পারমিতা পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
119

#পারমিতা
#পর্ব_৩৪
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

ড্র‍য়িং রুমে বসে কফি খাচ্ছে অরিয়ন। হাতে পাশেই ল্যাপটপ রাখা। মিতার সাথে কথা বলা শেষ করে নিজের রুমে চলে যায় অরিয়ন। গতকাল রাতে মিতাকে দেখবে বলে বাড়িতে তাড়াতাড়ি চলে আসে অরিয়ন। কিন্তু মিতা তখন নিজেদের বাড়ি চলে গেছে। গেস্ট রুম থেকে বের হয়ে যেতে নিয়েও বের হলো না অরিয়ন। বিছানায় নিজের গা এলিয়ে দেয়। মিতার সব কিছুই যেন স্বস্তি নিয়ে আসছে অরিয়নের জীবনে। খালি রুমটাও যেন অরিয়নকে ফিল করাচ্ছে মিতার উপস্থিতি। শুয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো খেয়াল করেনি অরিয়ন। সকালে ঘুম ভাঙ্গলে অপেক্ষা করতে থাকে মিতার। মিতা যখন আসলো তখন এই ভেবে রাগ উঠে গেলো অরিয়নের যে, মিতা নিজেকে অরিয়নের থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে।

কফি খেতে ব্যস্ত থাকা অরিয়নের সামনে হাবিব চৌধুরী এসে দাঁড়ায়। মাথা উঁচু করে নিজের বাবার দিকে তাকায় অরিয়ন।

–কিছু বলবে?
কফি মগ টেবিলের উপর রেখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

হাবিব চৌধুরী কোনো জবাব দিলো না। অরিয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

–কিছু কী হয়েছে?
বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–ঠাসসসসসসসসসসস।

হঠাৎ করে বিদ্যুতের গতিতে হাবিব চৌধুরীর হাত গিয়ে স্পর্শ করে অরিয়নের গালকে। থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছেন হাবিব চৌধুরী। হাবিব চৌধুরীর থাপ্পড়ে ব্যাথা পাইনি অরিয়ন। তাও হঠাৎ করে এরকম হওয়ায় মুখ অন্য দিকে সরে গেলো। অরিয়ন অবাক হয়ে নিজের বাবার দিকে তাকায়।

–এতো বড় সাহস তোর? তুই মিতার গায়ে হাত তুলিস?
অরিয়নের শার্টের কলায় ধরে বলে রাগান্বিত হাবিব চৌধুরী।

এতোক্ষণে হাবিব চৌধুরীর রাগ বুঝতে পারছে অরিয়ন। তাও কিছু বললো না। মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল অরিয়ন।

–এই শিক্ষা দিয়েছি তোদের? কাপুরুষের মতো নিজের স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার?
অরিয়নের কলার ধরা অবস্থায় চেঁচাতে থাকে হাবিব চৌধুরী।

–জবাব দে, কী জন্য মিতার গায়ে হাত তুলেছিস?
আবারও প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

কি জবাব দিবে অরিয়ন? এই যে মিতার ঐ কথাটা শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো অরিয়নের? নাকি মিতা অরিয়ন সম্পর্কে এমনটা ভাবতে পারে তা বুঝে কষ্ট লাগছিলো অরিয়নের তা? নাকি নিজেকে প্রতিবার মিতার সামনে হেল্পলেস মনে হয় তা? নাকি নিজের কোনো কিছুই আর কন্ট্রোল করার ক্ষমতা নেই অরিয়নের তা?
অরিয়ন কোনো জবাব না দিয়েই চুপ করে রইল।

–জবাব দে অরিয়ন, তা না হলে আমি ভুলে যাবো তুই আমার ছেলে।
চিৎকার করে বলে হাবিব চৌধুরী।

আনিকা চৌধুরী বাইরে থেকে সরেমাত্র বাড়িতে পা দিয়েছে। বাড়িতে ঢুকতেই ড্রয়িং রুমে হাবিব চৌধুরী আর অরিয়নকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে যায়। হাতে থাকা ব্যাগ ফেলেই দৌড়ে চলে যায় দু জনের কাছাকাছি।

–হাবিব ছাড়ো, কি করছো তুমি? ছাড়ো বলছি।
হাবিব চৌধুরীর হাত ধরে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে আনিকা চৌধুরী।

–ছেড়ে দিবো? তোমার গুনধর ছেলেকে জিজ্ঞেস করো কি করেছে ও।
আনিকা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।

–কী করেছে? তুমি ওর কলার ছাড়ো।
আনিকা চৌধুরী হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে।

আনিকা চৌধুরীর চেষ্টায় হাত ছেড়ে দেয় হাবিব চৌধুরী। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অরিয়নের দিকে।

–কী করেছিস তুই? হাবিব এতো রেগে গেলো কেন?
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।

অরিয়ন কিছু না বলে চুপ করে রইল।

–কী হয়েছে বল?
আবারও প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।

–বল, বল তোর মাকে যে তোকে শিক্ষা দিয়েছি আমরা। বল যে, নিজের ওয়াইফের গায়ে হাত তুলিস তুই।
বলে হাবিব চৌধুরী।

–কীহ?
অবাক হয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।

–কীহ না। বলো হ্যাঁ। মিতাকে থাপ্পড় মেরেছে। ভাগ্যিস আমি দেখেছিলাম তা না হলে…কতদিন ধরে এসব করে আসছিস?বল, জবাব দে।
অরিয়নের দিকে আবারও এগিয়ে যেতে যেতে বলে হাবিব চৌধুরী।

–থামো হাবিব। এই জন্য তুমি অরিয়নের গায়ে হাত তুলেছো?
অবাক হয়ে হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।

–ঐ মেয়েটা কিছু করেছে বলেই মে*রেছে। অরিয়ন শুধু শুধু গায়ে হাত তোলার মতো ছেলে না।
বলে আনিকা চৌধুরী।

–আর ইউ সিরিয়াস আনিকা?
অবাক হয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।

আনিকা চৌধুরী কিছু বললো না। নিজের একনিষ্ঠ মতামতে স্থির রইল।

–যাই করুক, গায়ে হাত তোলার অধিকার ওর নেই।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে হাবিব চৌধুরী।

–ছেলে মেয়ে নষ্ট হয়ে গেলে তাকে শাসন করাত অধিকার সবার আছে। আর ঐ মেয়ে কতটা ভালো তা জানা আছে আমার। দোষ ঐ মেয়ের আমি জানি।
বলতে থাকে আনিকা চৌধুরী।

অরিয়ন নিজের হাত শক্ত করে মুঠ করে রেখেছে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরা।

–তুমি আর তোমার ছেলে একই রকম। এখন মনে হচ্ছে, ওর জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি তোমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে।
কথাটা বলেই ড্রয়িং রুম থেকে চলে যায় হাবিব চৌধুরী।

