ভূমধ্যসাগরের তীরে পর্ব-১১+১২

0
79

#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ১১
#লেখিকা_দিশা_মনি

মিষ্টি হতাশ চিত্তে বসেছিল জানালার কার্নিশ ঘেষে। এই অচেনা অজানা মার্সেই শহরে সে যেন এখন অনেক বেশিই অসহায় হয়ে উঠেছে৷ একেই তো বুঝতে পারছে না কিভাবে রাফসানকে খুঁজে বের করবে৷ তার উপর এখন আবার পাসপোর্ট ভিসাও হারিয়ে ফেলেছে৷ এখন এই অচেনা দেশে তার থেকে নিরুপায় বোধহয় আর কেউ নেই। এমন সময় ফাতিমার বিবির কন্ঠস্বর শোনামাত্রই সে সজাগ হলো৷ ফাতিমা বিবি মিষ্টির রুমে এসে বললেন,
“কি অবস্থা মিষ্টি? তুমি এখন কেমন আছ?”

“জ্বি, ভালো।”

“ওহ। তো যেটা বলার জন্য আসা। আমার মেয়ে আমিনা চলে এসেছে। ও তোমার সাথে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে৷ তুমি একটু কষ্ট করে ওর সাথে পরিচয় হয়ে নাও। আমার একটু কাজ আছে তো।”

“আচ্ছা,কোন ব্যাপার না। আপনার মেয়ে কোথায়?”

এমন সময় এক অষ্টাদশী তরুণী এসে দোর গড়ায় দাঁড়িয়ে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম, আপু। আমি আমিনা আল খলিলি। ফাতিমা বিবির আদরের মেয়ে এবং ইয়াসিন ভাইয়ের চোখের মনি।”

আমিনাকে দেখেই মিষ্টি বুঝতে পারল মেয়েটা অনেক মিশুক। সে হালকা হেসে বলল,
“ভেতরে এসো।”

ফাতিমা বিবি আমিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
“তুমি একটু মেয়েটাকে সঙ্গ দাও। এই অচেনা, অজানা শহরে মেয়েটা একদম একলা হয়ে পড়েছে। তুমি তো প্রায় ওর সমবয়সী। তোমার সাথে থাকলে হয়তো ও একটু ভালো বোধ করবে। আমি তো বয়স্ক মানুষ, আমার সাথে হয়তো মনের সব কথাও খুলে বলতে পারবে না।”

আমিনা হালকা হেসে বলে,
“তুমি কিছু চিন্তা করো না আম্মু। আমি মিষ্টি আপুর সাথে একদম নিজের বোনের মতোই মিশে যাব ইনশাআল্লাহ। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।”

ফাতিমা বিবি বেরিয়ে যেতেই আমিনা একদম মিষ্টির পাশে এসে বসে। মিষ্টি আমিনাকে দেখে হালকা হেসে বলে,
“কি অবস্থা তোমার? তোমার ব্যাপারে তোমার মা ভাইয়ের থেকে অনেক কিছু শুনলাম। তোমাকে দেখেও মনে হচ্ছে তুমি অনেকটাই খুশি আমায় দেখে। তবে আমার মনে একটু খচখচানিটা যাচ্ছে না। তুমি কিছু বলবে এই ব্যাপারে? তোমার কি সত্যিই আমাকে নিয়ে বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই? কারণ তোমার সাথে আমার একই ঘর শেয়ার করে থাকতে হবে।”

“আরে না, এই নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না আপু। আমার এই নিয়ে কোন সমস্যা নেই। আপনার মতো বোন পেয়ে অনেক খুশি৷ ভাইয়ার সাথে তো আমার সম্পর্ক অনেকটাই ফর্মাল। এখন মনে হলো একজন কাছের কাউকে পেলাম৷ যাইহোক, আপনার ব্যাপারে অনেক কিছুই শুনলাম মায়ের কাছে। কিভাবে আপনি এই দেশে এলেন, আপনার স্বামীর খোঁজে তার উপর এখানে এসে কিভাবে পাসপোর্ট, ভিসা হারিয়ে ফেললেন। সব কিছুই আমি শুনলাম৷ তাই বুঝতে পারছি এখন আপনার মার্সেই শহরে টিকে থাকা কতটা কঠিন। তবে এখানে টিকে থাকতে চাইলে কিন্তু আপনাকে কিন্তু ফরাসি ভাষা শিখতেই হবে৷ আপনি কি শিখতে আগ্রহী?”

