ভূমধ্যসাগরের তীরে পর্ব-১৩+১৪

0
92

#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ১৩
#লেখিকা_দিশা_মনি

মিষ্টি অবাক হয়ে দেখছিল রাফসান সদৃশ যুবকটির দিকে। সবকিছুই এক! দুটো মানুষের মধ্যে কি এত মিল সম্ভব? কিন্তু এই লোকটা তো একজন বিদেশী নাগরিক, শারীরিক গঠনও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু মিষ্টির কেন জানি মনে হচ্ছে এই ইমানুয়েল পলই রাফসান শিকদার৷

এদিকে মিস্টার ল্যুঁই এগিয়ে এসে ঘোষণা দিলেন,
“আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ আজ এখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য। যেমনটা আপনারা সবাই জানেন, আজ আমার আদরের বড় মেয়ে এলিজার সাথে ওর বয়ফ্রেন্ড ইমানুয়েল পলের এনগেজমেন্ট। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এখানে উপস্থিত হয়ে আজকের সুন্দর দিনটিকে আরো বিশেষ করে তোলার জন্য। এখন এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আপনারা সবাই উপভোগ করুন।”

বলেই তিনি এলিজার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। একইসাথে ইমানুয়েল পলকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
“এবার রিংটা আমার মেয়ের হাতে পড়িয়ে দাও।”

ইমানুয়েল পল নিজের পকেট থেকে একটা ডায়মন্ড রিং বের করে এলিজার হাতের দিকে এগোতে থাকে। রিংটা পড়িয়ে দিতেই যাবে এমন সময় মিষ্টি ছুটে এসে পলকে নিজের দিকে টেনে নেয়। এই ঘটনায় পলসহ উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যায়। ইয়াসিন একটু দূরে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে বলে,
“কি করছেন টা কি মিসেস মিষ্টি!”

ইমানুয়েল পল মিষ্টির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,”হোয়াট দা হেল? মানে কি এসবের?”

মিষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগেই এলিজা ক্ষিপ্ত গতিতে এগিয়েছিল এসে মিষ্টির থেকে পলকে আলাদা করে বলে,
“এই মেয়ে, কে তুমি? তোমার সাহস কি করে হলো আমার এনগেজমেন্টে এরকম সমস্যা সৃষ্টি করার?”

মিষ্টি দমে গেল এলিজার শক্ত কন্ঠস্বরের সামনে। তার চোখ তখনো পল নামক ব্যক্তিটার দিকে স্থির। তার চোখে বিরক্তি আর ক্রোধ লক্ষ্য করে মিষ্টির মনটা হাহাকার করে উঠল। তাহলে কি সে ভুল ভেবেছে? এই লোকটা কি তাহলে সত্যিই এক ভিন্ন মানুষ? মিষ্টির মনে এই প্রশ্নই ঘুরতে লাগল। এলিজার ক্রোধ বাড়ছিল। সে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“সিকিউরিটি..কোথায় তোমরা? এক্ষুনি এই মেয়েটাকে বের করে দাও এখান থেকে।”

ফাতিমা বিবি এবার এগিয়ে এসে বলেন,
“আমি ওর তরফ থেকে ক্ষমা চাইছি। আসলে ও এখানে নতুন তো তাই কিছু বুঝতে পারেনি। মিষ্টি মা, তুমি এসো আমাদেরও সাথে।”

এলিজা এমনিতেই ফাতিমাদের খুব একটা পছন্দ করে না। তাই সে আরো গলা খাকারি দিয়ে বলে,
“আপনারা এই সমস্যাটাকে এখানে নিয়ে এসেছেন? এই জন্যই আমি পাপাকে নিষেধ করেছিলাম কোন লো ক্লাস লোককে আমার এনগেজমেন্টে ইনভাইট না করতে।”

এলিস নিজের বোনের কথায় প্রতিবাদ করে বলে,
“সিস্টার এলিজা, তুমি ওনাদের এভাবে বলতে পারো না। ওনারা আমাদের গেস্ট।”

এলিজা এমনিতেই রেগে ছিল। এলিসের কথায় আরো রেগে বলে,
“গেস্ট মাই ফুট, দে আর নাথিং বাট পোর আনকালচার রিফিউজি।”

ইয়াসিনের ধৈর্যের সীমা পেরিয়ে যায়। সে বলে ওঠে,
“ব্যস, অনেক বলে নিয়েছেন আপনারা। আম্মা তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? এক্ষুনি এখান থেকে চলো। আমি আর এক মুহুর্তও এখানে থাকতে চাই না।”