–তোর বাবার কথায় কিছু মনে করিস না। আমি জানি তোর কোনো দোষ নেই। হাতে ব্যান্ডেজ করা কেন? হাত কাটলো কীভাবে?
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে নিতেই হাতের দিকে চোখ যায় আনিকা চৌধুরী।

–তেমন কিছু না।
কথাটা বলেই ল্যাপটপ নিয়ে ড্রয়িং রুম থেকে চলে যায় অরিয়ন।

আনিকা চৌধুরী নিজের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। “এই মেয়েটা এখন বাবা ছেলের মধ্যেও সমস্যা শুরু করে দিয়েছে। ম*রে গেলেও বাঁচতাম” মনে মনে বলে আনিকা চৌধুরী।

******************

আজ আফরিনদের বাড়িতে পার্টি রাখা হয়েছে। মিতা সকাল সকাল এই বাড়িতে চলে এসেছে। রাতে হাবিব চৌধুরী, আনিকা চৌধুরী, অরিয়ন ও আবরার আসবে। পুরো পার্টিটা সারপ্রাইজ হিসেবে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে মায়া চৌধুরী। খুশিতে আফরিনকে সব বলেই দিয়েছে, লুকাতে পারেনি। আফরিন যদিও প্রথমে না করেছিলো কিন্তু নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করতে শেষমেশ রাজি হয়ে যায়।

পার্টিটা ক্লাবে না রেখে বাড়িতেই আয়োজন করার ব্যবস্থা করেছে মায়া চৌধুরী। পুরো বাড়ি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ড্রয়িংরুম পুরো খালি করে এক পাশে স্টেজ করা হয়েছে। অন্য পাশে সবার বসার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকেই মায়া চৌধুরীর সাথে হাতে হাতে এই কাজ ঐ কাজ করছে মিতা। আফরিন ও বসে নেই, আফরিনও টুকিটাকি কাজ করছে।

**************

সন্ধ্যা ৭ টা।

বাড়িতে মেহমান আসা শুরু করেছে। মায়া চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরী রেডি হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মেহমানদের স্বাগতম জানাচ্ছে।

আফরিনের রুমে বসে আছে আফরিন আর মিতা। আফরিনের গায়ে সাদা রঙের ফুলহাতা একটা গাউন। মুখে হালকা পাতলা মেকাপ করা হয়েছে। কাধ পর্যন্ত থাকা চুলগুলো এখন খানিকটা বড় হয়েছে তাই চুল ছেড়ে রেখেছে আফরিন। মিতার চোখে পানি, দৃষ্টি আফরিনের গাউনের দিকে। এই আফরিন এক সময় ফুলহাতা জামা পছন্দ করতো না কিন্তু আজ, আজ শরীরের দাঁগ ঢাকতে ফুলহাতা জামা পড়তে হয়েছে আফরিনকে।

–তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, মিতা।
চুল আঁচড়াতে আচঁড়াতে বলে আফরিন।

–এইতো আপু, এখন ই যাচ্ছি। তুই নিচে চলে যাও। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করবে।
হাতে নিজের গাউন নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার কাছে গিয়ে বলে মিতা।

–ওকে। বেশি লেট করবি না কিন্তু।
কথাটা বলেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আফরিন।

মিতাও ওয়াশরুমে চলে যায়। আফরিন ধীরে ধীরে হেটে বারান্দায় আসে। পুরো বাড়ি আজ হরেক রকমের লাইটিং দিয়ে সাজানো। সিড়িগুলো ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। নীল গোলাপ দিয়ে। আফরিনের পছন্দের রঙ।
নিচে নামতেই মায়া চৌধুরী দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে আফরিনকে। এতোদিন পর আফরিনকে দেখতে সকলেই হাজির হয়েছে।

***************

মিতার পরনে আজ গ্রীন কালারের গাউন। জরি সুতার কাজ পুরো গাউনে। চুলগুলো ছাড়া, সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি। আফরিনের মতো হালকা মেকাপ করেছে মিতা। নিজের বোনের জন্য দেওয়া এই পার্টিটা সুন্দরভাবে কাটুক এটাই মিতার একমাত্র কামনা। একদিন আগে অরিয়নের সাথে ঝগড়া হওয়ার পর, হাবিব চৌধুরী সব জানার পর অরিয়ন আর হাবিব চৌধুরীর মধ্যে কি হয়েছে তা মিতা জানেনা। শুধু জানে এরপর আর অরিয়ন মিতার রুমে আসেনি।

মিতাও এড়িয়ে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেদিন অরিয়নের কথা শুনে মিতার বুঝতে বাকি রইল না যে, আফরিন যতোটা ভেবেছিলো তার থেকেও বেশি অরিয়ন নির্ভর হয়ে পড়েছে মিতার উপর। তা না হলে একটা মানুষ লা*শ দেখতে প্রস্তুত তাও তাকে ছাড়তে প্রস্তুত নয় এটা কোনো স্বাভাবিক মানুষের চিন্তা হতে পারে না। তাড়াতাড়ি করে একবার নিজেকে দেখে হাটা শুরু করে।

**************

বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে মিতা। পুরো বাড়িতে মেহমানে ভরে গেছে। উপর থেকে নিজের মা বাবা আর আফরিনকে খোজার চেষ্টা করছে মিতা। মায়া চৌধুরীকে এক পাশে কারো সাথে কথা বলতে দেখেই হাসি ফুটে মিতার চোখে। ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে নেমে আসে মিতা।

–মা আপু কোথায়? দেখছি না যে।
মায়া চৌধুরীর কাছে যেতেই প্রশ্ন করে মিতা।

মাথা ঘুরিয়ে মিতার দিকে তাকায়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার মিতাকে দেখতেই মুখে এক আলতো হাসি ফুটে।

–মাশ আল্লাহ। আমার মেয়েকে তো আজ হুরপরী লাগছে।
বলে মায়া চৌধুরী।

–কিন্তু আপু থেকে বেশি না। আপুকে সব সময় বেশি সুন্দর লাগে।
মুখ ভেংচি দিয়ে বলে মিতা।

–তাই নাকি? আফরিন তো উলটোটা ভাবে।
হেসে বলে মায়া চৌধুরী।

–বাদ দেও সেই কথা। আপু কোথায়?
প্রশ্ন করে মিতা।

–এখানেই তো ছিলো। ঐ দিক টায় আছে নাকি দেখ তো।
আশেপাশে মিতাকে খুজতে খুজতে বলে মায়া চৌধুরী।

–আচ্ছা আমি যাচ্ছি। তুমি কথা বলো।

–আচ্ছা।

আফরিনকে খুজতে খুজতে মিতা প্রায় হাপিয়ে উঠেছে। একে তো গাউনটা অনেক ভারী তার উপর এপাশ থেকে ওপাশ খুজতে খুজতে মিয়ার অবস্থা কাহিল।

