তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
78

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৩৩

বর্তমান..

অতীতের কথাগুলো মনে পরতেই আয়নার মনটি আবার বিষিয়ে গেল। কিন্তু আয়নার চোখ থেকে এক ফোঁটাও পানি ঝরতে দেখা গেল না।দেখা যাবেই বা কি করে আগের আয়না ও এখনকার আয়নার মাঝে যে বিস্তর তফাৎ।আয়না নিজেকে সামলাতে শিখে গিয়েছেন। এখন আর নিজের অশ্রু কেনো এমন ব্যাক্তির সামনে ব্যয় করে না যে এই অশ্রুর যোগ্য না।আয়না এখানে কষ্ট পাচ্ছে ও যাকে নিজের সর্বত্র দিয়ে ভালোবেসেছে তার থেকে কষ্ট পেয়ে।আর একই গাড়িতে আয়নার সামনের সিটে বসে আব্রাহাম কষ্ট পাচ্ছে যে ওকে ভালোবেসেছে বা যাকে আব্রাহাম এখন নিজের সর্বত্র দিয়ে ভালোবাসতে চায় তাকে কষ্ট দেওয়ার অপরাধ বোধে। দুজনের মনেই কষ্টের নদী প্রবাহিত হচ্ছে কিন্তু কারণ ভিন্ন। এখন দুজনের অনুভূতি ভিন্ন দুজনের চাওয়া ভিন্ন।
___________________________________
আজ প্রায় দশদিন হতে চললো রাজিব জেল হাজতে বন্ধি।যেই দিন রাজিবকে পুলিশ গ্রেফতার করে এনেছে তারপরের দিনই ওকে কোর্টে চালান করে দেওয়া হয়।আদালতে তিতির যেই সকল প্রমাণ পেশ করে জজ সাহেবের সামনে। তার ভিত্তিতে জজ রাজিবকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।যা শুনে রাজিব ও তার মায়ের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরে। কিন্তু তখন ওদের কিছুই করার ছিল না। কারণ উকিল ওদের ছাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে।

এইসকল কিছুর মাঝে রাজিব এটি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। তিতির এই সকল কিছু আগের থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল। কিন্তু তিতিরের এই সকল কিছু করার পিছনের কারন কিছুতেই বুঝতে পারছে না রাজিব।

রাজিব জেলের ভিতরে বসে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কারণ তিতির জেলে ওর সাথে দেখা করতে আসছে। রাজিব নিজের মনের ভিতর থাকা প্রশ্নগুলোর জবাবের জন্য অপেক্ষা করছে।আজ তিতিরের কাছ থেকে নিজের মনের ঘূর্ণায়মান প্রশ্নের জবাব ও জেনেই ছাড়বে।

একটি মেয়েকে আসতে দেখা যাচ্ছে যে রাজিবের সাথে দেখা করতে একটু একটু করে এগিয়ে আসছে রাজিবের দিকে। কিন্তু রাজিব এখনো মেয়েটির চেহারা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পায়নি। কিন্তু তবুও রাজিব দূর থেকে দেখে বলতে পারছে এটি তিতির নয় কারণ মেয়েটির পোশাক অনেক সাধারণ। কিন্তু তিতির তো এত সাধারণ ভাবে থাকে না।ও সবসময় মর্ডান থাকতেই পছন্দ করে।তাই রাজিব সেই মেয়েটির চেহারা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে সেই দিকে।

মেয়েটি যত এগিয়ে আসছে রাজিব মেয়েটির অবয়ব ততোই স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে।মেয়েটি যতই কাছে আসছে রাজিবের অস্থিরতা যেনো বেড়ে চলেছে।ও চাইছে না ও যা ভাবছে তা যেনো কখনো না হয় তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।

মেয়েটি এসে দাঁড়ায় সেলের সামনে এসে দাড়াতেই রাজিব কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো।

মি..মিহিকা তু.. তুমি, তুমি এখানে কি করছো।

রাজিবের কথা শুনে সেলের ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মিহিকা মুচকি হাসলো। এবং রাজিবকে উদ্দেশ্যে করে বলল।

মনে রেখেছ তাহলে, অবশ্য আমি মনে রাখার মতোই ব্যাক্তি যার সর্বস্ব তুমি লুটে নিয়েছ তাঁকে মনে কি করেই বা না রাখবে।

মিহিকার কথা শুনে রাজিব শুকনো একটি ঢোক গিলে বলল।

এখানে তো তিতিরের আসার কথা ছিল, তুমি কি করছো এখানে আর তিতির কোথায়।

মিহিকা আবার মুচকি হেসে বলল।

তিতির কে দেখতে চাও তাহলে তোমাকে ওর সাথেই দেখা করাচ্ছি।

কথাটি বলেই মিহিকা নিজের চোখের থেকে মোটা ফ্রেমের চশমা খুলে ফেলল। নিজের ঝলমলে চুল গুলো টান দিতেই তা খুলে বেড়িয়ে আসলো লেয়ার কার্ট করা কালার চুল। রাজিব শুধু সেলের ওপাস থেকে দেখে যাচ্ছে মিহিকাকে। নিজের আসল চুল বের করা শেষ হতেই এইবার একটি টিস্যু পেপার হাতে নিয়ে নিজের মুখ ভালো ভাবে মুছে নিতেই বেড়িয়ে আসলো মিহিকার আড়ালে থাকা তিতিরের চেয়ারা।