মিষ্টি কিছুক্ষণ চুপ করে আমিনার কথা শুনছিল। এই মিষ্টি স্বভাবের মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে তার মনটা অনেকটা হালকা লাগছিল। এতদিন পর এমন একজনকে পেল, যাকে নিজের মনের কথা বলা যায়। মিষ্টি একটু লাজুক হেসে বলল,

“ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখতে তো আমি অবশ্যই চাই। কিন্তু জানি না পারব কি না। তুমি তো জানো, আমার ফরাসি ভাষা শেখা অবস্থা এখন একদম শূন্য।”

আমিনা মিষ্টির হাতটা ধরে বলল,
“আপু, মন খারাপ করবেন না। আমরা সবাই আল্লাহর উপর ভরসা করি, তাই না? ফরাসি শেখা তেমন কঠিন কিছু নয়। আমি প্রতিদিন এক ঘণ্টা সময় দেব আপনাকে। এই শহরে টিকে থাকতে গেলে ভাষাটা জানা জরুরি। তার উপর, ভাষা জানলে আপনার স্বামীকে খুঁজে বের করাও অনেক সহজ হবে।”

মিষ্টি মৃদু হেসে বলল,
“তোমার মতো মিশুক আর হাসিখুশি মেয়ে আমার পাশে থাকলে হয়তো আমি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করতে পারব।”

আমিনা হেসে বলল,
“আপু, আমি ঠিক করেছি, আপনাকে আমার মতো করে এই শহরটা ঘুরিয়ে দেখাব। আপনি এখানে নতুন, তাই না? তবে আগে ভাষাটা একটু আয়ত্ত করা যাক। তারপর পুরো মার্সেই ঘুরিয়ে দেব।”

মিষ্টি প্রথমবারের মতো একটু আশার আলো দেখতে পেল। আমিনার কথাগুলো যেন তাকে এক নতুন শক্তি এনে দিল।

আমিনা বলল,
“আপু, কোনো কাজ যদি ঠিকভাবে শুরু না করা যায়, তবে তা শেষ করা কঠিন। আমি চাই আপনি দ্রুত শিখুন।”

এই বলে আমিনা ফরাসি ভাষার বেসিক কিছু শব্দ শেখানো শুরু করল।
“প্রথমে আপনি আমাকে বলুন, ‘হ্যালো’ বলতে চান?”

মিষ্টি একটু ইতস্তত করে বলল,
“হ্যালো তো ইংরেজিতেও হয়। ফরাসিতে কীভাবে বলি?”

“ফরাসিতে আমরা বলি, Bonjour।”

মিষ্টি তার উচ্চারণের চেষ্টা করল, “বনজুর।”
“না আপু, একটু নরম করে বলুন। শুনুন, Bon-joooour।”