বলেই ইয়াসিন হনহন করে বেরিয়ে যায়। ফাতিমা বিবি মিস্টার ল্যুঁইয়ের কাছে গিয়ে বলেন,
“সবকিছুর জন্য দুঃখিত মিস্টার ল্যুঁই। কিছু মনে করবেন না।”

মিস্টার ল্যুঁই লজ্জিত স্বরে বলেন,
“আপনি ক্ষমা চাইছেন কেন? আমার তো নিজের মেয়ের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। এলিজা এদিকে এসো ক্ষমা চাও ওনাদের থেকে।”

এলিজা তবু ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে৷ মিস্টার ল্যু্ঁই বলেন,
“তবে যাইহোক, আপনাদের সাথে আসা ঐ মেয়েটি কিন্তু ভুল করেছে। তবে আপনাদের সাথে এলিজার ব্যবহারের জন্য আমি ওর তরফ থেকে ক্ষমা চাইছি।”

ফাতিমা বিবি আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে আমিনা ও মিষ্টিকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে। বের হবার আগে মিষ্টি আরো একবার তাকায় ইমানুয়েল পল নামক ব্যক্তিটার দিকে। পলও তার দিকে অবাক চোখেই তাকিয়ে ছিল। মিষ্টি মনে মনে বলে,
“এই লোকটা কি সত্যিই ভিন্ন কেউ? কিন্তু আমার মন কেন বলছে যে ইনিই রাফসান শিকদার!”

★★★
মিষ্টি ল্যুঁই প্যালসের বাইরে এসেই নত স্বরে ফাতিমা বিবির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আজ আমার জন্য আপনাদের এতো অপমানিত হতে হলো।”

ফাতিমা বিবি বলেন,
“নাহ, তুমি এসব নিয়ে কিছু ভেবো না।”

আমিনা বলে ওঠে,
“আম্মা ঠিকই বলেছে। ঐ এলিজা মেয়েটা তো এমনই। ও সবসময় এমন ব্যবহার করে। সিস্টার এলিস কত ভালো কিন্তু ও..”

ফাতিমা বিবি বলেন,
“থাক এসব কথা। আচ্ছা, মিষ্টি তুমি আমায় একটা কথা বলো। তুমি হঠাৎ করে মিস্টার পলকে ওভাবে টেনে আনলে কেন? তুমি কি ওনাকে চেন? আগে কোথায় দেখেছ?”

আমিনা বলে ওঠে,
“কিন্তু মিষ্টি আপু ওনাকে কিভাবে চিনবে? ও তো মার্সেই শহরে নতুন।”

মিষ্টি নিজের ভাবনায় ব্যস্ত ছিল৷ ফাতিমা বিবি বলে ওঠেন,
“কি হলো? কিছু বলো।”

মিষ্টি কিছু বলতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করেই ইয়াসিন সেখানে এসে বলে,
“তোমরা এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন? চলো, আমাদের তো বাসায় ফিরতে হবে। তার আগে তো আবার রাতে ডিনারের ব্যবস্থাও করতে হবে। বাড়িতে তো কিছু রান্না হয়নি। চলো সবাই আজ কোন রেস্টুরেন্টে ডিনার করে নেই।”

কথাটা বলেই সে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে,,”

এমন সময় হঠাৎ করেই এলিস ছুটতে ছুটতে সেখানে চলে আসে৷ এলিসকে দেখামাত্রই ইয়াসিনের ভাবভঙ্গিমা শক্ত হয়ে যায়। এলিস এসেই ইয়াসিনকে বলে,
“সিস্টার এলিজার কথায় কিছু মনে করো না। আমি ওর তরফ থেকে ক্ষমা চাইছি।”

ইয়াসিন তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,
“কি বলছেন টা কি আপনি? কোথায় আপনি হলেন ল্যুঁই প্যালসের প্রিন্সেস আর কোথায় আমরা পোর আটকালচার রিফিউজি! আপনার কি আমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া মানায়?”

এলিস করুণ স্বরে বলে,
“ইয়াসিন, আমার কথাটা শোন..”

