#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_6
#ইয়াসমিন_খন্দকার
খান ভিলায় চলছে দারুণ প্রস্তুতি। আজ দীর্ঘ কয়েক বছর পর আবরাজ ও নিঝুম ফিরতে চলেছে খান ভিলায়৷ সকাল থেকে আনিকা খান কিচেনে একের পর এক পদ রান্না করে চলেছেন। আফিফা আজ মেডিকেলে যায়নি৷ সেও মাকে সাহায্য করছে। ছবি বেগম সব কিছু তদারকি করছেন। আবরাজ ও নিঝুমের সাথে দেখা করার জন্য তিনি যতটা না উদগ্রীব তার থেকেও বেশি উদগ্রীব আদৃতার সাথে দেখা করার জন্য। এজন্য তো তিনি আনিকা খানকে বলছেন,”আদৃতা দিদিভাইকে সেই কোন ছোটবেলায় সামনাসামনি দেখেছি। না জানি এতদিনে কত বড় হয়ে গেছে।”
আনিকা খানও বলেন,”ঠিক বলেছেন। ভিডিও কলেও তো সেরকম একটা কথা বলে না ও। আমিও ওকে সামনাসামনি দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে আছি।”
নির্ঝর কিচেনের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল৷ আফিফা সেদিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়৷ নির্ঝর আফিফাকে দেখেই চোখ টিপে। তার পরণে একটা শুভ্র পাঞ্জাবি। এ অবস্থায় তার দিক থেকে চোখ ফেরানো মুশকিল। কিন্তু আফিফা লজ্জায় পড়ে চোখ ফিরিয়ো নিলো। এদিকে আরিশা সিঁড়ি বেয়ে নামতেই তার নজর পড়লো নির্ঝর এর দিকে৷ সে কিছু সময় অনিমেষ তাকিয়ে অতঃপর চোখ ফিরিয়ে নিয়ে স্বগতোক্তি করে বলল,”নিজেকে সামলা আরিশা। যে কখনোই তোর হবে না তার উপর এভাবে মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই।”
আরিশার ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বেজে ওঠে। ছবি বেগম সজাগ হয়ে বলেন,”নিশ্চয়ই আবরাজরা চলে এসেছে।”
বলেই তিনি লাঠিতে ভড় দিয়ে একপ্রকার ছুটে যান।নির্ঝরও যায় তার পিছন পিছন। দরজাটা খুলতেই আবরাজ ও নিঝুমের হাসিমুখ দেখতে পান ছবি বেগম। এতদিন পর তাদের দেখে ছবি বেগমের চোখে জল চলে আসে। নিঝুম খান ছবি বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলেন,”কেমন আছেন চাচি?”
“আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছ?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
“এতদিন পর এই বুড়ির সাথে দেখা করার কথা মনে পড়লো।”
আবরাজ খান বললেন,”আমরা তো আপনাদের সাথে দেখা করতে চাই। কিন্তু সময়ই যে হয়ে ওঠেনা।”
ছবি বেগম কিছুটা অভিমানী স্বরে বলেন,”থাক, আর অজুহাত দিতে হবে না। তা আমার আদৃতা দিদিভাই কোথায়? ওকে দেখার জন্য যে আমার দুই চোখ তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে। ও আসেনি তোমাদের সাথে?”
আবরাজ খান বলে ওঠেন,”এসেছে তো। এই আদৃতা সামনে এসো। গ্র্যানির সাথে দেখা করো।”
আবরাজ খানের কন্ঠস্বর শুনে হাতে একটা ট্রলি ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে আসে এক অতীব সুন্দর তরুণী। পরনে তার মিনি স্কাট ও জিন্স, পায়ে হাই হিল। একদম পাশ্চাত্যের তরুণীদের মতোই লাগছে তাকে দেখে। সে এগিয়ে এসেই ছবি বেগমের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”হ্যালো, গ্র্যানি, হাউ আর ইউ?”
ছবি বেগম হালকা হেসে বলেন,”আমি তো এত ইংরেজি বুঝি না, দিদিভাই। তবে তোমায় দেখে অনেক ভালো লাগছে। কেমন আছ তুমি?”
