#পারমিতা
#পর্ব_২২
#লেখিকা_Nabila_Ahmed
ড্রাইভারকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে অরিয়ন মিতার সব বই আর প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় কিনে নিয়ে এসেছে। আগুন লাগার কারণে মিতার রুমের কিছুই আর বাঁচানো যায় নি।
–হঠাৎ করে আগুন লাগার বিষয়টা একবার ভালো করে খতিয়ে দেখা উচিৎ।
ওয়াহিদ চৌধুরী বলে।
হাবিব চৌধুরীর স্ট্যাডি রুমে অরিয়ন,আবরার,ওয়াহিদ চৌধুরী ও হাবিব চৌধুরী মিলে আগুন লাগার বিষয় নিয়ে কথা বলছেন।
–আমার ও তাই মনে হচ্ছে।
একমত প্রসন করে অরিয়ন।
–আমি বাড়িতে গার্ড হিসেবে পুলিশ দিতে বলবো কাল থেকেই।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–আরিয়ান বাবা, তোকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো। তুই না থাকলে মিতার যে কি হতো।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–এরকম করে বলো না চাচ্চু, মিতা কি আমার কিছু হয় না? ওকে যেমন তোমরা ভালোবাসো তেমন আমিও ভালোবাসি।
অনায়াসে বলে ফেলে আবরার।
অরিয়ন চুপ করে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইল,কথাটা শোনা মাত্রই নিজের হাত যেন আপনা-আপনি মুঠ হয়ে গেলো। মিতার প্রাণ বাঁচানোর জন্য একদিকে যেমন আবরারকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে অরিয়নের অপরদিকে, কথাটা শুনে ইচ্ছে করছে দুটো ঘুষি দিতে।
–আমি ভাবছিলাম, মিতাকে গেস্ট রুমে না রেখে ও বরং আমার রুমেই থাকুক। আমি গিয়ে গেস্ট রুমে বা অরিয়ন ভাইয়ার সাথে ঘুমাবো।
অরিয়ন আর মিতার মধ্যে হওয়া কথা সম্পর্কে বেখবর আবরার সবার সাথে নিজের মতামত শেয়ার করে।
–মিতা আমার সাথে থাকবে। যতোদিন না ওর রুম ঠিক হচ্ছে ততোদিন।
কেউ কিছু বলার আগেই অরিয়ন বলে উঠে।
অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয়ে বড় বড় চোখ করে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে আবরার। অপরদিকে, হাবিব চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরী যেন অরিয়নের কথা শুনে খুশি হলেন।
–কেনো? মিতা কেনো তোর রুমে থাকবে?
অরিয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে আবরার।
–আরিয়ান।
গম্ভীর কন্ঠে ডাক দেয় হাবিব চৌধুরী।
–নো, হোয়াট ইজ দিস বাবা?
হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে আবরার।
–মিতা কেনো ওর রুমে থাকবে? শী ইজ এন এডাল্ট,শী নিডস হার ওন রুম।
চেচিয়ে বলে আবরার।
–বিকজ শী ইজ মাই ওয়াইফ।
নিজের জায়গায় থেকে উঠে গিয়ে চেচিয়ে বলে অরিয়ন।
–যাকে তুই ওয়াইফ মানিস না। কি ৬ বছরের ভালোবাসা ৯ মাসেই শেষ? নাও ইউ ওয়ান্টস হার?
ব্যঙ্গ করে বলে আবরার।
–আরিয়ান।
চেচিয়ে বলে অরিয়ন।
–আরিয়ান সাবধানে কথা বল।
চেচিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
–হোয়াট বাবা, হোয়াট? শী ওয়াজ মাইন। আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো ওর সাথে।
রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে আবরার।
–কিহ?
অবাক হয়ে বলে অরিয়ন।
–কি বললি তুই?
আবরারের দিকে দু কদম এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।
আবরারও নিজের জায়গা থেকে নড়লো না। অরিয়নের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল।
–অরিয়ন শান্ত হ বাবা। আর আরিয়ান, অতীত কেনো উঠাচ্ছিস। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
অরিয়নকে ধরে বলে হাবিব চৌধুরী।
–আরিয়ান এসব কি বলছে বাবা? ও আর প..কি সব বলছে ও?
মিতার সাথে যেন অন্য কোনো পুরুষের নামও নিতে পারলো না অরিয়ন। নিজের বাবার দিকে সত্যি জানতে মরিয়া হয়ে তাকিয়ে রইল অরিয়ন।
–তুই কেনো বিয়ে করেছিস মিতাকে?
অরিয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে আবরার।
–আমি কেনো বিয়ে করেছি তা এই বাড়ির সবাই জানে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
–ঠিক একই কারণে ওর সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। তোর বিয়ের পর আমা..
–শাট আপ, শাট দা ফা* আপ আরিয়ান। আমি কিছু শুনতে চাই না।
আবরার থেকে দূরে সরে এসে রাগে চেচিয়ে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কি হচ্ছে তা নিজেও বুঝতে পারছে না। কিন্তু আবরার থেকে দূরে সরে না আসলে উলটা পালটা কিছু করে বসবে তা ভালোই জানে অরিয়ন।
–আরিয়ান চুপ কর। এইসব কথা বলার সময় এখন? অরিয়ন আর মিতার বিয়ে কোন অবস্থায় হয়েছে তা কি জানিস না তুই? তাহলে এখন কেনো এতো কথা হচ্ছে?
চেচিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
–বাট বাবা…
–নিজের রুমে যা আরিয়ান।
আদেশ করেন হাবিব চৌধুরী।
–বা…
–নিজের রুমে যেতে বলেছি।
হাবিব চৌধুরীর কথা শুনে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আবরার।
ওয়াহিদ চৌধুরী নিজের জায়গায় বসে দু হাত দিয়ে মাথা ধরে রেখেছে। দু ভাইয়ে ভাইয়ে এখন যে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে তা ভালোই বুঝতে পারছেন তিনি।
–আরিয়ান যা বললো তা যদি সত্যি হয়, তাহলে কাজটা তুমি ভালো করোনি বাবা।
হাবিব চৌধুরীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় অরিয়ন।
–সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো ভাইয়া, এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না।
মন খারাপ করে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আমাদের হাতে তো কিছুই নেই ওয়াহিদ।
জবাব দেয় হাবিব চৌধুরী।
–আমার কপালটাই খারাপ, বাবা হিসেবে ব্যর্থ আমি। আমার নিজের মেয়ে আমাকে শেষ করে দিয়ে গেলো, আর যেই মেয়ে আমাকে এতো ভালোবাসলো তাকেও আমি তার পাওনা সুখ দিতে পারছি না।
কথাগুলো বলতেই চোখ ভিজে আসলো ওয়াহিদ চৌধুরীর।
–হয়তো এতেই সবার ভালো ছিলো।
ওয়াহিদ চৌধুরীর কাধে হাত রেখে বলে হাবিব চৌধুরী।
–তাই যেন হয় ভাইয়া। আর তা না হলে আমি মিতার কাছে মুখ দেখাতে পারবো না।
–তাই হবে ইনশা আল্লাহ।
–হুম।
***************
বিছানায় বসে আছে মিতা। পাশেই বসে আছে মায়া চৌধুরী। খাবার খেয়ে পেইন কিলার খেয়েছে মাত্র। মিতার সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা বলে মেয়ের মন ভালো করার চেষ্টা করছেন মায়া চৌধুরী।
অরিয়ন স্ট্যাডি রুম থেকে বের হয়েই দ্রুত হাটতে লাগলো। মনে হচ্ছে কেউ অরিয়নের পুরো শরীরে মরিচ লাগিয়ে দিচ্ছে। এতো কেনো অস্থির লাগছে তা বুঝতে পারছে না অরিয়ন। তাড়াতাড়ি করে নিজের শার্টের প্রথম দুটো বাটন খুলে ফেলে অরিয়ন। বার বার মনে হচ্ছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
“কি ৬ বছরের ভালোবাসা ৯ মাসেই শেষ? ” আবরারের কথাটা যেন বার বার ঘুরছে অরিয়নের মাথায়। “কি সব আজেবাজে বলছিলো আবরার? আমি এখনো আফরিনকে ভালোবাসি, তাতে কি হয়েছে যে আফরিন আমাকে ধোকা দিয়েছে। আমি তাও ভালোবাসি আফরিনকে। আমি মিতাকে চাই না, মিতার জন্য স্নেহ কাজ করে বলেই এতো ভাবি ওর জন্য” বার বার মনে মনে বলতে লাগলো অরিয়ন।
–কি শুনছি এসব আমি?