মিষ্টি কিছুক্ষণ চর্চা করার পর তা ঠিকঠাক বলতে পারল। আমিনা খুশি হয়ে বলল,
“আপনি তো বেশ ভালো শিখছেন।”

~~~~~~~~
এলিসকে নিয়ে মার্সেই বন্দরের সামনে এসে থামল ইয়াসিন৷ এলিস ক্যাব থেকে নেমে বন্দরেই দাঁড়িয়ে রইল। এখান থেকে দাঁড়িয়ে দূর থেকেই সমুদ্রকে দেখে যাচ্ছিল সে।

এলিস ইয়াসিনকে বলে,
“তুমি কি আমার প্র‍তি অনেক বেশিই বিরক্ত?”

ইয়াসিন বলে,
“সেটা কি আপনি বুঝতে পারেন না?”

“একইভাবে আমার মনের অনুভূতিও তো তুমি বোঝো না,”

ইয়াসিন বলে,
“২ ঘন্টার মাঝে আর মাত্র ৩০ মিনিট সময় বাকি আছে আপনার জন্য। এখন আপনি বলুন, এখন কি ফিরবেন নাকি আরো কোথাও যাবেন?”

“আমার সাথে আরো একটু থাকো না৷ দয়া করে, একটু সময়েরই ব্যাপার। আমার কিছু বলার আছে।”

“যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।”

“এলিজা সিস পাপাকে বলছিল সে তার নতুন বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে কর‍তে চায়৷ জানিনা, কোথা থেকে একটা নতুন বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করেছে ও। সে আবার পুলিশ অফিসারও। আমি ভাবছি পরবর্তীতে আমরাও বিয়েটা করে নেই।”

ইয়াসিন রাগী কন্ঠে বলে,
“এই নিয়ে আমি আর কিছু শুনতে বা বলতে চাই না।”

“কেন ইয়াসিন?”

ইয়াসিন রেগে নিজের ক্যাব নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এলিস দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“আমার ভালোবাসাটা তাহলে তুমি বুঝলে না ইয়াসিন! এই দুঃখ আমি কোথায় রাখব? আমার যেন বুক চিড়ে শুধু দীর্ঘ শ্বাসই বের হয়।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ১২(ধামাকা)
#লেখিকা_দিশা_মনি

মিষ্টি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ল। সে মার্সেইতে আসার পর এখন প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে তবে তার পাসপোর্ট ও ভিসা ফেরত পাবার কোন ব্যবস্থা এখনো হয় নি। তাই বেশিরভাগ সময় তাকে ইয়াসিনদের বাসায় গৃহবন্দী হিসেবেই থাকতাম হয়। আমিনার সহচার্যে যদিও তার বেশ ভালো সময় যায় কিন্তু তবুও মনের মাঝে একটা খুতখুতানি তো থেকেই যায়। তাছাড়া সে যেই উদ্দ্যেশ্যে মার্সেইতে এসেছিল সেই উদ্দ্যেশ্যও তো সেভাবে সফলতার মুখ দেখল না। এসব ভেবেই হাফ ছাড়লো মিষ্টি। এখন সে সবকিছুই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছে। নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে তার। বর্তমানে মিষ্টি ইয়াসিনের দেয়া মোবাইল ফোনটা নিয়ে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। তার মনে আসছে হাজারো প্রশ্ন। মিষ্টি ভাবছিল এখন কি তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ? তারা নিশ্চয়ই মিষ্টির জন্য চিন্তা করছে৷ কিন্তু পরক্ষণেই রাফসানের চিঠিতে লেখা কথাগুলো পড়ে সে নিজের মত বদলে নেয়। স্বগতোক্তি করে বলে,
“আরো কিছু দিন দেখি আগে, যদি উনি এরমধ্যে এসে আমার সাথে দেখা করেন। যদি কোন ভাবে ওনার দেখা পেয়ে যাই! আমার এত সহজে কিছুতেই হাল ছাড়লে চলবে না। মিস্টার রাফসান শিকদারের মুখোমুখি আমি হবোই।”

মিষ্টির এই ভাবনার মাঝেই তার রুমের দরজায় এসে কড়া নাড়ল কেউ। মিষ্টি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ফাতিমা বিবি দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আলতো হেসে বললেন,
