পারমিতা পর্ব-৫৫+৫৬+৫৭

0
96

#পারমিতা
#পর্ব_৫৫
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

চট্টগ্রাম এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মায়া চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরী রাতের খাবার খেয়েই নিজেদের বাড়িতে চলে যাবেন।

চট্টগ্রাম থেকে মিতাদের সাথে অরিয়ন আসেনি। তার মানে যে অরিয়ন আগেই চট্টগ্রাম চলে গেছে তা বুঝা হয়ে গেছে মিতার।

রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছে সবাই। সোফায় বসে নিউজ দেখছেন বাড়ির বড়রা। আবরার আর আফরিন যার যার রুমে। মিতাও তার রুমে।

বাড়িতে ঢুকেই সবাইকে একসাথে দেখে একটু খুশি হয় অরিয়ন। আবরার আর হাবিব চৌধুরী না থাকাতে ব্যবসায়ে অনেকগুলো কাজ জমে গেছে। একা অরিয়নকে তা সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই তো সবাই সন্ধ্যা করে চট্টগ্রাম চলে আসলেও অরিয়ন সকালেই চলে এসেছে।

–তোমরা কী আজ চলে যাবে?
দরজার সামনে ব্যাগ দেখে বলে অরিয়ন।

–হ্যাঁ।
জবাব দেন মায়া চৌধুরী।

–দেখ না, কত করে বললাম আজ রাতটা থাকতে তাও রাজি হচ্ছে না।
বলেন হাবিব চৌধুরী।

অরিয়ন গিয়ে হাবিব চৌধুরীর পাশে দাঁড়ায়।

–বাড়িটা একদম খালি ভাইয়া। মানুষের ভরসায় বাড়ি আর কতদিন খালি রাখবো।
ওয়াহিদ চৌধুরী বলেন।

–এখন কেমন লাগছে তোমার বাবা?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–ভালো আছি। তোর শরীরের কি অবস্থা? ক্ষতগুলো ভালো হয়েছে?
অরিয়নের হাত ধরে বলে হাবিব চৌধুরী। তার কন্ঠে ছেলের জন্য মায়া প্রকাশ পাচ্ছে।

–আমি ও ভালো আছি। একটু একটু ব্যথা ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।
জবাব দেয় অরিয়ন।

–চলো চাচ্চু, তোমাদের নামিয়ে দিয়ে আসি আমি।
সোফায় বসতে বসতে ওয়াহিদ চৌধুরীকে বলে অরিয়ন।

–তুই যাবি? আচ্ছা যেতে পারিস।

ওয়াহিদ চৌধুরী কথাটা বলে ২য় তলার সিড়ির দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে বলে মনে হয়।

–চলো।
উঠে দাঁড়িয়ে বলে অরিয়ন।

–একটু অপেক্ষা কর। এক্ষুনি মিতা চলে আসবে।
মায়া চৌধুরী বলে উঠে।

–পরী চলে আসবে মানে?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–মিতা বললো ও যেতে চায় আমাদের সাথে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–ও যেতে চায়? কই আমাকে তো এই বিষয়ে কিছু বললো না।

–তুই ব্যস্ত বলে হয়তো বলার সময় পায়নি।
হাবিব চৌধুরী বলে।

–ওহ, আচ্ছা।
কথাটা বলেই হাঁটা শুরু করে অরিয়ন।

***********************

অরিয়ন যখন রুমে প্রবেশ করলো মিতা তখন সুটকেসে নিজের কাপড় রাখতে ব্যস্ত। অরিয়নকে দেখেও না দেখার মতো করে কাপড় গুছাতে মন দেয় মিতা।

–আমাকে বলিস নি কেন?
মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–তুমি বাসায় ছিলে না।
স্যুটকেসের চেইন লাগাতে লাগাতে উত্তর দেয় মিতা।

–কতদিনের জন্য যাচ্ছিস?
মিতার একটু কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে বলে।

–একেবারের জন্য।
স্যুটকেস নিচে নামিয়ে রাখতে রাখতে জবাব দেয় মিতা।

–মানে?

–মানে আমি চলে যাচ্ছি। এখানে থেকে আর কারো সমস্যা বাড়াতে চাই না।
কড়া কন্ঠে জবাব দেয় মিতা।

–সমস্যা বাড়াচ্ছিস মানে? কে বলেছে তোর জন্য সমস্যা হচ্ছে?

অরিয়নের কথা শুনে মিতা দু পা এগিয়ে আসলো।

–তুমি কি তাই বুঝাচ্ছো না? আমার জন্য যদি সমস্যা নাই হতো তাহলে তো আর এভাবে দিনের পর দিন আমাকে ইগনোর করতে না তুমি।

–পরী…

–কি রিয়ন? কি চাও তুমি? আমার ভুল ছিলো তা তো আমি মেনে নিয়েছি। তার জন্য তিলে তিলে ম*রছি আমি আর কি করলে খুশি হবে তোমরা?
কথাগুলো বলতেই মিতার চোখে পানি চলে আসে।

–আমি বাবকে আর চাচ্চুকে কবির রহমানের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম তাঁরা মিথ্যে বলেছে সেটা কী আমার দোষ? তোমাকে বার বার ভালোবাসি বলার পরও তুমি আমাকে বুঝিয়েছো তোমার মন অন্য কারোর। কিন্তু সেদিন..

