পারমিতা পর্ব-৪২+৪৩+৪৪

0
103

#পারমিতা
#পর্ব_৪২
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

–আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।
চোখ বন্ধ অবস্থায় বলে মিতা।

মিতার কথা শুনে চোখ খুলে তাকায় অরিয়ন। ধীরে ধীরে সরে আসে মিতা থেকে। অরিয়ন দূরে যেতেই মিতাও নিজের চোখ খুলে তাকায়।চেষ্টা করছে চোখের পানি আটকে রাখার। অন্যদিকে,এক দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে আছে অরিয়ন।

–কি বললি?
ভুল শুনেছে ভেবে আবারও জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।

–আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থেকেই জবাব দেয় মিতা।

–তুই এখন যেতে পারিস।
মিতা থেকে আরও দূরে সরে এসে শান্ত গলায় বলে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয় মিতা। “চলে যেতে বলছে তার মানে কী নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে? বুঝতে পেরেছে যে, এই সম্পর্কে থাকাটা ঠিক নয়? আফরিন আপুকে মেনে নেওয়াই ঠিক?” মনে মনে ভাবে মিতা।

–এখনো বসে আছিস কেন? চলে যেতে বললাম না?
একটু উচ্চস্বরে বলে অরিয়ন।

মিতা আর কোনো কথা না বলে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। অরিয়নের দিকে আড় চোখে তাকাতেই দেখতে পায় অরিয়ন বিছানায় শুয়ে পড়েছে। মিতা খালি ট্রে হাতে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

****************

রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়াতেই দেখতে পায় আনিকা চৌধুরী, হাবিব চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরী কিছু নিয়ে কথা বলছে। ট্রে হাতে নিয়ে নিচে নেমে আসে মিতা।

–তোমাদের সাথে কিছু কথা আছে।
সিড়ি থেকে নামতে নামতে বলে মিতা।

মিতার কন্ঠ শুনে সকলেই মিতার দিকে ফিরে তাকায়।

–কী বলবি?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।

মিতা ট্রে নিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ট্রে টেবিলের উপর রেখে আবারও সবার সামনে এসে দাঁড়ায় মিতা।

–আমি ঠিক করেছি আমি আর এই সম্পর্কে থাকবো না।
আমতা আমতা করে বলে মিতা।

মিতার কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় হাবিব চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরী। অন্যদিকে, আনিকা চৌধুরী বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে মিতার দিকে।

–মানে? কোন সম্পর্ক থেকে?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–আমার আর অরিয়ন ভাইয়ার।
বড় করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে মিতা। মিতার হাত পাগুলো প্রতিনিয়ত ঠান্ডা হয়ে আসছে।

–মিতা,মাথা ঠিক আছে তোর?
উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে হাবিব চৌধুরী।

হাবিব চৌধুরীর কন্ঠ শুনে লাফিয়ে উঠে মিতা। মাথা তুলে তাকায় হাবিব চৌধুরীর দিকে। হাবিব চৌধুরীর চোখেমুখে রাগ ফুটে উঠেছে। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে মিতার দিকে।

–কি সব বলছিস তুই, মিতা?
শান্ত গলায় মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–ঠিক টাই বলছি বাবা। এটা আরও আগেই করা উচিৎ ছিলো।

–মিতা…
আবারও উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে হাবিব চৌধুরী।

তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে যায় মিতার দিকে।

–আবল-তাবল কী বলছিস তুই,হ্যাঁ? বিয়েটা তোর ছেলেখেলা মনে হয়?
রাগান্বিত কন্ঠে বলে হাবিব চৌধুরী।

–ভাইয়া, একটু শান্ত হও।
হাবিব চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–তুই ওর কথাগুলো শুনেছিস? কী আজেবাজে বলছে?
ওয়াহিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।

–কি হয়েছে তোর? হঠাৎ করে এসব কী বলছিস? অরিয়নের সাথে কিছু হয়েছে?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ পড়েছে।

–কিছুই হয়নি।
জবাব দেয় মিতা।

–তাহলে? তাহলে কী সমস্যা?
ওয়াহিদ চৌধুরী কিছু বলার আগেই বলে উঠে হাবিব চৌধুরী।

হাবিব চৌধুরীর দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে মিতা। মিতার কথা শোনার পর থেকেই কেমন যেন মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

–কোনো সমস্যা না। বিয়েটা হয়েছিলো আফরিন আপু ছিলো না তাই। এখন আফরিন আপু ফিরে এসেছে। এখন এই সম্পর্কে থাকার কোনো কারণ দেখছি না আমি।
হাবিব চৌধুরী দিকে তাকিয়ে থেকে বলে মিতা।

–আফরিন তোকে কিছু বলেছে?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

–এতোদিন পর মাথায় সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে।
ব্যঙ্গাত্মক একটা হাসি দিয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।

–আপু কিছু বলেনি। বলার প্রয়োজন নেই বাবা। আমি ডিভোর্স চাই সেটা ফাইনাল।
বলে মিতা।

–ফাইজলামি পেয়েছিস? আমাদের কথার উপরে কথা বলার সাহস কোথা থেকে পেয়েছিস তুই? কোনো ডিভোর্স টিভোর্স হবে না।
কড়া কন্ঠে বলে হাবিব চৌধুরী।

–কেন? না হওয়ার কারণ কী?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিতা।

–ডিভোর্স হয়ে গেলে কী এমন সমস্যা হবে? এমনিতেও আমাদের বিয়ে হওয়ার তো কোনো কথাই ছিলো না। যেখানে আমরা চাচ্ছি ডিভোর্স হোক সেখানে তুমি কেন চাচ্ছো না?
আবারও বলে মিতা।

অধীর আগ্রহ নিয়ে হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে থাকে মিতা। হাবিব চৌধুরীর থেকে কি উত্তর আশা করছে জানেনা, শুধু জানে কবির রহমানের বলা কথাগুলো ভুল হোক সেই প্রার্থনা করছে বার বার ।

–সব কিছুর উত্তর এখন তোকে দিতে হবে? এতো বড় হয়ে গেছিস হুট করে?
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।

–আমি এই বাড়িতে এই পর্যন্ত যা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই হয়েছে। এবারও তাই হবে। কোনো ডিভোর্স হবে না এই পরিবারে। এটাই শেষ কথা।
গম্ভীর কণ্ঠে কথাগুলো বলেই আর অপেক্ষা করলো না হাবিব চৌধুরী। তাড়াতাড়ি করে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে।