“ভেতরে আসবো?”

মিষ্টিও বিনিময়ে একটা সুন্দর হাসি দিয়ে বলে,
“জ্বি, আসুন।”

ফাতিমা বিবি মিষ্টির কক্ষে প্রবেশ করে চারিদিকে নজর বুলিয়ে বলেন,
“তোমার এখানে থাকতে কোন সমস্যা হচ্ছে না তো? কোন সমস্যা হলে বলতে পারো। এমনও তো হতে পারে আমাদের তরফ থেকে কোন গাফিলতি হচ্ছে।”

“না, আপনারা আমার জন্য যা করেছে তাই অনেক। আমি এরজন্য চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আপনারা না থাকলে যে আমার কি হতো এই অচেনা অজানা শহরে।”

“এমন কথা বলতে নেই মা। আল্লাহ আছেন তো। বান্দার বিপদে উনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সবসময়। হয়তো উনিই তোমাকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আমরা তো সেটা মনে করেই তোমায় সাহায্য করছি।”

ফাতিমা বিবির মুখে এমন কথা শুনে মিষ্টির ভীষণ ভালো লাগে। এরইমধ্যে আমিনা ছুটতে ছুটতে হাতে দুটো গ্রাউন নিয়ে এসে বলে,
“আম্মা, দেখো তো এটা মিষ্টি আপুকে মানাবে কি না?”

মিষ্টি অবাক স্বরে বলে,
“এটা কি?”

ফাতিমা বিবি হেসে বলেন,
“এটা হচ্ছে ফ্রেঞ্চ গাউন। তুমি এটা পড়ে নাও। আমিনা আর তোমার জন্য এগুলো আমি আনিয়েছি।”

“কিন্তু এসবের কোন দরকার ছিল না। এমনিতেই আপনারা অনেক করেছেন আমার জন্য।”

ফাতিমা বিবি হালকা হেসে বলেন,
“আরে নিয়ে নাও এগুলো। আমার গ্রোসারি শপের মালিক মিস্টার ল্যুঁইয়ের বড় মেয়ে এলিজার এনগেজমেন্ট হবে আজ। এজন্যই তো উনি আমাদের সবাইকে ইনভাইট করেছেন। এমনকি আমাদের সবাইকে শপিং করার জন্য বেতনের সাথে বোনাসও দিয়েছেন। বোনাসে পাওয়া ইউরো দিয়েই তো আমি সবার জন্য এসব কিনে আনলাম।”

মিষ্টি কিছুটা বিব্রতবোধ করে বলে,
“কিন্তু আমি হঠাৎ এভাবে কিভাবে যাব..আমি তো ওনাদের চিনিও না। না জানি ওনারা কি ভাববেন।”

আমিনা বলে ওঠে,
“তুমি এত চিন্তা করো না আপু। ল্যুঁই আঙ্কেল অনেক ভালো মানুষ। ওনার সাথে যখন কথা বলি তখন মনেই হয়না আমি ওনার শপের একজন কর্মচারীর মেয়ে। দেখবে উনি তোমাকেও আপন করে নেবে।”

‘কিন্তু..’

মিষ্টিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফাতিমা বিবি বলে ওঠেন,
“কোন কিন্তু নয়৷ আজ রাতে আমরা সবাই যাব মিস্টার ল্যুঁইয়ের বাড়ি৷ তুমিও যাবে আমাদের সাথে আর এটাই ফাইনাল।”

মিষ্টি আর না করতে পারল না। এমন সময় ইয়াসিন সেখানে এসে বলল,
“কোথায় যাবার কথা হচ্ছে?”

ফাতিমা বললেন,
‘মিস্টার ল্যুঁইয়ের মেয়ে এলিজার এনগেজমেন্ট আজ। ওখানেই আজ রাতে আমরা সবাই যাব।’

“এলিজা মানে মিস এলিসের বড় বোন? আমি যেতে পারবো না।”

ফাতিমা বিবি মনোক্ষুণ্ণ হয়ে বলেন,
“এমন ভাবে বলছ কেন?”

“আম্মা তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি কেন না করছি। ওখানে গেলেই আবার ঐ এলিসের মুখোমুখি হতে হবে। আমি আর বিব্রত হতে চাই না।”

ফাতিমা বিবি স্পষ্ট করে বলেন,
“আমি কিছু শুনতে চাই না ইয়াসিন৷ তুমি আজ আমাদের সাথে যাচ্ছ আর এটাই ফাইনাল।”

ইয়াসিন একটা হতাশার শ্বাস ফেলে। তার মাকে আর বুঝিয়ে লাভ নেই৷ তাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকেও রাজি হতে হয়।

★★★