–পরী..
অরিয়ন কথার মাঝেই মিতার দিকে এগিয়ে যায়।

–না।
হাত দেখিয়ে অরিয়নকে থামতে বলে মিতা।

–কিন্তু সেদিন তুমি আমাকে হুট করেই ভালোবাসি বলেছো। বিশ্বাস করতে পারিনি আমি,সেটা কী আমার দোষ? আমার ভালোর জন্য তোমরা সবটা লুকিয়েছো কিন্তু আমার ভালোটা কথায় হলো?

–যা হয়েছে তার জন্য আমি ক্ষমা চেয়েছি রিয়ন। কিন্তু তোমার….কিন্তু তোমার এই ব্যবহার আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। আমার ভুলের কী কোনো প্রায়শ্চিত্ত নেই? নাকি সেদিন আমি ম*রে গেলেই তোমরা খুশি হতে?
আবারও বলতে থাকে মিতা। মিতার সহ্যের বাধ যেন ভেঙ্গে গেছে।

অরিয়ন চুপ করে মিতার কথা শুনলো।

–তোমার ব্যবহার, তোমার কথায় মনে হচ্ছে সব কিছুর সমাধান আমার ম*রণ ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের খেলা তো অন্যরকম। যেহেতু আমি ম*রিনি সেহেতু তুমি আমাকে এভাবে শাস্তি দিচ্ছো। তুমি যে আমার সাথে আর থাকতে চাও না তা আমি বুঝতে পেরেছি রিয়ন। তোমাকে আর কষ্ট দিবো না।
কথাগুলো বলতে বলতে বিছানায় গিয়ে বসে মিতা। চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে শুরু করেছে।

মিতা বিছানায় বসতেই অরিয়ন ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। মিতার সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে। মিতার চোখ কান্নার ফলে লাল হয়ে আছে।

–তোর বয়স তখন ৪। একদিন তোর আম্মু আব্বুর সাথে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলি তুই।
বলতে থাকে অরিয়ন। হঠাৎ করে অরিয়ন কি বলছে মিতা কিছুই বুঝতে পারছে না। ভ্রু কুঁচকে অরিয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইল।

–আমি ঘুমিয়েছিলাম। বুকের উপর কিছুর ভার অনুভব করতেই চোখ খুলে তাকাই। ঘুম ঘুম চোখে আমার দেখতে পাই আমার বুকের উপর বসে আছিস তুই। পরণে সাদা রঙের একটা জামা। চাচ্চু পরীর ডানা কিনে এনেছিলো। সেটাই পড়াও পড়া ছিলি। হাতে ম্যাজিক্যাল স্টিক আর সেই স্টিক দিয়ে কি একটা বলে আমাকে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করছিলি তুই।
কথাটা বলতেই হেসে দেয় অরিয়ন।

–তোকে দেখে সেদিন আমার মনে হয়েছিলো তুই সত্যিই একটা পরী। এরপর থেকেই তোকে পরী বলে ডাকতাম আমি।
মিতা শুধু অরিয়নের দিকে তাকিয়েই রইল।

–আফরিনের জন্য আমার অনুভূতি তো কোনো ছলনা ছিলো না। আমি আমার সব দিয়েই ওকে ভালোবেসেছিলাম। তাহলে আমি কিভাবে বলে দেই যে, আমি তোকে ভালোবাসি?
নিজের হাত দিয়ে মিতার চোখের পানি মুছে দেয় অরিয়ন।

–আফরিনকে এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে ভুলে গেলাম আমি জানিনা! তবে শুনেছিলাম, বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কে ভালোবাসা আল্লাহ প্রদত্ত। হয়তো তাই খুব তাড়াতাড়িই তোকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি।

–ভালোই যদি বাসো তাহলে এখন কেন আমার সাথে থাকতে চাচ্ছো না তুমি?
প্রশ্ন করে মিতা।

–আমরা যাকে বেশি ভালোবাসি তার উপর আমার অভিমানও বেশি থাকে।
মিতার মুখ থেকে চুল সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দেয় অরিয়ন।

–সবাই তোকে খুব ভালোবাসে। হ্যাঁ আমি জানি মা তোকে পছন্দ করে না। কারণটাও এখন তোর সামনে পরিষ্কার। এখন বলতে পারিস আমরাও কী তার মতো ভাবি? না ভাবি না। তাহলে কেন মাকে কোনোদিন কিছু বললাম না? কারণ মা মানুসিক ভাবে অসুস্থ। অহনার মৃত্যুর পর উনি প্রায় পাগল। মানুসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। তোকে দেখলেই তার ট্রমার কথা মনে পড়ে, না চাইতেও আর কন্ট্রোল করতে পারেনা।

–আন্টির ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারছি রিয়ন।
জবাব দেয় মিতা।

–বাবা, আরিয়ানকে ঐ অবস্থায় দেখে আমার মাতগা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। তোকে ওরা কতটা নির্যাতন করেছে তা তো নাই বললাম। গু*লিটা তোর লাগতে পারতো! তোকে আমি সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলতে পারতাম। বাবা বা আরিয়ানকেও পারতাম। তাহলে আমার কি রাগ করার কারণ নেই? তাহলে আমি কী আমার পরীর উপর একটু অভিমান করতে পারিনা?