মিহিকার আসল রুপ দেখে রাজিবের মনে হচ্ছে ও বোধহয় খারাপ কেনো স্বপ্ন দেখছে।এটি কেনো কালেই সম্ভব না।মিহিকা তার সাথে এত দিন তিতির সেজে অভিনয় করেছে। আর ও ওকে চিন্তেও পারেনি।মিহিকা রাজিবকে বিচলিত অবস্থায় দেখে বলল।

কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ, অবশ্যই অনেক বড় ঝটকা খেয়েছ।দেখো আমি হিসাব নিকাশ শেষ করে ফেলেছি। তুমি যেমন কিছু বছর আগে আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে ব্যবহার করে ছুঁড়ে মেরেছিল ঠিক তাই আমি তোমার সাথে করেছি।মনে আছে তোমার কিছু। আমি কতটা পাগল ছিলাম তোমার জন্য। আমি মনে করেছিলাম আমার চেহারার জন্য ও আমার সাধারণ ভাবে জীবন কাটানোর জন্য অন্য সকলে আমাকে অপছন্দ করলেও তুমি আমাকে ভালোবাসো আমি এত সাধারণ হওয়ার পরেও তুমি আমাকে ভালোবেসেছ। কিন্তু,

কথাগুলো বলে থামে মিহিকা জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আবার বলা শুরু করলো।

কিন্তু তুমি আমাকে কখনো ভালোবাসো নি। তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছ। তুমি আমাকে নিঃস্ব করে ছেড়েছ।আমার সাথে মিথ্যে বিয়ের নাটক করে আমার শরীর দিয়ে নিজের চাহিদা মিটিয়ে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছ। আমাকে নিজের জীবন থেকে শুধু তুমি সরিয়ে ফেলো নি আমাকে আমার পরিবারের কাছে কলঙ্কিনি করেছ। আমাদের একান্ত মুহূর্তের ভিডিও তাদের কাছে পাঠিয়ে তাদের কাছ থেকে একেবারে দূর করে দিয়েছিলে তুমি। আমার বাবা মা যখন আমাকে দেখে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ছিল তখনি আমি নিজেকে ওয়াদা করেছিলাম। তুমি যেমন আমার কাছ থেকে আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছ তেমনি তোমার কাছ থেকেও আমি তোমার সব কিছু কেড়ে নিবো।

কথাগুলো বলে জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো মিহিকা।মিহিকা রাজিবের দিকে তাকাতেই তার হাসি থেকে গেল।ওর চোখ দিয়ে যেনো এখন আগুন বের হচ্ছে ও রাজিবের দিকে তাকিয়ে আবার বলা শুরু করলো।

পাঁচ বছর, পাঁচ বছর ধরে আমি নিজেকে তৈরি করেছি। তোমার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমি আমার পুরো পরিচয় বদলে ফেলেছি। না চাইতেও তোমার যেমন মেয়ে পছন্দ ঠিক সেই রকম ভাবে নিজেকে গড়ে তুলেছি।আর দেখ তুমি কত সহজে আমার সকল পরিকল্পনা সফল করে দিয়েছ। তোমাকে শাস্তি দিতে পেরে আমি কত খুশি হয়েছি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।

এখন তুমি জেলে বসে বসে এইটা আফসোস করতে করতে জীবন অতিবাহিত করো। কেনো তুমি আমার জীবন নষ্ট করেছ।আর আমি মুক্ত বাতাসে নিজের জীবন আবার গুছিয়ে ফেলবো।এই জঘন্য কৃত্রিম রুপ যেই রুপ কে আমি ঘৃণা করি সেই রুপকে আমি আমার জীবন থেকে বিলিন করে দিবো।এই কৃত্রিম খোলশ ছেড়ে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিবো।নিজেকে আমি ওইভাবে তৈরি করব যেভাবে থাকতে আমি পছন্দ করি। কিন্তু এইবার আর আমাকে তোমার মতো মানুষরা ধোঁকা দিতে পারবে না।

কথাগুলো বলেই মিহিকা কিছুক্ষণ রাজিবের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে যায়।আর রাজিব সেলের ভিতরে ঠিক আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে হয়তো ও বুঝে গেছে এখন আর ওর বাঁচার কেনো উপায় নেই।ও যেই সকল পাপ করেছে সেই সকল পাপের শাস্তি ওকে এই জেলের ভিতরে থেকে পেতে হবে।ওর সকল বাঁচার আশা শেষ হয়ে গিয়েছে।আর কেউ ওকে এখন শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারবে না।ও নিজের উপযুক্ত শাস্তি পেয়ে গেছে।এই শাস্তি ওর সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে ।
___________________________________
ভার্সিটিতে আজ নবীন বরণ অনুষ্ঠান।তাই আজ ভার্সিটির আনাচে কানাচে সেজে উঠেছে এক নতুন সাজে। ভার্সিটির সকলের মাঝে চলছে উৎসবের আমেজ।এই ভার্সিটিতে নবীন বরণ একটি বিশেষ উৎসবের মতোই পালিত হয়। নবীন বরণ শুধু নতুন স্টুডেন্ট না পুরাতন সকল স্টুডেন্ট ও অংশগ্রহণ করতে পারে।তাই নবীন বরণ অনুষ্ঠানে জাঁক জমকতা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। শুধু মাত্র ভার্সিটির মাঝে নতুনত্বের সাজ দেখা যাচ্ছে তা নয় স্টুডেন্টরাও সেজে এসেছে নিজেদের পছন্দ মতো বিভিন্ন সাজে।অনেক মেয়ে ও ছেলেরা সাড়ি পরে এসেছে আবার অনেক ছেলেরা পরে এসেছে পাঞ্জাবি।