হাবিব চৌধুরী এমন ভাবে সবার সামনে থেকে চলে গেলো যেন মিতার সামনে থেকে পালাতে পারলেও বাঁচে। মিতা সবটাই লক্ষ্য করেছে। মনের মধ্যে শুরু হওয়া ঝড় যেন তার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। মনের মধ্যের সব লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে মিতার। শেষমেষ নিজের আপন চাচ্চু? হাবিব চৌধুরী? তাও শুধু মাত্র কিছু টাকার জন্য? মিতার যেন কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না।

–আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে নড়ছি না।
মাথা নিচু করে ওয়াহিদ চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলে মিতা।

–এই প্রথম কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছো। এর থেকে নড়চড় করে নিজের আসল রূপ দেখানোর দরকার নেই।
মিতার উদ্দেশ্যে কথাটা বলেই চলে যায় আনিকা চৌধুরী।

আনিকা চৌধুরী ড্রয়িংরুম থেকে চলে যেতেই মিতাকে জড়িয়ে ধরে ওয়াহিদ চৌধুরী। মিতাকে জড়িয়ে ধরতেই চোখ ভিজে আসে মিতার।

–কি হয়েছে তোর? আমাকে সব খুলে বল। কি চলছে তোর মধ্যে? কেউ কিছু বলেছে তোকে?
মিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–কেউ কিছু বলেনি বাবা।
বলে মিতা।

–তাহলে? তাহলে হুট করে এসব কি বলছিস তুই?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–আমরা একে অপরকে ভা….ভালোবাসি না বাবা। তাহলে…তাহলে এরকম সম্পর্কে কেন থাকবো? আমি কী ভালো থাকা ডিসার্ভ করিনা?
কথাগুলো কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে মিতা। জীবনে কোনোদিন মায়া চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরীর কাছে মিথ্যে বলেনি মিতা। কিন্তু আজ বলতে হচ্ছে,সকলের ভালোর জন্য।

যারা ছোট থেকে লালন পালন করেছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাদের মেয়ের ভালোবাসাকে তার জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার শপথ নিয়েছে মিতা। মিতা ভালো করেই জানে অরিয়ন ম*রে গেলেও আফরিনকে ততোদিন মেনে নিবে না যতোদিন না এই সম্পর্ক থেকে অরিয়ন বেরিয়ে আসছে। চিটিং করা যে কখনোই পছন্দ করে না অরিয়ন। অপরদিকে, আফরিনও কোনোদিন অরিয়নকে মেনে নিবে না,এটা ভেবে যে অরিয়ন এখন মিতার স্বামী।

যেখানে অরিয়ন মিতাকে ভালোবাসে না,যেখানে শুধুমাত্র মিতার টাকার জন্য ওদের বিয়েটা হয়েছে সেখানে কী জন্য শুধুমাত্র নিজের খুশির জন্য দুটো জীবন নষ্ট করবে মিতা? আর কতটা স্বার্থপর হবে?

–ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত ওরা একে অপরকে মানবে না, বাবা। আমি যে ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। খুব বেশী।
কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।

–কবে থেকে এতোটা বড় হয়ে গেলো আমার মেয়ে? আমার ছোট মিতা এখন যে খুব বড় হয়ে গেছে।
মিতার মাথায় আবারও হাত বুলাতে বুলাতে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–তোর সব সিদ্ধান্তে আমি তোর পাশে আছি।
আবারও বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–ধন্যবাদ বাবা, আমাকে বুঝতে পেরেছো তাই।
শান্ত গলায় বলে মিতা।

******************

নিজের রুমে পড়ার টেবিলে বসে আছে মিতা। ২০ দিন পর ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের বোর্ড এক্সাম শুরু হবে। কিন্তু বাস্তব জীবনে যেই পরীক্ষা চলছে তার থেকেই তো বের হতে পারছে না মিতা। বইগুলো একেকটা একেক জায়গায় পড়ে আছে। ৩০ মিনিট ধরে বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মুখ দিয়ে একটা পড়াও আসেনি মিতার।

ডিভোর্সের কথাটা কত সহজে বলে ফেলেছে মিতা কিন্তু সত্যিই কী খুব সহজে বলে ফেলেছে? কতটা রাত ঘুমাতে পারেনি তা শুধু মিতা জানে। কতটা রাত শুধু চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজিয়েছে তা শুধু মিতা জানে। ৯/১০ মাসের মায়া বা ভালোবাসায় অরিয়নকে ছাড়তে যদি মিতার এতো কষ্ট হয় তাহলে ৬ বছরের ভালোবাসা অরিয়ন আর আফরিন একে অপরকে ছেড়ে কতটা কষ্টে আছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মিতা।

–মিতা ভিতরে আসবো?
দরজায় নক করে প্রশ্ন করে শায়লা।

–আসো আপু।
জবাব দেয় মিতা।

দরজা খুলে ভিতরে আসে শায়লা। হাতে খাবারের ট্রে। ট্রে দেখে ঘড়ির দিকে তাকায় মিতা। রাত ৮ টা ৩০ মিনিট। কখন এতো সময় পেরিয়ে গেলো বুঝতে পারেনি। এতোক্ষন কী করছিলো? একটু আগেই না বই নিয়ে টেবিলে বসলো?

–অরিয়ন স্যারের খাবারের টাইম হয়ে গেছে।
বলে শায়লা।

–হুম।
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় মিতা। শায়লার হাত থেকে ট্রে নিয়ে সরাসরি চলে যায় অরিয়নের রুমের দিকে।

*************

অরিয়নের রুমের দরজা লাগানো। দূর থেকে আসতে থাকা মিতা নার্সকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা।

–এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
নার্সকে প্রশ্ন করে মিতা।

–মি.হাবিব একান্তে কথা বলছেন মি.অরিয়নের সাথে।
জবাব দেয় নার্স।

–ওহ।

মিতা ট্রে হাতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যত সময় যাচ্ছে অস্থিরতা ততোই বাড়ছে মিতার। কি কথা বলছে কিছুই শোনা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে আড় চোখে নার্স মিতাকে দেখে। মিতার সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নেয় নার্স।

দরজা খুলতেই বেরিয়ে আসে হাবিব চৌধুরী। চোখমুখ লাল হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড পরিমানে রেগে আছে কিছু নিয়ে। মিতাকে দেখে মিতার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো হাবিব চৌধুরী। হাবিব চৌধুরীর সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নেয় মিতা। মিতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিব চৌধুরীকে খুব অচেনা লাগছে মিতার। কেমন যেন ভয়ানক দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে আছে।
একটু পরেই মিতার সামনে দিয়ে হেটে চলে যায় হাবিব চৌধুরী। নার্সসহ রুমে প্রবেশ করে মিতা।

