#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_21
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আরিশা সকালে ঘুম থেকে উঠে একটু বাগানের দিকে এসেছে৷ তার মনটা খুব একটা বেশি ভালো লাগছে না। তাই মনটা ভালো করতে আরিশা বাগানে এসে বিভিন্ন ফুল দেখছিল। জাঈদের বাড়ির বাগানটি নানান ফুলে সাজানো। আরিশা বাগানেই ঘোরাফেরা করছিল এমন সময় হঠাৎ করে তার সম্মুখে এসে দাঁড়ায় সায়ন। সায়নকে দেখেই আরিশা বলে ওঠে,”আপনি?”
সায়ন বলে,”বাগানে একটু ঘুরতে এলাম। আমিও কিন্তু আপনাকে দেখে অবাক হয়েছি।”
আরিশা আর কথা না বাড়িয়ে অন্যদিকে যেতে চায়। এমন সময় সায়ন বলে ওঠে,”একটু আসুন না,গল্প করে সময় টা কাটাই।”
আরিশা বলে,”আমার এখন গল্প করার কোন শখ নেই।”
“আপনি হয়তো আমায় ভুল ভাবছেন..আমি কিন্তু কোন বখাটে টাইপ বা গায়ে পড়া ছেলে না। আমি তো জাস্ট আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইছি।”
আরিশা সায়নের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনাকে আমি তেমন কিছু মনে করছি না। তবে হ্যাঁ, আমি এভাবে হুটহাট কারো সাথে বন্ধুত্ব করি না। আশা করি, আপনি আর আমাকে এই নিয়ে কিছু বলবেন না।”
বলেই আরিশা অন্যদিকে চলে যায়। সায়ন একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এদিকে আরিশা একটু আগাতেই কেউ একটা তার হাত ধারণা টান দেয়৷ আরিশা কিছু বুঝে ওঠার আগেই জাঈদের বুকের উপর এসে পড়ে। জাঈদকে নিজের এত কাছে দেখে আরিশা হতবাক হয়ে যায়। দূরে সরে আসার চেষ্টা করলে জাঈদ আরিশাকে নিজের আরো কাছে টেনে এনে বলে,”চুপচাপ এখানে দাঁড়াও। কি কথা বলছিলে ঐ ছেলেটার সাথে?”
আরিশা বলে,”মানে?”
“এমন ভাব করছ যেন ভাজা মাছ উলটে খেতে জানো না! সায়নের সাথে এত কিসের ঘনিষ্ঠতা তোমার? কাল রাতেও দেখছিলাম ওর সাথে কথা বলছিলে। বড়লোকের ছেলে দেখে কি নিজেকে সামলাতে পারছ না? কি ভেবেছ, ওর গায়ে ঢলে পড়ে আমার হাত থেকে মুক্তি পাবে? তাহলে ভুল ভাবছ। তোমার যা রূপ, তোমাকে কেউই গুরুত্ব দেবে না। হয়তোবা শুধু মস্তি করার জন্য…”
জাঈদ নিজের কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই জাঈদের গালে ঠাস করে থা*প্পড় বসিয়ে দেয়। জাঈদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিশা তাকে চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,”চুপ..নিজের এই নোংরা মুখ আর খুলবেন না। আপনি যখনই মুখ খোলেন তখনই আপনার মুখ থেকে দূগন্ধযুক্ত কথা বের হয়। আপনি নিজের মুখটা বন্ধ রাখুন সেটাই ভালো। নাহলে কাল মাথা ফাটিয়েছি আর আপনার জিহ্বা টেনে ছিড়ব।”
“তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছ?”
“দিচ্ছি। কি ভেবেছেন আপনি? শুধুমাত্র নিজের আপ্পির কথা ভেবে আমি এখানে আছি জন্য আপনি আমায় কিনে নিয়েছেন? আমায় যা খুশি তাই বলতে পারবেন? যদি এমনটাই ভেবে থাকেন তাহলে ভুল ভাবছেন। আমি আরিশা, আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। আমাকে নিয়ে ভবিষ্যতে এমন জঘন্য কথা বলার আগে দুবার ভাববেন। আর আপনার ঐ খালাতো ভাইয়ের প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই, বুঝেছেন? আপনি বরং তাকে গিয়ে বলে দিন আমার থেকে দূরে থাকতে।”
জাঈদ এবার নিজের গলার স্বরটা কিছুটা নরম করে বলে,”তুমি সত্যি বলছ তো? তোমার সায়নের প্রতি কোন আগ্রহ নেই?”