“আ’ম ফাইন। ভালো আছি। কিন্তু তোমাদের সিলেটে এত ডাস্ট কেন? উফ..রাস্তাঘাট কি নোংরা আর ডাস্টে ভর্তি। আমার স্কিনের প্রবলেম হবে তো।”
নিঝুম রেগে বলেন,”আহ, আদৃতা। এসব কেমন কথা?”
ছবি বেগম বলেন,”ওকে বকো না নিঝুম। ও তো ছেলেমানুষ। এসো দিদিভাই ভেতরে এসো।”
সবাই মিলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। কিছু সময় পর আবির ও আনিকা এসে তাদের সাথে দেখা করে এবং কথা বলে৷
~~~~~~~~~~~~
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই মিলে বসে পড়েছে ড্রয়িংরুমে। ছবি বেগম সকলের মধ্যমনি হয়ে বসে আছেন। আবরাজ খান দীর্ঘ সময়ের নীরবতা ভেঙে বলেন,”আপনি কি আমাদের কিছু বলবেন?”
ছবি বেগম হালকা হেসে বলেন,”হ্যাঁ, যেই জন্য তোমাদের সবাইকে এত তড়িঘড়ি করে দেশে ডাকা। তোমরা তো জানোই, আমার বয়স হয়েছে৷ তোমাদের বাবা তো অনেক আগেই গত হয়েছেন। আমিও আজ আছি কাল নেই। তবে আমার ইচ্ছা, নিজের মৃত্যুর আগে যদি নিজের নাতি-নাতনির বিয়ে দেখে যেতে পারি। ”
নিঝুম বলে ওঠেন,”এমন কথা বলবেন না চাচি। আল্লাহ করুক, আপনি আরো অনেক দিন আমাদের মাঝে থাকবেন ইনশাআল্লাহ।”
‘কারো হায়াত-মউত এর কথা তো বলা যায়না নিঝুম। এজন্যই আমি তোমাদের সবার সামনে একটা প্রস্তাব রাখতে চাই।’
আবরাজ জানতে চান,”কি প্রস্তাব?”
ছবি বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,”আমি অনেক আগেই ভেবে রেখেছিলাম, নির্ঝর দাদুভাইয়ের সাথে আফিফা দিদিমনির বিয়ে দেব। আমার এই ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে নির্ঝর ও আফিফাও জানিয়েছে তারা একে অপরকে পছন্দ করে। এটা জেনে আমি খুব খুশি হয়েছি। এবাড়ির কারো এই বিয়ে নিয়ে কোন আপত্তি নেই। এখন মূলত তোমাদের মতামত নিতেই এখানে ডাকা। চাইলে এসব কথা আমি ফোনেও বলতে পারতাম কিন্তু বিয়ের মতো এত জরুরি একটা কথা সামনাসামনি বসে বলাটাই ভালো৷ তাই তোমাদের ডেকে পাঠানো। এখন তোমাদের যদি এই সম্পর্কে কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা কথা সামনে আগাবো।”
আবরাজ ও নিঝুম কিছু সময় একে অপরের দিকে তাকান। অতঃপর দুজনেই একসাথে হেসে ওঠে। আবরাজ বলেন,”আপত্তি থাকবে কেন? আমরা তো অনেক খুশি এই প্রস্তাবে।”
নিঝুমও বলেন,”আফিফার মতো এত ভালো একটা মেয়েকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে পাওয়া তো সৌভাগ্যের ব্যাপার। তার উপর ওরা যখন একে অপরকে পছন্দও করে তখন তো আমাদের আপত্তি করার কোন উপায় নেই।”
ছবি বেগম নিশ্চিন্ত স্বরে বলেন,”আমি জানতাম তোমরা রাজি হবে। এখন আমি নিশ্চিন্তে বিয়ের কথাবার্তা সামনে এগোতে পারব। আমি একটা ব্যাপার ভেবে দেখলাম, এই সময় তোমরা সবাই ছুটিতে আছ নাহলে এমনিতে তো তোমাদের পাওয়াই যায় না। তাই বলি কি, আর ১০-১৫ দিনের মধ্যেই বিয়েটা হয়ে যাক।”
আবরাজ এবার একটু চিন্তিত স্বরে বলেন,”এত তাড়াহুড়ো করে কি বিয়েটা দেয়া ঠিক হবে?”