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে মিতা।

–তাহলে কেন ভাববি আমি তোর সাথে থাকতে চাই না? আমার পৃথিবী জুড়ে শুধু তুই আর তুই।
মিতার ঠোঁটে আলতো করে এক চুমু এঁকে দেয় অরিয়ন।

–সরি।

–আমিও সরি। অনেক কষ্ট দিয়েছি আমার পরীকে তাই।

অরিয়নের সব কথা শুনে অভিমান কাঁটে মিতার। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অরিয়নকে। অরিয়নও জড়িয়ে ধরে মিতা।

পরক্ষণেই মিতার ঠোঁটের উপর আক্রমণ চালায় অরিয়ন। কতদিন পর মিতার এতোটা কাছে এসেছে তা যেন ভুলে গেছে রিয়ন। মিতার ঠোঁটের সাথে অরিয়নের ঠোঁট স্পর্শ করতেই হাসি ফুঁটে অরিয়নের মুখে। মিতাকে কাছে পেয়েই সেই স্বস্তির আর মানুসিক শান্তির অনুভূতিটা ফিরে এসেছে।

–আহ..
কামড়ে ধরে মিতার ঠোঁট।

কোমলতার সাথে চুমু খেতে থাকা অরিয়ন যেন ক্ষনিকের মধ্যেই রাফমোডে যেতে সময় লাগে না।

–সরি।
হুট করেই বলে উঠে অরিয়ন।

–সরি কেন?
বুঝতে না পেরে বলে মিতা।

–এরপর যা হবে তার জন্য!
কথাটা বলেই মিতার গলায় চুমু দিতে থাকে অরিয়ন।

–মিতা? মিতা?
দরজায় কড়া নাড়ে শায়লা।

লাফিয়ে উঠে একে অপরের সাথে সরে যায় দুজনেই।

–জ্বি, শায়লা আপু।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দেয় মিতা।

–তোকে ডাকছে। সবাই নিচে অপেক্ষা করছে।
বাইরে থেকে শায়লার কথা ভেসে আসে।

–আচ্ছা আসছি আমি।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয় মিতা।

–এখন নিচে গিয়ে “যাবি না বলে” আয় যা৷
বলে অরিয়ন।

–ওকে।
জবাব দেয় মিতা।

চলবে….

#পারমিতা
#পর্ব_৫৬
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

শায়লার ডাকে রুম থেকে বেরিয়ে আসে মিতা। চোখের পানি মুছতে মুছতে ড্রয়িং রুমের দিকে এগোতে থাকে।

মায়া চৌধুরী, আফরিন আর ওয়াহিদ চৌধুরী অপেক্ষা করছে মিতার জন্য। হাবিব চৌধুরী আর আনিকা চৌধুরী মাঝে মধ্যে তাদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।

–কিরে,এতোক্ষণে সময় হলো?
মিতাকে দেখতে বলে আফরিন।

মিতাকে দেখা মাত্রই চিন্তিত লাগে মায়া চৌধুরীকে।

–ব্যাগ কোথায়? লেট হয়ে যাচ্ছে তো।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–আমি এখন যাব না,বাবা।
সকলের সামনে এসে বলে মিতা।

–যাবি না মানে? কেন কি হয়েছে?
চিন্তিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে উঠে ওয়াহিদ চৌধুরী।

কিছুক্ষণ আগেও যাবে বলে বায়না ধরলো। হঠাৎ করে কেন মত চেঞ্জ হলো তা বুঝতে পারছেন না ওয়াহিদ চৌধুরী। মায়া চৌধুরী কিছু বললো না। চুপচাপ নিজের জায়গায় বসে মিতাকে পর্যবেক্ষণ করছে।

ওয়াহিদ চৌধুরীর প্রশ্নের কী জবাব দিবে তা বুঝতে পারছে না মিতা। অরিয়ন আর নিজের মধ্যে সবটা ঠিক হয়ে গেছে তাই যেতে চাচ্ছে না , এই কথাটা সবার সামনে কীভাবে বলবে তা বুঝতে পারছে না মিতা। কথাটা ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে মিতা।

–আমার শরীরটা ভালো লাগছে না তাই। তোমরা যাও, আমি আরেক দিন যাব।
আমতা আমতা করে বলে মিতা।

–শরীর ভালো লাগছে না! কী হয়েছে? খারাও লাগছে বেশি?
দ্রুত মেয়ের কাছে এসে কপালে হাত দিয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

আফরিন, আনিকা চৌধুরী, হাবিব চৌধুরী সকলেই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

মায়া চৌধুরী বড় করে এক নিঃশ্বাস ছাড়লো। সোফা থেকে উঠে ওয়াহিদ চৌধুরীর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

–ওয়াহিদ, টেনশনের কিছু নেই। ও থাক। কিছুদিন পর না হয় যাবে।
স্বাভাবিক ভাবেই বলে মায়া চৌধুরী।

–কিন্তু মায়া ওর…

–কোনো কিন্তু না ওয়াহিদ।

মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সবটাই বুঝতে পেরেছেন মায়া চৌধুরী। মিতা আর অরিয়নের ভুল বুঝাবুঝির পরিসমাপ্তি ঘটেছে তাতেই মহা খুশি উনি।

হাবিব চৌধুরী আর আফরিনের মুখে মুচকি হাসি। কিন্তু ওয়াহিদ চৌধুরী কিছুই বুঝলো না। মেয়ের টেনশনের তার মাথায় যেন কোনো কথায় ঢুকতে চাচ্ছে না।

