
ভাই এই ছেলেগুলো আপনার উপর আক্রমণ করেছিল। কিন্তু ওদের মধ্যে আরও চার পাঁচ জন ছেলেকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি। শুধু মাত্র এই কজনকে খুজে বের করতে পারলেও যার কথাতে ওরা কাজটি করেছে তাদের কেও খুজে পায়নি।আর ওই পঞ্চায়েত প্রধান কেও আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পায়নি।
আদিত্য শান্তভাবে কথাগুলো শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে আরিফের দিকে তাকিয়ে বলল।
কোথায় খুজেছিস?
ভাই সূর্যধারী গ্রাম ও চাঁদপুর গ্রাম এই দুই গ্রাম আমরা তন্নতন্ন করে খুঁজেও ওদের কোথাও পায়নি।
ওরা ঢাকায় আছে তাই এখানে ওদের খোঁজ লাগানো শুরু কর।যত দ্রুত সম্ভব আমি ওদের আমার সামনে দেখতে চাই। আমিও দেখতে চায় কার এত বড় কলিজা যে আদিত্য চৌধুরীর উপর আক্রমণ করেছে।আর এই ছেলেগুলোকে এমন ভাবে ঠিকানা লাগাবি যাতে ওদের লাশ ও খুঁজে না পাওয়া যায়। ওরা আদিত্য চৌধুরীর গায়ে হাত লাগানোর সাহস করেছে। ওদের ও তো বুঝা উচিত ওরা কত বড় অপরাধ করেছে।
কথাটি বলেই আদিত্য গোডাউন থেকে বের হয়ে যায়। আদিত্যর সাথে বের হয় আরিফ ও গার্ডরা।
___________________________________
নূর যথা সম্ভব দ্রুত হেঁটে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।আজ একটি রিকশাও পায়নি যে তাতে চড়ে ভার্সিটিতে যাবে।রাজ ওকে ফোন করে ভার্সিটিতে দ্রুত যেতে বলেছে কেননা। আয়নার সাথে সাথে ওরা সকল বন্ধুরাও ঘুরতে যাবে। ওদের সাথে যা ঘটেছে এর পরে সকলেরই রিফ্রেশ মেন্ট প্রয়োজন। কিন্তু আজ এই রাস্তাটি একটু বেশিই শুনশান মনে হচ্ছে নূরের কাছে। অন্যদিন তো দু একটা রিকশা চলতে দেখা যায় কিন্তু আজ এমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। নূর বেশি কিছু না ভেবে হাঁটতে লাগলো।
সামনে আগাতেই নূর দেখতে পেলো কিছু কালো পোশাকধারী মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়। এবং তারা রাস্তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে ওই লোকগুলোকে না সরিয়ে এই রাস্তা দিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।তাই নূর ওই লোকগুলোর কাছে যেতেই শুনতে পায় কিছু লোকদের আর্তনাদ। নূর কিছু বলবে তার আগেই ভিতর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লোক দৌড়ে আসে। লোকটির দৌড়ের গতি এতটাই তীব্র যে দুজন গার্ডকে একসাথে ধাক্কা মারতে তারা দূরে সরে যায় গার্ডরা ও লোককে থামাতে অসক্ষম হয়। এবং লোকটির সাথে নূরের এত তীব্র ভাবে ধাক্কা লাগে নূর ছিটকে কিছুটা দূরে যেয়ে পরে।
রাস্তার উপর পড়া থেকে একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছে একটি লোকের জন্য। কারণ নূর এসে সেই লোকটির উপর পরেছে লোকটি বডিগার্ড এর মাঝখানে দাড়িয়ে ছিল। নূর এত তীব্র গতিতে ও লোকের উপর পড়ার পরেও লোকটি নিজের যায়গা থেকে এক চুলও নড়ে নি। নূরের হাত সোজা গিয়ে পড়েছে লোকটির বুকে। নূর এখনো এই লোকটির চেহারা দেখেনি। তবুও নূরের বুকের ভিতর থেকে জেনো খুব জোড়ে জোড়ে আওয়াজ আসছে। নূর আজ পর্যন্ত এইরকম পরিস্থিতিতে কখনো পরেনি। কদিন ধরে ওর সাথে কি হচ্ছে আল্লাহ জানে।ও যেই সকল কিছু কখনো কল্পনাও করেনি সেই সকল কিছু আজ কাল ওর সাথে ঘটছে।নূর নিজেকে ধাতস্থ করে উপরে তাকাতেই অনাকাঙ্ক্ষিত মুখ দেখে যেনো থমকে গেল।
নূর বিশ্বাস করতে পারছে না ও যেই লোকটির উপর পরেছে সে আদিত্য।তার সেই স্বামী যাকে কিনা হসপিটালে ফেলে চলে এসেছিল।যার নাম ও নূর শুনতে নারাজ।যার সাথে ও না চাইতেও একটি কঠিন সম্পর্কে বেঁধে গিয়েছে নূর। নূরের হতভম্বতা কাটছেই না।নূর যেনো পলক ফেলতেও ভুলে গিয়েছে ওর মুখ থেকেও কেনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।কি করবে নূর এখন কিভাবে এই পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলাবে। নিজের অপরিচিত স্বামীকে দেখে কিভাবে ঠিক রাখবে নিজেকে নূর..
#চলবে…