#পারমিতা
#পর্ব_১১
#লেখিকা_Nabila_Ahmed
–আমি কাল ই গিয়ে মিতাকে এখানে নিয়ে আসবো। তোমরা সবাই আমার মেয়েকে পাগল করে দিতে চাচ্ছো।
–মায়া কি সব বলছো তুমি!
–কি সব বলছি বুঝতে পারছো না? মিতাকে দেখোনি আজ? ওর চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না ওয়াহিদ..ও.. ও
কথাটা বলেই কান্না করা শুরু করে দেয় মায়া চৌধুরী।
–মায়া শান্ত হও, প্লিজ।
মায়া চৌধুরীকে ধরে বিছানায় বসাতে বসাতে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–ও… ও.. অর চোখে অরিয়নের জন্য..ওয়াহিদ, এটা ও কি করে বসলো, ওয়াহিদ। আমার মেয়েটার জীবন কি শুধু কষ্টেই কাটবে?
ওয়াহিদ চৌধুরীর বুকে মাথা রেখে কান্না করতে করতে বলতে লাগলেন ওয়াহিদ চৌধুরী।
–স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাই এরকম মায়া,যেখানে ভালোবাসা আপনা আপনি চলে আসে। আর অরিয়ন কিন্তু খারাপ না..
–আমি জানি অরিয়ন খারাপ না,ওয়াহিদ। সিচুয়েশন এরকম না হলে আমি ভাবতাম আমার মিতার কপাল অনেক ভালো তাই অরিয়নের মতো ছেলে পেয়েছে কিন্তু…
–আমি জানি মায়া। এমন হতে পারে এটা মিতার শুধুই ভালোলাগা আবার এমন ও হতে পারে অরিয়ন আবার আগের মতো হবে।
–আমি আর বেশি সময় দিতে পারবো না, ওয়াহিদ। আমার মিতাকে যদি তার প্রাপ্য সম্মান আর জায়গা দেওয়া না হয় তাহলে আমি মিতাকে নিয়ে আসবো। তোমাদের কারো কথা আর শুনবো না আমি।
–আমাদের কথাটাও একবার ভাবো মায়া। আমরা কি কারণে এই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম একটু ভাবো।
মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আমি ভেবেছিলাম বলেই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। আর এখন মনে হচ্ছে এটাই আমার বড় ভুল হয়েছে।
–মা..
ওয়াহিদ চৌধুরী কিছু বলার আগেই কান্না করতে থাকা মায়া চৌধুরী ওয়াশরুমে চলে যায়।
*****************
–তুমি কবে বুঝবে আফরিন পালিয়েছে, অরিয়ন?
রাগে দাঁত কিরমির করতে থাকা হাবিব চৌধুরী চেচিয়ে বলে অরিয়নকে উদ্দেশ্য করে।
–আমি জানি সেটা বাবা, আমাকে বার বার মনে করিয়ে দিতে হবে না।
অরিয়ন ও চেচিয়ে বলে।
–আমার মনে হচ্ছে না তুমি জানো, জানলে এভাবে মিতাকে সবার সামনে অপমান করতে না।
–এসবে পরীকে আনবে না।
গম্ভীর হয়ে বলে অরিয়ন।
–এসব কিছুতে মিতা থাকবেই, ও তোমার স্ত্রী।
–আর ইউ সিরিয়াস বাবা? লাইক সিরিয়াসলি?
রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
–ইয়েস আই এম অরিয়ন। এখন সময় হয়েছে অতীত ভুলে বর্তমান মেনে নেওয়ার। মেনে নেওয়া যে মিতাই তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ।
–পরীকে আমি ভালো রাখতে পারবো না বাবা।
নিজের রাগটা একটু কমানোর চেষ্টা করে বলে অরিয়ন।
–ও যদি কারো সাথে ভালো থাকে তাহলে সেটা একমাত্র তুই অরিয়ন।
হাবিব চৌধুরীর কথা শুনে অবাক হয় অরিয়ন।
হাবিব চৌধুরী অরিয়নের সাথে তুই করে কথা বলে একমাত্র যখন তিনি ইমোশনাল হয়ে পড়ে তখনি।
–মিতা তোকে খুব ভালোবাসে।
বলে ফেলে হাবিব চৌধুরী।
–আমি ও পরীকে খুব ভালোবাসি বাবা, এতোটাই যে ওর সাথে অন্যায় হবে ভাবতেই আমার শরীরে কাটা দিয়ে উঠে..কিন্তু বাবা..
কথাটা বলে নিজের বাবার দিকে এগিয়ে যায় অরিয়ন।
–কিন্তু বাবা এই ভালোবাসা আর স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা এক নয়। আর আমার পক্ষে পরীকে অভাবে ভালোবাসা সম্ভব নয়। শুধু মিতা কেনো, আমি অন্য কাউকেই পারবো না।
–আফরিন তোকে ধোঁকা দিয়েছে তা জানার পরও?