–আপনি গিয়ে রেস্ট করতে পারেন। কিছুর প্রয়োজন হলে আপনাকে ডাকা হবে।
নার্সকে দেখা মাত্রই বলে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো নার্স। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মিতার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে করে বের হয়ে যায়।

অরিয়ন বিছানায় বসে আছে। হাত থেকে স্যালাইন খুলে দেওয়া হয়েছে। মিতা টি টেবিলের উপর ট্রে রাখে।

–মাঝেমধ্যে আমি খুব হবাক হই।
হুট করে বলে উঠে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনতেই পিছনে ফিরে তাকায় অরিয়ন। বিছানায় আরাম করে বসে আছে।

–তোর সাহস দেখে।
মিতার দিকে তাকিয়ে আলতো এক হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন। এই হাসির মানে কী মিতা তা বুঝতে পারছে না।

–একটা কথা মানতেই হবে..
বলতে বলতে বিছানা থেকে পা নামায় অরিয়ন।

–ছোট মরিচের ঝাল বেশি।
কথাটা বলে হাসতেই দাঁত বেরিয়ে আসে অরিয়নের।

–সাইজে এতোটুকু, বয়সে এতো ছোট তাও জেদ দেখাস বড়দের মতো!
এবার কথাটা বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন।

মিতা নিজের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অরিয়নের কথার অর্থ বোঝায় চেষ্টা করছে । হাবিব চৌধুরীর সাথে কথা বলার পর ভেবেছিলো হয়তো রাগান্বিত অরিয়নকে দেখতে পারবে কিন্তু এই রহস্যময় অরিয়নকে দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না মিতা। অরিয়ন হাটতে হাটতে গিয়ে মিতার সামনাসামনি দাঁড়ায়। মিতাও নিজের জায়গা থেকে সরলো না। গম্ভীর দৃষ্টিতে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে মিতা।

–আমাদের বাচ্চাগুলো কেমন হবে তা কল্পনা করতেই হাসি পাচ্ছে আমার।
মিতার গাল থেকে চুল সরিয়ে কানের পেছনে গুজে দিতে দিতে বলে অরিয়ন।

“বাচ্চা” শব্দটা শুনতেই ভ্রু কুঁচকে তাকায় অরিয়নের দিকে। কি আবল তাবল বলছে তা বোঝায় চেষ্টা করছে। নাকি ফাইজলামি করছে তা।

–তোর কী চাই? মেয়ে না ছেলে? আমার কিন্তু একটা হলেই হবে।
মিতার কাছাকাছি মুখ নিয়ে গিয়ে বলে অরিয়ন। অরিয়নের মুখে মৃদু এক হাসি।

–মাথা ঠিক আছে তোমার?
অরিয়নের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে মিতা।

–তোর কী মনে হয়? মাথা খারাপ করার মতো কিছু করেছিস তুই?
মিতার থেকে আবারও একটু দূরে সরে এসে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–কী চাচ্ছো তুমি? তোমার কথার কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। আর বাচ্চা? কিসের বাচ্চা?
অরিয়নের দিকে এক পা এগিয়ে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিতা।

–বাচ্চা মানে চাইল্ড।
সোফায় বসে পায়ের উপর পা রাখতে রাখতে বলে অরিয়ন।

–কী খেলা খেলছো তুমি? চাচ্চুর সাথে কী কথা বললে?
প্রশ্ন করে মিতা।

–তুই জানিস না কী কথা হলো?
দু হাত সোফায় মেলে দিয়ে সোফার সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে অরিয়ন।

মিতা কিছু বললো না। অরিয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। এরকম অদ্ভুত বিহেভিয়ার করছে যে আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না মিতা।

–বাবা বললো তুই নাকি সবাইকে জানিয়েছিস তুই ডিভোর্স চাস।
মাথা সোজা করে মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন।

অরিয়নের চোখ দেখতেই দু পা পিছিয়ে পড়ে মিতা। অরিয়নের চোখ দেখে মনে হচ্ছে তাতে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ভয়ানক সেই দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিতার দিকে। যেন কোনো শিকারী তার শিকারের দিকে তাকিয়ে আছে।

–আমার সব সময় মনে হতো তোর কপালটা খারাপ। ছোটবেলায় মা বাবাকে হারিয়েছিস তাই।
মিতার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বলে অরিয়ন।

–তবে আমার ভুল ভাঙ্গতে সময় লাগেনি। আসলেই তোর কপাল খারাপ।
নিজের চুল ঠিক করতে করতে উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন।

–তবে তোর মা বাবাকে হারিয়েছিস সে জন্য নয়, আমার মতো একজনের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে তাই।
কথাটা বলেই দু কদমে মিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় অরিয়ন।

চলবে…..

#পারমিতা
#পর্ব_৪৩
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

–তবে তোর মা বাবাকে হারিয়েছিস সে জন্য নয়, আমার মতো একজনের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে তাই।
কথাটা বলেই দু কদমে মিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় অরিয়ন।

মিতা ভ্রু কুঁচকে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে রইল। অরিয়নের কথার অর্থ খোজার চেষ্টা করছে।

–কেন এমনটা মনে হলো তোমার?
অরিয়নকে পাশ কাটিয়ে সোফায় গিয়ে বসতে বসতে বলে মিতা।

–কারণ তুই চাইলেও আমি তোকে যেতে দিবো না।
মিতার দিকে ঘুরে বলে অরিয়ন।

–চাচ্চু কী বললো?
প্রশ্ন করে মিতা।

–তুই ডিভোর্স এর কথা জানিয়েছিস সেটা।
বলে অরিয়ন।

–আর তুমি কী বললে?