“না, নেই।”
জাঈদ যেন খুব খুশি হয় এই কথাটা শুনে। অতঃপর আরিশাকে যাওয়ার জন্য পথ ছেড়ে দিয়ে বলে,”বেশ, আমি ওকে বলে দেব যেনো তোমায় আর বিরক্ত না করে। তুমি এখন যাও, নিজের রুমে যাও। আর এখন বেশি বাইরে আসতে হবে না। যথাসম্ভব রুমেই থেকো।”
আরিশা অবাক চোখে জাঈদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,”এনার আবার কি হলো? এমন কথা কেন বলছেন?”
তবে ব্যাপারটা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে নিজের রুমের দিকে তাকালো।
★★★
সন্ধ্যা ও সায়ন একসাথে বসে ছিল৷ দুজনই নানান গল্প করছিল। কথায় কথায় সন্ধ্যা বলে ওঠে,”আচ্ছা, ভাইয়া৷ তোমার ঠিক কিরকম মেয়ে পছন্দ, বলো তো?”
সন্ধ্যার কথাটা শুনেই সায়নের সামনে আরিশার চেহারটা ভেসে ওঠে। সায়ন বলে ওঠে,”যার চোখে মুখে থাকবে অদ্ভুত এক মায়া। খুব একটা সুন্দর হতে হবে না তাকে, আমি তার মায়াবী চেহারা দেখেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারব। তার নিষ্পাপ মুখশ্রী, রাগী রাগী চোখ, তেজি স্পষ্ট কথাবার্ত সবই যেন আমায় মুগ্ধ করে।”
নিজের ভাইয়ের মুখে এসব কথা শুনে সন্ধ্যা মনে মনে ভাবে,”আদৃতার সাথে তো এর প্রায় সব বৈশিষ্ট্যই মিলে যায়। তার মানে ভাইয়া কি আদৃতা পছন্দ করে?”
এহেন ভাবনা থেকেই সন্ধ্যা সায়নকে প্রশ্ন করে বসে,”তাহলে কি তোমার পছন্দের কেউ আছে?”
সায়ন বলে,”হ্যাঁ, প্রথম দেখাতেই সে আমার মন কেড়ে নিয়েছে।”
“তার নামটা কি/”
“নাম তো বলা যাবে না।”
“আমি বোধহয় কিছুটা বুঝতে পারছি ভাইয়া। তার নামের প্রথম অক্ষর কি ” আ” ”
সায়ন অবাক স্বরে বলে,”হ্যাঁ, আ। কিন্তু তুই কিভাবে বুঝলি?”
“আমার চোখকে তুমি ফাঁকি দিতে পারবে না ভাইয়া। আমি ঠিকই বুঝে গেছি তোমার মনের কথা।তো বল, বাবা-মাকে কি কথাটা জানাবো? তোমার বিয়ের ফুলটা তাহলে ফুটুক।”
সায়ন বলে,”এত তাড়াহুড়ো কেন? আগে তাকে নিজের মনের কথাটা জানাই। আমার প্রতি তার অনুভূতি আছে কিনা সেটাও তো জানতে হবে।”
“তোমাকে এত ভাবতে হবে না। বাকি সবকিছু আমি সামলে নেব।”
বলেই সন্ধ্যা একটা হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর চলে যায়৷ এদিকে সায়ন একা বসে থাকে। কিছু সময় বসে থাকার পর সায়ন খেয়াল করে যে, আরিশা একা একা কোথাও যেন যাচ্ছিল। তাকে যেতে দেখেই সায়ন আরিশার কাছে গিয়ে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,”এই যে শুনুন..”
আরিশা পিছন ফিরে তাকায়৷ তার চোখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। সায়ন সেসবকে পাত্তা না দিয়ে বলে,”আপনি কি এখন ফ্রি আছেন?”
“না, নেই।”
“দু মিনিট একটু দাঁড়াবেন আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।”
“পারবো না।”
“দু মিনিটেরই তো ব্যাপার। একটু দাঁড়ান না।”
এমন সময় হঠাৎ করে জাঈদ সেখানে চলে আসে। জাঈদ এসেই বলে,”কি হচ্ছে টা কি এখানে?”