–হ্যাঁ, সব জানার পরও। কারণ অভিনয় আফরিন করেছিলো, আমি না বাবা।
কথাটা বলেই আর কোনো কথা না বলে হাবিব চৌধুরীর রুম থেকে বেরিয়ে আসে অরিয়ন।
************
আয়নার সামনে বসে জুয়েলারিগুলো খুলছে মিতা। চোখ আর মুখ লাল হয়ে আছে কান্নার কারণে। পরক্ষণেই কিছু মনে পড়তে ঠোঁটের কোণে চিলতে এক হাসি ফুটে উঠে। পরক্ষণেই আবারও চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করে।
“আচ্ছা ভালোবাসলে কী এরকম অনুভব হয়? অরিয়ন ভাইয়াকে নিয়ে এরকম অনুভূতি কেনো আসলো?” মনে মনে ভাবে মিতা।
ছোটবেলা থেকে কাজিনদের মধ্যে অরিয়নকে কেনো মিতা সবার থেকে বেশি পছন্দ করতো তা মিতা জানেনা। শুধু জানে যখন আফরিনের সাথে সম্পর্ক হলো তখন মিতা অনেক খুশি হয়েছিলো এই ভেবে এখন প্রতিদিন অরিয়ন ভাইয়ার সাথে দেখা হবে। আফরিনের সাথে সম্পর্কের সেই ৬ বছরে এমন কোনো দিন যায় নি যেদিন অরিয়ন আফরিনের জন্য ফুল বা চকলেট এনেছে কিন্তু মিতার জন্য আনেনি।
অনিয়ন বলাতে রাগ হয়ে যাওয়ার অভিনয় করা অরিয়নের জন্য এক অজানা অনুভূতি অনুভব করলো যেদিন আফরিন চলে যাওয়াতে অরিয়নের মুখটা অসহায়ের মতো হয়ে গেলো। হাসিখুশি থাকা অরিয়নের মুখটা যেদিন থেকে গম্ভীর হয়ে গেলো সেদিন বুঝতে পারলো মিতার জীবন থেকে কি চলে গিয়েছে, কেনো সেই চেহারা চোখের সামনে ভাসতেই অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়তো মিতার।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে উঠে গিয়ে বিছানার পাশে থাকা টেবিলের উপর থেকে ছবিটা হাতে তুলে নেয় মিতা। আফরিনের ছবির দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
–এই মানুষটাকে কষ্ট দিতে পারলি তুই আপু?
–তোর আফনান তো একদম ভালো নেই আপু, কোথায় তুই? সত্যি কি তুই পালিয়েছিস??
–তোর আফনানকে যে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। ও যে এখন আমার কাছে রিয়ন হয়ে গেছে।
কথাটা বলতেই এক ফোঁটা পানি গিয়ে আফরিনের ছবির উপর পরে।
–আমি যদি তোর আফনানকে…তোর আফনানকে ভালো রাখার দায়িত্ব নেই তাহলে কি তুই রাগ করবি?
নিজের হাত দিয়ে অরিয়নের ছবিটা স্পর্শ করতে করতে বলে মিতা।
–তুমি কি আমাকে তোমার মনের এক কোণে জায়গা দিতে পারবে রিয়ন? তোমাকে ভালোবাসতে দিবে আমাকে? তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে দিবে? স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবে তুমি?
এক দৃষ্টিতে ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
****************
আজ মিতা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই গোসল করে বেবি পিংক কালারের একসেট জামা পড়ে, চুল আচরিয়ে রান্নাঘরে চলে এসেছে। ইচ্ছা আছে অরিয়নের জন্য নাস্তা তৈরি করার।
–শায়লা আপু, অরিয়ন ভাইয়ার নাস্তা বানানো শেষ?
–না, কেনো??
–আমি বানাই?
হাসি দিয়ে বলে মিতা।
–শুধু অম্লেট করা বাকি আর সব করা হয়ে গেছে।
জিভে কামড় দিয়ে বলে শায়লা।
–আচ্ছা। অম্লেট ই করি দেও।
বলেই ডিম অম্লেট করতে শায়লার পাশে দাঁড়ায় মিতা।
অম্লেট বানিয়ে গ্রিন টি এর সব কিছু গুছিয়ে রেখে খাবার টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে মিতা। হঠাৎ করে এসব উদ্ভট কাজ করতে মন চাচ্ছে তা কারণ মায়া চৌধুরী থেকে একবার শুনেছিলো ছেলেদের খুশি করতে হয় তাদের টেস্টি খাবার খায়িয়ে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই হাবিব চৌধুরী অফিসের জন্য রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলের এসে বসে নাস্তা খেতে।
–গুড মর্নিং চাচ্চু।
হেসে বলে মিতা।
–গুড মর্নিং মিতা। আজ এতো সকালে, আজও কি পরীক্ষা আছে?