নিঝুম বলেন,”আমি চাচির সাথে একমত। এই সময় যেহেতু সবাই ফ্রি আছি তাই এখনই বিয়েটা হয়ে যাক। আর খুব বেশি জমজমাট করে বিয়ে দেয়ার তো দরকার নেই। কাছের কিছু আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জানালেই তো হয়।”
আবরাজ বলে ওঠেন,”কিন্তু আমার লন্ডনের ফ্রেন্ডসরা!”
নিঝুম বলেন,”এত চিন্তা করো না। এরপর নাহয় লন্ডনে ফিরে আবার একটা অনুষ্ঠান করলাম।”
“তাহলে ঠিক আছে।”
ছবি বেগম খুশি হয়ে বলেন,”বাহ, তাহলে তো সব সমস্যা মিটেই গেল। এবার তাহলে বিয়ের আয়োজন শুরু হোক। হাতে তো আর বেশি সময় নেই।”
আফিফা ও নির্ঝর এই কথাগুলো শুনে ভীষণ খুশি হয়। দুজন পাশাপাশি বসে ছিল৷ নির্ঝর আফিফার হাতটা শক্ত করে ধরে। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে আরিশার চোখে জল চলে আসে। সে সন্তপর্ণে এই জল মুছে বলে,”না আমি কাঁদবো না, নিজের আপ্পির খুশিতে আমি নজর দেব না।”
সবাই যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে যাবার পর আফিফা ও নির্ঝর একত্রে কথা বলছিল। এমন সময় আদৃতা এসে নির্ঝরকে বলে,”সিরিয়াসলি ব্রো! তুমি বিডিতে বিয়ে করবে!”
নির্ঝর সামান্য হেসে বলে,”হ্যাঁ, কেন?”
আদৃতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”ইউকেতে কত সুন্দর সুন্দর মেয়ের প্রপোজাল ফিরিয়ে দিয়েছ তুমি। আমি তো ভাবতেই পারছি না যে বিডিতে বিয়ে করবে তুমি তাও আবার নিজের কাজিনকে।”
নির্ঝর এবার রাগী স্বরে বলে,”এতে খারাপ কি আছে?”
আদৃতা বলে,”উফ! তোমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই। তুমি তো স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতেই জানো না৷ ইভেন তোমরা কেউ না।”
এমন সময় আরিশা সেখানে এসে বলে,”আমার আপ্পির স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে প্রশ্ন করার দুঃসাহস দেখাবে না আদৃতা আপ্পি। সে নিজের যোগ্যতায় একজন ডক্টর হতে চলেছে। আপনার মতো বাবার টাকার ফুটানি করছে না।”
“হাউ ডেয়ার ইউ!”
বলে আদৃতা আরিশার দিতে এগোতে নেবে এমন সময় নির্ঝর তার পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলে,”এনাফ ইজ এনাফ! আর কোন বেয়াদবি করলে আমি মম ড্যাডকে জানাতে বাধ্য হবো!”
to be continue…….
#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_7
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আরিশা মলিন মুখে খান বাড়ির সিঁড়ির কোনায় দাঁড়িয়ে আছে৷ তার মনটা আজ একদম ভালো নেই৷ আরিশার চোখ বারবার যাচ্ছে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের ওদিকে। সময় গুলো যেন কিভাবে দ্রুত পেরিয়ে গেল। চৌদ্দ দিন যেন চোখের পলকে চলে গেল। আজ রাতেই নির্ঝরের সাথে আফিফার বিয়ে। আরিশাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আনিকা খান এগিয়ে এসে বলেন,”এভাবে একা এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? সবাই ওখানে কত আনন্দ করছে। যাও গিয়ে তোমার আপ্পির গায়ে হলুদে অংশ নেও।”
আরিশা মলিন হেসে বলে,”আচ্ছা, যাচ্ছি।”
অতঃপর মুখে একটা নকল হাসি নিয়ে আফিফার কাছে গিয়ে আফিফার গায়ে হলুদ মাখিয়ে দিয়ে বলে,”তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আপ্পি!”