জাঈদকে দেখামাত্রই আরিশা বলে,”আপনার খালাতো ভাই আমার সাথে দুই মিনিট কথা বলতে চাইছে। আপনিই বলুন,আমার কি করা উচিৎ?”
জাঈদ শক্ত কন্ঠে বলে,”তুমি এখান থেকে যাও। সায়নের সাথে আমি কথা বলে নিচ্ছি।”
আরিশা চলে যায়। আরিশা যেতেই জাঈদ সায়নকে বলে ওঠে,”কি ব্যাপার সায়ন? আমাদের বাড়ির সামান্য একটা আশ্রিতা মেয়ের সাথে তোমার এত কিসের কথা? ”
জাঈদ সায়নের থেকে দুই বছরের বড়। তাই সায়ন জাঈদকে কিছুটা সম্মান দিয়ে বলে,”আসলে জাঈদ ভাই, কি আর বলবো..মেয়েটার ব্যাপারে সব শুনলাম। মেয়েটা কত কষ্টে আছে। কিন্তু মেয়েটা বোধহয় এত কষ্ট ডিজার্ভ করে না। ও তো একটা সুখী জীবন ডিজার্ভ করে তাই না? আপনি একটু ব্যাপারটা ম্যানেজ করে দিতে পারবেন()আমি চাই আরিশাকে একটু সুখী দেখতে। আমি বৈধভাবে ওর দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছি। ওকে প্রথম দেখাতেই আমি..”
“তুমি যা ভাবছ তা সম্ভব নয়। কারণ আরিশা বিবাহিত।”
“সেটা তো জানি আমি। কিন্তু ওর স্বামী তো ওকে ত্যাগ করেছে। তাহলে অসুবিধা কোথায়?”
“ওর স্বামী ওকে আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে নেবে। সমস্যাটা এখানেই। তাই বলছি ওর থেকে দূরে থাকো। এটাই তোমার জন্য ভালো হবে। ”
বলেই জাঈদ স্থান ত্যাগ করে। আর সায়ন জাঈদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি যা পছন্দ করি তাকে নিজের করেই ছাড়ি। আরিশাও আমার হবে।”
to be continue…….
#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_22
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আরিশা চুপচাপ নিজের ঘরে বসেছিল৷ ইদানীং তার সবকিছুই কেমন জানি বিরক্ত লাগে। কোন কিছুতেই তার মন বসে না। আরিশা চুপচাপ বসেই ছিল এমন সময় হঠাৎ করে জাঈদ তার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। আরিশা অবাক হয়ে জাঈদের দিকে তাকিয়ে বলে,”এসব কি করছেন আপনি? দরজাটা বন্ধ করলেন কেন?”
“তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।”
“আপনার যাই জরুরি কথা থাক না কেন,আপনি আগে দরজাটা খুলুন। নাহলে আমি আপনার সাথে থাকতে নিরাপত্তাবোধ করব না।”
জাঈদ কিছুটা ঝিমিয়ে আসা স্বরে বলে,”এতোটাই খারাপ ভাবো আমাকে? যে আমার কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে হয় না?”
“না, হয়না। অতীতে আপনি আমার সাথে যা যা করেছেন তাতে বদ্ধ ঘরে তো দূরের কথা লোকভর্তি ঘরেও আপনার সাথে আমি নিরাপদ বোধ করি না।”
জাঈদ গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে আরিশাকে বলে,”তুমি আমাকে যা খুশি তা ভাবতে পারো…তবে আজ আমি তোমাকে কিছু জরুরি কথা বলতে চাই।”
“হ্যাঁ, বলুন।”
” আমি চাই, তুমি সন্ধ্যাকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে সমস্ত সত্যটা বলে দাও।”
জাঈদের কথা শুনে আরিশা জারপনরাই অবাক হয়। জাঈদ আরিশাকে বলে,”বুঝলে তো আমি কি বললাম?”
