প্রিয় নীড়হারা পর্ব-০৮

0
67

#প্রিয়_নীড়হারা

তানিয়ার ঘরের সাথে যে বারান্দাটা আছে, সেটা দিয়ে রাস্তা দেখা যায়৷ প্রতিনিয়ত কতো মানুষ চলাচল করে এই রাস্তা দিয়ে! কেউ স্কুলে যায়, কেউ অফিসে, কেউ যায় বাজারে, কেউ যায় খেলার মাঠে। ধীর কিংবা দ্রুতগতির মানুষগুলো থেমে নেই। সামনে পা ফেলে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যায়। শুধু এগোতে পারে না তানিয়া৷

রোজ এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে গ্রিলে হাত রেখে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। ব্যস্ত মানুষগুলোকে দেখে৷ দেখতে দেখতে মন উদাস হয়ে আসে তানিয়ার।

বিয়ের পর সিরাজের সাথে ছোট্ট একটা সংসার শুরু করেছিল তানিয়া৷ টোনাটুনির সেই সংসারে ব্যস্ততা কম ছিল না। তবুও হাতের কাজগুলো শেষ করে বিকালটা বড় কষ্টে কাটত তানিয়ার৷ সিরাজ যায় কলেজে, বাড়িতে তানিয়া একা। দুটো কথা বলার মতো কেউ নেই। একলা বাড়িতে নিজের নিঃশ্বাসের শব্দও তানিয়াকে তিরষ্কার করে৷

একাকিত্ব কাটাতে দ্রুত বাচ্চা নিল তানিয়া৷ আরোও কয়েকটা নেওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু অর্ণিত জন্মাবার সময় কী এক সমস্যা হলো, তারপর আর মা হতে পারল না তানিয়া৷ সে নিয়ে অবশ্য সিরাজের বিকার নেই। কলেজ, স্টুডেন্ট, স্টাডি- এই নিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিল সিরাজ।

এদিকে তানিয়ার জীবনে এসেছে কতোশত পরিবর্তন। যৌথ পরিবারের মেয়ে তানিয়া, হঠাৎ একা হয়ে গেল। একাকীত্ব থেকে মুক্তি পেতে আঁকড়ে ধরলো সন্তানকে। অর্ণিত যেনো তার অন্ধকার জীবনের একমাত্র আলো।

অর্ণিতের খাওয়াদাওয়া, গোসল, খেলাধুলা, পড়াশোনা, স্কুল আনা নেওয়া করা সবকিছু তানিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ছেলেকে নিয়ে দৌড় ঝাপ করতে করতে তানিয়ার দিন, মাস, বছর কেটে গেল।

একদিন হুট করে তানিয়া খেয়াল করলো, ছেলের আর মাকে দরকার নেই। সে এখন বড় হয়েছে। নিজের কাজ নিজে করতে পারছে৷ বরং তানিয়ার হস্তক্ষেপে রীতিমতো বিরক্ত হচ্ছে সে। হবার কথাই। কলেজ পড়ুয়া একটা ছেলে মায়ের আঁচল আঁকড়ে পড়ে থাকবে নাকি!

অর্ণিতের দিকটা তানিয়া বুঝে নিল। ছেলেকে একা চলতে দিতে হবে, তবেই না সে শিখবে৷ বুকে পাথর চেপে ছেলের হাত ছেড়ে দিয়ে আবারও থেমে গেল তানিয়া৷

সেই যে থমকে দাঁড়ালো তারপর আর এগোতে পারেনি। অর্ণিত বড় হয়েছে, কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে গিয়েছে, বন্ধু বান্ধব হয়েছে, নিজস্ব জগত হয়েছে৷ এখন তো নিজের সংসারও হয়েছে। কিন্তু তানিয়া সেই আগের জায়গায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে৷
তার যে সংসারের যাতাকল থেকে বের হবার উপায় নেই।

বেশ কয়েকবছর আগে উপজেলা থেকে বদলি হয়ে সিরাজ এলো এই ঢাকা শহরে। তখন থেকেই জাদুর শহরের সাথে তানিয়ার পরিচয়। কিন্তু আজও এই শহরে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনি। এই শহরের মানুষগুলো বড্ড ব্যস্ত৷ প্রতিযোগিতাময় তাদের জীবন। এই ব্যস্ততা, এই ছুটে চলা তাদের করেছে স্বার্থপর।