“ধুর, কোথায় চলে গেলে আপু?” কোমরে হাত রেখে বিরবির করে বলে মিতা। হুট করেই চোখ যায় ড্রিংকস সেকশনের দিকে। আফরিনের গাউনের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। মানুষের জন্য এতোদূর থেকে স্পষ্ট সব দেখা যাচ্ছে না। মিতা তাড়াতাড়ি করে একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পায় আফরিন দাঁড়িয়ে আছে। আফরিনের সামনেই টুলের উপর বসে আছে আবরার। কিছু একটা নিয়ে দুজনে কথা বলছে। আবরারের পরনে আজ ব্লু কালারের স্যুট। আবরারের পাশেই বসে আছে অরিয়ন। পরনে ব্লাক কালারের স্যুট।

অরিয়ন তাকিয়ে আছে আবরার আর আফরিনের দিকে। নাকি শুধুই আফরিনের দিকে? এক অজানা দৃষ্টিতে আফরিনের দিকে তাকিয়ে আছে অরিয়ন। “কি সেই চাহনির মানে? ভালোবাসা?” প্রশ্ন জাগে মিতার মনে। আবরারের সাথে কথা শেষ করতেই আফরিন ফিরে তাকায় অরিয়নের দিকে। অরিয়নের দিকে তাকাতেই আফরিনের ঠোঁটে বিশাল এক হাসি ফুটে উঠেছে। অরিয়নও আলতো করে এক হাসি দিলো।

“তোর কারণে এরা আজ আলাদা, তোর কারণে এরা একে অপরকে মেনে নিতে পারছে না, ভালোই হতো যদি তুই মরে যেতি” মিতার মনে কথাগুলো উঠতে থাকে। বুঝতে পারে চোখ ভিজে এসেছে মিতার। মিতা আর সেদিকে না গিয়েই উলটো দিকে হাটতে থাকে।

*****************

–লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান।
সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠে আবরার।

সবাই খাওয়া যার যার টেবিলে বসে আছে। মিতার পাশে আফরিন বসা। অন্য টেবিলে হাবিব চৌধুরী, ওয়াহিদ চৌধুরী, আনিকা চৌধুরী ও মায়া চৌধুরী বসে আছে। অরিয়নকে দূরের কোনো টেবিলে দেখা যাচ্ছে।

–আফরিন আপু সব বিপদ-আপদ পেরিয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পেরেছে তাই বিশাল খুশি আমরা। তাই এই দিকে আপুকে ডেডিকেট করে একটা গান গাইবো আমি।

আবরার কথাটা বলতেই সকলে খুশিতে চেচিয়ে উঠে।

Tum Aaye To Aaya Mujhe Yaad

Gali Mein Aaj Chand Nikla

Jaane Kitne Dinoon Ke Baad

Gali Mein Aaj Chand Nikla

Jaane Kitne Dinoon Ke Baad

Gali Mein Aaj Chand Nikla

Gali Mein Aaj Chand Nikla

Gali Mein Aaj Chand Nikla

Tum Aaye To Aaya Mujhe Yaad

গান গাওয়া শেষ হতেই সকলে হাতে তালি দিতে থাকে।

–সেই হয়েছে আরিয়ান ভাইয়ায়া…অনেক সুন্দর।
চেয়ার থেকে উঠে চেঁচিয়ে বলে মিতা।

পাশেই আফরিন হাতে তালি দিচ্ছে। মুখে ফুটে আছে বিশাল হাসি।

–এখন গান গাইবে অরিয়ন ভাইয়া।
কথাটা বলেই হুরহুর করে হেটে গিয়ে অরিয়নের হাতে মাইক দিয়ে দেয় আবরার।

মিতা দূর থেকে দেখছে অরিয়ন গান গাইতে চাচ্ছে না। আবরার হাত ধরে জোড়াজুড়ি করছে। একটু রাগ করার অভিনয়ও করছে। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন। স্টেজের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ায়।

I, I just woke up from a dream.

Where you and I had to say goodbye.

And I don’t know what it all means.

But since I survived, I realized.

Wherever you go, that’s where I’ll follow.

Nobody’s promised tomorrow.

So I’ma love you every night like it’s the last night.

Like it’s the last night.

If the world was ending, I’d wanna be next to you.

If the party was over and our time on Earth was through.

I’d wanna hold you just for a while and die with a smile.

If the world was ending, I’d wanna be next to you.

গান গাইতে গাইতেই কী হলো কেউ কিছু বুঝে উঠার সময় পেলোনা। মাইক ফেলেই দৌড় দেয় অরিয়ন। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অরিয়নের দিকে। হঠাৎ করে কেনো দৌড় দিলো বুঝতে পারছে না। অরিয়নের দৌড় দেখে আফরিন আর মিতা নিজেদের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। মিতা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অরিয়ন দৌড়ে এই টেবিলের দিকেই এগিয়ে আসছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই মিতার সামনে এসে দাঁড়ায় অরিয়ন।

–শিউউউউউউউউ..
মিতার কানে একটা অদ্ভুত শব্দ আসতেই মাটিতে লুটিয়ে পরে অরিয়ন।

চলবে…

#পারমিতা
#পর্ব_৩৫
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

কিছুক্ষণ আগে।

স্টেজে দাঁড়িয়ে গান গাইছে অরিয়ন। গান খাইতে থাকা অরিয়নের নজর একটু পর পরই মিতার দিকে যাচ্ছে। পরীকে কেন আজ এতো সুন্দর লাগছে অরিয়নের কাছে তা বুঝতে পারছে না। তবে শুধু এতোটুকুই মনে হচ্ছে যতোবার মিতার দিকে তাকাচ্ছে ততোবারই অরিয়নের নিশ্বাস আটকে আসছে।

I’d wanna hold you just for a while and die with a smile.

গানের লাইনটা গাইতেই আবারও মিতার দিকে তাকাতেই একটু অবাক হয় অরিয়ন। মিতার কপালের দিকে লাল রঙের লাইটের আলোর মতো কিছু দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত আলোটা সরে সরে তার জায়গা বদল করছে। আশে পাশের কোথা থেকে এই আলো আসছে তা দেখার জন্য সব লাইটের দিকে ভালোভাবে তাকায় অরিয়ন।

গানে ব্যস্ত সবাই কারো মুখের দিকে তাকানোর প্রয়োজন মনে করেনি। সকলের নজর শুধু স্টেজে দাঁড়িয়ে থাকা অরিয়নের দিকে। চারপাশ একবার দেখে যখনও আলোর উৎস খুজে পেলো না অরিয়ন তখন আবারও মিতার দিকে তাকায়।

If the world was ending, I’d wanna be next to you.