আরিশার মাথায় হঠাৎ কিছু ভাবনা আসতেই সে বলে,”কেন? হঠাৎ আপনি সন্ধ্যা আপুর কাছে সবকিছু প্রকাশ করতে বলছেন কেন? ওহ, বুঝতে পারছি। আপনার নজর এখনো আমার আপ্পির ওপর থেকে যায়নি তাইনা? আপনি সন্ধ্যা আপুকে বিয়ে করতে চান না,কারণ আপনি এখনো স্বপ্ন দেখেন নির্জর ভাইয়া আর আপ্পির সংসার ধ্বংস করে আপনি আপ্পিকে নিজের করে নেবেন। যদি আপনি এমনটাই ভেবে থাকেন তাহলে একটা কথা স্পষ্ট করে জেনে রাখুন, আমি কিছুতেই এমনটা হতে দেব না। প্রয়োজনে আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে সন্ধ্যা আপুর সাথে আপনার বিয়ের পথটা প্রশস্ত করে দেব। যাতে করে আপনি আর আমার আপ্পির জীবনে কোন সমস্যা তৈরি করতে না পারেন।”
জাঈদ এবার খানিক রেগে বলে,”তোমার কি এটাই মনে হয় যে সবটা আমি তোমার আপ্পির জন্য করছি?”
আরিশা উপহাস করে বলে,”তাছাড়া আর কি হবে? আপনি শুরু থেকে যা যা করেছেন সবটা তো আপ্পির জন্যই। আপ্পিকে নিজের করে পাওয়ার জন্যই আপনি আমার জীবনটা নরক বানিয়ে দিয়েছেন। আমাকে আমার পুরো পরিবার থেকে বিছিন্ন করেছেন।”
“ওটা তোমার পরিবার? হাসালে আমায়, ওরা কেউ তোমাকে নিজের পরিবার ভাবে? যদি ভাবত তাহলে এতদিনে একবার হলেও তোমার খোঁজ নিতে আসত। বাকি সবার কথা তো বাদই দিলাম, তোমার আপ্পি যার জন্য তুমি এতকিছু ত্যাগ করলে সে কি করেছে তোমার জন্য? বিয়ের পর শুধু একবার এসেছিল খোঁজ নিতে তারপর থেকে আর কোন খোঁজ নেই তার। তুমি আসলে যাদের আপন ভাবো তারা তোমায় বিন্দুমাত্র মূল্য দেয় না আরিশা। কথাগুলো শুনতে কঠিন মনে হলেও এগুলো সত্য।”
আরিশা রেগে বলে,”আপনাকে এত কিছু ভাবতে হবে না মিস্টার জাঈদ শেখ। আপনি নিজের কাজে মন দিন। এভাবে আপনি আপ্পির বিরুদ্ধে আমার মন বিষিয়ে দিতে পারবেন না। এখন যান তো এখান থেকে, আপনার উপস্থিতি আমার একদম সহ্য হচ্ছে না।”
জাঈদ আরিশার মুখ থেকে এরকম কথা শুনে কেন জানি ভীষণ ব্যথিত বোধ করল। কই আগেও তো আরিশা অনেক কথা শুনিয়েছে তাকে, এরকম কষ্ট আগে কখনো অনুভব করেনি। তাহলে আজ হঠাৎ এত কষ্টের কারণ কি?
জাঈদকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরিশা আবারো রেগে বলল,”কি হলো? এখনো সঙ্গের মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনি যান না এখান থেকে। আপনার সাথে একঘরে শ্বাস নিতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।”
জাঈদ আর কোন কথা না বলে চুপচাপ আরিশার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। জাঈদ বেরিয়ে যেতেই আরিশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”হে আল্লাহ,এই লোকটাকে তুমি আমার জীবন থেকে সরিয়ে দাও না। এনার উপস্থিতি আমায় কষ্ট দেয়..আমার শ্বাস নিতেও কষ্ট হয় এনার উপস্থিতিতে।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সন্ধ্যা তার মা বাবার সাথে সায়ন আর আদৃতার ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলছে। সন্ধ্যার বাবা সাজিদ চৌধুরী সন্ধ্যাকে বলে,”তুমি কি নিশ্চিত যে সায়ন সত্যিই আদৃতাকে পছন্দ করে?”