” আমি আর কিছু শুনতে চাই না। মা, আমিনা তোমরা দাঁড়িয়ে রইলে কেন? চলো এক্ষুনি। আর মিষ্টি আপনিও চলুন।”

সবাই সামনের দিকে পা বাড়াতে লাগল। এলিস সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।

★★
এলিজা নিজের হাতে জ্বলজ্বল করতে থাকা ডায়মন্ড রিংটা দেখছিল। তার আজ ভীষণ খুশি অনুভূত হচ্ছে। যদিও মাঝখানে কিছু ঘটনার জন্য তার ভীষণ রাগ হচ্ছিল তবে এখন তার মেজাজটা অনেকটাই ফুরফুরে।

ইমানুয়েল পল একটু দূরেই বসে কি যেন ভাবছে। এলিজা পলের পাশে গিয়ে বলে,
“কি ব্যাপার? কি ভাবছ তুমি?”

পল বলে ওঠে,
“ভাবছিলাম ঐ মেয়েটার কথা।”

এলিজা বিরক্ত স্বরে বলে,
“ঐ মেয়েটা! ঐ ডার্টি রিফিউজির কথা বাদ দাও। তুমি আমাকে, আমাদের সামনের সম্পর্কটা নিয়ে ভাব। আজ আমাদের এনগেজমেন্ট হলো, খুব শীঘ্রই আমরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবো। আমি তো ভাবতেই পারছি না।”

পল নিজের হাতে জ্বলজ্বল করতে থাকা রিংটার দিকে তাকায়। অতঃপর আবারো মিষ্টির চেহারাটা মনে করে। মিষ্টি মুখজুড়ে ছিল বিস্ময়, তার চোখে যেন ছিল হাজারো প্রশ্ন। পল নিজের হাতের রিংটার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে,
“আমার ঐ মেয়েটার সাথে দেখা করা দরকার। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, ওর সাথে সেখা করাটা ভীষণ প্রয়োজনীয়।”

এলিজা আবারো বিরক্তি নিয়ে বলে,
“উফ! তুমি ঐ মেয়েটাকে নিয়ে এত ভাবছ কেন পল?”

পল এবার খানিক গম্ভীর স্বরে বলে,
“ভাবছি কারণ আমি একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। আমাকে সব বিষয়াদি নিয়েই ভাবতে হবে। আমার কাছে মেয়েটাকে খুব একটা সুবিধাজনক লাগে নি। মেয়েটার মাঝে কোন তো রহস্য অবশ্যই আছে। আমাকে সেই রহস্য ভেদ করতে হবে।”

এলিজা এবার খানিক গম্ভীর স্বরে বলে,
“এমনও কি হতে পারে যে মেয়েটা কোন ক্রিমিনাল?”

পল বলে,”হতেই পারে। আমি ব্যাপার‍টা খোঁজ নিয়ে দেখছি। যদি মেয়েটা সত্যিই কোন অপরাধী হয় তাহলে ওর যায়গা হবে কারাগারে!”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ১৪
#লেখিকা_দিশা_মনি

মিষ্টির সাথে আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য তাকে নিয়ে একপাশে এলো ইয়াসিন। মিষ্টির মুখে একটা বিব্রতভাব ছিল। ইয়াসিন মিষ্টিকে জিজ্ঞেস করে,
“আচ্ছা, একটা কথা সত্য করে বলবেন? আপনি কেন তখন ওভাবে মিস এলিজার ফিয়ন্সের হাত ধরে ওভাবে টান দিলেন? এর পেছনে কি কোন জরুরি কারণ আছে?”

মিষ্টি কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলে,
“আসলে কিভাবে ব্যাপারটা বলব, বুঝতে পারছি না৷ কিন্তু সত্যটা হলো যে, এলিজার হবু স্বামী মানে মিস্টার ইমানুয়েল পল উনি দেখতে একদম..একদম আমার স্বামী রাফসান শিকদারের মতোই। হ্যাঁ, ওনাদের চেহারায় কিছুটা ভিন্নতা আছে যেমন চুলের রং এবং চোখের রং আলাদা এমনকি মিস্টার পল একটু বেশি ফর্সা কিন্তু বাকি সব দিক একদম মিলে গেছে। আমার না প্রথমে মনে হয়েছিল যে উনিই হয়তোবা…”

ইয়াসিন অবাক হয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,
“কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? আপনি তো বলেছিলেন আপনার স্বামী একজন নেভি অফিসার যিনি মার্সেই তে কোন মিশনে এসেছিলেন। কিন্তু আপনার স্বামীর সাথে তাহলে কিভাবে ঐ মিস্টার পলের মিল পেলেন? উনি তো একজন ফ্রেঞ্চ পুলিশ।””

“আমিও তো সেটাই ভাবছি।”

“আচ্ছা, আপনার দেখতে কোন ভুল হয়নি তো? এমন তো হতে পারে যে আপনি দুজনের মধ্যে গুলিয়ে ফেলেছেন।”