–তোমাদের মা-মেয়ের যা ভালো লাগে তাই করো।
কথাটা বলেই হাটা শুরু করে ওয়াহিদ চৌধুরী। নিমিষেই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।

–সব ঠিক?
মিতার মাথায় হাত দিয়ে বলে মায়া চৌধুরী।

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে মিতা। কথা বলতেই লজ্জা লাগছে মিতা।

–শরীর খারাপের কিছুই নেই, ও অনুমতি পায় নি তাই যাচ্ছে না বুঝলে মা?
মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে বলে আফরিন।

–আপু..
লজ্জায় বলে মিতা।

–আচ্ছা আমরা তাহলে বের হচ্ছি। তোর বাবা আবার রেগে গেছে মনে হচ্ছে।
বলে মায়া চৌধুরী।

–যাবে যখন তখন মিতাকেও সাথে করে নিয়ে যাও।
হুট করে বলে উঠে হাবিব চৌধুরী।

–এই না..
কিছু না ভেবেই বলে উঠে মিতা।

মিতার কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠে। হাবিব চৌধুরী যে মিতার সাথে মজা নিচ্ছিলো তা বুঝতে পারে মিতা। পাশে বসে থাকা আনিকা চৌধুরীর মুখেও হাসি দেখতে পেল মিতা কিন্তু মিতার সাথে চোখাচোখি হতেই হাসি সরিয়ে ফেলে আনিকা চৌধুরী।

–আচ্ছা ভাই, আমরা যাচ্ছি। আপনারা কিন্তু যাবেন। আর আপা, কাল কিন্তু ক্লাবে দেখা হবে।
বলে মায়া চৌধুরী।

–আচ্ছা মায়া।
বলে আনিকা চৌধুরী।

*********************

–আমার গু*লি লাগার পরেও আমাকে দেখতে আসোনি তাহলে কেমন গার্লফ্রেন্ড হলে তুমি? তার উপর খোঁজখবর ও নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করোনি।

–কিসের গার্লফ্রেন্ড? আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড কবে থেকে হয়ে গেলাম?

–ফাইজলামি করো? এক থাপ্পড় মে*রে ফাইজলামি করা বের করে দিবো।

–গায়ে হাত দিবেন? আপনি কী ভেবেছেন সেই অধিকার আছে আপনার?

–ফাহমিদা!!

–আমার নাম ধরে ডাকবেন না। আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই আমি। আপনি বেঁচে থাকুন বা ম*রে যান তাতে কিছু যায় আসে না আমার।

–কিছু যায় আসে না?

–না আসে না। আমাকে কল করে ডির্স্টাব করবেন না। আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।

রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলছে আবরার আর ফাহমিদা। মিতার খবর অরিয়ন জানার পর থেকে আবরারের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি ফাহমিদা আর আবরারের মধ্যে। আবরারের এমন অবস্থা জানার পরও ফাহমিদা আবরারের কোনো খোঁজখবর পর্যন্ত নেয় নি।
আর আবরার যখন ফাহমিদাকে কল করলো তাও রিসিভ করেনি ফাহমিদা। এই কয়েকদিনে হাজারটা কল করেছে আবরার। শেষমেশ কিছু সময়ের জন্য দেখা করতে রাজি হয় ফাহমিদা।

–এনগেজমেন্ট?

–অবাক হচ্ছেন কেন? এটাই তো আপনার চাওয়া ছিলো তাই না?
ফাহমিদার কথা শুনে থতমত খেয়ে যায় আবরার।

–আপনি কী ভেবেছেন, মিতার খবর রাখার জন্য আমাকে ব্যবহার করবেন, প্রয়োজনে প্রেমের অভিনয় করবেন তা জানতে পারবো না আমি? এতোটা বোকা মনে করেন আমাকে?

ফাহমিদার কথা শুনে অবাক হয় আবরার।

–কে বলেছে তোমাকে এই কথা?

–সেটা আপনার না জানলেও হবে। তবে শুনে রাখুন, আমাকে এমন মেয়ে ভাববেন না যে, এতোকিছুর পরও আমি আপনার সাথে থাকবো। আমার একটা আত্নসম্মানবোধ আছে।

–ইমরান..ও বলেছে তোমাকে তাই না?
দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে আবরার।

–মিথ্যে বলেছে কি? নাকি এখন নিজের বন্ধুকেও মিথ্যাবাদী বলবেন?

আবরার কিছু বললো না।

–অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। বাসায় ফিরতে হবে আমাকে।
কথাটা বলেই সিট থেকে উঠে দাঁড়ায় ফাহমিদা।

হেটে যাওয়ার আগেই ফাহমিদার হাত ধরে ফেলে আবরার। রাগান্বিত অবস্থায় ফাহমিদার দিকে তাকায়। ফাহমিদার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে আবরার। ফাহমিদা জোর খাটিয়েও হাত ছাড়াতে ব্যর্থ।

–আজকেই এই এনগেজমেন্ট ভাঙ্গবে। বাসায় জানিয়ে দিবে তোমার অন্য জায়গায় পছন্দ আছে।
ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে বলে আবরার।

–হাসি পাচ্ছে খুব। আপনার মতো বেইমানের সাথে জীবন কাঁটানোর চেয়ে আমি কুমারী থাকা পছন্দ করবো।