সন্ধ্যা বলে,”আমি নিশ্চিত। ভাইয়ার সাথে নিজে আমি কথা বলেছি। আকারে ইঙ্গিতেই ও সবটা বুঝিয়ে দিয়েছে৷ তাছাড়া লন্ডনে থাকার সময়েও আমি খেয়াল করেছি ভাইয়া আদৃতার অনেক বেশিই খেয়াল রাখত, ওর কেয়ার করত৷ এসব কিছু থেকেই তো সব স্পষ্ট হয়ে যায়।”
সন্ধ্যার মা ইভা চৌধুরীও বলে ওঠেন,”সন্ধ্যা একদম ঠিক বলেছে। আমিও খেয়াল করেছি ব্যাপারটা।”
সাজিদ চৌধুরী কিছুটা চিন্তিত স্বরে বলেন,”তবুও আমাদের মনে হয় একবার ব্যাপারটা নিয়ে সায়নের সাথে সরাসরি কথা বলা উচিৎ। ওর বিনা অনুমতিতে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না।”
সন্ধ্যা বলে ওঠে,”আহ, ড্যাড তুমি বুঝছ না কেন? ভাইয়াকে একটু সারপ্রাইজড করতে হবে না? আমি তোমাকে শতভাগ গ্যারান্টি দিচ্ছি যে ভাইয়া আদৃতাকেই পছন্দ করে।”
ইভা চৌধুরীও নিজের মেয়েকে সমর্থন করে বলেন,”সন্ধ্যা একদম ঠিক বলছে। তুমি আর আপত্তি করো না। তুমি মিস্টার আবরাজ খানের সাথে কথা বলে সমস্ত কিছু ঠিক করে নাও। সবকিছু ঠিক থাকলে আমরা গিয়ে ওনাদের বাড়িতে দেখা করতে যাই। সায়ন জানবে আমরা এমনি দাওয়াত খেতে যাচ্ছি। পরে ওখানে গিয়েই বিয়ের কথা তুলে নাহয় সায়নকে একেবারে সারপ্রাইজড করে দেয়া যাবে।”
মেয়ে ও স্ত্রীর প্ররোচনায় সাজিদ চৌধুরী আর দ্বিমত করতে পারেন না। সম্মতি জানিয়ে বলেন,”বেশ, তোমরা যা ভালো মনে করো তাই হবে। আমি তাহলে এভাবেই সবটা ম্যানেজ করি।”
~~~~~~~~~
আদৃতা আজ ভীষণ খুশি। একটু আগেই তার বাবা আবরাজ খান এসে তাকে বলে গেছেন যে, সায়নরা সপরিবারে আগামীকাল এবাড়িতে আসবে। আদৃতার খুশি যেন আর ধরে না। নিজের ফোন থেকে সায়নের ইন্সট্রাগ্রাম একাউন্টে ঢুকে আদৃতার তার কিছু সুন্দর ছবি দেখে বলে,”আর মাত্র কিছু দিনের অপেক্ষা। তারপর আমি নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে একদম নিজের করে পাবো। নিজেকে ভীষণ লাকি মনে হচ্ছে।”
অন্যদিকে,
সায়ন সকাল থেকে আরিশাকে দেখার জন্য ছটফট করছে৷ কিন্তু সকাল থেকে সে আরিশাকে দেখে নি। ব্যাপারটা তাকে বেশ অস্থির করে তুলছে। শেষ অব্দি আরিশাকে খোঁজার জন্য তার রুমের দিকে যেতে থাকে সায়ন। এমন সময় হঠাৎ জাঈদ তাকে দেখতে পেয়ে সায়নের পথ আটকে দিয়ে বলে,”এদিকে কোথায় যাচ্ছ?”
সায়ন আমতাআমতা করে বলে,”এমনি আরকি ভাইয়া..তোমাদের বাড়িটা ঘুরে দেখছি।”
“এদিকে দেখার মতো কিছু নেই। আমার সাথে চলো। আমি তোমাকে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখাচ্ছি।”
সায়ন আর কিছু বলতে পারে না জাঈদের কথার উপর। অগত্যা তাকে জাঈদের সাথে যেতে হয়।
সায়ন জাঈদের সাথে যাবার পরপরই সন্ধ্যা এসে আরিশার রুমে প্রবেশ করে। আরিশা তখন সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছিল৷ সন্ধ্যাকে দেখেই সে বলে ওঠে,”আপু, আপনি।”
সন্ধ্যা সহাস্যে আরিশার পাশে এসে বসে বলে,”তোমাকে ভীষণই খুশির একটা সংবাদ জানাতে আমার আজ এখানে আসা। জানো, আগামীকাল আমরা সবাই মিলে আমার ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।”
আরিশা সায়নের কথা ভাবে। লোকটার তাহলে অন্য কোথাও বিয়ে হবে। এটা তো তার জন্য ভালোই। তাহলে লোকটা শুধু শুধু তাকে এভাবে বিরক্ত করল! আরিশা হালকা হেসে বলে,”বাহ,ভালোই তো।”
“হুম, আর জানো এই মেয়েকে আমার ভাইয়াও পছন্দ করে। মেয়েটা আমার ফ্রেন্ডও।”
“ওহ আচ্ছা।”
“দাঁড়াও,তোমাকে মেয়েটার ছবি দেখাচ্ছি।”
বলেই সন্ধ্যা আদৃতার ছবি বের করে আরিশাকে দেখায়। আরিশা তো আদৃতার ছবি দেখেই হতবাক হয়ে যায়। সন্ধ্যা বলে ওঠে,”দেখলে তো? ভীষণ সুন্দরী না ও? আমার ভাইয়ার পাশে ভীষণ মানাবে বলো?”