আফিফা আরিশার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই এখনো সাজিস নি কেন বোনু? এমনি সময় খুব সাজগোছ করিস। যা গিয়ে একটু সাজগোজ কর। এভাবে তোকে ভালো লাগছে না।”
আরিশা বলে,”আমি যদি আরো ভালো করে সাজি তাহলে তো সবার লাইমলাইট আমিই কেড়ে নেব।”
আফিফা হেসে বলে,”সেটা ব্যাপার না। আমি তো সবার লাইমলাইট চাইওনা৷ শুধু তোর হবু জিজুর দৃষ্টিতে থাকলেই হবে।”
বলেই লাজুক হাসে। আরিশাও মেকি হেসে সরে আসে। একটু দূরেই নির্ঝরেরও গায়ে হলুদের আয়োজন চলছে। আরিশা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”নাহ, আমি আর কষ্ট পাবো না। বাস্তবতাকে মেনে নিতেই হবে।”
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতেই আফিফা নিজের রুমে যায়। তখন হঠাৎ করে নির্ঝর তার রুমে ঢুকে পড়ে এবং দরজা লাগিয়ে দেয়। আফিফা খানিকটা ভয় পেয়ে বলে,”কি হয়েছে?”
নির্ঝর নিজের হাতভরা হলুদ নিয়ে এসে আফিফার গালে মাখিয়ে দিয়ে বলে,”সবাই তো তোমাকে হলুদ মাখালো কিন্তু আমি তো সেই সুযোগটাই পেলাম না।”
বলেই নির্ঝর আফিফার গালে হলুদ মাখিয়ে দেয়। এই অবস্থায় আফিফা ও নির্ঝর অনেক কাছাকাছি চলে আসে। আফিফার গালে হলুদ মাখিয়ে নিজের গালে আফিফার গালের সাথে ঘষে নির্ঝর যাতে করে তার গালেও হলুদ লেগে যায়। আফিফার লজ্জা ও অস্বস্তি বেড়ে যায়। আফিফা নির্ঝরের গালে ছোট্ট করে একটা চুমু দেয়। অতঃপর ধীরে ধীরে তার ঠোঁটেই ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আফিফা ও নির্ঝর যেন এভাবে একে অপরের মাঝে হারিয়ে যায়। দুজনেই তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিল। নির্ঝরের হাত এরপর চলে যায় একদম আফিফার স্পর্শকাতর স্থানে। সে আফিফার ব্লাউজের ফিতা খুলতে যাবে এমন সময় আফিফার হুশ ফেরে এবং সে বলে,”কি করছেন টা কি!”
নির্ঝর থেমে যায়। অতঃপর আফিফার কাধে নিজের গরম নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। আফিফা নির্ঝরের কাধে হাত দিয়ে বলে,”আর তো মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। তারপর আমি বৈধভাবে আপনার হয়ে যায়। তখন আপনার যা ইচ্ছা করবেন কিন্তু এখনই এত এগোনো ঠিক হবে না।”
নির্ঝর আফিফার গালে চুমু খেয়ে বলে,”বেশ, করলাম নাহয় একটু অপেক্ষা।”
বলেই সে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। এদিকে নির্ঝর বেরিয়ে যাবার পরই আফিফা নির্ঝর তার শরীরের যেই যেই স্থানে স্পর্শ করেছে সেখানে সেখানে হাত বুলাতে থাকে। অনুভব করে ভালোবাসার স্পর্শ। কিছুক্ষণ আগের মুহুর্তের কথা ভেবেই তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে এবং সে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। কিছুক্ষণ পরই গায়ে হলুদের শাড়িগুলো চেঞ্জ করে নেয় এবং অন্য একটা শাড়ি পড়ে নিজের বিয়ের বেনারসি টা দেখতে থাকে। লাল রঙের এই বেনারসি পড়ে তাকে যেন অনেক সুন্দর লাগবে। আফিফা শাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বলে,”আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। তারপরই আমাদের ভালোবাসা টা পূর্ণতা পাবে।”
~~~~~~~~~~~~~~~
সোফার উপর পায়ে পা তুলে বসে আছে জাঈদ শেখ। কিছুক্ষণ আগেই সে ঢাকা থেকে ফিরল। পার্টির কিছু জরুরি কাছে দুই সপ্তাহ আগেই তাকে তার বাবা ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। আজ এত দিন পর সিলেটে ফিরেই জাঈদ একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। অতঃপর নিজের চেলা মন্টুর উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আচ্ছা, তোদের ভাবির কি খবর?”