ফাহমিদার কথা শুনে হাসে আবরার। নিজেও উঠে দাঁড়ায় সিট থেকে।

–কুমারী থাকবে কী না তা তো পরে বুঝা যাবে। তবে কালকের মধ্যে যদি এনগেজমেন্ট না ভাঙ্গে তাহলে সব ছবি নিয়ে বাসায় হাজির হবো আমি।

–ঠাসসসস..
আবরারের কথা শুনামাত্রই থা*প্পড় মা*রে ফাহমিদা।

–আপনি শুধু বেইমান না, একটা থার্ডক্লাস মানুষ ও।

–তোমার জন্য আমি এর থেকে নিচেও নামতে পারি।

ফাহমিদা আর কিছু না বলেই হাত ছাড়িয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়।

–ইমরান।
দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে আবরার।

********************

অরিয়ন বিছানায় বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছে। পানি পড়ার শব্দে বুঝা যাচ্ছে মিতা ওয়াশরুমে।
একটু পরেই বেরিয়ে আসে মিতা। মাত্রই গোসল করে এসেছে। চুল দিয়ে পানি পড়ছে মিতার। মিতা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই অরিয়নের চোখ যায় মিতার দিকে।

মিতাকে দেখতেই ল্যাপটপ সরিয়ে রাখে অরিয়ন। মিতার দিকে মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মিতা লজ্জায় একটু পর পর নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।

তোয়ালে নিয়ে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে যায় মিতা। চুল মুছতে থাকে মিতা। অরিয়ন উঠে গিয়ে মিতার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। অরিয়নকে দেখতেই থমকে দাঁড়ায় মিতা।

অরিয়ন নিজের দু হাত দিয়ে মিতার কোমর জড়িয়ে ধরে। নিজের মুখ গুজে দেয় মিতার গলায়। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে মিতা।

–রেজাল্ট কী এসেছে?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–গোল্ডেন।
চোখ বন্ধ অবস্থায় জবাব দেয় মিতা।

–ডাক্তার হবি?
মিতার গলায় চুমু দিতে দিতে বলে অরিয়ন।

–হুম।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে মিতা।

–তাহলে এই রুগীর চিকিৎসা কর আগে।
কথাটা বলেই মিতাকে নিজের দিকে ফিরায় অরিয়ন।

অরিয়নের সাথে চোখাচোখি হয় মিতার।

–এই রুগীর তার নিজস্ব ডাক্তারের খুব প্রয়োজন।
কথাটা বলেই মিতার ঠোঁটে আলতো এক চুমু দেয় অরিয়ন।

মিতা নিজের হাত দিয়ে অরিয়নের গলা জড়িয়ে ধরে। নিজেও তাল মিলায় অরিয়নের সাথে। মিতার সারা পেতেই মিতাকে কোলে তুলে নেয় অরিয়ন।

মিতাকে কোলে নিয়েই বিছানায় গিয়ে বসে অরিয়ন।

–আই লাভ ইউ সো মাচ, লাভ।
মিতার কপালের সাথে নিজের কপাল স্পর্শ করিয়ে বলে অরিয়ন।

–আই লাভ ইউ টু, রিয়ন।
চোখ বন্ধ করা অবস্থায় বলে মিতা।

আলতো করে মিতার কপালে চুমু এঁকে দেয় অরিয়ন।

ভালোবাসায় মগ্ন দুটি দেহ মনে প্রাণে এক হয়।

চলবে…..

#পারমিতা
#পর্ব_৫৭
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

ফাহমিদা ভেবেছিলো আবরার রাগের বশে সেদিনের কথাগুলো বলেছিলো। কিন্তু ফাহমিদার ভুল ভাঙ্গলো পরের দিন বিকালে। আবরার সত্যি সত্যি ফাহমিদার বাসায় গিয়ে হাজির হয়। বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে ফাহমিদার কোনো এনগেজমেন্ট হয়নি। সবটাই মিথ্যে বলেছিলো ফাহমিদা। আবরারের সাথে কথা বার্তা বলে ফাহমিদার পরিবার বিয়ে মেনে না নেওয়ার কোনো কারণ খুজে পায়নি।

শিক্ষিত, দেখতে সুদর্শন, বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করা এবং মেয়ের পছন্দ ভেবে রাজি হয়ে যায় ফাহমিদার পরিবার। আবরার তার পরিবার নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই হাজির হবে জানিয়েছে। কিন্তু আর দশটা বাঙালি পরিবারের মতোই ফাহমিদার পরিবারও মেয়ের প্রেমটা ভালোভাবে নেয়নি। আবরার বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই ফাহমিদার মা মেয়ের গালে দুটো চড় বসায়। আবরারের প্রতি ফাহমিদার রাগ যেন আরও হাজারগুন বেড়ে যায়।

*************************

মিতাকে নিয়ে কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছে অরিয়ন। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে কোনোরকম ঘাটতি রাখতে চায় না অরিয়ন।

–আবরার আর তোর বান্ধুবীর ঘটনাটা জানতি তুই?
পিছন থেকে মিতাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।