আরিশা কিছু বলার মতো খুঁজে পায় না। কি বলবে এখন সে? যে আদৃতাকে সে চেনে। সে তার চাচাতো বোন। পরক্ষণেই আরিশা ভাবলো, কিসের চাচাতো বোন? ওদের সাথে তো তার রক্তের সম্পর্ক নেই। তাই সে বলল,”হুম ভালোই মানাবে।”
to be continue…….
#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_23
#ইয়াসমিন_খন্দকার
সন্ধ্যা আরিশার সাথে কথাই বলছিল এমন সময় সায়ন সেখানে চলে আসে। সায়ন এসেই অপলক দৃষ্টিতে আরিশার দিকে তাকায়৷ সায়নকে আসতে দেখেই সন্ধ্যা তড়িঘড়ি করে আদৃতার ছবিটা সরিয়ে ফেলে। সায়ন ব্যাপারটা স্বাভাবিক করতে সন্ধ্যাকে প্রশ্ন করে,”কি নিয়ে কথা হচ্ছিল?”
সন্ধ্যা বলে ওঠে,”তেমন বিশেষ কিছু না। আচ্ছা, ভাইয়া তুমি না আমার হাতের রান্না খেতে চেয়েছিল। আজ আমি তোমার জন্য অনেক স্পেশাল কিছু বানিয়েছি। চলো তো খেয়ে দেখবে কেমন লাগে।”
“আচ্ছা, চল।”
সন্ধ্যা এভাবে ব্যাপারটাকে এড়িয়ে সায়নকে নিয়ে খেতে চলে যায়। এদিকে আরিশা বসে বসে ভাবতে থাকে,”যদি মিস্টার সায়নের সাথে আদৃতা আপুর বিয়ে হয় তাহলে কি এতদিন পর আমায় আবার ও-বাড়ির লোকদের মুখোমুখি হতে হবে?”
ব্যাপারটা ভেবেই আরিশার অস্বস্তি বোধ হতে থাকে। আবারো ঐ বাড়ির লোকদের মুখোমুখি হলে ব্যাপারটা কিভাবে মোকাবিলা করবে সে? এই প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পায় না আরিশা।
———+((+(??+++)))
সায়নরা সপরিবারে রওনা দিলো খান ভিলার উদ্দ্যেশ্যে। সাজিদ চৌধুরীর বন্ধু আবরাজ খান তাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে এটা জেনেই সায়ন মূলত রওনা দিলো৷ তবে সাজিদ খান ভিলায় পা রাখতেই বুঝতে পারে এটা কোন সাধারণ দাওয়াত নয়। আবরাজ খান ও তার স্ত্রী নিঝুম খান তাদের একটু বেশিই খাতিরদারি করছিল। সায়নকেও কেমন জানি জামাই-আদর করার মতো আচরণ করছিল৷ সায়ন খেয়াল করে আদৃতাও বারবার তার দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল যা তাকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। নিজের বোনের বান্ধবী হিসেবে সে সবসময় আদৃতাকে বোনের নজরেই দেখেছে এবং সেই অনুযায়ীই স্নেহ করেছে। তবে আদৃতার দৃষ্টিতে এখন সে অন্যকিছু দেখতে পারছে।
সবার মাঝে ছবি বেগম, আবির খান, আনিকা খান, নির্ঝরও উপস্থিত আছে। সন্ধ্যা নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। একসময় তো এই লোকটাকে ভীষণ ভালোবাসত সে। কিন্তু ভাগ্যে বোধহয় ছিল না। তাই তো আজ উনি অন্য কারো স্বামী। সন্ধ্যার খুব ইচ্ছা করছিল নির্ঝরের স্ত্রীর মুখোমুখি হতে। নিজের চোখে সেই ভাগ্যবতী মেয়েটিকে দেখতে। তাই তো সে প্রশ্ন করে বসে,”আচ্ছা, নির্ঝর ভাইয়া, আপনার স্ত্রী কোথায়? তাকে তো কোথাও দেখছি না?”