বলে হাবিব চৌধুরী।
–হ্যাঁ চাচ্চু।
জবাব দেয় মিতা।
অরিয়নকে আসতে দেখেই নড়েচড়ে ঠিক করে বসে মিতা। হঠাৎ করে মিতার এতো নার্ভাসনেস যেন হাবিব চৌধুরীর চোখ দেখে এড়ানো গেলো না। কেনো এতো নার্ভাস হয়ে পড়েছে তা দেখতে পেছনে তাকাতেই অরিয়নকে দেখতে পায় হাবিব চৌধুরী। অরিয়নকে দেখেই আলতো এক হাসি ফুটে উঠে হাবিব চৌধুরীর ঠোঁটে।
–গুড মর্নিং বাবা।
চেয়ারে বসতে বসতে বলে অরিয়ন।
সামনে বসে থাকা মিতার দিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় অরিয়ন।
–গুড মর্নিং অরিয়ন ভাইয়া।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
–গুড মর্নিং।
অরিয়ন উত্তর দিতেই বিশাল এক হাসি ফুটে উঠে মিতার মুখে।
শায়লা অরিয়নের প্লেটে নাস্তা দিতে এগিয়ে আসতেই মিতা উঠে গিয়ে অরিয়নের প্লেটে খাবার দিতে থাকে। হুট করে মিতার এরকম করা দেখে কিছুটা অবাক হয়ে মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন।
–মিতাকে আজ কলেজ নামিয়ে দিয়ে আসিস, আজ ওর এক্সাম আছে।
হাবিব চৌধুরী নাস্তা খেতে খেতে বলে।
–ওকে।
****************
আজ আর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো না অরিয়ন। গাড়ির মধ্যে বসে ছিলো যখন মিতা ব্যাগ নিয়ে নেমে আসলো।
–চলুন কাকা।
অরিয়নের পাশে এমন না আজ প্রথম বসেছে মিতা। এর আগেও অনেকবার বসেছে তাও আজ যেন একটু বেশি নার্ভাস লাগছে মিতার।
–কি হয়েছে তোর? শরীর খারাপ লাগছে নাকি??
হুট করে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।
–কই না তো।
আমতা আমতা করে জবাব দেয় অরিয়ন।
–তাহলে এসির মধ্যেও এভাবে ঘামছিস কেনো??
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–অহ, হ্যাঁ। তাই তো। আসলে আজ এক্সামের জন্য ভয় লাগছে তাই।
–ওহ।
–ধন্যবাদ তোমাকে।
হুট করে বলে উঠে মিতা।
–কি জন্য??
বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।
–ঐদিন ম্যাথ নোট করে দিয়েছিলে তাই।
নিচের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
–কিসের ম্যাথ? আমি কোনো ম্যাথ করিনি।
জানালার দিকে তাকিয়ে বলে ফেলে অরিয়ন।
–আমি তোমার হাতের লেখা চিনি অরিয়ন..
ধীরে বলে উঠে মিতা।
নিজের নাম মিতার মুখে শুনতেই ফিরে মিতার দিকে অবাক হয়ে তাকায় অরিয়ন।
–ভাইয়া।
ভয়ে ভয়ে কথাটা কমপ্লিট করে মিতা।
অরিয়ন আর কোনো কথা না বলেই নিজের মোবাইল নিয়ে কানের কাছে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। কিছুটা হতাশ হয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে মিতা।
*********************
আজ আবারও অরিয়নের দরজার সামনে বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিতা। এমন নয় ম্যাথটা বুঝতে পারছে না। “তোমাকে আর একা একা থাকতে দিচ্ছি না” মনে মনে ঠিক করে মিতা। এটা সেটার বাহানা করে কিভাবে অরিয়নের কাছাকাছি থাকবে সেই বাহানা খুজতে থাকে মিতা।
–কাম ইন।
প্রথম বার নক করতেই পারমিশন দেয় অরিয়ন।
কিছুটা ভয়ে ভয়ে ভিতরে ঢুকে মিতা। অরিয়ন আজ আর টেবিলে বসা নেই। ফাইল আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাগজ নিয়ে মাটিতে বসে আছে।
সাদা টি শার্ট আর ট্রাউজার পড়া অরিয়নের সমস্ত ধ্যান ফাইলের উপর। মাটিতে বসে থাকা অরিয়নকে দেখতে মনে হচ্ছে শিল্পীর এক নিখুঁত আঁকা জীবন্ত একটা ছবি যার থেকে ক্ষণিকের জন্যও নজর সরাতে পারছে না মিতা।
দরজা খোলার শব্দ শুনেছিলো অরিয়ন। কিন্তু তাও কোনো শব্দ না পেয়ে দরজার দিকে তাকায় অরিয়ন। সামনেই দাঁড়িয়ে মিতা। পড়নে সকালের সেই পিংক কালারের জামাটা। চুলগুলো সুন্দর করে বেনি করা। মনে হচ্ছে রুমে আসার আগেই হয়তো করে এসেছে, ঠোঁট ভিজে আছে পিংক কালারের গ্লজ দিয়ে। অরিয়ন দৃষ্টি মিতার মুখ থেকে হাতে থাকা বইয়ের দিকে যায় পরক্ষণেই।
–আই নিড হেল্প।
অরিয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে মিতা।
–তোর স্যার কি দেখতে খুব সুন্দর?
মিতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–এহ?
হঠাৎ করে অরিয়নের এমন প্রশ্নে অবাক হয় মিতা।
–এরকম কেনো বললে??
অরিয়ন সামনা সামনি মাটিতে বসতে বসতে বলে মিতা।
–না আমি দেখছিলাম স্যারকে কি মুখ দেখে টাকা দেয় নাকি তোকে কিছু পড়ায়ও।
–অরিয়ন ভাইয়া।
অভিমান করে বলে মিতা।
–দু দিন পর পর আমাকে বিরক্ত করতে চলে আসিস বই একটা নিয়ে। তোর স্যারকে আসতে না করবি কাল থেকে।
ফাইলের দিকে নজর দিয়ে বলে অরিয়ন।
–তাহলে কি ডেইলি তুমি পড়াবে??
কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে মিতা।
যদি অরিয়ন প্রতিদিন মিতাকে পড়ায় তাহলে দু জন সময় কাটাতে পারবে। অরিয়নকেও আর একা একা মন খারাপ করে সময় কাটাতে হবে না।
–মাথা খারাপ তোর? দেখছিস কি পরিমানে কাজ আছে আমার, আরিয়ানের কাছে যা। এখন হেল্প করতে পারবো না।
–তাহলে কাজ শেষ করার অপেক্ষা করি?
ধীরে ধীরে বলে উঠে মিতা।
–আজ না পরী। আজ একটু ঝামেলায় আছি। কাল ভালো করে বুঝিয়ে দিবো।
হেসে বলে অরিয়ন।
–সত্যি?
অরিয়নের কথা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তাই আবারও জিজ্ঞেস করে মিতা।
–হ্যাঁ তাই।
–থ্যাংক ইউ সো মাচ অনিয়ন ভাইয়া।
বলে মিতা।
মিতার কথা শুনে মুখে আলতো এক হাসি ফুটে উঠে অরিয়নের। মিতাও খুশিতে খুশিতে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। সব কিছু এভাবে বলতে থাকলেই এক সময় নিজেদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তখনি মিতা নিজের মনের কথা বলে দিবে অরিয়নকে।
****************
১ সপ্তাহ পর।
অরিয়নের রুমে বই নিয়ে অপেক্ষা করছে মিতা। গত এক সপ্তাহে মিতা প্রতিদিন এটা সেটা বুঝি না বলে বলে অরিয়নের সাথে সময় কাটাচ্ছে। অরিয়ন ও এখন অফিস থেকে আসতেই মিতাকে বই নিয়ে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে আসে। অরিয়ন এখন আগের থেকে অনেকটাই নর্মাল হয়েছে। মিতার সাথে এটা সেটা নিয়ে হাসাহাসি করে। অরিয়নের হাসি দেখলেই যেন প্রতিবার মিতার চারপাশ থেমে যায়।
মিতা আজ সাথে করে নাস্তাও নিয়ে এসেছে। কথা ছিলো আজ ম্যাথ করা শেষ হলে দু জনে বসে মুভি দেখবে। সেই খুশিতেই যেন মাটিতে পা পড়ছে না মিতার। “আর কতক্ষণ রিয়ন” ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে এটা সেটা দেখতে দেখতে নিজে নিজে বলে মিতা।
দরজা খোলার শব্দ শুনতেই পেছনে ফিরে তাকায় মিতা। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। স্যুটে সর্বদাই অরিয়নকে গম্ভীর মনে হয় মিতার কিন্তু একমাত্র যারা অরিয়নকে ভালো করে চিনে তারাই জানে অরিয়নের মনটা কতটা নরম।
–আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি। আজ এতো লে…
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই দু কদমে মিতার সামনাসামনি এসে দাঁড়ায় অরিয়ন। পরক্ষণেই অরিয়নের ঠোঁট স্পর্শ করে মিতার ঠোঁটকে।
চলবে…
#পারমিতা
#পর্ব_১২
#লেখিকা_Nabila_Ahmed
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। খালি গায়ে শুধু মাত্র প্যান্ট পরা অবস্থায় নিজের চেহারা আয়নায় দেখতে ব্যস্ত। দু হাত ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা যেন হাত সরালেই যে কোনো মুহুর্তে পড়ে যেতে পারে। ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই নজরে আসে ঘুমন্ত পারমিতার চেহারা।
