#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ১৫
#লেখিকা_দিশা_মনি
মিষ্টিকে থানায় এনে আটক করে রাখা হয়েছে। এসব ঘটনায় মিষ্টি অনেক ভীত হয়ে পড়েছে। তার প্রচণ্ড ভয় হচ্ছে যে কি হতে পারে তার সাথে। কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর, ধীর পায়ে হেটে মিষ্টির সম্মুখে এসে হাজির হলো ইমানুয়েল পল। তাকে দেখেই মিষ্টির ভয়টা বাড়লো৷ মিষ্টির এই ভয়টা যেন টের পেল ইমানুয়েল পল। তাই তো ইংরেজিতে বলে উঠল,
“ক্রিমিনালরাই কিন্তু পুলিশকে ভয় পায়। তার মানে কি আমি ধরে আমার সন্দেহই ঠিক? আপনি একজন ক্রিমিনাল!”
মিষ্টি সাথে সাথেই দ্বিমত জানিয়ে বলে,
“মোটেই এমন না। আমি কোন অপরাধ করিনি। বিশ্বাস করুন আমায়।”
ইমানুয়েল পলের চোয়াল শক্ত হলো। মিষ্টির সামনেই একটি চেয়ারে বসে পড়ল সে। অতঃপর টেবিলে একটা জোরে ঘুষি দিয়ে বলল,
“সব অপরাধীই এই কথাটাই বলে। যাক গে, আপনি কোন অপরাধ করেছেন কি করেন নি তার হিসেব নাহয় পরে হবে কিন্তু তার আগে অন্য কিছুর হিসাব নেই। আপনি ফ্রান্সে এসেছেন অথচ আপনার কাছে পাসপোর্ট বা ভিসা এমন কিছু নেই। যদি ধরেও নেই আপনি কোন অপরাধ করেন নি তবুও কিন্তু আপনি অবৈধ ভাবে ফ্রান্সে এসেছেন। এটাও কি একটা অপরাধ!”
“আমি মোটেই অবৈধ ভাবে ফ্রান্সে আসি নি। আমার কাছে পাসপোর্ট, ভিসা সবই ছিল৷ কিন্তু..”
“কিন্তু কি? সেগুলো হারিয়ে ফেলেছেন?”
“হ্যাঁ, মার্সেই শহরে আসার পরই একজন চোর আমার পাসপোর্ট, ভিসা সব চুরি করে নেয়।”
ইমানুয়েল পল হেসে বলল,
“অথচ আপনার কাজিন বলল, আপনি পাসপোর্ট, ভিসা সব বাসায় ফেলে এসেছেন। এখন আবার আপনি অন্য কথা বলছেন। আর কত কাহিনি বানাবেন? এসব কাহিনি কম শুনিনি।”
“বিশ্বাস করুন আমি মিথ্যা বলছি না।”
“বেশ, বিশ্বাস করলাম। তাহলে যদি সত্যি আপনার পাসপোর্ট, ভিসা হারিয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই কোন থানায় জিডি করেছিলেন? তো কোথায় জিডি করেছেন সেটা বলুন।”
মিষ্টি হতবিহ্বল হয়ে যায়। সে তো থানায় এটা নিয়ে জিডি করে নি। ইমানুয়েল পল মিষ্টিকে চুপ থাকতে দেখে বলে,
“তার মানে আপনি জিডিও করেন নি?”
“আসলে…”
“ব্যস, অনেক হয়েছে। আর কোন মিথ্যা শুনতে চাই না। এবার সত্যি করে বলুন তো,আপনি কি উদ্দ্যেশ্যে ফ্রান্সে এসেছেন? আপনি কি কোন স্পাই? নাকি কোন টেরোরিস্ট?”
মিষ্টি চমকে উঠলো। মাথা দুদিকে নাড়িয়ে বলল,
“আমি কোন স্পাই বা টেরোরিস্ট নই আমি তো ফ্রান্সে এসেছি নিজের স্বামীর খোঁজ করতে।”
পল বিরক্ত হয়ে বলে,
“আবার একটা নতুন ড্রামা। এসব করে কোন লাভ নেই। ভালোয় ভালোয় নিজের আসল পরিচয় স্বীকার করুন আর নয় তো..”