“এটা আমারও মনে হয়েছিল। কিন্তু..ওনাদের দুজনের চেহারায় অনেক মিল। এতটা মিল স্বাভাবিক নয়। আর আমি রাফসান শিকদারকে বেশ কয়েকবার সামন থেকে দেখেছি ওনার ছবির সামনেও কয়েকবার দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ ওনাদের মধ্যে যে এত মিল তা বলে বোঝানো সম্ভব না। আপনি নিজেও যদি রাফসান শিকদারের ছবি দেখতেন তাহলে আপনিও একই কথা বলতেন বলে আমার বিশ্বাস।”

ইয়াসিন ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ওহ। আচ্ছা, ব্যাপারটা তাহলে ভাবতে হচ্ছে। আপনি চিন্তা করবেন না, আমি নিজের মতো খোঁজ লাগিয়ে দেখছি কি করা যায়। যদি কোন তথ্য বের করতে পারি তাহলে সবার আগে আপনাকেই জানাবো।”

ইয়াসিনের এমন সাহায্য করার মনোভাব দেখে মিষ্টি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে,
“আপনাকে ধন্যবাদ। জানিনা আপনার ঋণ কিভাবে শোধ করব।”

“এত ভাবার কিছু নেই। আমাকে আপনি একজন বন্ধু ভাবতে পারেন। একজন বন্ধু তো আরেক বন্ধুকে স্বাভাবিক ভাবেই সাহায্য করতে পারে। তাই না?”

ইয়াসিনের কথা শুনে মিষ্টির চিন্তা অনেকটাই কমে যায়।

★★
নতুন দিন, মার্সেই শহরে আসার মিষ্টির বেশ কয়েক দিন পেরোনোর পর এখন সে আমিনার সাহায্যে এখানকার ভাষা অনেকটাই শিখেছে। যদিও পুরোপুরি শেখা হয়নি তবে ভালোই অগ্রগতি হয়েছে তার। এজন্য আজ আমিনা মিষ্টিকে বলল,
“চল, আজ আমরা দুজন মিলে মার্সেই পোর্ট থেকে ঘুরে আসি৷ তুমি এখানে এসেছ থেকে তো ঘরের চার দেয়ালেই বন্দি হয়ে আছ। একটু ঘুরতে গেলে মনটা ভালো হবে।”

মিষ্টি তখনো মিস্টার পলের ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তিত ছিল। তাই সে আপত্তি জানিয়ে বলে,
“আমার এখন ভালো লাগছে না। পরে কোন দিন যাই?”

এমন সময় ফাতিমা বিবি রুমে এসে বলেন,
“আমিনা তো ঠিকই বলছে। তুমি তো এখানে এসেছ থেকে সেভাবে কোথাও ঘুরতেই যাও নি। একদিন যদিওবা আমাদের সাথে মিস্টার ল্যুঁই এর বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেলে তাতেও কত কাহিনি ঘটে গেল। এভাবে চলতে থাকলে তো তোমার মানসিক অবস্থা ভেঙে পড়বে। তুমি একটু বাইরে ঘুরে আসো তাহলে দেখবা মনটা ভালো হবে আর মন ভালো হলে দেখবা সবকিছু ভালো লাগবে।”

মিষ্টি আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় আমিনা একপ্রকার জোরপূর্বক মিষ্টিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
“মিষ্টি আপু চলো না অনেক মজা হবে।”

বলে একপ্রকার মিষ্টিকে টেনে তোলে। মিষ্টিও আর না করতে পারে না। আমিনার সাথে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে।

দুজন মিলে মার্সেই পোর্টের পুরাতন বাজারে যায়। বাজারটায় বেশ ভালোই ভীড় ছিল তবে বেশ সাজানো গোছানো। চারিপাশে সামুদ্রিক মাছের বাজারও বসেছে এবং সেখানে ক্রেতাদের ভীড়ও চোখে পড়ার মতো।

সমুদ্রের পারে এসে আমিনা মিষ্টিকে বলে,
“এই দেখ, এই হলো ভূমধ্যসাগর। এই ভূমধ্যসাগরের তীরেই অবস্থিত আমাদের মার্সেই শহর।”

মিষ্টি ভূমধ্যসাগরের বিপুল জলরাশির দিকে তাকিয়ে বলে,
“তার মানে এখন আমরা ভূমধ্যসাগরের তীরে দাঁড়িয়ে আছি?”