রুদ্র, আরশাদ,রাজ ও আব্রাহাম তাদের হৃদিতা ও নূরের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু অনুষ্ঠান প্রায় শুরুর পথে তবুও তাদের কোনো খবর নেই।তার উপর প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নূর ও হৃদিতাকে। কিন্তু ওদের এত লেট দেখে তো মনে হচ্ছে ওরা অতিথিদের না অতিথিরা ওদের বরন করবে। কিছুক্ষণের মাঝেই নূর ও হৃদিতাকে গেইট দিয়ে ঢুকতে দেখা যায়।

হৃদিতা কে দেখে আরশাদ ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। নূর ও হৃদিতা এগিয়ে আসছে তাদের বন্ধুদের দিকে। হৃদিতা ও নূর দুজনে সারি পরেছে ও সাথে পরেছে ম্যাচিং হিজাব।ওদের দুজনকেই দেখতে অপরুপ লাগছে।ওরা দুজন রুদ্রদের কাছে এসে দাড়ানোর পরেও আরশাদের অভিব্যক্তি বদলাই নি।ও যেনো কেনো ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে।ও এখনো একই ভাবে তাকিয়ে আছে হৃদিতার দিকে আরশাদের অবস্থা দেখে হৃদিতা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল।

ওর কি হয়েছে ও এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেনো।

তোকে দেখে মনে হয় ও আবার প্রেমে পরে গেছে।তাই ও তোর দিকে এভাবে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে।

রাজের কথায় হৃদিতা বলল।

তোর ফালতু কথা বাদ দিয়ে ওকে ঠিক কর।

হৃদিতার কথা শুনে আব্রাহাম বলল।

এখনি করছি,

কথাটি বলতে দেরি কিন্তু আব্রাহামের আরশাদের পেটে ঘুষি মারতে দেরি হয়নি। ঘুষি খেয়ে আরশাদ ঘোরের মধ্যে থেকে বের হয়ে আসলো। আরশাদ তার বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো সকলে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।

তোরা আমার দিকে এভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছিস কেনো।

আরশাদের কথা শুনে নূর বলল।

আমরা দেখতে চাইছি। এভাবে এক দৃষ্টিতে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে তুই ঠিক কি দেখতে চাইছিস।হয়তো আমরা তোর দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুটা হলেও বুঝতে পারবো।

আরশাদ কথাগুলো শুনে বাঁকা হাসি দিয়ে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে বলল।

তোরা ভালো মতো দেখতে কোথায় দিলি,আগে আমি ভালোভাবে দেখে নেই তারপর তোদের বলবো কি দেখেছি।

আরশাদের কথাটি বলার সাথে সাথে হৃদিতা ওর গালে একটি ঘুষি বসিয়ে দেয় এবং বলল।

কি দেখবি শয়তান তুই,তোর দেখার সাধ আমি একবারের জন্য ঘুচিয়ে দিবো।

আরশাদের কথা শুনে আরশাদ কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসে।

নূর ‌ও তার বান্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে। অনুষ্ঠান এখনো শুরু হয়নি কেননা এখনো প্রধান অতিথি আসেনি। ভার্সিটির সামনে এসে একে একে ছয়টি গাড়ি এসে থামলো। ভার্সিটির সকলে এখন তাকিয়ে আছে সেই গাড়ি গুলোর দিকে। সকলের ভিতরেই এখন গাড়ির ভিতরে থাকা মানুষগুলো কে দেখার আগ্রহ যেনো চেপে ধরেছে। কিছুক্ষণের মাঝেই প্রিন্সিপাল ও বাকি শিক্ষকদের দৌড়ে গাড়িগুলোর সামনে আসতে দেখা গেল। প্রিন্সিপাল কে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে সকলে খুব ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে গাড়ির ভিতরে কেনো সাধারণ মানুষ বসে নেই বরং কেনো ক্ষমতাবান ব্যাক্তি বসা।

গাড়ি থেকে সামনে ও পিছনের চার গাড়ি থেকে বডিগার্ড নেমে এসে মাঝের গাড়ি দুটোর সামনে এসে গাড়িটিকে ঘিড়ে দাড়ালো।একজন বডিগার্ড মাঝের দুটি গাড়ি থেকে প্রথম গাড়ির দরজা খুলতেই সেখান থেকে বেড়িয়ে আসলো একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ। এবং দ্বিতীয় গাড়িটির দরজা খুলতেই বেড়িয়ে আসলো একজন সুদর্শন পুরুষ। সুদর্শন পুরুষটিকে দেখে সকলের মুখ যেনো হা হয়ে গেল।