মন্টু কিছুটা ভীত স্বরে বলে,”আসলে ভাইজান…”
মন্টুর কন্ঠের উদ্বেগ টের পেয়ে জাঈদ বলে ওঠে,”কি হয়েছে? তোর গলাটা শুনে এমন লাগছে কেন? কিছু কি হয়েছে?”
মন্টু আমতা আমতা করে বলে,”আসলে..ভাবির..ভাবির সাথে আজ তার চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে।”
মন্টুর কথা টা শুনেই জাঈদ শেখ বিস্ফোরিত চোখে তাকায় এবং উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”কি বললি তুই? তোদের কি এজন্য এত টাকা দিয়ে পুষে রেখেছি? আমার পাখিকে অন্য কেউ উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর সেই খবর তুই আজ আমায় দিচ্ছিস। তোকে তো আমি..”
মন্টু কাদো কাদো স্বরে বলে,”আমার কোন দোষ নেই স্যার। আপনার বাবাই আপনার থেকে এই কথাটা গোপন রাখতে বলেছিলেন। সামনেই তো ইলেকশন তাই তিনি চান নি এসব জেনে আপনি কোন ঝামেলা করুন এবং তার প্রভাব ভোটে পড়ুক। এজন্যই উনি আপনাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমি সব জেনেও আপনাকে কিছু জানাতে পারি নি কিন্তু আপনার নুন খেয়েছি তাই আর নেমোক হারামি করতে পারব না। তাই জানিয়ে দিলাম।”
মন্টুর কথা শুনে জাঈদ এবার কিছুটা শান্ত হয়ে বলে,”যাইহোক, সত্যটা আমাকে জানিয়েছিস এটাই অনেক। এবার আমাকেই কিছু করতে হবে। এই বিয়েটা আমি কিছুতেই হতে দেব না। আফিফা শুধু আমার। আফিফাকে আমি নিজের করে নেবোই। প্রয়োজনে বিয়ের আসর থেকে ওকে তুলে আনব।”
মন্টু বলে,”স্যার,কোন ঝামেলা করবেন না প্লিজ..সামনে ইলেকশন..”
“ইলেকশনের গুষ্টি কিলাই..চল আমার সাথে।”
~~~~~~~~~
আফিফা বিয়ের সাজে সেজে উঠেছে। বেনাসরি শাড়ি পড়ে আজ তাকে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে। আয়নায় নিজেকে দেখে আফিফা নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিছু সময় পর আরিশা এসে আফিফাকে বলে,”তোমাকে অনেক সুন্দরী লাগছে আপ্পি!”
আফিফা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”ধন্যবাদ বোনু৷”
“নির্ঝর ভাইয়া তো আজ তোমার থেকে চোখই ফেরাতে পারবেন না।”
আফিফা আরো লজ্জা পায়। আরিশা আফিফার হাতটা ধরে বলে,”তুমি অনেক সুখী হবে দেখে নিও।”
আফিফা বলে,”তাই যেন হয়।”
“আমার ভাগের সব সুখও তুমি নিয়ে নাও আপ্পি। প্রয়োজনে আমার জীবন দুঃখ ছেয়ে যাক তবুও তুমি সুখী হও।”
আফিফা বলে,”ধুর পাগলী! তোর সুখ নিয়ে আমি কেন সুখী হবো? আমার ভাগ্যে যেটুকু সুখ আল্লাহ লিখে রেখেছেন তাই আমার জন্য যথেষ্ট।”
এরইমধ্যে আদৃতা সেখানে এসে খানিকটা বিরক্তি স্বরে বলে,”আমার ব্রো আর কতক্ষণ বিয়ের আসরে বসে থাকবে? তোমাদের দুই বোনের এসব মেলোড্রামা শেষ হলে একটু নিচে এসো।”
আরিশা কিছু বলতে যাবে এমন সময় আফিফা বলে,”থাক, আজকের দিনে কোন ঝামেলা করার দরকার নেই। চল, নিচে যাই।”
বলে যেই না বেরোতে যাবে এমন সময় আফিফা বলে,”ওহ,আমার ফোনটা তো সকাল থেকে খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় যে রেখেছি মনে হয় রুমেই আছে।”
আরিশা বলে,”তুমি নিচে যাও আমি তোমার ফোন নিয়ে যাচ্ছি।”
“আচ্ছা।”
বলেই আফিফা রুম থেকে বের হয় আর আরিশা আফিফার ফোন খুঁজতে থাকে।
to be continue…….