“আমি মিষ্টি চৌধুরী, আমি একজন বাংলাদেশী নাগরিক। আমি কোন স্পাই বা টেরোরিস্ট নই। এটাই আমার পরিচয়।”
“ওহ, বুঝেছি। আপনি ভালোয় ভালোয় সবকিছু স্বীকার করবেন না। আপনাকে টর্চার সেলেই পাঠাতে হবে।”
মিষ্টি আকুতিভরা চোখে ইমানুয়েল পল এর দিকে তাকায়। এই লোকটা দেখতে একদম তার স্বামী রাফসান শিকদারের মতো। অথচ তার চোখে মিষ্টির প্রতি কোন মায়া নেই। আছে সন্দেহ আর নিষ্ঠুরতা। সে মিষ্টিকে ভুল বুঝছে। মিষ্টি নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বলল,
“এই লোকটার চেহারাই শুধু রাফসান শিকদারের মতো কিন্তু মনটা ভীষণ পাষাণ।”
একটু পরই কিছু মহিলা পুলিশ সদস্য এলো। তারা জোরপূর্বক মিষ্টিকে নিয়ে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে এলো। মিষ্টি তাদের অনেক আকুতি জানালো কিন্তু তারা মিষ্টিকে বিন্দুমাত্র দয়া দেখালো না। মিষ্টির মাথা থেকে টেনে হিঁচড়ে হিজাবটা খুলল। অতঃপর তার চুল ধরে টানতে লাগল। একজন মহিলা পুলিশ মিষ্টির তলপেটে জোরে একটা লা**থি মারল। মিষ্টি ফ্লোরে পড়ে আর্তনাদ করতে লাগল৷ তবুও তাদের দয়া হলো না। মিষ্টিকে পুনরায় তুলে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল,
“সত্যি করে বল, তুই আসলে কে? কোন উদ্দ্যেশ্য নিয়ে তুই মার্সেইতে এসেছিস? তুই কি আই এসের সদস্য নাকি রাশিয়ান স্পাই? সত্যি করে বল।”
মিষ্টি সেই একই কথা বলে। সে কোন অপরাধী নয়। কিন্তু এতে ফ্রেঞ্চ পুলিশগুলো আরো ক্ষেপে যায়। তারা এবার মিষ্টিকে ফ্লোরে ফেলে বলে,
“এভাবে হবে না, একে ইলেকট্রিক শক দিতে হবে। তাহারা হয়তো নিজের সব অপরাধ স্বীকার করবে।”
মিষ্টি একথা শুনে ভীষণ আকুতি করতে থাকে যেন তার সাথে এমন না করা হয় কিন্তু মহিলা পুলিশ গুলো একটুও দয়া দেখায় না। মিষ্টির হাত-পা বেধে একটি চেয়ারে বসানো হয়। অতঃপর তার মাথায় একটি ইলেকট্রিক বেল্ট পড়ানো হয়। কিছুক্ষণ পর থেকে এই ঘর থেকে মিষ্টির করুণ আর্তনাদ ভেসে আসে। মিষ্টির আর্তনাদে পুরো আকাশ বাতাস যেন ভারী হয়ে ওঠে।
★★★
আমিনা বাড়িতে ফিরে তার মা ও ভাইকে সব জানাতেই ফাতিমা বিবি অস্থির হয়ে পড়েন। ইয়াসিন তো আমিনার কথা শুনেই কোথায় যে বেরিয়ে গেল তার এখনো ফেরার কোন কথা নেই। ফাতিমা বিবি অস্থির হয়ে পায়চারি করতে করতে আর থাকতে না পেরে একটা বোরকা পড়ে নিয়ে আমিনাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
“আমায় থানায় নিয়ে চল, আমি গিয়ে পুলিশ অফিসারদের সাথে কথা বলব। মিষ্টি মেয়েটা অনেক নিষ্পাপ, জানি না থানায় নিয়ে গিয়ে ওর সাথে কেমন ব্যবহার করছে।”
এসব বলতে বলতেই ফাতিমা বিবি তার অতীতের কথা ভাবতে থাকেন। তিনি যখন প্রথম দিকে মার্সেইতে এসেছিলেন তখন একবার এভাবে ভুলবশত নিজের পাসপোর্ট, ভিসা ভুলে বাসায় ফেলে যায় আর ঐদিনই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে মারাত্মক অত্যাচার করে। এই কথা মনে করে ফাতিমা বলে ওঠে,
“মিষ্টিকে যেন ঐ পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়।”
★★