#চলবে…

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৩৪

রুদ্ররাও তাকিয়ে আছে গেইটের দিকে দেখার জন্য কে এসেছে। কিন্তু গার্ডদের জন্য তাদের চেহারা ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না। নূর বিরক্ত হচ্ছে ভ্যাবলার মতো এভাবে কাওকে দেখার জন্য তাকিয়ে থাকতে।ও এইটাই ভেবে পাচ্ছে না কাওকে দেখার জন্য এভাবে কেনো তাকিয়ে থাকতে হবে। নূর বরাবরের মতো বিরক্ত হলো। তাই নূর বিরক্ত হয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলল।

তোরা যদি আর একবার ওইদিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকিস তাহলে সব কয়টার চোখ আমি উপরে ফেলবো।

নূরের কথা শুনে সকলে ওর দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলল।

তোর এত সমস্যা কিসে।দেখতে তো দিবি আমাদের কলেজে কাকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে।

রাজের কথা শুনে নূর দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

যখন ওনারা স্টেজে উঠবে তখন দেখতে পারবি না। এখন এভাবে তাকিয়ে থাকার দরকার কি।

নূরের কথায় রাজ মাথা চুলকায়।তখনি আরশাদ রাজের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

দেখ তোর হুর পরী আসছে,

আরশাদের কথা শুনে রাজের সাথে সাথে সকলে ভার্সিটি গেইটের সামনে তাকায়।গেইট দিয়ে সাইরা কে ঢুকতে দেখা যাচ্ছে।সাইরাও সকলের মতো সারি পরে আসায় ওকেও অনেক সুন্দর লাগছে।রাজ নিজের বুকের উপর এক হাত চেপে ধরে বলল।

এই মেয়ে মনে হয় আজ আমাকে মারার প্ল্যান করে এসেছে দোস্ত।আজ আমি নিজেকে কিভাবে সামলাবো।এই মেয়ের একটু ভেবে চিন্তে এভাবে সেজে আসা উচিত ছিল। কিন্তু না ও আমার কথা একটুও না ভেবে এই কিলার লুকে চলে এসেছে।

রাজ কথা গুলো বলে চলে যায় সাইরার কাছে।সাইরা এতক্ষণ রাজকে খেয়াল করে নি।রাজ হঠাৎ এসে সাইরার সামনে দাঁড়ায়। এবং সময় ব্যয় না করে সাইরার দিকে একটু ঝুঁকে কানে কানে বলল।

আমাকে কি তুমি মেরে ফেলতে চাও,

রাজের হঠাৎ সামনে এসে পড়ায় প্রথমে সাইরা কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও রাজের কথা শুনে সাইরা অবাক হয়ে বলল।

আমি কি করেছি,আমি আপনাকে মারতে যাবো কেনো?

কি করেছ মানে ?আমাকে মারার জন্যই তো এমন ভাবে সেজে এসেছ।একটা সত্য কথা বলব।

কি?

তোমাকে এই সারিতে অপরুপ লাগছে,

রাজের কথা শুনে সাইরা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।তা দেখে রাজ দুষ্টু হেসে বলল।

এখনো তো তোমাকে লজ্জা দেওয়ার মতো কেনো কথা বলিই নি।এখনি যদি এত লজ্জা পাও তাহলে যখন আমাদের বিয়ের পর বা..

আর কিছু বলার আগেই সাইরা রাজের মুখে ওর হাত চেপে ধরল। এবং সাথে সাথে আবার হাত সরিয়ে ও ফেললো।তা দেখে রাজ মুচকি হেসে সাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল।

তোমার ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে এই প্রথম ছুঁয়েছ।এই ছোঁয়া আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আমার স্মৃতির পাতায় এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সাইরা রাজের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।আর এদিকে রাজ গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে চলে যায় বন্ধুদের কাছে।

রাজ, রুদ্র, আব্রাহাম ও আরশাদ বসে আছে স্টেজের সামনের চেয়ারে। প্রধান অতিথি তাদের জন্য বরাদ্দ ভার্সিটির অফিস রুমে আরাম করছে। অনুষ্ঠান শুরু হতেই প্রধান অতিথি স্টেজে এসে তাদের বরাদ্দকৃত চেয়ারে এসে বসলো। রুদ্র ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।আর নূর এখনো স্টেজের আসে পাশেও আসে নি।ওকে যখন ডাকা হবে তখন ও এসে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করবে।

এর মধ্যে একজন শিক্ষক এসে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধান অতিথির নাম বলে। এবং সাইরা ও নূরকে ফুল দিয়ে তাদের বরণ করতে বললেন। নূর স্টেজের পিছনে থাকায় ও হৃদিতার সাথে কথায় ব্যস্ত থাকায় ভালোভাবে শিক্ষকের বলা নামটি শুনলো না। কিন্তু রুদ্র ঠিকই শিক্ষকের বলা নামটি শুনে চমকে উঠলো। এবং স্টেজের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো। আফজাল চৌধুরী ও আদিত্য চৌধুরী বসে আছে। রুদ্র কিছু বলা বা করার আগেই নূর ও হৃদিতা ফুল নিয়ে স্টেজে উঠে গিয়েছে।