–কখনোই না। আমি তো কল্পনাও করতে পারি নি ওদের মধ্যে এসব হবে।

–নাটের গুরু তো তুই নিজেই।

–এঁ্যাহ? আমি কীভাবে? আমি কী বলেছিলাম তোরা প্রেম কর?
মুখ ভেংচি কেটে বলে মিতা।

–বলতে হবে কেন! একটা ছেলে মেয়ে একান্তে সময় কাটালে তাদের মধ্যে অনুভূতি আসবেই। এটা তো স্বাভাবিক। ওহ, তুই কীভাবে জানবি তুই তো ছোট বাচ্চা।
ব্যঙ্গ করে বলে অরিয়ন।

–কীহ? আমি ছোট বাচ্চা?
অরিয়নকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাঁড়ায় মিতা। নিজের কোমরে দুই হাত রাতে।

অরিয়ন মিতার প্রশ্নে শুধু মাথা নাড়ালো। এতে যেন মিতার রাগ আরও বেড়ে গেল।

–আমি… আমি ছোট বাচ্চা হলে…তোমাকে জেলে দেওয়া উচিৎ । ছোট বাচ্চা বিয়ে করেছো তাই।
রাগ করে বলে মিতা।

–আহারেএ, বাচ্চাটা রেগে গেছে।
মিতাকে আবারও জড়িয়ে ধরে অরিয়ন।

–বাচ্চাটার রাগ ভাঙ্গাতে হবে এখন। আসো রাগ ভাঙ্গাই।
মিতার ঠোঁটে হঠাৎ করেই চুমু দিয়ে বলে অরিয়ন।

মিতা মুখ ভেংচি কেটে অন্যদিকে মুখ সরায়।

************************

আবরার দু দিনের মধ্যেই তার পরিবারকে সব জানিয়েছে। ছেলের পছন্দ ভেবে হাবিব চৌধুরী ও আনিকা চৌধুরীও রাজি হয়ে গিয়েছে। আগামী কালই ফাহমিদার পরিবারের সাথে দেখা করতে যাবে সবাই। সব ঠিক থাকলে একটা দিনক্ষণ দিয়ে আসবে।

এদিয়ে মায়া চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরী চৌধুরী মেনশনের সবাইকে আজ দাওয়াত করেছে। রাতের খাবার আজ সেখানেই খেতে হবে। সকলেই রেডি হয়ে নিয়েছে। একটু পরেই বের হয়ে যাবে।

রাতের খাবার শেষ করে সবাই এক সাথে ড্রয়িং রুমে বসে আছে। কাজের লোক একটু পরেই সবার জন্য চা নিয়ে আসে। মায়া চৌধুরী সবার হাতে চায়ের কাপ তুলে দেয়।

–আপনাদের একটা কথা বলতেই আজ এখানে আনা।
নিজের জায়গায় বসে বলে মায়া চৌধুরী।

–কি কথা?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

–আফরিনের জন্য একটা ছেলে দেখেছি।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

ওয়াহিদ চৌধুরীর কথা শুনতেই অবাক হয় মিতা। আফরিনের দিকে কৌতুহল নিয়ে তাকায়। আফরিন আহামরি উৎসুক নয় তবে বিয়ের জন্য রেডি নয় তেমন ও না। সবটা ধীরে ধীরে মেনে নিচ্ছে আফরিন তা বুঝাই যাচ্ছে।
আফরিন আর মিতার চোখাচোখি হতেই দুজনে আলতো এক হাসি দেয়।

–ছেলে?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

–হ্যাঁ। ওয়াহিদের ব্যবসায় পার্টনারের ছেলে। ছেলে খুবি ভালো, দেখতে শুনতেও সুন্দর। আর…

–কিন্তু? আফরিনের…
মায়া চৌধুরী কথা শেষ করার আগেই বলে উঠে আনিকা চৌধুরী। আনিকা চৌধুরীর কণ্ঠে আফরিনের জন্য স্নেহ প্রকাশ পাচ্ছে।

–আফরিন সম্পর্কে সবটাই জানে। আর ছেলের এতে কোনো সমস্যা নেই। ছেলে বিশ্বাস করে সবটাই একটা দুর্ঘটনা। এখানে কাউকে দোষারোপ করার মতো কিছু নেই।
মৃদু এক হাসি দিয়ে বলে মায়া চৌধুরী।

–আমাকে ছেলে আর ছেলের বাবার নাম বলো। আমি আবারও খোঁজ নিয়ে দেখবো।
বলে অরিয়ন।

–আচ্ছা বলবো। তবে ছেলেদের এতো তাড়াহুড়ো নেই। ওদের সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিয়েই আগাতে বলেছে।
ওয়াহিদ চৌধুরী বলে।

–তোমার কি মতামত আফরিন? তুমি কি বিয়ের জন্য প্রস্তুত? আমরা চাই না তুমি ভাবো যে, আমরা তোমাকে বোঝা হিসেবে দেখছি।
আফরিনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

সকলেই অধীর আগ্রহ নিয়ে আফরিনের উত্তরের আশায় অপেক্ষা করতে লাগলো।

–আমার কোনো সমস্যা নেই। তোমরা যা ভালো ভাবো তাই করতে পারো।
উত্তর দেয় আফরিন।

আফরিনের জবাবে সবাই খুশি হয়।

–তাহলে আমরা খোজ খবর নেওয়া শুরু করি।
বলে হাবিব চৌধুরী।

–হ্যাঁ।
হাসি দিয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

*************************

–আফরিন ভালো কাউকে ডির্সাভ করে। আশা করি ওর কপালে ভালোটাই থাকবে।
বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় বলে অরিয়ন।