#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_8(ধামাকাদার পর্ব)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আফিফা কনে সাজে বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়েছে৷ তার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে তার নির্ঝর ভাইয়া। নির্ঝর আফিফাকে দেখেই অপলক তাকিয়ে থাকে তার দিকে। যেন কনে সাজে আফিফার সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেছে৷ আফিফা ও নির্ঝর–এই দুজনকে পাশাপাশি বসানো হয়৷ নির্ঝর আফিফার উদ্দ্যেশ্যে হালকা হেসে বলে,”তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আজ।”
আফিফা হালকা হেসে মাথা নামায়। এদিকে কাজি সাহেব বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দেন। চারিদিকের সবাই উপস্থিত ছিল নবদম্পতির বিয়ের সাক্ষী হতে।
~~~~~~~
আরিশা অনেক খুঁজে তারপর আফিফার ফোনটা তার বিছানার নিচে পেয়ে বলল,”উফ, আপ্পিও না! পড়াশোনা ছাড়া আর কোথাও মনযোগ নেই। ফোনটা বিছানার নিচে ফেলে রেখেছিল।”
বলেই সে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই থেমে যায়। না, ঐ দৃশ্য সে নিজের চোখে দেখতে পারবে না। নির্ঝরকে সে ভীষণ ভাবে ভালোবেসে ফেলেছিল। যেই ভালোবাসা অনেক বেশি অপ্রতুল। সে পারবে না নিজের চোখের সামনে নির্ঝরকে অন্য কারো হয়ে যেতে দেখতে। তাই আরিশা এখানেই বসে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। আর নীরবে অশ্রু বিসর্জন করতে থাকে। এমন সময় হঠাত করে ঘরের নাইট নিভে যেতেই আরিশা চমকে ওঠে। বিড়বিড় করে বলে,”লাইটটা হঠাৎ কিভাবে বন্ধ হলো।”
সে কোন রকমে ফোনের লাইটটা জ্বালিয়ে উঠে দাঁড়াতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে কেউ এসে আরিশার মুখ চেপে ধরল। আরিশা উম, উম করতে লাগল কিন্তু তার মুখ থেকে কোন শব্দ বের হলো না। আরিশা কিছু সময় ধরে ধস্তাধস্তি করতে থাকে এরইমধ্যে তার নামে একটা রুমাল ধরে কেউ একজন। সাথে সাথেই আরিশা নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর আরিশার আর কিছু মনে নেই।
জাঈদ শেখ কাজি অফিসে বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে। আর অপেক্ষা করছে মন্টুর আসার৷ কিছুক্ষণ আগেই সে মন্টুকে পাঠিয়েছে আফিফাকে তুলে নিয়ে আসার জন্য। আজ সে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে আফিফাকে সে বিয়ে করবে৷ সোজা পথে না হলে এভাবে বাকা পথে হলেও বিয়েটা করবে৷ এদিকে তার সামনেই একজন কাজি সাহেব বসে আছেন। তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন,”এভাবে আর কত সময় বসে থাকব? আপনার কনে কোথায়?”
জাঈদ বলে,”আহ, আর একটু অপেক্ষা করুন। আপনাকে দ্বিগুণ টাকা দিলেই হলো তো নাকি!”