নিশ্চিতে, নিস্পাপ শিশুর মতো ঘুমিয়ে আছে মিতা। ঠোঁটে, গলায় ও ঘাড়ে কালো কালো কালচে দাঁগ হয়ে আছে। অরিয়ন ভালো করেই জানে এসব কি। কিছু হচ্ছে কামড়ের দাঁগ আর কিছু হিকি। মিতার মুখ থেকে নজর সরিয়ে ঘরটা ভালো ভাবে দেখলেই লক্ষ্য করে এক পাশে নিচে পড়ে আছে গতকাল রাতে পরা মিতার কাপড় আর তার পাশেই অরিয়নের শার্ট।
হঠাৎ করেই মিতা ঘুমের মধ্যে নড়েচড়ে উঠতেই শরীরে থাকা চাদরটা কিছুটা নিচে নেমে আসতেই লক্ষ্য করে কামড়ের দাঁগগুলো শুধু গলা, ঠোঁট আর ঘাড়েই সীমাবদ্ধ নয়, বুকের দিকেও দেখা যাচ্ছে। কামড়ের দাঁগ নজরে আসতেই দু পা পিছিয়ে পরে অরিয়ন। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছে না যা দেখতে পারছে অরিয়ন। নিজের দু হাতের দিকে তাকিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। ঘুম ভাঙ্গতেই মিতাকে বিছানায় দেখতেই লাফিয়ে উঠে অরিয়ন।
হয়তো ভুলে ঘুমিয়ে পরেছে ভাবতে ভাবতেই আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। নিজের ভুল ভাঙ্গে যখন খেয়াল করলো অরিয়নের গায়েও কিছু দাঁগ দেখা যাচ্ছে। “কামড়ের দাঁগ?” প্রশ্ন জাগে অরিয়নের মধ্যে।
” না না না না না না” বিরবির করে বলতে থাকে অরিয়ন।
“রে*পিস্ট” আয়নার দিকে আবারও তাকিয়ে নিজেকে দেখে বলে উঠে অরিয়ন।
“আমি…আমি… পরীর সাথে কিভাবে..আমি, রে*প.. পরীকে?” কথাগুলো যেন ঠিক মতো বলতেও পারছে না অরিয়ন। ক্রোধে নিজের দু হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরেছে।
” না না না না না, রে*পিস্ট, আই এম এ ফা*কং রে*পিস্ট” কথাটা বলেই রাগে নিজের হাত দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা সব কিছু ঠেলে ফেলে দেয় অরিয়ন।
–কেএএএএএএ।
অরিয়নের চিৎকার করা শুনে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে নিজেও চিৎকার দিয়ে উঠে মিতা। পরক্ষণেই দেখতে পায় সামনে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। বিছানায় বসে থাকা মিতার নজর যায় অরিয়নের দিকে যে কিনা একবার নিজের হাতের দিকে ও একবার আয়নার দিকে তাকিয়ে মাঝে মধ্যেই বিরবির করে কিছু বলে উঠছে। অরিয়ন আবারও ফুলের টব হাতে তুলে আয়নায় ছুড়ে মারতেই মিতা চাদরসহ বিছানা থেকে নেমেই নিজের কাপড় পরে নিয়েই দৌড়ে চলে যায় অরিয়নের কাছে।
–না না না না না না।
মন্ত্রের মতো বার বার বলতে বলতেই ভাঙ্গা আয়নায় নিজের ডান হাত দিয়ে ঘুসি বসিয়ে দেয় অরিয়ন।
–অরিয়ন ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া।
অরিয়নের হাত ধরে চিৎকার করে উঠে মিতা।
অরিয়নের র*ক্তে হাত আর আয়না নিমিষেই লাল হয়ে গিয়েছে কিন্তু তাও যেন অরিয়নের মনকে ক্ষণিকের জন্যও শান্ত করতে পারছে না। নিজের হাতে মিতার স্পর্শ অনুভব করতেই মিতার দিকে ফিরে তাকায় অরিয়ন। মিতাকে দেখতেই যেন নিজেকে পৃথিবীর সব চাইতে নিকৃষ্ট ব্যক্তি মনে হতে লাগলো অরিয়নের।
–আমাকে ছুঁবি না পরী।
কথাটা বলেই ধাক্কা দিয়ে মিতাকে দূরে সরিয়ে দেয় অরিয়ন।
–আমার স্পর্শে তুই..তুই অপবি..