লাইনটা গাইতে গাইতেই আবারও মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন। লাল রঙের আলোটা একবার কপাল বরাবর ও একবার বুকের দিকে দেখা যাচ্ছে।

“লেজার রশ্মি” মনের মধ্যে কথাটা উঠতেই মাইক ফেলেই দৌড় দেয় অরিয়ন।

মিতার সামনে এসে দাঁড়ায় অরিয়ন। মিতার দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আগেই গু*লি এসে লাগে অরিয়নের বুকে। নিমিষেই মাটিতে লুটিয়ে পরে অরিয়ন।

–রিয়নননননননননননন…
চিৎকার করে উঠে মিতা।

–আফনানননননননন….
আফরিনও চিৎকার করে উঠে।

–রিয়ন, কি হয়েছে তোমার? রিয়ন? রিয়ন কথা বলো?
মাটিতে পড়ে থাকা অরিয়নকে ধরে বলতে থাকে মিতা।

–ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া…

–অরিয়ননননননননন….
দূর থেকে ভেসে আসে সকলের আওয়াজ।

***************

হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে অরিয়নকে। বাড়ির সকলেই আর বেশি অপেক্ষা না করেই সাথে সাথে নিয়ে এসেছে। হাসপাতালে আনার সাথে সাথেই অরিয়নকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আনিকা চৌধুরী আর মায়া চৌধুরী অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে। তাদের পাশেই রয়েছে হাবিব চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরী। দু জনের চোখেও পানি দেখা যাচ্ছে।

অপারেশন থিয়েটার থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে আফরিন, মিতা আর আবরার। সকলেই কান্নায় ব্যস্ত।

–কি হলো কিছু… কিছু বুঝে উঠার সময় ও পেলাম না।
বলে আবরার।

–আফনানের চোখেই পড়তে হলো।
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে আফরিন।

মিতা কেঁদেই যাচ্ছে। কি বলবে? এতোকিছু কি কম ছিলো যে নতুন করে মিতার জন্য অরিয়নের প্রাণের উপর দুই বার করে বিপদ যাবে? কেনো মিতাকে বাঁচাতে অরিয়নকেই এগিয়ে আসতে হবে? কেন অরিয়নের উপর বিপদ আসার আগে মিতার মৃত্যু হয় না?

–ছাড়ো আমাকে, ছাড়ো।
দূর থেকে আনিকা চৌধুরীর কথা ভেসে আসে।

–আনিকা মাথা ঠান্ডা করো, অরিয়নের কিছু হবে না।
হাবিব চৌধুরী আনিকা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলতে থাকে।

–আমাকে ছাড়ো হাবিব।
এক ধাক্কা দিয়ে হাবিব চৌধুরীকে দূরে সরিয়ে দেয় আনিকা চৌধুরী।

হাবিব চৌধুরী দূরে সরে যেতেই হাটা শুরু করে আনিকা চৌধুরী। ক্ষণিকের মধ্যে গিয়ে পৌঁছায় মিতার সামনে।

–ঠাসসসসসসসস…
মিতার গালে থাপ্পড় মা*রে আনিকা চৌধুরী।

–আনিকা আন্টি!!
অবাক হয়ে বলে আফরিন।

–মা? কি করলে তুমি?
চেঁচিয়ে উঠে আবরার।

–অলক্ষি, অপয়া। আমার ছেলের জীবনটা নিয়েই শান্তি হবে তোর তাই না?
মিতার বাহু ধরে কাঁদতে কাঁদতে চেঁচিয়ে বলতে থাকে আনিকা চৌধুরী।

–আমার ছেলের পিছু কেন ছাড়ছিস না? কেন? আমার অরিয়নের কিছু হলে তোকে আমি খু*ন করে ফেলবো।
আবারও বলতে থাকে আনিকা চৌধুরী।

–আপা ছাড়ুন ওকে। আনিকা ছাড়ো মিতাকে। কি আজে বাজে বলছো তুমি!
মায়া চৌধুরী আর হাবিব চৌধুরী, আনিকা চৌধুরীর হাত ধরে টানতে টানতে বলে।

–আজেবাজে বলছি আমি,হাবিব? আজেবাজে বলছি? এই মেয়ের জন্য আমার অরিয়ন ম*রতে বসেছে।

–শয়তান মেয়ে, আমার মেয়ের জীবন নিয়ে শান্ত হয়নি তোর মন? এখন আবার আমার ছেলের জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু করেছিস?
আবারও মিতার বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।

আনিকা চৌধুরীর কথা শুনতেই সকলের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মিতা আর আনিকা চৌধুরীর দিকে। মিতা যে নাকি এতোক্ষণ মাথা নিচু করে সব সহ্য করে যাচ্ছিলো আনিকা চৌধুরীর কথা শুনতেই মাথা উঁচু করে তাকায়।

“আমার মেয়ের জীবন নিয়ে শান্ত হয়নি তোর মন? এখন আবার আমার ছেলের জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু করেছিস?”

“আমার মেয়ের জীবন নিয়ে শান্ত হয়নি তোর মন? এখন আবার আমার ছেলের জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু করেছিস?”

আনিকা চৌধুরীর কথাগুলো বার বার মাথায় ঘুরছে মিতার। কি বলে আনিকা চৌধুরী এসব? তার মেয়ে? আনিকা চৌধুরীর কোনো মেয়ে ছিলো? অরিয়নের বোন ছিলো কোনো? কিছুই মাথায় ঢুকছে না। অবাক হয়ে তাকায় মায়া চৌধুরী ও হাবিব চৌধুরীর দিকে। তাদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাদের মাথা বন্দুক তাক করে রেখেছে।

–আনিকা…
দুঃখভরাক্রান্ত কণ্ঠে বলে উঠে হাবিব চৌধুরী।

–কী হাবিব কী? আর কতদিন আমার কষ্টের চাইতে এই মেয়ের ভালো বড় করে দেখবে তুমি? আর কতদিন?
কাঁদতে কাঁদতে হাবিব চৌধুরীকে প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।

–এই মেয়ের জন্য আমার অহনাকে হারিয়েছি আমি। আমার ছোট্ট অহনা। আর এখন, এখন আমার অরিয়নকেও কেড়ে নিবে এই মেয়ে।
মিতার দিকে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।

–মা?
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ডাক দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় মিতা। এগিয়ে যায় মায়া চৌধুরীর দিকে।

–মা? কি বলছে আন্টি এসব?
মায়া চৌধুরীকে ধরে জিজ্ঞেস করে মিতা।

মায়া চৌধুরীর চোখে পানি। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকায় মিতার দিকে।

–কি বলছে উনি? আমি মে*রে ফেলেছি কাকে? অহনা কে মা?
প্রশ্ন করে মিতা। ক্ষণিকের জন্যও মিতার চোখ থেকে পানি পড়া বন্ধ হচ্ছে না।

মায়া চৌধুরী একবার হাবিব চৌধুরী ও আনিকা চৌধুরীর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকায়। এরপর আবারও নিজের নজর ফেরায় মিতার দিকে। করুন সেই চাহনি যেন মিতার নজর থেকে আড়াল হলো না।

–এখন চুপ করে আছো কেন মায়া? তোমার গুনধর মেয়েকে বলো অহনা কে? বলো কিভাবে আমার ছোট্ট অহনাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে ও। বলো কেন ওকে আমি দেখতে পারিনা।
মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।

–আপা প্লিজ।
অনুরোধের সুরে বলে মায়া চৌধুরী।

–আমি কি সত্যি কাউকে খু*ন করেছি?
প্রশ্ন করে মিতা।

–না না না, তুই এরকম কিছুই করিস নি। তুই নিজেও..