পাশের ফ্ল্যাটের মানুষগুলোর দিকে ফিরে তাকানোর চেষ্টাও তারা করে না। সবাই নিজের মতো, নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত।

এই যে ছয়তলা বিশিষ্ট একটা ভবনে এতোদিন ধরে ওরা আছে, অথচ তেমন কারো সাথে পরিচয় হয়নি তানিয়ার। কারো সাথে কখনোসখনো সামনাসামনি
দেখা হয়ে গেলে সামাজিকতা রক্ষা করতে সালাম দেওয়া কিংবা মুচকি হাসার কাজটি সবাই করে। কিন্তু কারো সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে তাদের তীব্র অনীহা।

অথচ এই জাদুর শহরে একটা কথা বলার মানুষের অভাবে প্রতিনিয়ত গুমড়ে ম*রে তানিয়া।

মায়ের একাকীত্ব কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পেরেছিল অর্ণিত। সারাদিন বাইরে সময় কাটিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে মায়ের সাথে এক দু ঘন্টা সময় কাটানোর চেষ্টা করতো। কিন্তু চাকরী হওয়ার পর সেটা বন্ধ হয়ে গেল।

সারাদিন কাজ করার পর ক্লান্তি জেঁকে ধরে অর্ণিতকে। বাড়ি ফিরে শুকনো মুখে। ক্লান্ত ছেলেকে দেখে তানিয়াও তাকে বিরক্ত করে না। বিশ্রামের সুযোগ দিয়ে নিজেকে আড়াল করে নেয়।

এরপর অর্ণিতের বিয়ের বয়স হলো। তানিয়া ভাবল, এবার তার একাকিত্ব ঘুচবে, একটা সঙ্গী হবে তার৷ ছেলের বউয়ের সাথে মিলেমিশে সংসার গুছাবে। কিন্তু হায়! একী হলো!

ছেলের বউও ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলল অফিসে৷ একা তানিয়া এই চার দেয়ালের মাঝে আবারও একা হয়ে গেল। এতো চেষ্টার পরেও তানিয়ার পাশে কেউ থাকে না। এই শহরে সবাই ব্যস্ত। সবাই ছুটে চলে কিছু না কিছুর পেছনে। শুধু তানিয়া-ই ব্যস্ত নগরীতে অলস সময় কাটায়, একাকীত্বে ভুগে। সূর্য উঠে, সূর্য ডুবে শুধু তানিয়ার সময় কাটতে চায় না।

তানিয়া হতাশ হয়ে ব্যস্ত রাস্তাটির দিকে তাকিয়ে থাকে। পথচারীরা চঞ্চল পায়ে দৃশ্যপটে আসে, ক্ষণিকের দেখা দিয়ে আবার দ্রুত পায়ে হারিয়ে যায় দৃশ্যপট থেকে। শুধু একলা তানিয়া ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়।

___________

ক্লাস শেষ হওয়া মাত্র হুড়মুড় করে অফিস ত্যাগ করল দৃতী। অর্ণিত বলেছিল, যাওয়ার সময় উবার নিয়ে নিও। কিন্তু এতো টাকা ব্যয় করতে ইচ্ছে হলো না দৃতীর। রোজ রোজ উবারে ফিরলে কতোগুলো টাকা খরচ হয়ে যাবে! এর থেকে লোকাল বাস ভালো। দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে বলে রাস্তায় এসে যে বাসটি পেলো তাতেই উঠে গেল। অফিস আওয়ার না হলেও সবসময়ের মতো বাসে প্রচন্ড ভীড়। সীট পেল না দৃতী। সামনের দিকের জানালার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।

বাস থেকে নেমে দ্রুত বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করল। সকালবেলা শাশুড়ির অন্ধকারাচ্ছন্ন মুখটি এখনো তাকে ভীত করে রেখেছে৷

বাসার কাছাকাছি আসতেই দৃতী তাকালো তিনতলার বারান্দায়। শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে আছে তানিয়া। বুকটা ধক করে উঠল দৃতীর।