কথাটা বলতে গিয়েও থেমে যায় অরিয়ন।
–তোকে তো আমি…আমি অপবিত্র.. করেই দিয়েছি।
কথাটা বলেই আবারও আয়নায় ঘুসি মারতে থাকে অরিয়ন।
–কি বলছো তুমি এসব? থামো প্লিজ।
নিজেকে নিজে আঘাত করতে থাকা অরিয়নকে দেখে কান্না করতে করতে দু পা এগিয়ে গিয়ে বলে মিতা।
–আই হেট মাইসেল্ফ, আই হেট মাইসেল্ফ ফর ডুয়িং দিস টু ইউ।
নিজেকে আঘাত করতে থাকা অরিয়ন বার বার একই কথা বলতে থাকলো।
–অরিয়ন ভাইয়া, প্লিজ আমার কথাটা শুনো।
মিতা অরিয়নের বাম হাত ধরে টানতে টানতে বলে।
–আমি একটা জানো*য়ার, একটা মনস্টার, আই এম এ ফা*কং রে*পিস্ট পরী।
চিৎকার করে বলতে থাকা অরিয়নের রাগ এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে নিজের হাতের মারাত্মক অবস্থাও নজরে আসছে না।
অরিয়নের কথা শুনে নিজের জায়গায় পাথর হয়ে রইল মিতা। “রে*পিস্ট?” বিরবির করে বলে মিতা।
–কি বলছো তুমি এসব?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–ঠিকি বলছি আমি, নিজেকে একবার দেখ, দেখ তোর প্রিয় অরিয়ন ভাইয়া কি অন্যায় করেছে তোর সাথে।
তাচ্ছিল্যের এক হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন।
–না, তুমি এরকম কিছুই করো নি।
মাথা নাড়িয়ে বলে মিতা।
— আই ডিড পরী,আই ডিড বিকজ আই এম আ মনস্টার, এ রে*…
–নো ইউ ডিড নট, ইউ ডিড নট।
অরিয়নের কথা শেষ হওয়ার আগেই চেচিয়ে বলে উঠে মিতা।
–আই ডিড পরী, আই ক্যান সি ইউ, লুক এট ইউরসে..
–অরিয়ন..
চিৎকার করে উঠে মিতা।
বড় বড় শ্বাস নিতে থাকা মিতা নিজের রাগ যেন কোনোমতেই কমাতে পারছে না। কোথা থেকে অরিয়নকে নাম ধরে ডাকার সাহস পেলো তাও জানেনা। মিতার মুখ থেকে নিজের নাম শুনে চুল থেকে হাত সরিয়ে মিতার দিকে অবাক হয়ে তাকায় অরিয়ন।
— ইউ ডিড নট। গতকাল রাতে যা হয়েছে তাতে আমার সম্মতি ছিলো, আমার ইচ্ছায় হয়েছে।
এক দৃষ্টিতে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
–তোর ইচ্ছাতে? আমি তোকে ফোর্স করিনি?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
মাথা নাড়িয়ে না বোঝায় মিতা।
–তাহলে তুই আমাকে বাধা দিস নি কেনো?
মিতার দিকে দু পা এগিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–কি হয়েছে বল? কেনো বাধা দিস নি?
মিতার কাছাকাছি গিয়ে নিজের দু হাত দিয়ে মিতার দু গাল ধরে নিজের কপালের সাথে মিতার কপাল স্পর্শ করিয়ে বলে অরিয়ন।
–আমার উপর করুনা হচ্ছিলো তোর? যে নিজের কথা একবারও ভাবলি না?
মিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
–আমাকে তোমার প্রয়োজন ছিলো।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয় মিতা।
মিতার উত্তর শুনেই যেন শান্ত হওয়া রাগটা আবারও মাথায় উঠে গেলো অরিয়নের। চোখে মুখে রাগের বহিঃপ্রকাশ হতে লাগলো।
–প্রয়োজন হলেই যার তার সাথে শুয়ে পড়বি তুই?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
মাথা নাড়িয়ে না বলে মিতা।
–তাহলে?
মিতার কিছুই বুঝতে না পেরে আবারও প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–কারণ…কারণ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
বলে ফেলে মিতা।
*******************
গতকাল সন্ধ্যা ৬ টা।
অফিসে নিজের রুমে বসে সব কিছু চেক করতে ব্যস্ত অরিয়ন। চেয়ারের উপরে নিজের কোর্ট খুলে রেখে ল্যাপটপে এটা সেটা চেক করতে করতেই মাঝে মধ্যে দু এক চুমুক কফি পান করছে।
–এই মহারাজ।
হুট করেই রুমের দরজা খুলে ভেতরে চলে আসে একজন যুবক।
–স্যার, আমি উনাকে আসতে না করেছিলাম তাও উনি জোর করে ঢুকে পড়েছে।
যুবকের পেছন পেছন একজন মধ্য বয়স্কলোক প্রবেশ করে অরিয়নের উদ্দেশ্যে বলে।
–সমস্যা নেই আংকেল, আপনি এখন আসতে পারেন।
অরিয়নের জবাব শুনে ছেলেটি অরিয়নের সামনে রাখা চেয়ার টেনে বসে অপরদিকে মধ্য বয়স্কলোকটি রুম থেকে বের হয়ে যায়। অরিয়ন কোনো কথা না বলে ভ্রু কুচকিয়ে যুবকটির দিকে তাকিয়ে রইল।
–বিয়ে গরিবের ফর জানাইবের প্রয়োজন ও মনে ন গরস?