–যদি নাই করে থাকি তবে কেন? কেন তোমরা কখনো আমার প্রতি আন্টির কঠোর ব্যবহারের প্রতিবাদ করোনি? কেন কখনো বলোনি মিতার সাথে এভাবে কথা বলবেন না? কেন সবাই সব দেখেও না দেখার মতো ছিলে? জবাব দেও মা।
মায়া চৌধুরীর কথা শেষ হওয়ার আগেই বলা শুরু করে মিতা।

মায়া চৌধুরী আর কোনো কথা বললো না। মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগলো। হাবিব চৌধুরী ততোক্ষণে টেনে আনিকা চৌধুরীকে নিয়ে গেছে।
হঠাৎ করেই মিতা কেমন যেন পাথরের মতো হয়ে গেল। নিজের জায়গায় গিয়ে আবারও বসে অপেক্ষা করতে থাকে। চোখ দিয়ে পানি পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল যেদিকে চোখ যায় সেদিকে।

-মিতা ত..

–নো আরিয়ান ভাইয়া.. আমি এখন কিছুই শুনতে চাই না।
আবরার কথা বলার জন্য মিতার পাশে গিয়ে বসতেই চুপ করিয়ে দেয় মিতা।

এদের কারো কাছ থেকেই মিতা আর কিছু শুনতে চায় না। আগে কোথায় ছিলো এরা? সবাই সব জেনেও মিতাকে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করেনি। খু*ন, মিতা কারো খু*ন করেছে। সে কেউটা আর অন্য কেউ না। আনিকা চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে অহনা চৌধুরী। আরিয়ান আর অরিয়নের একমাত্র বোন। এই কারণেই হয়তো আরিয়ান আর অরিয়ন কখনো আনিকা চৌধুরীর বিপক্ষে কথা বলেনি। মিতার জন্য প্রতিবাদ করেনি।
কথাগুলো ভাবতেই মিতার মুখে তাচ্ছিল্যের এক হাসি ফুটে উঠে। “গু*লিটা কী আমার লাগলে বেশি ভালো হতোনা? একই অপরাধ আর কতবার করবো আমি?” মনে মনে ভাবে মিতা।

****************

কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালে পুলিশের ভীর জমে যায়। বিশিষ্ট শিল্পপতি হাবিব চৌধুরীর ছেলের গায়ে গু*লি লেগেছে তাও নিজেদের পার্টিতে তা যেন এখন দেশের সব থেকে বড় খবর। সব ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকার পরও কিভাবে পার্টিতে গু*লি চললো তাই বুঝে উঠতে পারছে না কেউ।

হাবিব চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরী পুলিশের সাথে সব কিছু নিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত। আনিকা চৌধুরীর পাশেই বসে আছে মায়া চৌধুরী। অপেক্ষা করছে অরিয়নের খবর আসার।

দীর্ঘ ৫ ঘন্টা অপারেশন চলার পর থিয়েটারের লাইট বন্ধ হতেই দৌড়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আনিকা চৌধুরী। মিতা আর আফরিন ও নিজের জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আবরার তাড়াহুড়ো করে গিয়ে নিজের মার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

–ডাক্তার এখন অরিয়নের কি অবস্থা? অরিয়ন ঠিক হয়ে যাবে তো?
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে আনিকা চৌধুরী।

–আমরা গু*লি বের করে নিয়েছি। আর একটুর জন্য হৃদপিণ্ডে লাগেনি তাই বেঁচে গিয়েছে। কেবিনে নিলে দেখা করতে পারবেন।
জানায় ডাক্তার।

–ধন্যবাদ ডাক্তার।
বলে মায়া চৌধুরী।

— আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ।
বলতে থাকে আনিকা চৌধুরী।

*****************

অরিয়নকে কেবিনে নিয়ে আসা হয়েছে। সবাই কেবিনে বসে অপেক্ষা করছে অরিয়নের জ্ঞান ফিরার। মিতা নিজের জায়গায় এখনো পাথরের মতো বসে আছে। কেবিনে আসেনি।মিতার সাথে এতোক্ষণ আফরিনও বসে ছিলো। একটু আগেই কেবিনে গেছে অরিয়নকে দেখতে।

সকাল ৬ টা করে অরিয়নের জ্ঞান ফিরে। ডাক্তার জানিয়েছে কিছুদিন বেড রেস্টে থাকতে হবে অরিয়নকে।

–এখন তো অরিয়নের জ্ঞান ফিরেছে, এখন বাসায় চলো। একটু ফ্রেশ হয়ে আবার এসো।
হাবিব চৌধুরী আনিকা চৌধুরীকে বলে।

–না, অরিয়নকে এভাবে রেখে আমি যাবো না।
জানিয়ে দেয় আনিকা চৌধুরী।

–ভাবী, আপনি যান। গতকাল থেকে আপনার শরীরটাও ভালো নেই। খাওয়া দাওয়া করে আসেন। আমরা তো আছি এখানে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–না ওয়াহিদ। অরিয়নকে একা রেখে আমার পক্ষে বাসায় যাওয়া সম্ভব নয়।
বলে আনিকা চৌধুরী।

–তাহলে…তাহলে চলো নাস্তা করিয়ে আনি। তাতে তো সমস্যা হওয়ার কথা নেই। নাস্তাও যদি করতে না চাও তাহলে তোমাকে এখানে আর আসতেও দিবো না, আনিকা।
বলে হাবিব চৌধুরী।

–জ্বি আপা, হাবিব ভাই ঠিক বলেছে। নাস্তা করে আসুন।
বলে মায়া চৌধুরী।

–ওকে।

******************

হাবিব চৌধুরী, আনিকা চৌধুরী আর মায়া চৌধুরী গিয়েছে নাস্তা করতে। ওয়াহিদ চৌধুরী কেবিনে আছে। সাথে আবরার আর আফরিন ও আছে।

সবাই চলে যেতেই কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে ওয়াহিদ চৌধুরী। হেটে চলে যায় মিতার সামনে।