এলিসকে সাথে নিয়ে ড্রাউভ করে চলেছে ইয়াসিন। এদিকে এলিস এরকম স্বল্প-পরিচিত একটা মেয়ের জন্য ইয়াসিনকে এত চিন্তা করতে দেখে অবাক হয়। যেই ইয়াসিনকে সে এত ভালোবাসলেও তার দিকে কখনো ফিরে তাকায় নি সেই ইয়াসিন কিনা আজ তার কাছে ছুটে এসেছে অন্য একটা মেয়েকে সাহায্য করতে। এই ব্যাপারটা এলিসের মনে কিছুটা ঈর্ষার সৃষ্টি করলেও সে ইয়াসিনকে সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর। কেননা, ইয়াসিনকে সে এতোটাই ভালোবাসে যে তার এক কথায় নিজের জীবনও দিয়ে দিতে পারে। আর এটা তো তার কাছে কিছুই না। এলিস এই ভাবনা থেকেই আজ ছুটে এসেছে মিষ্টিকে সাহায্য করতে। ইয়াসিন এতটাই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিল যে ড্রাইভ করতে গিয়ে একটা এক্সিডেন্টও করতে ধরছিল। এলিস এটা দেখে ইয়াসিনকে বলে,
“সাবধানে গাড়ি চালাও। আমার এডভোকেট ভল্টের সাথে কথা হয়েছে উনি আমায় আশ্বাস দিয়েছেন মিষ্টি নামক মেয়েটাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করবেন।”
ইয়াসিন বলে,
“যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি মিসেস মিষ্টিকে জেল বের করতে পারছি ততক্ষণ আমি শান্তি পাবো না।”
ইয়াসিনের মুখে মিসেস মিষ্টি শুনে এলিস খুশি হয়ে বলে,
“উনি বিবাহিত?”
“হুম, নিজের স্বামীকে খুঁজতেই তো উনি ফ্রান্সে এসেছেন। আর তারপর নিজের পাসপোর্ট, ভিসা সব হারিয়ে ফেললেন।”
এলিস নিশ্চিত হয়। তার মানে ইয়াসিনের সাথে মিষ্টির সেরকম কোন সম্পর্ক নেই। এলিস ইয়াসিনের কাধে হাত দিয়ে বলে,
“আমি কথা দিচ্ছি, তোমার চিন্তা দূর করার জন্য যা করতে হবে আমি তাই করবো।”
★★
মিষ্টি বিধ্বস্ত হয়ে জেলের এক কোণায় পড়ে আছে। তার উপর আজ যে অত্যাচার ও বর্বরতা চালানো হয়েছে তাতে সে ক্লান্ত। অথচ এত কিছু করার পরও সে বলে চলেছে সত্যটাই। মিষ্টিকে এভাবে দেখে ইমানুয়েল পল। সে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। একজন পুলিশ এসে তাকে বলে,
“আমার মনে হয় মেয়েটা সত্যিই নিরপরাধ। নাহলে এত অত্যাচার সহ্য করে সব স্বীকার করত।”
পল বলে,
“মোটেই না। এদের বিশ্বাস নেই। কাল আবার টর্চার সেলে নিতে হবে।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ১৬
#লেখিকা_দিশা_মনি
মিষ্টি কারখানার মধ্যে বন্দি হয়ে কান্না করে চলছিল। ফাতিমা বিবি ততক্ষণে জেলে এসেছেন মিষ্টির সাথে দেখা করার জন্য কিন্তু পল মিষ্টির সাথে কাউকেই দেখা করতে দিচ্ছ না। ফাতিমা বিবি অনুনয়ের সাথে পলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“দয়া করে মেয়েটার সাথে দেখা করতে দিন। বিশ্বাস করুন, ওর কোন দোষ নেই।”
পল এবার রেগে বলে,
“আপনি বেশি কথা বলবেন না। নাহলে আপনাকেও জেলে ভড়ব।”
আমিনা পলের কথা শুনে রেগে বলে,
“খবরদার আমার মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করবেন না।”
পল আর কিনা বলতে যাবে এমন সময় এলিস ইয়াসিনের সাথে থানায় চলে আসে। তাদের সাথে ছিল এডভোকেট ভল্ট। এলিস এসেই ইমানুয়েল পলের উদ্দেশ্যে বলে,
“মিস্টার, পল। আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে।”
তাদের আসতে দেখে ফাতিমা বিবি নিশ্চিত হয়ে বলেন,
“তোমরা এসেছ? মিষ্টিকে জেল থেকে বের করার ব্যবস্থা করো না। এনারা শুধু শুধু মেয়েটাকে আটকে রেখেছেন। ও কোন অন্যায় করে নি।”
ফাতিমা বিবির কথা শুনে ইয়াসিন বলে,
“তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না আম্মু। মিসেস মিষ্টির কিছুই হবে না।”