অরিয়নের সামনা সামনি এসে বলে আনিকা চৌধুরী।
–কি শুনেছো?
বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।
–ঐ মেয়ে নাকি তোর সাথে থাকবে? তোর রুমে?
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।
–ঐ মেয়ের নাম পারমিতা, মা। আর হ্যাঁ, ও আমার সাথেই থাকবে।
উত্তর দেয় অরিয়ন।
–সব কিছু জানার পরও? এটা জানার পরও যে তোর মা ঐ মেয়েটাকে দেখতে পারেনা তাও? ওর প্রতি তোর মায়া কি কম ছিলোনা? বিয়ে করেছিস তা কি কম ছিলোনা? এখন ওর সাথে তোর সংসার করার ইচ্ছাও হচ্ছে?
আনিকা চৌধুরীর প্রতিটা কথায় যেন শুধু ঘৃণা প্রকাশ পাচ্ছে।
–মা, কি সব আজেবাজে বলছো তুমি। আমি ওর সাথে সংসার করছি না। ওর এখন থাকার জায়গার দরকার তাই থাকবে।
উত্তর দেয় অরিয়ন।
–থাকার জায়গার অভাব নেই এই বাড়িতে অরিয়ন। ও দরকার হলে আরিয়ানের রুমে থাকবে। আরিয়ানকে আমি গেস্ট রুমে প..
–পরী আমার সাথেই থাকবে।
কোনোরুপ সমোঝোতার সুযোগ না রেখে জানিয়ে দেয় অরিয়ন।
–তুই বদলে গেছিস অরিয়ন। তুই বদলে গেছিস। তুই দুর্বল হয়ে পরেছিস ঐ অলক্ষী মেয়েটার জন্য।
কথাটা বলেই কাঁদতে কাঁদতে নিচে নেমে যায় আনিকা চৌধুরী।
–ফা* ফা* ফা* ফা*।
নিজের মায়ের এরূপ অবস্থা দেখে রাগে বলতে থাকে অরিয়ন।
*************
বিছানায় শুয়ে আছে মিতা, মায়া চৌধুরী মিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
–তোমার মনে আছে মা? আমার মাথায় যখন তুমি হাত বুলিয়ে দিতে,যখন আপু কীভাবে হিংসা করতো? ঝগড়া শুরু করে দিতো আমার সাথে।
কথাটা বলতেই যেন হাসি ফুটে উঠে মিতা আর মায়া চৌধুরীর মুখে। পরক্ষণেই হাসি পরিণত হয় কষ্টে। দু জনেরই চোখ ভিজে এসেছে।
–চাচি।
হুট করে রুমে ঢুকেই মায়া চৌধুরীকে ডাক দেয় অরিয়ন।
–হ্যাঁ, বলো অরিয়ন।
জবাব দেয় মায়া চৌধুরী।
–মিতার সব কিছু আমার রুমে নেওয়ার ব্যবস্থা করুণ।
বলে অরিয়ন।
–আমি ওখানে যাবো না। এখানে বা আমাদের বাড়িতে থাকবো।
হুট করে ভয়ে ভয়ে বলে উঠে মিতা।
–ওয়াহিদের সাথে আমার কিছু কথা ছিলো, তোমরা থাকো আমি আসছি একটু পর।
মায়া চৌধুরী কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
মিতার কথা শুনে অরিয়ন তখন কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও এখন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে মিতার কথা বলার। মায়া চৌধুরী রুম থেকে বের হতেই ভয়ে ভয়ে গুটিমেরে থাকলো মিতা। যদিও সেই থাপ্পড়ের পর থেকে ঐরকম ঘটনা আর ঘটেনি তাও মিতার মন থেকে ভয়টা এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
–কি বলছিলি তুই? কি করবি না?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–আমি এখানে থাকতে চাই। ঐ রুমে গিয়ে কি করবো আমি।
আমতা আমতা করে বলে মিতা।
–তুই কি….তুই কি আমাকে আর ভা…ভালোবাসিস না?
হুট করে প্রশ্ন করে বসে অরিয়ন।
–এহ?
হুট করে অরিয়নের এই প্রশ্ন শুনে যেন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো মিতা। ঐ রুমে না যাওয়ার সাথে এই প্রশ্নের কি সম্পর্ক তা বুঝতে পারছে না।
–বল…ভালোবাসিস না?
মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে অরিয়ন।
–বাসি।
মাথা নিচু করে জবাব দেয় মিতা।
মিতার কথাশুনে যেন হাফ ছাড়লো অরিয়ন। মনে হচ্ছিলো এতোক্ষণ শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে রেখেছিলো।
–তাহলে আমার সাথে থাকতে চাচ্ছিস না কেনো?
মিতার সামনা সামনি গিয়ে বেডের কাছে হাটু ভেঙ্গে বসে অরিয়ন।
–ঐ ভুল আমি আর করবো না, প্রমিস লাভ।
মিতার কাছাকাছি গিয়ে কোমল কণ্ঠে বলে অরিয়ন।
এতোদিন পর অরিয়নের কণ্ঠে এমন কোমলতা দেখতে পেয়ে মিতার খুশি হওয়ার কথা ছিলো,কিন্তু মিতার ভয় যেন আরও বাড়ছে। অরিয়নের চোখে অজানা এক আনহেলথি কিছু দেখতে পারছে মিতা।
–না।
ভয়ে ভয়ে বলে মিতা।
মিতার কথা শুনতেই যেন সব কোমলতা দূর হয়ে গেলো অরিয়নের চোখ থেকে। কঠোর দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে থাকে।
–কি বললি? যাবি না তুই?
হুট করে রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে অরিয়ন।
–না।
নিজে একটু কঠোর থাকার চেষ্টা করে বলে মিতা।
–তুই যাবি না? তোর বাপও যাবে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
–অরিয়ন ভাইয়া।
রেগে চেচিয়ে উঠে মিতা।
–আহ…
মিতার কথা শুনামাত্রই অরিয়ন গিয়ে মিতার দুই গাল একসাথে নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে। হঠাৎ করে ধরাতে আর শরীরে আগে থেকে ব্যাথা থাকার কারণে শব্দ করে উঠে মিতা।
–ভাইয়া ডাকতে না করেছি না?হুম?