–বললাম আমি তোকে ছাড়বো না। যাই হয়ে যাক।

–কারণ কী?
সোফা থেকে উঠে অরিয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।

–কারণ তুই আমার ওয়াইফ। তুই আমার। কারণ তুই বলেছিস তুই আমাকে ভালোবাসিস।
বিচলিত ভাবে বলতে থাকে অরিয়ন।

অরিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মিতা নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে অরিয়নের বুকের বাম পাশে রাখে।

–তোমার হার্টবিট বেড়ে গেছে।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে মিতা।

অরিয়ন নিজের হাত বাড়িয়ে মিতার হাত স্পর্শ করে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মিতার দিকে।

–তোর জন্য।
জবাব দেয় অরিয়ন।

**************************

রাগান্বিত হাবিব চৌধুরী দ্রুত হেটে সরাসরি চলে যান নিজের স্টাডি রুমে। ড্রয়ার থেকে ফোন বের করেই কাউকে কল দেয়।

–স্টাডি রুমে আয়।
বলে হাবিব চৌধুরী।

কল কেটে কারও জন্য অপেক্ষা করতে থাকে হাবিব চৌধুরী। চোখে মুখে রাগ প্রকাশ পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ধৈর্য্য হারা হয়ে যাচ্ছেন। একটু পরেউ স্টাডি রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–কী হয়েছে ভাইয়া?
চিন্তিত ওয়াহিদ চৌধুরী বলে। টেবিলের সামনে রাখা চেয়ার টেনে বসে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–কী বললো ও?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

–মিতা?
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–হ্যাঁ।

–বললো ডিভোর্স চায়।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–আর তুই কী বললি?
রাগান্বিত হাবিব চৌধুরী প্রশ্ন করে।

ওয়াহিদ চৌধুরী কোনো উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে চুপ করে রইল।

–কি হলো বল, কি বললি তুই?
চেঁচিয়ে উঠে হাবিব চৌধুরী।

–তাই যা একজন বাবার বলার উচিৎ।
জবাব দেয় ওয়াহিদ চৌধুরী।

–আর ইউ ফা*কিং সিরিয়াস ওয়াহিদ?
চেয়ার থেকে উঠে বলে হাবিব চৌধুরী।

–সব কিছু জানার পরও তুই এই কথা বলছিস? তুই কী চাস আমাদের প্ল্যানটা ভেস্তে যাক?
ওয়াহিদ চৌধুরীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।

–ওর জন্য মায়া হচ্ছিলো ভাইয়া।
নিম্নস্বরে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–এই মায়া কোনো কাজেই আসবে না। তোর মতো বেকুব আমি আর দেখিনি।এই জন্য জীবনে কোনো কিছু করতে পারিস নি তুই।

হাবিব চৌধুরীর কথা শুনতেই অবাক হয় ওয়াহিদ চৌধুরী। নিজের ভাই থেকে এভাবে কথা শুনবে ভাবতে পারেনি কখনো।

–কাল সকালেই সবার প্রথমে ওর সাথে কথা বলবি। জানাবি ওর মাথা থেকে এই ভূত সরাতে।
কথাটা বলে একটু বড় করে শ্বাস ফেলে হাবিব চৌধুরী।

–আর তা না হলে ওকে ম*রতে হবে।
কঠোর ভাবে বলে হাবিব চৌধুরী।

ওয়াহিদ চৌধুরী কিছু বললো না। মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।

–এখন যেতে পারিস।
বলে হাবিব চৌধুরী।

উঠে দাঁড়ায় ওয়াহিদ চৌধুরী। চলে যেতে নেয়।

–দাঁড়া।
বলে হাবিব চৌধুরী।

হাবিব চৌধুরীর কথা শুনে ফিরে তাকায় ওয়াহিদ চৌধুরী।

–যা বলেছি তা যদি নিজে না পারিস, তাহলে মায়াকে দিয়ে করা। দু চারটা মায়ার কথা বললে মায়া গলে যাবে। বাকিটা ও করে দিবে।
বলে হাবিব চৌধুরী।

হাবিব চৌধুরীর কথা শেষ হতেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় ওয়াহিদ চৌধুরী।

********************

–তোর জন্য।
জবাব দেয় অরিয়ন।

–আমার জন্য?
প্রশ্ন করে মিতা।

মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় অরিয়ন।

–আফরিন আপুর প্রতি তোমার অনুভূতির কী হলো?
তাকিয়ে থাকা অবস্থায় প্রশ্ন করে মিতা।

–জানিনা।
মিতার চোখে চোখ রেখে সাথে সাথেই জবাব দেয় অরিয়ন।

–ভালোবাসো না আপুকে?
কথাটা বলেই হাত সরিয়ে নিতে গেলেই অরিয়ন নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে মিতার হাত ধরে রাখে।

— না।
জবাব দেয় অরিয়ন।

অরিয়নের উত্তর শুনে অবাক হয় মিতা। হাত আবারও সরিয়ে নিতে চাইলেই অরিয়ন শক্ত করে হাত ধরে রাখে। মিতাকে টেনে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে। নিজের মাথা নিচু করে মিতার মুখ বরাবর এনে তাকিয়ে থাকে মিতার দিকে।

–তোর কপালটা খারাপ কেন জানিস?
হাত ধরা অবস্থায় বলে অরিয়ন।

মিতা কিছু বললো না। অরিয়নের দিকে তাকিয়ে রইল।

–কারণ আমার মনে হচ্ছে আমি তোর জন্য কিছু ফিল করছি। ভয়ানক কিছু। যেই অনুভূতি আমাকে বার বার হিংস্র করে দেয়। তোকে আমার কাছে আটকে রাখার জন্য। তোকে আমার করে রাখার জন্য। তোকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করে নেওয়ার জন্য।
কথাগুলো অরিয়নের মুখে যেন মাখনের মতো মনে হচ্ছে।

অন্যদিকে মিতা কি বলবে বুঝতে পারছে না। অরিয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।

–আমার মনে হচ্ছে আমি তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।
মিতার আরও কাছে গিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে অরিয়ন।

–কিন্তু এই ভালোবাসা একদম আলাদা, লাভ।
মিতার নাকের সাথে নিজের নাক স্পর্শ করাতেই চোখ বন্ধ করে মিতা।

–এই ভালোবাসা টক্সিক। এতোই টক্সিক যে তুই চলে যাওয়ার কথা বললে তোকে মে*রে ফেলতে ইচ্ছে করে আমার। তোকে অন্য কারো সাথে ভাবলেই মাথায় খু*ন চাপে। হিংস্র জানোয়ারের মতো হয়ে যাই আমি।

অরিয়ন প্রতিনিয়ত জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। মিতার এতোটা কাছে থেকেও নিজেকে কীভাবে কন্ট্রোল করে রেখেছে তা শুধু অরিয়ন নিজেই ভালো জানে। প্রতি সেকেন্ডে ইচ্ছে করছে মিতার ঠোঁট কামড়ে ধরতে।

–আমি তো এরকম ছিলাম না। তুই আমাকে কেমন বানিয়ে দিলি। একবার বিচ্ছেদের যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পেরেছি কিন্তু এবার…. এবার আর পারবো না।
মিতার ঠোঁটের সাথে অরিয়নের ঠোঁট আলতো করে স্পর্শ হয়।