এডভোকেট ভল্ট এগিয়ে এসে বলে,
“এখানে ফ্রেঞ্চ সরকারের কিছু ডকুমেন্টস আছে। এখানে স্পষ্ট বলা যে, ওনার পাসপোর্ট ভিসা খোঁজার জন্য ইতিমধ্যেই কাজ চলছে এবং বাংলাদেশের এম্ব্যাসি থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে ওনার পাসপোর্ট, ভিসা সবই করা ছিল। আশা করি, এরপর আর কিছু জানার নেই আপনাদের। মেয়েটাকে ছেড়ে দিন। ”
পল কিছু বলতে গিয়েও দমে গেল। তার থেকেও উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তার স্বাক্ষর আছে এই ডকুমেন্টস গুলোতে। তাই সে চাইলেও এখন আর কিছু করতে পারবে না। তাই পল অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার অধীনস্থ কিছু মহিলা পুলিশের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“যান, গিয়ে ওনাকে নিয়ে আসুন।”
“ওকে স্যার।”
কিছু সময় পর কিছু মহিলা পুলিশ মিষ্টিকে ধরে নিয়ে আসে। মিষ্টি কোন রকমে হাঁটছিল৷ বিগত কিছু সময় তার উপর যা টর্চার হয়েছে তা মিষ্টিকে একদম ঘায়েল করে দিয়েছে। মিষ্টিকে আসতে দেখেই ফাতিমা বিবি ছুটে গিয়ে বলেন,
“তুমি ঠিক আছ তো? আল্লাহ, এ কি অবস্থা! কি করেছে এনারা তোমার সাথে?”
মিষ্টি ভাঙা ভাঙা স্বরে বলে,
“আমি ঠিক আছি।”
ইয়াসিন উদ্বিগ্ন হয়ে সামনে এগিয়ে এসে মিষ্টিকে আগলে নিয়ে বলে,
“আপনি একদম ঠিক নেই। এক্ষুনি আমার সাথে হাসপাতালে যাবেন চলুন।”
মিষ্টির প্রতি ইয়াসিনের এরকম কেয়ার দেখে এলিসের কিছুটা খারাপ লাগে। আমিনা এলিসকে খেয়াল করে তার কাছে গিয়ে বলে,
“তোমাকে অনেক ধন্যবাদ সিস্টার এলিস। তোমার জন্যই আমরা মিষ্টি আপুকে একদম সহি সালামত ফিরে পেলাম।”
ফাতিমা বিবিও এলিসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলে,
“হ্যাঁ, তুমি না থাকলে না জানি মেয়েটার উপর দিয়ে আরো কত কি যেত! আল্লাহ মাফ করুক।”
“এভাবে বলবেন না। আপনাদের সাহায্য করতে পেয়ে আমিও অনেক খুশি।”
অতঃপর সে এগিয়ে এসে মিষ্টির কাধে হাত রেখে বলে,
“তুমি একদম ভয় পেয়ো না। ইয়াসিন, চলো ওকে আমরা নিকটস্থ কোন হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
“হ্যাঁ, চলুন।”
তারা সবাই যেতে নেবে এমন সময় ইমানুয়েল পল মিষ্টির একদম সামনাসামনি এসে বলে,
“আজ শুধুমাত্র যথাযথ প্রমাণ এবং বাধ্যবাধকতার জন্য আমি আপনাকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আপনার উপর আমার নজর সব সময় থাকবে। যদি আমি কখনো এটা নিশ্চিত হই যে, আপনি সত্যিই এদেশে কোন খারাপ উদ্দ্যেশ্য নিয়ে এসেছেন তবে মনে রাখবেন সেই দিনটাই আপনার জীবনের শেষ দিন হবে।”
মিষ্টি ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিয়ে পলের দিকে তাকায়৷ বিগত কিছু দিনে এই লোকটার প্রতি ঘৃণা তার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ মিষ্টি আর পলের দিকে ফিরেও তাকায় না। ইয়াসিন ও এলিস তাকে ধরে ধরে সামনে নিয়ে যেতে থাকে।
★★
হাসপাতাল বেডে শুয়ে আছে মিষ্টি৷ তার সামনেই বসে আছেন ফাতিমা বিবি। এলিস ও আমিনা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ফাতিমা বিবি মিষ্টির হাতটা আলতো করে ধরে বলেন,
‘ওরা তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছে, তাই না মা?”