মিতার কাছাকাছি নিজের মুখ নিয়ে বলে অরিয়ন।
–ব্যাথা….ব্যাথা লাগছে।
কোনোমতে বলে মিতা।
–ঐ রুমে যাবি কি না বল?
আবারও বলে অরিয়ন।
মিতা নিজের মাথা নাড়িয়ে না বলে।
–ওকে।
কথাটা বলেই মিতার থেকে দূরে সরে আসে অরিয়ন।
মিতার নিজের হাত দিয়ে নিজের গাল ঘোষতে থাকে।
–এখন ৭ টা বাজে..
অরিয়নের কথা শুনতেই মিতা একবার অরিয়নের দিকে তাকায় আর একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নেয়।
–৯ টার মধ্যে তোকে যদি আমার রুমে না দেখি, তাহলে ৯ টা ১ মিনিটে এই রুমে আগুন জ্বলবে। আর এই আগুন ততোক্ষণ নিভবে না যতোক্ষণ না তুই ঐ রুমে যাচ্ছিস। তাতে যদি এই পুরো বাড়ি পুরে যায় তাহলে তাই হবে।
অনায়াসে কথাগুলো বলে ফেলে অরিয়ন।
মিতার আর কোনো কথা শোনার প্রয়োজনবোধ না করেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় অরিয়ন। মিতাও অরিয়নের কথায় গুরুত্ব দিলো না। সামান্য একটা রুমের জন্য যেই বড় হুমকি দিয়ে গেলো মনে হচ্ছে মিতা একজন ভিআইপি। নিজের গাল ঘোষতে ঘোষতে বিছানায় শুয়ে চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে মিতা।
******************
–বস,প্লান মাফিক কাজ হয়ে গেছে। এসি ব্লাস্ট হয়েছে।
–যা বলেছিলাম তা কি ঠিক মতো করছিস তোরা?
–জি বস। আমরা মেয়েটার দিকে সব সময় নজর রাখছি। যদিও এখন একটু নজর রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাও আমাদের আটকাতে পারবে না।
–গুড। এবারও যদি ওরা পিছিয়ে না পড়ে তাহলে পরবর্তীতে আর কোনো ওয়ার্নিং দেওয়া হবে না। চৌধুরীকে বুঝতে হবে ভয় কাকে বলে।
****************
নিজের কপালে আর মাথায় আলতো করে কারো স্পর্শ অনুভব করতেই মিটমিট করে চোখ খুলে মিতা। মিতার পাশেই বসে আছে আবরার। মিষ্টি হাসি ফুটে আছে মুখে।
–আরিয়ান ভাইয়া।
কথাটা বলেই উঠে যেতে নেয় মিতা।
–উঠিস না। শুয়ে থাক তুই।
মিতাকে বাধা দিয়ে আবারও শুয়িয়ে দেয় অরিয়ন।
–ধন্যবাদ তোমাকে আ…
–ধুর পাগলি, কিসের ধন্যবাদ? তোকে রক্ষা করা আমার কাজ। তার জন্য কি ধন্যবাদ দিতে হবে আমাকে?
–ইউ আর দি বেস্ট আরিয়ান ভাইয়া।
আলতো এক হাসি দিয়ে বলে মিতা।
–কেমন লাগছে তোর? শরীর ভালো আছে? কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
প্রশ্ন করে আবরার।
–না, সামান্য ব্যাথা এই আর কি। আর কোনো সমস্যা নেই।
জবাব দেয় মিতা।
–আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তোকে ফ্লোরে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকতে দেখে।
মন খারাপ করে বলে আবরার।
–আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই।
বলে মিতা।
–মিতা?
মিতার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ডাক দেয় আবরার।
–জি?
–তুই জানিস যে, আমি তোকে খুব ভালোবাসি।
মিতার হাত ধরে বলে আবরার।
–আমি ও তোমাকে খুব ভালোবাসি আরিয়ান ভাইয়া।
মিতার জবাব শুনে আবরারের মনটা খারাপ হয়ে যায়। আবরার যে ভালোবাসার কথা বলেছে মিতা যে সেই ভালোবাসার কথা বলেনি তা আবরার ভালোই জানে। কেনো সবটা এতো জটিল হয়ে গেলো তা বুঝতে পারছে না আবরার। সব কিছু ঠিক থাকলে এখন প্রায় ১০ মাস হয়ে যেতো অরিয়ন আর আফরিনের বিয়ের। এর মধ্যে মিতা আর আবরারের বিয়েটাও হয়ে যেত। কিন্তু, মিতা এখন বড় ভাইয়ের বউ হিসেবে আবরারের সামনে রয়েছে। নিজের ভালোবাসার কথা কিভাবেই বা মিতাকে বলবে এখন আবরার? না বলেও যে থাকতে পারছে না। মিতার প্রতি অরিয়নের পাগলামি সবার নজরের অগোচরে থেকে গেলেও আবরারের অগোচরে যেতে পারেনি।
এই প্রথম আবরার,অরিয়নের চোখে যা দেখতে পেলো তা যেন আফরিনের জন্যও কোনোদিন দেখেনি। এই পাগলামি দিন দিন যতোই বাড়বে ততোই মিতা আবরারের থেকে দূরে সরে যাবে তা পানির মতো পরিষ্কার আবরারের কাছে।
“আচ্ছা মিতা কী কোনোদিন আমার হবে” মনে মনে ভাবে আবরার।
চলবে…
#পারমিতা
#পর্ব_২৩
#লেখিকা_Nabila_Ahmed
ঘুমন্ত মিতার ঘুম হালকা হয় আবছা আবছা কারো কন্ঠ শুনে। কে বা কি বলছে ঘুমের ঘোরে কিছু বুঝতে পারছে না মিতা। একটু পর পর একেক জনের আসার কারণে ভালো মতো ঘুম ও হচ্ছে না মিতার। কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রচন্ড মাথা ধরেছে মিতার। গোংরাতে গোংরাতে মাথায় হাত দেয় মিতা। চোখ খুলে কোথা থেকে শব্দ আসছে তার উৎস খুজতে থাকে।
–আর কিছু কি লাগবে স্যার?
শায়লাকে কথা বলতে দেখে মিতা।
–না।
অরিয়নের জবাব আসে।
শায়লার জন্য অরিয়নকে দেখতে পারছে না মিতা। মিতা আর অরিয়নের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে শায়লা। মাথা ধরে একটু উঠে বসে মিতা। উঠে বসতেই কেমন যেন পরিচিত পরিচিত একটা গন্ধ আসতে লাগলো মিতার নাকে। কোথা থেকে আসছে তা বুঝতে পারছে না মিতা।
অরিয়নের জবাব শুনে শায়লা রুম থেকে বের হয়ে যায়। সামনেই কাউচে বসে আছে অরিয়ন। হাতে কাপ। হয়তো চা বা কফি খাচ্ছে। কিন্তু অবাক হয় অরিয়নের পাশে থাকা সাদা রং এর গ্যালন দেখে। নীল রং এর কিছু দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে। বুঝতে আর বাকি রইল না পরিচিত গন্ধটা আসলে কেরো*সিনের গন্ধ। তাড়াতাড়ি করে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ৮:৫৬ বাজে।
–তুমি এখানে?
প্রশ্ন করে মিতা।
মিতার প্রশ্ন শুনে মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন। এতোক্ষণ চা বা কফি খেতেই ব্যস্ত ছিলো অরিয়ন।
–অপেক্ষা করছি।
কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে অরিয়ন।
–কিসের?