–অরিয়নের জ্ঞান ফিরেছে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

ওয়াহিদ চৌধুরীর কথা শুনে মিতা উঠে দাঁড়ায়। মুখে নেই কোনো এক্সপ্রেশন। হেটে কেবিনের দিকে এগোতে থাকে। ওয়াহিদ চৌধুরী কিছু বললো না। মিতা কী করছে তা দেখার চেষ্টা করলো। কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় ঘুমন্ত অরিয়নকে। বুকে ব্যান্ডেজ করা। হাতে স্যালাইন চলছে। বেডের একপাশে আবরার বসে আছে অন্য পাশে চেয়ারে বসে আছে আফরিন।

মিতাকে দেখতেই আফরিন কিছু বলতে নিয়েও বললো না। মিতার নজর শুধুই বিছানায় শুয়ে থাকা অরিয়নের দিকে। আফরিন আবরারের দিকে তাকিয়ে চোখে কিছু ইশারা করতেই আবরার আর আফরিন উঠে দাঁড়ায়। মিতাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায় আবরার।

–ধৈর্য্য ধর। ও এখন ভালো আছে।
মিতার মাথায় হাত রেখে কথাটা বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যায় আফরিন।

কেবিনের দরজা লাগতেই মিতা ধীরপায়ে গিয়ে দাঁড়ায় অরিয়নের বেডের কাছে। বেডের একপাশে বসে মিতা। নিজের হাত দিয়ে আলতো করে অরিয়নের ডান হাত স্পর্শ করে। চোখ দিয়ে আবারও পানি পড়তে শুরু করেছে মিতার।

কারও উপস্থিতি, কারও স্পর্শ কখন থেকে অরিয়ন বুঝতে পারলো তা জানেনা। শুধু জানে হঠাৎ করে বুক ধুকধুক করা শুরু হয়েছে। মন বার বার বলছে “রুমে পরী আছে”। হাতে স্পর্শ অনুভব করতেই তা যেন নিশ্চিত হয়ে গেলো অরিয়নের কাছে। সাথে সাথেই চোখ খুলে তাকায়।

চলবে….

#পারমিতা
#পর্ব_৩৬
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

অরিয়ন চোখ খুলতেই সামনে দেখতে পায় মিতাকে। মিতা অরিয়নের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো অরিয়নের হাতের উপর।

–লাভ?
ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে ডাক দেয় অরিয়ন। গলা একদম শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।

অরিয়নের ডাক শুনে মুখের দিকে তাকায় মিতা। চোখমুখ লাল হয়ে আছে। গালে ৫ আঙ্গুলের ছাপ বসে আছে। চুলগুলো এলোমেলো। অরিয়ন মিতার দিকে তাকিয়ে আলতো করে একটা হাসি দেয়। সেই হাসি মুখ থেকে সরে যেতেও যেন সময় লাগলো না।

–গালে কী… আহ…গালে কী হয়েছে?
হুট করেই শোয়া থেকে উঠে বসতে নিয়ে কথাটা বলে অরিয়ন। বসতে নিতেই বুকে ব্যাথা অনুভব করে। ফলে নিজের হাত দিয়ে আলতো করে বুকে স্পর্শ করে অরিয়ন।

–কী করছো তুমি? শুয়ে থাকো। তোমার জন্য এখনো বসা ঠিক হবে না।
অরিয়নের বাহু ধরে শুয়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে মিতা।

–সর, কিছু হবে না আমার। আগে বল গালে কে থাপ্পড় মে*রেছে তোকে?
মিতার হাত ধরে নিজের সামনে বসায় অরিয়ন। নিজের ডান হাত দিয়ে মিতার গাল স্পর্শ করতে করতে বলে অরিয়ন।

মিতা কিছু বললো না। চুপ করে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে রইল। অরিয়নের মুখে গ্লানির ছাপ। চোখেমুখে মিতার জন্য টেনশন ফুটে উঠেছে।

–কী হয়েছে বল? কে থাপ্পড় মে*রেছে তোকে?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।

–আনিকা আন্টি।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয় মিতা।

মিতার জবাব শুনে গাল থেকে হাত সরিয়ে নেয় অরিয়ন। হাত বিছানার উপর রাখে। নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে রইল। নিজের মায়ের কথা শুনতেই অরিয়নের এভাবে হাত সরিয়ে নেওয়া দেখে মনে মনে একটু হাসলো মিতা। সবাই শুধু মুখেই ভালোবাসে। নিচের দিকে চোখ যেতেই চোখ বড় বড় হয়ে আসলো মিতার। অরিয়নের হাতের স্যালাইনের পাইপে র*ক্ত উঠে গেছে।

–হাত সোজা করো র…
কথাটা বলতে গিয়েও থেমে যায় মিতা।

মিতা ভেবেছিলো অজান্তে হাত ঠিকমতো না রাখার কারণে র*ক্ত উঠে যাচ্ছে কিন্তু মিতার ভুল ভাঙ্গলো যখন চোখ গিয়ে পড়লো অরিয়নের হাতের দিকে। অরিয়ন হাত শক্ত করে মুঠ করে রেখেছে। রাগের রগগুলো বের হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।

–হাত খুলো, র*ক্ত উঠে যাচ্ছে।
ঘাবড়ে গিয়ে মিতা অরিয়নের হাত ধরে বলতে থাকে।

মিতার চোখে পানি দেখতে পেয়ে হাত ছেড়ে দেয় অরিয়ন। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু মিতার গালের দাগ যতোবার চোখে পরছে ততোবারই ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলতে।

–আই এম সো সরি, লাভ।
মিতার গালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে অরিয়ন।

–অহনা কে?
প্রশ্ন করে মিতা

মিতার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় অরিয়ন। ধীরে ধীরে মিতার কাছ থেকে সরে আসে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মিতার দিকে। মিতা আগে থেকেই অরিয়নের দিকে তাকিয়ে আছে।

–অহনা কে?
আবারও প্রশ্ন করে মিতা।

অরিয়ন নিজের চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়। কি বলবে বুঝতে পারছে না। মিতাই বা এই নাম কোথা থেকে শুনলো?