ঘরে ফিরে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিয়ে দু’দণ্ড বসার ফুরসত পেল না তানিয়া। অর্ণিত ও সিরাজের ফেরার সময় হয়ে গিয়েছে। নাস্তার আয়োজন করতে ছুটল রান্নাঘরে।

অফিস থেকে ফিরেই দৃতীকে রান্নাঘরের দিকে ছুটতে দেখে তানিয়া ভ্রু কুচকে বলল,

“আমি নাস্তা বানিয়ে নিচ্ছি। মাত্রই ফিরলে। যাও গিয়ে বিশ্রাম নেও।”

একটু ক্লান্তি লাগছিল দৃতীর। কিন্তু বিশেষ পাত্তা দিল না সে। ক্লান্তিকে পেছনে ফেলে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

“বসে বসে ক্লাস করলাম শুধু। তাতে কীসের আবার ক্লান্তি! এক কাপ চা খেলেই সব ক্লান্তি পালিয়ে যাবে।”

চাকরি করার সিদ্ধান্তে দৃতীর উপর রেগে আছে তানিয়া৷ তাই বেশি আহ্লাদ দেখালো না। যা ইচ্ছে করুক। নিজের কষ্ট নিজেকেই বুঝতে হয়। দৃতী যদি না বুঝে তানিয়ার কি করার আছে!

আজ প্রথমদিন বলে ঘেমে-নেয়ে বাড়ি ফিরেও রান্নাঘরে এসে শাশুড়ির মন ভোলানোর চেষ্টা করছে। সেটা কি তানিয়া বুঝে না নাকি? অবশ্যই বুঝতে পারছে না। দুটো গেলেই দৃতীর আসল রূপ বের হবে৷ অফিস থেকে ফিরে গা এলিয়ে দিবে বিছানায়। আজ শরীর ভালো লাগছে না, কাল ক্লান্ত লাগছে, পরশু অফিস থেকে ফিরতে দেরী হবে – এসব তালবাহানা এখন চলতে থাকবে।

মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে তানিয়া৷ কোনোকিছু না বলে চুপচাপ নিজের কাজ করতে থাকল সে।

তাতে নিরাস হলো না দৃতী। নিজের মতো করে অতি উৎসাহে অফিসে প্রথমদিনের অভিজ্ঞতার গল্প শোনাতে লাগল তানিয়াকে। তানিয়া অবশ্য প্রতিক্রিয়াহীন নিজের কাজ করে যাচ্ছে। যেনো দৃতীর কথা সে শুনতেই পাচ্ছে না৷ কিন্তু ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে শুনছে দৃতীর সমস্ত কথা।

রাতেরবেলা অর্ণিতকেও অফিসের একগাদা গল্প শোনালো দৃতী। অর্ণিত কিছু না বলে মনোযোগ দিয়ে শুনে গেল। চোখ ভরে দেখে গেল দৃতীর উচ্ছ্বাস। সামান্য একটা চাকরিতে কেউ এতো খুশি হতে পারে, অর্ণিতের জানা ছিল না।

________

রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে সকালের নাস্তা বানিয়ে, দুপুরের রান্নায় তানিয়াকে সাহায্য করে তবেই অফিস যায় দৃতী। বাসায় ফিরে দু মুঠো খেয়ে আবারও সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়৷ সন্ধ্যার নাস্তা, রাতের রান্না থেকে শুরু করে সবকিছুতেই তানিয়ার সাথে সাথে থাকে। ত্রুটি খুঁজে বের করার কোনো সুযোগ দেয় না কাউকে। ঘর সংসার সামলানোর পাশাপাশি অফিসও সামলাবে দেখাবে সে।

তাই বলে যে দৃতী ক্লান্ত হয় না, তা কিন্তু নয়। মনের জোর, ভেতরকার জেদ তাকে অবসাদগ্রস্ত হতে দেয় না। যখনি ক্লান্তিতে পা দুটো থমকে যেতে চায়, দৃতী নিজেকে বুঝায়, আর মাত্র কয়েকটাদিন। একটা মাস কষ্ট করতে পারলে বাকি দিনগুলো রঙিন হবে। স্বপ্নীল হবে।