আবারও বলে মিতা।
— ৯ টা বাজার।
জবাব দেয় অরিয়ন।
–সিরিয়াসলি? আর ঐ গ্যালনে কি?
হাত দিয়ে গ্যালন দেখিয়ে বলে মিতা।
–সেটাই যেটার গন্ধ পাচ্ছিস।
কাপ টেবিলে রেখে মোবাইল হাতে নেয় অরিয়ন।
–কেরো*সিন কেনো এনেছো?
নিজের শরীর থেকে চাদরটা সরাতে সরাতে বলে মিতা।
–গোসল করবো তাই, তুই করবি?
বাঁকা হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন।
মিতা আর কিছু বলার আগেই অরিয়ন কাউচ থেকে উঠে দাঁড়ায়। হাতের মোবাইল কাউচে রেখে পাশ থেকেই কেরো*সিনের গ্যালন হাতে তুলে নেয়। গ্যালনের ঢাকনা খোলা শুরু করে অরিয়ন।
–কি করছো তুমি?
বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে মিতা।
অরিয়ন মিতার কথার কোনো উত্তর দিলো না। ঢাকনা খুলতে দেখেই ঘড়ির দিকে আবারও তাকায় মিতা। ৮:৫৯ বাজে। ঢাকনা খুলে গ্যালন হাতে দাঁড়িয়ে রইল অরিয়ন।
–কি শুরু করেছো তুমি? এসবের মানে কি?
অরিয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে মিতা।
–এখনো শুরু করিনি, তবে এখন করবো।
কথাটা বলেই কেরো*সিন ঢালতে শুরু করে অরিয়িন।
–অরিয়ন ভাইয়া, কি করছো তুমি?
মিতার ডাক শুনে দাঁতে দাঁত চেপে রইল অরিয়ন। আরও দ্রুত কেরো*সিন ঢালতে থাকে কাউচ আর টেবিলের উপর।
–অরিয়ন।
চেচিয়ে উঠে মিতা।
অরিয়নের উদ্দেশ্য দেখে মনে হচ্ছে না যা করছে তা বন্ধ করবে। তাতে যেন আরও বেশি মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো মিতার।
মিতার ডাক শুনতেই কেরো*সিন ঢালা বন্ধ করে অরিয়ন। মিতার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
–আমার রুমে যা, পরী।
পকেট থেকে লাইটার বের করতে করতে বলে অরিয়ন।
লাইটার ধরিয়ে মিতার দিকে তাকিয়ে রইল অরিয়ন। অপেক্ষা করছে মিতার অবাধ্য হওয়ার। অরিয়নের কথা শুনে যেন গায়ের রক্ত কিলবিল করতে লাগলো মিতার। দাঁতে দাঁত চেপে খুড়িয়ে খুড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় মিতা। ফুঁ দিয়ে লাইটার অফ করতেই যেন হাসি ফুঁটে উঠলো অরিয়নের ঠোঁটে।
***********************
অরিয়নের রুমের দরজা খুলে ভিতরে আসতেই যেন মন বিষন্ন হয়ে আসলো মিতার। খাটের উপর বসে রুমটা ভালো করে দেখছে মিতা। যেমনটা দেখে গিয়েছিলো ঠিক তেমনটাই আছে। নীলের রাজ্য মনে হচ্ছে ঘরটা। সামনেই টানানো আফরিনের ছবিটা যেন আগের থেকে বেশি চকচক করছে। ছবিটার দিকে তাকাতেই যেন বুক ফেটে যাচ্ছে মিতার। এই রুম, এই ছবি সব কিছু যেন কাঁটা হয়ে বিধতে লাগলো মিতার শরীরে।
নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে কাউকে সহ্য করা যায় না। হোক সে তার ভালোবাসার মানুষ।
এমন নয় মিতা হুট করেই আফরিনকে অপছন্দ বা হিংসা করছে। তাও যেন বুকের মধ্যে হওয়া যন্ত্রণা কমাতে পারছে না মিতা। দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে অরিয়ন। দু হাতে বড় বড় দুটো ব্যাগ। এক পাশে ব্যাগ দুটো রেখেই সরাসরি চলে যায় মিতার সামনে। খাটের বাইরে থাকা মিতার পা দুটো ধরে উপরে তুলে দেয় অরিয়ন।
–কি করছো তুমি?
হুট করে মিতার পা ধরাতে প্রশ্ন করে মিতা।
অরিয়ন কোনো কথা না বলেই শুয়িয়ে দেয় মিতাকে। বেড সাইডের টেবিলের ড্রয়ার থেকে মলম বের করে বসে পড়ে মিতার পায়ের কাছে।মিতার আর বুঝতে বাকি রইল না কি করতে চাচ্ছে অরিয়ন। মলম নিয়ে মিতার পায়ে লাগাতে লাগলো অরিয়ন। হাটার সময় মিতা যে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসেছে তা ঠিকি দেখতে পেয়েছিলো অরিয়ন। মলম লাগাতে ব্যস্ত অরিয়নের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মিতা। অরিয়ন এমন কিছুও করতে পারে তা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না মিতার। নিজের অজান্তেই মিতার চোখ চলে যায় আফরিনের ছবিটার দিকে। পরক্ষণেই মন খারাপ হয়ে যায় মিতার। “তুই ও কি এই অরিয়নের প্রেমে পড়েছিলি?” মনে মনে ভাবে মিতা।
অরিয়ন চোখ তুলে মিতার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় মিতা তাকিয়ে আছে আফরিনের ছবিটার দিকে। নিজেও তাকায় আফরিনের ছবিটার দিকে।
“এই ছবিটা ও তুলতে চাইছিলো না, আমি জোর করে তুলেছিলাম” হুট করে বলে উঠে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে অরিয়নের দিকে তাকায় মিতা। ক্ষণিকের মধ্যে যেন নিজের সব শেষ হয়ে গেলো মিতার। আফরিনের ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে অরিয়ন। চোখেমুখে ফুঁটে উঠেছে ভালোবাসা আর কোমলতা। মিতার জন্য যা কখনো দেখেনি মিতা। ভালো নাই বাসুক, তাই বলে কি একটু স্নেহ আর মায়ার দৃষ্টিতেও তাকাতে পারেনা অরিয়ন? ইদানিং কেনো এতো রুড ব্যবহার করে অরিয়ন তা যেন মাথায় ঢুকছে না মিতা।
“বোকামেয়ে, ও তোকে বিয়ে করতে চায়নি, তোর সাথে থাকতে চায়নি,তাহলে তোর সাথে কেনো ভালো ব্যবহার করবে?” মনে মনে ভাবতে ভাবতেই চোখ ভিজে আসে মিতার। নিজের পা সরিয়ে নেয় মিতা। অরিয়নের হাত থেকে মিতার পা সরে যেতেই মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন। মিতা অন্যপাশ হয়ে শুয়ে আছে। নিজেকে যতোটা পারছে গুটি মেরে রেখেছে যেন অরিয়নের সাথে টাচ না হয়। মিতার মুখটা দেখতে পেলো না অরিয়ন। মিতার শরীরে চাদর টেনে দেয় অরিয়ন। নিজে চলে যায় মিতার প্রয়োজনীয় বাকি জিনিসপত্র আনতে।
****************
–পরী? পরী?