আমিনা সম্মতি জানায়। মিষ্টি ভূমধ্যসাগরের জলরাশির দিকেই তাকিয়ে ছিল। এমন সময় সাগরের পানিতে একটা চেনা মুখ দৃশ্যমান হতেই সে চমকে ওঠে। মিষ্টি কি এটা ঠিক দেখছে? নিজের চোখ কেও যেন তার বিশ্বাস হচ্ছিল না। মিষ্টি বলল,
“মিস্টার রাফসান শিকদার!”

বলেই সে পিছনে ফিরে তাকালো। তার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল ছিল ইমানুয়েল পল। মিষ্টিকে নিজের দিকে ফিরতে দেখেই সে বলে ওঠে,
“কে আপনি?”

মিষ্টি পলের মুখ থেকে এই শব্দ শুনে চমকে গেল। আমতাআমতা আমতাআমতা করে বলে,
‘আমি..আমি মিষ্টি..’

“কোথা থেকে এসেছেন আপনি?”

“জ্বি..বাংলাদেশ..”

বলে থমকালো মিষ্টি। আমিনা মিষ্টির দিকেই তাকিয়ে ছিল। বোঝার চেষ্টা করছিল আসল ঘটনা কি। পল এবার আমিনার দিকে তাকিয়ে বলে,
“যতদূর জানি আপনারা মরোক্কান বংশোদ্ভূত। তাহলে একজন বাংলাদেশী কিভাবে আপনাদের আত্মীয় হলো?”

আমিনা ভীষণ ভয় পেয়ে গেল এমন প্র‍শ্ন শুনে। কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিল না৷ অনেক ভেবে বলে,
“কে..কেন হতে পারে না?”

“তা পারে। যাইহোক, আপনি বাংলাদেশ থেকে কবে এদেশে এসেছেন?”

এই কথা শুনে মিষ্টি থমকে যায়। কি উত্তর দেবে এবার সে? কিছু সময় ভেবে বলে,
“মাস খানেক হলো।”

“আপনার পাসপোর্ট বা ভিসার মেয়াদ কি আছে?”

মিষ্টি ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ালো।

“কই দেখি।”

মিষ্টির দুচোখ বিস্ফোরিত হলো। তার পাসপোর্ট, ভিসা সব তো ছিনতাই হয়ে গেছিল। এবার সে কি করবে? মিষ্টি কিছু বুঝতে পারছিল না৷ আমিনা ব্যাপারটা সামলাতে বলে,
“হয়তো এখানে আসার সময় নিয়ে আসতে ভুলে গেছে। আমাদের বাসাতেই আছে পাসপোর্ট ভিসা।”

পল হালকা হেসে তার পেছনে থাকা কিছু মহিলা পুলিশকে ইশারা করতেই তারা এগিয়ে এসে মিষ্টির হাতে হাতকড়া পড়ায়। মিষ্টি তাদের অনেক অনুনয় করে, আমিনাও কিন্তু তারা কোন কথা শোনে না। উলটে পল আমিনার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“থানায় এসে ওনার পাসপোর্ট, ভিসা দেখিয়ে ওনায় ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন।”

বলেই মিষ্টিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আমিনা ভীষণ ভীত হয়ে পড়ে। সে বুঝতে পারছিল না কি করবে। তাই সে জলদি বাড়ি অভিমুনে রওনা দেয়। তাকে জলদি তার মা এবং ভাইকে এসব জানাতে পারে। নাহলে মিষ্টি অনেক বড় বিপদে পড়ে যাবে।

এদিকে মিষ্টিও পল তথা অন্য পুলিশ সদস্যদের সামনে অনেক অনুনয় বিনয় করতে থাকে কিন্তু তারা মিষ্টির কোন কথাই শোনে না। এরমধ্যে পলের ফোন বেজে ওঠে। এলিজা কল দিয়েছে। পল কলটা রিসিভ করতেও এলিজা বলে ওঠে,
“কি করছ?”

“একজন অপরাধীকে গ্রেফতার করছি যে পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। এবার তাকে নিয়ে থানায় যাব। সেখানে গিয়ে আরো অনেক তথ্য বের করতে হবে। এমনও হতে পারে যে এই অবৈধ অভিবাসী আমাদের দেশের কোন ক্ষতি করতে এসেছে নাকি। এমনও কি হতে পারে যে, কোন সন্ত্রাসী সংঘটনের সাথে যুক্ত।”

মিষ্টি যদিও ফ্রেঞ্চ ভাষা তেমন একটা বোঝে না কিন্তু যতটুকু বুঝল তাতেই তার অন্তরাত্মা কেপে উঠল।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