–তোর রিয়ন যে তোকে ভালোবেসে ফেলেছে, লাভ।
নিম্নস্বরে বলে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনে মিতার হার্ট যেন বিদ্যুতের গতিতে লাফাচ্ছে। বন্ধ করা চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে।

–তুই চলে গেলে আমি পাগল হয়ে যাব। আমি তোকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই। আমাকে একটা সুযোগ দে প্লিজ।
অনুরোধের সুরে বলে অরিয়ন।

–আমি জানি আফরিন ফিরে এসেছে। আমি এটাও জানি, ওকে দেখলে তোর কষ্ট হয়। কিন্তু ও এখন শুধুই আমার অতীত। ও আমার জীবনে এখন আর নেই। বিশ্বাস কর আমাকে প্লিজ।
আবারও বলে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনে চোখ খুলে তাকায় মিতা। অরিয়নের চোখ এখনো বন্ধ। মিতার ঠোঁটের সাথে অরিয়নের ঠোঁট স্পর্শ হতেই বার বার নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে একটু করে সরে আসে মিতার ঠোঁট থেকে। মনে হচ্ছে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।

–চোখ খুলো।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে মিতা।

মিতার কথা শুনতেই সাথে সাথে চোখ খুলে অরিয়ন। অরিয়নের চোখে কিছু খুজার চেষ্টা করে মিতা। হয়তো মিথ্যে? কি পেলো জানেনা। শুধু জানে একটু পরেই মিতার চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়তে থাকে।

–প্লিজ প্লিজ প্লিজ লাভ, প্লিজ কান্না করিস না। তোর চোখের পানি আমার সহ্য হয় না।
নিজের দু হাত দিয়ে মিতার গাল ধরে তাতে চুমু খেতে খেতে বলে অরিয়ন। মিতা নিজের হাত দিয়ে অরিয়নের দু হাত জড়িয়ে ধরে।

–আই লাভ ইউ পরী, আই লাভ ইউ সো সো সো মাচ।
কথাটা বলতেই যেন ক্ষণিকের জন্য অরিয়নের চোখে পানি দেখলো মিতা।

–আই লাভ ইউ টু রিয়ন।
অরিয়নের গলা জড়িয়ে ধরে বলে মিতা।

–তুই আমাকে ছেড়ে যাবি না তো?
ভয়ে ভয়ে বলে অরিয়ন।

–না।
জবাব দেয় মিতা।

মিতার জবাব শুনতেই হাসি ফুটে অরিয়নের মুখে। চোখ থেকে গড়িয়ে এক ফোঁটা পানি পরে।

–তুমি কাঁদছো?
অবাক হয়ে বলে মিতা।

–না তো। আমি আজ অনেক খুশি, অনেক বেশি। তুই জানিস না কী দিয়েছিস তুই আমাকে।
মিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে অরিয়ন। মিতাও অরিয়নকে জড়িয়ে ধরে।

–আই লাভ ইউ সো মাচ, লাভ। সো মাচ।
হাসিখুশি অরিয়ন আবারও বলে উঠে।

মিতার মুখেও হাসি ফুঁটে উঠেছে। অরিয়নকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে। ইচ্ছে করছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু বুকে যদি ব্যাথা পায় তাই আর শক্ত করে ধরলো না।

অরিয়ন মিতাকে জড়িয়ে ধরা থেকে একটু সরে এসেই ঝাপিয়ে পড়ে মিতার ঠোঁটের উপর।

হঠাৎ করে চুমু দেওয়াতে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে মিতা কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয়। মিতার ঠোঁট স্পর্শ করতেই যেন প্রাণ ফিরে ফেলো অরিয়ন। চুষতে থাকা মিতার ঠোঁটে কামড়ে ধরতেও সময় লাগে না।

মিতা অরিয়নের চুমুর সারা দেয় আলতো করে। নিজের হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে অরিয়নের গলা। চুমু খেতে থাকা অরিয়ন নিজের হাত দিয়ে মিতার খোঁপা একটানে খুলে ফেলে। খোঁপা খুলতেই নিজের হাত দিয়ে মিতার গলা থেকে টান দিয়ে ওড়না ফেলে দেয় অরিয়ন।

–অয়েট।
অরিয়নের থেকে একটু সরে এসে বলে মিতা।

–না। নিজেকে দূরে দূরে রেখে অনেক শাস্তি দিয়েছিস আমাকে।
আবারও মিতার ঠোঁটে চুমু খেতে খেতে বলে অরিয়ন।

–আজ তোকে শাস্তি দিবো আমি।
দুষ্টামির হাসি দিয়ে কথাটা বলেই নিজের হাত দিয়ে মিতার কোমর জড়িয়ে ধরে মাটি থেকে উপরে তুলে নিয়ে সোজা হাটতে থাকে বিছানার দিকে।

–আরে ওয়েট। ওয়েট, তুমি অসুস্থ।
বলে মিতা।

অরিয়ন মিতাকে বিছানায় বসায়।

–কথা শুনো, এমনিতেই অসুস্থ তুমি তার মধ্যে…

–কোনো অসুস্থ না। সুস্থ আমি। দেখছিস না হাটাচলা সব করতে পারছি।

–তুমি..

–কোনো তুমি না। আজ কোনো বাধাই মানবো না আমি।
কথাটা বলেই মিতার গলায় চুমু খায় অরিয়ন।

–থ্যাংক ইউ। আমাদের সম্পর্ককে একটা সুযোগ দিয়েছিস তাই।
মিতার কপালে চুমু খেয়ে বলে অরিয়ন।

–তোমাকেও ধন্যবাদ।
বলে মিতা।

*******************

বিছানায় বসে আছে আনিকা চৌধুরী। ভোরের আলো চারিপাশে দেখা যাচ্ছে। বিছানার এক কোণেই শুয়ে আছে হাবিব চৌধুরী। আজ আনিকা চৌধুরীর হাতে ছোট অহনার ছবি। হাবিব চৌধুরী ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় লুকিয়ে লুকিয়ে আলমারি থেকে বের করে নিয়েছে আনিকা চৌধুরী।

ছোট্ট অহনার ছবিতে হাত বুলাতেই বুক ফেটে কান্না আসছে আনিকা চৌধুরী। চোখের পানি ছবির ফ্রেমটার উপর পড়তে শুরু করেছে। ঘুমন্ত হাবিব চৌধুরী পাশ ফিরতেই লক্ষ্য করে আনিকা চৌধুরী বসে আছে। তিনি যে কান্না করছেন তা মাঝে মধ্যে শরীর নড়তে দেখে বুঝতে পারছেন হাবিব চৌধুরী।