হৃদিতা ফুলের তোড়া নিয়ে আফজাল চৌধুরীর হাতে হাসি মুখে তুলে দিলো। নূর ও আদিত্য কে ফুল তুলে দেওয়ার জন্য আদিত্যর দিকে তাকাতেই ওর হাত দুটো থেমে গেল। নূর তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে আসলে তাকিয়ে আছে বললে ভুল হবে ও রাগে ফুঁসছে। এবং কিছু সময়ের ব্যবধানে নূরের হাতে থাকা ফুলের তোড়া নূর ছুড়ে মারে স্টেজের বাইরে। এবং রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল।

আমি কোনো গুন্ডাকে হাতে নিজের হাত দিয়ে ফুল তুলে দিতে পারবো না।

কথাটি বলেই নূর গটগট করে স্টেজ থেকে নেমে গেল। এদিকে সকলে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল নূরের দিকে কেউ জানেনা নূরের এই ব্যবহারের কারন। আদিত্যর পাশে বসে থাকা আফজাল চৌধুরী ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলের ভাবমূর্তি বোঝার চেষ্টা করছে।উনি প্রচুর অবাক হয়েছে নূরকে প্রথম দেখে। আফজাল চৌধুরী প্রথম দেখেই নূরকে চিনে ফেলেছেন। কিন্তু এখন আফজাল চৌধুরীর চিন্তা হচ্ছে ওনার ছেলে যেই ঘাড় ত্যাড়া এবং এক রোখা টাইপের এখন কি করবে আল্লাহ জানে। নূর সবার সামনে আদিত্য কে অপমান করে গিয়েছে।যেই ছেলের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলে কথা বললেও ওর লোকের অস্তিত্ব বিলীন করে ফেলে।সেই ছেলেকে এই মেয়ে কিভাবে সবার সামনে অপমান করেছে।

কিন্তু আদিত্য চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে আছে ।ওর চেহারা দেখে কারো বুঝার উপায় নেই ওর মনে কি চলছে।এর মধ্যে প্রিন্সিপাল স্যার এসে আফজাল চৌধুরী ও আদিত্যর কাছে এসে মাফ চাইছে নূরের ব্যবহারের জন্যে। আদিত্য নিজের হাত দিয়ে ইশারা করে প্রিন্সিপাল কে মাফ চাইতে না করে দেয়। প্রিন্সিপালের মনের ভয় এখনো কাটেনি। ওনার শরীর এখনো কাঁপছে। কিন্তু ওনার কিছুই করার নেই এই মুহূর্তে।

নূর স্টেজ থেকে সোজা ভার্সিটির ক্যাম্পাসে চলে আসে।ও না চাইতেও কেনো বারবার ওর দেখা এই লোকটির সাথে হয়ে যায় আল্লাহ জানে। নূরের পিছু পিছু এসেছে নূরের বন্ধুরাও। আব্রাহাম এসে নূরকে বলল।

কি হয়েছে তোর তুই, আদিত্য চৌধুরী কে কেনো এভাবে সবার সামনে অপমান করে চলে এসেছিস। তুই চিনিস উনাকে উনি কতটা…

আব্রাহাম আর কিছু বলার আগে রুদ্র আব্রাহামের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

কি বলছিস দোস্ত,আদিত্য চৌধুরীর ওর স্বামী হয়।তাই ওর অধিকার আছে নিজের স্বামীকে এমন একটু আধটু অপমান করার।এত প্যারা নিচ্ছিস কেনো।ওর স্বামী নিজের স্ত্রীর সম্পর্কে জানলে আরো খুশিতে লাফাবে ওকে কিছু বলবে না।

রুদ্রের কথা শুনে,সকলে হা করে নূরের দিকে তাকায়। অবাক হয়ে আরশাদ নূরকে বলল।

কি আদিত্য চৌধুরী তোর হঠাৎ করে হওয়া স্বামী।

নূর আরশাদের কথার কেনো উত্তর না দিয়ে সোজা রুদ্রের সামনে এসে দাড়ালো। কেউ বুঝতে পারছে না নূর কি করতে চাইছে। নূর হঠাৎ নিজের দু হাতের আঙ্গুলের মুঠোয় রুদ্রের চুল আঁকড়ে ধরলো এবং জোড়ে জোড়ে টানতে টানতে বলল।

তোকে কতবার বলেছি না,এই গুন্ডাকে আমার স্বামী বলবি না। তবুও বারবার আমার কানের সামনে স্বামী স্বামী করে চিল্লাতে থাকিস।

নূরের চুল ধরে টানায় রুদ্র কিছুটা ব্যাথা পায় এবং নূরের উদ্দেশ্যে বলল।

ছাড় কি করেছিস আমার এত সুন্দর সিল্কি চুল নষ্ট করে ফেলছিস।

নূর কিছু বলার আগেই পিয়ন এসে নূরকে বলল।

আপনাকে স্যার দ্বিতীয় তলার অফিস রুমে ডাকছে,

পিয়ন কথাটি বলেই চলে যায়।সকলে বুঝে গেছে নূরকে স্যার কেনো ডেকে পাঠিয়েছে।তাই আরশাদ নূরকে বলল।

স্যার প্রিন্সিপাল রুমে না ডেকে অফিস রুমে কেনো ডেকেছে।তাও আবার দ্বিতীয় তলার অফিস রুমে।চল আমরাও তর সাথে যাবো।