মিষ্টি জোরপূর্বক হেসে বলে,
“একটু কষ্ট তো হয়েছে তবে ব্যাপার না,,,”
“দেখবে আল্লাহ ওদের এর শাস্তি একদিন না একদিন ঠিকই দেবে। তোমাকে দেখে তো আমারও নিজের অতীতের কথা মনে পড়ে গেল। এক সময় আমার সাথেও ওরা এমন করেছিল ঐ টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে। জানি না, ওরা কেন এমন করে! নিরপরাধ মানুষকে কেন কোন শক্তপোক্ত প্রমাণ ছাড়া এভাবে কষ্ট দেয়! এটা কি ধরনের আইন? আমাদের দোষ কি? শুধু এটাই যে আমরা বাইরের দেশ থেকে এখানে এসেছি। এজন্য আমাদের সাথে এমন পশুর মতো ব্যবহার করবে?”
এমন সময় ইয়াসিন হাতে কিছু মেডিসিন নিয়ে প্রবেশ করে বলে,
“এই নিন মিসেস মিষ্টি এই ওষুধ গুলো খেয়ে নিন।”
মিষ্টি বলে,
“এসবের আবার কি দরকার ছিল। শুধু শুধু এত খরচ কেন করতে গেলেন আমার জন্য বলেন?”
মিষ্টির কন্ঠে একধরনের ক্লান্তি আর কৃতজ্ঞতা মিশে ছিল। ইয়াসিন হালকা হাসল আর বলল,
“আপনার জীবনের মূল্য টাকার চেয়ে অনেক বেশি, মিসেস মিষ্টি। আর খরচের কথা ভাববেন না, এটা আমার দায়িত্ব। আপনি এখন ওষুধ খান, তারপর একটু বিশ্রাম নিন।”
ফাতিমা বিবি মিষ্টির মাথায় হাত রেখে বললেন,
“হ্যাঁ মা, ইয়াসিন ঠিকই বলছে। তুমি একটু বিশ্রাম নেও, অনেক ধকল গেছে তোমার উপর।”
মিষ্টি মাথা নিচু করে বলল,
“আল্লাহ আপনাদের ভালো রাখুক। আমি জানি না, আমি আপনাদের কি দিয়েছি যে আপনারা আমার জন্য এত করছেন!”
এলিস, যে এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, এবার এগিয়ে এসে বলল,
“আমরা কেউ কারও জন্য কিছু পাইনি, মিষ্টি। কিন্তু কেউ যখন সত্যিই সমস্যায় পড়ে, তখন পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় পাওয়া। তুমি একদম এসব নিয়ে ভাববে না।”
মিষ্টি মাথা নাড়ল, কিন্তু তার ভেতরটা কেমন জানি অস্থির হয়ে উঠছিল। পলের শেষ কথাগুলো এখনো কানের মধ্যে বাজছে। ‘তোমার উপর আমার নজর সবসময় থাকবে!’
কেন? সে কি ভুল কিছু করেছে? নাকি এখানে কিছু একটা এমন ঘটছে যার সঙ্গে সে নিজেও জড়িয়ে পড়েছে?
★★
পরদিন সকালে হাসপাতালের জানালার পাশে বসে ছিল মিষ্টি। চোখ বন্ধ করলেই মনে পড়ে যায় সেই বন্দি সময়, সেই অন্ধকার ঘর, সেই ভয়ানক প্রশ্নবাণ…
“আপনি কি এখন ভালো অনুভব করছেন?”
মিষ্টি চমকে পেছনে তাকাল। ইয়াসিন দাঁড়িয়ে আছে, হাতে একটা ছোট্ট ফলের ঝুড়ি।
“হ্যাঁ, আমি ভালো আছি।”
মিষ্টি হেসে বলল।
ইয়াসিন চেয়ার টেনে তার সামনে বসল। “তাহলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি কিসের কথা ভাবছেন?”
মিষ্টি একটু চুপ করে থাকল, তারপর মৃদু স্বরে বলল, “ইন্সপেক্টরপলের কথা…”
ইয়াসিন ভ্রু কুঁচকে বলল, “ওই লোকটার কথা? ও তো একেবারে অমানুষ! আপনি কেন ওর কথা ভাবছেন?”
“ঠিক জানি না। না চাইতেও ওনার কথাই ভাবছি।”
“আমার মনে হয় না, উনি আপনার স্বামী। যদি তাই হতো তাহলে আপনার সাথে এমন ব্যবহার কখনো করত না। উনি অন্য কেউ।”
“আপনার কথাই হয়তোবা ঠিক।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