মাসের শেষ সপ্তাহে প্রশিক্ষণের সাথে কিছু কাজ জুড়ে দেওয়া হলো। যার ফলে বাড়ি ফিরতে আরও দেরী হচ্ছে দৃতীর। অর্ণিত অবশ্য প্রায়ই দৃতীকে সাথে নিয়েই বাড়ি ফিরে। তাই সন্ধ্যাবেলা একলা যাতায়াত করার ঝামেলা করতে হয় না দৃতীকে৷

আজও মাগরিবের ওয়াক্ত পেরিয়ে বাসায় ঢুকলো ওরা। তানিয়া ছোটাছুটি করে সিরাজের কাপড়চোপড় বের করে দিচ্ছে, ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখছে৷ যা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্নাঘরের দিকে গেল দৃতী। ভাগ্যিস অর্ণিত তার বাবার মতো নয়। অফিস থেকে ফিরে নিজের কাজগুলো অর্ণিত নিজেই করে। নিজের কাজগুলোর পাশাপাশি দৃতীকেও সাধ্যমতো সাহায্য করতে ভুলে না।

এই যে দৃতীকে রান্নাঘরে ছুটতে হবে বলে নিজে অপেক্ষায় থেকে দৃতীকে ওয়াশরুম ব্যবহার করতে দিল। তাইতো দৃতী এতো তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে যেতে পারল।

ফ্রিজ থেকে দুধ বের করতে গিয়ে দৃতী দেখল, দুপুরের খাবার এখনো ফ্রিজে পড়ে আছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই দৃতী খেয়াল করেছে, দুপুরের খাবারে বেশ অনিয়ম করছে তানিয়া।

তাই আজ বলেই ফেলল,

“আপনি দুপুরে ভাত খাননি, মা?”

রান্নাঘরে ঢুকে ডালপুরিগুলো উল্টে দিয়ে তানিয়া বলল,

“খেয়েছি। কেনো?”

“ফ্রিজে ভাত তরকারি দেখলাম।”

“খেতে ইচ্ছে করছিল না। অল্প একটু খেয়ে বাকিটা রেখে দিয়েছি।”

“আজকাল আপনি বেশ অনিয়ম করছেন। এভাবে খাওয়াদাওয়া করলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।”

“একলা খেতে বসতে ইচ্ছে করে না।”

ম্লান কণ্ঠে নিচুস্বরে উত্তর দিল তানিয়া৷ কী বলবে ভেবে পেল না দৃতী। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তানিয়ার দিকে চেয়ে রইল। এই মানুষটার জন্য দৃতীর মায়া হয়। এতো নরম স্বভাবের, এতো সহজ সরল মানুষের দেখা মেলা ভার। চারপাশে শাশুড়ি মহলের কূটনীতির গল্প শুনতে শুনতে নিজেকে রুপকথার দেশের একটা চরিত্র মনে হয় দৃতীর৷ যার ভাগ্যে কাঁদা মাটির মতো নরম মনের একজন শাশুড়ি জুটেছে। যে ছোট্ট শিশুর মতো অভিমান করে, মুখ ভার করে। আবার পরক্ষণে সব ভুলে জড়িয়ে নেয় পরম মমতায়।

দৃতীর মনে হয়, সে শাশুড়ির আদলে একটি বাচ্চার সাথে জীবনযাপন করছে। যার মান – অভিমান দৃতীকে বুজতে হয়৷ যার আবদার – আহ্লাদ নিয়ে দৃতীকে ভাবতে হয়৷ দৃতীর অবশ্য মন্দ লাগে না।

_________

জীবনের প্রথম স্যালারি পেয়েছে দৃতী। টাকা হাতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে কল দিল অর্ণিতকে৷ অর্ণিত তখন মিটিংয়ে। কল কেটে দিল। তা দেখে অধৈর্য হলো দৃতী। দ্রুত মেসেজ টাইপ করলো,

“কল রিসিভ করো। জরুরি কথা আছে।”

সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কল ব্যাক করলো অর্ণিত। দৃতী হড়বড়িয়ে বলল,

“শোনো, আমি স্যালারি পেয়েছি। ইন্টার্নশিপসহ মোট বিশ হাজার টাকা। কী যে ভালো লাগছে!”