ঘুম ঘুম চোখে কারো ডাক শুনতেই ঘুম ভাঙ্গে মিতার।
মিটমিট করে চোখ খুলতেই সামনে দেখতে পায় অরিয়নকে। সামনে বসে থাকা অরিয়নের চুল ভেজা, মুখে ফুটে আছে মিষ্টি এক হাসি। পরণের কাপড় ও পরিবর্তন করা। উঠে বসতে নিতেই অরিয়ন এগিয়ে গিয়ে মিতাকে ধরে বসতে সাহায্য করে। জানালার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সকাল হয়ে গেছে। গতকাল ঘুমানোর পর সারারাতে আর ঘুম ভাঙ্গেনি মিতার।
–সকাল ৯ টা বাজে। সকালের ঔষধ খাবি কখন? ঔষধ না খেলে কি ভালো হবি?
মিতার শরীর থেকে চাদর সরিয়ে মিতার পায়ে হাত দেয় অরিয়ন।
–ব্যাথা করছে আর?
চিন্তিত সুরে পায়ে টিপ দিয়ে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।
–অল্প অল্প।
অবাক হয়ে জবাব দেয় মিতা। হঠাৎ করে অরিয়নের এই রূপ যেন হজম করতে পারছে না মিতা।
–আবার মলম মালিশ করে দিলেই হবে। দেখবি আর ব্যাথা করবে না।
বলে অরিয়ন।
–যা,তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে। খাবার খেয়ে ঔষধ খেতে হবে।
আবারও বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে কিছুক্ষণ অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে মিতা। দু জন দু জনের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। মিতা চোখ সরিয়ে নিতেই অরিয়ন ও চোখ সরিয়ে নেয় অন্যদিকে। ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে যায় মিতা।
****************
অরিয়ন খাটের উপর নিজের হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে অপেক্ষা করছে মিতার। মিতাকে বের হতে দেখেই আলতো করে এক হাসি দেয় অরিয়ন। মিতাও আলতো এক হাসি ফিরিয়ে দেয়। অরিয়নের পাশে বসে ট্রে হাতে নিতে চাইলেই ট্রে সরিয়ে নেয় অরিয়ন।
–কি?
বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে মিতা।
অরিয়ন কোনো উত্তর না দিয়ে ট্রে বিছানায় রেখে আবারও মিতার পা ধরে খাটের উপর তুলে দেয়। এরপর ট্রে হাতে আরও এগিয়ে যায় মিতার দিকে।
চামচ নিয়ে স্যুপ তুলে ধরে মিতার মুখের কাছে। মিতার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না অরিয়ন এভাবে কেয়ার করছে মিতার। ” তবে কি তুমিও কিছু ফিল করছো আমার জন্য?” মনে মনে ভাবে মিতা। কথাটা ভাবতেই যেন মনে মনে খুশি হলো মিতা। অরিয়ন মনোযোগ দিয়ে মিতাকে স্যুপ খায়িয়ে দিচ্ছে। স্যুপ খেতে খেতেই মিতার চোখ যায় আফরিনের ছবিটার দিকে। “আফরিন” যার জায়গা কোনোদিন নিতে পারবে না মিতা। “আচ্ছা যদি কোনোদিন আফরিন ফিরে আসে তাহলে?” কথাটা ভাবতেই যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে মিতার।
“ধোকা দেওয়ার পরও যদি অরিয়নকে আফরিনকে ভালোবাসতে পারে,তাহলে কি আফরিন ফিরে আসলেও মেনে নিবে অরিয়ন? আমাদের বিয়ে হয়েছে তাও?” কথাগুলো ভাবতেই যেন খাবার আর গলা দিয়ে নামছে না মিতার। বমি, বমি লাগছে মিতার।
–কি হয়েছে?
চামচ হাতে অপেক্ষা করতে থাকা অরিয়ন প্রশ্ন করে মিতাকে। অরিয়নের ডাক শুনতেই ধ্যান কাটে মিতার। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে অরিয়নের দিকে তাকায়।
–কিছুনা।
আলতো এক হাসি দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে মিতা।
–ডাক্তার বলেছে আর ২/৩ দিন রেস্ট করলেই আবার কলেজ যেতে পারবি তুই।
ঔষধ খুলে মিতার হাতে দিয়ে বলে অরিয়ন।
–আর আমার রুম?
প্রশ্ন করে মিতা।
মিতার কথা শুনে স্থির হয়ে রইল অরিয়ন।
–আমার রুমে কখন থেকে ফিরতে প…
–এখানে কি সমস্যা?
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে অরিয়ন।
–মানে?
–মানে এখানে থাকলে কি সমস্যা? ঐ রুমে কি আছে? ঐ রুমে এমন কি আছে যা তুই এখানে পাচ্ছিস না বা করতে পারছিস না?
সন্দেহের নজরে মিতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–তেমন কোনো কারণ ন…
–কারণটা কি আরিয়ান?
দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–কিহ?
আরিয়ান কোথা থেকে আসলো এই কথায় বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–আরিয়ানের রুম তোর রুমের কাছাকাছি সেটাই কি কারণ?
মিতার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলে অরিয়ন।
–না, তেমন কিছুই না।
সাথে সাথে জবাব দেয় মিতা।
মিতার উত্তর শুনে কিছুটা রাগ কমে অরিয়নের।
–তাহলে এখানে থাকতে চাচ্ছিস না কেনো?
মিতার চুল কানের পেছনে গুজে দিতে দিতে বলে অরিয়ন।
–এমনিতেই।
জবাব দেয় মিতা।
মিতা কিভাবে অরিয়নকে বোঝাবে যে এই রুমে দম বন্ধ হয়ে আসছে মিতার। প্রতি মিনিটে মনে হচ্ছে অন্য কারো জায়গায় নিজের সংসার সাজানোর চেষ্টা করছে মিতা। এই রুমের সব কিছু যেন বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে ” এই রুম আফরিনের, অরিয়নের মন আফরিনের,অরিয়ন আফরিনের”।
–এখানেই থাকতে হবে তোকে।
অরিয়নের কথা শুনে ঘোর কাটে মিতার। মিতার কাছাকাছি আসা অরিয়ন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিতার দিকে। কানের পাশে থাকা হাত নিজে নিজেই চলে আসে মিতার ঠোঁটের কাছে। হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মিতার নিচের ঠোঁট স্পর্শ করে অরিয়ন। নিজের ঠোঁট মিতার ঠোঁটের কাছাকাছি নিতেই মুখ সরিয়ে নেয় মিতা।
অরিয়ন দ্রুত সরে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।
–আমি অফিস যাচ্ছি, টাইম মতো খাবার আর ঔষধ খেয়ে নিস।
মিতার দিকে না তাকিয়েই বলে অরিয়ন।
–হুম।
সায় মিলায় মিতা।
অরিয়ন আর কোনো কথা না বলে একবার আড় চোখে মিতার দিকে তাকিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
******************
বিকাল ৪ টা।
রুমে বসে মোবাইকে গেমস খেলছে মিতা। একা একা যেন নিজের সময় ই কাটে না মিতার। যদিও একটু আগে বন্ধুদের সবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছে মিতা। আগামীকাল সবাই আসবে মিতাকে দেখতে। মায়া চৌধুরী দুপুরে মিতাকে খাবার আর ঔষধ খায়িয়ে গেছে। একটা মানুষ আর কতক্ষণ ঘুমাতে পারবে তা মিতা জানেনা। এতো ঘুমাতে ঘুমাতে এখন আর ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই মিতার চোখে। তাই তো সময় কাটাতে গেম খেলছে মিতা।
–মিতা?