কাজি বলেন,”টাকার ব্যাপার নয়। এভাবে বিয়েটা দেওয়া নিয়ে আমি ভীষণ চিন্তিত। পরে কোন কেইসে ফেঁসে যাব নাতো?”
“আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। আমার বাবা কে জানেন তো? কিচ্ছু হবে না আপনার। আপনি শুধু আমার বিয়েটা পড়িয়ে দিন।”
জাঈদ শেখ কাজির সাথেই কথা বলছিল এমন সময় মন্টু এসে বলে,”স্যার, আপনার কাজ হয়ে গেছে।”
জাঈদ খুশি হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,”নিয়ে এসেছিস ওকে!”
“হ্যাঁ, স্যার। আপনি যেভাবে বলেছিলেন ঠিক সেভাবেই ভাবির রুমে ঢুকে তাকে একদম তুলে নিয়ে এসেছি। এই দেখুন।”
মন্টু আরিশাকে একটি বোরকায় আবৃত করে এনেছিল। আরিশার মুখ থেকে নেকাবটা সরাতেই জাঈদ বিস্ফোরিত চোখে তাকায়। রেগেমেগে বলে,”এটা কাকে নিয়ে এসেছিস তুই? এটা তো আফিফা নয়!”
মন্টু নিজেও আরিশাকে দেখে চমকে গিয়ে বলে,”আরে তাই তো! এটা তো ভাবি নয় কিন্তু আমি তো ভাবির রুম থেকেই একে তুলে এনেছি।”
জাঈদ মন্টুর কলার চেপে ধরে বলে,”তোকে তো আমি দেখে নেব..তোকে আমি কি করতে পাঠিয়েছিলাম আর তুই এটা কি করলি? একটা কাজও ঠিকভাবে করতে পারিস না, ইডিয়েট কোথাকার!”
জাঈদের দুজন বন্ধুও এসেছিল। তাদেরই একজন যার নাম সাগর সে বলে ওঠে,”এখন কি করবি বল? এতক্ষণে তো আফিফার বিয়ে হয়ে যাবার কথা।”
জাঈদের আরেক বন্ধু মুন্নাও বলে,”হ্যাঁ, সেটাই তো। তাহলে কি তোর উদ্দ্যেশ্য ব্যর্থ থেকে যাবে। আর এই মেয়েটাকে নিয়েই বা এখন কি করবি।”
কাজি সাহেব বলে ওঠেন,”তাহলে কি এই বিয়েটা হবে না? আমি চলে যাব?”
জাঈদ রাগে ফেটে পড়ছিল৷ আরিশার দিকে তাকিয়ে তার রাগ আরোও বাড়ছিল। সে একটা ফুলদানি তুলে নিয়ে সেটা মাটিতে আছড়ে ফেলে বলে,”এক পাও নড়বেন না এখান থেকে। আমি আজকেই বিয়ে করবো। আফিফাকে নয় তো ঠিক আছে ওর এই বোনকেই বিয়ে করব আমি। আফিফা আমাকে প্রত্যাখ্যান করে যতটা কষ্ট দিয়েছে ওর বোনকে বিয়ে করে তার থেকেও দ্বিগুণ কষ্ট দেব আমি!”
সাগর বলে,”এটা তুই কি বলছিস জাঈদ?”
“তুই যা শুনেছিস আমি তাই বলছি। এই মন্টু তুই এর মুখে পানি ছিটিয়ে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা কর। আর কাজি সাহেব আপনি নতুন করে একটা কাবিননামা লিখুন, সব ঠিক থাকবে শুধু পাত্রীর যায়গায় আফিফা খানের বদলে আরিশা খান লিখুন।”
কাজি সাহেব সম্মতি জানিয়ে বলেন,”ঠিক আছে।”
এরইমধ্যে মন্টু আরিশার মুখে পানি ছিটিয়ে তার জ্ঞান ফেরায়। আর জ্ঞান ফিরে পেতেই আরিশা মন্টুকে দেখে বলে ওঠে,”কে আপনি? কি করছেন এখানে? আর আমি কোথায়?”