আরশাদের কথায় সকলে সম্মতি প্রকাশ করলেও নূর বলল।

তার কেনো দরকার নেই,আমি নিজেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারবো তোরা এখানে দারা।

কথাটি বলেই নূর চলে যায় অফিস রুমের উদ্দেশ্যে।

নূর অফিস রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি চাইলো।তখনি অনেক গম্ভীর গলায় কেউ বলে উঠলো।

ভিতরে আসো,

নূর ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো কাউচের উপর পায়ের উপর পা দিয়ে বসে আছে আদিত্য। আদিত্য কে দেখে নূরের শান্ত হওয়া রাগ যেনো আবার মাথা চারা দিতে চাইছে। তবুও নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল।

প্রিন্সিপাল স্যার কোথায় আমি ওনার সাথে দেখা করতে এসেছি।

আদিত্য বলল।

প্রিন্সিপাল কে দিয়ে কি করবে।

স্যার আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে ,তাই আমি এখানে এসেছি। স্যার যখন এখানে নেই তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।

কথাটি বলেই নূর দরজার কাছে গিয়ে দেখতে পেলো দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। নূর বেশ অবাক হলো দরজা বন্ধ দেখে এবং ভাবতে লাগলো দরজাটি বন্ধ করলো কে। নূরের ভাবনার মাঝেই আদিত্যের নামই ওর মাথায় এলো ও যখন পিছন ফিরলো তখন…
___________________________________
নূর চলে যেতেই হঠাৎ রুদ্রের নাম ধরে কেউ ডেকে উঠলো।

রুদ্র,

ডাক শুনে সকলে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো একটি মেয়ে রুদ্রের দিকে ছুটে আসছে।সেই মেয়েকে রুদ্র খুব ভালোভাবে চিনে শুধু রুদ্র কেনো ওর বন্ধুরাও এই মেয়েকে খুব ভালোভাবে চিনে। মেয়েটিকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে আব্রাহাম ওর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলল।

ও কখনো রুদ্রকে এত তাড়াতাড়ি ছাড়বে না।

মেয়েটি দৌড়ে এসে সোজা রুদ্র কে জাপটে ধরে। কিন্তু একি রুদ্রের এত শক্ত বাহু মেয়েটির এত নরম কেনো মনে হচ্ছে।আর হাইটেও রুদ্রকে খাটো খাটো মনে হচ্ছে।মেয়েটি কিছু বুঝে উঠার আগেই। মেয়েটি যাকে জাপটে ধরেছিল সে মেয়েটিকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে একটি চর মেরে দিলো। মেয়েটি সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো…

#চলবে…

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৩৫

মেয়েটির গালে থাপ্পড়টি পরতেই মেয়েটি অবাক হয়ে তাকায় সিরাতের দিকে। মেয়েটি সিরাতকে জানেনা চিনেনা তার মধ্যে সিরাত ওকে থাপ্পড় মেরে দিলো। সত্যি মেয়েটির জন্য বিষয়টি অবাক করার মতো। মেয়েটি কপট রাগ দেখিয়ে বলল।

এই তুমি আমাকে চিনো, তুমি আমাকে থাপ্পড় মারলে কেনো? তুমি জানো আমি তোমার সাথে কি করতে পারি।কোন সাহসে তুমি আমার গায়ে হাত তুলেছ।

সোফিয়ার কথা শেষ হতেই সিরাত বলল।

কি করতে পারো?

অনেক কিছু, তোমার পিছনে যেই ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে।ও আমার বয়ফ্রেন্ড আমার এক কথাই রুদ্র তোমার এমন অবস্থা করবে তুমি কখনো আর আমার গায়ে হাত তোলার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না।

সিরাত সোফিয়ার কথায় মুচকি হেসে বলল।

তুমি যাকে নিজের বয়ফ্রেন্ড বলে দাবি করছো। শুধু মাত্র তুমি ওর অতীত। এবং এখন ওর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শুধুমাত্র আমি। তুমি ওর শুধু মাত্র প্রাক্তন প্রেমিকা।আর আমি হলাম ওর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ স্ত্রী।তাই বুঝে শুনে কথা বলো আমার সাথে।কারণ এমন না হয়ে যায় তুমি আমার অবস্থা খারাপ করতে গিয়ে তোমার নিজের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

সিরাতের কথা শুনে সোফিয়া বিশ্বাস করতে চাই না।তাই ও বলল।

অসম্ভব, রুদ্র আমাকে ছেড়ে কখনো অন্য মেয়েকে বিয়ে করবে তো দূরের কথা। বিয়ে করার কথা ভাবতেও পারে না। রুদ্র অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতে শুধু মাত্র আমি। সেইখানে রুদ্র অন্য কাওকে জায়গা দিতে পারে না।

কথাগুলো বলে সোফিয়া রুদ্রের কাছে গিয়ে বলতে লাগলো।

রুদ্র দেখেছ,এই মেয়ে কি সব মিথ্যা কথা বলছে।আর তুমি কিছু বলছো না।এই মেয়েকে তুমি..