দরজায় কড়া নাড়ার সাথে সাথে শায়লার কণ্ঠ শুনতে পায় মিতা।
–জি শায়লা আপু?
বিছানা থেকেই চেচিয়ে বলে শায়লা।
–ঘুমিয়ে না থাকলে রুমে আসছি।
অনুমতি চেয়ে বলে শায়লা।
–ঘুমাইনি আপু, আসতে পারো।
জবাব দেয় মিতা।
মিতা জবাব দিতেই দরজা খুলে ভিতরে আসে শায়লা। দরজার সামনে দাঁড়ায় শায়লা।
–ওড়না নিয়ে নেও, দু জন লোক আসছে রুমে।
–ওকে।
শায়লার কথা শুনে মোবাইল রেখে গায়ে ওড়না নেয় মিতা। আবারও মোবাইল নিয়ে গেম খেলতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
–আপনারা আসতে পারেন।
শায়লা বলে।
একটু পরেই দুজন লোক রুমে প্রবেশ করে। মিতা সেদিকে নজর না দিয়ে গেম খেলতে ব্যস্ত হয়ে পরে। গেম খেলতে খেলতে বোর হয়ে যাচ্ছে মিতা, মোবাইল রাখতে নিলেই বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে লোক দুটোর দিকে। তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নেমে আসে মিতা। দু কদমে চলে যায় শায়লার কাছে।
–কি করছেন আপনারা?
হঠাৎ করে চেচিয়ে উঠাতে লাফিয়ে উঠে শায়লা।
–শায়লা আপু, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? অরিয়ন ভাইয়া জানতে পারলে খুব রাগ করবে। আফরিন আপুর ছবিতে হাত দেওয়ার সাহস কোথা থেকে পেলে তোমরা!
রাগ করে বলে মিতা।
–অরিয়ন স্যারের নির্দেশ।
জবাব দেয় শায়লা।
চলবে….
#পারমিতা
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_Nabila_Ahmed
রুম থেকে আফরিনের সব ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আফরিনের কাপড়চোপড় যা আলমারিতে রাখা ছিলো তাও একটু আগে শায়লা এসে নিয়ে গেছে।
–আমার মনে হচ্ছে অরিয়ন ধীরে ধীরে মুভ অন করছে।
মিতার পাশে বসে থাকা মায়া চৌধুরী বলে।
–জানিনা মা। অরিয়ন ভাইয়া অনেক কনফিউজিং, এখন এক তো একটু পরেই আরেক।
জবাব দেয় মিতা।
–ওর সময় দরকার মিতা। আফরিনের প্রতি ওর ভালোবাসা সত্যি ছিলো, ৬ টা বছর ও নিজের সব দিয়ে আফরিনকে ভালোবেসেছে, সেই আফরিনকে ভুলতেও ওর সময় দরকার। নিজেকে মানিয়ে নিতে সময় লাগে।
বলে মায়া চৌধুরী।
–তুমি এতো সহজে কীভাবে সব বলে ফেলো মা?
মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–সহজে সব বলে ফেলতে পারি কারণ কথাগুলো সত্যি। আর তুই ও এতো দ্বিধাবোধ করিস না। এখন এই সংসার তোর, অরিয়ন তোর স্বামী।
মিতার হাত ধরে বলে মায়া চৌধুরী।
–বিয়ে করা অনেক সহজ, মিতা। কিন্তু সেই পবিত্র বন্ধন টিকিয়ে রাখা সব চাইতে কঠিন কাজ। ভালোবাসার সম্পর্কে শুধু ভালোবাসা থাকলেই হয় কিন্তু বিয়ের সম্পর্কে ভালোবাসার সাথে সাথে সৎ জীবনসঙ্গী, একে অপরের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা, কম্প্রোমাইজ করার মন মানসিকতা থাকতে হয় । হয়তো অরিয়ন তোকে এখনি সব দিতে পারবে না কিন্তু ও কেমন তুই আর আমরা সবাই ভালো করেই জানি।
মিতার হাত ধরে কথাগুলো বলে মায়া চৌধুরী।
–জ্বি।
সায় মিলায় মিতা।
–আমরা চাইলেই আমাদের অতীত ভুলতে পারিনা। চাইলেও আমরা তার প্রভাব বর্তমানে এড়িয়ে যেতে পারিনা। অতীত বর্তমানে এবং বর্তমান ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলবেই।
কথাগুলো বলে একটু থামে মায়া চৌধুরী।
মিতা মনোযোগ দিয়ে মায়া চৌধুরীর কথা শুনছে।
–অরিয়ন ও আটকাতে পারবে না অতীতের প্রভাব তোদের সম্পর্কে পড়তে। তবে কোনোদিন যদি মনে করিস, তোর ১০০% চেষ্টা করার পরও কোনো কিছু পরিবর্তন হচ্ছে না, তখন তুই সেটাই করবি যেটা তোর ভালো মনে হবে। আর তোর সব ধরণের সিদ্ধান্তে তোর মা, আমি পাশে আছি।
আবারও বলে উঠে মায়া চৌধুরী।
মায়া চৌধুরীর কথাগুলো শুনতেই যেন কান্না চলে আসলো মিতার। কে বলে মায়া চৌধুরী মিতার আসল মা না? মায়েরা তো তার সন্তানের জন্য এমন ই করে। আফরিন চলে যাওয়াতে মায়া চৌধুরী গোপনে গোপনে কতটা কান্না করেছে তা মিতা ভালোই জানে। আফরিনের প্রতি তার ভালোবাসা আর মিতার প্রতি তার ভালোবাসায় কোনোদিন পার্থক্য দেখেনি মিতা। জড়িয়ে ধরে মায়া চৌধুরীকে।
–তুমি অনেক ভালো, মা। খুব খুব ভালো।
জড়িয়ে ধরা মিতা মায়া চৌধুরীর কাধে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলে।
–কান্না করছিস কেনো বোকা মেয়ে? থামা।
মিতার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে মায়া চৌধুরী। নিজেরও চোখ ভিজে আসছে মায়া চৌধুরীর।
মায়া চৌধুরীর কথা শুনে চোখের পানি মুছতে মুছতে আবারও নিজের জায়গায় বসে মিতা। মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মা বলে ডাকা নারীর দিকে।
–তোমাকে একটা প্রশ্ন করি,মা?
প্রথমে একটু সংকোচবোধ করে বলে মিতা।
–বল না, আমাকে প্রশ্ন করতে আবার পারমিশন কবে থেকে লাগে?
হেসে জবাব দেয় মায়া চৌধুরী।
–আনিকা আন্টির সাথে কি আমার বাবা মায়ের কিছু সমস্যা হয়েছিলো?
কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
মিতার কথা শুনতেই যেন মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মায়া চৌধুরীর। অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ক্ষনিকেই।
–এরকম কথা কেনো বলছিস?