–এই নাম কোথা থেকে শুনলি তুই?
উলটা প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–অহনা কী তোমার বোন ছিলো?
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করে মিতা।

অরিয়নের বুঝতে আর বাকি রইল না,যা ভেবেছিলো তার থেকেও অনেক বেশি কিছু জেনে ফেলেছে মিতা। তাই আর কথা না বাড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়।

–আমার….
কথাটা বলে একটু থাকে মিতা। কথাগুলো যেন আটকে যাচ্ছে মিতার।

–আমার কারণে কী…কী উনি…উনি মারা গেছেন?
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।

–এমনটা বলিস না, লাভ। এমন কিছুই হয়নি।
তুই…তুই তখন ছোট ছিলি। যা হয়েছে তার সবটাই দুর্ঘটনা।
মিতার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে মিতার হাত ধরে বলে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনে বুঝতে আর বাকি রইল না আনিকা চৌধুরী যা বলেছে তা সত্যি।

–কীভাবে? কখন? আমার কিছু মনে নেই কেন?
নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।

–লাভ। এখন না। পরে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবো ওকে? তোর কোনো দোষ ছিলো না।
মিতার হাত ধরে ডেস্পারেটলি বলতে থাকে অরিয়ন।

–যদি আমার দোষ নাই থাকবে তাহলে কেন আন্টি আমাকে পছন্দ করবে না? বলো?
অরিয়নের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে মিতা।

অরিয়ন কোনো জবাব না দিয়েই মিতার হাত শক্ত করে ধরে রাখলো।

–বলো কীভাবে অহনা আপু আমার জন্য মা*রা গেলেন?

–পরী!
অনুরোধের সুরে বলে অরিয়ন।

–প্লিজ রিয়ন, প্লিজ। আমি যে আর পারছি না। আমাকে এসব থেকে মুক্তি দেও। কি হয়েছিলো আমাকে বলো।
অরিয়নের হাত ধরে অনুরোধ করে বলে মিতা।

–১৩ বছর আগে….যখন ছোট চাচ্চু আর চাচি এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলো…তাদের….তাদের সাথে অহনাও ছিলো। সেদিন….সেদিন ২ জন নয়, ৩ জন মারা গিয়েছিলো।
মাথা নিচু করে বলে অরিয়ন।

–সেটা তো রোড এক্সিডেন্ট ছিলো। তাহলে…তাহলে অহনা আপুর মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী হলাম কীভাবে?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিতা।

–অহনা…অহনা আমার থেকে দুই বছরের ছোট ছিল। সব সময় ছোট একটা বোনের আবদার করতো মায়ের কাছে। এরপর আবরার হলো। তাতে সে মন খারাপ করে ছিলো সারাদিন।
কথাগুলো বলতেই অরিয়নের ঠোঁটের কোণে আলতো এক হাসি ফুটে।

–এরপর তোর জন্ম হলো। তাতে সে বিশাল খুশি। সারাদিন আমাদের বাড়ি রেখে তোদের বাড়িতেই পড়ে থাকতো। তোকে লালনপালন করবে তাই।
কথাটা বলে একটু থামে অরিয়ন।

মিতা মনোযোগ দিয়ে সব শুনছে। তার মানে কেউ ছিলো যে মিতাকে সেভাবেই ভালোবাসতো যেভাবে মায়া চৌধুরী ভালোবাসে মিতাকে। নিজের মা-বাবার কিছুই মনে নেই মিতার। আছে শুধু কয়েকটা ছবি, যা দেখে তাদের চেহারা মনে রেখেছে মিতা।

–তোর বয়স তখন ৫। চাচ্চু আর চাচি মিলে ঠিক করেছে ঢাকা যাবেন বেড়াতে। চাচির এক আত্নীয়র বাসায়। অহনা বায়না ধরলো ও যাবে তোদের সাথে। বাবা আর মা অহনাকে না করতে পারেনি। তাই তোদের সাথে অহনাও গিয়েছিলো।

–তারপর?
জিজ্ঞেস করে মিতা।

–৩ দিন ঢাকায় থাকার পর গাড়ি করে ফিরছিলেন সবাই। চাচ্চু ড্রাইভ করছিলো..তুই আর অহনা পিছনে ছিলি। চাচ্চু আর চাচি সামনে….
বাকি কথাগুলো যেন অরিয়নের মুখ দিয়ে আসছে না। আটকে যাচ্ছে বার বার।

মিতা অপেক্ষা করছে। মনটা কেমন যেন আনচান করছে। অনবরত পা নাচিয়ে যাচ্ছে মিতা। কিছু একটা মাথায় ঘুরছে মিতার।

–এরপর?
অধৈর্য্য হয়ে প্রশ্ন করে মিতা।

–কিছু একটা নিয়ে বায়না ধরেছিলি তুই। কিসের বায়না তা আমরা জানিনা। পেছনের সিট থেকে হঠাৎ করেই চাচ্চুর গলা জড়িয়ে ধরে কিছু বলছিলি তুই লাফাতে লাফাতে। হঠাৎ করে তোর এরকম করায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে চাচ্চু। কোনো মতেই তোর হাত ছাড়াতে পারছিলো না গলা থেকে। চাচ্চুর গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছিলো, তাই চাচ্চু আর চাচি মিলে তোর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই অপজিট থেকে গাড়ি চলে আসে। যা কেউ-ই লক্ষ্য করেনি। ক্ষণিকেই গাড়ি উলটে গেলো।
মানুষজন আসতে আসতে চাচ্চু আর চাচি স্পট ডেড। কিন্তু অহনা আর তুই বেঁচে ছিলি। উলটে যাওয়া গাড়ি থেকে অহনাকে বের করতে হাত বাড়িয়ে দিলে, আমার ছোট্ট অহনা…
কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে অরিয়ন।

–আমার ১৫ বছরের ছোট বোনটি তোকে আগে তাদের হাতে তুলে দেয়। তোকে বের করে অহনার দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আগেই গাড়ি ব্লাস্ট হয় সাথে সাথে। আমার ছোট্ট অহনা মারাত্মক ভাবে জখম হয়। শরীরের ৯০% পুড়ে গিয়েছিলো। আমরা খবর পেয়ে পাগললের মতো দৌড়ে হাসপাতালে গেলেও অহনাকে শুধু একবার শেষ জীবিত দেখতে পেয়েছিলাম।

–এক্সিডেন্ট কীভাবে হলো তা তদন্ত করতে গিয়ে গাড়ির ড্যাসক্যামে সব ধরা পড়ে। মা নিজের চোখে সবটা দেখেছিলো। এরপর থেকে…এরপর..