হুট করে বলে উঠে ছেলেটি।
–তুই এতদিন হডে আসিলি ইবে জানাইবের প্রয়োজন মনে গইজ্জুস নে?
ছেলেটির দিকে তাকিয়ে অরিয়নও বলে।
–জেলেত্তুন কেইল্লে গরি খবর ফাডাইয়ুম?
জবাব দেয় ছেলেটি।
–কিহ? জেলে? কিন্তু কিভাবে?
এবার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা বাদ দিয়ে ঠিক করে কথা বলতে শুরু করে অরিয়ন।
–সব বলবো আর সবকিছু তোর থেকে জেনেও নিবো। আগে চল ক্লাবে যাই।
অরিয়নের হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বলে ছেলেটি।
–তুই ও না ফারহান, একটু ও বদলাস নি।
চেয়ারের উপর থেকে কোর্টটা হাতে তুলে নিয়ে বলে অরিয়ন।
–ফারহানরা বদলায় না।
বাঁকা হাসি দিয়ে বলে ফারহান।
******************
–এরপর আর আফরিনকে পাশ নি?
হাতে ম*দের গ্লাস নিয়ে জিজ্ঞেস করে ফারহান।
–নাহ।
নিজের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলে অরিয়ন।
–এরপর ওর বোনকে বিয়ে করেছিস? যে কিনা তোর থেকে ১১ বছরের ছোট?
নিজের গ্লাসে এবার চুমুক বসায় ফারহান।
–হ্যাঁ।
জবাব দেয় মা*তাল হওয়া অরিয়ন।
–দেখতে কেমন?
প্রশ্ন করে ফারহান।
ফারহানের কথা শুনেই রেগে যায় অরিয়ন।
–শি ইজ এ চাইল্ড সো টক কেয়ারফুল্লি ফারহান।
নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলে অরিয়ন।
–তোর চোখেই বাচ্চা। ১৮ বছরে কেউ আবার বাচ্চা হয়? মেয়েরা আমাদের আগে মেন্টালি ম্যাচুয়র হয়ে যায় জানিস না?
নিজের গ্লাসে আবারও ম*দ নিতে নিতে বলে ফারহান।
–ঠিক আছে আর কিছু বলবো না।
অরিয়নের চাহনি দেখে বলে ফারহান।
–তো তোর গার্লফ্রেন্ড দেখতে কেমন ? লাস্ট কখন দেখেছিলাম ভুলেই গিয়েছি। চেহারাও মনে নেই।
বলে ফারহান।
–শি ইজ দা মোস্ট বিউটিফুল গার্ল ইন দা ওয়ার্ল্ড।
চোখ বন্ধ করে জবাব দেয় অরিয়ন।
–তোর সাথে চিট করার পরেও?
অবাক হয়ে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে ফারহান।
–ইয়েস।
আবারও চুমুক বসায় অরিয়ন।
–তো, তোর সেই জান্নাত এর কি খবর?
হাসতে হাসতে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–জান্নাত না জাহান্নাম বল…অকে সামনে পেলে গ*লা টিপে মারবো আমি।
দাঁত কিরমির করে বলে ফারহান।
–তবে যাই বলিস, ও কিন্তু তোর একটা সুন্দর নাম দিয়েছে, ফারহানা আপু।
কথাটা বলেই শব্দ করে হাসতে থাকে অরিয়ন।
–তুপ থাক তুই। আমাকে জেলে পাঠিয়েছে ঐ মেয়ে, অকে শুধু একবার হাতের নাগালে পাই তারপর বুঝাবো মজা।
গম্ভীর হয়ে বলে ফারহান
–হুম হুম।
সায় মিলায় অরিয়ন।
************
মা*তাল অরিয়নকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে বাসায় মধ্যে দিয়ে গেছে ড্রাইভার। কোনো মতে হেলেদুলে রুমের দরজা খুলতেই থমকে যায় অরিয়ন। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আফরিন। আফরিন, অরিয়নের আফরিন।
—-আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি। আজ এতো লে…
অরিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আফরিন হাসি মুখে কথা বলা শুরু করলেই দু কদমে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় অরিয়ন। পরক্ষণেই নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে আফরিনের ঠোঁটকে।
কি হচ্ছে কিছুই যেন মিতার মাথায় ঢুকছে না। একটু আগেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অরিয়নের ঠোঁট মিতাকে ক্ষণিকের জন্যও ছাড়ছে না।
–আই মিসড ইউ সো মাচ।
মিতার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে কপালের সাথে কপাল স্পর্শ করিয়ে বলে অরিয়ন।
–অরিয়ন ভা..