একটু আমতা আমতা করে বলে মায়া চৌধুরী।
–কারণ উনি আমাকে সহ্য করতে পারে না, মা। ঘৃণা নিয়ে কথা বলে আমার সাথে, যা আমি এখন সবই বুঝতে পারছি।
বলে মিতা।
–আসলে…আসলে আফরিনকে খুব ভালোবাসতো তো তাই, এখন আফরিন নেই আর তুই আফরিনের জায়গায় আছিস তাই হয়তো তা মেনে নিতে পারছেন না উনি।
মিতার নজর এড়িয়ে বলে মায়া চৌধুরী।
–কিন্তু আপু চলে যাওয়ার আগেও এরকম ছিলো উনি।
মায়া চৌধুরীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে মায়া।
–তুই যেমন ভাবছিস তেমন কিছুই না। আনিকা আপা একটু অন্যরকম এই আর কি।
কথাটা বলেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় মায়া চৌধুরী।
–অরিয়নের চলে আসার সময় হয়ে গেছে। আমি যাচ্ছি।
বলে মায়া চৌধুরী।
–ওকে।
জবাব দেয় মিতা।
এক দৃষ্টিতে মায়া চৌধুরীর চলে যাওয়া দেখতে থাকলো মিতা। কথাটা উঠাতেই কেমন যেন চাহারার রঙ বদলে গিয়েছিলো মায়া চৌধুরীর। মিতা সবটাই খেয়াল করেছে। মায়া চৌধুরী কখন মিথ্যে বলছে আর কখন সত্যি তা বুঝার মতো ক্ষমতা আছে মিতার।
“সত্য উন্মোচন হবেই” বিরবির করে বলে মিতা।
******************
বেডের সাথে হেলান দিয়ে গল্পের বই পড়ছে মিতা। রাত প্রায় ১১ টা হয়েছে তাও ঘুম নেই মিতার চোখে। গেম খেলতে খেলতে বোর হয়ে এবার গল্পের বই তুলে নিয়েছে মিতা। মানুষ বলে বই ধরলেই নাকি ঘুম আসে কিন্তু মিতার চোখে ঘুমের চিহ্নও নেই। “বুদ্ধু, সেটা টেক্সট বই,গল্পের বই না” নিজেই নিজেকে উত্তর দেয় মিতা।
দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে অরিয়ন। কানের কাছে মোবাইল ধরা। কোর্ট হাতে, শার্টের বাটন খোলা।
–যাই হয়ে যাক, এই প্রোজেক্টটা আমাদের পেতেই হবে। তুমি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের সাথে মিটিং ঠিক করো আমার।
মোবাইলে কথা বলতে বলতে সোফার সামনে এসে দাঁড়ায় অরিয়ন। কোর্ট সোফার উপর রেখে মিতার দিকে তাকায়। মিতাও অরিয়ন কি করছে তা দেখার জন্য অরিয়নের দিকে তাকায়।
–হুম…হ্যাঁ ঠিক আছে। তাহলে মিটিং ফিক্সড করে আমাকে জানাও। আর xy কোম্পানি সম্পর্কে যেই খবর নিতে বলেছিলাম তা নিয়েছো?
মিতার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে বোঝায় খাবার খেয়েছে কি না।
মিতাও মাথা নাড়িয়ে বোঝায় খেয়েছে।
–ওকে।
বলে কল কাটে অরিয়ন।
–ঔষধ খেয়েছিস?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–হ্যাঁ।
জবাব দেয় মিতা।
মিতার উত্তর শুনে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায় অরিয়ন। একটু পরেই রুমে খাবার নিয়ে আসে শায়লা।
–এখানে খাবার আনলে যে?
প্রশ্ন করে মিতা।
–অরিয়ন স্যার খেয়ে আসেনি। বললো খাবার রুমে পাঠিয়ে দিতে তাই নিয়ে এসেছি।
জবাব দেয় শায়লা।
–অহ।
শায়লা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে অরিয়ন। ড্রেস চেঞ্জ করে টি শার্ট আর ট্রাউজার পরেছে। টেবিলে বসে খাবার খাওয়া শুরু করে অরিয়ন। মিতাও নিজের বইয়ের দিকে মনোযোগ দেয়। মিতার মনোযোগ ভাঙ্গে বইয়ের উপর কারো ছায়া পড়াতে। চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পায় অরিয়ন দাঁড়িয়ে আছে।
–একটু ঐদিকে যা, আমি বসবো।
অরিয়নের কথা শুনেই মিতা সরে বসে।
মিতা সরে বসতেই অরিয়ন খাটে উঠে বসে।
–কি করছো?
হঠাৎ করে অরিয়ন মিতার পিছনে যেতেই প্রশ্ন করে মিতা।
অরিয়ন মিতার কথার কোনো উত্তর দিলো না। মিতার পিছনে গিয়ে বসে পড়ে। নিজের দু হাত দিয়ে মিতার কোমরে ধরে।
–অরিয়ন ভা…কি করছো তুমি?
ভাইয়া বলতে গিয়েও বললো না মিতা। অরিয়ন থেকে দূরে সরার চেষ্টা করতে করতে বলে।
–চুপ করে বসে থাক।
মিতার কোমর শক্ত করে ধরে বলে অরিয়ন।
মিতা নিজের জায়গায় চুপ করে বসে রইল। নার্ভাসনেস যেন হাজারগুন বেড়ে গেছে মিতার। হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। হঠাৎ করে অরিয়নের এতো কাছাকাছি আসার কারণ বুঝতে পারছে না মিতা। মিতার সব প্রশ্নের উত্তর মিললো যখন অরিয়ন মিতার চুলের খোঁপা খুলে দিলো। চুলের মধ্যে নিজের হাত গুজিয়ে দেয় অরিয়ন।
–চুলের এই অবস্থা কেনো? সারাদিনে চুল বাধার সময় হয়নি?
নিজের নাক মিতার চুলের মধ্যে গুজিয়ে দিয়ে বলে অরিয়ন। অরিয়ন মিতার চুল থেকে ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত। মিতাকে দেখতেই কেনো যেন প্যারিসে মিতার কাছ থেকে যেই ঘ্রাণটা পেয়েছিলো সেই ঘ্রাণটার তীব্র আকাঙ্খা জাগলো অরিয়নের।
বড় করে নিঃশ্বাস নিতেই পরিচিত সেই ঘ্রাণটা পেলো অরিয়ন। মুখে ফুটে উঠে আলতো এক হাসি। চুল থেকে মুখ উঠিয়েই চিরুনি নেয় অরিয়ন। মিতা মাথায় চিরুনি অনুভব করতেই অবাক হয়ে যায়। কি হচ্ছে অরিয়নে? হঠাৎ করে এতো এতো যত্ন, এতো আদর কি জন্য তা বুঝতে পারছে না মিতা।
–কি করছো তুমি?
কনফিউজড মিতা প্রশ্ন করে।
–চুল আচরিয়ে দিচ্ছি, দেখতে পাচ্ছিস না? এতো সুন্দর চুলগুলো এরকম বাদরের মতো করে রাখিস কেনো?
চুল আচরাতে আচরাতে বলে অরিয়ন।
–তুমি কি ঠিক আছো?
প্রশ্ন করে মিতা।
–মানে?
চিরুনি রেখে আবারও চুলে হাত দিতে দিতে বলে অরিয়ন।
–মানে কেমন যেন অন্যরকম লাগছে তোমাকে।
বলে মিতা।
–তাই নাকি?
মিতার চুলে বেনী করতে করতে বলে অরিয়ন।
–হ্যাঁ তাই। আর….ছবিটা তুমি সরাতে বলেছো?
আমতা আমতা করে প্রশ্ন করে মিতা।
মিতার কথা শুনে অরিয়নের হাত স্থির হয়ে রইল মিতার চুলে।
–হ্যাঁ।
আবারও বেনী করতে করতে জবাব দেয় অরিয়ন।
–কেনো?