নির্ঝর কিছু বলার আগে আদৃতা বলে,”কি আর বলবো বল, আমার ভাবি যা ব্যস্ত মানুষ। সারাটা দিন তো মেডিকেল কলেজেই কাটিয়ে দেয়। ওখানেই আছে।”
আবরাজ খান খানিক রেগে নিজের মেয়েকে বলেন,”এভাবে বলছ কেন আদৃতা? আফিফা তো মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করতেই গেছে। এমনি এমনি ঘুরতে তো যায় নি।”
ছবি বেগম বিরক্তির স্বরে বলেন,”এখন বাদ দাও তো এসব কথা, আসল কথায় আসো। যার জন্য আজ আমরা সবাই এখানে একত্রিত হয়েছি।”
সাজিদ চৌধুরীও বলে ওঠেন,”হ্যাঁ, খালাম্মা আপনি ঠিকই বলেছেন।”
ইভা চৌধুরী গিয়ে আদৃতার পাশে বসেন। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”আপনাদের এই মেয়েকে আমি আমার ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চাই। সেই জন্যই তো আজ আমাদের এখানে আসা।”
এই কথাটা শুনে উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলেও সায়নের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। তার চোখ মুখে যেন আঁধার নেমে আসে। অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায় সায়ন।
সন্ধ্যাও বলে ওঠে,”হুম, আমার প্রিয় বান্ধবীকে এবার আমার ভাবি করে ঘরে তোলার পালা।”
আবরাজ খান খুশি হয়ে বলেন,”আমার সাথে মিস্টার সাজিদ চৌধুরীর অনেক দিন থেকেই ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে তবে তার থেকেও বেশি আমরা একে অপরের বন্ধু৷ এখন এই বিয়েটার মাধ্যমে এই সম্পর্কটাকে আরো গাঢ় করাই আমাদের উদ্দ্যেশ্য।”
সায়ন এসব শুনে ভীষণই অস্বস্তি বোধ করছিল। সে তো তার মন দিয়ে ফেলেছে আরিশাকে। তাহলে এখন কিভাবে সে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারে? সায়ন লন্ডনে বড় হয়েছে৷ তাই সে ব্যক্তিস্বাধীনতায় অনেক বিশ্বাসী এবং নিজের মনের কথা লুকিয়ে রাখারও ছেলে নয়। তাই তো সায়ন আর অপেক্ষা না করে স্পষ্ট করে বলে দেয়,”মাফ করবেন আমায়, তবে আপনাদের উদ্দ্যেশ্যে আমি একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই। আমার পক্ষে এই আদৃতাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। কারণ আমি ওকে সবসময় নিজের বোনের নজরেই দেখেছি। আর সবথেকে বড় কথা আমি অন্য একটি মেয়েকে পছন্দ করি।”
সায়নের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। সবার মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। সাজিদ চৌধুরী বলে ওঠেন,”এসব কি বলছ তুমি সায়ন?”
সায়ন বলে,”হ্যাঁ, আমি ঠিকই বলছি।”
আবরাজ খান, আবির খান, নিঝুম, ছবি বেগম, নির্ঝর সবার মুখে বিরক্তি এবং ক্রোধ প্রকাশ পায়। এদিকে আদৃতার চোখে জল টলমল করতে থাকে। আদৃতা বলে ওঠে,”এটা তুমি কি বলছ সায়ন ব্রো? তুমি আমায় পছন্দ করো না।”
“ব্যাপারটা এমন নয় আদৃতা। আমি তোমায় পছন্দ করি কিন্তু তোমায় বিয়ে করতে পারব না। কারণ আমি তোমায় বোনের নজরেই দেখি এবং সেই হিসেবেই পছন্দ করি।”
আবরাজ খান রেগে সাজিদ চৌধুরীকে বলেন,”এসবের মানে কি মিস্টার চৌধুরী? আপনি তো আমায় বলেছিলেন সায়নের মত আছে এই বিয়েতে তাহলে ও এসব কথা কেন বলছে?”