মিতা কাউচে বসে নিজের শরীরে লোশন লাগাচ্ছে।

–হ্যাঁ। সব থেকে ভালোটা ডির্সাভ করে আমার আপু। যার কপালে যাবে তার জীবনটা পালটে যাবে।
অরিয়নের সাথে সায় মিলায় মিতা।

–আফরিনের জন্য সব সময় একটা সম্মানবোধ কাজ করে। আবার আমার সব থেকে কাছের বন্ধুও বলতে পারিস। তাই নিজে থেকেই ছেলের খোঁজ নেওয়ার কথাটা বলেছি।
সিলিংয়ের দিয়ে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।

মিতা কিছু বললো না।

–তুই আবার ভাবিস না যে,ওর জন্য আমার কোনো অনুভূতি অবশিষ্ট আছে এখনো।
হুট করেই বলে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনে মিতা কাউচ থেকে উঠে অরিয়নের পাশে গিয়ে বসে।

–আমি তোমাকে আর আমার আপুকে ভালো করেই চিনি। তোমরা কেমন তা আমার থেকে কেউ ভালো জানেনা, রিয়ন। তাই এমনটা ভাবাও আমার জন্য পাপ।
অরিয়নের হাতের উপর নিজের হাত রেখে বলে মিতা।

মিতার কথা শুনে অরিয়নের ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে। শোয়া থেকে উঠে বসে অরিয়ন।

–আমি জানিনা কি ভালো কাজের বিনিময়ে উনি আমাকে তোকে দিয়েছে। তবে এতোটুকু মনে রাখ, আমি কখনোই তোকে কষ্ট দিবো না। কখনোই তোকে ধোঁকা দিবো না।
নিজের হাত দিয়ে মিতার গাল স্পর্শ করে বলে অরিয়ন।

–আই নো।
হাসি দিয়ে বলে মিতা।

অরিয়ন মিতার দিকে তাকিয়ে থেকেই ধীরে ধীরে নিজের মুখ মিতার দিকে এগিয়ে নেয়। মিতার কাছাকাছি মুখ আসতেই চোখ বন্ধ করে নেয় অরিয়ন। মিতার নিশ্বাস এখন অরিয়নও অনুভব করতে পারছে। অরিয়নের ঠোঁট মিতার ঠোঁট স্পর্শ করার আগেই অরিয়নকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় মিতা। চোখ খুলে তাকায় অরিয়ন।

–ছোট বাচ্চাদের সাথে এসব করতে নেই তা জানেনা না? দাদা।
হাসতে হাসতে বলে মিতা।

–তোকে তো…
কথাটা বলেই মিতাকে জাপটে ধরে অরিয়ন।

কাতুকুতু দিতে থাকে অনবরত। অন্যদিকে মিতা হাসতে হাসতে মনে হচ্ছে এই বাড়ি মাথায় তুলে নিয়েছে।

–সরি সরি সরি, আর বলবো না। সরি..কাতু…কাতুকুতু লাগে।
হাসতে হাসতে বলে মিতা।

অরিয়ন তাও কাতুকুতু দেওয়া বন্ধ করলো না। কাতুকুতু সহ্য করতে না পেরে মিতা অরিয়নের গলা ধরে নিজের ঠোঁট বসায় অরিয়নের ঠোঁটে। অরিয়ন ও কাতুকুতু দেওয়া বন্ধ করে মিতাকে চুমু খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

**********************

ফাহমিদার পরিবারের সাথে দেখা করেছে চৌধুরী পরিবার। ফাহমিদার পরিবারের সব কিছু দেখে পছন্দ হয়েছে হাবিব চৌধুরীর। অবশেষে ঠিক করেছে ২ মাস পরে এনগেজমেন্ট ও ৬ মাস পরে আবরার আর ফাহমিদার বিয়ে। দুই পরিবারের ফাইনাল কথা শুনে আকাশে ভাসছে আবরার। অন্যদিকে ফাহমিদা এখনো আবরারের সাথে ভালো করে কথা বলছে না। বিয়ে হবে জেনেও যেন ফাহমিদার রাগ একটুও কমছে না।

–এখন তো সব ঠিক তাও কেন আরিয়ান ভাইয়ার সাথে রাগ তুই?
প্রশ্ন করে মিতা।

মিতা আর ফাহমিদা একই সাথে কোচিং সেন্টারে বসে আছে। এখনো স্যার ক্লাসে আসেনি তাই কথাগুলো উঠায় মিতা। গতকাল রাতে আবরার মিতার কাছে এসেছিলো। মিতা যেন ফাহমিদাকে একটু বুঝায় সেই কথা বলে গেছে।

–তোর আরিয়ান ভাইয়া যা করেছে তা আমি চাইলেও ভুলতে পারছি না।
রাগ হয়ে বলে ফাহমিদা।

–মিদা, মানুষ মাত্রই ভুল। আরিয়ান ভাইয়াও একটা ভুল করেছে। তার জন্য কী ক্ষমা পাবে না সে?
ফাহমিদার কাধে হাত রেখে বলে মিতা।

–ঠিক, মানুষ মাত্রই ভুল। কিন্তু পারু, ভুল মানুষ না জেনে করে। যেটা জেনে করা হয় সেটা ভুল নয়,অপরাধ। আর তোর আরিয়ান ভাইয়া সেটাই করেছে।
বলে ফাহমিদা।