প্রশ্ন করে মিতা।
–কারণ ছবিটা তোকে অস্বস্তি অনুভব করাচ্ছিলো।
অনায়াসে বলে ফেলে অরিয়ন।
–তাতে তোমার কি?
নিজের হাত শক্ত করে মুঠ করে রেখে প্রশ্ন করে মিতা।
এই প্রশ্নের উত্তর কি হবে তা মিতা জানেনা, হয়তো বা জানে। তাও যেন জিজ্ঞেস করতে মন চাইলো। অরিয়ন মিতার চুলে বেনী করা শেষ করে মিতার বাহু ধরে নিজের দিকে ফেরায়। মিতা অরিয়নের দিকে ঘুরতেই অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে।
–আমার দ্বারা হয়তো ২য় বার কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয় পরী।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথাটা শুনতেই যেন ক্ষণিকের জন্য মনের মধ্যে জাগ্রত আশার আলো নিভে গেলো।মন খারাপ হয়ে যায় মিতার।
–কিন্তু আমি তোকে হারাতে চাই না। তোর জন্য হলেও আমি মুভ অন করতে চাই এই জীবন থেকে। আমি চাই আমরা দু জন একবার একটা সুযোগ দেই আমাদের এই সম্পর্ককে। যেখানে আমি চেষ্টা করবো আবারও ভালোবাসার, তোর প্রতি লয়াল থাকার, তোকে স্ত্রী হিসেবে প্রাপ্য অধিকার ও সম্মান দেওয়ার। বিনিময়ে…
মিতার দু হাত ধরে কথাগুলো বলে একটু থামে অরিয়ন।
–বিনিময়ে তুই শুধু আমার হয়ে থাকবি। আমাকে কখনো ছেড়ে যাবি না।
মিতার হাত শক্ত করে ধরে বলে অরিয়ন।
গত কয়েকমাসে মিতার প্রতি অরিয়নের যে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে তা ভালোই বুঝতে পেরেছে অরিয়ন। হয়তো তা ভালোবাসা না, হয়তো এই অনুভূতি মিতা বা অরিয়ন কারো জন্যই ভালো না, তবুও মিতাকে ছাড়ার কথা বা মিতাকে অন্য কারো সাথে ভাবতেই যেন মাথা খারাপ হয়ে যায় অরিয়নের। ইচ্ছে করে সব কিছুতে আগুন ধরিয়ে দিতে। এতোদিন এই অনুভূতি এড়িয়ে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে অরিয়ন কিন্তু সেদিন আবরারের কথা শোনার পর থেকে কেনো জানি মিতাকে হারানোর ভয় পাগল করে দিচ্ছে অরিয়নকে। তাই মিতাকে নিজের অনুভূতির কথা বলতে রাজি হয়ে যায়।
অরিয়নের সামনে বসে থাকা মিতা চুপ করে অরিয়নের কথাগুলো শুনলো। অরিয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে কোনো ছলনা বা মিথ্যের চিহ্ন খুজতে লাগলো কিন্তু পেলো শুধু সত্যতা। অরিয়নের মনে যা আছে তাই যেন চোখে প্রকাশ পাচ্ছে। এই সব কিছু শুনে হয়তো খুশিতে লাফাতো মিতা কিন্তু একটা কথাই এই খুশি আটকে রেখেছে “আমার দ্বারা হয়তো ২য় বার কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়”। ভালোবাসতে না পারলে কিভাবে? মিতা যে সব কিছুর সাথে ভালোবাসাটাও চায়।
–তুমি কি কখনোই ভালোবাসবে না?
প্রশ্ন করে মিতা।
–আই ক্যান ট্রাই টু। কিন্তু তোকে আমি এমনটা কখনো ফিল করাবো না যে, তুই সুযোগটা দিয়ে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। সুযোগ দিবি তুই?
মিতার দিকে এগিয়ে এসে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের চোখে কেমন যেন ডেস্পারেশন প্রকাশ পাচ্ছে। সাথে সাথে প্রকাশ পাচ্ছে আশার আলো।
–আমার একটু সময় চাই ভাবতে।
অরিয়নের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে বলে মিতা।
–কতোক্ষণ? ৫ মিনিটা? ১০ মিনিট?
অরিয়নের চোখ থেকে যেন আশার আলো পুরোটাই চলে গেল। ডেস্পারেশন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
–সিরিয়াসলি? ৫/১০ মিনিট?
অবাক হয়ে বলে মিতা।
–তাহলে? কতোক্ষণ সময় চাস তুই? ১ ঘন্টা?
অধৈর্য্য হয়ে বলে অরিয়ন।
–কম করে হলেও ২/৩ দিন। আমার ভাবতে হ..
–ফা* নো। ১ দিনের বেশি আমি সময় দিতে পারবো না।
মিতার গাল ধরে বলে অরিয়ন।
–কেনো? ১ দিনের বেশি সময় দিলে কি হবে?
হঠাৎ করে অরিয়নের বিহেভিয়ারে এরকম চেঞ্জ দেখে যেন কিছুই বুঝতে পারছে না মিতা। তাই প্রশ্ন করে।
–তুই দেখতে পারছিস না? আমার মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। তোর ডিসিশন না জানা পর্যন্ত আমি স্বস্তি পাবো না। আর আমার মনে হচ্ছে এভাবে আমি বেশিক্ষণ ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারবো না। তাই যা জানানোর কালকের মধ্যে জানা।
মিতার কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে বলে অরিয়ন।
–ওকে।
জবাব দেয় মিতা।
–তবে..
একটু থেমে বলে অরিয়ন।
–তবে কি?
জানতে চায় মিতা।
–তবে, তোর উত্তর যদি না হয়…তাহলে বলবো আমার সামনে আসিস না তুই। দূরে কোথাও সরে থাকিস।
মাথা নিচু করে বলে অরিয়ন।
–কেনো?
ভ্রু কুচকে বলে মিতা।
–কারণ তোর কাছে আমি স্বস্তি পাচ্ছি, শান্তি পাচ্ছি লাভ। আমার মনের মধ্যে থাকা এই অস্থিরতা কমানোর জন্য হলেও আমি তোকে খুজে বের করে নিয়ে আসবো।
কথাটা বলে একটু থামে অরিয়ন। চোখ তুলে তাকায় মিতার দিকে।
–তোর চোখে হয়তো আমি দি গ্রেট অরিয়ন কিন্তু আমি জানি, সত্যিকারের আমি একটা মন্সটার থেকেও খারাপ।
অনায়াসে কথাটা বলে ফেলে অরিয়ন। যেন মিতার কাছে ভয় দেখানোর মতো কিছুই বলেনি অরিয়ন।
অরিয়ন আর অপেক্ষা না করে নিজের সাইডে গিয়ে শুয়ে পরে। মিতা নিজের জায়গায় বসে রইল। ” কি বলছে অরিয়ন? মন্সটার থেকেও খারাপ? কিসের খারাপ? ছোট থেকে দেখে আসছে আমি অরিয়নকে, তাহলে? তাহলে কি এই কারণেই আপু অন্যকারো প্রেমে পড়েছিলো? ” ভাবে মিতা
“আসলেই কী তুমি মন্সটার থেকেও খারাপ? নাকি সবটাই আমার ডিসিশন পরিবর্তন করার একটা পন্থা? ” ঘুমন্ত অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে মিতা।
চলবে……