–আনিকা।
ডাক দেয় হাবিব চৌধুরী।

আনিকা চৌধুরী কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। রোবটের মতো বসে রইল।

–অহনার ছবি আবারও বের করেছো তুমি?
শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলে হাবিব চৌধুরী।

–ঐ মেয়েটা মরে গেলে কী এমন ক্ষতি হতো? কেন আমার অহনাকে মরতে হলো হাবিব?
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে আনিকা চৌধুরী।

–এভাবে বলো না আনিকা।
হতাশার কন্ঠে বলে হাবিব চৌধুরী।

–ঐ মেয়েটার জন্য আমার অহনাকেও দেখতে দেও নি তোমরা।
অভিমানের সুরে বলে আনিকা চৌধুরী।

–তুমি ভালোই জানো কারণ টা মিতা না, আনিকা। অহনার ছবি দেখলেই তুমি পাগলামি শুরু করে দেও। তাই ডাক্তার নিজেই বলেছে সরিয়ে রাখতে।
আনিকা চৌধুরীর কাঁধে হাত দিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।

–সব তোমাদের সাজানো নাটক। সব। ঐ মেয়েকে বাঁচানোর একটা পন্থা। কী এমন আছে যার জন্য এতো মূল্য ওর জীবনের, হ্যাঁ? নাকি সবটাই টাকার জন্য, হাবিব?
চেঁচিয়ে উঠে আনিকা চৌধুরী।

–খবরদার আনিকা। মুখ সামলে কথা বলবে।
বিছানা থেকে উঠে চেঁচিয়ে উঠে হাবিব চৌধুরী।

আনিকা চৌধুরী আর কিছু বললো না। অহনার ছবি নিয়েই কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

চলবে……..

#পারমিতা
#পর্ব_৪৪
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

ভোরের আলো চারিপাশে ফুঁটতে শুরু করেছে। সকাল সকাল এই যানজটপূর্ণ শহর খালি থাকায় সব কিছুতে যেন একটা শান্তির আবহাওয়া বিরাজ করছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। ঘুমন্ত অরিয়নের কানে পাখির আওয়াজ যেতেই চোখ খুলে তাকায়। গতকাল রাতে ঘুম ভালো হওয়াতে আজ এতো সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গলেও ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে নিজেকে। মিতার কাছ থেকে এই শান্তিটা অরিয়ন আগে থেকেই পেত কিন্তু মিতাকে ভালোবাসার পর তা যে হাজারগুন বেড়ে যাবে তা বুঝতেই পারেনি অরিয়ন।

অরিয়ন মাথা ঘুরিয়ে অন্য পাশে ফিরতেই লক্ষ্য করে মিতা বিছানায় নেই। এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসে অরিয়ন। মনের মধ্যে কেমন যেন এক অজানা ভয় কাজ করলো, মিতাকে বিছানায় না দেখে। তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে নামতেই লক্ষ্য করে ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। পানি পড়ার শব্দ শুনতেই যেন স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো অরিয়ন।

“কী আজেবাজে ভাবছিলাম” বিরবির করে বলে অরিয়ন।

এতো সকাল সকাল অরিয়নের ইচ্ছে করছে দুজনে ছাদে বসে দু কাপ কফি খাওয়ার। মিতা ওয়াশরুম থেকে আসতে আসতে কফি করার জন্য রান্নাঘরের দিকে যায় অরিয়ন।

এতো সকাল সকাল এই বাড়ির কোনো কাজের লোক এখনো উঠেনি। রান্নাঘর থেকে কফি বানিয়ে দু কাপ দু হাতে নিয়ে একটু পরেই রুমে চলে আসে অরিয়ন। মিতা এখনো ওয়াশরুমে।

–এখন গোসল করে লাভ নেই, একটু পর আবার করতে হবে।
হাসতে হাসতে বলে অরিয়ন।

কফির কাপ টেবিলের উপর রেখে বিছানা থেকে নিজের টি শার্ট তুলে নিয়ে পরে নেয় অরিয়ন। চিরুনি দিয়ে দ্রুত চুল আঁচড়ে নেয়। নিজেকে মিতার সামনে পরিপাটি করে রাখতে খুব ইচ্ছে করে ইদানীং।

চুল আচঁড়ানো শেষ হলে বিছানায় গিয়ে বসে অরিয়ন। কফি বানানোর সময় কমন ওয়াশরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে এসেছিলো।

–লাভ, তাড়াতাড়ি কর। সকাল হয়ে যাচ্ছে। কফি বানিয়ে এনেছি,একসাথে ছাদে বসে খাবো।
বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে আনলক করতে করতে বলে অরিয়ন।

মিতা গোসল করতে করতে অফিসের মেইল চেক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অরিয়ন।

–মোটরের সব পানি কী আজ তুই একাই শেষ করে দিবি? কফিটাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বের হ।
মেইল চেক করে মোবাইল হাতে নিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাড়াঁতে দাঁড়াতে বলে অরিয়ন।

ভোরের আলো খুব ভালো করেই উঠেছে। আর একটু পরেই রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যাবে। আকাশের দিকে তাকিয়ে গতকাল রাতের কথা ভাবতেই আলতো করে এক হাসি ফুঁটে অরিয়নের ঠোঁটে। জানালার পাশ থেকে সরে আসবে তখনি চোখ যায় বাড়ির গেইটের দিকে। একটা মেয়ে বড় স্যুটকেস হাতে গেইটের দিকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাচ্ছে। অরিয়নের মাথায় কী ঢুকলো জানেনা, শুধু জানে ক্ষনিকের মধ্যে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে হাজির হয়।

–পরী? পরী?
অনবরত ডাকতে থাকে অরিয়ন।

ভেতর থেকে মিতার কোনো উত্তর আসলো না। দরজা ধাক্কা দিতেই লক্ষ্য করে ওয়াশরুমের দরজা খোলা। তাড়াতাড়ি করে ভিতরে গিয়ে দেখতে পায় ওয়াশরুমের ট্যাপ ছাড়া। বালতি ভরে পানি পড়ছে ক্রমাগত। অরিয়ন আর অপেক্ষা না করে দৌড়ে চলে যায় জানালার কাছে। গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কালো রঙের গাড়ির কাছাকাছি চলে গেছে মেয়েটি।

–পরীইইইইইইইইইইইই..
কোনো কিছু না ভেবেই চিৎকার করে উঠে অরিয়ন।

অরিয়নের ডাক শুনতেই দাঁড়িয়ে যায় মেয়েটি। ড্রাইভারের হাতে নিজের স্যুটকেস দিয়ে ধীরে ধীরে অরিয়নের দিকে ফিরে তাকায়।