সিরাত সত্য কথা বলছে সোফিয়া,

রুদ্রের একটি কথায় চুপ হয়ে গেল সোফিয়া। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে রুদ্রের পানে তাকিয়ে থেকে বলল।

তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না রুদ্র।আমি তোমার সাথে এই কদিন ঠিক ভাবে কথা বলিনি। তোমাকে ইগনোর করেছি।তাই তুমি আমার সাথে এই মজাটা করছো। আমি তোমার কাছে মাফ চাইছি।আমি আর এইরকম টা কখনো করবো না। এখন আর তোমাকে ইগনোর করব না। তোমার সব কথা শুনবো।আমি আর ছেলে বন্ধুদের সাথেও কখনো কথা বলবো না। তবুও প্লিজ আমার সাথে এত বাজে মজা করো না।

সোফিয়ার কথা শুনে রুদ্র তাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য ওর কাঁধে নিজের হাত রাখতে নিয়েও আবার হাত সরিয়ে ফেলে।রুদ্রের অন্য নারীকে স্পর্শ করার আগেই ওর হাত থেমে গেছে কোথাও যেনো বাধা পাচ্ছে রুদ্র।ও যখনি সোফিয়ার কাঁধে হাত রাখতে চাইলো। তখনি নিজের কাছে প্রচুর খারাপ লাগা অনুভূতি সৃষ্টি হলো।তাই রুদ্র সোফিয়ার কাঁধে হাত রাখতে পারলো না। সোফিয়া রুদ্রের হাত এভাবে গুটিয়ে নিতে দেখে রুদ্রকে বলল।

কি হলো রুদ্র? তুমি নিজের হাত এভাবে গুটিয়ে নিলো কেনো।আমিতো তোমারি আমাকে ছোঁয়ার পূর্ণ অধিকার আছে তোমার।

না আমার অধিকার নেই, কারণ আমি এখন অন্য কারও স্বামী।আমি বা তুমি এটা মানি আর না মানি এই সত্য সত্যই থাকবে।তাই এখন এটায় ভালো হবে তুমি আমার থেকে দূরে থাকো।

রুদ্রের কথা শেষ হতেই সিরাত সোফিয়ার উদ্দেশ্যে বলল।

তোমার নাটক শেষ, এখন সত্যটা যেনে গিয়েছ না। এখন আসতে পারো।আর হ্যাঁ আমার স্বামী থেকে দূরে থাকবে।নাহলে আমি তোমার সাথে কি করতে পারি তুমি তা দেখবে।

সিরাতের কথা শুনে সোফিয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সেখান থেকে চলে যায়। সোফিয়া চলে যেতেই সিরাত রুদ্রের কাছে এসে দাঁড়ায়।এবং রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।

তুমি বেপরোয়া, তুমি অভদ্র, তুমি জঙ্গলি, এই সকল কিছু তোমার ভিতরের বৈশিষ্ট্য কিন্তু এতে আমার কেনো সমস্যা নেই। তুমি মানুষ আর মানুষ বলতেই ভুল। তুমিও জীবনে অনেক ভুল করতে পারো। তখন আমি একজন স্ত্রী হিসেবে তোমাকে সঠিক পথ দেখাবো যেনো তুমি সেই পথ অনুসারে চলতে পারো। কিন্তু ওই ভুল যদি কোনো দ্বিতীয় নারী হয় তাহলে।

কথাটি বলেই সিরাত রুদ্রের আরো কাছে চলে আসে এবং রুদ্রের চোখে চোখ রেখে বলল।

যদি সেই ভুল কোনো দ্বিতীয় নারী হয়। তাহলে আমি তোমাকে সঠিক পথ দেখাব না। তুমি যেনো আর ওই পথই না চলতে পারো তাই তোমার পা কেটে ফেলবো। এবং সেই পা দরজার সামনে ঝুলিয়ে রাখবো যেনো ওই পা দেখে তোমার বারবার মনে পরে তোমাকে এই শাস্তি কেনো দেওয়া হয়েছে। এবং পা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই ভুল আর দ্বিতীয় বার না করো।

কথাগুলো বলে থামে সিরাত। এবং রুদ্র থেকে কিছুটা দূরে সরে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

আমি সাইরার সাথে দেখা করতে এসেছি।ও কোথায় আছে বলতে পারবে।

সিরাতের কথায় সকলের ধ্যান ভাঙ্গে। ওরা সকলে এতক্ষণ ধরে সিরাতের কথা শ্রবণ করছিল।ওরা ভাবতেও পারেনি সিরাত এতটা কঠোর হতে পারে। ঠিক রুদ্রের বন্ধুদের মতোই রুদ্রের অবস্থা। রুদ্র সিরাত থেকে এমন কঠোর বাক্য ব্যবহার করতে পারে। হৃদিতা সিরাতকে উদ্দেশ্যে করে বলল।

সাইরা স্টেজের দিকে আছে তুমি ওকে ওখানেই পেয়ে যাবে।

হৃদিতার কথা অনুযায়ী সিরাত চলে যায় সাইরা কে খুঁজতে।
___________________________________
নূর আদিত্যের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো আদিত্য এখনো একই ভঙ্গিতে বসে আছে। নূর আদিত্যর কাছে গিয়ে বলল।

দরজা আটকিয়েছে কে?আমি বাহিরে যাবো দরজা খুলে দাও।

নূরের কথায় আদিত্য ভাব অলসহীন ভাবে বললো।

আমি কি জানি? তুমি যেখানে আছো আমিও সেখানেই আছি।

আদিত্যর কথা শুনে নূরের মাথায় যেনো আগুন ধরে গেল।ও আদিত্যর দিকে এক আঙ্গুল তাক করে বললো।