সাজিদ চৌধুরী এবার রাগী চোখে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলেন,”তুমি তো বলেছিলে তোমার ভাইয়া নাকি তোমায় বলেছে তার আদৃতাকে পছন্দ।”
সন্ধ্যা বলে,”ভাইয়া তো আমায় সেদিন বলেছিল তার যেই মেয়েকে পছন্দ তার নামের প্রথম অক্ষর “আ” এবং যেসব বৈশিষ্ট্য বলেছিল তাও তো আদৃতার সাথে মিলে গেছিল।”
সায়ন বলে,”আমি সেদিন তোকে আদৃতার কথা বলি নি। বলেছিলাম, খালার বাড়িতে আশ্রিতা মেয়েটার কথা। ”
সন্ধ্যা চরম পর্যায়ের হতবাক হয়ে যায়। আদৃতা এবার কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমের দিকে দৌড় দেয়। নির্ঝর এগিয়ে এসে সায়নের কলার চেপে ধরে বলে,”হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস কি করে হলো আমার বোনকে এভাবে কাঁদানোর? ভালোয় ভালোয় বলছি এক্ষুনি বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে।”
সন্ধ্যা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”নির্ঝর ভাইয়া, রেগে যাবেন না। এখানে ভাইয়ার কোন দোষ নেই। দোষটা আমার। আমি গিয়ে আদৃতাকে সামলাচ্ছি।”
বলেই সে আদৃতার রুমের দিকে যায়। এদিকে ইভা চৌধুরী বলে ওঠেন,”তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে সায়ন? তুমি কিনা শেষমেষ একটা আশ্রিতা মেয়েকে পছন্দ করলে। তাও আবার একটা বিবাহিত মেয়েকে যাকে কিনা তার স্বামী ত্যাগ করেছে৷ তুমি ভাবলে কি করে এমন মেয়েকে আমরা মেনে নেবো?”
সাজিদ চৌধুরীও রাগী স্বরে বলেন,”তোমাকে আমরা স্বাধীনতা দিয়ে বড় করেছি তার মানে এই নয় তোমার সব আবদার মেনে নেবো। ঐ মেয়েকে আমরা কিছুতেই তোমার জন্য মেনে নেবো না। ভালো এটাই হয় যদি তুমি আদৃতাকে বিয়ে করে নাও।”
সায়ন উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আমি একজন এডাল্ট, ড্যাড, তাই তোমরা কোন কিছু আমার উপর এভাবে চাপিয়ে দিতে পারো না। আমি যখন বলেছি, আমি আদৃতাকে বিয়ে করবো না তখন আমি করব না। আমি আমার পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করব।”
বলেই সায়ন ধুপধাপ পা ফেলে খান ভিলা থেকে বেরিয়ে যায়। সাজিদ চৌধুরী ও ইভা চৌধুরীও আর কোন উপায়ন্তর না দেখে খান বাড়ির সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বেরিয়ে যান।
এদিকে সন্ধ্যা আদৃতাকে সামলানোর চেষ্টা করছিল। আদৃতা কান্না করতে করতে বলে,”আমার মধ্যে কি এমন কমতি আছে যে তোর ভাই আমাকে পছন্দ করলো না।”
“তোর মধ্যে কোন কমতি নেই আদৃতা৷ কিন্তু..যাইহোক দোষটা আমারই। আমি তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।”
আদৃতা চোখের জল মুছে বলে,”না, আমি নিজের চোখে ঐ মেয়েটাকে দেখব যাকে তোর ভাই পছন্দ করেছে। যাতে আমি নিজের কমতিটা বুঝতে পারি। তুই আমাকে দয়া করে নিয়ে চল ঐ মেয়েটার কাছে।”
“পাগলামী বন্ধ কর আদৃতা।”
“না, তুই আমাকে নিয়ে চল এখনই। আমি ঐ মেয়েকে দেখতে চাই।”
অগত্যা সন্ধ্যা রাজি হয়ে যায়।
to be continue…….