“পরী” অরিয়নের পরী। এতো সকাল সকাল স্যুটকেস হাতে কেন অচেনা এক গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তা অরিয়ন জানেনা। শুধু জানে অরিয়নের মাথা ঘুরাচ্ছে। চোখমুখ, এই পৃথিবী সব অন্ধকার হয়ে আসছে অরিয়নের সামনে। মিতা অরিয়নের দিকে ফিরে তাকিয়ে যেন এক মূহুর্ত অপেক্ষা করলো না তাড়াহুড়ো করে গাড়ির দরজা খুলতে থাকে।

–নো, নো, নো, নো। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।
অরিয়ন আর অপেক্ষা না করে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বিরবির করে কথাগুলো বলেই যাচ্ছে।

–তুই আমার সাথে এমন করতে পারিস না। পারিস না, পরী। প্লিজ প্লিজ প্লিজ, লাভ।
সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে অরিয়ন।

বাড়ির কয়েকজন কাজের লোক মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। ড্রয়িং রুম পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সকলেই।

–স্যার, স্যার, কোথায় যাচ্ছেন?
অরিয়নকে পাগলের মতো দৌড়াতে দেখে একজন কাজের লোক বলে।

অরিয়ন যেন কারও কোনো কথাই শুনলো না। নিজের গতিতে দৌড়াতে থাকলো।

–তুই বলেছিলি তুই আমাকে ভালোবাসিস। আমাকে ছেড়ে যাবি না, পরী। প্লিজ পরী।
দৌড়াতে দৌড়াতে বলে অরিয়ন।

–আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া..
চিৎকার করতে করতে গেইটের বাইরে গিয়ে দাঁড়ায় অরিয়ন।

কালো রঙের গাড়িটা কিছুপথ অতিক্রম করে ফেলেছে। অরিয়নের পক্ষে দৌড়ে ধরা অসম্ভব। গাড়ির নাম্বার প্লেটের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় কোনো কিছুই লেখা নেই। সবটা খালি।

–পরীইইইইইইইইইইইই
চিৎকার করে উঠে অরিয়ন।

গাড়িতে বসে থাকা মিতার চোখদিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। অরিয়নের ডাক শুনতে পেয়েই জানালা দিয়ে মাথা বের করে অরিয়নের দিকে তাকায়। অরিয়ন এক দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে বার বার অনুরোধ করছে মিতাকে। এতোটা খারাপ অবস্থায় আর কোনোদিন অরিয়নকে দেখেনি মিতা। তাও নিজের মনকে শক্ত করে বসে থাকে।

–তুমি ঠিক কাজটাই করেছো।
পাশে বসে থাকা কবির রহমান মিতার কাঁধে হাত দিয়ে বলে।

মিতা কবির রহমানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়। গাড়ির সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।

“আই লাভ ইউ সো মাচ, পরী। সো সো মাচ” অরিয়নের কথাটা বার বার কানে ভাসছে মিতার।

–লায়ার।
মনে মনে বিরবির করে বলে মিতা।

****************

গেইটের বাইরে রাস্তায় অরিয়ন কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো জানেনা। শুধু জানে অরিয়নের চোখের সামনে থেকে গাড়িটা অনেক আগেই চলে গেছে। পাথরের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন।

–অরিয়ন?
পেছন থেকে শব্দ আসে হাবিব চৌধুরীর।

–অরিয়ন? কী হয়েছে তোর?
আবারও বলে হাবিব চৌধুরী।

অরিয়ন যেন কারও কথা শুনলোই না। রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে এক নজরে।

–কি হয়েছে তোর?
অরিয়নের কাঁধ ধরে ঝাকি দিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।

অরিয়ন ঘুরে হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকায়। পাশেই ওয়াহিদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে।

–এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আর দৌড়াচ্ছিলি কী জন্য?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–পরী…
এতো ধীরেই অরিয়নের কন্ঠস্বর আসলো যেন অরিয়ন নিজেই শুনতে পারলো না।

–মিতা? মিতার কী হয়েছে?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–চলে গেছে।
বলে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনে হতবাক হয়ে যায় হাবিব চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরী। চোখমুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ক্ষণিকেই।

–চলে গেছে মানে? কী সব আজে বাজে বলছিস? মিতা কোথায়?
রাগান্বিত ওয়াহিদ চৌধুরী বলে।

–তোমার মেয়ে নেই, নেই ও। চলে গেছে ও, চলে গেছে। একটা মিথ্যেবাদী তোমার মেয়ে।
ওয়াহিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন। প্রতিটা কথায় ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই প্রকাশ পাচ্ছে না। রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে অরিয়নের।

কেউ আর কিছু বলার আগেই অরিয়ন বাড়ির দিকে হাটতে থাকে। সরাসরি চলে যায় নিজের রুমে। রুমে ঢুকতেই গতকাল রাতের সবকিছু যেন অরিয়নের চোখে ভাসতে থাকলো। মিতার বার বার অরিয়নকে ভালোবাসি বলা, অরিয়নের বুকে আলতো করে মাথা রাখা।

–সব মিথ্যে ছিলো, সব।
কথাটা বলেই ড্রেসিং টেবিলের উপরে থাকা সব ছুরে ফেলে দেয় অরিয়ন।

–আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া
ড্রসিং টেবিলের আয়নায় অনবরত ঘুষি মারতে মারতে চেচিয়ে উঠে অরিয়ন।

পরীকে ঐভাবে যেতে দেখে ঠিকি বুঝতে পেরেছে গতকাল রাতে নিজে থেকে এতো সহজে অরিয়নকে মেনে নেওয়া, নিজেকে অরিয়নের কাছে সপে দেওয়া সবটাই মিথ্যে ছিলো। সবটাই পরীর অভিনয় ছিলো। এই পরী আর ফিরে আসবে না। ফিরে আসার উদ্দেশ্যে পরী কোথাও যায় নি।

অরিয়নের মনে হচ্ছে কেউ পানিতে অরিয়নের মাথাটা চেপে ধরেছে। শ্বাস নিতে প্রতিনিয়ত কষ্ট হচ্ছে অরিয়ন। হাত দিয়ে র*ক্ত বের হচ্ছে সেদিকে যেন খেয়াল নেই অরিয়নের।