এমন জরুরি সংবাদে অর্ণিত মাথায় হাত দিতে দিতেও দিলো না। উল্টো শব্দহীন হেসে বলল,

“কংগ্রাচুলেশনস।”

“এতোগুলো টাকা কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। কী করা যায় বলো তো। কিছু আইডিয়া দেও।”

“কিছু কেনাকাটা করে ফেলো।”

“কি কিনব?”

“তোমার যা কিনতে ইচ্ছে করছে।”

“আমার নিজের জন্য কিছু কিনতে ইচ্ছে করছে না। বাকি সবার জন্য কিছু কেনা দরকার। কী কিনবো? এখন তো টেনশন হচ্ছে।”

“এতো টেনশন করার কিছু নেই। সময় নিয়ে আস্তেধীরে ভাবো।”

দৃতীর এতো সময় নিয়ে ভাবার ধৈর্য হলো না। প্রথম বেতন দিয়ে আজকেই কিছু কিনতে হবে৷ কিন্তু কি কেনা যায়?

বাজার থেকে মিষ্টি কিনে দুপুরের দিকেই বাসায় ফিরল। মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে দৃতীর কার্যকলাপে তানিয়া হাসতে হাসতে প্রায় গড়াগড়ি দেয়। এভাবে মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফেরার কোনো মানে হয়!

দৃতী অবশ্য সেসবে পাত্তা দিল না। গম্ভীর মুখে বসে থেকে বলল,

“সবার জন্য কিছু-মিছু কিনতে হবে। কি কি কিনবো বুঝতে পারছি না। আপনি সাজেশন দিন।”

“এখন এতোগুলো টাকা মনে হলেও কেনাকাটা শুরু করলে দেখবা এসব কিছুই না৷”

“কিনব না বলছেন? কিন্তু প্রথম বেতনে সবাইকে কিছু দিতে ইচ্ছে করছে আমার।”

“দিতে ইচ্ছে করলে দিবে। তবে অবশ্যই সাধ্যের মধ্যে। মার্কেটে ঘুরে ঘুরে দেখো। কিছু না কিছু চোখের সামনে পড়েই যাবে।”

“ঠিক বলেছেন। চলুন আমরা মার্কেটে যাই।”

“আমি?”

“হ্যাঁ। ”

“ওসব আমি পারি না। অর্ণিত আসুক। ওকে নিয়ে যেও।”

“ও আসতে অনেক দেরি আছে। আপনাকে কিছু করতে হবে না। শুধু আমার সাথে থাকবেন। একা মার্কেট করতে আমার ভালো লাগে না।”

“অর্ণিতের আব্বু শুনলে রাগ করবে।”

“বাবা কিছু জানতে পারবে না। উনি বাড়ি ফেরার আগেই আমরা চলে আসবো।”

নাহ, নাহ করতে করতেও দৃতীর জোরাজুরিতে কয়েক বছর পর মার্কেটে পা রাখল তানিয়া৷ দৃতীর সাথে সে যেনো ফিরে গেলো যৌবনের দিনগুলো। মার্কেটে ঘুরে ঘুরে অনেক কেনাকাটা করল। দৃতীর বাবার জন্য আতর, মায়ের জন্য বোরকা, দানিয়ার জন্য জুয়েলারি, দোয়েলের জন্য ব্যাগপ্যাক, দৌতলের জন্য খেলনা কিনে তখনি কুরিয়ার করে কুমিল্লা পাঠিয়ে দিল।

সিরাজের জন্য অফিস ব্যাগ, অর্ণিতের জন্য মানিব্যাগ, তানিয়ার জন্য পার্স কিনল। কিন্তু অনেক ভেবে চিন্তেও নিজের জন্য কেনার মতো কিছু পেল না। তানিয়া অবশ্য এ নিয়ে খুব বকাঝকা করল। সবার জন্য কিনল অথচ নিজের জন্য কেন কিছু কিনল না। এসব কেমন ব্যবহার!

চলবে…
#অক্ষরময়ী