রাত্রিবেলা যথাসময়ে ল্যুঁই প্যালেসে হাজির হয় সবাই৷ ফাতিমা বিবিকে আসতেই দেখেই মিস্টার ল্যুঁই সবিনয়ে এগিয়ে এসে বলেন,
“আরে মিসেস ফাতিমা বিবি..আসুন এদিকে বসুন।”

ওনার ব্যবহার দেখে কেউ বুঝবেই না যে ফাতিমা বিবি ওনার গ্রোসারি শপের একজন কর্মচারী। এতটাই সম্মান উনি ফাতিমা বিবিকে দিলেন। ফাতিমা বিবি সহাস্যে এগিয়ে যান। মিষ্টি আমিনার পাশেই ছিল। সে চারিপাশের সাজসজ্জা দেখায় ব্যস্ত ছিল। এখানে বেশ খানিকটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে তার। মাথায় দেয়া হিজাবটা বারবার ঠিক করছিল।

ইয়াসিন একটু পেছনে পেছনে আসছিল। হঠাৎ করে এগিয়ে আসতে গিয়ে ইয়াসিন কারো একটা সাথে ধাক্কা খায়। ধাক্কা খাওয়া ব্যক্তিটি পড়ে যেতে নিতেই ইয়াসিন তাকে ধরে নেয়।

ইয়াসিন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এলিসের দিকে। সে আজ একটি লং গ্রাউন পড়েছে। সেরকম একটা মেকআপও করেনি৷ এরকম ল্যাচারাল লুকে অনেক সুন্দরী লাগছে তাকে। যে কেউ দেখলে চোখ ফেরাতেই পারবে না। কিন্তু ইয়াসিন বেশিক্ষণ তাকালো না এলিসের দকে। দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে,
“দেখে চলতে পারেন না? এক্ষুনি তো পড়ে যেতেন।”

এলিস আলতো স্বরে বলে,
“সামলানোর মানুষ থাকলে দেখে চলতে হয়না।”

ইয়াসিন রেগে সামনের দিকে যায়। এলিস একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে৷ এই নির্দয় পুরুষটা সবসময় তাকে এভাবেই এড়িয়ে চলে৷ যবে থেকে সে তার ভালোবাসা প্রকাশ করেছে তবে থেকেই এমন অবহেলার স্বীকার সে।

এলিসের ভাবনার মাঝেই আমিনা এগিয়ে এসে বলল,
“সিস্টার এলিস! তুমি কেমন আছ?”

এলিস সহাস্যে বলে,
“ভালো আছি। তুমি?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

এলিস আমিনার পাশে দাঁড়ানো মিষ্টির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
“এই মেয়েটি কে?”

মিষ্টির অস্বস্তি বাড়ে। আমিনা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে,
“উনি তো আমার কাজিন হন। আমাদের সাথে দেখা কর‍তে মার্সেইতে এসেছেন।”

“ওহ।”

এলিস মিষ্টির সাথেও হেসে কথা বলে এবং ভালো মন্দ জানতে চায়। মিষ্টির অস্বস্তি অনেকটা কেটে যায়। সে বুঝতে পারে এলিস মেয়েটা বেশ ভালো মনের। একদম বাবার মতোই বিনয়ী আর মিশুক।

এদিকে হঠাৎ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে অতীব সুন্দরী এক রমণী। মিষ্টি সেদিকে তাকায়৷ চেহারাটা অনেকটা এলিসের মতোই তবে নীল চোখ, চওড়া নাক, ভি শেপেড মুখ আর সুবিন্যস্ত মুখবিবর বিশিষ্ট এই রমণীর সৌন্দর্য যেন এলিসের থেকে অনেক বেশি।

আমিনা মিষ্টির কানে কানে বললো,
“এই হলো এলিজা ল্যুঁই। মিস্টার পেত্রো ল্যুঁইয়ের বড় মেয়ে।”

মিষ্টি কিছু বলবে এমন সময় একটা যুবক এগিয়ে এসে এলিজার হাত ধরে। যুবকটির দিকে তাকাতেই মিষ্টি হতবাক হয়ে যায়। মাথায় ব্রাউন চুল, নীল চোখ কিন্তু চেহারা..এই চেহারা তো মিষ্টির ভীষণ চেনা। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?

এলিস বলে,
“এই হলো পুলিশ ইন্সপেক্টর ইমানুয়েল পল। আমার বড় বোনের ফিয়ন্সে।”

মিষ্টি হতবাক স্বরে বলে ওঠে,
“উনি তো হুবহু রাফসান শিকদার!”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