–তুই যদি ভাবিস এতো সহজে আমাকে ছেড়ে যাবি তাহলে ভুল ভাবছিস তুই। তোকে আমি কোথাও যেতে দিবো না৷
আবারও আয়নায় ঘুষি মারতে মারতে বলে অরিয়ন।

–তুই আমার, আমার, আমার।
মন্ত্রেরর মতো বলতে থাকে অরিয়ন।

*******************

–বাসায় এতোগুলো কাজের লোক থাকতে একটা মেয়ে চুপিচুপি বাসা থেকে বের হয়ে গেল আর তোমরা কেউ জানতেই পারলে না?
ড্রয়িংরুমে সকল কাজের লোকের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলতে থাকে হাবিব চৌধুরী।

–পুলিশ যে কোনো মুহূর্তে চলে আসবে ভাইয়া।
ফোন রেখে হাবিব চৌধুরীর কাছে এসে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে। মায়া চৌধুরী অনবরত কেঁদে যাচ্ছে। আফরিনের চোখেও পানি,মায়া চৌধুরীকে ধরে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আনিকা চৌধুরীর মুখে টেনশন বা শোকের কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে মিতার চলে যাওয়াতে খুশি হয়েছে তিনি।

— কাপড়চোপড় কয়েকটা নিয়ে গেছে। আর মোবাইল গেস্ট রুমেই রাখা ছিলো।
আবরার সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে হাবিব চৌধুরীর দিকে মিতার মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বলে।

আবরারের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে স্ক্রিন টার্চ করতেই অবাক হয় হাবিব চৌধুরী।

–রিসেট করা। মানে ইচ্ছে করেই রেখে গেছে।
বলে হাবিব চৌধুরী।

–মিতা নিজের ইচ্ছায় গেছে? কোথায় আর কার সাথে?
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–দেখো কোনো ছেলের সাথে পালিয়েছে নাকি আবার।
ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে বলে আনিকা চৌধুরী।

–সাবধানে কথা বলুন আপা।
বলে মায়া চৌধুরী।

–কী সাবধানে বলবো মায়া? তোমরা আমরা ছাড়া আর কেউ আছে আমাদের আত্নীয় যে,তাদের বাড়িতে গিয়েছে? এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়েছে মানে পালিয়েছে। কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো নাকি খোজ নিয়ে দেখো।
বলে আনিকা চৌধুরী।

–আন্টি প্লিজ চুপ করুন। মিতা এমন না তা আপনি নিজেও ভালো করে জানেন।
বলে আফরিন।

আফরিনের কথা শুনে চুপ থাকে আনিকা চৌধুরী। বাকিরা সবাই নিজেদের চিন্তায় ব্যস্ত। মিতার চলে যাওয়ার কারণ কেউ বুঝতে পারছে না।

–আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। হঠাৎ করে কি হলো? গতকাল হঠাৎ করে ডিভোর্স এর কথা বললো আর আজ সকাল বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
বলে চিন্তিত হাবিব চৌধুরী।

–ডিভোর্স?
অবাক হয়ে বলে আফরিন।

–ডিভোর্স? কার ডিভোর্স?
হতবাক হয়ে বলে মায়া চৌধুরী।

–মিতা আর অরিয়নের।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–এসব কখন হলো? আমাদের কেন জানানো হলো না? হঠাৎ করে মিতা ডিভোর্স কেন চাইলো?
সোফা থেকে উঠে গিয়ে ওয়াহিদ চৌধুরীর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে মায়া চৌধুরী।

–আফরিন আর অরিয়নের জন্য।
মাথা নিচু করে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–কি?
অবাক হয়ে বলে মায়া চৌধুরী ও আফরিন।

–হ্যাঁ।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–সেটাই যদি কারণ হয় তাহলে বাড়ি ছেড়ে কেন যাবে? বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সাথে কী সম্পর্ক তার?
প্রশ্ন করে মায়া চৌধুরী।

–সেটা তো আমি ও বুঝতে পারছি না।
বলে হাবিব চৌধুরী।

–ভেবে দেখো, আমি যা বললাম তাই হবে।
বলে আনিকা চৌধুরী।

–মিতা আবার কিছু জেনে গেলো না তো?
হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–না, না। তেমনটা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বলে হাবিব চৌধুরী।

–তাহলে কী সত্যিই কোনো ছেলে?
বলে হাবিব

–না। মিতা এমনটা কোনোদিন করতেই পারে না। তোমরা কী পাগল হয়ে গেছো? কার সম্পর্কে কথা বলছো একটু ভেবে দেখো।
বলে আবরার।

–স্যার, পুলিশ এসেছে।
বলে শায়লা।

–চল ওয়াহিদ।
হাবিব চৌধুরী বলে।

হাবিব চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরী পুলিশের সাথে কথা বলতে চলে যায়।

–কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। এই সুখের সংসারে কার নজর লাগছে আল্লাহ ভালো জানে।
কাঁদতে কাঁদতে বলে মায়া চৌধুরী।

********************

ফ্লোরে বসে আছে অরিয়ন। হাত আর ফ্লোর র*ক্তাক্ত। সব কিছু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পরে আছে রুমের মধ্যে। অরিয়নের চোখে র*ক্ত জমাট বেধেছে। এক নজরে তাকিয়ে আছে হাতের মোবাইলের দিকে। মোবাইলের স্ক্রিনে মিতার ছবি ভাসছে। ছবিতে মিতা আইফেল টাওয়ারের ৩য় তলায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত। মিতার ঘন লম্বা চুলগুলো বাসাতে উড়ছে। মুখে ফুঁটে আছে মিষ্টি এক হাসি৷ কী ভেবে ছবিটা তুলেছিলো তা অরিয়ন জানেনা। তবে সেই মুহুর্তে মনে হয়েছিলো ছবিটা তুলে রাখা প্রয়োজন। তাই ছবিটা মিতার অজান্তে তুলে রাখে অরিয়ন।

–কার জন্য বা কী কারণে আমাকে ছেড়ে চলে গেলি আমি জানিনা, তবে এতটুকু জানি, কাজটা তুই ভালো করিসনি।
ছবির মিতার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে অরিয়ন।

–নাকি অন্য কারো প্রেমে পড়েছিস তুই, পরী? অন্য কেউ তোকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসবে বলেছে? অন্য কারো সাথে তুই ভালো থাকবি?
নিজের র*ক্তাক্ত আঙ্গুল দিয়ে মিতার ছবিতে স্পর্শ করতে করতে বলে অরিয়ন।

–এর শাস্তি তোকে পেতে হবে। আমাকে মিথ্যে বলার শাস্তি তোকে পেতে হবে, পারমিতা।

চলবে……