–কি…
মিতা নিজের কথা শেষ করার আগেই ক্লাসে টিচার চলে আসে। দুজনেই স্যারের দিকে মন দেয়।

*************************

২ মাস পর।

গতকালই আনুষ্ঠানিক ভাবে আবরার আর ফাহমিদার এনগেজমেন্ট করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে মিতার উপর দিয়ে ঝড় গেছে। পরিবারের বড় বউ হওয়ার দায়িত্ব এখন হারে হারে টের পাচ্ছে মিতা।

আনিকা চৌধুরী এখন আর মিতার সাথে খারাপ আচরণ করে না। তবে মিতাকে যে একদম মেনে নিয়েছে তেমন ও না। তাও ভালো, খারাপ আচরণ করে না সেটা ভেবেই সন্তুষ্ট মিতা।

**********************

আরও ১৫ দিন পর।

গত সপ্তাহে মিতার ভার্সিটি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। মিতা আর ফাহমিদা দুজনেই ঢাকা মেডিকেল কলেজে চ্যান্স পেয়েছে। অরিয়ন আর বাকি সবাই মিতার চান্স পাওয়ার কথা শুনে আত্নহারা হয়ে পড়ে। তাই বিশাল এক পার্টি আয়োজন করেছিলো সবাই।

পার্টিতে সবাই আনন্দ করলেও মিতা আনন্দ করতে পারছে না। ইদানীং মিতার বমি বমি ভাব দেখা যাচ্ছে তার উপর মাথাও ঘুড়ায়। এসব নিয়ে এতো চিন্তার কিছু ছিলো না যদি না মিতার পিরিয়ড মিস হতো। গতমাসে মিতার পিরিয়ড মিস গিয়েছে। তাই টেনশনে পড়েছে মিতা।

প্রেগন্যান্সি কীট নিয়ে দ্রুত রুমে প্রবেশ করে মিতা। বাড়ির কাজের লোককে দিয়ে কীট আনিয়েছে মিতা।

কীট হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছে মিতা। এখনো কোনো দাগ উঠেনি। আচ্ছা মিতা কী মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত? মিতা তা জানেনা। যত সময় যাচ্ছে মিতার হার্টবিট ততোই বেড়ে চলেছে।

মিতার শ্বাস আটকে আসলো যখন কীটের দিকে তাকালো। স্পষ্ট দুটো লাল দাগ দেখা যাচ্ছে। দাগ দুটো দেখতেই মিতার চোখে যেন পানি ছলছল করতে লাগলো।

“এ কেমন আনন্দ? ” মনে মনে ভাবে মিতা। মা হওয়ার কথাটা জানতে পেরেই মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব সুখ পেয়ে গেছে মিতা। নিজের অজান্তেই হাত চলে যায় পেটের উপর।

–আমাদের সন্তান।
পেটের উপর হাত রেখে কথাটা বলতেই চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে থাকে।

–অরিয়ন, অরিয়ন জানলে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে।
আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে বলে মিতা।

তাড়াতাড়ি করে ঘড়ির দিকে তাকায় মিতা। কিছুক্ষণ পরেই অরিয়ন চলে আসবে। অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে মিতা। একবার তো মোবাইল হাতেই তুলে নিয়েছিলো ফোন দেওয়ার জন্য। তাও সামনা সামনি অরিয়নের চেহারা দেখার আশায় কল করেনি মিতা।

********************

অরিয়ন রুমে ঢুকতেই মিতা দৌড়ে গিয়ে অরিয়নের সামনে দাঁড়ায়।

–কি হয়েছে আজ এমন খুশি খুশি লাগছে কেন তোকে?
মিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে অরিয়ন।

মিতা কিছু বললো না। শুধু মুচকি মুচকি হাসলো। অরিয়ন মিতার থেকে সরে গিয়ে নিজের কোর্ট খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

–যদি বলি কী জন্য তাহলে কী উপহার দিবে আমাকে?
আবারও অরিয়নের সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে মিতা।

–যা চাই তোর তাই।
জবাব দেয় অরিয়ন।

–সত্যি?
বলে মিতা।

–সত্যি সত্যি সত্যি। তিন সত্যি।
হাসতে হাসতে বলে অরিয়ন।

মিতা কোনো কিছু না ভেবেই নিজের হাতে থাকা প্রেগন্যান্সি কীট এগিয়ে দেয় অরিয়নের দিকে। অরিয়ন কিছু না বুঝতে পেরেই কীট নিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ কীটের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিমিষেই যেন মুখ থেকে হাসি সরে গেল অরিয়নের। মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এই খবরে একটুও খুশি হয় নি অরিয়ন। অরিয়নের ভাব-ভঙ্গি মিতার নজর এড়াতে পারলো না। মিতার হাসি ধীরে ধীরে চলে যায়।

–কীভাবে সম্ভব?
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।

অরিয়নের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না মিতা। শুধু এতোটুকু বুঝতে পারছে অরিয়ন খুশি নয়।

–তুমি….তুমি হ্যাপি না?
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে মিতা।

–না।
কথাটা বলেই মিতাকে পিছ করে দাঁড়ায় অরিয়ন।

চলবে…..