নিজেকে ছাড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা করে মিতা।
–হিসসসসস।
নিজের আঙ্গুল মিতার ঠোঁটের সাথে স্পর্শ করে বলে অরিয়ন।
পরক্ষণেই আবারও অরিয়নের ঠোঁট আক্রমণ করে মিতার ঠোঁটকে। অরিয়নের চুমু খাওয়াগুলো যেন প্রতি মুহূর্তে এক অন্যরকম অনুভূতি দিচ্ছে মিতাকে। “আচ্ছা প্রথম কিস কি এরকমই হয়?” মনে মনে ভাবে মিতা। হুট করেই কোলে তুলে নেয় মিতাকে। মিনিটের মধ্যেই মিতা নিজেকে আবিস্কার করে বিছানার উপর। বিছানায় মিতাকে শুয়িয়ে দিতেই যেন হুশ ফিরলো মিতার। কি হতে চলেছে তা ভালোই বুঝতে পারছে মিতা।
–অরি…
–ইউ নো? ইট হার্টস। ইট হার্টস সো মাচ বেব।
নিজের হাত দিয়ে মিতার হাত নিয়ে নিজের বুকের বা পাশে রেখে বলে অরিয়ন।
বিছানায় শুয়ে থাকা নিতা ভালোই বুঝতে পারছে কাকে আর কার উদ্দেশ্য কথাগুলো বলছে অরিয়ন। অরিয়নের চোখে এরকম ভালোবাসা তখনি মিতা দেখেছে যখনি আফরিনের নাম বা আফরিন সামনে থাকতো। মিতার বুকের মধ্যে অসম্ভব যন্ত্রণা করতে শুরু করেছে অরিয়নের চোখ দেখে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়বে অরিয়ন। ভালোবাসা কেমন হয় তা মিতা এখন ভালোই জানে, এটাও জানে অপর পাশের মানুষটা আপনাকে ভালো না বাসলে কেমন অনুভব হয় আপনার তাও।
–ইউ ডিডেন্ট লিভ মি ফর হিম, ডিড ইউ?
চোখের কোণে পানি জমে থাকা অরিয়নের চোখ দেখতেই যেন আপনা-আপনি মিতার চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করলো।
–আই নিড ইউ, ডু ইউ নিড মি আফরিন?
আবারও নিজের কপালের সাথে মিতার কপাল স্পর্শ করিয়ে মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
আফরিন, যেই নামটা মিতার খুব পছন্দের, যেই নাম শুনলেই মুখে হাসি ফুটে উঠে মিতার মুখে সেই নামটা শুনে কোনোদিন মরণ যন্ত্রণা অনুভব করবে তা কল্পনাও করেনি মিতা।
মানুষ ভালোবাসায় নিজেকে ধ্বংস করে দেয়, করে দেয় বরবাদ। বিনিময়ে কি চায়? চায় শুধু অপর পাশের মানুষের ভালোথাকা। মিতার ভালোবাসাটা ঠিক কতদিনের তা মিতা জানেনা, শুধু জানে সামনে তাকিয়ে থাকা মানুষটাকে মিতা খুব ভালোবাসে। এতোটাই ভালোবাসে যে তার জন্য মিতা বরবাদ হতেও রাজি আর সব কিছু বরবাদ করতেও।
চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকা মিতা অরিয়নের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে নিজের সায় দিতেই হাসি ফুটে উঠে অরিয়নের মুখে। আলতো করে চুমু খায় মিতার কপালে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়তে থাকা মিতা নিজের হাত দিয়ে অরিয়নের গলা জড়িয়ে ধরে।
********************
বর্তমান
–কারণ…কারণ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
বলে ফেলে মিতা।
মিতার কথা শুনে প্রথমে কিছুটা অবাক হয় অরিয়ন কিন্তু পরক্ষণেই আবারও ঠিক হয়ে যায়।
–আমি ও তোকে খুব ভালোবাসি পরী, কিন্তু ভালোবাসলেই এইসব হতে দেওয়া ঠিক নয়।
মিতার গাল থেকে হাত সরিয়ে কাধের উপর রেখে বলে অরিয়ন।
মিতা ভালো করেই জানে অরিয়ন কোন ভালোবাসার কথা বলেছে আর মিতা কোন ভালোবাসার কথা বলছে তা।
–আমি তোমাকে সেভাবে ভালোবাসি যেভাবে একজন নারী একজন পুরুষকে ভালোবাসে, যেখাবে একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ভালোবাসে, যেভাবে আফ…যেভাবে আফরিন আপু তোমাকে ভালোবাসতো।
এক নিশ্বাসে বলে ফেলে মিতা।
চলবে…..