–এরপর থেকে আন্টি আর আমাকে দেখতে পারেনা। আমাকে দেখলেই তার ছোট্ট অহনার কথা মনে পড়ে।
দুঃখের এক হাসি দিয়ে বলে মিতা।

–আমি শুধু অহনাকে আপুকেই মে*রে ফেলিনি। আমি আমার মা-বাবাকেও মেরে ফেলেছি।
কথাটা বলতেই হাসি ফুটে উঠে মিতার ঠোঁটে। কিন্তু চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে মিতা।

— না না। এমন কিছুই না। তুই ছোট তখন পরী। তোর কোনো দোষ নেই।
মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে বলে অরিয়ন।

–আমি আসলেই একটা অপয়া, অলক্ষি। যেখানে যাই সবার সুখ কেড়ে নেই।
বিরবির করে বলতে থাকে মিতা।

–এমন কিছুই না পরী। খবরদার এসব কিছু ভাববি না তুই।
রাগ হয়ে বলে অরিয়ন।

–কোথায় যাচ্ছিস?
বেড থেকে উঠে যেতে নিতেই মিতার হাত শক্ত করে ধরে বলে অরিয়ন।

–বাইরে। একটু খোলা বাতাস নিতে।
আনমনে বলে মিতা।

–কোথাও যেতে হবে না। এখানেই থাকবি তুই।
কঠোরভাবে বলে অরিয়ন।

–আমাকে আর আটকাতে পারবে না।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।

মিতার এই কথাটা যেন অন্য কিছু বুঝালো। অবাক হয়ে হাত ছেড়ে দেয় অরিয়ন। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মিতার চোখে কিছু একটা খোজার চেষ্টা করে।

–মানে?
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।

–মানে আমি বাইরে যাবো।
কথাটা বলেই হাটা শুরু করে মিতা।

–পরী? পরী?
ডাকতে থাকে অরিয়ন।

মিতা যেন কিছুই শুনলো না। নিজের মতো করে হেটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

–আরিয়াননননননননন..
চেঁচিয়ে উঠে অরিয়ন।

–আরিয়াননননননননন…
আবারও চেঁচিয়ে উঠে।

–কী হয়েছে? কী হয়েছে?
তাড়াতাড়ি করে কেবিনে ঢুকে বলতে থাকে আবরার। চোখমুখে আতংক ফুটে উঠেছে।

–পরী কোথায়?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–এহ?
থতমত খেয়ে বলে আবরার।

–পরী কোথায়?
চিৎকার করে বলে অরিয়ন।

–শান্ত হ ভাইয়া। আছে পরী। বাইরেই আছে।
বলে আবরার।

–সত্যি…সত্যি বলছিস?
বুক চাপ দিয়ে ধরে বলে অরিয়ন। মনে হচ্ছে বুকের ব্যাথাটা বেড়েছে।

–হ্যাঁ।
বলে অরিয়ন।

–ওকে দেখে রাখিস। কোথাও একা যেতে দিস না।
বিছানায় ধুপ করে শুয়ে পড়ে বলে অরিয়ন।

*****************

–তুমি এভাবে পাগলামি না করলেও পারতে, আনিকা।
বলে হাবিব চৌধুরী।

রেস্টুরেন্টে নাস্তা খেতে এসেছে আনিকা চৌধুরী, হাবিব চৌধুরী ও মায়া চৌধুরী। মায়া চৌধুরী ওয়াশরুমে যেতেই সুযোগ বুঝে প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

–পাগলামি? কি পাগলামি করেছি?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।

–মিতাকে দোষারোপ করার পাগলামি।

–ওর জন্য আমার অহনা আজ আমাদের মধ্যে নেই। ওর জন্য আমার অরিয়ন আজ মরতে মরতে বেঁচেছে তাও বলছো আমি পাগলামি করছি?
রাগে দাঁত কিরমির করে বলে আনিকা চৌধুরী।

–অহনার ব্যাপারটা শুধুই একটা দুর্ঘটনা ছিলো, আনিকা। ছোট একটা বাচ্চাকে তার জন্য দোষারোপ করতে পারো না তুমি। তুমি নিজের মেয়েকে হারিয়েছো, ও ওর মা-বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে তা কি দেখতে পারছো না?
একটু নরম হয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।

–এই বাচ্চা যদি ওয়াসিমের গলা জড়িয়ে না ধরতো তাহলে এসব কিছুই হতো না।
রাগান্বিত আনিকা চৌধুরী বলে।

–আনিকা?
একটু উচ্চস্বরে বলে হাবিব চৌধুরী।

–কী হাবিব? ঠিক আছে। অহনার টপিক না হয় দুর্ঘটনা ছিলো কিন্তু অরিয়নের ব্যাপারটা? সেটা নিয়ে কি বলবে তুমি? তুমি কি অস্বীকার করতে পারবে, আজ অরিয়নের এই অবস্থা শুধুমাত্র ঐ মেয়ের জন্য তা?
ঘৃণার চোখে বলে আনিকা চৌধুরী।

হাবিব চৌধুরী কিছু বলতে গিয়েও বললো না। চুপ করে রইল। আনিকা যে এখন কথা শুনবার পর্যায়ে নেই তা ভালোই বুঝতে পারছেন তিনি। মায়া চৌধুরী টেবিলের সামনে আসতেই হালকা এক হাসি দেয় হাবিব চৌধুরী। মায়াও বিনিময়ে হাস ফিরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে নাস্তার টেবিলে।

*********************

হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মিতা। যানজট পূর্ণ এই রাস্তাটাও আজ খালি খালি মনে হচ্ছে মিতার। আশেপাশে শতশত এই মানুষের মধ্যে কেউ মিতার আপনজন নয়।
নিজের মা-বাবা আজ বেঁচে নেই শুধু মাত্র মিতার ভুলে। ১৫ বছরের অহনা, যে সবেমাত্র তার জীবনটা দেখতে শুরু করেছিলো সেই এই পৃথিবীতে নেই শুধুমাত্র মিতার ভুলের কারণে। আনিকা চৌধুরী ভালো নেই কারণ তার অহনাকে কেড়ে নিয়েছে মিতা। আফরিন ভালো নেই কারণ তার আফনানকে কেড়ে নিয়েছে মিতা। নিজের থেকে নিজের মা বাবাকে কেড়ে নিয়েছে মিতা। কথাগুলো যেন ক্ষণিকের জন্যও ভুলতে পারছে না মিতা।

–উফ…প্রচন্ড ব্যাথা।
মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতেই নিজের দু হাত দিয়ে চুল টেনে ধরেছে মিতা।

“তুই একটা খু*নি”

“তুই অহনাকে খু*ন করেছিস”

“তোর জন্য তোর মা-বাবা আজ বেঁচে নেই”

“তোর জন্য আফরিন আর অরিয়ন আজ আলাদা”

“তোর জন্য আজ অরিয়ন ম*রতে বসেছিলো”

“তুই একটা খু*নি”

“তুই একটা খু*নি”

“খু*নি খু*নি খু*নি”

কথাগুলো মিতার মাথায় বার বার ঘুরছে। নিজের মন নিজেকেই দোষারোপ করছে।

–না, না, না, না। আমি কিছু করিনি, আমি কিছু করিনি।
নিজের চুল শক্ত করে ধরে পাগলের মতো বারবার বলতে থাকে মিতা।

–আমি কিছু করিনি, আমি কিছু করিনি।
কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে মিতা।

–পারমিতা?
পেছন থেকে কেউ মিতার কাধে স্পর্শ করে মিতার পুরো নাম ধরে ডাক দেয়।
অপরিচিত কারো কন্ঠ শুনতেই পেছনের দিকে ফিরে তাকায় মিতা।

চলবে…..