তখনই জাঈদ শেখ আরিশার সামনে এসে বলে,”তুমি এখন কাজি অফিসে। একটু পরই তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে। তোমার বোনকে তো আমি পেলাম না তাই তোমাকে বিয়ে করে এর শোধ তুলব।”
আরিশা রাগী কন্ঠে বলে,”আপনার মতো একজন ক্রিমিনালকে আমি বিয়ে করবো সেটা আপনি ভাবলেন কি করে! আপনার সাহস কি করে হলো আমায় তুলে নিয়ে আসার। আমি আপনার নামে পুলিশ কেইস করব।”
জাঈদ ভীষণ রেগে আরিশাকে চেপে ধরে তার মাথায় বন্দুক তাক করে বলে,”চুপচাপ বিয়েটা করে নে নাহলে গু**লি করে তোর খুলি উড়িয়ে দেব।”
আরিশা এবার ভীষণ ভয় পেয়ে কান্না করতে থাকে।
এরইমধ্যে কাজি সাহেব তার দিকে কাবিননামা বাড়িয়ে দেয়। জাঈদ নিজে সেখানে সই করে আরিশাকেও বাধ্য করে সই করতে। আরিশা সই করতে চাইছিল না। কিন্তু জাঈদ একপ্রকার জোর করে তার হাত ধরে সই করায়। অতঃপর আরিশার মাথায় বন্দুক ঠেকে ধরে বলে,”এক্ষুনি কবুল বল..আমি ১ থেকে ১০ গুনব তার মধ্যে যদি কবুল না বলিস তো..১…২…৩…৪..৫..৬…৭..৮..৯ আর..”
আরিশা ভয়ে কাপতে কাপতে বলে,”কবুল।”
—
“আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”
আফিফার কণ্ঠে কবুল কন্ঠ শুনেই নির্ঝরের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সবাই খুশি হয়ে একে অপরকে মিষ্টি বিতরণ করতে থাকে। নির্ঝর আফিফার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,”অবশেষে সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমরা দুজন এক হতে পারলাম।”
আফিফা স্মিত হেসে বলে,”ঠিক বলেছেন। আপনাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে আমি অনেক খুশি নির্ঝর ভাইয়া।”
নির্ঝর হালকা হেসে বলে,”এখন আর এসব আপনি-আজ্ঞে চলবে না। আর আমাকে ভাইয়া ডেকো না…নিজের সন্তানের মামা বানাবে চাও নাকি?”
আফিফা হেসে ফেলে। এরইমধ্যে ছবি বেগম এগিয়ে এসে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে বলে,”তোমরা অনেক সুখী হও, এই দোয়া করি।”
নিঝুম, আবরাজ, আবির, আনিকা খানও এগিয়ে এসে আফিফা ও নির্ঝরকে দোয়া করে। আদৃতাও এককোনায় মুখ ভাড় করে দাঁড়িয়ে ছিল। তবে এত সবার ভীড়ে নিজের বোন আরিশাকে না দেখে আফিফা বলে ওঠে,”আচ্ছা বোনু কোথায়? ওকে তো কোথাও দেখছি না।”
আনিকা খানও বলেন,”তাই তো, আরিশাকে তো অনেকক্ষণ থেকে কোথাও দেখছি না।”
আবির খান,”আরে দেখো আশেপাশে কোথাও হয়তো আছে। ও তো মজা করতে ভীষণ ভালোবাসে। সারাদিন যেভাবে বাড়িটা মাতিয়ে রাখে।”
ছবি বেগম,”তাই হবে হয় তো। আফিফা দিদিভাই, তুমি এখন যাও নিজের ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নাও। এখন থেকে তো নির্ঝর দাদুভাইয়ের রুমটাই তোমার রুম।”
আফিফা লজ্জা পেয়ে যায় ছবি বেগমের কথা শুনে। তার এই লজ্জা আরো বাড়ানোর জন্যই যেন নির্ঝর তার কানে কানে বলে,”আজ রাতে তোমাকে আমি নিজের সাথে মিশিয়ে নেব। শুধু আমার ঘর নয়, আমার দেহমন জুড়েও তোমার অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।”
to be continue…….