আমার সাথে একদম নাটক করবে না।আমি ভালোভাবে জানি এই সকল কিছু তুমি…

নূর আর কিছু বলার আগেই আদিত্য নিজের জায়গা থেকে উঠে।একদম নূরের কাছে চলে যায় এবং এক হাত দিয়ে নূরের কোমর জড়িয়ে ধরে। আরেক হাত দিয়ে বন্দুক চেপে ধরলো নূরের ঠোঁটে এবং বলল।

হুসসসস আমার একটুও পছন্দ না কেউ আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে ।আমার মাথা গরম হয়ে যায়।আর আমার মাথা গরম করা আর তোর জীবনকে জাহান্নামে পরিবর্তন করা একই কথা। অবশ্য আমার জীবনের সাথে জড়িত হওয়ার পরেই তোর জীবন ইতি পূর্বে জাহান্নামে পরিনত হয়ে গিয়েছে।

কথাগুলো বলে আদিত্য নূরের চেহারার চারদিকে বন্দুকটি দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল।

এত সেজেছিস কেনো কাকে দেখাতে এভাবে সেজেছিস তুই।আর তোর ঠোঁটে এই লিপস্টিক কার জন্য দিয়েছিস বল।

আদিত্যর কথা শুনে নূরের জান যায় যায় অবস্থা। এমনিতেও নিজেকে যতই সাহস দেখাক না কেনো কেউ ।এমন পরিস্থিতিতে যেই কারও ভয় পাওয়ার কথা।তোমনি নূর ও অনেক ভয় পেয়ে আছে কিন্তু ভয়ের জন্য কিছু বলতেও পারছে না।

আদিত্য আবার বলে উঠলো।

তোর সকল কিছুর উপর এখন শুধু মাত্র আমার অধিকার। তুই আমার নামে রেজিষ্ট্রেট হয়ে গিয়েছিস। তোর শ্বাস প্রশ্বাসে শুধু মাত্র আমার অধিকার। আদিত্য কখনো কাওকে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে দেয় না।
তুই হলি আমার অধিকার। আমার হালাল অধিকার তুই।তোর সকল কিছুর সাথে এখন আমি সম্পৃক্ত। মাথার এই টিপ,তোর ঠোঁটের লিপস্টিক,তোর চোখের কাজল,এই সব কিছু শুধু আর শুধু মাত্র আমার জন্য দিবি।তোর গায়ের এই শাড়ি শুধু আমার জন্য গায়ে জড়াবি। কিন্তু আমি বাদে যদি তোর এই ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়া (বন্দুকটি ঠোঁটের উপর চেপে ধরে বলল আদিত্য)চোখে কাজল দেওয়া, কপালে টিপ পড়া আর কেউ দেখে বা আর কারও জন্য তুই সাজিস তাহলে আমি ওই ব্যাক্তির চোখ তো উঠাবই সাথে তোকেও জানে মেরে দিবো।

কথাগুলো বলে আদিত্য বন্দুকটি সরিয়ে নূরের গালে হাত দিয়ে বলল।

বুঝেছ না সোনা,আমি কি বলেছি। আমার কিন্তু একদম সহ্য হয়না কেউ আমার কেনো কিছুতে নজর দেওক।আমি তার জীবন নিতেও তাহলে দ্বিধা বোধ করি না।আর এখানে তো তুমি পুরোটাই আমার। আমার স্ত্রী তোমার এই সাজ সজ্জার জন্য কারও জীবন ও চলে যেতে পারে।তাইতো আমি তোমাকে সাবধান করছি।আর হ্যা আমার একদম না পছন্দ কেউ আবার কথার অবাধ্য হউক। আমার কথার অবাধ্য যারা হয় তাদের জন্য আমি কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করি।আমি আশা করছি সেই শাস্তি তুমি তোমার নিজের জীবনে ডেকে আনবে না।এই নাও রুমাল তোমার চেহারার এই সকল কিছু এখন পরিষ্কার করে তারপর বাহিরে যাবে তুমি।

আদিত্য নূরকে তার হাতে থাকা রুমাল ধরতে না দেখে ধমকিয়ে বলল।

ধরো,

নূর নিজের কাঁপা কাঁপা হাতে রুমাল টি ধরে নিজের সকল সাজ সজ্জা এক এক করে মুছতে শুরু করলো। নূরের সাজ সজ্জা পরিষ্কার করা শেষ হতেই আদিত্য প্রস্থান করলো সেই রুম থেকে।

এদিকে নূর এখনো একই জায়গায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ও যেনো বুঝতে পারছে না আসলে ওর সাথে এতক্ষণ কি হয়েছে। নূর আদিত্য থেকে এই রকম ব্যবহার কখনো আশা করেনি নূর ও মনে করেছিল আদিত্য ওর মতোই বিয়েটা মানবে না। কিন্তু এ আদিত্যর কথা শুনে এখন অন্য কিছু মনে হচ্ছে।ইতি মধ্যে আদিত্য নূরের উপর নিজের অধিকার খাটানো ও শুরু করে দিয়েছে আর সেটিও খুব ভয়ংকর ভাবে।

#চলবে….